নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৫

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৫
লেখিকাঃ Tamanna Islam

রায়হান আহমেদ…! আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর ভাই তবে সৎ। হ্যাঁ রায়হান আব্রাহামের সৎ ভাই। আব্রাহাম বড়ো আর রায়হান ছোট। আব্রাহামের বাবা রৌনক আহমেদ চৌধুরী আব্রাহামের মা কুসুম বেগমের সাথে কখনোই সুখি ছিলেন না। কুসুম বেগমের মনে রৌনক আহমেদের জন্য যে ভালোবাসা টা ছিলো তা শুধুই কুসুম বেগমের জন্য ছলো। যাকে বলে এক তরফা। রৌনক আহমেদ আব্রাহামের মায়ের সাথে কখনোই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে নি। তবে শাশুড়ী হিসেবে ইলা বেশ ভালো ছিলো। কুসুম বেগম কে বুঝতেন তিনি।

দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় আব্রাহামের জন্ম হয়। কুসুম বেগম ভেবেছিলেন যে আগে হয়তো তাদের হাসবেন্ড-ওয়াইফের সম্পর্ক টা ভালো ছিলো না কিন্তু এখন হবে। কোল আলো করে একটা ছেলে হয়েছে। এই ছেলের মাধ্যমেই হয়তো তাদের মাঝে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কুসুম বেগমের এই ধারণা টা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে তাদের মাঝে সম্পর্ক যেন দিনকে দিন আরো বেশি খারাপ হতে থাকে। ঝগড়া, কথা কাটাকাটি, মাঝেমধ্যে গায়ে পর্যন্ত হাত তোলা৷ এগুলো দেখতে দেখতেই আব্রাহামের ছোট বেলা কেটেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফ্যামিলি প্রব্লেম কি তা আব্রাহাম বুঝে। আব্রাহাম তার মায়ের অনেক ক্লোজ ছিলো। আব্রাহামের দাদি আব্রাহামের বাবা কে অনেক বুঝায় কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। কোন লাভই হয় নি। আব্রাহামের বয়স যখন সাড়ে পাচঁ বছর তখন হুট করেই কিছুদিনের জন্য আব্রাহামের বাবা রৌনক গায়েব হয়ে যায়। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি তাকে। না অফিস, না বন্ধুদের বাড়ি, না কোন হোটেল। সবাই বাড়িতে অনেক চিন্তিত ছিলো। আব্রাহাম মা পাগল ছিলো। মা আর দাদি ছাড়া কিছুই বুঝে নি। গায়েব হয়ে যায় কিছুদিনের জন্য আব্রাহামের বাবা।

ঠিক ৬ দিন পর বাড়ি আসেন তিনি। তবে সেইদিন তিনি একা আসেন নি। তার সাথে সেইদিন এসেছিলো তার দুই বছরের সম্পর্কযুক্ত প্রেমিকা তাও আবার নববধূ রুপে। আব্রাহাম কে কোলে নিয়ে আব্রাহামের মা দরজা খোলে দেয়। রৌনক আহমেদ কে দেখে কুসুম বেগম খুব খুশি হন, কিছু বলতে যাবেন তার আগেই পাশে এসে দাঁড়ায় রুকশানা অর্থাৎ আব্রাহামের বাবার দ্বিতীয় বউ। কুসুম বেগম ভেঙে গিয়েছিলেন ভেতর থেকে। নিজের চোখের সামনে নিজের হাসবেন্ড যদি আরেক টা বিয়ে করে আনে তাহলে কেমন লাগবে এটা হয়তো বলার বাইরে।

আব্রাহামের দাদি অনেক বুঝায় তার ছেলে কে কিন্তু সে মানে না। রুকশানা যে খারাপ তা একদম না। সে বুঝেছিলো যে তার জন্য এই পরিবারে অশান্তি হবে। কিন্তু রুকশানা একটা গরিব পরিবার থেকে এসেছিলো। এখানে থাকা ছাড়া তার আর কোন উপায়ও ছিলো না। আব্রাহামের মা একদম চুপ ছিলো সেইদিন। আসলে সেইদিন থেকে তিনি কথায় বলেন নি।

অতি প্রয়োজন ছাড়া তিনি কারো সাথে কথাই বলতেন না। আব্রাহামের মা আর আব্রাহাম আলাদা রুমে থাকতো৷ রুকশানা আর রৌনক আলাদা রুমে। আব্রাহাম কিছুটা হলেও বুঝতো যে কিন্তু গন্ডগোল আছে। এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েক বছর। রুকশানা আর রৌনকের ঘর আরো করে একটা ছেলে জন্মায়। সেই রায়হান ছিলো, রায়হান আহমেদ। আব্রাহাম আস্তে আস্তে বড়ো হয় সে তখন সবই বুঝে। তার বাবার বিয়ের দিন থেকে শুরু করে আব্রাহাম তার বাবার সাথে একটা টু শব্দ পর্যন্ত করতো না।

রুকশানা, রায়হান, রৌনক কারো সাথেই কথা বলতো না আব্রাহাম। আস্তে আস্তে তাদের জন্য আব্রাহামের মনে বিষের জন্ম নেয়। আব্রাহামের মা তাকে রৌনক আহমেদের বউ হিসেবে পরিচয় দেওয়া টাও বন্ধ করে দিয়েছিলো। এভাবেই ধীরে ধীরে আব্রাহাম বেড়ে উঠে। আব্রাহাম যখন ক্লাস টেনে পরে তখন আব্রাহামের মা কুসুম বেগম মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। আব্রাহামের সেইদিন মনে হচ্ছিলো যে কবরের ভেতরে তার মা কে শুয়ানোর আগে যেন তাকে শুয়ানো হয়। কিন্তু আব্রাহামের দাদি তাকে সামলে নেয়।

একরোখা, বদমেজাজি, রাগি, এটিটিউড, ইগো এই সবকিছু আব্রাহামের মাঝে আপনা আপনিই এসে পরে। আর সত্যি রৌনক বাবা হিসেবে অনেক ব্যার্থ। তিনি সবসময় আব্রাহাম আর রায়হানের মাঝে ভেদাভেদ করেছেন। আব্রাহাম এমনও দিন দেখেছে যে রুকশানা, রৌনক আর রায়হান এক সাথে এক পরিবারের মতো আনন্দ করেছে আর আব্রাহাম হাতে একটা পুতুল নিয়ে দরজার আড়াল থেকে দেখেছে। এতো সবকিছু ফেইস করার পরই এত্তো পরিবর্তন হয়ে গেছে আব্রাহাম। রায়হান এতোদিন এবোর্ড ছিলো কিন্তু এখন দেশে ফিরেছে। পড়াশোনা শেষ তার।

নিজের বাবার বিজনেস দেখা শোনা করে। আর আব্রাহাম নিজের বিজনেস, নিজের পরিচয় নিজে বানিয়েছে। নিজের যোগ্যতায়-দক্ষতায় তৈরি করেছে। আজ আব্রাহাম এত্তো বড়ো একজন বিজনেস টাইকুন সব নিজের জোরে। তবে আব্রাহাম আর রায়হান একে ওপর কে দেখতে পারে না। দুইজন সাপ আর নেউল বলা যায়। শেষ কবে যে আব্রাহাম ওই রায়হান আর তার মা কে দেখেছিলো মনে নেয়।

ওহহ হ্যাঁ আব্রাহামের মা মারা যাবার ঠিক ৭ মাস পরেই আব্রাহামের বাবাও মারা যান। আব্রাহাম তার দাদি কে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে এসে পরে। অন্য জায়গায় থাকে। আব্রাহাম তার বাবার সম্পত্তির এক আনাও নেয় নি। আব্রাহামের মা নিজের সবকিছু নিজের ছেলের নামে দিয়ে গিয়েছিলেন। আব্রাহামের কাছে তার বাবা মায়ের ছবি নেই, আসলে তার কাছে তার বাবার কোন ছবিই নেই। যে ছবি গুলোতে আব্রাহামের বাবা আর মা একসাথে ছিলো সেগুলো সে আলাদা করে দিয়েছে। এখন নিজের দুনিয়া বলতে তার এই দাদি।

আর রায়হান ছেলে হিসেবে বেশি ভালো না। মেয়েবাজি, এলকোহল, ক্যাসিনো, বেআইনি কাজ এইসব তার নিত্যদিনের কাজ। আর আব্রাহামের কানে এগুলো ডেইলিই আসে। আব্রাহাম সবদিক দিয়েই রায়হানের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে। চায় হোক তা নাম-ডাক-খ্যাতিতে, সম্পত্তিতে, পাওয়ারে, বিচক্ষণতায়, স্মার্টে বা গুড লুকস্ এ।

আব্রাহাম সব কিছুই জানে। আর তার দাদি ইলাও। কেউ কাউকে দেখতেই পারে না। আজ এতো দিন পরে রায়হান কেন এসেছে এখানে তাও আব্রাহাম বুঝে উঠতে পারছে না।
আব্রাহাম রাগে মাথা নিচু করে বেডে বসে আছে। রাগে মাথা ফেটে পরার উপক্রম তার। পুরনো সব কিছু যেন চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম তার পাশে থাকা কাচের গ্লোব টা তুলে ঢিল মারে। গ্লোব ছোট ছিলো তাই বেশি একটা শব্দ হয় নি।

আব্রাহাম;; দুনিয়া একদিক থেকে আরেক দিক করে ফেলবো আমি যদি এই রায়হান এখন আমার জীবনে এসেছে তো। একদম জানে মেরে ফেলবো ওকে।
আব্রাহাম নিজেকে কোন রকমে শান্ত করে। আর কাল সকালে অফিসে যেতে হবে কারণ আইরাত আসবে এস এ পিএ। তো সবকিছু পারফেক্ট থাকা চাই। এই ভেবেই আব্রাহাম শান্ত হয়ে বসে।

পরেরদিন সকালে~~
ইকবাল;; আরে আইরাত মা কোথায় যাচ্ছিস ভার্সিটি?
আইরাত;; না চাচ্চু আসলে বাইরে যাচ্ছি। মানে কাজে।
ইকবাল;; কাজে মানে কোন কাজে। এতো জলদি কিসের কাজ পেলি তুই?
আইরাত;; এই রে এখন চাচ্চু কে কি করে বলি যে আব্রাহাম চৌধুরীর পিএ এর কাজ। আর আব্রাহাম সেইদিন বাড়িতে এসে যা করে গেছেন তারপর তো বলাই যাবে না (মনে মনে)
ইকবাল;; কিরে বল?!

আইরাত;; আব.. চাচ্চু আসলে অফিসে একটা স্টাফের পোস্ট খালি ছিলো তো তাই আমি জয়েন করে নিয়েছি। স্যালারিও ভালোই।
ইকবাল;; ওহহ আচ্ছা তো অফিসের নাম কি?
আইরাত;; হ্যাঁ ??
ইকবাল;; হ্যাঁ বল অফিসের নাম কি?
আইরাত;; না মানে আসলে….

কলি;; এই কই গো তুমি খাবার ঠান্ডা হচ্ছে যে… (চিল্লিয়ে)
ইকবাল;; এইযে শুরু হয়েছে তোর চাচির। আচ্ছা মা শোন তুই দেখে শুনে সাবধানে যাস৷ আর মা আমাকে পারলে মাফ করে দিস।

আইরাত শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে৷ বলার কিছুই নেই তার। তার চাচ্চু এই কথা টা তাকে প্রায়ই বলে। আর এই কথা টা শুনে আইরাত আগে তার চাচ্চু কে বাধা দিতো কিন্তু এখন দেয় না। এটা শুনলে এখন শুধু আইরাতের ভেতর থেকে এক দম বের হয়। আইরাত মুচকি হেসে বিদায় জানিয়ে বাইরে এসে পরে। ঘুম থেকে আজ তাড়াতাড়ি উঠতে পারে নি। ১০ টায় যাবার কথা ছিলো কিন্তু এখন বাজছে ৯ঃ৫৫। রিকশা করে যাচ্ছে আর বারবার নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।

প্রথম দিনই এতো লেট। আব্রাহাম আজ তাকে গিলেই না ফেলে কাচা৷ দেখতে দেখতে এক সময় আইরাত আব্রাহামের অফিসের সামনে এসে থামে। আইরাত মাথা তুলে ওপরে তাকিয়ে দেখে ইয়া বড়ো বড়ো অক্ষরে লিখা ‘” The Industry Of Abraham Ahmed Chowdhury “” আইরাত সেদিকে তাকিয়ে এক লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে। এখানে তো যাচ্ছে না জানি সামনে কি কি ফেইস করতে হবে তাকে। আইরাত বেশ সাহস জুগিয়ে চলে যায় ভেতরে। তবে অফিসের ভেতরে গেতেই আইরাত অবাক হয়।

ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে আইরাত দেখে দুই পাশে বেশ কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একমাত্র তাকে স্বাগতম জানানোর জন্য। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে দেখছে। আর বাকি সবাইকেও দেখছে। অফিসে অনেক মেয়ে স্টাফ তারা সবাই পেন্ট আর শার্ট সাথে টাই। এতো এতো মর্ডান ড্রেসাপের মাঝে আইরাত নিজেই মনে হয় একা গোল জামা পরে আছে। আর চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। সবাই আইরাতকে ম্যাম বলে সম্বোধন করছে কিন্তু আইরাত বুঝতে পারছে না যে ম্যাম বলার কি দরকার৷ সবাই আইরাতকে ফুলের তোড়া দিচ্ছিলো তখনই অফিসের মেনেজার এগিয়ে আসে।

মেনেজার;; মিস. আইরাত। আপনাকে অনেক অনেক স্বাগতম।
আইরাত;; জ্বি ধন্যবাদ।
মেনেজার;; আপনার জন্যই আমরা এতোক্ষন অপেক্ষা করে ছিলাম, অবশেষে আপনি এলেন।
আইরাত;; জ্বি
মেনেজার;; ভেতরে আসুন।
সবাই সাইড হয়ে দাড়ালে আইরাত ভেতরে আসে। মেনেজার আইরাতকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে আর কথা বলছে। আইরাতকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। কি করতে হবে কি না করতে হবে। অফিসের কিছু বেসিক রুলস গুলো আইরাতকে জানিয়ে দেয়। আইরাত বেশ ভালো করে তা শুনে। হাটতে হাটতে মেনেজার আইরাতকে আব্রাহামের কেবিনের সামনে এনে দাড় করিয়ে দেয়।

মেনেজার;; সো মিস. আইরাত এটাই হচ্ছে আব্রাহাম স্যারের কেবিন। আজ থেকে আপনি উনার পিএ। প্লিজ খেয়াল রাখবেন যেন কিছু গড়বড় না হয়। স্যার অনেক বেশির থেকেও বেশি রাগি৷ আমি এবার আসি৷
আইরাত;; জ্বি
আইরাত আব্রাহামের কেবিনের দিকে তাকায়। কেমন জানি নারভাস লাগছে। কিছু শুকনো ঢোক গিলে আইরাত ভেতরে যায়। ভেতরে যেতে ধরেই আবার থেমে যায়। আরে পারমিশন তো নিতে হবে নাকি। আর এখন থেকে তো আব্রাহামকে তার স্যার বলেই ডাকতে হবে। এই ভেবেই আইরাত একটু বিরক্তি হয়।
আইরাত;; May i come in sir…?

আইরাত;; May i come in sir…?
আইরাত কয়েকবার ডাক দিয়েও কোন সাড়াশব্দ পায় না। এক সময় আইরাত বিনা পারমিশনেই ভেতরে ঢুকে যায়। ভেতরে যেতেই দেখে কেবিন ফাকা কেউ নেই। আইরাত কপাল কুচকায়। এখানে কেউ নেই কেন। তখন আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে এক সাইড থেকে কেবিনের একদম মাঝ বরাবর আসে৷ আইরাত কে দেখে আব্রাহাম মুচকি হাসে। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে দেয়। আইরাতকে পা থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত এক নজর দেখে নেয়। আইরাতও আব্রাহাম কে দেখে। ব্লেক কালারের পেন্ট পরা, ব্লেক কালারের শার্ট আর ওপরে একদম হাল্কা গ্রিন কালারের জেকেট। তার হাতা কুনি অব্দি উঠানো। তবে আজ কেন যেন আব্রাহাম কে একটু বেশিই রিফ্রেশ রিফ্রেশ লাগছে। হাতে ঘড়ি, মুখের চাপদাড়ি গুলো ফর্সা মুখে যেন দারুণ মানিয়েছে।

আব্রাহাম;; গুড মর্নিং…!
আইরাত;; গুড মর্নিং
আব্রাহাম;; ওও হ্যালো আমি তোমাকে গুড মর্নিং উইস করছি না। বলছি যে অফিসের বস কে সকাল সকাল গুড মর্নিং উইস করতে হয়। তা কি জানো না। এরপর থেকে অফিসে এসে আমার জন্য রোজ এক কাপ কফি আনবে আর সাথে মর্নিং উইস করবে ওকে।
আইরাত;; মানে আসতে না আসতেই অর্ডার শুরু?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, এবার এটা নাও।

আব্রাহাম তার গাড়ির চাবি টা আইরাতের দিকে হালকা ঢিল দেয় আর আইরাত কাপাকাপা হাতেই তা ধরে ফেলে। আব্রাহাম সুন্দর সিটি বাজাতে বাজাতে চলে যায়। আইরাত হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম তার চেয়ারে গিয়ে রিলেক্স করে বসে পরে। আইরাত চোখ নামিয়ে কেবিন থেকে চলে আসতে নিলে আব্রাহাম আবার বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; ওও হ্যালো মিস. বেবিগার্ল…!
আইরাত পেছন ফিরে তাকায়…
আব্রাহাম;; কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?!
আইরাত;; মানে আমি আমার কেবিনে যাবো না!
আব্রাহাম;; মিস আইরাত আপনার কেবিন যে এই কেবিনের বাইরে তা আপনাকে কে বলেছে?
আইরাত;; হুয়াট ডু ইউ মিন?
আব্রাহাম;; আপনার কেবিন এদিকে আর এইটা।

আব্রাহাম ইশারা দিয়ে আইরাতকে নিজের পাশে দেখায়। আইরাত তাকিয়ে দেখা যে আব্রাহামের ঠিক বাম সাইডে একটা ছোট কেবিনের মতো রয়েছে। তবে সিম্পলের মাঝেও বেশ সুন্দর। কাচের তৈরি। সেখানে কিছু ফাইল আছে। একটা ল্যাপটপ আছে। একটা কফির মগ আছে যেখানেও ছোট্ট করে ‘পিএ’ লিখা। মানে সে এখন আব্রাহামের চোখের সামনে থাকবে, মানে তার থাকতে হবে।

আইরাতের কেবিন টা আব্রাহামের কেবিনের ভেতরেই৷ হায় আল্লাহ আইরাতের মাথা নষ্ট হবার অবস্থা। আইরাত টাস্কি খেয়ে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম আইরাতের দিকে। আইরাতের এমন রিয়েকশন টা দেখে আব্রাহাম তো ভারি মজা পাচ্ছে। আইরাত ধীর পায়ে তার সেই ছোট কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত সবকিছু A-Z দেখে নেয়। মানে তাকে এখন আব্রাহামের চোখের সামনে থেকে কাজ করতে হবে।

আইরাত;; শুনুন আমি পারবো না, আপনি আমার কেবিন মেনেজার কে বলে বাইরে কোথাও শিফট করিয়ে দিন। এছাড়া বেলার অর্ধেক তো আপনার পিএ হয়েই কাটিয়ে দিতে হবে। এখন আমি আপনার নজরের ভেতরে থাকতে পারবো না। আমি বাইরে থাকবো। আমার কেবিন বাইরে শিফট করে দিন।

আইরাত তার কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলছিলো। এইদিকে আব্রাহাম যে আইরাতের ঠিক একদম পেছনে এসে পকেটে দুই হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার দিকে আইরাতের কোন খেয়ালই নেয়। আইরাত পেছন ঘুড়ে তাকায় আর সাথে সাথে চমকে যায়। আব্রাহামকে নিজের এতো কাছে দেখে ভেবাচেকা খেয়ে যায়।

আব্রাহাম;; এখানে থাকবে না?
আইরাত;; না।
আব্রাহাম;; থাকবে না এখানে?
আইরাত;; না।
আব্রাহাম;; থাকবে না?
আইরাত;; বললাম তো না।

আব্রাহাম এক পা এক পা করে আইরাতের দিকে এগোতে এগোতে এই কথা গুলো বলছিলো আর আইরাত ধীরে ধীরে পেছাচ্ছে আর কথা গুলো বলছে। শেষের কথা টা বলেই আইরাতের পেছনে কাচের দেওয়াল ঠেকে যায়। আইরাত পেছনে তাকিয়ে দেখে যাবার আর জায়গা নেয়। পিঠ তার ঠেকে গেছে দেওয়ালের সাথে। আব্রাহাম এখনো আইরাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত মাথা নিচু করে এক সাইড দিয়ে যেতে ধরে আব্রাহাম তার হাত টা দেওয়ালের ওপর রেখে আইরাতকে আটকিয়ে দেয়। আইরাত কপাল কুচকে ফেলে। আরেক দিক দিয়ে যেতে ধরে আব্রাহাম সেদিক দিয়েও আইরাতকে আটকিয়ে দেয়। আইরাত এখন আব্রাহামের দুই হাতের আবদ্ধে বন্দী।
আব্রাহাম;; ওই মূহুর্তে আমি কখন যে নিজের ওপর থেকে কোন্ট্রল হারিয়ে ফেলবো জানি না। উল্টা পালটা যদি কিছু একটা করাতে না চাও আমার দ্বারা তাহলে এখন চুপচাপ গিয়ে সেখানে বসো বেবিগার্ল৷

আইরাত;; এহ!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত কেন জানি আব্রাহামের সেই চোখ গুলোতে তাকিয়ে থাকতে পারে না। তাই মাথা নামিয়ে ফেলে। সামনের কিছু অবাধ্য চুল আইরাতের সামনে এসে পরলে আব্রাহাম সেই চুল গুলো ফু দিয়ে আরো একটু এলো মেলো করে দেয়। আইরাত তা হাত দিয়ে কানের পেছনে নিয়ে নেয়। আব্রাহাম এখনো নিজের হাত গুলো দিয়ে আইরাতকে চেপে ধরে রেখেছে দেওয়ালের সাথে। কিছুক্ষন এভাবে থেকে আব্রাহাম নিজেই সোজা হয়ে দাড়ায়।
আব্রাহাম;; কাজে লেগে পরো মিস. পিএ।

আব্রাহাম গিয়ে ল্যাপটপে মনোযোগ দেয়। আর আইরাতের কেন জানি আব্রাহামের এতো কুল ভাব দেখে রাগ লাগছে তবুও করার কিছুই নেই। আইরাত আস্তে আস্তে সব বুঝে শুনে কাজ করছে। তবে কাজ করছে কম আর তাকে আব্রাহাম জ্বালাচ্ছে বেশি। একটা না একটার পর কাজ দিতেই থাকে। আইরাত এটা করো, ওটা করো, সেটা করো। আইরাত যখন কাজ করে তখন তার মনে হয় যে আব্রাহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু আব্রাহামের দিকে তাকালে দেখে যে সে কাজ করছে। তবে আব্রাহাম আসলে নিজের সামনে থাকা আইরাতকেই দেখেছে আর ল্যাপটপে প্রিন্টের মাধ্যমে তার স্কেচ আকছে। ক্ষীন দৃষ্টিতে আইরাতকে দেখেছে,, হাতে একটা পেন্সিল ঘোড়াচ্ছে আর স্কেচ আকাচ্ছে তার। তবে আইরাত তো ভাবছে যে আব্রাহাম কাজই করছে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৪

ওদিকে রায়হান বরাবরই তার কোম্পানির সাথে আব্রাহামের কোম্পানির টক্কর দেবার ট্রায় করে কিন্তু তার সাথে পেরে উঠে না। যার ফলে বেস্ট বিজনেস টাইকুনের এয়ার্ড টা প্রতিবার আব্রাহামই অর্জন করে নেয়। আজ রায়হান আইরাতের ভার্সিটি গিয়েছিলো কাজে। সেখানেই সে আইরাতকে দেখে। এখন রায়হান বসে আছে তার অফিসে “রায়হান আহমেদ”স্ কোম্পানি”। কীভাবে আব্রাহামকে হেনস্তা করা যায় তাই ভাবছে।

রায়হান;; ছেড়ে তো আমি তোকে এতো সহজে দেবোই না আব্রাহাম। তোর সাথে শত্রুতা আমার ছিলো,আছে আর থাকবেই। দেখ না সামনে আরো কি কি করি আমি। যে জিনিসেই হাত দেই তাতেই তোকে পাই। তুই আমার জীবনের আপদ। কিন্তু তুই ই যে কেন বেস্ট হোস। যাই হোক আজ নজর আরেক জনের ওপর পরেছে আমার। তাতেও তুই। সমস্যা নেই ছিনিয়ে নিবো আমি। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী দেখে নেবো তোকে।

এদিকে আব্রাহাম কাজ করছে। একটা বড়ো ডিল এসেছে। এটা মিস করাই যাবে না। আর এই কাজের জন্য হয়তো তাকে বাইরে যেতে হবে। যেতে হলে যাবে।

তবে সমস্যা হচ্ছে সেখানে রায়হানও যাবে। এটা ভেবেই আব্রাহামের রাগ লাগছে। মানে সেখানেও এই রায়হান থাকবে তাকে ফেইস করতে হবে। বিরক্তিকর। পরক্ষণেই আব্রাহামের মনে পরে আইরাতকেও নিয়ে যাবে। কিন্তু তখন যে কি হবে তা সিচুয়েশনের ওপর ডিপেন্ড করে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৬