নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২০

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২০
Mousumi Akter

প্রান্তিক হাতের জ্বলন্ত সিগারেট ফেলে অভিজ্ঞ দৃষ্টি নিয়ে রজনীর দিকে তাকাল। প্রান্তিক বিচক্ষণ মানুষ। ওর বিচক্ষণতা বলছে এইভাবে চললে কিছুই হবেনা। রজনীর ভেতরে অন্য কোনো রাগ ঘৃণা জমে রয়েছে। রজনীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে? কি কারণে এত ঘৃণা। কাজটা আরো আগে করা উচিৎ ছিল। প্রান্তিক দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে সোজা গিয়ে রজনীর সামনে দাঁড়াল।আচমকা প্রান্তিক কে দেখেই রজনীর শরীর রা’গে আবার ও জ্বলে উঠল।প্রান্তিক কে দেখেই মুখের হাসি বিলীন করে হাঁটা দিল তীব্র মেজাজের সাথে।

প্রান্তিক রজনীর হাত ধরে টান দিয়ে বলল, ” তোমাকে স্পর্শ করার অপরাধে যদি আমাকে থা’প্প’ ড় মা’র’ তে চাও তাহলে আমার দ্বীতীয় গাল হাজির রজনীগন্ধ্যা।বলেই প্রান্তিক নিজের গাল এগিয়ে দিল।”
রজনী নিজের হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলল, ” ছাড়ুন আমার হাত। ওই নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না। এমন ভাব করছেন যেন আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে স্পর্শ করে খুব অপরাধবোধে ভুগছেন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রান্তিক সোজাসাপ্টা উত্তর দিল কঠিন ভাষায়, ” হ্যাঁ তাই ভুগছি। তোমার অনুমতি ছাড়া আমি তোমাকে স্পর্শ করার কথা ভাবতে পারিনা রজনীগন্ধ্যা।তোমার চোখে আমি নিকৃষ্ট হতে পারি কিন্তু আমার চিন্তা ভাবনায় তুমি আমার সম্মানের পাত্রী, যা রক্ষা করার দায়িত্ব আমার।”
রজনীর চোখে তীব্র রাগ।রাগে ফুঁসে দাঁত কিড়মিড় করে উঠে বলল,

” এত নাটক, এত নাটক। কি চান আপনি? এত ভাল সাজার কি আছে? আমার পেটে তখন বাজে ভাবে হাত দিচ্ছিলেন ক্যানো? ক্যানো আমার পেটে নখের আচর দিয়েছেন। কেনো বার বার আমার পেটে চিমটি কাটছিলেন। ছিঃ আপনাকে আমি মাঝে মধ্য বুঝে উঠতে পারিনা। যখনি আপনাকে নিয়ে আমি ভাল কিছু ভাবি তখনি আপনার কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করেন। মানুষ এতও খারাপ হয়। এই বাগানে এখন কেউ নেই। আপনার রাজত্ব। আপনার উদ্দেশ্য সফল করুন প্লিজ। শাড়ি কি আপনি খুলবেন নাকি আমি খুলে আপনাকে সাহায্য করব। আমার জীবনের কোন পাপের ফল এর জন্য আপনার সাথে দেখা বলতে পারেন। আমি সাধারণ, গরিব ঘরের মেয়ে। কেনো খেলছেন আমাকে নিয়ে?আপনার উদ্দেশ্য সফল করে আমাকে মুক্তি দিন প্রান্তিক চৌধুরী।”

প্রান্তিকের শরীর কাঁপছে রাগে। এত বড় সাহস কার? কেউ রজনীর পেটে হাত দিবে।অতিরিক্ত রেগে গেলে প্রান্তিক কিছু বলতে পারেনা। শুধু শরীর কাঁপে।র’ক্ত টগবগ করে কাঁপা কন্ঠে বলল, ”
“আমার রাজত্বে আমার রানির শরীর স্পর্শ করার মত দুঃসাহস কার আছে? এটুকু জেনে রেখো রজনীগন্ধা আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশীক্ষণ কেউ বাঁচতে পারবে না। ওই হাত দু’টো আমি কে”টে এনে তোমার হাতে দিব।তুমি ফুটবল খেলবে না হলে আমার নাম প্রান্তিক চৌধুরি নয়।”

” আপনি বলতে চাইছেন সে আপনি নন।”
” কসম খোদার আমি তোমাকে স্পর্শ করিনি।আমাকে বিশ্বাস করো একবার তুমি। আমি সম্মান করি তোমাকে। তোমার হাসি দেখলে আমি মুগ্ধ হই, তোমার চোখে আমার নেশা হয়, নিজের চেয়েও যাকে বেশী ভালবাসি যাকে বউ করে পেতে চাই তাকে ক্যানো আমি ওইভাবে স্পর্শ করব।”

রজনীর মন নরম হল। হঠাৎ মনে হল, প্রান্তিক সত্য বলছে।প্রান্তিকের কথায় বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই। নরম কন্ঠে বলল,
“মাঝে মাঝে আপনাকে পৃথিবীর সবার থেকে ভাল মনে হয়, মাঝে মাঝে নিকৃষ্ট মনে হয়।”
” কিন্তু কেনো? প্লিজ তুমি খোলামেলা ডিসকাস করো আমার সাথে। কিছু একটা ভুল তোমার মাঝে থেকে গিয়েছে। তুমিই জানো কি আছে তোমার মনে। প্লিজ বলো কেনো ওই মায়াবী চোখে এত ঘৃণা আমার জন্য।”
” কারণ আপনি মেয়েদের সম্মান দিতে জানেন না?”
” কখনো অসম্মান করেছি তোমাকে?”
” করেছেন?”

প্রান্তিক দুই ভ্রু উঁচিয়ে কপাল টান টান করে সন্দিহানভাবে প্রশ্ন ছুড়ল, ” করেছি?”
” হ্য্যঁ। সেদিন আমি কলেজ থেকে ফেরার সময় আপনার চামচা গুলো আমাকে আজে বাজে কথা বলছিল।”
“অন্ত,নাকি, শ্রাবণ নাকি অন্যরা কেউ।”
“অন্যরা।”
“তুমি বুঝলে কীভাবে তারা আমার লোক।”

” কারণ ওরা বার বার বলছিলো ওস্তাদ রে বলে ওই মেয়েরে বিছানায় নিবো। আর তখনি শ্রাবণ আপনাকে ওস্তাদ ডেকেছিলো। তার মানে কি ওই নর পিশাচ গুলার ওস্তাদ আপনি? আপনি নিজে আগে মেয়েদের বিছানায় নেন তারপর ওদের মাঝে দেন।ছিঃ আপনার মত পুরুষ দের দেখলেই শরীর ঘিন ঘিন করে। আপনাদের লজ্জা করেনা ভালবাসার কথা মুখে আনতে।”
প্রান্তিক থমথমেভাবে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রইল রজনীর দিকে। হালকা মাথা দুলিয়ে বলল, ” যাক এই হচ্ছে মহারানীর রা’গের কারণ।”

“তো এসবের পরেও ভালবাসব।”
” একবার তো ভালবেসে দেখে জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে, প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে বুঝাব সত্যিকারের ভালবাসা কেমন হয়? আর কীভাবে ভালবাসতে হয়।”
“এসব চরিত্রহীন রা আবার ভালবাসতে জানে!”

“শ্রাবণ আমাকে ওস্তাদ ডেকেছে বলেই তুমি সিওর হলে ওইটা আমিই ছিলাম। তুমি কি জানো রজনী এই শহরে ওস্তাদের অভাব নেই। সবাই ওস্তাদ হতে চায়।শ্রাবণ আমাকে এমনিই ওস্তাদ ডাকে। ওই ছেলেদের সাথে আমার কোনো কানেকশন নেই। সেই ছেলেদের সেই চরিত্রহীন ওস্তাদ আমি নই রজনী। আমি চাইলেই মেয়েরা লাইন দিবে কিন্তু আমার কখনো ওইরকম আগ্রহ জন্ম নেয়নি। হ্যাঁ অনেক এক্স ছিল আমার। আমি রিলেশন এ যেতে চাইনি। ওরাই ফোর্স করেছে আমি যেন কয়েকদিন অন্তত কথা বলে দেখি পুরা লাইফ কাটাতে পারি কীনা?

আমি ট্রাই করেছি বাট মনের সিগন্য্যাল পাইনি ৩ দিন ও হয়নি ব্রেকাপ বলে সরে এসছি। বিভিন্ন মেয়ে আমাকে ডেটে ডেকেছে।কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়েছি খেয়েছি চলে এসছি। কেউ তার বাসায় ইনভাইট দিয়েছে বাজে উদ্দেশ্য আমি গিয়েছি কিন্তু আমার ফিলিংস আসেনি।আমি তোমাকে সব সত্য বলে দিলাম।কারণ পদে পদে এসব তুমি জানতে পারবে আর আমাকে সেই চরিত্রহীন ই ভেবে যাবে।তবে আমি ভুল করেছি বিভিন্ন মেয়ের সাথে মিশে।

আমি যদি আমার ফিউচার ছোট বেলায় দেখতে পেতাম, এটা যদি জানতাম তোমার নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আমার সর্বনাশ হবে,আমার আমিটাকে হারিয়ে ফেলব তোমাকে ভালবেসে তাহলে কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে পা’প করতাম না। তোমাকে ঠকাতাম না। আমার সিগারেট খাওয়ার মাত্র বেড়ে গিয়েছে তোমাকে ভালবেসে।সারাক্ষণ মনের মাঝে অশান্তি হয়। কেনো আমি তোমাকে ঠকালাম। আমি অতীতে যে মেয়েদের সাথে কথা বলেছি এতে আমি তোমার হক নষ্ট করেছি। আমি পাপ করেছি। এটা ক্ষমার অযোগ্য।

আমি বুঝি আমি তোমার যোগ্য না। তবুও তোমাকে চাইব আমি। এই পাপি ছেলে তোমাকে চাইবে। যদি তোমাকে না ও পাই তবুও চেয়ে যাবো। আমাকে তুমি শুধু একটা সুযোগ দাও রজনীগন্ধা। তোমার ভালবাসার পবিত্রতায় আমাকে শুধরে নাও। আমি কথা দিচ্ছি আমার রি দুই চোখ রজনীগন্ধা ছাড়া পৃথিবীর কোনো নারীর দিকে তাকাবেনা। একমাত্র তুমিই আছো যে আমাকে শুধুরে নিয়ে অশুদ্ধ ছেলে থেকে শুদ্ধ করতে পারো।একটা সুযোগ দিবে আমায়?”

বাচ্চাদের মত এমন করুণ আবদার করছে তাও প্রান্তিক চৌধুরী। রজনীর কাঁন্না পাচ্ছে। ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে। সে অকারণ মানুষটাকে ভুল বুঝে এসছে।সে প্রান্তিকের গায়ে হাত তুলেছে। এ কি ক্ষমার যোগ্য! পৃথিবীর সমস্ত রাগ, অভিমান ঘৃণা কোথায় যেন হারিয়ে গেল৷ প্রান্তিকের এমন মলিন মুখ দেখে রজনীর বলতে ইচ্ছা করছে সত্যিই আমি বড় দেরি করে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। এত দেরি করা আমার উচিৎ হয়নি।

রজনীর মলিন মুখ দেখে প্রান্তিক আবার বলল, ” আমি বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিব রজনীগন্ধা। আমি চেষ্টা করব তোমার ভালবাসা জিতে নেওয়ার। যদি পারি সেদিন ই তোমাকে বিয়ে করব। যেদিন তুমি আমাকে বলবে তুমি আমাকে ভালবাসো সেদিন ই আমি তোমাকে বিয়ে করব।আমি তোমার মনের সাথে জোর করব না।”
রজনী এবার কেঁদে দিল। প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।

প্রান্তিক বলল, ” প্লিজ কেদো না। এই পৃথিবীতে সব থেকে ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক জিনিস হল প্রিয় মানুষের চোখের পানি। এই যন্ত্রণা টা তুমি আমাকে দিও না। তুমি কাদলে আমার যে যন্ত্রণা হয় যদি সেটা বুঝতে পারতে তাহলে এক ফোঁটা করে চোখের পানি ফেলেই আমার পৃথিবীর শ্রেষ্ট শাস্তি দিতে পারতে।”
“আ’ আমি আপনার যোগ্যনা। কোনদিক দিয়েই না। আমি আপনাকে শুধু কষ্টই দিয়েছি,ভুল বুঝেছি, খারাপ কথা বলেছি। ”

” আমার দু’চোখ আমার যোগ্য জীবন সঙ্গীকে খুজে নিয়েছে। তুমি নিজেও জানোনা তোমার যোগ্যতা।”
” আপনার গায়ে হাত তুলেছি আমি। আমি এখন কি করব। আপনিও মা’রু’ন আমায়। আমি মানুষের মাঝে আপনার গায়ে হাত তুলেছি। আমাকেও মানুষের মাঝে নিয়ে মা’রু’ন।”
” তোমার প্রতি আমার তীব্র উইকনেস যা তুমি জানোনা। ওই ফুলের মত শরীরে আদর আর ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না আমি।”

” এত কিছুর পরেও?”
” হ্যাঁ এত কিছুর পরেও। যা কিছুই হয়ে যাক, আমি ভালবাসব তোমাকে। তোমার পিছু ছুটব, এটাই আমার জীবনের চরম স্বার্থকতা।”
রজনী কেদে যাচ্ছে।
“তুমি কি আমার জন্য কাদছ? এভাবে কেদোনা প্রেমে পড়ে যাবে। একবার আমার প্রেমে পড়লে আর কোনদিন আমার থেকে দূরে সরতে পারবে না। সে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।”
রজনী কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার শুধুই কাঁন্না পাচ্ছে। এটা যে ভালবাসার কাঁন্না তা বুঝতে বাকি রইল না রজনীর।প্রান্তিকের সামনে থেকে দৌঁড় দিল।খানিক দূর যেতেই ধাক্কা খেল অন্তর সাথে। ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। রজনী তাকিয়ে দেখল অন্ত। অন্ত মৃদু হেসে বলল, ” ভাবি সাবধান, এইভাবে ছুটলে পড়ে যাবেন।আর সোজা গিয়ে প্রান্তিক ভাই এর ক*লি*জা*য় লাগবে।

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ১৯

দু’টো দিন কেটে গেল…….
রজনীর ঘুম হয়নি প্রান্তিকের চিন্তায়। ভয়ংকর ওই চেহাররা মাঝে এত মায়া এত নরম একটা মন লুকিয়ে ছিল। তার মা ঠিক ই বলেছিল তার বাবা মানুষ চিনতে ভুল করেনা।
এরই মাঝে গ্রামে এক ঘটনা রটে গেল। সৈয়দ মুনসুর আলীর মেয়ের চরিত্রে সমস্যা। সব মানুষের মুখে মুখে এই কথা রটে গেল। কিন্তু ঘটনা টা ছড়াল কে? সব মানুষের হাতে হাতে প্রান্তিকের সাথে রজনীর ফুল বাগানে দাঁড়ানো হাত ধরা ছবি।

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২১