নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৬

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৬
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত কাজ করছে আর আব্রাহাম লুকিয়ে লুকিয়ে তার স্কেচ আকছে। আইরাত গালে হাত রেখে ফাইল দেখছে স্কেচেও তার সেম প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠেছে। আব্রাহাম তাকে দেখছিলো আর কাজ করছিলো। তবে এবার আইরাতের দিকে তাকিয়ে আব্রাহামের চোখ আটকে যায়। সাথে সাথে আব্রাহামের বেশ রাগও লাগে। কাজের ফাকে আইরাতের ওরনা টা তার বুক থেকে বেশ নিচে নেমে পরেছে যার ফলে তার বুকের ঠিক মাঝ বরাবরের কালো তিল টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আব্রাহামের হাতে পেন্সিল ছিলো সে তা হাতে নিয়ে রাগে মুচড়াচ্ছে। মেয়ে টা যে কি করে না, নিজের দিকে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই।

আব্রাহাম আইরাতের দিকে আবার তাকায় দেখে যে এখনো সেম আগের মতোই রয়েছে। আব্রাহাম এবার আর থাকতে না পেরে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে পরে। হাতে একটা ফাইল নিয়ে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। তার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাতে থাকা ফাইল টা ঠাস করে আইরাতের টেবিলের ওপর রাখে। আইরাত তো এক ধ্যানে কাজ করছিলো। এভাবে ঠাস করে টেবিলের ওপর হাত রাখার ফলে আইরাত বেশ চমকে উঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওপরে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম রাগি চোখে তার দিকে ঝুকে তাকিয়ে আছে। আইরাত বুঝতে পারলো না যে আব্রাহাম হুট করেই এতো রেগে কেন গেলো। আইরাত আবার কিছু উলটা পালটা করলো না তো। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখন আব্রাহাম তার চোখের ইশারাতে আইরাতের ওরনার দিকে তাকায়। তাকে ঠিক করতে বলে। ব্যাস আইরাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না সে তাকিয়ে দেখে আসলেই ঠিই নেই ওরনা। সাথে সাথে সে সব গুছিয়ে নেয়। আব্রাহাম কিছু না বলে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে। ভাগ্যিস আব্রাহাম ছিলো নয়তো কি হতো। তখনই হঠাৎ আব্রাহামের ফোনে কল আসে সে উঠে কিছুটা দূরে চলে যায়।

আব্রাহাম;; হ্যালো…
রাশেদ;; স্যার ডিল টা যদি আমরা ফাইনাল করি তাহলে চারদিনের জন্য বাইরে যেতে হবে। একটা হোটেল বুক করা হয়েছে। আমি আপনাকে সব ই-মেইল করে দিতে পারবো।
আব্রাহাম;; ওকে, তো কবে যেতে হবে?
রাশেদ;; আগামীকাল
আব্রাহাম;; তো সেখানে যে মিটিং এন্ড আর বাকি যা কিছুই হবে সেগুলো তে কে কে আসবে?
রাশেদ;; স্যার আসলে রায়হান স্যার আসবে।
আব্রাহাম রাগে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

আব্রাহাম;; আসলে ভালো না আসলে আরো ভালো। যাই হোক শুনো ওর সাথে যেন আমার কোন কেবিনে সীট না পরে বুঝলে। মানে আমি ওর সাথে টোটালি কোন তালুকাত রাখতে চাইছি না।
রাশেস;; জ্বি স্যার।
এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। কেবিনে এসে দেখে আইরাত আগের মতোই কাজ করছে। তবে এই শান্ত পরিবেশ টা কেন যেন আব্রাহামের হজম হচ্ছে না। আইরাতকে জ্বালানোর জন্য আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; এই যে মিস. পিএ
আইরাত মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আইরাত;; মানলাম আমি আপনার পিএ তাই বলে কি সারাক্ষন এই পিএ পিএ বলে ডাকতে হবে নাকি?
আব্রাহাম;; আমি তো ডাকবোই। আচ্ছা শুনো এখন যাও তো আমার জন্য এক কাপ গরম কফি বানিয়ে নিয়ে এসো উইথ জিরো সুগার।
আইরাত;; জ্বি।

আইরাতের আর কি করার সে বাধ্য আব্রাহাম তাকে যা যা বলবে তাই তাকে করতে হবে। তাই আইরাত চলে যায় কফি বানাতে। অফিসের একজনের কাছ থেকে কিচেনের রাস্তা টা জেনে নেয়। তারপর সেখানে চলে যায়। আইরাত তাকিয়ে দেখে বেশ বড়ো সড়ো একটা কিচেন। এখানেই সকল স্টাফ দের জন্য খাবার বানানো হয়। ওপরে দেখতেই কফি বানাতে যা যা লাগে সব পেয়ে গেলো আইরাত।

তাকে বেশি একটা খোজাখুজি করতে হয় নি। এই গরমে ঘামছে আর কফি বানাচ্ছে। আইরাত কাজ করছিলো তখন একজন আইরাতের পাশে আসে। আইরাত সেদিকে তাকায় দেখে একটা ছেলে। হা করে তাকিয়ে আছে। আইরাতও কতোক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাত বুঝতে পারছে না যে এই ব্যাটা হাবলার মতো তার দিকে তাকিয়েই বা আছে কেন। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আইরাত দেয় তাকে একটা ভেংচি কেটে দেয়। এখন ছেলে টি বলে ওঠে…

নিলয়;; তুমি ই তাহলে আব্রাহাম স্যারের পিএ?
আইরাত;; হ্যাঁ তো?
নিলয়;; হেহেহে কিছু না, কিছু না।
আইরাত;; শালায় দেখি বহুত হাবলা (মনে মনে)
নিলয়;; নাম কি তোমার?
আইরাত;; আছে একটা নাম। এতো শুনে কি করবেন!
নিলয়;; না না কিছু না।

আইরাতের বেশ হাসি পাচ্ছে এই নিলয় কে দেখে তবুও নিজেকে আটকিয়ে রাখে। আর এতোক্ষনে আইরাতের কফি বানানোও শেষ তাই সে কফি নিয়ে চলে আসে। হাতে কফির ট্রে টা নিতে আব্রাহামের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আইরাত;; May i come in sir..?!
আব্রাহাম;; এসো।
আইরাত কফির মগ টা নিয়ে মেকি হেসে আব্রাহামের টেবিলের ওপর রেখে দেয়।
আইরাত;; আপনার কফি।
আব্রাহাম;; হুম।

আব্রাহাম তার মুখে ডান হাতের দু আঙুল ঠেকিয়ে রেখে দিয়েছে। কপাল কুচকে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত তো মূর্তির মতো দাঁড়িয়েই আছে। আইরাত বুঝতে পারছে না যে আব্রাহাম তার দিকে তাকাচ্ছেও না আবার কফিও খাচ্ছে না, কিছু বলছেও না। হলো কি! তখনই আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; টেস্ট করো।
আইরাত;; জ্বি??
আব্রাহাম;; বললাম যে কফিটা টেস্ট করো।
আইরাত;; কিন্তু কেন, এটা তো আপনার!
আব্রাহাম এবার আইরাতের দিকে এক ভ্রু উচু করে তাকায়।

আব্রাহাম;; কে জানে যদি কফি তে কিছু মিশিয়ে দিয়ে থাকো তো। আগে তুমি খাও। চেক কিরে নেওয়া ভালো।
আব্রাহামের এমন কথায় আইরাতের মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেলো। এত্তো বড়ো কথা আব্রাহাম তাকে বলতে পারলো। এক ফোটাও বিশ্বাস করে না তাকে৷ আইরাত আর কি করবে কফির মগ টা তুলে কিছুটা খেয়ে নেয়। আর আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; হুম এই নিন কিছুই মিশাইনি আমি। খেতে পারেন।
আব্রাহাম;; এবার যাও।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; কফি বানাতে, আবার কফি বানিয়ে নিয়ে এসো যাও।
আইরাত;; কিন্তু এটা!

আব্রাহাম;; তোমার কি মনে হয় আমি এই কফি খাবো। তোমার টা। যাও আবার বানিয়ে নিয়ে এসো।
আইরাতের কান দিয়ে যেন ধোয়া বের হতে লাগলো আব্রাহামের কথা শুনে। শালা খচ্চর। নিজেই কফি চেক করতে বলে এখন আবার নিজেই বলছে খাবে না। আবার বানাতে। কি পেয়েছে টা কি। আইরাত রাগে তার ওরনা পেছাচ্ছে শুধু। আইরাত কে এভাবে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আব্রাহাম এবার কিছুটা জোরেই বলে ওঠে…..
আব্রাহাম;; কি হলো দাঁড়িয়ে কেন আছো। যাও।

আইরাত হাতে কফির মগ টা তুলে আবার বাইরে এসে পরে কফি বানাতে। আর আব্রাহাম এবার জোরে শব্দ করে হেসে দেয়। আইরাতের এই রাগি ফেইস টার ওপর সে যে কি পরিমাণ ঘায়েল তা কেবল আর কেবল সেই জানে৷ আইরাত আবার কিচেনে যায়। একে তো এই অসহ্য গরম তার ওপর এই বার বার কিচেনে আসা৷ আইরাত তার চুল গুলো বেধে নেয়। আব্রাহামের পুরো ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে আবার কফি বানাতে লেগে পরে। আর এখনও ঠিক আগের ন্যায় এই নিলয় আসে আইরাতের কাছে। ৩২ টা দাত বের করে দিয়ে হেসে তাকিয়ে আছে। আইরাত দুই হাত ভাজ করে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

নিলয়;; হেহেহেহেহেহে… আবার এসেছেন৷
আইরাত;; জ্বি আসতেই হলো।
নিলয়;; হেহেহেহেহে।
আইরাত;; এতো হাসেন কেন আপনি। এতো বোকা বোকা কেন?
নিলয়;; আসলে ছোট থেকেই আমি এমন, ওইযে হাবলা আর কি হেহেহে।
আইরাত;; হ্যাঁ তা জানা হয়ে গেছে আমার এতোক্ষনে।
নিলয়;; আচ্ছা আপনি তো বললেন না!
আইরাত;; কি?
নিলয়;; ওই যে আপনার নাম কি?
আইরাত;; সকিনা ?।

নিলয়;; সকিনা যাক যাক তাও অনেক সুন্দর নাম আপনার মতোই (মাথা নিচু করে লজ্জা পেয়ে)
আইরাত;; হায়রে হায়রে লজ্জা কি উথলে পরছে নাকি।
নিলয়;; আসলে আমি মেয়েদের সাথে এতো কথা বলি না তো তাই।
আইরাত;; আপনার মা মনে হয় চিনি বা মিষ্টি একটু বেশিই খেয়েছিলেন।
নিলয়;; হেহেহেহেহেহেহে।
আইরাত;; আরে ধুরু মিয়া।

আইরাত কফি টা নিয়ে আবার এসে পরে। পারমিশন নিয়েই ভেতরে আসে। এসেই আব্রাহামের সামনে কফি টা রাখে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। স্পষ্ট দেখতে পারছে যে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গয়েছে আইরাত। কপালে আর নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। দারুন লাগছে ।
আইরাত;; এই রইলো আপনার জিরো সুগার কফি, কফি পাওডার বেশি না। আর কিছু মিশিয়েও দেয় নি সো এবার আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
আব্রাহাম আর কি বলবে যা বলার তা আইরাতই বলে দিলো। আব্রাহাম কফি খেলো ঠিক আছে সব। আর আইরাত গিয়ে তার চেয়ারে বসে পরে।

আব্রাহাম;; আমরা আগামীকাল কাজের জন্য বাইরে যাচ্ছি সেখানে একটা হোটেলে থাকতে হবে। চারদিনের জন্য এন্ড তুমিও যাবে।
আইরাত;; আম.. আমি। মানে আমি চারদিনের জন্য বাইরে। আসলে বাসায় মানবে না স্যার। আমি একা কখনোই এতোদিন বাইরে থাকি নি।
আব্রাহাম;; এখন থাকবে। আর যেতে হবে।
আইরাত কিছু না বলে মুখ লটকিয়ে দিয়ে বসে থাকে। বাসায় বলতে হবে।

এভবেই সেইদিন যায়। অফিস শেষ হয় সাত টায়। আইরাত অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। কিন্তু রিকশা পাচ্ছে না। রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে ছিলো আর তখনই আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে আসে। আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। আব্রাহাম গাড়ির গ্লাস টা নিচে নামিয়ে বলে…
আব্রাহাম;; নিরব রাস্তা, একা একটা মেয়ে কখন কি হয় বলা যায়।
আইরাত;; আপনি কি আমায় ভয় দেখাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; মোটেও না।
আইরাত;; তো?
আব্রাহাম;; গাড়িতে উঠো।

আইরাত;; না আমি একাই যেতে পারবো আপনি যান।
আব্রাহাম;; ভুলে যেও না যে আমি তোমার অফিসের বস।
আইরাত;; সেটা অফিসে এখানে না।
আব্রাহাম;; আচ্ছা এখন কি নিজে থেকে উঠবে। নয়তো বলো আমি অন্য রাস্তা অবলম্বন করি।
আইরাত;; থ্রেইট দেওয়া ছাড়া আর পারেন টাই বা কি!
আব্রাহাম; তোমাকে জ্বালানো।
আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; কিছু না গাড়িতে উঠো।
আইরাত আর না পেরে গাড়িতে উঠেই পরে। গাড়ির পেছনের দরজা খুলে বেক সিটে বসে পরে। আব্রাহাম গাড়ির ফ্রোন্ট গ্লাসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে ক্ষেপে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; ওও হ্যালো। আমি তোমার ড্রাইভার না ওকে।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; পেছনে কেন বসলে, আমাকে কি দেখে ড্রাইভার লাগে। সামনে এসে বসো।
আইরাত;; কিন্তু..
আব্রাহাম;; সামনে এসে বসো আইরাত৷

এখন কথা না শুনলে কপালে শনি আছে তাই আইরাত গাড়ির সামনে আব্রাহামের পাশে গিয়ে বসে। সারা রাস্তায় একটা কথাও হয় না তাদের মাঝে। আইরাতের বাড়ি এসে পরলে আইরাত সোজা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে যায়৷ আইরাতকে যতোক্ষন দেখা যায় ততক্ষণ আব্রাহাম তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আইরাতের ভেতরে গেলে সেও চলে যায়। তবে বাড়িতে গিয়ে আইরাত বেশ অবাক হয়। আইরাতের চাচ্চু ইকবাল রান্নাঘরে কাজ করছে। আইরাত গিয়ে ব্যাগ টা রেখে ছুটে তার চাচ্চুর কাছে আসে।

আইরাত;; চাচ্চু রাখো, রাখো এইসব। তুমি এখানে কি করছো?
ইকবাল;; তোর চাচি আজ আমার সাথে রাগারাগি করে রান্না করে নি। তাই আমিই এলাম।
আইরাত;; রান্না করে নি মানে।

আইরাতের মাথায় তো রক্ত চড়ে গেলো। সে ইকবাল কে নিয়ে হলরুমে সোফাতে বসিয়ে দিলো। আর নিজে রান্নাঘরে চলে গেলো রান্না করতে৷ আইরাত কিছু বলছে না শুধু রাগ সামলে কাজ করছে। রান্নাঘর থেকে টুং টাং আওয়াজ পেয়ে কলি তার রুম থেকে বাইরে বের হয়ে পরে। দেখে আইরাত রান্নাঘরে।
কলি;; এসেছেন মহারানি। তা আগে তো বিকেলেই এসে পরতেন আজ এতো রাত কেন।
আইরাত আর চুপ করে থাকলো না। রাগ লিমিটের বাইরে চলে গেছে।

আইরাত;; কারণ আগে কাজ করতাম হোটেলে আর এখন অফিসে। অফিস তো আর আপনার বাপ-দাদার সম্পত্তি না যে আমার চেহারা দেখে আমকে জলদি ছুটি দিবে। চাচি তুমি কি মানুষ। চাচ্চু প্রেসারের রোগি। সারা টা দিন না খাওয়া। আর এই, এই বুইড়া বয়সে তোমার এতো কিসের রাগ শুনি। তুমি যে রাগে রান্না করো নি। নিজে তো খাও আর কুম্ভকর্ণের মতো পরে থাকো। এই মানুষ টার কি হবে ভাবলে না একবার। চাচ্চু রান্নাঘরে এসেছে, রান্না পারে নাকি সে তাও তুমি দেখো না।

কলি;; অবস্থা দেখেছো। এগুলো কি বলছে দেখলে তুমি এই শুনছো রনিতের বাবা ?।
আইরাত;; চুপ করো। এখন কেন, এখন রনিতের বাবার নাম মুখে আসে কেন। এতোক্ষন কোথায় ছিলে যখন রনিতের বাবা রান্নাঘরে এসেছিলো। হয়েছে থাক কাউকে লাগবে না। চাচ্চু আমি বানাচ্ছি কি খাবে বলো।
ইকবাল;; না মানে…
আইরাত;; আচ্ছা আমি ই বানাচ্ছি।

আইরাত একদম চুল বেধে রান্না করতে বসলো। রান্না শেষে আইরাত খাবার নিয়ে তার চাচ্চুর সামনে রাখে। আইরাত দেখে তার চাচি চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; এই চোখ নামাও, চোখ খুলে পরে যাবে চোখ নামাও। নয়তো কাটা চামুচ দিয়ে কিন্তু তুলে নিবো।
আইরাতের চাচি শুধু রাগে জ্বলছে।

আইরাত;; আর শুনো আজ এমন করেছো করেছোই। আর যদি দেখেছি যে তোমার জন্য চাচ্চু খাওয়ার কষ্ট করছে তো বুঝে নিও সেইদিন কি হবে। আর আমি চারদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি কাজে। অফিসের বস বলেছে সেখানে আমার যেতেই হবে। চারদিন বাসায় থাকবো না এই বলে এটা ভেবো না যে বাড়ি মাথায় করে ফেলবে। সাবধানে। (চাচির উদ্দেশ্যে)
এই বলেই আইরাত রুমে চলে যায়। অফিসের কাজ তারপর বাসায় এসেও তাকে কাজ করতে হলো। শরীর যেন চলছে না আইরাত তার ব্যাগ প্যাক করে ফেলে তারপর ফ্রেশ হতে চলে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৫

আব্রাহাম পুরো ঘরের লাইট অফ করে দিয়ে শুধু একটা হলুদ কালারের লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে রুমে। লাইট টা আইরাতের ছবির নিচে রাখা। যার ফলে আইরাতের ছবি টা আলো & ছায়ার কম্বিনেশন বেশ ফুটে ওঠেছে। আর আব্রাহাম হাতে একটা হুইস্কির বোতল নিয়ে আইরাতের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম পাগল হয়ে যাবে পুরো। আইরাত আইরাত আর আইরাত। মেয়েটার মাঝে এমন কিছু একটা আছে যা তাকে খুব করে তার কাছে টানে। এই মেয়ে টাকে না পেলে হয়তো আব্রাহাম বলে আর কোন অস্তিত্বই থাকবে না। আইরাতকে চায় আব্রাহামের। আব্রাহাম এবার নিচে শুয়ে পরে। পুরো ঘর টা এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সারা ঘরে সাদা কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সকল কাগজ গুলোতে শুধু আইরাত আর আইরাতের ছবিই। আব্রাহাম একটা ছবি হাতে তুলে নিয়ে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; ভালোবাসি আমি, অনেক বেশি। কীভাবে ভাসলাম জানি না। জানি তো শুধু এটা যে তোমাকে আমার চাই। তুমি আমার আর আমার। আমার নামে লেখা তুমি। তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার। আমার হয়েই থাকতে হবে। তুমি আমার,,আমার না তো কারোর না। দূরে যেতে পারবে না তুমি আমার হয়েই থাকতে হবে তোমাকে। ভালোবাসি আমি আইরাত। আমার পাগলামো, আমার নেশা সব তুমি আর তুমি।
আব্রাহাম নিজের কোন্ট্রলের বাইরে চলে যাচ্ছে দিন কে দিন। আইরাতের জন্য পাগলামো যেন তার বাড়ছে।

রায়হান;; মেয়েটার নাম কি?
রুবেল (পিএ);; স্যার নুজাইফা বিনতে আইরাত। আসলে উনি আব্রাহাম স্যারের পারসোনাল পিএ।
রায়হান;; নাহহহহহহহহহহহহহহ,, (টেবিলে লাথি দিয়ে)
এখানেও ওই আব্রাহাম। সহ্য হয় না ওকে। আমার ওই মেয়ে কে চাই। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে। কি সুন্দর। আমি অনেক মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছি কিন্তু ওর মাঝে কিছু আলাদা ব্যাপার রয়েছে। আমার আইরাতকে চাই।
রুবেল;; স্যার আব্রাহাম স্যার কে আপনি চেনেন। উনি যে কি ডেঞ্জারাস প্রকৃতির মানুষ তাও জানেন। তাহলে!
রায়হান;; হাহ, হোটেলে তো যাচ্ছি দেখি কি হয়। (শয়তানি হাসি হেসে)

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৭