নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৫

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৫
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত আর আব্রাহাম গাড়িতে করে যাচ্ছে, তবে আইরাত বেশ রেগে আছে। রাগে একবার সামনের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক বার আব্রাহামের দিকে। কিন্তু আব্রাহাম তো আব্রাহাম ই। আব্রাহাম লাইক “প্যারা নাই চিল”। এক মনে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
আইরাত;; আপনি শুরু টা করেছেন কি হ্যাঁ? মানে এই রাতের বেলা একটা মেয়ে কে তার বাড়ি থেকে এভাবে নিয়ে এসে পরলেন। আপনি জানেন আমার চাচি আমাকে এর পরে ঠিক কি করবে? আপনি যে এতো ইজিলি ব্যাপার গুলো নিন না আসলে তা এতো ইজি না।

আব্রাহাম;; (সিটি বাজাচ্ছে)
আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন আমার রাগ লাগছে অনেক।
আব্রাহাম;; ” রাগ করে না সুন্দরি গো, রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো”।
আইরাত;; আরে ধুরু।
আব্রাহাম;; আচ্ছা এতো টেনশন নেওয়ার তো আমি কিছুই দেখছি না এখানে।
আইরাত;; অবশ্যই আছে।
আব্রাহাম;; চাচির চিন্তা করছো, তোমার চাচির দিকে তাকিয়ে উনার সামনে গিয়ে শুধু আমি একটু বসবো। তারপর উনি শেষ ?।
আইরাত;; আপনার মতো সাইকো কে কেই না ভয় পাবে (ফিসফিস করে)
আব্রাহাম;; কিছু বললে?
আইরাত;; না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; দেখুন আমি বাড়ি যাবো। প্লিজ আমায় বাড়ি দিয়ে আসুন।
আব্রাহাম;; তোমাকে আমি এমনিতেই আমার কাছে পুরো রাত রাখবো না, নয়তো আমি কি থেকে কি করে বসবো নিজেই জানি না।
আইরাত;; আমরা যাচ্ছি টা কোথায়?
আব্রাহাম;; দেখি কোথায় যাওয়া যায়।
আইরাত;; অসহ্যকর।

আব্রাহাম আইরাতের দিকে পানির বোতল টা এগিয়ে দিলো। আইরাতও বোতল টা নিয়ে কিছু পানি খেয়ে নিলো। আইরাত শুধু বসে আছে, আর চিন্তায় মাথা ফাটছে। এক সময় গাড়ি থামায় আব্রাহাম। আইরাত মাথা ঘুড়িয়ে বাইরে তাকায়৷ আব্রাহাম তখন গাড়ি থেকে নেমে এসে আইরাতের পাশে গিয়ে তার গাড়ির দরজা টা খুলে দেয়। আইরাত বাইরে আসে। তবে আব্রাহাম তাকে কোথায় নিয়ে এসেছে।
আব্রাহাম;; এসো।
আইরাত;; এটা…?
আব্রাহাম;; তোমার শশুড় বা.. ওপস্ সরি তোমার জামাইয়ের বাড়ি।
আইরাত;; মানে আপনি এতো রাতে আমাকে আপনার বাসায় নিয়ে এসেছেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো? চলো।

আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যেতে থাকলো। এবার আইরাত নিজের আশেপাশে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে সব দেখতে লাগলো। রাতের বেলা যেহেতু তাই বাইরে লাইট লাগানো অনেক। দুই পাশে বেশ সুন্দর বাগান আছে। আছে কিছু তীব্র সুগন্ধি যুক্ত ফুলের গাছ। যা থেকে সুবাস ছড়িয়ে চারিদিক কেমন মৌ মৌ করছে। বড়ো বড়ো গাছ আছে, সেগুলো নিপুণ ভাবে ছাটাই-বাছাই করা। ২-৩ টা ছোট ছোট সাদা স্ট্যাম্প আছে ঝরনার মতো। যেগুলো থেকে পানি গড়িয়ে পরছে।

আর এই নীরব রাতে সেই পানি পরার শব্দ গুলো শোনা যাচ্ছে। দুই পাশের এতো সুন্দর বাগানের ঠিক মাঝ বরাবর রয়েছে একটা বাড়ি। বাড়ি না আসলে এটাকে এক প্রকার প্যালেস বললেও বেশি একটা ভূল হবে না। আর মাঝখানে একটা সাদা সরু রাস্তা আছে। সেখান দিয়ে হেটেই বাড়ির ভেতরে যাওয়া হয়। আইরাতের মনে পরে না যে এমন বাড়ি গুলো সে কখনো টিভি ছাড়া কোথাও দেখেছে। তবে আইরাতের একটা জিনিস বেশ পছন্দ হয়েছে তা হচ্ছে বাগান। বরাবরই বাগান তার কাছে বেশ পছন্দের৷ আর আব্রাহাম তাকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। ভেতরে যেতেই সামনে পরে একটা বিশাল হলরুম।

আব্রাহাম;; এটা আমার বাসা।
আইরাত;; একটা জিনিস আজ সুস্পষ্ট হলো।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; বড়োলোকের বিরাট কারবার।
আব্রাহাম;; হুম তা তো বটেই।
আইরাত;; তো এই আলিশান বাড়িতে কি আপনি একাই থাকেন?
আব্রাহাম;; আহা, আরেকজন আছে।
আইরাত;; কে?

আব্রাহাম;; দাদিইইইইই, দাদিইই। এই কোথায় গেলে তুমি দাদি। দেখো কে এসেছে? দাদিইইই
আইরাত চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আর আব্রাহাম চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ইলা অর্থাৎ তার দাদি কে ডেকে চলেছে। আব্রাহামের ডাক শুনেই ভেতর থেকে একজন বয়স্ক মহিলা বের হয়ে এলো। বেশ মোটাসোটা, গলুমলু। মাথার সব চুল গুলোই সাদা আর প্রচুর ফর্সা। আইরাতের এতোক্ষন মেজাজ চটে থাকলেও ইলা কে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে আপনা আপনিই।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, দেয়ার সি ইজ। আমার দাদি, আমার জীবন৷

ইলা তো আইরাতকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছে। কেননা আব্রাহাম সারাদিন আইরাতের কথায় বলে তার কাছে। আব্রাহামের রুমে গেলে আইরাতের ছবি গুলো সব জায়গায় কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ইলা আস্তে আস্তে পা ফেলে আইরাতের কাছে আসে। আব্রাহাম তখন তার দাদির কাছে গিয়ে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। ইলাও আব্রাহামের গালে নিজের এক হাত রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; দাদি?
ইলা;; হুমমম থাক আর বলতে হবে না।
আব্রাহাম;; হুমম
ইলা আইরাতের কাছে এগিয়ে গেলো। গিয়েই আইরাতের মাথায় হাত রেখে দিলো।
ইলা;; তুমি আইরাত..!
আইরাত আসলে কি বলবে খুঁজে পায় না। একবার আব্রাহামের দিকে তো আরেকবার দাদির দিকে তাকাচ্ছে।
আইরাত;; আব..হ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আইরাত।
ইলা;; এসো।
ইলা আইরাতের হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসে পরে। আর আব্রাহাম একপাশে বসে হাত ভাজ করে তাদের কেই দেখছে।

ইলা;; জানো তোমার কথা না আব্রাহাম অনেক বলে প্রায় সারাদিনই।
আইরাত মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
ইলা;; আইরাত এটা, আইরাত ওটা। সারাদিন। আজ যে হুট করে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসবে আমি তা জানি না, নয়তো আগে থেকেই সব রেডি করে রাখতাম।
আইরাত;; না না ঠিক আছে।
ইলা;; তুমি তো এক….
আব্রাহাম;; আচ্ছা হয়েছে তোমার এমন আস্তে ধীরে কথা পরেও বলা যাবে। এবার বেবিগার্ল চলো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিয়ে আসে।

আইরাত;; আরে কিন্তু
আব্রাহাম;; চলো তো।
ইলা;; যাও যাও সমস্যা নেই।
আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে সিড়ি বেয়ে ওপরে একটা রুমে চলে যায়। তবে এবার আর আইরাতকে বলতে হলো না যে এটা আব্রাহামের রুম। কারণ সব কিছু সাদা-কালো জিনিস দিয়ে সাজানো। তবে অনেক শৌখিন ভাবে।
আইরাত;; এখানে কেন আসলাম?
আব্রাহাম;; কিছু দেখানোর আছে তোমাকে?

আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; ওয়েট এ সেকেন্ড।
আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে তার চোখ দুটো এক হাত দিয়ে ঢেকে দিলো।
আইরাত;; আরে, আপনি করছেন কি!
আব্রাহাম;; বললাম না সারপ্রাইজ আছে। দাড়াও।
আব্রাহামের সামনে একটা নীল রঙের সিল্কি কাপড় রাখা। মানে সামনে একটা বড়ো আকৃতির ফ্রেমের মতো কিছু একটা আর তা সেই নীল কাপড়ে ঢাকা।
আব্রাহাম;; সো রেডি,, এয়ান টু এন্ড থ্রি….
এই বলেই আব্রাহাম সামনে থাকা নীল কাপড় টা সরিয়ে দিলো। আর আইরাতের চোখ থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে নিলো।

আইরাত তার সামনে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো। এটা কি আদৌ সম্ভব। সামনে একটা ফ্রেম রাখা, অবশ্যই ফ্রেমে ছবি আছে। সবগুলো ছবিই আব্রাহামের তবে মাঝখানে ফুটে ওঠেছে আইরাতের মুখমণ্ডল। অর্থাৎ আব্রাহামের একটা একটা ছবি খুব সুন্দর ভাবে সেখানে সাজানো হয়েছে আর সেই ছবি গুলোর মাঝখানে আইরাতের চেহারা ভাসছে। ছবি আব্রাহামের কিন্তু চেহারা আইরাতের। আইরাত সত্যি বেশ অবাক। এমন টা কি করে সম্ভব। আইরাত টাস্কি খেয়ে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দিয়ে তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিজের পকেটে হাত দিয়ে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত যেন এক ঘোরের মাঝে ডুব দিয়েছে। তাকিয়ে আছে তো আছেই। সে কখনো ভাবে নি যে আব্রাহাম তাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে।

আব্রাহামের ডাকে তার হুস আসে।
আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে জানপাখি?
আইরাত ফট করে ঘুড়ে তার পেছনে তাকায়৷
আইরাত;; ইয়ে মানে আসলে আপনি, আপনি এটা কীভাবে?
আব্রাহাম;; হুমম আমার জন্য খুব সিম্পল এটা। আর তোমাকে অফিসের বেশি বেশি কাজ গুলো দিয়ে দিতাম আমি যেন আমার কাজ একটু হাল্কা হয় আর আমি বসে বসে এটা বানাতে পারি।
আইরাত;; এহ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ

আইরাত আবার সেই ছবি গুলোর দিকে তাকায়। এটা আসলে অবিশ্বাস্য, অসম্ভব সুন্দর হয়েছে দেখতে।
আব্রাহাম;; আমি জানি অনেক সুন্দর হয়েছে এতো দেখো না (আইরাতকে জড়িয়ে ধরে)
আইরাত;; ঘোড়ার ডিম।
আইরাত আব্রাহাম কে ছাড়িয়ে চলে আসতে ধরে। আর আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দিয়ে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসে। আইরাতকে নিজের দিকে ঘোরায়। হঠাৎ আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের গলাতে স্লাইভ করতে থাকে। গলার পাশ থেকে চুল গুলো এক সাইডে করে নেয়।

আব্রাহাম যেন আরো একটু কাছে যায় আইরাতের। নিজের ডান হাত টা আইরাতের চুল গুলোর মাঝে ডুবিয়ে দেয়। তার মুখ টা খানিক উঁচু করে ধরে। তার কানের ঠিক নিচ বরাবর গাঢ় তিল টার দিকে আব্রাহামের নজর যায়। আব্রাহামের এই চাহনি বেশি একটা সুবিধের লাগছে না দেখে আইরাত আবার চলে আসতে নেয়। কিন্তু এবার আব্রাহাম এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় হুট করেই বেশ শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে আর সাথে সাথেই আইরাতের কানের নিচে সেই তিল টার মাঝে নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়।

আইরাতের শ্বাস যেন মূহুর্তেই আটকে গেলো। বারবার চোখের পাতা গুলো পিটপিট করছে। শরীরে কেমন এক কাটা দিয়ে উঠেছে। আইরাতের বর্তমান অবস্থা টা আব্রাহাম বেশ আন্দাজ করতে পেরেছে কিন্তুব তাতে আব্রাহামের কি। সে তো এক হাতে আইরাতকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত তার মাথার পেছনে দিয়ে গলায় ডুবে আছে। আব্রাহাম যেন এক নেশাযুক্ত কিছুতে রয়েছে, আর এই নেশাময় জিনিস টা কাটিয়ে ওঠার সাধ্য তার নেই। আর সে কাটিয়ে উঠতেও চায় না। আব্রাহাম নিজের চোখ গুলো বন্ধ করে রয়েছে।

আইরাত;; আব আব্রাহ আব্রাহাম। প্ল প্ল প্লি প্লিজ ছাড়ু….
আব্রাহাম;; আইরাত আমি পাগল হয়ে যাবো তোমাকে ছাড়া। প্লিজ কখনো ছেড়ে যেও না। আমি কিচ্ছু জানি না। তোমাকে ছাড়া আমি আর আমি থাকবো না। আমি সত্যি মরেই যাবো তুমি হীনা। আমি ভালোবাসি তোমায়।
আইরাত;; আপনি বুঝার চেষ্টা তো করুন আ….

আইরাত আর কিছু বলার সময় টুকু পেলোই না। তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দুটো মিশিয়ে দিলো। আর এবার যেন আইরাতের চোখ গুলো তার কোটর থেকে বের হয়ে পরার উপক্রম। তবে আব্রাহাম তো আইরাতকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নিয়েছে। দুই হাত আইরাতের গালে রেখে আইরাতে মগ্ন আব্রাহাম। আইরাত নিজের দুই হাত দিয়ে আব্রাহামের বুকে ধাকাচ্ছে কিন্তু লাভ নেই। কেন যেন আইরাতের এবার বেশ খারাপ লাগতে শুরু করেছে। আব্রাহাম তাকে ধরে রেখেছিলো তার মাঝেই সে ফুপিয়ে ওঠে। আব্রাহাম আইরাতের চোখে পানির ছাপ দেখে আস্তে করে তাকে ছেড়ে দেয়। আইরাতের কোমড়ে নিজের হাত দুটো রেখে তার মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দেয়। আব্রাহাম চুপ চাপ থাকলেও আইরাত যেন জোরে জোরে দম ছাড়ছে। আব্রাহাম তার কপালে ছোট করে চুমু একে দেয়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমার থেকে দুরে যেও না প্লিজ। আমার ছিলে আমার কাছে আছো আর আমাতেই থেকে যাও। ভালোবাসি।
আইরাত;; ______________

আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে বের হয়ে পরে। তবে আর যাই হোক আব্রাহামের দাদি ইলা কে আইরাতের বেশ লেগেছে। আব্রাহাম কোন রকম তার দাদি কে বলে বাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। আইরাত কে নিয়ে গাড়িতে ওঠে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ গাড়ি চলছে আপন গতিতে। তবে এবার আইরাত আরেক দফা অবাক। কেননা এটা তো তার বাড়ির রাস্তা না। বরং আব্রাহাম অনেক আগেই আইরাতের বাড়ির রাস্তা পার করে এসেছে। তাহলে আব্রাহাম তাকে এখন আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে৷ আইরাত গাড়ির জানালা দিয়ে দেখে এটা অন্য এক রাস্তা৷
আইরাত;; ওয়েট ওয়েট আমরা যাচ্ছি কোথায়। এই আপনি আমায় আবার কোথায় নিতে যাচ্ছেন। আমার বাড়ি তো এইদিকে না।

আব্রাহাম;; আমি তা জানি জানপাখি।
আইরাত;; তাহলে কোথায় নিচ্ছেন, আরে রাত অনেক হয়েছে বাড়ি যেতে হবে তো৷
আব্রাহাম;; খুব দরকারি একটা কাজ করতে যাচ্ছি৷
আইরাত;; কি এমন কাজ?
আব্রাহাম;; গেলেই দেখতে পাবে চলো।

আইরাতের মুখে আবার চিন্তার ছাপ ফুটে ওঠে৷ আব্রাহাম তাকে নিয়ে যাচ্ছে টা কোথায়। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর আব্রাহাম গাড়ি একটা জায়গায় এসে থামায়। আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে গাড়ির বাইরে নেমে পরে। জায়গা টাতে তেমন কোন মানুষ জন নেই। আইরাত কোন কিছুই বুঝতে না পেরে আব্রাহাম কে বলে…

আইরাত;; আমরা কোথায় আসলাম?
আব্রাহাম;; কাজী অফিসে।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা,, এই কি বললেন?
আব্রাহাম;; কানে বেশি শুনো তুমি। বলেছি কাজী অফিস।
আইরাত;; মানে কি? এই এতো রাতে কাজী অফিস কেন? এখানে কি করছি আমরা?
আইরাতের ভয়ে গলা অর্ধেক শুকিয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; বিয়ে খেতে এসেছি।
আইরাত;; কিন্তু কার?
আব্রাহাম;; তোমার চাচা আর চাচির।
আইরাত;; কিহ?
আব্রাহাম;; কাজী অফিসে কেন আসে মানুষ, অবশ্যই বিয়ে করতে।
আইরাত;; ??
আব্রাহাম;; বিয়ে করবো চলো।

আব্রাহাম আইরাতকে কিছু বলতে না দিয়েই সোজা তার হাত ধরে এক টানে ভেতরে নিয়ে আসে। আব্রাহাম নিজের এক মনে সামনে হেটেই চলেছে,, আইরাত নিজের হাত ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে আর বকবক করছে। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে একদম ভেতরের রুমে চলে গেলো যেখানে বিয়ে পড়ানো হয়। আইরাত গিয়েই দেখে একজন আধবয়স্ক লোক সেখানে বসে আছে। সামনে কতোগুলো কাগজ। এগুলো দেখেই যেন আইরাতের মাথা ঘুড়ে পরে যাবার মতো অবস্থা। মানে কি আব্রাহাম কি তাহলে আগে থেকেই এগুলো রেডি করে রেখেছিলো নাকি। আব্রাহাম নিজে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরে আর আইরাত কেও হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; কাজি সাহেব দেরি কিসের বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
কাজি;; জ্বি আচ্ছা।
এবার যেন আইরাত আর ঠিকঠাক থাকতে পারলো না। আব্রাহামের হাত ছাড়িয়ে চট করে বসা থেকে উঠে পরলো।
আইরাত;; প্লিজ থামুন আব্রাহাম অনেক হয়েছে।
আব্রাহাম সরু দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাত;; আপনি বাইরে আসুন কথা আছে।
আইরাত আব্রাহাম কে এই কথা বলে নিজে আর এক মূহুর্তের জন্যও কাজী অফিসে বসে না থেকে উঠে বাইরে চলে আসে। আব্রাহামও আইরাতের পেছন পেছন আসে।

আব্রাহাম এসেই দেখে আইরাত বাইরে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম;; জানপাখি কি হলো। চলো বিয়ে করতে হবে তো।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ সার্ট আপ। প্লিজ থামুন। এটা বিয়ে কোন মুখের কথা না। যে বললাম আর হয়ে গেলো। এভাবে বিয়ে হয় না। আমার বাসায় আমার পরিবার আছে তাদের রেখে আমি কীভাবে বিয়ে করবো। আপনার দাদি আছে যিনি এত্তো ভালো তাকেও আপিনি না বলেই বিয়ে করতে যাচ্ছেন। কীভাবে?
আব্রাহাম;; সেই চিন্তা তো তোমাকে করতে হবে না। পরে সবাইকে বলা যাবে।
আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন আমার কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমি এখন বুঝতে পারছি না কি বলবো আর কি করবো৷ প্লিজ আব্রাহাম, আই নিড সাম টাইম।
এবার যেন আব্রাহাম থেমে যায়। আর কিছুটা সিরিয়াসও হয়।

আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা। এই কথা তাহলে। ওকে ফাইন যতো সময় নেবার নাও কিন্তু পরে যেন হ্যাঁ ই হয়। আর বিয়ে তো আমাদেরই হবে।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহাম;; চলো বাসায় যাই।
আইরাত;; ?
আব্রাহাম;; এভাবে তাকানোর কিছুই নেই। বাসায় তো যেতেই হবে তাই না চলো।
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে চলে গেলো। এখন রাত বাজছে ১০ টা। আব্রাহাম গাড়ি সোজা আইরাতের বাড়ির সামনে থামায়। আইরাত নেমে চলে আসে৷ তবে আবার আব্রাহামের ডাকে থেমে যায়।

আব্রাহাম;; Hay my beautiful PA…
আইরাত তার পেছন ঘুড়ে তাকায়।
আব্রাহাম;; কাল ঠিক সময়ে অফিসে এসে পরো।
এই কথা বলেই আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে সাই করে চলে যায়। আইরাত আব্রাহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে সেখান থেকে পরে৷

আইরাত খুব সাবধানে বাড়ির ভেতরে আসে। এখন যদি কারো চোখে পরেছে তাহলে এখানেই ইন্না-লিল্লাহ। আইরাত তার পা থেকে জুতো গুলো খুলে হাতে নিয়ে নেয়। লং গোল জামা পরেছিলো। হাত দিয়ে জামা টা একটু উঁচু করে ধরে আরেক হাতে জুতো। তারপরই দেয় এক ভো দৌড়। সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু আইরাতের চাচা ইকবাল আইরাতকে ঠিকই দেখেছে। উনি আইরাতের অপেক্ষাতেই ছিলেন। আর যাই হোক ইকবাল সাহেব এই টুকু জানেন যে আইরাত খারাপ কিছু করবে না বা তার চাচার অবাধ্য হবে না।

এই ভেবেই তিনিও তার রুমে চলে যান। আর ওদিকে আইরাতের এই ভেবে ভেবে ভয় লাগছে যে। আজ যদি সত্যি বিয়ে টা হয়েই যেতো তাহলে, তাহলে কি হতো৷ আর ভাবতে পারছে না। আব্রাহাম সত্যি পাগলেরও ওপরে। যখন যা মাথায় আসে তাই করে। আইরাতের ইচ্ছে আছে যে সে একজন Psychological Doctor Psychiatrist হবে। কিন্তু সাইকো দের সামলানো যে কি পরিমাণ মুশকিল তা এখন ডক্টর হবার আগে থেকেই সে বুঝতে পারছে আব্রাহাম সাইকো কে নিয়ে। এই আব্রাহামের চক্করে পরে ভার্সিটি তেও যাওয়া হয় না তার।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৪

আইরাত;; কি যে হবে আমার। দিয়ার কাছ থেকে নোটসগুলো কালেক্ট করতে হবে। ধুরু এক কাজ করতে গেলে আরেক কাজ হয় না। জীবন ডা হুদ্দাই ভ্যাটকাইতে ভ্যাটকাইতে গেলো।
আইরাত ঘুমিয়ে পরে। আর ওদিকে আব্রাহাম আজ বাইরে বেশি থাকে নি বাড়িতে চলে গেছে। বাড়িতে গিয়ে তার দাদির সাথে অনেক কথা বলে এসে পরে আবার রুমে। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কানে সাউন্ড প্রটেকটিভ হেডফোন পরে ভিডিও গেম খেলতে লাগলো। বেশকিছুক্ষন খেলার পর গেমে জিতেও গেলো। এখন আর ভালো লাগছে না। তাই হাতে একটা সোফট ড্রিংক এর ক্যান নিয়ে বাইরে চলে গেলো মানে করিডরে। আইরাতের কথা মনে পরছে প্রচন্ডভাবে।

রায়হান,, রায়হানের মনে যেন আগুন জ্বলছে ধাও ধাও করে। এখন সে তার চোখ মুখ সব লাল করে দিয়ে হাতে এলকোহলের একটা পেগ নিয়ে বসে আছে আর রাগে ফুসছে। তার এক হাতের তালুতে ব্যান্ডেজ করা। এই হাত টাতে আব্রাহামই তাকে ব্যাথা দিয়েছিলো। রায়হান এই ঘা শুকাতে দেয় না। ইচ্ছে করেই মেডিসিন দেয় না, কাচা করে রাখে। যেন এই ব্যাথা টা তাকে ক্ষণে ক্ষণে আব্রাহামের কথা মনে করাতে থাকে। আগে রায়হানের কাছে আইরাত একদিনের ভালোবাসা ছিলো কিন্তু এখন যে এটা তার জিদে পরিণত হয়েছে৷ আব্রাহাম আর আইরাতের একসাথে থাকার মূহুর্ত গুলো রায়হানের চোখে ভাসছে আর সে রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছে। অবশেষে থাকতে না পেরে রায়হান তার হাত থেকে কাচের গ্লাস টা দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়।

রায়হান;; থাকতে দিবো না আমি ভালো তোদের। আইরাত কে তুই এতো সহজেই নিয়ে যাবি। আমি তা হতে দিবো না। তোদের দুইজন কে আলাদা করেই ছাড়বো আমি।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৬