নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৩১

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৩১
Mousumi Akter

প্রিয় মানুষকে আপণ করে পাওয়ার মত আনন্দ বোধহয় এই পৃথিবীতে নেই। প্রিয়তার সারারাত ঘুম হয়নি। ঘুম ভা’ঙ’লেই শ্রাবণের সাথে তার বিয়ে। শ্রাবণ আর তার স্বপ্ন সত্য হবে। সারারাত ফোনে কথা বলেছে দু’জন। দু’জনের রঙিন স্বপ্ন সাজিয়েছে সারারাত। সারাবাড়ি ডেকরেশন করা হয়েছে। চারদিকে আলো আর আলো। লাল,নীল, হলুদ আলোয় প্রিয়তার জীবনের রঙ যেন আরো কয়েক গুন বেড়ে গিয়েছে। সারাক্ষণ আয়না দেখছে। তাকে আজ বেশী সুন্দর দেখাচ্ছে। অনেক বেশী সুন্দর দেখাচ্ছে। মেয়েদের বিয়ের আগে অনেক সুন্দর দেখায়। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য্য একটা মেয়ের মাঝে নেমে আসে। প্রিয়তা শ্রাবণ কে বলছে,

“আচ্ছা শুনেছি মন খারাপের রাত নাকি ঠিকভাবে পার হতে চায়না।কিন্তু আমার তো খুশির রাত ও পার হতে চাচ্ছেনা।কি করব বলোতো।”
“পা-গ-লি একটা না তুমি। রাত না কাটে না কাটুক। আমি তো আছি। আমি সারারাত কথা বলব তোমার সাথে। ”
ফোনে কথা বলতে বলতে সকাল হয়ে এসছে প্রায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফজরের আজান ভেষে আসছে চারদিক থেকে। প্রান্তিক সারারাত ঘুমোয় নি। বোনের বিয়ের সব আয়োজন মানুষ জন নিয়ে সারারাত জেগে জেগে করেছে। এখন তার হালকা ঘুমে ধরেছে। মাথা ও ব্যাথা করছে।রুমের দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করল। ডিম লাইটের হালকা কৃত্রিম আলোতে রজনির মুখটা যেন ফুলের পাপড়ির মত লাগছে।প্রান্তিক এর চোখ দু’টো থমকে গেল রজনীর মুখের দিকে তাকিয়ে।সৃষ্টিকর্তার নিঁখুত সৃষ্টি প্রান্তিক চৌধুরীর রজনীগন্ধ্যা।প্রান্তিক কোনো শব্দ না করে রজনীর পাশে গিয়ে বসল।

অপলক নয়নে মুগ্ধ হয়ে দেখছে রজনিকে।আলত করে রজনীর গালে হাত রাখল। কপালে আলত করে ওষ্ট স্পর্শ করল। রজনী ঘুমের ঘরে প্রান্তিকের হাত টেনে ধরে বুকের সাথে দুই হাতে আলিঙ্গন করে ঘুমের রাজ্য গভীর ভাবে প্রবেশ করল। প্রান্তিকের হাত সরাতে ইচ্ছা করল না। তাহলে রজনি জেগে যাবে।বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল। প্রান্তিক কতক্ষণ বসে থাকবে। মনে মেন বলছে জাস্ট একটা হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছো ক্যানো?

আস্ত এই মানুষটাকে কে জড়িয়ে ধরবে? প্রান্তিক নিজের হাত সরিয়ে এনে নিজে সুয়ে পড়ল রজনির সাথে মিশে। রজনির একটা হাত নিজের গায়ের উপর দিয়ে দিল। একটা তন্দ্রারত মানুষ কি জড়িয়ে ধরতে পারে।রজনির হাত পড়ে যাচ্ছে বার বার।প্রান্তিক বিরক্ত হচ্ছে!ক্যানো সে কিছুক্ষণ আগে তার হাত টা সরালো?এসব ভেবে রজনির ঘুম ভাঙার তোয়াক্কা না করে নিজেই শক্তভাবে রজনিকে জড়িয়ে ধরল। একদম বুকের সাথে মিশিয়ে ধরল। ঘুমন্ত মেয়েটার ঘুমের দফারফা করে ছাড়ল। ননস্টপ চুমু দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে ছাড়ল। রজনির গভীর ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে ভীষণ বিরক্ত হল।ঘুম ভাঙতেই আবিষ্কার করল সে প্রান্তিকের দুই হাতের শক্ত বাঁধনে। ঘুম ভাঙায় বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,

“কি করছেন আপনি? আমার ঘুম ভাঙালেন ক্যানো?একদম টাচ করবেন না আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“তোমাকে হাগ না করলে আমার ঘুম হয় না।”
“হাগ অবধি ঠিক ছিল। তারপর কি করছিলেন?”
“কিস না করলেও ঘুম আসেনা।”
“আপনার ঘুম আসেনা বলে আমার ঘুম নষ্ট করবেন।”
“আমার ঘুমের দফারফা করে তুমি শান্তিতে ঘুমোবে তা কি করে হয় বউ।”
“আর সে জন্য আমার ঘুমের দফারফা করবেন।”

“ইয়েস! আমি একজন রোমান্টিক পুরুষ। বউ এর ঘুমের যদি একটু ডিস্টার্ব ই না করি তাহলে কীসের রোমান্টিক পুরুষ হলাম।”
“একটু? আপনি রেগুলার এসব করেন।”
“আরো করব। যতদিন বেঁচে থাকব। চুলে পাক ধরলেও করব।”
“অসভ্য পুরুষ। ”
“এখন অসভ্যতা স্টার্ট হবে।কাম বেবি।”
“আমি ঘুমোবো। ”

“ঘুম ঘুম কন্ঠে এত নেশাক্ত কন্ঠে কথা বললে তো অসভ্যতা আরো বেশী বাড়বে রজনীগন্ধ্যা।”
রজনি শান্ত বালিকার মত আবার ও চোখ বুজল।চোখ বুজে প্রান্তিকের বুকে ঢলে পড়ল।প্রান্তিক খুব আদরের সাথে রজনিকে জড়িয়ে ধরল।পরম আদর যত্নে রজনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে দু’জনে ঘুমিয়ে গেল।

পরের দিন সকালে রজনি গোসল শেষ করে সাজগোজ করছে। এমন সময় রজনির ফোনে একটা ভিডিও আসে। রজনি ভিডিও টা প্লে করে দেখল প্রান্তিক ওর ভাইকে মা-র-ছে। সাথে বিশ্রী গালি গালাজ করছে।রজনি সাথে সাথে প্রান্তিক কে ডাকল। ব্যস্ততার মাঝে প্রান্তিক এসে বলল,
“অনেক কাজ বাকি। দ্রুত বল।”
রজনি ভিডিও টা প্রান্তিক এর সামনে প্লে করে দেখিয়ে বলল, ” কি এটা?”
প্রান্তিকের চোখ কপালে উঠল দেখে। রজনি এই ভিডিও কোথায় পেল।প্রান্তিকের বুঝতে বাকি নেই কাজটা কার। প্রান্তিক মোলায়েম কন্ঠে বলল,

“এটা আগের ভিডিও।”
“আপনি আমার ভাইকে ক্যানো এইভাবে মে-রে-ছি-লে-ন।”
“দেখো আমাকে ভুল বুঝোনা।তোমাকে কেউ ভুল বুঝানোর জনহ এটা দিয়েছিলো।”
“আমি জানতে চাই ক্যানো মে রে ছি লে ন?”
“কারণ ও আমার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছিলো।”
“আপনার ভালবাসার মানুষ। আমাদের বিয়ের পরেও আপনার ভালবাসার মানুষ ছিল।”
“আমি আর কোনো উত্তর দিতে পারব না।”

“আপনার জীবনে আমি বাদেও ভালবাসার মানুষ আছে। যে আপনার জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ তার জন্য আমার ভাইকে মে রে ফে ল তে চাইছিলেন।”
“হ্যাঁ সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ”
“তাহলে আমার সাথে প্রেম প্রেম নাটক করেন। ভালবাসার নাটক করেন আপনি। কিন্তু ক্যানো করেন এই নাটক। ”
“আজ প্রিয়তার বিয়ে। অনেক ব্যস্ত আমি। এসব প্রশ্ন করোনা।”
“আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আপনাকে।”

“যত উত্তর খুজতে চাইবে তত কষ্ট পাবে। সো বাদ দাও।”
রজনি কাঁন্নায় ভেঙে পড়ল। কাদতে কাদতে বলল,
“আমি আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম,ভালবেসেছিলাম,ভরসা করেছিলাম, নিজের থেকে বেশী বিশ্বাস আপনাকে করেছিলাম।আপনি আমার সহজ সরল মনটা ভে ঙে খানখান করে দিয়েছেন।আপনি প্রমান করলেন আপনার মত ছেলেরা লম্পট হয়। হাজার নারীতে আসক্ত হয়।এরা ঠকবাজ।এরা কাউকে ভালবাসতে জানেনা।”

“আমি এক নারীতেই আসক্ত আর সেই নারী তুমি।নিশ্চয়ই প্রমান পাবে।তুমি ঠকোনি, তোমার বিশ্বাসে ভুল নেই। ট্রাস্ট মি!”
“ট্রাস্ট আপনাকে। আই হেট ইউ। আই হেট ইউ।”
“ঘৃনা করো আমাকে?”..
” হ্যাঁ করি। কারন আপনি আমার চোখের পানির কারন। আপনার জন্য আমার চোখে পানি। আমি কোনদিন আপনাকে ক্ষমা করব না।”
“প্লিজ রজনিগন্ধ্যা! তুমি কাদবে না।এই মুহুর্তে আমি খুব বিপদে আছি। তোমাকে আমার পাশে প্রয়োজন।দূরে সরিয়ে দিওনা।”

“একটা মেয়ে তার স্বামির মুখে অন্য নারীকে ভালবাসার কথা শুনলে কেমন লাগে আপনি বুঝবেন না।নিজের ভালবাসার মানুষ যদি অন্য কাউকে ভালবাসে এই কষ্ট ভয়ানক।”
প্রান্তিক মনে মনে বলল, ” কিভাবে বলি তোমার ভাই তোমাকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছিলো।তুমি আরো বেশী কষ্ট পাবে।ঝামেলা মিটে যাক তোমাকে বুঝিয়ে বলব।”

দুপুর দুইটা বাজে। প্রিয়তা বউ সেজে বসে আছে। প্রিয়তা কে একদম রানির মত দেখাচ্ছে। অধির আগ্রহে শ্রাবণের জন্য অপেক্ষা করছে প্রিয়তা। প্রান্তিকের কয়েক হাজার ইনভাইটেড গেস্ট ছিল।সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। এখন বিয়ে পড়াবে। শ্রাবণ বাসর ঘরে প্রিয়তাকে দেওয়ার জন্য গিফট কিনতে গিয়েছে সেই সকালে।এখনো ফিরে আসেনি। সকাল গড়িয়ে দুপুর আর দুপুর গড়িয়ে বিকাল অথচ শ্রাবণের খোজ নেই। ফোনের পর ফোন দিচ্ছে প্রান্তিক। ধীরে ধীরে সবার মাঝে ছড়িয়ে গেল প্রিয়তার পাত্র নিঁখোজ।

সবাই ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছে অথচ শ্রাবনের ফোন অফ।ফোনে ঢুকছে না।প্রিয়তা নিজেও চেষ্টা করছে কিন্তু ফোন ঢুকছে না।প্রিয়তার বধুসাজা রঙিন মুখটা চুপসে এতটুকু হয়ে গিয়েছে। চোখ ছলছল করছে।এমন তো হওয়ার কথা ছিলনা। প্রিয়তা বারবার উপর ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।কারণ সে জানে শ্রাবণ আসবে। আর শ্রাবণ কে আসতেই হবে।শ্রাবণ আসবেই। তবুও চোখ দিয়ে পানি আসছে। চোখের পানি আটকে রাখতে পারছেনা।রজনিসহ বাড়ির আত্মীয়রা প্রিয়তাকে ঘিরর রেখেছে।রজনি প্রিয়তাকে বলছে, ” তোকে লাস্ট কি বলে গিয়েছে?”

“বলল গিফট আনতে যাচ্ছি তোমার জন্য।”
“তাহলে শ্রাবণ ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেল।”
“ওর লা’শ আসলেই এখানে আসবে। ও হারানোর মত ছেলে নয় রজনি। নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে ওর।”
“কিন্তু দেখ চারদিকের সবাই বলছে বর বিয়ে করবেনা বলে পালিয়েছে।”

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৩০

“এসব মানুষদের দূর হয়ে যেতে বল।আমি আর নিতে পারছিনা।”
“মানুষ কে দূর করে কি হবে। শ্রাবণ ভাইয়া তো সত্যি আসেনি।”
“ক্যানো আসছে না ও। কি হয়েছে ওর?ও ভাল আছে তো।আমার শ্রাবনের কিছু হয়নিতো। আমার বিয়ের দরকার নেই।তবুও যেন আমার শ্রাবণ ভাল থাকে।ওর যেন কিছু না হয়।”

নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৩২