নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৪৯

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৪৯
Mousumi Akter

পরণে নেভি ব্লু পাঞ্জাবী,সাদা পাজামা পরা,হাতে কালো ফিতার ঘড়ি,সোনালি রঙের সিল্কি চুল গুলো চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে শ্রাবণের।ঘোলা চোখ দু’টোকে আজ আরো বেশী স্নিগ্ধ আর মায়াবী লাগছে।এই চোখের তারায় অজস্র কষ্টের কবিতা লেখা।মায়াবী আঁখিযুগলে যেন হাজার যুগের তৃষ্ণা, চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষারত চোখ জোড়া শান্ত হয়ে আছে তার প্রেয়সীর জন্য।

শ্রাবণের সৌন্দর্য্যে কম ছিলনা আগে কখনো কিন্তু আজ যেন আরো বেশী সুন্দর লাগছে।যেন আগুন ধরানো সুন্দর। এই ছেলেটার সৌন্দর্য্যে এই পৃথিবীর সবার চেয়ে আলাদা।একটা ছেলে ঠিক কতটা সুন্দর হতে পারে তা শ্রাবণ কে না দেখলে অনুমান করা মুশকিল হয়ে যাবে।কিছু মানুষ থাকে যাদের সৃষ্টিকর্তা একদম ই নিঁখুত ভাবে সৃষ্টি করেছেন আপণমনে। সেই সৃষ্টির বর্ণনা করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লম্বা, পাতলা শরীরের গঠন শ্রাবণের সৃষ্টিকর্তার অপরুপ সৃষ্টি ।চুল আর চোখের জন্য আলাদা রকম সুন্দর লাগে।এই ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে সর্বনাশ হয়েছে বহু মেয়ের।সেই সর্বনাশ থেকে বাদ যায়নি প্রিয়তা ও।শ্রাবণের চোখের দিকে তাকালেই কোথায় যেন হারিয়ে যেত।অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে চেয়েছিল শ্রাবণের চোখের দিকে তাকিয়েই।একটা ঝড় সব তছনছ করে দিল।সেই তছনছে ভেঙে গেল তাদের ভালবাসার ঘর।

বিচ্ছেদ এল তাদের সম্পর্কে।কিন্তু সেই বিচ্ছেদ মনের দূরত্ব বাড়াতে পারেনি।দূরে থেকেও দুজন দু’জনের জন্য চাতকপাখির মত অপেক্ষা করেছে। কত রাত দু’জন রাত জাগা পাখির মত কাটিয়ে দিয়েছে তার ঠিক নেই। কতশত অশ্রুপাত হয়েছে তার ও কোনো হিসাব নেই। এক নজর চোখের দেখার তৃষ্ণায় ছটফট করেছে।সেই অপেক্ষার সময় শেষ হয়েছে আজ।আজ দীর্ঘদিন পর দেখা হবে দু’জনের।রি মুহুর্ত টা যেন মহাপ্রলয় সৃষ্টিত মত।

এই নদীর কিনারায় হাজারো ভাল ভাল স্মৃতি ছিল দু’জনের।সেই স্মৃতিকে জীবন্ত করতে শ্রাবণ একটা নৌকা সাজিয়েছে ফুল দিয়ে।এই পূর্ণিমায় সে প্রিয়তাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে চায় দূর অজানায়।আজ প্রিয়তাকে নতুন ছন্দে ভালবাসার গান শোনাবে।এক নতুন সুরে গান শোনাবে।যে গান তাদের দূরত্ব কমিয়ে নিয়ে যাবে হৃদয়ের অনেক কাছাকাছি।হাতে এক গুচ্ছ সাদা ফুল শ্রাবণের,সেই ফুলের মাঝে একটা রঙিন চিরকুট।

সেই সন্ধ্যা থেকে তার শরীর কাঁপছে থরথর করে।হৃদয়ের অস্থিরতা বেড়ে চলেছে।হৃদয়ের মাঝে হাতুড়ির বাড়ি দিচ্ছে অবিরত। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে।সেই কম্পন যেন ভূমিকম্পনের মতই ভয়াবহ।অবশেষে প্রিয়তা শুভ্ররঙা শাড়ি পরে শ্রাবণের সামনে এল।প্রিয়তাকে দেখে শ্রাবণের শরীরের কম্পন কয়েক হাজার গতিতে বেড়ে গেল।হাত থেকে ফুলের তোড়া পড়ে গেল।

প্রিয়তা তার সামনে আসতেই চোখ দুটো টলমল করে উঠল।হাজার চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকাতে পারল না।চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে।শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে ফেলল।প্রিয়তা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বুঝল শ্রাবণের মনের ভেতরে তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা হচ্ছে।যা শ্রাবণের সহ্য ক্ষমতার বাহিরে চলে গিয়েছে।শ্রাবণের চোখে মুখে এত বেশী যন্ত্রণা দেখে প্রিয়তা ভেতর থেকে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।প্রিয়তার চোখ ও টলমলে হয়ে গেল।

চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।ভালবাসা এমন ও যন্ত্রণার হয়।বিচ্ছেদ কেন এত পোড়ায় মানুষকে? দু’জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে অথচ দুজনই নিশ্চুপ।দুজনের ই চোখ দিয়ে টপটপ করে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।এই নোনাজল দুটো হৃদয়ের তীব্র ক্ষরণ থেকে বের হচ্ছে।কেটে গেল কত খানিক সময়।কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারছেনা।এমন সময় শ্রাবণ চোখ মেলে তাকাল প্রিয়তার দিকে। শ্রাবণ চোখ খুলল।চোখ দু’টো পানিতে ভিজে গিয়েছে।

শ্রাবণ সরাসরি প্রিয়তার চোখের দিকে তাকাল।প্রিয়তার অশ্রুভেজা চোখে তাকিয়ে শ্রাবণ নিজেকে সামলাতে পারল না। প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরল।একদম নিজের বুকের সাথে শক্ত করে ধরল।হাউমাউ করে একটা বাচ্চার মত কাদতে শুরু করল শ্রাবণ। বেসামাল কাঁন্না।কোনো ছেলে বুঝি এভাবেও কাদতে পারে। ঠিক কতখানি যন্ত্রণা ভেতরে বয়ে নিয়ে বেড়ালে এভাবে কাদা যায়।কিন্তু প্রিয়তা একবারের জন্য শ্রাবণ কে ধরল না।যেন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তার অনুভূতি ঠিক কি এই মুহুর্তে সে নিজেই জানেনা।শ্রাবণ কাদতে কাদতে বেসামাল হয়ে বলল,

” সরি জা’ ন সরি।আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি।প্লিজ ক্ষমা করে দাও। ”
শ্রাবণ কাদতে কাদতে আর কিছুই বলতে পারল না।প্রিয়তা শ্রাবণের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।শ্রাবন খেয়াল করল প্রিয়তার ভেতরে কেমন জড়তা।সে শ্রাবণকে একটুও ধরেনি।তখন ই বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠল শ্রাবণের।ভেতর থেকে কেমন যেন নেগেটিভ রেসপন্স আসল।প্রিয়তা তাকে দু’দিন না দেখলেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদত।আজ সে শ্রাবণ কে স্পর্শ পর্যন্ত করল না। শ্রাবণ প্রিয়তাকে ছেড়ে দিল।প্রিয়তা শ্রাবনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছে বলল,

“কেমন আছো ?”
“তোমায় ছাড়া আমি কতটা ভাল থাকতে পারি? ”
” কাদছো কেন তুমি?প্লিজ কাদবে না শ্রাবণ।একদম ই কাদবে না।”
শ্রাবণ আচমকা প্রিয়তার পায়ের কাছে বসে পড়ল।প্রিয়তার পা’দুটো জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমি জানিনা ঠিক কীভাবে ক্ষমা চাইলে আমি বুঝাতে পারব আমি ক্ষমা চাই মন থেকে।তুমি আমায় শাস্তি দাও প্রিয়তা প্লিজ শাস্তি দাও।এমন শাস্তি দাও যে শাস্তিতে আমি ধ্বংস হতে পারি।এই নিকৃষ্ট ছেলেটাকে শাস্তি দাও তুমি।প্লিজ প্রিয়তা প্লিজ!আমি পাপ করেছি আমি পাপি।আমি শাস্তি চাই তোমার কাছে।তবুও আমাকে একা করে দিওনা আর।আমার এই পৃথিবীতে কেউ নেই প্রিয়তা।

তুমি ছাড়া কেউ নেই।তোমাকে ছাড়া কাটানো সময়ের চেয়ে বড় শাস্তি হয়ত তুমি অন্য কিছুতে দিতে পারবেনা।তবুও আমি চাই তুমি আমায় শাস্তি দাও।তবুও আমাকে একা থাকার মত শাস্তি আর দিওনা।কবেই ম-রে যেতাম বেঁচে আছি আর একটাবার তোমাকে নিয়ে বাঁচার জন্য।তুমি ছাড়া পৃথিবীর সব কিছু বিষাক্ত লাগে আমার। প্রতিটা প্রহর কত ভয়াবহ যন্ত্রণায় কাটে আমি ছাড়া কেউ জানেনা।কতরাত দম বন্ধ হওয়া কষ্টে কেটেছে আমি ছাড়া কেউ জানেনা।”

“প্লিজ আমার পা ছাড়ো! তুমি না হয় পাপ করে তার শাস্তি পাচ্ছো মেনে নিলাম।কিন্তু আমি? আমি কীসের শাস্তি পেলাম শ্রাবণ? এই উত্তর টা দিতে পারবে?আর অন্ত ও কীসের শাস্তি পাচ্ছে বলতে পারবে? তোমার একার জন্য অন্ত আর আমার জীবন টা তছনছ হয়ে গেল।অন্তর গায়ে লেগে গেল বিবাহের তকমা।অন্তকে কি কেউ আর ভালবাসবে?কেউ কি এটা বুঝবে আমার সম্মান বাঁচানোর জন্য আমাকে বিয়ে করেছিলো।অন্ত যাকেই ভালবাসতে চাইবে সে রিজেক্ট করবে। কথা শুনিয়ে বলবে ও বিবাহিত। বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্ক অন্তর জীবনটা পুতুল খেলা বানিয়ে দিল।”

“জীবন টা এমন হল কেন আমার প্রিয়তা?এত খারাপ জীবন কেন পেলাম আমি?আমার কপাল এত খারাপ কেন বলতে পারো?এত নিকৃষ্ট মানুষ হিসাবে আমার জন্ম হল কেন বলতে পারো? এই নিকৃষ্ট ছেলেটা না পারে নিজেকে ক্ষমা করতে না পারে মরে যেতে।শান্তি নামক কিছুই আমার কপালে নেই কেন বলতে পারো? দীর্ঘদিন আমি মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করছিলাম যেদিন থেকে তোমাকে ভালবাসতে শুরু করলাম সেদিন থেকে অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব হতে শুরু করল।আমার জীবনে পাওয়া শান্তি টুকুই তুমি। ”

“কপাল তোমার নয় আমার খারাপ শ্রাবণ।কপাল যদি খারাপ ই না হবে একজন কে ভালবেসে অন্য জনের সাথে সংসার করতে হতনা।”
“এইসব আমার জন্য হয়েছে।আমি দায়ী প্রিয়তা।ট্রাস্ট মি প্রিয়তা আমি তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিব।আমি তোমাকে সুখের ঠিকানায় নিয়ে যাব।তোমাকে একটা সুখের রাজ্যের রানি বানাব।চলো প্রিয়তা দূর অজানায় হারিয়ে যায় কোথাও।”
প্রিয়তা কাদতে কাদতে বলল,

“সুখের লোভ আমাকে আর দেখিও না শ্রাবণ।আমি ঘৃণা করি এসব এখন।আমার জীবনে আমি ঠকেছি। আমার বিশ্বাস আমার ভালবাসা আমাকে ঠকিয়েছে।আমার সাজানো ফুলের বাগানে বিষাক্ত পোকামাকড় ঢুকেছিলো আমি তা বুঝতেও পারিনি।”

“আমাকে একটা সুযোগ দাও প্রিয়তা।জাস্ট একটা।আমার চোখের দিকে তাকাও তুমি।”
“তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো আমি এখন বিবাহিত শ্রাবণ।”
“আমি জানি এই বিয়ে তোমার ইচ্ছাতে হয়নি।তুমি আমাকে ছাড়া ভাল নেই।”

“আমি তোমাকে ছাড়া ভাল ছিলাম না শ্রাবণ একথা সত্যি।তোমার বেইমানি আমাকে ভাল থাকতে দেয়নি।আমি প্রতিটা মুহুর্তে কষ্ট পেয়েছি তোমার প্রতারণার কথা ভেবে।আমার এই জীবনে তোমার মুখ দেখার ইচ্ছা ছিলনা।আমি মেনে নিতে পারিনি তোমার প্রতরণা।জীবনে একবার তোমার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা ছিল।খুব জানতে ইচ্ছা ছিল আমার সহজ সরল মন টা কেন ভেঙে চুরে শেষ করে দিলে।কি অপরাধ ছিল আমার।”

“আমি তোমাকে কখনো ঠকায়নি প্রিয়তা।আমি যা ভেবে এসেছিলাম এখানে তা আমি করতে পারিনা।আমার সব মিথ্যার মাঝে তোমাকে ভালবাসা টুকু ছিল চরম সত্য।”

“হয়ত সত্য! কিন্তু মেয়েরা একবার অভিমানে মুখ ফেরালে আর সেখানে ফিরতে পারেনা শ্রাবণ।মেয়েরা যত্ন আর ভালবাসায় আটকায়।অপমানিত স্থানে ২য় বার ফিরেনা।একবার অভিমানে মন থেকে উঠে গেলে সেখানে আর জায়গা দেওয়া যায়না শতচেষ্টা করেও।আমি পরে বুঝতে পেরেছি শ্রাবণ তোমার ভালবাসা হয়ত সত্য ছিল কিন্তু রাগে অভিমানে আমি অনেক দূরে সরে গিয়েছি।আর কখন কীভাবে আমি জানিনা শ্রাবণ।আমি হাজার বার নিজের মনকে প্রশ্ন করেছি আমি কি তোমাকে ভুলে গিয়েছি, আমি কি এখনো তোমাকে ভালবাসি।আমি আগের মত আর সেই অনুভূতি পায়না শ্রাবণ।কিন্তু তুমি কষ্ট পেওনা শ্রাবণ।প্লিজ শ্রাবণ।”

“তুমি কি বদলে গেলে প্রিয়তা অন্যদের মত?তুমিও বুঝলে না আমাকে।অথচ এই পৃথিবীতে একজন মাত্র মানুষ ছিল আমাকে বোঝার মত সেই মানুষ টা তুমি।সবাই আমাকে ভুল বুঝেছে, সবাই আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল তুমি আমাকে কখনো ভুলবে না।আমি জানি তুমি আমাকে ভুলতে পারোনি।এসব রাগে অভিমানে বলছো তাইনা? প্লিজ প্রিয়তা খারাপ কিছু বলোনা।যে মেয়ে আমি ছাড়া পা-গ-ল হয়ে যেত সে আমাকে এত সহযে ভুলতে পারেনা।তুমি আমার সাথে চলো প্রিয়তা।আমার সাথে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“এখন আর তা সম্ভব নয় শ্রাবণ।এখন সবাই বলবে আমি বিয়ের পর স্বামির ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে।অন্তকে মানুষ ছিঃছি করবে।বলবে ওর বউ ওকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে।ওকে মানুষের মাঝে মুখ দেখাবে কীভাবে?অন্তর এই অপমান আমি সহ্য করতে পারব না।”

“তুমি অন্তকে নিয়ে একটু বেশীই ভাবছো না?”
“কারণ আমি চাইনা আমার জন্য কারো মান সম্মান নষ্ট হোক।”
“শুধুই কি মান সম্মান নাকি অন্যকিছু?”
“আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করোনা প্লিজ শ্রাবণ!”
“বলো তুমি কেন অন্তর ব্যাপারে এত ভাবছো? ভালবাসো তুমি অন্তকে?”
“কারণ আমি অন্তর সন্তানের মা হতে চলেছি।”

শ্রাবণের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।মাটি থেকে উঠে দাঁড়াল।পৃথিবীটা যেন ভো ভো করে ঘুরছে।চোখের সামনে যেন সব খন্ড বিখন্ড হতে লাগল শ্রাবণের।চরম অবাক হয়ে বলল, “কি বললে তুমি?”
“আমি ঠিক ই বলছি শ্রাবণ।আমি অন্তর সন্তানের মা হতে চলেছি।আমি তোমার সাথে গেলে একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে তার বাবার থেকে আলাদা করতে হবে।মা হয়ে নিজের সন্তানের সাথে এত বড় অন্যায় আমি কীভাবে করব বলো তুমি।”
“শুধুই কি সন্তান নাকি অন্তর প্রতি ভালবাসা প্রিয়তা।”

“অন্ত আমার স্বামি শ্রাবণ।আমার খারাপ সময় রাতের পর রাত জেগে আমাকে পাহারা দিয়েছে।কীভাবে আর কবে কখন আমি অন্তকে ভালবেসেছি জানিনা।আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি শ্রাবণ।প্লিজ ক্ষমা করে দাও!”

শ্রাবণ বিস্ময়কর চাহনিতে তাকাল প্রিয়তার দিকে।সব কিছু কেমন স্বপ্নের মত লাগছে।তার প্রিয়তা এতটা বদলে গিয়েছে।মানুষ বুঝি এভাবেই বদলে যায়।যে মেয়েটা তাকে ছাড়া হাউমাউ করে কাদত।তাকে ছাড়া যে মেয়েটার ম-রে যাবার কথা ছিল সে মেয়েটা দিব্যি তাকে ভুলে অন্য কাউকে ভালবেসে ফেলল।শ্রাবণের কিছুই বলার ভাষা নেই।সে কি বলবে নিজেই বুঝতে পারছে না।এইজ মুহুর্তে মৃত্যু ই তার জন্য উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে।প্রিয়তা বুঝতে পারল শ্রাবণ কে অস্বাভাবিক লাগছে।শ্রাবণের টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা বলল, “তোমার কাছে যা চেয়েছিলাম আমি তা পাইনি শ্রাবণ।আমাকে ভালবেসে থাকলে একটা কথা দিতে পারবে প্লিজ!”

“বলো।”
“নিজের কোনো ক্ষতি করবেনা প্লিজ! তোমার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারব না।আবার আমার জীবন টা এলোমেলো হয়ে যাবে।যত কষ্টই হোক তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি আমার হৃদয়ের গহিনে আজীবন থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে।আমার হৃদয়ের গহীনে একটা সম্মানের জায়গায় তুমি থেকে যাবে আজীবন।একসাথে পথচলা আর হবেনা।আমি চাইলেও সেটা আর হবেনা।হৃদয়ঘটিত ব্যাপারগুলো জোর করে হয়না।কখনো আর সিগারেট খেওণা,নিজের ক্ষতি করোনা।আমি গেলাম শ্রাবণ।”

প্রিয়তা চলে গেল।শ্রাবণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।এই মেয়েটা আর তার নেই।শ্রাবণের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলল, “তুমি কি থেকে গিয়ে প্রমাণ করতে পারতে না সবাই ছেড়ে যাবার জন্য ভালবাসেনা।কিছু মানুষ হাজার ও বিপদে পাশে থাকে।পৃথিবীতে ভালবাসা বলে কিছুই নেই।কিছুই নেই।এখানে কেউ কাউকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসেনা।খারাপ সময়ে কেউ পাশে থাকেনা।সবাই স্বান্তনা দেয় কেউ শান্তি দেয়না।”

অন্ত গাডি হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল।প্রিয়তা যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে আমি শ্রাবণের সাথে পালিয়ে যাওয়ার আগে আপনার সাথে দেখা করে যাব।আপনি কোথাও যাবেন না এখানেই থাকবেন কিন্তু।প্রিয়তার কথা রাখতেই অন্ত দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তা হঠাৎ আজ অন্তকে সিগারেট খেতে দেখে বলল,” আপনিও সিগারেট খান নাকি?”
অন্ত দ্রুত সিগারেট ফেলে দিয়ে বলল, ” না আজ ই খাচ্ছি।”

“কেন?”
“তোমাকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি।”
“অবশ্যই বাধ্য আপনি।কারণ আমি আপনার বউ।আমাকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে একশবার বাধ্য।”
অন্ত কপাল টান টান করে প্রিয়তার দিকে তাকাল।প্রিয়তা নিজেকে তার বউ বলে দাবি করছে।অন্তকে ওভাবে তাকাতে দেখে প্রিয়তা অন্তকে বলল,

“একটা বিষয় বুঝলাম না।”
“কি বিষয়? ”
প্রিয়তা সকালের ইউরিন টেস্টের ছবি তুলে রেখেছিল।সেটাই অন্তর সামনে ধরে বলল, “এটা কি? কীভাবে হল এসব? আমি প্রেগন্যান্ট হলাম কীভাবে অন্ত।এতদিন তো আপনার সাথেই ছিলাম।”
অন্তর বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠল।এই ভয়টায় সে এতদিন ধরে পাচ্ছিলো।এখন কি প্রিয়তা তাকে ভুল বুঝবে।অন্ত ভয়ে ঢোক গিলল।মুখ শুকিয়ে এল।আমতা আমতা করে বলল, “না মানে।আসলে হয়েছে কি! ”

“কাপুরুষ কোথাকার।নিজের সন্তানসহ বউ এর দায়িত্ব অন্য একজনের ঘাড়ে চাপিয়ে বেঁচে যেতে চাইছেন।আমি না হয় খারাপ কিন্ত আপনার সন্তান তার কি দোষ। তার দায়িত্ব আপনি নিতে পারবেন না অন্ত?”
“এসব কি বলছো তুমি? তুমি জানো এই ঘটনার জন্য কতরাত ঘুমোয়নি আমি।আমি অনেকবার বলতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।”

“আমি ওই রাতের পরেরদিন থেকেই জানতাম।আমি বুঝেছিলাম আপনি ইচ্ছাকৃত করেন নি।আমাদের দু’জনের সম্মতিতে হয়েছিলো।আমিতো আপনার চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখেছি সেই ভালবাসা অন্য কাউকে দিয়ে মহান হতে চান।এত মহান সাজার ইচ্ছা কেন আপনার? আমি যেতে চাইলে আপনি যেতে দিবেন কেন?”
“কিন্তু শ্রাবণ।তুমি না শ্রাবণ কে?”…
“আমি কাউকে নয় আপনাকে চাই আর আমি আপনাকেই ভালবাসি।”

অন্তর দুইকান ঠিক না ভুল শুনল বুঝতে পারল না।সে হা করে তাকিয়ে রইলো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা হাসতে হাসতে বলল, “বেবি তোমার পাপ্পা দেখো কেমন বোকার মত তাকিয়ে আছে তোমার মাম্মিকে ভাল না বেসে।”
অন্ত প্রিয়তার পেটের দিকে তাকাল।সব যেন তার কাছে স্বপ্ন লাগছে।খুশিতে পা-গ-ল হওয়ার মত অবস্থা।চোখে অশ্রু মুখে হাসি।প্রিয়তা অন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৪৮

” আই লাভ ইউ অন্ত।জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি।আপনি আমার শেষ ভরসা।আর কষ্ট পেতে চাইনা আমি।”
অন্ত প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমি এইবার খুশিতে ম*রে যাবো। ”

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৫০