নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২১

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২১
লেখিকাঃ Tamanna Islam

নিজের কোমড়ে কারো শীতল স্পর্শ পেয়ে আইরাত চমকে গিয়ে পেছন ঘুড়ে তাকায়। তবে সম্পূর্ণ তাকাতে পারে নি। আব্রাহাম তাকে আগেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে। আব্রাহাম রীতিমতো আইরাতের কোমড়ে স্লাইভ করে যাচ্ছে। আর তার এমন কান্ডে আইরাতের শরীরে বয়ে যাচ্ছে এক অজানা শিহরণ। সে শুকনো কিছু ঢোক গিলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; আ আপ আপনি…
আব্রাহাম;; হুশশশশশ..! তুমি জানো বেবিগার্ল আমি তোমাকে কত্তো খুঁজে বেড়াচ্ছি। আর তুমি কিনা এখানে এসে একা একা দাঁড়িয়ে আছো।
আইরাত;; না মানে
আব্রাহাম;; আমার সাথে থাকতে বলেছি না সবসময়।
আইরাত;; আমি কীভাবে থাকবো স্যার। মানে আপনার যখন দরকার পরবে আপনি ডাক দিবেন। আমি চলে যাবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম;; দরকার পরবে মানে লিসেন তোমাকে আমার রাতদিন চব্বিশ ঘন্টাই দরকার পরে। আর শুনো ফর গড সেক এই স্যার ট্যার ডাকা অফ করো। মানে অফিসে থাকলে সবার সামনে ডেকো ঠিক আছে বাট প্লিজ এখানে না।
আইরাত;; এহহহহ আমার বয়েই গেছে স্যার ডাকতে হাহ। আসছে রে আমি আব্রাহাম ই ডাকি। (মনে মনে) হুমম হুমম।

আইরাত কিছুটা মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দিলো। আব্রাহামের যেন এটা মোটেও ভালো ঠেকলো না।
আইরাত;; ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; কেন ছাড়বো?
আইরাত;; আরে মানে কি আপনি যখন তখন এভাবে হুট হাট করে জড়িয়ে ধরেন কেন বলুন তো। ছাড়ুন
আব্রাহাম বেশ বিরক্ত হচ্ছে। তবে পরমুহূর্তেই আব্রাহামের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি এলো।
আব্রাহাম;; আহাম, আহাম। জানপাখি..!
আইরাত;; আইরাত নাম আমার।
আব্রাহাম;; বলছিলাম কি যে নিচে তাকিয়ে দেখো না কত্তো উচুউউউউউউউ।
আইরাত;; ?।

আব্রাহাম;; উঁচু দেখে না তুমি ভয় পাও।
আইরাত;; আব,, না না আমি যাই না মানে আমি রুমে যাই ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; হুম এখন আর একটা বাড়তি প্যাচাল পারলে আমি কি করবো বলতো জানপাখি..!?
আইরাত;; ফেলে দিবেন এখান থেকে ?
আব্রাহাম;; একদম ঠিক ধরেছো। সো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো।

আইরাতের মাথা টা আব্রাহামের থুতনিতে পরে। মানে আইরাত আব্রাহামের থুতনির সমান। আব্রাহাম তো তার গাল টা আইরাতের মাথার সাথে লাগিয়ে রেখেছে। ছাদ থেকে সামনে তাকালেই দেখা যায় মস্ত বড়ো খোলা এক জায়গা। সমুদ্রের পাড়ে এখন তেমন কোন মানুষ নেই। জায়গা টা নিরব। যার ফলে সেখানে স্রোতের ঢেউ খেলানো শব্দ টাও কানে এসে বাজছে। আকাশের তারা গুলো কেমন জ্বলজ্বল করছে। আব্রাহাম তার আইরাতকে নিয়ে মুগ্ধ নয়নে জায়গা টা উপভোগ করছে কিন্তু আইরাত, সে তো নিরুপায় হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম যে তাকে হুমকি দিয়েছে যে দাঁড়িয়ে না থাকলে ফেলে দিবে।

এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আব্রাহামের ফোন বেজে ওঠে। শেষ পুরো মুড টাই নষ্ট করে দিয়েছে। আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দাঁড়ায়। তারপর ফোন টা পিক করে। সাইডে গিয়ে কথা বলতে থাকে। আর আইরাত এই ফাকে দেয় ভো দৌড়। আব্রাহাম কথা বলা শেষ করে তার পেছন দিকে ঘুড়ে তাকাতেই দেখে আইরাত নেই।
আব্রাহাম;; পালিয়েছে।
আব্রাহাম দাঁড়িয়ে থাকে সেখানেই। রুমে কিছুক্ষন পর যাবে। এদিকে আইরাত ছুটে এসে ঠাস করে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।

আইরাত;; আল্লাহ রে কি আপদ একটা। ধুর আর বাইরেই যাবো না।
আইরাত বিছানাতে গিয়ে উপুড় হয়ে ফোনে গেমস খেলতে লাগলো। তখনই আইরাতের ফোন বেজে ওঠে। দেখে রোদেলার ফোন…
আইরাত;; হ্যাল রোদেলা কেমন আছো?
রোদেলা;; আরে আমার কথা রাখো তুমি কোথায়?
আইরাত;; আমি কোথায় মানে? কেন তুমি জানো না?
রোদেলা;; আরে আমি কি করে জানবো। আব্রাহাম স্যার নেই তুমি নেই কোথায় তোমরা আর কাউকে জিজ্ঞেস করলে কিছু বলছেও না।

আইরাত;; আমরা তো রিসোর্টে আছি। আর কেন আব্রাহাম স্যার বলে নি কিছুই সবাইকে এই ব্যাপারে? (কপাল কুচকে)
রোদেল;; না তো। এমনকি আমার সাথে সাথে বাকি রাও জানেন না। আর তোমাকে আমি কাল রাত থেকে ফোনে ট্রাই করছি কিন্তু পাচ্ছি না। এইমাত্র পেলাম।
আইরাত;; হুম, আচ্ছা আমরা রিসোর্টে আছি আর কালই স্যার আমাকে সাথে নিয়ে এখানে এসেছেন।
রোদেলা;; ওহহ আচ্ছা। কিন্তু শোনো এখানে অনেক ঝামেলা হয়েছে।
আইরাত;; মানে?

রোদেলা;; রায়হান স্যার যে আছে না উনি তো খুব চটে আছেন। আর উনার অবস্থাও ভালো না বেশি।
আইরাত;; যে ঘুষি গুলো মেরেছে। আমি তো ভেবেছিলাম আজ এখানেই ইন্না-লিল্লাহ। ভাগ্য ভালো বেচে আছে।
রোদেলা;; আচ্ছা যাই হোক,, থাকো তাহলে।
আইরাত;; আচ্ছা শুনো শুনো।
রোদেলা;; হ্যাঁ

আইরাত;; আচ্ছা আমাদের অফিস থেকে তো টাইম দিয়েছিলো চার দিন তাই না…!
রোদেলা;; চারদিন দিয়েছিলো কিন্তু আমরা কালই চলে যাচ্ছি।
আইরাত;; মানে কি তাহলে আমরা কবে যাবো?
রোদেলা;; সেটা তো ডিপেন্ড করে আব্রাহাম স্যারের ওপরই।
আইরাত;; হায়রে। আচ্ছা বুঝেছি।
রোদেলা;; রাখলাম তাহলে ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেয
আইরাত;; আল্লাহ হাফেয।

আইরাত তো ফোন কেটে দিলো। এবার তার আব্রাহামের ওপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে প্রচুর। আব্রাহাম তাকে বলেছে যে তাকে নিয়ে এসে পরেছে। কিন্তু এটা বলে নি যে কাউকে না জানিয়েই এসে পরেছে। মানে কেউ যেন জানতে না পারে তার জন্যই তাকে অজ্ঞান করে তারপর এখানে আনা হয়েছে।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা বাচ্চু তাই না। এখব সব ক্লিয়ার হলো আমার কাছে। এই পোলা নিজেও পাগল সাথে সাথে আমাকেও বানাবে পাগল।
আইরাত তো এসে পরেছে অনেক সময়ই হবে। এখন হয়তো আব্রাহাম তার রুমে। এই ভেবে আইরাত ফোন টা বিছানার ওপর রেখে আব্রাহামের রুমে পা বাড়ায়।
আইরাত;; এখন শুধু রুমে একবার যাই তারপর আছে।

আইরাত মুখ টা ফুলিয়ে আব্রাহামের রুমের দিকে যাচ্ছে। আব্রাহামের রুমে যাওয়ার আগে একটা গ্লাস আছে। মানে দরজার সাথে ছোট একটা জানালা আছে। আর জানালতে গ্লাস লাগানো সেখান দিয়ে সবই প্রায় দেখা যায়। আইরাত তো এক প্রকার তেড়েই আব্রাহামের কাছে যাচ্ছিলো কিন্তু রুমে ঢোকার আগেই আইরাতের পা আপনা আপনিই থেমে যায়। রুমে গিয়েও আবার উলটো ঘুড়ে তাকে এসে পরতে হয়। আইরাত জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেননা আব্রাহাম এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে বসে আছে কিন্তু তার সামনে রিভলবার, গান, বুলেটস, নাইফ, এই সবকিছুর এক রকম ছড়াছড়ি। আইরাতের এগুলো একসাথে দেখে ভয়ে আত্না শুকানোর উপক্রম।

আইরাত;; আমি কেন আইছিলাম এইখানে। কেন এই পোলার পিএ হইতে গেছিলাম। এগুলা ভয়ানক ভয়ানক জিনিস দেখবার জন্যে। সারাজীবনেও এগুলা দেখি নাই। কখন কাকে খুন করে বসে আল্লাহ মালুম। রাগের মাথায় আবার আমাকেই না মেরে বসে। ইয়া আল্লাহ বাচাও। (মনে মনে)

আইরাত এক নয়নে তাকিয়ে ছিলো আর এগুলা বকবক করছিলো। তখনই একজন বয়স্ক লোক আব্রাহামের কাছে আসে। সে আর আব্রাহাম মিলে কথা বলছে। কিন্তু আসলে ঠিক কি কথা বলছে তা কিছুই শোনা যাচ্ছে না। তবে আব্রাহামের চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে সে বেশ রেগে গেছে। এভাবে কিছুক্ষন থাকতে থাকতেই আব্রাহাম এক ঝটকায় উঠে সেই বয়স্ক লোকটির হাতে ছুরি দিয়ে এক ঘা বসিয়ে দেয়। রক্ত ছিটকে যায়। লোকটি ব্যাথায় কুকড়ে যায়। রক্ত ঝড়ছে কিন্তু আব্রাহাম না ই লোকটিকে সেখান থেকে উঠতে দিচ্ছে আর না ই নিজে কিছু করছে রক্ত থামানোর জন্য। আব্রাহাম উলটো খুব শান্ত শিষ্ঠ একটা মুখ করে আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসে। হাত থেকে চাকু টা টেবিলের ওপর রেখে দেয়। তবে এগুলো দেখে আইরাতের হাত দুটো আপনা আপনিই তার মুখে চলে যায়। কি মানুষ রে বাবা একটা বয়স্ক লোককেও ছাড়লো না। হঠাৎ কেন যেন আব্রাহামের মনে হলো যে দরজার পাশে কেউ আছে।

আব্রাহাম;; কে ওখানে? (গম্ভীর গলায়)
আইরাতের বুকে ধপাস ধপাস শুরু হয়ে গেছে। সে সোজা সেখান থেকে উড়া ধুরা দেয় এক দৌড়৷ দৌড় দিয়েই সোজা নিজের রুমে। আব্রাহাম দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে কেউ নেই। কিন্তু সে সিওর কেউ তো ছিলো এখানে। যাই হোক আব্রাহাম আবার তার রুমে চলে যায়। গিয়ে সেই বয়স্ক লোকটির সামনে কপাল কুচকে বসে।
আব্রাহাম;; আপনি আমার বাবার বয়সী। এতোদিন যথেষ্ট সম্মান করতাম কিন্তু এই সম্মানের যোগ্য আপনি নন। বাবা নামে কলঙ্ক আপনি।

বয়স্ক লোকটি নিজের হাত ধরে কাতড়াচ্ছে। আব্রাহামের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।
আব্রাহাম;; মা-বোন তো আপনারও ছিলো অবশ্যই। নিজের একটা মেয়েও আছে। তাহলে অন্যের মেয়ের সাথে কেন এমন হবে। আজ আপনার ছেলে একটা মেয়ে কে রেপ করেছে। আপনি কোথায় আপনার ছেলে কে শাসন করবেন তা না। এখানে আপনার ছেলে কে কীভাবে জেলে যাওয়া থেকে বাচানো যায় আপনি সেই সুপারিশ নিয়ে এসেছেন আমার কাছে। আপনার ছেলে ফাসবে অবশ্যই ফাসবে। রেপ & মার্ডার কেসে।

শালার ওপর এমন কেস দিবো যেন জীবনের তরে বের হতে না পারে। মন তো চাইছে যে আপনার ছেলের সাথে সাথে আপনাকেও এখানেই মেরে রেখে দেই। কিন্তু কি করবো বলেন নিজের ছেলে কর্মফল ভোগ করবে আর আপনি দেখবেন না এমন টা হয় নাকি?! তাই বাচিয়ে রাখলাম আপনাকে ?। এবার চোখের সামনে থেকে দূর হন। ভাগ্য ভালো আপনাকে এখনো আপনি বলে সম্বোধন করছি নয়তো তুই-তুকারি লেভেলের আরো ওপরে যেতে পারি আমি।

আব্রাহামের এমন শান্ত সুরে থ্রেইট টা যেন বয়স্ক লোকটি আর হজম করতে পারলেন না। তাই কাটা স্থানটা আরেক হাত দিয়ে চেপে ধরে হুড়মুড় করে রুমের বাইরে বের হয়ে পরলেন।
আব্রাহামের মাথা প্রচুর গরম এখন। মানুষ কি পরিমাণ বিবেকহীন হলে নিজের ছেলের এইসব কুকীর্তি লুকাতে সাহায্য চাইতে আসে৷ This is just ridiculous…

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২০

অন্যদিকে আইরাতের চোখ দিয়ে সত্যি পানি বের হয়ে পরেছে। ভয় লাগছে। এভাবে যদি একটা সাইকোর সাথে রাতদিন সবসময় থাকতে হয় তাহলে ভয় পাওয়া টা স্বাভাবিক। আইরাত দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে।
আইরাত;; আমি কাল ই এখান থেকে সোজা বাসায় চলে যাবো আর থাকবো না এখানে।
আইরাত গিয়ে ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে। হঠাৎ আইরাতের কানে কারো পায়ে হেটে আসার শব্দ আসে। ঠক ঠক ঠক৷ আইরাত পানি খাচ্ছিলো হঠাৎ তার পানি খাওয়াই থেমে যায়। চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়৷ এটা আব্রাহামের আসার শব্দ। আইরাত দাঁড়িয়ে ছিলো।

আর তখনই আব্রাহাম সোজা আইরাতের রুমের দরজা খুলে এসে পরে। আইরাতকে এভাবে ভয়ে জমে থাকতে দেখে আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; কি করছো?
আইরাত;; আব.. না না কি কিছুই না কিছুই না।
আব্রাহাম;; আমরা পরশু দিন এখান থেকে বের হয়ে পরবো।
আইরাত;; হুম হুম।

আব্রাহাম চলে আসতে নেয় কিন্তু আবার উলটো ঘুড়ে আইরাতকে বলে ওঠে..
আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ অন্যের রুমে উঁকি ঝুকি কম করে দিয়ো। এটা বেড মেনার্স বেবিগার্ল।
আব্রাহাম এই বলেই চলে যায়। আর আইরাত তো টাস্কি। তার মানে এই আব্রাহাম আইরাতকে দেখে ফেলেছে। আইরাতের মন চাইছে নিজের মাথা নিজেই ফাটিয়ে দিক এখন। এত্তো চালাক মানুষ হয় কি করে।
আইরাত বকতে বকতে অফিসের কিছু ফাইল চেক করতে বসে আর আব্রাহাম লেগে যায় তার আরেক কাজে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২২