অনেক সাধনার পরে পর্ব ৯

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৯
অরনিশা সাথী

শুক্রবার, সকাল দশটা। জারাফ ফোন অন করতেই দেখলো অসংখ্য মিসডকলের ম্যাসেজ। মেসেঞ্জারে’ও অসংখ্য ম্যাসেজ আর কল এসেছে। সবগুলোই রুজবা করেছে। জারাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেসেঞ্জারে রুজবাকে কল করলো।
মেসেঞ্জারে ফোন কল আসতেই রুজবা চমকে মাথা তুলে তাকায়। দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে দেখে জারাফের কল। রুজবা দ্রুত ফোন রিসিভ করে বললো,

–“হ্যাঁ জারাফ? কোথায় তুমি? তুমি ঠিক আছো তো? তোমার ফোন অফ ছিলো কেন এই তিনদিন?”
জারাফ ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বললো,
–“একে একে প্রশ্ন করো, একসাথে এত প্রশ্নের উত্তর কি করে দেবো?”
–“আচ্ছা কোথায় আছো তুমি?”
–“বাসায়।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“দেখা করবো তোমার সাথে ইমারজেন্সি। কলেজের পাশের ওই ক্যাফে’তে আসতে পারবে? যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো?”
জারাফ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
—“আচ্ছা।”
–“আমি বের হচ্ছি তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যে?”
–“একসাথেই যাই?”
–“নাহ, কেউ দেখলে সমস্যা হবে।”
–“আচ্ছা।”

রুজবা আর বেশি কিছু না বলে লাইন কেটে দিলো। শারমিন বেগম কিচেনে দুপুরের রান্না করছিলো। রুজবা শারমিনের পেছনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“মা একটু মার্কেটে যাওয়ার দরকার ছিলো, যাই? তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।”
–“এ সময় বের হবি? আজ তোর কাবিন ভুলে গেলি সে কথা? এখন ছেলের বাড়ির লোকজন যদি দেখে কি ভাববে বল তো? অন্যসময় যাস, আজ দরকার নেই যাওয়ার।”

–“মা প্লিজ যাই না। চলে আসবো আমি।”
শারমিন বেগম কিছু একটা ভেবে বললো,
–“আচ্ছা যা, দ্রুত বাসায় ফিরবি।”
রুজবা সম্মতি জানিয়ে দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। মিনিট দশেকের মাথায় ক্যাফেতে গিয়ে উপস্থিত হলো রুজবা। একটা কোনার টেবিলে উদাস মনে জারাফকে বসে থাকতে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলো ও। সাদা টি-শার্ট আর কালো জিন্স গায়ে জড়ানো। জারাফকে কেমন যেন এলোমেলো লাগছে। রুজবাকে দেখে জারাফ মৃদু হেসে বললো,

–“বসো।”
রুজবা চেয়ার টেনে বসলো। জারাফ দুটো আইসক্রিম দিতে বললো এখানে। রুজবার আইসক্রিম পছন্দ। কিছুক্ষণ বাদে একজন এসে আইসক্রিম দিয়ে গেলো। রুজবা সরাসরি প্রশ্ন করলো,
–“এই তিনদিন তোমার ফোন অফ ছিলো কেন জারাফ? জানো কতবার ফোন ম্যাসেজ করেছি আমি?”
–“হ্যাঁ, ফোন অন করার পর দেখলাম।”
–“কোথায় ছিলে তুমি?”
–“হসপিটালে।”

জারাফের এমন কথায় রুজবা হকচকিয়ে যায়। দ্রুত জারাফের হাত ধরে বললো,
–“হসপিটালে? হসপিটালে ছিলে কেন? কি হয়েছে তোমায়? তুমি ঠিক আছো তো?”
–“আমি ঠিক আছি রুজ।”
–“তাহলে? তাহলে হসপিটালে ছিলে কেন?”
–“বাবা’কে নিয়ে গিয়েছিলাম।”
–“কি হয়েছে আংকেলের?”

–“বাবা আর নেই রুজ।”
কথাটা বলতে বলতেই জারাফের চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। চমকে তাকায় রুজবা। এরকম কিছু ও মোটেও আশা করেনি।
ক্যাফের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রুজবা আর জারাফ। জারাফ অনেকটা সময় যাবত নিশ্চুপ হয়ে আছে। রুজবা বললো,
–“কিভাবে হলো?”

–“সেদিন তোমার আব্বুর সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ করেই বাবা মায়ের ঘর থেকে মায়ের চিৎকার শুনতে পাই। গিয়ে দেখি বাবা যেন কেমন করছে। বাসায় এক প্রকার কান্নাকাটি পড়ে গেলো। মাগরিবের নামায পড়েও বাবা সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরেছে। হঠাৎ করেই এরকম হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডক্টর জানায় এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না কেউ। অবস্থা বেগতিক দেখে এখান থেকে ঢাকা পাঠানো হয়। তাতেও লাভ হয়নি, মঙ্গলবার দিন বিকেলেই হঠাৎ আবার স্ট্রোক করে আমাদের সবাইকে ছেড়ে বাবা চলে যায় রুজ। আমায় আর আমার ছোট্ট বোনটাকে এতিম করে চলে গেলো উনি।”

কথাগুলো বলতে বলতে জারাফের গলা ধরে আসছিলো। হয়তো কান্না আটকানোর প্রয়াশ চালাচ্ছিলো। কিন্তু লাভ হলো না। সেই চোখ ভেঙে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। রুজবা জারাফের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“কেঁদো না প্লিজ। তুমি ভেঙে পড়লে আন্টি আর জুহিকে কে সামলাবে বলো? তোমাকে শক্ত হতে হবে তো।”
–“আমি পারছি না রুজ। আমার চারিপাশ অন্ধকার লাগছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। মায়ের দিকে তাকাতে পারছি না আমি।”
রুজবা জারাফের হাত ধরে বললো,

–“পারতে হবে৷ তোমার সামনে অনেক দায়িত্ব জারাফ। আন্টি আর জুহিকে ভালো রাখতে হবে। সংসারের হাল ধরতে হবে।”
জারাফ কিছু বললো না। রুজবা বেশ কিছুক্ষণ বোঝালো জারাফকে। শেষে জারাফ বললো,
–“ইমারজেন্সি ডাকলে? কোনো সমস্যা হয়েছে? আর আংকেল ওদিন হঠাৎ করে কথা বলে তোমাকে পছন্দ কিনা জানতে চাইলো যে?”

এতক্ষণে রুজবার মনে হলো যে আজ ওর কাবিন, অন্য একটা অচেনা ছেলের সাথে। কথাটা মাথায় আসতেই রুজবার চোখমুখ মলিন হয়ে গেলো। রুজবা ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,
–“জারাফ আই লাভ ইউ।”
এরকম মূহুর্তে রুজবার মুখে ভালোবাসার কথা শুনতে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না জারাফ। নিজেকে সামলে নিয়ে জারাফ বললো,

–“তোমার ফিলিংস সম্পর্কে আমি অবগত রুজ।”
রুজবা কাতর কন্ঠে জানতে চাইলো,
–“তোমার ফিলিংস নেই আমার জন্য? ভালোবাসো না আমাকে?”
জারাফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
–“হ্যাঁ বাসি।”
রুজবা আচমকা জারাফকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–“তাহলে প্লিজ একবার আমার আব্বুর সাথে কথা বলো। আমি এই বিয়েটা করতে চাই না জারাফ। আমি ভালোবাসি তোমাকে।”
রুজবার মুখে বিয়ের কথা শুনেও রীতিমতো চমকালো জারাফ৷ রুজবাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“বিয়ে___বিয়ে মানে?”

রুজবা কাঁদতে কাঁদতেই সব বললো জারাফকে। সব শুনে জারাফ স্তব্ধ হয়ে রইলো। এই মূহুর্তে ওর কি করা উচিত ভেবে পেলো না। জোহরের আজান দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে। বিকেলেই রুজবার কাবিন। কথাটা যেন খুব বাজে ভাবে আঘাত করেছে জারাফকে। রুজবা জারাফকে বললো,

–“আব্বু আমায় গতকাল বিকেল অব্দি সময় দিয়েছিলো জারাফ, কিন্তু আমি কোনো ভাবেই কন্টাক্ট করে উঠতে পারিনি তোমার সাথে। তাই আব্বু কাল রাতেই ছেলের বাবার সাথে কথা বলে আজ বিকেলে কাবিন করবে বলে জানিয়েছে। এখনো সময় আছে জারাফ চলো না আব্বুর সামনে গিয়ে দাঁড়াই দুজনে। আমার বিশ্বাস আব্বু মেনে নিবে।”
জারাফ কি বলবে ভেবে উঠতে পারলো না। রুজবা জারাফের হাত ধরে টানতেই জারাফ রুজবাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
–“আমার এই মূহুর্তে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না রুজ।”

রুজবা জারাফের হাত ছেড়ে দিয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলো। জারাফ এগিয়ে গিয়ে রুজবার দুই বাহু ধরে বললো,
–“দুইদিন আগে আমার বাবা মারা গেছে রুজ। আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাবার মৃত্যুতে। খাওয়া গোসল বাদ দিয়ে একাধারে কেঁদে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে আমি কি করে তোমাকে বিয়ের করি রুজ বলো? পরিবারটা সামলাতে হবে। আমি ছাড়া আমার পরিবারের হাল ধরার আর কেউ নেই। আমার উপর আমার ছোট বোনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সব মিলিয়ে এই সময় তোমাকে বিয়ে করাটা পসিবল না রুজ।”

–“আর আমার ভবিষ্যৎ? আমি তোমাকে ভালোবাসি সে বেলায়? জারাফ আর কিছু ঘন্টা সময় আছে আমাদের হাতে। এর মাঝে আব্বুকে মানাতে পারলে আজ আমার বিয়েটা আটকে যাবে। আমি তোমার হতে পারবো। প্লিজ চলো, একবার কথা বলো।”

–“সম্ভব না রুজ। তুমি আমার সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছো না।”
–“আচ্ছা এখন বিয়ে করতে হবে না। আব্বুর সাথে অন্তত কথা বলে রাখো? সময় চেয়ে নাও আব্বুর থেকে। পরে তোমার সুযোগ সুবিধা বুঝে বিয়ে করবো আমরা।”

–“এই মূহুর্তে আমি কারো সামনে দাঁড়াতে পারছি না রুজ।”
–“অন্যকারো পাশে আমাকে দেখলে সহ্য করতে পারবে তো?”
কথাটা শুনে জারাফের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো আবারো। রুজবা কান্নাভেজা চোখেই আলতো হেসে বললো,
–“এখন কাঁদছো কেন জারাফ? বলো সহ্য করতে পারবে তো?”
জারাফ জোরে একটা শ্বাস টেনে চোখের কোনে জমা পানি মুছে বললো,

–“পারবো, পারতে হবে আমাকে।”
রুজবা আবারো এগিয়ে এসে বললো,
–“এই জারাফ চলো না আব্বুর কাছে যাই একটু। তুমি শুধু বলবে আমাকে ভালোবাসো। আর আব্বুকে আমি ম্যানেজ করে নিবো প্লিজ চলো। আজ যদি একবার আমি এখান থেকে একা ফিরে যাই তাহলে কিন্তু আর জীবনেও আমাকে পাবা না তুমি। প্লিজ একটু ভেবে দেখো, তুমি শুধু তোমার পরিবারের কথাটাই ভাবছো। আমার আর তোমার কথাটা একবারের জন্যও ভাবছো না তুমি। প্লিজ একটু ভাবো।”

–“দুই দিন আগে আমার বাবা মারা গেছে রুজ, এই মূহুর্তে আমার পরিবার’ই আমার কাছে সবার আগে। এখন আমি নিজের সুখের কথা ভাবতে পারছি না।”
রুজবা কিছু বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো। ফোন বের করে দেখলো ওর মা ফোন করেছে। রুজবা ফোন রিসিভ করে বললো,

–“এখনই আসছি মা।”
এইটুকু বলে শারমিন বেগমকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লাইন কেটে দেয় রুজবা। রুজবা জারাফের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,
–“ফিরতে হবে আমায়, আসছি।”

কথাটা বলে উলটো ঘুরে দুই কদম এগিয়ে আবারো থেমে যায়। পেছন ঘুরে জারাফের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“দ্বিতীয় এবং শেষ বারের মতো একটু জড়িয়ে ধরি তোমায়?”
জারাফ কিছু না বলে রুজবাকে জাপ্টে নিলো নিজের বুকের সাথে। জারাফের টি-শার্ট খামচে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রুজবা। জারাফ ভাঙা স্বরে বললো,
–“আই স্টিল লাভ ইউ রুজ।”

এতে যেন রুজবার কান্নার পরিমান বাড়লো। জারাফ’ও কাঁদছে। একসাথে কয়টা ধাক্কা সামলাবে ছেলেটা? প্রথমে বাবা চলে গেলো। যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসেছে সেই ভালোবাসার মানুষটা’ও আজ অন্যের বউ হবে। চোখের জল আটকাতে পারছে না জারাফ। রুজবা জারাফের চোখের পানি মুছে দিয়ে জারাফ গাল স্পর্শ করলো দুই হাতে। জারাফকে ক্ষানিকটা নিচু করিয়ে ওর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,

–“তোমাকে কখনো ভুলবো না আমি জারাফ। আমার মনের কোনো এক কোনায় ঠিক তুমি রয়ে যাবে। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার মৃত্যু হবে না কখনো। হয়তো ভালোবাসাটা আর কখনো প্রকাশ করা হবে না, চাইলেই তোমাকে ছুঁয়ে দেখা হবে না। কিন্তু তবুও তুমি থেকে যাবে আমার মনে।”
জারাফ রুজবার গাল ধরে ওর কপালে কপাল ঠেকাতেই চোখ দিয়ে আর এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কান্নাভেজা কন্ঠেই বললো,

–“ভালোবাসি তোমাকে, আই উইল মিস ইউ রুজ।”
রুজবা আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না ওখানে। জারাফের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি মুছে দৌড়ে নেমে গেলো ক্যাফের ছাদ থেকে। জারাফ ছাদের রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শুধু রুজবার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো নিষ্প্রাণ চোখে।

ঘরের দরজা আটকে কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে রুজবা৷ জারাফের সাথে দেখা করে এসেছে পর একেবারে গোসল সেরে সেই যে ঘরে দরজা আটকে বসেছে এখনো দরজা খুলেনি। আসরের আযান দিয়েছে, এখনো কিছু খায়নি ও৷ বেশ কয়েকবার শারমিন বেগম ডেকে গেছে ওকে। কিন্তু ও খেতে চায় না বলেছে। কিছুক্ষণ বাদেই মেহমানরা চলে আসবে। তাদের আপ্যায়নের সকল ব্যবস্থা করছে রুজবার মা-কাকি রা মিলে।

সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফারিন এসে দরজা ধাক্কাতেই রুজবা দরজা খুলে দেয়। ফারিনের হাতে ব্লু রঙের শাড়ি। মেহমান চলে এসেছে। রুজবাকে রেডি করাতে হবে এখন। ফারিন ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। রুজবার দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে ও। রুজবাকে যেন চিনতে পারছে না। চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে অনেকটা। ফারিন রুজবার হাত ধরে বললো,

–“এটা কি হাল করেছিস রুজবা?”
রুজবা কিছু না বলে ফারিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতেই সব বললো ফারিনকে। আজকে জারাফের সাথে দেখা করেছে ও। কি কি কথা হয়েছে সব জানালো। এবার ফারিনের খারাপ লাগতে শুরু করলো। ও কি রুজবা’কে খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললো? ড্রয়িংরুমে নুহাশ আর ওর পুরো পরিবার বসে আছে। একটু আগেই ফারিন জানতে পেরেছে নুহাশের সাথেই রুজবার কাবিন।

ফারিনের বেশ অনুশোচনা হচ্ছে। ফারিনের জন্যই রুজবা আজ এতটা কষ্ট পাচ্ছে। ও যদি সেদিন নুহাশকে ওর ভালোবাসার কথা জানাতে না বলতো তাহলে নুহাশ আজ ওর পুরো পরিবার নিয়ে এখানে উপস্থিত থাকতো না। ফারিন তো ভেবেছিলো জারাফের প্রতি ওর মোহ কাজ করে। জারাফ’ও ভালোবাসে না ওকে। কিন্তু কে জানতো দুজন দুজনকে এতটা ভালোবাসে? ওর জন্য আজ দুটো ভালোবাসার মানুষ এভাবে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। ফারিন রুজবাকে শান্ত করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। রায়হান সাহেবকে ডেকে এক সাইডে নিয়ে বললো,

–“কাকা কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে।”
–“বল।”
–“জারাফ আর রুজবা একে অপরকে খুব ভালোবাসে কাকা ওদের দিকটা একটু ভেবে দেখলে হয় না?”
–“সময় দিয়েছিলাম, সময়ের মাঝে জারাফের কোনো উত্তর পায়নি আমি।”
–“জারাফের বাবা মারা গেছে দুই দিন আগে। তাই ও___”
–“আমার ঘরে এই মূহুর্তে মেহমান বসে আছে ফারিন। আর কিছুক্ষণ বাদেই নুহাশের সাথে রুজবার কাবিন। এখন এসব বলে লাভ নেই।”

–“কিন্তু জারাফের তো কিছু করার ছিলো না।”
–“ওর জন্য কষ্ট হচ্ছে আমার। বাবাকে হারিয়েছে। হয়তো এই এক্সিডেন্ট না হলে জারাফের সাথেই রুজবার বিয়ে হতে পারতো। কিন্তু এখন আমার হাতে কিছু নেই। আমি নোমান সাহেবকে কথা দিয়ে ফেলেছি। এই মূহুর্তে উনাদের চলে যেতে বলতে পারি না আমি। যা হয়েছ, হয়েছে। আল্লাহ যা করেন ভালোই জন্যই করেন এটা রুজবাকে বুঝিয়ে দিস একটু।”
কথাগুলো বলে রায়হান সাহেব চলে গেলো। ফারিন বিষন্ন মনে রুজবার ঘরে এসে দরজা আটকালো। ওর জন্যই যেহেতু এসব হচ্ছিলো ও চেয়েছিলো কোনো ভাবে কাবিন’টা আটকাতে কিন্তু পারলো না৷

ফারিন রুজবাকে শাড়ি পড়িয়ে রেডি করিয়ে দিলো। কানে ছোট্ট সোনার দুল, গলায় চেইন, হাতে ব্রেসলেট এবং দুই হাতে রিং পড়ে নিলো। সবকিছুই গোল্ডের৷ রুজবা পাথরের মতো বসে আছে বিছানায়। ফারিন রুজবার পাশে বসতেই রুজবা ফারিনের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে হেঁচকি তুলে কাঁদতে শুরু করলো আবারো।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৮

আর কিছুক্ষণ মাত্র এরপরেই ওর জীবনটা উলোট পালোট হয়ে যাবে। ফারিনের ভিতর দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওর জন্যই ওর প্রিয় বান্ধবীটা আজ এত কষ্ট পাচ্ছে, এত কাঁদছে। ফারিনও রুজবার মাথায় নিজের গাল ঠেকিয়ে নিরবে কাঁদতে লাগলো।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ১০