নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৫০

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৫০
Mousumi Akter

রজনিগন্ধ্যা ড্রিম হাউস। খুব বড় অক্ষরে লেখা নামটা কৃত্তিমআলোকরশ্মীতে চকচক করছে। রজনীর চোখ বন্ধ করে প্রান্তিক রজনিকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল।বাড়ির সামনে এসেই চোখ খুলল।চোখ খুলতেই রজনি ভীষণ অবাক হয়ে চারদিকে তাকাল।রজনিগন্ধ্যা ড্রিমহাইজ লেখাটা প্রথমে তার চোখ পড়ল।লেখাটা এত নিঁখুত আর সুন্দর করে লেখা রজনির চোখ জুড়িয়ে গেল দেখে।রজনি সাথে সাথে প্রান্তিকের মুখের দিকে তাকাল।প্রান্তিকের চোখে মুখে হাসি।প্রান্তিক রজনিকে অবাক হতে দেখে বলল, ” ভেতরে চলুন ম্যাডাম।আপনার ড্রিম হাউজটা কেমন হয়েছে জানাবেন।আট মাস ধরে বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার এর সাহায্য একটু একটু করে সাজানো এই বাড়ি।”

রজনি খুব অবাক হয়ে বলল, ” আমাদের তো বাড়ি আছে।তাহলে আবার বাড়ি কেন?”
“আমাদের আছে তোমার তো নেই।এটা শুধুই তোমার।”
“আমি বাড়ি দিয়ে কি করব।”
“ভেতরে চলো চলছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাড়িতে ঢুকতেই গ্যারেজ। আর গ্যারেজে রাখা একটা খোলা জিপ।প্রান্তিক রজনিকে বলল, ” আমরা হুটহাট এই জিপ নিয়ে বের হবো ট্যুরে।কখনো মধ্যরাতে, কখনো ঝুমবৃষ্টিতে,কখন তপ্ত রোদে।এই খোলা জিপে দু’জনে কখনো সমুদ্রে যাবো,কখনো পাহাড়ে, কখনো মেঘের দেশে।প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবো একান্তে দু’জনে সময় কাটাতে।মধ্যরাতে তোমাকে ডেকে তুলব। তুমি ঘুমে ঢুলবে।আমি ঘুমন্ত প*রীটাকে কাঁধে তুলে নিয়ে জিপে বসিয়ে দিবো।তারপর প্রকৃতির মাঝে ছুটব।কি দারুণ হবে একবার ভেবে দেখো সুইটহার্ট। তোমার রোমান্টিক হাজবেন্ড তোমার জন্য কত রোমান্টিক প্ল্যান করে রেখেছে।নির্জনে নিয়ে আদর করতে করতে তোমাকে অতিষ্ট করে ছাড়ব আই প্রমিজ।”

“সব সময় অসভ্য কথা মুখে লেগেই থাকে।”
“আচ্ছা সামনে চলো। ”
নিচতলায় বড় ড্রয়িং রুম সহ তিনটা বেডরুম।ড্রয়িং এ রজনি আর প্রান্তিকের বিয়ের ছবি বড় করে লাগানো আছে।এরপর উপরে গেল।দোতলায় গিয়ে রজনি আরো অবাক হল।বিশাল বড় বেডরুম।বেডরুমের এক ওয়ালজুড়ে বিশাল বড় বুকশেলফ।বুক শেলফ এ দশ’হাজার বই রাখা।

বুকশেলফ টা এত সুন্দর করে সাজানো রজনি আগে কখনো এত সুন্দর বুকশেলফ দেখেনি।বুকশেল্ফের মাঝে মাঝে আর্টিফিশিয়াল রজনীগন্ধ্যা রাখা।এ রুমে আর বেশী কিছু নেই।একটা বড় বেড আর একটা বড় ড্রেসিন টেবিল রাখা।আরেক সাইডের ওয়ালজুড়ে রজনি আর প্রান্তিকের কাপল ছবি লাগানো।ওয়ালজুড়ে এত ছবি দেখে রজনির চোখে তাক লেগে গেল।প্রান্তিক জানালা খুলে দিল।জানালার পাশেই নদী।প্রান্তিক রজনির কাঁধে হাত রেখে বলল,

“দেখো নদীর শীতল হাওয়া বইছে রজনীগন্ধ্যা।আমরা যখন দু’জন বুড়ো-বুড়ি হয়ে যাবো বেলকনিতে বসে নদীর হাওয়া খাবো আর বুকশেলফ থেকে বই নিয়ে মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে দিয়ে বই পড়ব।সাথে থাকবে ধোঁয়া উড়া কফির মগ।যৌবন থেকে বৃদ্ধকাল তোমার সাথে কাটিয়ে দিব।

যখন চামড়ায় ভাজ আসবে তখন ওই ওয়ালটার দিকে তাকিয়ে ভাবব আহা!কত সুন্দর সময় পার করে এসেছি আমরা।এই পুরা বাড়ি জুড়ে শুধু আমাদের ভালবাসার অস্তিত্ব থাকবে।এ বাড়িটা আমাদের ভালবাসার বাড়ি।এই বাড়ি জুড়ে আমার ছেলে -মেয়ে নাতি-নাতনীদের আনাগোনা থাকবে।জীবন টা কেমন স্বপ্নের মত লাগে বুঝলে।তাকিয়ে দেখো বাইরে হাজারো ফুলের সমারোহ।আমি আমার সব থেকে প্রিয় ফুল রজনিগন্ধ্যার চাষ বেশী করেছি।রজনিগন্ধ্যার দিকে তাকালেই তোমার মুখটা ভেষে ওঠে।”

“আপনি এত কিছু কখন করলেন?”
“আজ আমার একমাত্র বউ এর জন্মদিন।আমি কি আমার ভালবাসা কে সারপ্রাইজ দিতে এটুকু করতে পারিনা।যদি একটু স্পেশাল কিছুই না করতে পারি তাহলে আমি কীসের আলাদা প্রেমিক পুরুষ হলাম বলো।আমার ভালবাসা তো একটি অন্য রকম ই হবে তাইনা?”

“তাই বলে আপনি এত টাকা খরচ করবেন?”
প্রান্তিকের ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি।রজনির দিকে তাকিয়ে বলল,
“শুধু টাকায় দেখলে আমার ভালবাসাটা দেখলে না রজনিগন্ধ্যা।”
রজনিপ্রান্তিকের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ” আপনাকে কে বলেছে আমাকে ভালবাসেন এটা বুঝাতে এত নামি দামি জিনিস দিতে। আমি জানি আপনি আমাকে অন্নেক বেশী ভালবাসেন।আমার জীবনে গড গিফটেড জিনিস টাই হলেন আপনি।আমার তো আর কিছুই লাগবেনা।”

প্রান্তিক রজনির হাতে কিছু কাগজ দিয়ে বলল, “এই বাড়ির দলিল।আমি তোমার জন্য বাড়ি গাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স এত পরিমাণ রেখেছি কোনদিন যদি আমি না ও থাকি তোমাকে কখনো অসহায় এর মত কারো কাছে হাত পাততে হবেনা।”
“থাকবেন না মানে?”

“কে বলেছে থাকব না।কথার কথা বললাম।এই বাড়িতে তুমি রোজ শাড়ির আঁচলে চাবি বেঁধে ঘুরবে।চাবির সাথে চাবির ঘর্ষণের শব্দে মনে হবে রানি ঘুরছে। তাকিয়ে দেখো আমি রানিদের মত একটা চেয়ার বানিয়ে রেখেছি।আমাদের ছেলে মেয়ে নাতি নাতনী হলে তুমি ওই চেয়ারে বসে দিক নির্দেশনা দিবে।আমিও নাতি নাতনীদের সাথে রানির হুকুম পালন করব।তোমার নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ শুনব রোজ।তুমি আমার রোজদিনকার অভ্যাস রজনিগন্ধ্যা।তোমাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন আমার।আমি তোমাকে উচ্চ শিক্ষিত বানাব।গাড়ি ড্রাইভ শেখাব।কয়েক টা দেশ ভ্রমন করাব।আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখে যেন রজনিগন্ধ্যা।আমি তোমাকে প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত স্পেশাল ফিল করাব।আমি বোঝাব ভালবাসা সুন্দর, ভয়ংকর রকমের সুন্দর। ”

রজনির কেন যেন ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে।সে কিছুই না বলে প্রান্তিক কে জড়িয়ে ধরল।খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি আপনাকে ভালবাসি।ভীষণ ভালবাসি।আমার এক জীবনের পূণ্যের ফল আপনি আমার জীবনে এসেছেন।আমার এত কিছু লাগবে না। শুধু আপনার বুকে আমাকে জায়গা দিয়ে আগলে রাখুন।শক্ত ভাবে আগলে রাখুন।আপনার বুকেই যেন আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়।”

প্রান্তিক রজনিকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে রজনির কপালে চুমু দিয়ে বলল, “বুকের এই জায়গা টা তোমার নামেই রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই রজনিগন্ধ্যা।”
পশেই একটা কেক রাখা।প্রান্তিক রজনিকে কেকের কাছে নিয়ে গেল।কেকটা একদম ই ছোট।প্রান্তিক রজনির জন্মদিনের ব্যাপারে কাউকে জানায়নি।প্রান্তিক চাইছে আজকের দিনটা একান্তই রজনির সাথে কাটাতে।কেন যেন তার আজ সারাক্ষণ রজনিকেই দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে।

একটুও কাছ ছাড়া করতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।প্রান্তিকের পরণে সাদা ব্লেজার, রজনির পরণে সাদা জরজেট শাড়ি।শুভ্ররঙা ড্রেসে দু’জনকেই ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে।কেক কাটা শেষ হলে দু’জনে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল।প্রান্তিকের বুকে মাথা রেখে রজনি দাঁড়য়ে আছে।প্রবাহমান নদীর শীতল হাওয়া দু’জন কে প্রশান্তি দিচ্ছে।এর ই মাঝে প্রান্তিকের প্রচন্ড কাশি শুরু হল।কাশতে কাশতে দম বন্ধ হবার মত অবস্থা। প্রান্তিক কে এভাবে কাশতে দেখে রজনি ঘাবড়ে গেল।ঘাবড়ে গিয়ে দৌঁড়ে রুমে গেল।রুম থেকে পানি নিয়ে এল।প্রান্তিক পানি খেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হল।রজনি বেশ ভ-য় পেয়ে গেল।উত্তেজিত হয়ে রজনি বলল, “এমন কাশি হল কেন হঠাৎ।”

“জীবনে অনেক বড ভুল করেছি সিগারেট খেয়ে।এখন খুব আফসোস হয়।কেন সিগারেট খেলাম জীবনে।ক্ষতিকারক জিনিস কখনো জীবনে ভাল কিছু দিতে পারেনা।”
“বিছানায় চলুন।আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।”

প্রান্তিক হঠাৎ কেমন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।বিছানায় এসে সুয়ে পড়ল।এরই মাঝে ফোন এল প্রিয়তার নরমাল ডেলিভারীর ডেট এর আগেই পেইন শুরু হয়েচগিল।কোনো ডাক্তার নার্স ছাড়াই ডেলিভারি হয়েছে প্রিয়তার।ফুটফুটে সুন্দর একটি পুত্র সন্তান লাভ করেছে।রজনি খুশিতে লাফিয়ে উঠল।প্রান্তিক কে নিউজ টা দিবে। কিন্তু প্রান্তিক ততক্ষণে ঘুমিয়ে গিয়েছে।রজনি প্রান্তিকের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমাকে এত গিফট দিলেন আমি গিফট না দিলে হয়।আগামিকাল দারুণ সারপ্রাইজ আছে আপনার জন্য।”

রজনি ভিডিও কলে প্রিয়তার বেবিকে দেখছে।বাড়ির সবাই প্রিয়তার বেবি নিয়ে বিজি আছে।রজনির উচিৎ এখনি ওখানে যাওয়া।কিন্তু কীভাবে যাবে।প্রান্তিক তো হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।রজনি আঞ্জুমান কে ফোন দিয়ে বলল,
“আম্মা আমরা তো ঘুরতে এসেছিলাম কিন্তু আপনার ছেলে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।আর ক্লান্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছে।এখন কি ডাকব নাকি ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করব।”
“তুমি নিশ্চিন্তে আমার ছেলের সাথে ওখানে থাকো মা।এখানে এখন না আসলেও চলবে।”

অন্তর কোলে তার ছেলেকে দেওয়া হল।অন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটা দেখতে হুবহু তারমত।খুশিতে আত্মহারা অন্ত।ছোট বাচ্চা কোলে নেওয়ার মত অভ্যাস অন্তর নেই তবুও নিজের ছেলেকে খুব যত্নের সাথে কোলে নিল।প্রিয়তাও সুস্থ আছে।অন্ত প্রিয়তা আর ওর বেবির মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এত সুখ, এত শান্তি তার নামে লেখা ছিল বুঝি।আসলে কেউ ই জানেনা কার কপালে কখন কি হয়।

পরের দিন সকাল হয়ে গিয়েছে।রজনির পেটের উপর মাথা রেখে সুয়ে আছে প্রান্তিক।তখন ভোর সকাল। গভীর ঘুমে মগ্ন প্রান্তিক। বাইরে পাখির কলরবে ঘুম ভাঙল রজনির। ঘুম ভাঙতেই পেটের উপর ভারী কিছু অনুভব হল।অনুভব হতেই তাকিয়ে দেখল প্রান্তিক মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।প্রান্তিককে ভোর সকালে খালি গায়ে এভাবে দেখে ভীষণ লজ্জা পেল রজনি। প্রান্তিকের ছোট চুলের মাঝে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,

“শুনছেন? সকাল হয়ে গিয়েছে উঠুন এখন।”
প্রান্তিক রজনির হাতটা ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে আবার ও ঘুমে মগ্ন হল।রজনি খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারল প্রান্তিক উঠবেনা।প্রান্তিককে এভাবে উঠানো যাবেনা।তাই রজনি নিজেই উঠার চেষ্টা করল।উঠতে যেতেই প্রান্তিক রজনির কোমর জড়িয়ে ধরল শক্তভাবে।পুরুষালী হাতের শক্ত বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়ানো সহজ নয়।রজনি কোনো উপায় না পেয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলল,

“দেখুন আমি জানি আপনি জেগে আছেন।শুধু শুধু ঘুমের ভান ধরেছেন।এত নাটক করতে হবেনা উঠুন প্লিজ।”
প্রান্তিক রজনির কথার কোনো উত্তর দিলনা।সে আরামে ঘুমোচ্ছে।রজনি কি করবে বুঝতে পারছেনা।প্রান্তিক নাছোড়বান্দা।প্রতিদিন সকালে রজনিকে এভাবেই জাপটে ধরে রাখে।আর রজনির উঠতে অনেক সময় লেগে যায়।রজনি আবার প্রান্তিক কে ডেকে বলল, ” আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে উঠুন জলদী।”
প্রান্তিক ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল, ” কেন মিথ্যা বলছো সুইটহার্ট? আমার ঘুম ভাঙাচ্ছো কেন?”

“আপনি কি অনন্তকাল ই ঘুমোতে চান নাকি?”
” এমন সফট আর সুইট বালিশ পেলে কে উঠতে চাই বলো!”
“এটা কি বালিশ?”
“হুম! আমার স্পেশাল বালিশ।”
“প্রিয়তার ছেলে হয়েছে জানেন সে খবর।”
প্রান্তিক এক লাফে উঠল।উঠে বলল,” সিরিয়াসলি?”
“জি স্যার সিরিয়াসলি।”

” আরে আমি মামা হয়েছি। চলো চলো বাসায় চলো।”
প্রিয়তা আর রজনি বাসায় গেল।প্রান্তিক কে খুশিতে কেমন পা*গ*ল পা*গ*ল লাগছে।ভীষণ অস্থিরতা তার মাঝে। রজনি প্রান্তিকের খুশি আর অস্থিরতা দেখে মনে মনে বলছে ” আপনি নিজেও বাবা হতে চলেছেন।এই খুশির খবর শুনলে কি করবেন তখন।”

প্রান্তিক বাড়িতে ঢুকেই জোরে জোরে তার আম্মুকে ডাকল।আঞ্জুমান জানে প্রান্তিক প্রিয়তার ছেলেকে এখনি কোলে নিতে চাইবে।আঞ্জুমান প্রিয়তার ছেলেকে নিয়ে বাইরে এল।প্রান্তিকের কোলে তুলে দিল।প্রান্তিক বেবিটাকে কোলে নিয়ে মামা মামা বলে বারবার ডাকছে। আর আঞ্জুমান কে বলল, আজ থেকে ও আমার সাথে থাকবে। আমার মত তৈরি করব ওকে। প্রান্তিক চৌধুরীর ভাগনে সে তো আর যে সে কেউ না তাইনা?”
অন্ত বেরিয়ে এসে বলল, ” মামার মত এক মেয়েকে দেখে পা*গ*ল হবি। আর তোর মামার থেকে শিখবি কীভাবে মেয়ে পটাতে হয়।”

প্রান্তিক অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, ” তোর মত ভীতু হব? ভালবাসলাম আর বললাম না।অন্য জন্য ভাগিয়ে নিয়ে যাবে নিজের প্রেমিকা।”
ওরা হাসাহাসি করছে কথা বলতে বলতে।

সকাল গড়িয়ে রাত হল।সন্ধ্যা থেকে প্রান্তিক কে কেমন যেন দেখাচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে। কোনো ভাবেই স্থির হয়ে বসতে পারছে না।ভেতরে কেমন অস্থির লাগছে তার। মাথা কপাল প্রচুর ঘামছে। রজনি প্রান্তিক কে এমন অস্থির দেখে জিজ্ঞেস করল, ” কেমন লাগছে আপনার? আপনার কি খারাপ লাগছে?”
প্রান্তিক রজনির হাত ধরে তার পাশে বসিয়ে বলল, ” আমার পাশে কিছুক্ষণ বসো রজনিগন্ধ্যা।আমার কেমন যেন লাগছে।”
প্রান্তিকের মত শক্ত মানুষের মুখে এমন কথা শুনে রজনির বুঁক কেঁপে। রজনি দুঃচিন্তায় কেদে দিয়ে বলল, ” এখনি ডাক্তারের কাছে চলুন।প্লিজ এখনি চলুন।”

“তুমি আমার পাশে থাকো।আমি সুস্থ হয়ে যাবো।ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে না।মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো রজনিগন্ধ্যা?”
“কি?”
“শ্রাবণ এর ভালবাসা কেড়ে নেওয়া ওকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি বোধহয় আমি পাবো।এমন ভাবে পাবো যতটা ও পেয়েছে।কিন্তু তুমি বলো ভাই হিসাবে আমি কীভাবে আমার বোনকে ওর হাতে তুলে দিতাম।ভাই হিসাবে আমি পারিনি।”
“এসব বাজে কথা বাদ দিন।আমি অন্ত ভাইয়াকে ডাকি।”

প্রান্তিকের বুকে আরো বেশী ব্যাথা শুরু হল।একদম ভেঙে চুরে যাচ্ছে ভেতরে।প্রান্তিক আর নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা।বুকে হাত দিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়ল।
রজনি জোরে চিৎকার দিয়ে বাড়ির সবাইকে ডাকল।অন্ত, মাহবুব,আঞ্জুমান,অন্তর মা-বাবা সবাই ছুটে এল।রজনি হাউমাউ করে কাদছে প্রান্তিক কে ধরে।ওরা এসে প্রান্তিক কে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ল।আঞ্জুমান ও কেদে দিয়ে বলল, ” আমার বাবুর কি হয়েছে?”

অন্ত তড়িঘড়ি করে বলল, “আমি বাইক বের করছি।বাবা আপনারা ভাইকে সবাই ধরে নিচে নিয়ে আসুন।এখন এম্বুলেন্স ফোন দিলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।আমি বাইক চালাব ভাইকে মাঝে বসিয়ে একজন পেছন থেকে ধরে রাখবেন।ভাবি আপনারা পেছনে আসুন।”

সবাই প্রান্তিক কে ধরে নিচে নামাল।অন্ত বাইক স্টার্ট দিল।প্রান্তিকের বুকে ব্যাথা করছে তবুও কিছুটা স্ট্রং আছে।জ্ঞান আছে সম্পূর্ণ। রজনিকে কাদতে দেখে রজনির হাত ধরে বলল,
“তুমি এমন পা-গ-লির মত কাদছো কেন? আমি কি ম-রে যাচ্ছি নাকি।আমার কিচ্ছুই হয়নি।শুধু শুধু হসপিটাল নিচ্ছো তোমরা।”

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৪৯

প্রান্তিক বাইকে উঠল পেছনে প্রান্তিকের বাবা উঠে প্রান্তিক কে ধরে বসল।অন্ত বাইকে চালিয়ে দিল।বাইক চলছে প্রান্তিক কেমন অসহায় চোখে রজনির দিকে তাকাল।রজনি প্রান্তিকের ওই চাহনির দিকে তাকিয়ে আরো জোরে কেদে দিল।বাইকে বসা অবস্থায় প্রান্তিক আরো নেতিয়ে পড়ল।অস্বাভাবিক ঘাম শুরু হল।এতক্ষন কিছুটা শক্ত ছিল। কিন্তু এখন একদম দূর্বল হয়ে পড়েছে।

নয়নে লাগিল নেশা শেষ পর্ব