নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৬

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৬
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত আজ ভেবেছিলো যে অফিসে না গিয়ে সোজা ভার্সিটি তে যাবে। কিন্তু এই সাজ সকাল বেলাই আব্রাহাম তাকে ফোন করে এক রকম শাসিয়ে দিয়েছে জলদি অফিস আসার জন্য। আইরাতের আর কি, যম যখন ডাক দিয়েছে তখন তো যেতেই হবে। আইরাত তৈরি হয়ে অফিসে চলে যায়। তবে অফিসে এসেই দেখে কেউ নেই। মানে হাতে গোণা দুই একজন বাদে আর কেউ নেই। আইরাত কিছুটা কপাল কুচকায়। তখন হাতে ফাইল দেখতে দেখতে রোদেলা আসে৷ আইরাত রোদেলার হাত ধরে থামিয়ে দেয়।

আইরাত;; এই রোদেলা সবাই কোথায়?
রোদেলা;; আরে সবাই মিটিং এ।
আইরাত;; মিটিং?
রোদেলা;; হ্যাঁ হুট করেই আব্রাহাম স্যার সবাইকে কনফারেন্স রুমে ডেকেছেন।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা৷ তাহলে কি আব্রাহাম স্যার…
রোদেলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ উনিও কনফারেন্স রুমেই আছে।
আইরাত;; ওহহ।
রোদেলা;; তুমি তো পিএ স্যারের। যাবে রুমে?
আইরাত;; না থাক, একচুয়ালি আমি জানতামই না যে মিটিং আছে নাকি অন্যকিছু। থাকো, আমি কেবিনে যাই।
রোদেলা;; আচ্ছা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আইরাত তার কেবিনে চলে যায়। যাবার আগে একবার কেবিনে ভালোভাবে উঁকি ঝুকি মেরে যায়। কেউ তো কেবিনে নেই তবুও উঁকি দেয়৷ তারপরেই ভেতরে চলে যায়। এই প্রথম আইরাত এই কেবিনে বিনা পারমিশনে এসেছে। আইরাতের নিজেকে কেমন জানি এই কেবিনের একাই মালিক মনে হচ্ছে৷ আইরাত তার হাতের ব্যাগ টা টেবিলের ওপর রাখে৷ দুই হাত ভাজ করে লম্বা এক দম ছাড়ে৷ তারপর পেছনে ঘুড়ে দেখে আব্রাহামের চেয়ারে তার জেকেট টা রাখা।

টেবিলে আব্রাহামের সিগনেচার প্যান টা রাখা৷ সেটা দিয়েই আব্রাহাম মূলত সব ফাইল গুলোতেই সাইন করে। হঠাৎ আইরাতের মাথায় এক শয়তানি বুদ্ধি আসে৷ আইরাত গিয়ে আব্রাহামের চেয়ারে ধপ করে বসে পরে। আব্রাহাম যেভাবে বসে ঠিক সেভাবেই বসার ট্রাই করে। বসে কলমের বাকেট থেকে একটা কলম নিয়ে নেয়, নিজের ঠোঁট দুটো পাউট করে তারপর কলম টা ঠোঁটের ওপর রেখে দেয়৷ কলম টা নিচে পরে যায় তারপর সেটা আবার তুলে নেয়।

এবার আব্রাহামের সেই সিগনেচার প্যান টা নিয়ে আব্রাহাম যেভাবে সাইন করে সেভাবেই সাইন করার চেষ্টা করছে। এমন থাকতে থাকতে আইরাত হুট করেই হেসে দেয়৷ তবে এবার আইরাত চেয়ারের ওপর থেকে আব্রাহামের জেকেট টা নিয়ে নেয়। তারপর জেকেট টা নিজে পরে ফেলে। আইরাত আব্রাহামের জেকেটের কলারের দিক টা নিজের কাছে নেয়। আব্রাহামের বডির স্মেল। এটা আব্রাহামের স্মেল। আইরাত তা বেশ ভালো ভাবেই চিনে।

আইরাত সুন্দর করে আব্রাহামের জেকেট টা নিজের ওপর জড়িয়ে ধরে। তারপর নিজের দুই হাত দুই পাশে মেলে ঘুড়তে থাকে। ঘুড়তে ঘুড়তেই হঠাৎ থেমে যায় মাথায় হাত দিয়ে৷ মাথা ঘুড়াচ্ছে। আইরাত আবার চেয়ারে নিজের পায়ের ওপর পা তুলে বসে৷ নিজের মাঝে কেমন যেন এক আব্রাহাম আব্রহাম ভাব আসছে৷ বেশ ভালোই লাগছে। আইরাত এবার নিজের গলা খাকাড়ি দিয়ে ঠিক হয়ে বসে৷ নিজের এক হাত এক ভ্রুর সাইডে রেখে গলার স্বরটা ইচ্ছে করে মোটা বানিয়ে বলে ওঠে…….

আইরাত;; আহাম, আহাম৷ হেই বেবিগার্ল যাও এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসো।
এই কথা বলেই আইরাত তার মুখে দুই হাত রেখে খিলখিল করে হেসে দেয়৷ হাসি থামিয়ে আবার বলে ওঠে…৷
আইরাত;; আইরাত, ফাইল গুলো নিয়ে যাও কাজ একদিনের মাঝেই কমপ্লিট হওয়া চাই আর হ্যাঁ অফিসে কোন ছেলের সাথে কোন রকম কথা বলবে না। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?
আইরাত এগুলো শয়তানি করছে আর হাসছে৷

আইরাত;; হাহ, মিস্টার আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। এহহহহহহহহহ কি নাম। এই জেকেট টা পরে সবসময় এখানে বসে হাতে একটা প্যান নিয়ে খালি মানুষ কে অর্ডার করা। সাইকো একটা, পাগল৷
আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা তাই না।
আইরাত;; হ্যাঁ তাই তো। আরে আমি তো গলার আওয়াজ মোটা করার চেষ্টা করছি কিন্তু মোটা হচ্ছে না। তাহলে হুট করেই এমন শোনা যাচ্ছে কেন।
আব্রাহাম;; কেননা আমার গলা আসলেই মোটা।
আইরাত;; এহহ?

আইরাত হুট করে মাথা তুলে সামনে তাকায়৷ এই রে খাইছে রে ?। আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম কেবিনের দরজা তে দুই হাত ভাজ করে এক ভ্রু উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তো আইরাতের পরান পাখি যায় যায় অবস্থা৷ আইরাত হাবলাকান্তের মতো করে দাঁড়িয়ে আছে৷ আব্রাহামের এই মূহুর্তে আইরাতের এমন অবস্থা দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে৷ কিন্তু তবুও নিজের হাসি টা আটকিয়ে সে আইরতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত তো দুই হাত এক জোট করে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আব্রাহাম টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আইরাতের হাত ধরে এনে নিজের সামনে দাড় করিয়ে দেয়৷

আব্রাহামের জেকেট টা সাইজে আইরাতের অনেক বড়ো। তাই আইরাতকে বাচ্চা বাচ্চা লাগছে দেখতে। আইরাত এবার মাথা নিচু করে চোখ মুখ সব খিচে দাঁড়িয়ে থাকে। সে ভেবেছে আব্রাহাম তাকে অনেক বকবে৷ আইরাতকে নিজের সামনে ভয় পেয়ে এভাবে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আব্রাহামের বেশ মজা লাগছে৷ সে মুচকি হেসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আব্রাহাম আইরাতকে তার জেকেট পরিহিত অবস্থাতেই হুট করেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। আইরাত অবাক হয়ে তাকায়। আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত কখনো ভাবে নি যে তার এগুলো উলটা পাল্টা কাজ করার মাঝেই আব্রাহাম এভাবে টপকে পরবে। আব্রাহাম তাকে জড়িয়ে ধরে হাল্কা ভাবে দুলছে৷

আব্রাহাম;; আচ্ছা তো আমার পিঠ পিছে এগুলা করা হয় তাই না!
আইরাত;; এমা না না তেমন কিছুই না।
আব্রাহাম;; তাহলে কেমন হুমম?
আইরাত;; ইয়ে মানে আমি তো….
আব্রাহাম;; হুমম হয়েছে থাক। মানে তোমার মিসেস আব্রাহাম চৌধুরী হওয়ার এতোই তাড়া যে এখন তুমি আমার জেকেট, কলম এগুলো নিয়ে বসে আছো৷
আইরাত;; আরে না তেমন না। ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; তাহলে কেমন?
আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দেয়৷ তারপর এক পা এক পা করে আইরাতের দিকে এগোচ্ছে আর আইরাত ধীরে ধীরে পিছাচ্ছে।

আব্রাহাম;; বলো বেবিগার্ল কেমন?
আইরাত;; কিছুই না। আপনি এভাবে এগোবেন না প্লিজ।
আব্রাহাম;; আর যদি এগোয় তো…!
আব্রাহাম আগাচ্ছে তার দিকে আর এগুলো বলছে। আইরাত পেছাতে পেছাতে এক সময় দেওয়ালের সাথে লেগেই গেলো। যাওয়ার আর রাস্তা নেই, পিঠ ঠেকে গেছে তার। আর আব্রাহাম আইরাতকে আটকিয়ে দেয়৷ আইরাতের দুই পাশে নিজের দুই হাত রেখে আইরাতের বেশ কাছে এসে পরে। আইরাত এখান থেকে যেতেও পারছে না কারন তাকে আব্রাহাম তার দুই পাশে হাত রেখে আটকিয়ে রেখেছে৷ আর আব্রাহামের চোখ দুটো সম্পূর্ণ আইরাতের মাঝে বিচরন করে চলেছে। আব্রাহামের এমন নজর দেখে আইরাতের কেমন কাদো কাদো অবস্থা হয়ে গেলো। আইরাত কাদো কাদো গলাতেই বলে ওঠে..৷

আইরাত;; দেখুন আমার ভুল হয়ে গেছে। আই এম সরি আর হবে না এমন। এবার প্লিজ সরুন আমার সামনে থেকে৷
আব্রাহাম আইরাতের কথা কে পাত্তা না দিয়ে উলটা আরো আইরাতের কাছে এসে পরে। আব্রাহাম ক্রমশ আইরাতের ঠোঁট জোড়ার দিকে এগিয়ে আসছে। আইরাত তা খেয়াল করে চোখ বন্ধ করে মাথা ঘুড়িয়ে নেয়। আইরাতের এমন করাতে আব্রাহাম হেসে দেয়। তারপর আইরাতের কোমড় ধরে এক ঝটকাতে আইরাত কে দূরে নিয়ে আসে।
আব্রাহাম;; তো আমি কি আমার জেকেট টা পাবো কি পাবো না?

আব্রাহামের এমন কথায় আইরাতের নিজের কাছে কেমন ডাকাত ডাকাত মনে হচ্ছে। মানে কি সে কি এখানে ডাকাতি করতে এসেছিলো নাকি যে জিনিস পাবে না। আইরাত জেকেট টা খুলে আব্রাহাম কে দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম জেকেট টা নিজে পরে। আইরাত তার সামনে থেকে চলে আসতে নিলে আব্রাহাম তার হাত ধরে ফেলে৷
আব্রাহাম;; চলো..
আইরাত;; কিন্তু কোথায়?

আব্রাহাম;; অফিসের বাইরে। ভালো লাগছে না এখানে৷ আর তোমার ও তেমন কোন কাজ নেই, দরকার নেই। মিটিং এ যা ছিলো সব আমি সামলে রেখে এসেছি। সো চলো
আইরাত;; ওয়েট দরকার নেই তো আমাকে সকাল বেলা এতো জরুরি ভাবে ডাকলেন কেন?
আব্রাহাম;; আমার মন চেয়েছে তাই৷
আইরাত;; ধুর, তাহলে আজ আমি ভার্সিটি যেতে পারতাম। এমনিতেই কতো দিন ধরে যাওয়া হয় না৷
আব্রাহাম;; সেখানে যেয়ে কি করবে?

আইরাত;; সেখানে গিয়ে কি করবো মানে। আরে কবে থেকে কোন ক্লাস করি না। কতো গুলো নোটস নেবার আছে, কত্তো কাজ আছে আপনি জানেন।
আব্রাহাম;; স্যার নিজে এসে তোমাকে নোটস গুলো দিয়ে যাবে প্রব্লেম নেই৷ আর ক্লাস করতে হবে না। সব আমি সামলে নিবো৷

আইরাত;; কিন্তু, ক্লাস কেন করবো না আজব৷
আব্রাহাম;; ক্লাস কিরতে হবেনা। অফিসে আমার সাথে থাকো তাহলেই হবে৷
আইরাত;; থাকিই তো ?।
আব্রাহাম;; জানপাখি চলো।
আব্রাহাম আর আইরাতের একটা কথা না শুনেই সোজা তাকে নিয়ে বের হয়ে পরে। গাড়িতে করে চলে যায়। তারপর গাড়ি থামায় একটা ফাস্ট ফুডের শপে। আইরাতকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে পরে। বাইরে আব্রাহামের গার্ড রা আছে তাই কেউ তেমন ভাবে আব্রাহামের কাছে যেতে পারছে না। নয়তো এতোক্ষণে ঝাপিয়ে পরতো তার ওপর।
আইরাত;; আমরা এখানে কেন এলাম?

আব্রাহাম;; অবশ্যই খেতে।
আইরাত;; বাইরের জিনিস এতো বেশি খাওয়া ভালো না৷
আব্রাহাম;; হায়য়য়য়য়য়য়য়য়, কি কেয়ার। বেবি শুনো আমাদের বিয়ের পর রতো কেয়ার করো ওকে। এখন আগে খেতে দাও তো আমায়।
আইরাত;; হ্যাঁ খান খান বেশি করে খান।
আব্রাহাম;; ওকে সো মিস বকবক কি খাবে বলো।
আইরাত;; ওও হ্যালো আমি বকবক না।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তা আমি জানি মিস বকবক। এবার বলো কি খাবে?
আইরাত;; আমমম… আইসক্রিম!

আব্রাহাম;; ওকে, চকোলেট ফ্লেভারের দুটো আইসক্রিম।
আব্রাহাম আরো এতো গুলো খাবারের আইটেম অর্ডার দিলো। দশ মিনিট পরই সেগুলো হাজির। আইরাত নিজের মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে। আর আব্রাহাম পিজ্জা খেতে বিজি। খেতে খেতে আব্রাহাম বলে ওঠে…৷
আব্রাহাম;; তাহলে এরপর আমরা কোথায় যাবো?
আইরাত;; কোথায় আর অফিস।
আব্রাহাম;; ন্যাহ
আইরাত;; তো?
আব্রাহাম;; দেখি কোথায় যাওয়া যায়।

খাওয়া দাওয়া শেষে আব্রাহাম আর আইরাত চলে আসে সেখান থেকে। এখন তারা গাড়িতে। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আব্রাহাম একটা খোলা মেলা জায়গাতে এসে পরে। আইরাত মাথা আশে পাশে ঘুড়িয়ে দেখে এটা একটা পার্কের মতো। অর্থাৎ এখানে বিভিন্ন ধরিনের রাইড যার্নি গুলো আছে৷ যেমন রোলার কোস্টার, দি কার্পেট কোস্টার, বাবল জাম্প আরো অনেক।
আইরাত;; এটা একটা পার্ক আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাতে কি?
আইরাত;; আপনি আমায় পার্কে নিয়ে এসেছেন। এখানে বাচ্চারা আসে।
আব্রাহাম;; কে বলেছে এই কথা। এখানে বড়ো ছোট সবাই আসে। আর ওয়েট বাচ্চা বললে তো তাই না এখানে এমন এমন সব রাইড আছে যাতে উঠলে বড়ো রাও ভয় পেয়ে যায়।

আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; আসো।
আইরাত;; কিন্তু এখানে আমরা কি করছি?
আব্রাহাম;; আরে মিস বকবক চলো তো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে সিড়ি বেয়ে ওপরের কোন তালা তে উঠে পরে৷ তবে আইরাত এটাই বুঝতে পারছে না যে আসলে যাচ্ছে টা কোথায়। এক সময় একটা ডেস্কের কাছে এসে পরে তারা। এসেই দেখে সেখানে কতো গুলো লোক আর দুই একজন মেয়ে আছে। আবার অনেকের বডিতে র‍্যাপ বা দড়ির মতো কিছু একটা দিয়ে বেধে দেওয়া।
আইরাত;; আমরা এখানে কি করছি?

আব্রাহাম কিছু না বলেই আইরাতকে আপাদমস্তক দেখতে শুরু করে। দেখে যে আইরাত প্যান্ট আর হাটুর ওপর অব্দি একটা জামা পরে আছে। আর পেটে বেল্ট লাগানো।
আব্রাহাম;; হুম একদম পারফেক্ট।
আইরাত;; আরে দাড়ান তো কিন্তু আমরা করতে কি যাচ্ছি?
আব্রাহাম;; বাঞ্জি জাম্পিং।
আইরাত;; হুয়াট?

আব্রাহাম;; ইয়াপ, এখানে তোমাকে আর আমাকে একটা বেল্টের সাথে বেধে দেওয়া হবে। মানে পায়ের দিক টায় আর কি। আর তারপর এই যে এই ওপর দেখছো না সেখান থেকে নিচে ফেলে দিবে। কিন্তু আমরা পরবো না ঝুলে থাকবো।
আইরাত;; ওও হ্যালো আমি বাঞ্জি জাম্পিং বুঝি ঠিকআছে। কিন্তু
আব্রাহাম;; You afraid from height, right!?
আইরাত;; অনেক বেশি। প্লিজ দেখুন আপনি তো সব জানেনই তাহলে তাও এমন কেন করছেন?
আব্রাহাম;; এভাবে ভয় পেলে হয় বলো। ভয় কে মন থেকে বের করতে শিখো।
আইরাত;; না না প্লিজ না আমি পারবো না। আম্মু গো না।

আব্রাহাম আইরাতের কোন কথা না শুনেই তাকে জোর করে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। আইরাত তো ভয়ের চোটে পুরো জমে গেছে। সে নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু আব্রাহাম তার কোন কথা না শুনে দাঁড়িয়ে আছে। একটা লোক গিয়ে আব্রাহাম আর আইরাতকে এক সাথে দাড়াতে বলে। আব্রাহাম আইরাতের হাতের ওপর দিয়েই তাকে হাগ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাত একবার নিচের দিকে তো আরেক বার আব্রাহামের দিকে কাদো কাদো ফেইস করে তাকাচ্ছে। সে শুধু একবার নিচের দিকে তাকিয়েছে ব্যাস আর তাকানোর সাহস নেই। নিচে তাকালেই মাথা ঘুড়ায়। যতদূর চোখ যায় এখানে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল।

আইরাত;; আ আ আচ্ছা এ এ এখানে ঠি ঠিক ক কতো টুকু উচ্চতা হহবে??
আব্রাহাম;; এই ধরো ২০-২৫ তালার সমান।
আইরাত;; হ্যাঁ কিইইইইইইইইইইইইইইই?
আব্রাহাম;; আস্তে, ঠিকই শুনেছো। আরে এটা তো তাও অনেক টাই কম।
আইরাত;; কম (ঢোক গিলে)
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমরা এবার নিচে পরে যাবো ওকে। সো আমাকে টাইটলি হাগ করো। প্লিজ চিল্লিয়ে মাথা খাবে না নয়তো আমি ছেড়ে দিবো তোমাকে। আর ভয় পেয় না।

আইরাত;; আম্মা গো, আমি পারবো না। আল্লাহ বাচাও। আব্রাহাম প্লিজ আপনি যান তবে আমাকে রেখে যান। প্লিজ। আমার আত্না কাপছে। আমি যদি মরি তাহলে আমি আপনাকে খুন করবো। প্লিজ না ?
আইরাত আস্তে আস্তে মাথা ঘুড়িয়ে একটু পেছনের দিকে তাকায় তাকিয়েই আবার আব্রাহামের জেকেট খামছে ধরে।
আব্রাহাম;; এইতো এবার হয়েছে, ঠিক এভাবেই কাছে থাকতে পারো না আমার।
আইরাত;; এই চুপ করেন আপনি।

আব্রাহাম;; জানপাখি আমার, এবার কিন্তু ওরা নিচে ফেলবে আমাদের৷ সো রেডি।
আইরাত;; না না আমি রেডি না আমি রেডি না গো ?
আব্রাহাম;; থ্রি টু ওয়ান,, এন্ড গো…
আইরাত;; আল্লাহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহ!!

আব্রাহাম আইরাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিলো। তখনই চোখের পলকে ধিরিম করে আব্রাহাম আর আইরাতকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। আর আইরাত নিজের মন-আত্না ছেড়ে দিয়ে দেয় এক গগন বিদারি চিৎকার। কিন্তু আব্রাহাম তো আব্রাহাম, ওর কিছুই হয় নি৷ উলটো সে হাসছে আইরাতের কান্ড দেখে। ওদের একদম নিচে পরে যেতে বেশি একটা সময় লাগে নি। এখন দুজনেই শূন্যের ওপর ভেসে চলেছে। আইরাত এমন ভাবে আব্রাহাম যে খামছে ধরেছে যেন একদম আব্রাহামের ভেতরে ঢুকে পরলো। বেচারি এখনো কাপছে ভয়ে। তারপর আস্তে আস্তে তাদের ওপরে তুলে আনা হলো।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৫

ওপরে গিয়ে ঠিক ভাবে দাড়াতেও পারছে না আইরাত। হাত পা খুব কাপছে। একটা মহিলা গিয়ে আইরাতের বডির র‍্যাপ গুলো খুলে দিতে যাবে কিন্তু আব্রাহাম হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। আইরাতকে খুব কষ্টে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দাড় করায়। তারপর সব বেল্ট গুলো খুলে দেয়। আব্রাহাম মুখ চেপে হাসছে। আর আইরাত রাগে লাল হয়ে আছে। আব্রাহাম যখন আইরাত কে সিড়ি দিয়ে নিচে নামাচ্ছিলো। তখন আইরাতের পা সিড়িতে রাখার সময়ও কাপছিলো। এতোই ভয় পেয়ে আছে ও। আব্রাহাম এর জন্য তাকে এক টানে কোলে তুলে নেয়। কোলে নিয়েই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে৷ তারপর আইরাত কে সোজা গাড়িতে এনে বসিয়ে দেয়। আইরাতের দিকে ঝুকে আব্রাহাম বলে…

আব্রাহাম;; তো কেমন লাগলো ?
আইরাত;; খুব বেশি ভয়ানক। (বুকে হাত রেখে)
আব্রাহাম হেসে দেয়। আর আইরাত এক শ্বাসে পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে খেয়ে ফেলে। আইরাতকে তারপর বাসায় নামিয়ে দিয়ে আব্রাহাম তার বাসায় চলে যায়। বিকেলের দিকে অয়ন আসে আব্রাহামের কাছে। আর তার কিছুক্ষন পর রায়হান ও। রায়হান যে আব্রাহামের বাড়িতে আসবে তা আব্রাহাম ভাবেই নি। আব্রাহাম তার রুমে ছিলো তার সাথে অয়নও। কিন্তু রায়হান হল রুমে এসেই নিজের আজাইরা কান্ড শুরু করে দেয়।

রায়হান;; দাদি, দাদি। ও দাদি কোথায় তুমি। সারা জীবি
ন তো এই আব্রাহাম কেই দেখে গেলে। এখনে যে তোমার এই নাতিন টাও আছে তার প্রতি কোন খেয়ালই নেই তোমার। আব্রাহাম কে পেয়ে সব ভূলে গেলে। দাদিইইইই

রায়হানের এমন গলা পেয়ে ইলা দ্রুত হলররুমে আসে৷ এসেই দেখে রায়হান। যতোই হোক রায়হানও তার নাতিন লাগে। ইলা রায়হানের দিকে এগিয়ে গেলে রায়হান ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। তবে ইলা এই ভেবে ভয় পাচ্ছে যে এখন আব্রাহাম যদি রায়হান কে এখানে দেখে ফেলে তাহলে পুরা কিয়ামত বাধিয়ে দিবে সে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৭