নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩১+৩২+৩৩

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩১+৩২+৩৩
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আব্রাহাম যে আইরাত কে কেনো ডেকেছে তা আইরাত নিজেও জানে না। এখন শুধু সে দিয়া কে নিয়ে রিকশা করে যাচ্ছে।
দিয়া;; আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আইরাত;; ক্যাফেতে।
দিয়া;; কেন?
আইরাত;; আব্রাহাম যেতে বলেছে।
দিয়া;; কেন?
আইরাত;; আমিও জানি না।
দিয়া;; কেন?
আইরাত;; এই কেনোর বাচ্চা চুপ থাক নইলে রিকশা থেকে ধাক্কা মাইরা ফালাই দিমু কইলাম।
দিয়া;; ?

একটা সময় দিয়া আর আইরাত ক্যাফের সামনে এসে পরলো। রিকশা থেকে নেমেই আইরাত দেখে ক্যাফে থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আব্রাহাম ফোনে কথা বলছে। আইরাত দিয়া কে ভেতরে যেতে বলে আইরাত নিজেই আব্রাহামের কাছে চলে যায়। আইরাত আব্রাহামের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভেবেছিলো আব্রাহাম কে ভুউউউউ করে চমকে দিবে। আইরাত যেই না ভুউউ করতে যাবে তখনই সাথে সাথেই আব্রাহাম তার বাম হাত দিয়ে আইরাতের কোমরে ধরে দেয় এক টান। আইরাত সোজা আব্রাহামের বুকে এসে পরে। আব্রাহাম তার কানে এক হাত দিয়ে ফোন ধরেই এক ভ্রু উঁচু করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত যেন বোকা বনে গেলো। তার ভাবনা-চিন্তা তে এক বালতি পানি ফেলে দিয়েছে আব্রাহাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম;; কি জানেমান!! কি ভেবেছো চমকে দিবে। ন্যাহ, তুমি যখন দিয়া কে নিয়ে রিকশা থেকে নামছিলে তখনই আমি তোমাকে দেখেছি।
আইরাত;; এইটা কোন কথা।
আব্রাহাম আইরাতের কোমড় টেনে ধরে তার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; অতি চালাকের গলায় দরি বেবিগার্ল।
আইরাত;; হয়েছে ছাড়ুন।

আর ওদিকে দিয়া ক্যাফের ভেতরে গিয়ে একটা টেবিলে বসে। ক্যাফেতে তেমন কোন মানুষজন নেই। নিরিবিলি বলা যায়। আর দিয়া যেই টেবিল টাতে বসেছে সেটা মোটামুটি বড়ো সড়ো একটা টেবিল। দিয়া টেবিলে বসে বসে ফোন ঘাটছিলো তখনই একজন লম্বাচওড়া ছেলে দিয়ার সামনে দাঁড়ায়। দিয়া মাথা তুলে সামনে তাকায়। ছেলে টা আর কেউ না অয়ন। দিয়া তার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে ছিলো। অয়ন নিজের চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে দিয়ার দিকে তাকায়।
দিয়া;; কিছু বলবেন কি?

অয়ন;; জ্বি, এটা আমাদের বুক করা টেবিল। সো বাইরের কেউ এলাও না। আপনি উঠুন।
দিয়া;; প্রথমত এটা একটা পাবলিক ক্যাফে, কোন ফাইভ স্টার হোটেল না যে বুক করবেন আপনি। আর এখানে এমন শত শত টেবিল আছে অন্য জায়গায় গিয়ে বসুন।
অয়ন;; ওও হ্যালো এটা আমাদের টেবিল। আমরা অন্য কোথায় গিয়ে কেন বসবো। আপনি উঠুন।
দিয়া;; ওও তাই না আপনাদের টেবিল। তা কোথাও কি আপনার নাম লেখা আছে নাকি?
অয়ন;; বাংলা কথা বুঝেন না আপনি, আপনাকে এখান থেকে উঠতে বলেছি।

দিয়া;; উঠবো না।
অয়ন;; এইই দেখুন ভালোই ভালোই বলছি উঠে পরুন। নয়তো…..
দিয়া;; কি কি নয়তো কি হ্যাঁ নয়তো কি?
অয়ন;; ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
দিয়ার বেশ রাগ উঠে গেলো। সে এক ঝটজায় উঠে দাঁড়িয়ে পরে।
দিয়া;; এইই উঠমু না আমি যা কি করবি কর।
অয়ন;; এই আপনি তো আচ্ছা ফাউল। তুই-তুকারি তে নেমে এসেছেন।
দিয়া;; মারামারি তেও নেমে আসতে পারি দেখবি, আর ফাউল হবো তোর বউ।
অয়ন;; বিয়েই করি নি আমি।

দিয়া;; এহহহহহ এই বান্দর মূখো কে কোন মেয়ে বিয়ে করবে?
অয়ন;; হ্যাঁ আর নিজে তো ক্যাটরিনা কাইফ তাই না।
দিয়া;; না না ওকে আমার ভালো লাগে না। জেকলিইন কে ভালো লাগে।
অয়ন;; আপনি সরেন এখান থেকে।

দিয়া;; এই মিয়া কথা কানে যায় না আমি যাবো না যাবো না যাবো না এখান থেকে। কি করবেন করেন যান।
অয়নেরও তো রাগ কম না। সে টেবিলের ওপর পানি ফেলে দিলো। দিয়ার মুখ হা হয়ে গেলো। অয়ন যে এমন কিছু করবে সে ভাবে নি। দিয়া আর অয়নের মাঝে আবার লেগে যায় কুকুর-বিড়ালে যুদ্ধ। এক্কেবারে যা ইচ্ছে তাই একটা অবস্থা। ক্যাফেতে যারা যারা বসে ছিলো তারা মনে হয় বিনে পয়সায় ফ্রিতে মুভি দেখছে। ঝগড়া খুব বাজে ভাবে লেগে গেছে। এখন শুধু চুল টানাটানির অপেক্ষা ?। এরই মধ্যেই আইরাত আর আব্রাহাম ক্যাফের ভেতরে আসে।

ভেতরে এসেই আইরাতের মুখ যেন হা হয়ে গেলো। আর আব্রাহামের মাথার ওপর দিয়ে সব যাচ্ছে। আব্রাহাম শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সামনে যুদ্ধ লেগেই আছে। আইরাত অবাক হয়ে কপাল কুচকে আছে। আইরাত দ্রুত আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম কি আর ঝগড়া থামাবে সে উলটো মুখে হাত দিয়ে হাসছে। আইরাত তা দেখে নিজেই রেগে গেলো।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি কিছু বলছেন না ওদের। এভাবে ঝগড়া করছে কেন? একটু আগেই না দিয়া ক্যাফেতে আসলো এসেই ঝগড়া।
আব্রাহাম;; ??
আইরাত;; হাসা বন্ধ করুন আর ওদের থামান।
আব্রাহাম;; আরে দারুন লাগছে ঝগড়া দেখতে। চুপচাপ দেখো তো।
আইরাত;; আপনি কি হ্যাঁ?
আব্রাহাম;; তোমার জামাই।
আইরাত;; ধুর ছাই।

অবস্থা বেগতিক। অয়ন টেবিলের ওপর পানি ফেলে দিয়েছে। আর দিয়ার সাথে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া চালিয়েই যাচ্ছে৷ দিয়াও কম না। হঠাৎ একটা ওয়েটার দিয়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। ওয়েটারের হাতে ট্রে ছিলো আর তাতে কোল্ড কফি। দিয়ার অয়নের ওপর এত্তো রাগ উঠেছে যে সে আর না পেরে ওয়েটার কে থামিয়ে তার হাতে থাকা ট্রে থেকে এক বড়ো কফির মগ নিয়ে সোজা অয়নের মাথার ওপর ঢেলে দেয়। পরিস্থিতি এবার পুরোই খারাপ। অয়নের চুল মুখ সব একদম কফি কফি হয়ে গেছে। মাথার ওপর দিয়ে কফি চুইয়ে চুইয়ে পরছে। দিয়া অয়নের এমন অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দেয়। আর অয়ন তো রাগে কাপছে।

আইরাত;; হায়রে দিয়ার বাচ্চা এইটা কি করলি ?!
আব্রাহাম;; ওহহ শিট!
অয়ন দিয়ার দিকে তেড়ে যেতে ধরবে তখনই আইরাত আর আব্রাহাম দৌড়ে ওদের কাছে চলে যায়। আইরাত দিয়াকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে টানছে আর থামতে বলছে। আব্রাহাম অয়ন কে আটকাচ্ছে। কিন্তু কেউ থামার নাম নেই। এভাবে আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম চিল্লিয়ে ওঠে…
আব্রাহাম;; গাইস, প্লিজ স্টোপ। স্টোপ ইট ইয়ার (চিল্লিয়ে)
রাতের আধারে নীরবতায় ঝিঝি পোকা যেমন ডাকে, একদম চুপচাপ। এখন অবস্থা টাও সেইম। আব্রাহামের ধমকে সব একদম চুপ মেরে গেছে।

আব্রাহাম;; ছোট বাচ্চা তোরা। এভাবে ঝগড়া কেন করছিস? আরে বাবা টেবিলের কি অভাব পরেছে। এভাবে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করার কোন মানে হয়। আর অয়ন তুই কি হয়েছে কি? অন্য টেবিলে গিয়ে বসলে কি হতো। আর দিয়া…… কি আর বলি তোমাকে। আইরাতেরই তো বেস্টি লাগো।
আইরাত;; এই আপনি কি ইন্ডিরেক্টলি আমাকে ঝগড়াটে বলছেন?
আব্রাহাম;; এইযে চোরের মনে মনেই জানা আছে।
আইরাত;; কিহহহ?
আব্রাহাম;; আরে ঝগড়া থামাতে এসেছি করতে নয়। অয়ন তোকে বলেছিলাম না দিয়ার কথা এই দিয়া।

অয়ন;; কি এই…!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; অয়ন ভাইয়া আপনি প্লিজ ফ্রেশ হয়ে আসুন।
অয়ন দিয়ার দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে আসে পরে। আব্রাহাম আইরাত আর দিয়া অন্য টেবিলে গিয়ে বসে। আর আইরাত আচ্ছা মতো দিয়া কে বকে দেয়। দিয়াও বুঝতে পারে নি যে অয়ন আব্রাহামের ফ্রেন্ড লাগে তাও একদম জানে জিগার। প্রায় বিশ মিনিট পর অয়ন ফ্রেশ হয়ে আসে। একদিকে দিয়া আর আইরাত বসেছে আরেক দিকে আব্রাহাম আর অয়ন।

আইরাত;; এবার বলুন আপনি কি জন্য ডেকেছেন?
আব্রাহাম;; কেন ডেকেছি তা একটু পরেই এসে পরবে।
আইরাত;; মানে?
তখনই ক্যাফের ভেতরে আরুশি আর রহিত আসে। দিয়া তো আরুশি কে দেখেই এক লাফ দিয়ে ওঠে। আরুশি দিয়ার যে খালাতো বোন লাগে। আর আইরাতও বেশ অবাক। দিয়া আরুশি কে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। প্রায় কেদেই দিয়েছে। ওইযে বিয়ের দিন গুম হয়েছিলো তারপর আজকে দেখছে আরুশি কে। আরুশিও এসে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। টেবিলের এক পাশে আরুশি-আইরাত-দিয়া বসে আছে। আর রহিত আব্রাহাম অয়ন এক পাশে।

আইরাত;; আচ্ছা তো এই ছিলো প্ল্যান আপনার তাই না?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; তো! আরুশি বেবি পালিয়ে বিয়ে করেছো কেমন লাগলো?
আরুশি;; অল ক্রেডিট গোস টু আব্রাহাম ভাই।
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ নাটের গুরু তো সেই ই।
আব্রাহাম;; থ্যাংক্স ফর দি কমপ্লিমেন্ট গার্লস।
দিয়া;; হিহিহিহিহিহি।
রহিত;; আরে আর বলিস না ভাই শশুড় হলো কশাই। পরে কিন্তু ঠিকই মেনে নিয়েছে অযথা ন্যাকামো সব। আমার তো মন চায়…..

রহিত এগুলো বলছিলো কিন্তু তখন আব্রাহাম থামিয়ে দেয় তাকে ইশারা করে। রহিত কে আরুশির দিকে তাকাতে বলে। রহিত তাকিয়ে দেখে আরুশি রাগে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিজের বাবার এতো সুনাম তার কেমন যেন হজম হলো না। সবাই গল্প করছে। আব্রাহাম বলে ওঠে…৷
আব্রাহাম;; আসলে আরুশি বোনু অনেক থ্যাংকস তোমায়।
আরুশি;; কেন ভাইয়া?
আব্রাহাম;; তোমাকে তুলে আনতে গিয়েই অয়ন আর কৌশল আইরাত কে তুলে এনেছিলো। আমার ভালোই হয়েছে।
আইরাত;; হ্যাঁ আর আমার জীবন যায় যায় অবস্থা।
সবাই হেসে ওঠে৷

আব্রাহাম;; আচ্ছা এবার বলো সবাই কে কি খাবে?
রহিত;; বারগার।
আরুশি;; আইসক্রিম।
আইরাত;; আমিও আইসক্রিম আর ক্যাপাচিনো।
দিয়া;; আমি পিজ্জা।
আব্রাহাম;; অয়ন তুই কি খাবি? কফি?!

আব্রাহাম নিজেই বলে নিজেই আহাম্মক সেজে গেলো যে আসলে সে ঠিক কি বললো এই মাত্র। অয়ন অসহায় মুখ নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকালো। কেননা দিয়া অয়নের মাথায় কফি ঢেলে দিয়েছে আর আব্রাহাম কিনা এখন তাকে আবার কফি খাওয়ার জন্য অফার করছে। দিয়া আর আইরাত হেসে দেয়।
আব্রাহাম;; না না থাক কফি খেতে হবে না। তুই আর আমি কোল্ড ড্রিংকস খাই চল।
অয়ন;; হ্যাঁ তাই অর্ডার কর।

অবশেষে সব খাবার হাজির হলো। অনেক আড্ডা দিলো সবাই। অনেক মজা লেগেছে। সারা বিকেল থেকে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে সবাই চলে আসে। আরুশি আর রহিত চলে গিয়েছে এক সাথে। অয়নও চলে গেছে। আব্রাহাম তার গাড়িতে করে দিয়া আর আইরাতকে নিয়ে এসে পরে। দিয়াকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে এসে পরে। এখন আইরাত আর আব্রাহাম এক সাথে গাড়িতে। দেখতে দেখতে আইরাতের বাসাও এসে গেলো৷ আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়। তার গালের সাথে নিজের গাল গুলো লাগিয়ে নেয়। আর তখন আইরাত সাথে সাথে তার গাল সরিয়ে ফেলে।

আইরাত;; ধুরু আপনার এই চাপদাড়ি গুলো আমার গালে লাগে।
আব্রাহাম হেসে দেয়। তারপর ইচ্ছে করেই আইরাতের গালের সাথে নিজের গাল ঘষা দেয়।
আব্রাহাম;; আমার এই চাপদাড়ি গুলোর ওপর মেয়েরা মরে আর তুমি এমন করো।
আইরাত;; অন্য মেয়েরা হয়তো মরে কিন্তু আমি মরি না ওকে।
আব্রাহাম;; হুম হুম।
আইরাত;; এখানে কি করেন বাড়ি যান।
আব্রাহাম;; যেতে তো ইচ্ছে করছে না।

আইরাত;; ঘোড়ার ডিম বাড়ি যান। আর হ্যাঁ অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা ইভিনিং গিফট করার জন্য।
আব্রাহাম;; মোস্ট ওয়েলকাম বেবিগার্ল।
আব্রাহাম আইরাতকে বিদায় জানিয়ে এসে পরে। আইরাতও তার বাড়ির ভেতরে চলে যায়। আজ রাতে তার চাচা চাচির এসে পরার কথা। আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে এসে পরলেই বাইকে করে একজন আইরাতের বাড়ির সামনে আসে। মাথায় হেলমেট পড়া। তার তীব্র চোখ গুলো আইরাতের দিকে তাকায়। চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে গেছে যেন খুব রেগে আছে। আইরাত বাড়ির ভেতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়

। আর তখন সেই বাইকে থাকা লোকটিও সেখান থেকে কেটে পরে।
আইরাতের চাচা-চাচি বাড়ি এসে পরেছেন। তবে আইরাতের চাচি কিছুটা মনমরা, হয়তো তার মা অসুস্থ তার জন্যই। আর কিছুটা রাগ করেও আছে আইরাতের ওপর। ওইতো ওই অন্তুর জন্যই। কলি ঠিক বুঝতে পেরেছে যে তারা এমনি এমনি না বলে দেয় নি। আইরাতের ওপর সেইদিন তার সকাল থেকেই সন্দেহ ছিলো। এই মেয়ে নিশ্চিত উল্টা-পাল্টা কিছু করেছে যার ফলে এমন হয়েছে।

সকাল বেলা হাতে একগাদা ফাইল নিয়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দ্রুত নিচে নামছিলো আইরাত। তখনই তার চাচির কড়া ডাকে থেমে পরে।
কলি;; আইরাত দাড়া…।
আইরাত;; হ্যাঁ বলো।
কলি;; অন্তুর বাবা ফোন করেছিলো। ওরা না বলে দিয়েছে কেন বল তো?
আইরাত;; ওহহ ওই চাইন্দা বেডা।
আইরাত সাথে সাথে দাত দিয়ে জিভ কাটে।
আইরাত;; আব..মানে অন্তুর বাবা!
কলি;; হ্যাঁ।

আইরাত;; আমি কি করে জানবো যে কেন না করেছে। হয়তো আমার মধ্যে কোন কমতি ছিলো তাই।
কলি;; তেমন তো আমি তোর মাঝে কিছু দেখি না। এই সত্যি করে বল তো তুই কিছু করেছিস কি ??
আইরাত;; আরে নাহহহহহহ! কি যে বলো না আমি কেন কি করতে যাবো। আমি কিছু কি করতে পারি বলো! শুনো এতো মাথা ঘামানো বন্ধ করো বুঝলে। আর কাউকে কারো পছন্দ না ই হতে পারে এতে এতো প্যারা নেওয়ার কি আছে। আমি গেলাম থাকো তুমি।
কলি কে আর কিছু বলার সুযোগ টুকু না দিয়েই আইরাত জলদি করে বের হয়ে এসে পরে। আরেকটু সেখানে থাকলে তার চাচি তার মাথা-কাল্লা সব ভেজে খেয়ে ফেলবে।

অন্যদিকে আজ সকাল থেকেই আব্রাহামের মাথা প্রচুর গরম। ইন ফ্যাক্ট কাল রাত থেকেই। রাগ সামলাতে পারে না আব্রাহাম। খুব রাগ লাগছে। এখন সে অফিসেই। তার সাথে অয়ন আর রাশেদও দাঁড়িয়ে আছে। পুরো কেবিনে কাচের ছোট-বড়ো সব টুকরো কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রাগ গুলো এদের ওপরই ঝাড়া হয়েছে।
আব্রাহাম;; লাইক সিরিয়াসলি!! গতকাল যে কটা গাড়ি USA এর জন্য গিয়েছে সেগুলোতে ড্রাগস ছিলো?
রাশেদ;; স্যার সেখানের স্টাফ রা তো তাই বলছিলো।

আব্রাহাম;; এখন সেগুলো কোথায়?
রাশেদ;; স্যার সেগুলো USA-এর যে পুলিশ অফিসার রা ছিলো তাদের আন্ডারে৷
অয়ন;; হ্যাঁ আর ওরা জানে যে এগুলো তুই করবি না।
আব্রাহাম;; আরে ভাই মাফিয়া রা যতোই ভালো হোক না কেন মানুষ তাদের ভালো চোখে কখনোই দেখে না আর দেখবেও না কথা টা মাথায় রাখিস। ওরা আমার এমন কেউ লাগে না যে আমার ওপর তাদের এত্তো বিশ্বাস-ভরসা থাকবে। যাই হোক আমার আমাকে নিয়ে কোন চিন্তাই নেই কারণ কেউ মার একটা চুল অব্দি পাকা করতে পারবে না। প্রশ্ন হচ্ছে এটা যে ড্রাগস গুলো এলো কি করে?!

অয়ন;; এই যে গাড়ির পেপাস গুলো এগুলো চেক করতে পারিস।
আব্রাহাম পেপাস গুলো নিয়ে নেয়। সেগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে। কিন্তু সেখানে কোন কিছুই পাওয়া যায় নি।
রাশেদ;; স্যার আমার মনে হয় না যে যেখান থেকে গাড়ি গুলো কেনা হয়েছে সেখানের কেউ এমন করবে। কারণ অবশ্যই সবার কাছে সবার জীবন অনেক প্রিয়।
আব্রাহাম;; ন্যাহ, সেখান থেকে কেউ কিছু করবেও না। চান্স নেই। ভেতরের কেউই করেছে সবকিছু।
অয়ন;; কি বলিস?!

আব্রাহাম;; অয়ন একটা প্রবাদবাক্য আছে ” ঘরের মুরগি ডাল বরাবর”” অর্থাৎ আমি এখানে এদের যতোই বেশি সেলারি দিয়ে কাজ করাই না কেন এদের কাছে তা কমই হবে। আমি যতোই টাকা দেই না কেন মানে আমি মুরগি দিলেও তাদের কাছে তা ডালই লাগবে। এর জন্য তাদের আরো টাকা দরকার তাই এগুলো ইলিগ্যাল কাজ করে বসে। আর জানিস তো ক্ষতি সবসময় আমাদের আশে পাশের মানুষ রাই করে বেশি দূরে যেতে হয় না।
রাশেদ;; তাহলে স্যার এখন?

আব্রাহাম;; গাড়ি গুলো গত কয়েকদিন যাবৎ কে দেখা শোনা করেছে, কে গাড়ির নেইম প্লেট গুলো ঠিই ঠাক করেছে, গাড়ি গুলো বাইরে কে চালান করেছে সব ডিটেইলস চাই আমার। মনে রেখো ৬ টা গাড়ি আর সবগুলোতেই ড্রাগস এটা কিন্তু কম বড়ো কথা না।
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
রাশেদ আর অয়ন কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। আব্রাহামের মাথা পুরো হ্যাং মেরে আছে। সে গিয়ে কাচের দেওয়ালে এক হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার কিছুক্ষন পর আব্রাহাম খেয়াল করলো একটা মাঝবয়েসী লোক অফিসের ভেতরে ঢুকলো। আব্রাহাম একে ভালো করে চিনে না৷ কেমন যেন খটকা লাগলো তার কাছে। তখনই বাইরে কেবিনে নক…

রাশেদ;; স্যার আসবো?
আব্রাহাম;; কাম ইন।
রাশেদ;; স্যার এই দেখুন এখানে প্রত্যেক টা গাড়ির রেট বেশি নেওয়া হয়েছে। (হাতে কতো গুলো ফাইল এনে)
আব্রাহাম;; হুয়াট ডু ইউ মিন?
রাশেদ;; মানে প্রতিটি গাড়ির দাম তার আসল দামের থেকে সাত লাক্ষ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ নেওয়া তো হবেই গাড়িতে ড্রাগস যে ছিলো।
রাশেদ আব্রাহামের সাথে কথা বলছিলো তখনই আব্রাহাম খেয়াল করে যে সেই অচেনা লোকটি ৪ নাম্বার কেবিনের দিকে গেলো।

রাশেদ;; তাহলে স্যার…
আব্রাহাম;; লিসেন টু মি,, তুমি এখন বাইরে যাও আর অয়ন কে আমার কেবিনে পাঠাও। আর হ্যাঁ খেয়াল রাখবে এই ড্রাগসের ব্যাপার টা যেন কোন ভাবেই লিগ না হয় ওকে?
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
আব্রাহাম;; আর এই ৪ নাম্বার কেবিনে কে থাকে?
রাশেদ;; স্যার জাফর নামে একজন এমপ্লয়ি থাকে। জাফর আহমেদ। ওহহ হ্যাঁ আইরাত ম্যামের সাথে টুকটাক কাজ করে মানে এই ধরুন ফাইল দেখা বা হিসাব-নিকাশ করা এইতো।

আব্রাহাম;; হুমম বুঝলাম।
রাশেদ সেখান থেকে চলে যার তার কিছুক্ষন পর অয়ন আসে।
অয়ন;; কিরে ডেকেছিস?
আব্রাহাম;; শোন তোর তো আজ কোন কাজ নেই তাই না তাহলে আজ আমার অফিসেই থেকে যা।
অয়ন;; কিন্তু আমার খিদে পেয়েছে তো।
আব্রাহাম;; খালাআম্মা তোকে কি খেয়ে পেটে রেখেছিলো রে। শালা পেটুক। আসলে তোর জন্য কাল দিয়াই ঠিক ছিলো একদম পারফেক্ট।

অয়ন;; এই ওই বজ্জাত মেয়ের নাম নিবি না একদম।
আব্রাহাম;; শোন আমি কেবিনের বাইরে যাচ্ছি কিন্তু তুই এখানে থাক বুঝেছিস। মানে সবাই যাতে ভাবে যে আমি এখানেই আছি ওকে।
অয়ন;; তার মানে আমি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী পার্ট ২ ??।
আব্রাহাম;; কিছুক্ষনের জন্য তাই ধরে নে।
অয়ন;; কিন্তু তুই যাচ্ছিস কোথায়?
আব্রাহাম;; ধরে নে কাহিনির মূল সূত্র খুঁজে পেয়েছি।

এই বলেই আব্রাহাম বের হয়ে পরে। সোজা চার নাম্বার কেবিনের ভেতরে চলে যায়। গিয়েই দেখে জাফর বসে আছে চেয়ারে। জাফর দেখে আব্রাহাম কে। কিন্তু চেয়ার থেকে উঠে দাড়াচ্ছে না। আব্রাহাম কিছুটা অবাকই হয়। মানে অফিসের বস কে দেখে সে দাড়াচ্ছে না। আব্রাহাম ভারি ভারি কিছু কদম ফেলে জাফরের দিকে এগিয়ে যায়। এবার আব্রাহাম ভালো ভাবে খেয়াল করে যে জাফর আসলে ড্রাগ নিয়েছে৷ আর ফলে যে তার হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি টুকু নেই তার মাঝে। তার সামনে কে আছে কে নেই তার খেয়াল নেই। কেমন এক মাতলামো মাতলামো ভাব, চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে। চোখের পলক গুলো আধো আধো করে ফেলছে৷

আব্রাহামের কাছে এখন যেন সব পানির মতো পরিষ্কার। তাকে আর কিছু বলতেও হলো না কারণ প্রমাণ তার নিজের চোখের সামনে। গাড়িতে ড্রাগস গুলো কে ভরেছে বা কে চালান করেছে তা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো। এখন প্রশ্ন একটাই যে যাই কিছু করেছে তা এই জাফর একাই করেছে নাকি আরো অন্য কারো হাত আছে এর পেছনে?। আব্রাহাম টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।

ট্রবিলের ওপর এক গ্লাস পানি ছিলো তা নিয়ে আব্রাহাম সোজা জাফরের মুখের ওপর মেরে দেয়। জাফর কিছুটা ধরফরিয়ে ওঠে৷ চোখ গুলো খুব শক্ত ভাবে পিটপিট করছে। হাত দিয়ে মুখ টা কোন রকমে মুছে সামনে তাকায়। এখনো ঠিক ভাবে দেখতে পারছে না সে,, সব কেমন ঘোলাঘোলা দেখাচ্ছে। তবে যতটুকু অবয়ব দেখতে পেরেছে তাতে এটা সে বুঝে গেছে যে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি আব্রাহাম। জাফর ঢুলু ঢুলু পায়ে উঠে দাঁড়ায়।

জাফর;; আব্রাহাম স স স্যার আ আপনি!?
আব্রাহামের রাগ এবার সপ্তম আকাশে। সে জাফরের শার্টের কলার খামছে ধরে নিজের সামনে নিয়ে আসে। রাগে হাত-পা সব শক্ত হয়ে এসেছে আব্রাহামের। দাত গুলো কটমট করছে।

ওদিকে এই তীব্র গরমের মাঝে এত্তো ঝুট-ঝামেলা পেরিয়ে অফিসে এসেছে আইরাত। এসেই হাপাচ্ছে। পিয়ন কে বলে একদম ঠান্ডা একটা কোকাকোলা আনতে বলে। তখনই রোদেলা আসে…
রোদেলা;; কি এই অবস্থা কেন?
আইরাত;; রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো। তার ওপর গরমে আমি আলু সিদ্ধ রে ভাই।
রোদেলা;; হুম হুম দেখা যাচ্ছে। নাকের ডগায় ঘাম জমেছে তার মানে জামাই অনেক আদর করবে।
আইরাত;; ধুত্তুরি এগুলা হুদ্দাই কথা। তুমি বিশ্বাস করো?!

রোদেলা;; আরে না মজা করলাম।
তখনই আইরাতের কোকাকোলা এলো।
আইরাত;; এই খাবা?
রোদেলা;; না খাও।
আইরাত;; হুমম আমি যাই স্যারের কেবিনে।
রোদেলা;; আচ্ছা।
আইরাত;; ওহহ দাড়াও দাড়াও।
রোদেলা;; হ্যাঁ
আইরাত;; ওই যে ওই কোথায়?
রোদেলা;; কে ??
আইরাত;; আরে ব্যাটার নাম টা কি যেন। মির মির হ্যাঁ মিরজাফর।
রোদেলা;; জাফর ?

আইরাত;; আরে নাম খেয়াল থাকে না তাই মিরজাফর বলি এতে মনে থাকে৷
রোদেলা;; হ্যাঁ বুঝলাম এখন কি হয়েছে?
আইরাত;; আরে উনার কাছ থেকে ফাইল নেবার আছে আমার। ফাইল গুলো দিয়েছিলাম উনাকে চেক করবার জন্য৷ আজ নেওয়ার কথা। তাই নিতে হবে।
রোদেলা;; হ্যাঁ কেবিনেই আছে একটু আগেই দেখেছি কেবিনে যেতে।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা তাহলে আমি আগে উনার কাছ থেকে ফাইল গুলো আনি।
রোদেলা;; আচ্ছা।

আইরাত জাফরের কেবিনের দিকে যেতে ধরলো। গিয়েই দেখে কেবিনের দরজা খোলা। তৎক্ষনাৎ ভেতর থেকে ভাংচুরের শব্দ আসে। যেই না আইরাত ভেতরে পা রাখতে যাবে তখনই একটা রক্তমাখা কাচের টুকরো তার পায়ের সামনে আসে। এটা দেখেই তো আইরাত বেশ ভরকে যায়। সে একদম ভেতরে চলে যায় আর যেতেই যা দেখে তাতে আইরাতের হাত গুলো আপনা আপনিই তার মুখে চলে যায়।

আব্রাহাম এক হাতে জাফরের শার্টের কলার খামছে ধরে আছে আরেক হাতে রয়েছে কাচের একটা টুকরো। সেটা দিয়েই আব্রাহাম জাফরের মুখ বরাবর দেয় একটা আচড় কেটে। তাতে গালের মাংস সম্পূর্ণ কেটে অর্ধের কাচের সাথে এসে পরে আর অর্ধেক মুখের পাশেই ঝুলে থাকে। গলগল করে রক্ত ঝড়ছে। আব্রাহাম হাতে থাকা কাচটা ঢিল মারে, তারপর তার জেকেটের ভেতর থেকে একটা পকেট নাইফ বের করে। কোন কথা না বলেই আব্রাহাম সেই পকেট নাইফ টা দিয়ে সোজা জাফরের গলার শ্বাসনালি বরাবর এক ঘা বসিয়ে দেয়।

রক্তে জাফরের শার্ট ভিজে গেছে। মূহুর্তেই ফ্লোরে পরে গেলো জাফর। গলা কাটা মুরগির মতো কেমন ছটফট করছে। এতোক্ষণে গিয়ে আব্রাহামের রাগ যেন কিছুটা কমেছে। হাত থেকে নাইফ টা জাফরের পাশেই ফেলেই দেয়। আইরাত এগুলো দেখে ভয়ে দুই কদম পেছনে সরে যায়। নিজের পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ কানে আসতেই আব্রাহাম ঘুড়ে তাকায়। দেখে আইরাত মুখে হাত দিয়ে চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। তখন জাফরের কেবিনে রাশেদ সহ আর ৩-৪ জন গার্ড প্রবেশ করে। তারা এসে তাদের কাজে লেগে পরে বলতে হয় না।

কারণ আব্রাহামের সম্পর্কে তাদের ধারণা আছে। রাশেদ আর গার্ড গুলো তাদের কাজ করতে থাকলে আব্রাহাম দ্রুত পা ফেলে আইরাতের হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যেতে থাকে। যেখানে আব্রাহাম হাটছে সেখানে আইরাতকে কিছুটা দৌড়িয়ে যেতে হচ্ছে। অয়ন নিজের ফোন ঘাটছিলো আব্রাহামের কেবিনে বসে বসে৷ আব্রাহামের এভাবে ঠাস করে কেবিনে ঢোকাতে অয়ন সামনে তাকায়। সিচুয়েশন বুঝতে পেরে অয়ন কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আইরাতের এখন ভয়ে অন্তর-আত্না সব কাপাকাপি করছে।

রাগে আব্রাহামের হাতের রগ গুলো কেমন ভেসে উঠেছে। আর যে শক্ত ভাবে আইরাতের হাত ধরে রেখেছে তাতে হাত আলগা হয়ে খুলে যাবার উপক্রম। আব্রাহাম একটা চেয়ার এনে পা দিয়ে লাথি দিয়ে সামনে রাখে তারপর আইরাতের হাত ধরে টেনে ধপ করে তাতে বসিয়ে দেয়। আইরাত মাথা একদম নিচু করে বসে আছে। আব্রাহামও তার সামনে একটা চেয়ারে বসে। এক হাত হাটুতে রেখে আরেক হাত কপালে ঠেকিয়ে রেখে দিয়েছে। কেউ কিছু বলছে না সব চুপ। এই চুপ থাকার মাঝেই হঠাৎ আব্রাহাম ধমকের সুরে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার হ্যাঁ?
আইরাত চমকে ওঠে৷
আব্রাহাম;; না বলো আমাকে প্রব্লেম কি তোমার?
আইরাত;;
আব্রাহাম;; যেখানে নয় সেখানে এসে পরো। আমি, না মানে আমি যখনই এগুলো করি তখনই কি তোমার আসতে হয়। এরপরে আসতে পারো না!
আইরাত;;
আব্রাহাম;; আর জাফরের কেবিনে কি করো তুমি? তোমাকে না বলছি সবার আগে আমার কেবিনে যাবা। ওই হারামির কেবিনে কি?

আইরাত;; কিছু ফা ফা ফাইল ছ ছিলো।
আব্রাহাম;; অন্য স্টাফ কে বলে তা আনা যেতো না। সবটা সময়, সবটা সময় যখনই আমি এমন কোন কাজ করবো গিয়ে দেখবো সেখানেই তুমি হাজির।
এবার আইরাতের রাগ হতে থাকে।
আইরাত;; তাহলে আমাকে বলে দিন যে কখন কখন আপনি এইসব খুন-খারাবি করবেন। তাহলে তখন আমি আপনার কেন আপনার এই অফিসের ধারে কাছেও থাকবো না। এতে আপনারও সুবিধে আর আমারও।
আব্রাহাম;; ফাজলামি করো!?

আইরাত;; আমার এতো শখ নেই। আব্রাহাম আপনি কবে নরমাল হবেন বলুন তো।
আব্রাহাম;; Hay, what do you mean by that am i abnormal ??!
আইরাত;; না তা বলি নি আমি। যে এত্তো বেশি মাস্টারমাইন্ড সে এবনরমাল কীভাবে হয়!!
আব্রাহাম;; জাফর কে যে মারলাম তাই দেখলে কেন মারলাম তা দেখলে না।
আইরাত;; যাই ই করুক ও আপনি পুলিশে দিতেন। খুন করা কোন সমস্যার সমাধান না। আপনি বুঝেন না কেন?
আব্রাহাম;; আর রাগ কার ওপর ঝারতাম তোমার ওপর?
আইরাত;; আপনি এই সব কি কখনোই বন্ধ করবেন না?
আব্রাহাম;; না। এবার মিস বকবক প্লিজ চুপ করো।

আইরাতের এত্তো রাগ লাগছে এখন। কিন্তু আইরাত খেয়াল করে যে আব্রাহামের হাতের তালুতে বেশ কেটে গেছে হয়তো কাচ দিয়েই। আইরাত রাগের বসে এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে পরে। তারপর একটা ফার্স্ট এয়িড বক্স নিয়ে এসে আবার আব্রাহামের কাছে গিয়ে বসে। আব্রাহামের হাত টা ধরে দেয় এক টান। নিজের কোলের ওপর হাত টা রেখে দিয়ে তুলো তে সেভলন লাগিয়ে রক্ত ক্লিন করে দিতে থাকে। আইরাত রাগের চোটে জোরে জোরে ক্লিন করছে আর সেভলন বেশি করে দিচ্ছে যেন আব্রাহামের হাতে বেশ জ্বালা-পোড়া করে।

কিন্তু আব্রাহামের কোন হাবভাব না দেখে আইরাত কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম এক ধ্যানে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই। হাত যে কেটেছে বা তাতে এত্তো ক্ষার যুক্ত মেডিসিন যে দিচ্ছে তাতে তার কোন খেয়ালই নেই। আইরাতের এখন মন চাইছে নিজের চুলগুলো নিজে ছিড়ুক। যাই হোক আব্রাহামের হাত ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো সে।

আব্রাহাম বুঝতে পারছে যে তার জন্য আইরাতের মনে এক দিকে রাগও হচ্ছে আরেক দিকে চিন্তাও হচ্ছে। এর জন্য সে রাগের বশে তার হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। আইরাতের এমন কনফিউজড ওয়ালা চেহারা দেখে আব্রাহাম মুচকি হাসে অগোচরেই। ব্যান্ডেজ শেষ হলে আইরাত ফার্স্ট এয়িড বক্স টা ঠাস করে টেবিলের ওপরে রেখে আব্রাহামের দিকে একটা ছোটখাটো রাগি লুক দিয়ে এসে পরে৷ আইরাতের যেতেই আব্রাহাম কিছুটা শব্দ করেই হেসে দেয়। তারপর ফোন করে কাকে যেন কি অর্ডার দেয় আব্রাহাম।

আইরাতের চাচি বাসায় কাজ করছিলো হঠাৎ করে বাড়ির কলিংবেলে চাপ পরে। কলি নিজের কপালের ঘাম গুলো মুছে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দিতেই দেখে একজন ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে বেশ হাইফাই ই রয়েছে। তবে তাকে চিনে না কলি আর মনে হয় যে এর আগে তাকে কখনো দেখেছিলো। ব্যাক্তিটি কলিকে সালাম দিলে কলি সালামের প্রতি উত্তর নেয়।

আইরাত সেই কখন থেকে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে তো আছেই। ওইযে আব্রাহামের ওপর রাগ করে আর কি। আব্রাহাম বেশ কয়েকবার রাশেদ কে দিয়ে আইরাতকে ডেকে পাঠিয়েছে কিন্তু আইরাতের কেবিনে আসার নাম নেই। সে নাকি বাইরে অন্য কাজ করছে। আব্রাহাম ভেবে পায় না যে তার আর আইরাতের কেবিন তো এক রুমেই তাহলে বাইরে সে কি কাজ করে। আব্রাহাম এও বেশ ভালো করেই জানে যে আইরাত রাগ করেছে তার সাথে। আব্রাহাম আর থাকতে না পেরে আইরাত কে মেসেজ পাঠালো…

“” আমার রাগ আর মার্ডার করার জন্য তুমি আমার সাথে রাগ করেছো,, তোমার এই রাগ ভাঙাতে গিয়ে কিন্তু এখন আমার নিজেরই বেশ রাগ উঠছে। ভালোই ভালোই কেবিনে আসো, নয়তো সবার সামনে দিয়ে কিন্তু টেনে নিয়ে আসবো। “”
আইরাত বাইরে রিসেপশনের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই তার ফোনে মেসেজ আসে, আইরাত তা পড়ে। কিন্তু আবার রেখে দেয়।

আইরাতকে এখনো আসতে না দেখে আব্রাহাম রেগে উঠে পরে। এখন টেনেই আনবে কিন্তু তখনই দরজায় নক, দেখে একটা ছেলে এসেছে। হাতে একটা বক্স। কুরিয়ার আসলে। আব্রাহাম তাকে ভেতরে আসতে বলে, কুরিয়ার টা নিয়ে তার ওপর একটা সাইন করে দেয় তারপর ছেলে টি চলে যায়। এবার আব্রাহাম উল্টা-পাল্টা একটা মেসেজ টাইপ করে…
“” আইরাত আমার ব্যাপারে জানো তুমি, হয়তো এখন তুমি কেবিনে আসবে নয়তো আমি সব ভাংচুর শুরু করে দেবো। আর তারপর কাচ দিয়ে কি করবো আমি নিজেও জানি না “”।

আইরাতের ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসে। আর মেসেজ টা পরে আইরাতের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়। আসলেই আব্রাহামের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। কখন কি করে বসে। আইরাত দ্রুত পা ফেলে আব্রাহামের কেবিনে চলে যায়। পারমিশনের ঘোড়ার ডিম, হুড়মুড় করেই আইরাত চলে যায়। গিয়েই দেখে আব্রাহাম কেবিনে নেই। আর সব ঠিক ঠাক আছে। তার মানে আব্রাহাম তাকে মিথ্যা বলেছে।

আইরাত রাগে চোখ গুলো ছোট ছোট করে এসে পরতে নেয়। তবে আইরাত পেছন ঘুরতেই আব্রাহাম হুট তার তার সামনে এসে পরে। আইরাত আবার চলে আসতে নিলে আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। এক হাত আইরাতের কোমড়ে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে আইরাতের কপালের চুল গুলো সরাতে সরাতে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া বেবিগার্ল রাগ করলে তোমাকে কি পরিমান কিউট লাগে। নাকের ডগা লাল হয়ে থাকে। মন তো চায় এখানেই কিছু একটা করে ফেলি।

আইরাত;; চুপ করুন। এতো অসভ্য কেন আপনি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ কিছু না করেও যদি আমাকে অসভ্যের খেতাব পেতে হয় তাহলে অসভ্যই। আর অসভ্যতামি তো অন্য কারো সাথে করি না।
আইরাত;; তো ধরে রেখেছে কে যান না করুন অসভ্যতামি অন্য মেয়ের সাথে।
আব্রাহাম;; আমার জন্য একজনই এনাফ। (আইরাত কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার মাথার সাথে নিজের গাল ঠেকিয়ে)
আইরাত;; হয়েছে ছাড়ুন। কি জন্য ডেকেছেন বলুন?

আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দিয়ে একটা বড়ো সড়ো বক্স এনে আইরাতের সামনে রাখে। আইরাত কিছু না বুঝে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম তাকে এটা নেবার জন্য ইশারা দেয়। আইরাত বক্স টা নিয়ে টেবিলের ওপর রাখে। তারপর সেটা খুলে। বক্সের ভেতরে এত্তো গুলো লাল টকটকে বড়ো বড়ো লাল গোলাপ। তা থেকে তীব্র সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। আইরাত ভেবেছিলো হাসবে না এভাবে রাগ করেই থাকবে।

কিন্তু এখন না চাইতেও আইরাতের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আইরাত ফুল গুলো তুলে হাতে নিয়ে নেয়। আব্রাহাম এসে আইরাতের সামনে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়ায়। আইরাত তার আলতো হাতে ফুল গুলো ছুইয়ে দিচ্ছে, তখন চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে নিজের ভ্রু গুলো খানিক নাচায়। এবার আইরাত আর না পেরে ফিক করে হেসেই দেয়। ফুল গুলো নিজের গালের সাথে লাগিয়ে নেয়।

আইরাত;; থাংকু!
আব্রাহাম;; ইট”স থ্যাংক ইউ এই থাংকু টা আবার কি হ্যাঁ?!
আইরাত;; এটা আমার থাংকু আপনি বুঝবেন না।
আব্রাহাম;; হুম হুম বক্সের ভেতরে দেখো আর আছে তো!
আইরাত;; কি?
আইরাত ভেতরে তাকিয়ে দেখে স্কাই ব্লু কালারের একটা স্মাইলি টেডি। বেশ বড়ো & সফট্। আর চকোলেট তো অবশ্যই আছে। আইরাত তার দাত সবগুলো বের করে দিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; ইইইইইইইইইইইইইইইই,, অনেক অনেক থাংকু।

আব্রাহাম;; রাগ কমেছে?
আইরাত;; কিসের রাগ, কাকে বলে এটা কি খায় না মাথায় দেয়?
আব্রাহাম;; ওরে বাবা তাই নাকি!
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; ওহহ গড বেবিগার্ল!
আইরাত;; কি হলো?
আব্রাহাম;; শিট,, আমি তো ভুলেই গেছি।
আইরাত;; আরে কি ভুলেছেন, হয়েছে কি?
আব্রাহাম;; এত্তো এত্তো ইম্পর্ট্যান্ট কথা টা আমি কি করে ভুললাম।
আইরাত;; আরে কোন ইম্পর্ট্যান্ট কথা?

আব্রাহাম;; আল্লাহ এখন কি হবে। অনেক অনেক অনেক বেশি, সবার থেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট কথা এটা।
আইরাত;; আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু তা কি বলবেন তো!!
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। আইরাত মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে আর আব্রাহামও তার দিকে।
আব্রাহাম;; অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট কথা।
আইরাত;; আহা বলবেন তো নাকি!!
আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আইরাত;; কিহহ??
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আইরাত;; এটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা?
আব্রাহাম;; অবশ্যই সবথেকে বেশি। এছাড়া আমার কাছে আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ না।
আইরাত;; আপনি আসলেই পাগল।
আব্রাহাম;; সমস্যা নেই। আমি Psycho আর তুমি Psychiatrist…
আইরাত হেসে দেয়।

ওন্যদিকে আইরাতের চাচি কলি এই বুঝতে পারছে না যে এই আগান্তক ব্যাক্তি টি কে।
কলি;; জ্বি আপনি কে আর কাকে চাই?
রায়হান;; আমি কে তা পরেও জানতে পারবেন। আপনি আইরাতের চাচি রাইট?
কলি;; জ্বি কিন্তু আপনি জানেন কি করে?
রায়হান;; রায়হান আহমেদ আমার নাম।
কলি;; আপনি কি রায়হান গ্রুপের যে মালিক সেই?
রায়হান;; জ্বি

কলি;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা। তো বাইরে দাঁড়িয়ে কেন ভেতরে আসুন।
রায়হান চলে যায় ভেতরে। কলির সাথে বেশ কুশল বিনিময় হয়।
কলি;; তো বলুন এখানে কি মনে করে?
রায়হান;; আমি কথা ঘুড়াই পেচাই না। তো সোজা মেইন টপিকে আসি। আপনার ঘরের মেয়ে কে নিজের ঘরে নিয়ে যেতে চাই।
কলি;; জ্বি মানে আসলে….

রায়হান;; আমি এখানে আইরাতের সাথে আমার বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে এসেছি। বিয়ে করতে চাই আমি ওকে।
কলি;; কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে অবশ্যই বাড়ির বড়োরা আসে। আপনার সাথে কেউ নেই!
রায়হান;; বাড়িতে আমার মা আছে, বাবা নেই। আর মা কিছুটা অসুস্থ তাই আসতে পারে নি।
কলি;; আসলে দেখুন আমার হাসবেন্ড আছে। উনি বর্তমানে বাসায় নেই। বিয়ে তো মুখের কথা না উনি আসুক আমি উনার সাথে কথা বলে দেখবো। কিছুটা সময় দরকার।
রায়হান;; চিন্তা করবেন না আইরাত আমার বাড়িতে কোন কিছুর অভাবে থাকবে না। রাজরানি বানিয়ে রাখবো ওকে আমি।

কলি;; আসলে কি মেয়েটাকে আমি কখনো নিজের ভাবি নি। সবসময় কথা শুনাই। এটা আমি নিজেও বুঝি। ভালো না হয় কিন্তু ওর জন্য কখনো খারাপ আমি চাইবো না। আমি সিওর না তবে কিছুটা আশ্বাস দিতে পারি আপনাকে। পরিবার ভালো হলে আমি রাজি আছি। এখন আইরাতের চাচার সাথে কথা বলতে হবে তাহলেই হলো।
রায়হান;; বিয়ে তো হবেই অবশ্যই হবে (এক শয়তানি হাসি দিয়ে)
কলি;; হুমমম।
রায়হান;; আজ তাহলে আসি। এর পরেরবার আসলে আইরাত কে নিজের সাথে করে নিয়ে তারপরই যাবো।
কলি আর কিছু বলে না, রায়হান চলে যায়। ব্যাস এর পর থেকেই কলির মাথায় যেন একটা জিনিসই বারবার ঘুড়পাক খাচ্ছে।

আইরাত কেবিনে একাই বসে বসে ফাইল সব রিচেক করছে। তখনই ভেতরে আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে আসে। আইরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে ফোন রেখে দেয়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!!
আইরাত;; হুমমম (ফাইল দেখতে দেখতেই)
আব্রাহাম;; চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; বাড়িতে।
আইরাত;; কিন্তু আমার কাজ তো শেষ হয় নি।
আব্রাহাম;; আরে রাখো তো চলো চলো চলো।

আব্রাহাম ফাইল গুলো আইরাতের হাত থেকে নিয়ে রেখে দেয়। তারপর তাকে নিয়ে বের হয়ে পরে। গাড়িতে ওঠে সোজা আব্রাহামের নিজের বাসায়।
আইরাত;; এখানে এলাম কেন আমরা?
আব্রাহাম;; দাদি তোমাকে নিয়ে আসতে বলেছিলো।
আইরাত;; দাদি? আপিনি আমাকে বললেন না কেন আগে?
আব্রাহাম;; এখানেই তো আনার ছিলো বলে আর কি করতাম তাই সোজা এখানেই নিয়ে এসে পরলাম।
আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ভেতরে যেতেই আব্রাহামের দাদি আইরাতের দিকে আসে।
ইলা;; এসেছিস তোরা? আয় আয় সেই কখন থেকে বসে আছি তোদের জন্য।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি জানি তো।
ইলা;; তোর জন্য না, আমার আইরাতের জন্য।
আব্রাহাম;; ??
আইরাত;; ??

ইলা আইরাতের হাত ধরে নিয়ে সোফাতে বসিয়ে দেয়। আব্রাহাম বসতে যাবে তখনই তার ফোনে ফোন আসে। আব্রাহাম কথা বলতে বলতে কিছুটা দূরে সরে আসে। এদিকে ইলা আর আইরাত দুইজন দুইজন কে পেয়ে যেন আর কিছুর খেয়ালই নেই। অনেক গল্প করছে। আইরাত এবার খেয়াল করে যে আশে পাশে কিছু ছোট ছোট টেবিল রয়েছে আর তার ওপর আব্রাহামের, তার দাদি অনেক গুলো ছবি। কিছুতে আব্রাহাম একা আবার কিছুতে তার দাদি আর সে একসাথে। হঠাৎ করে আইরাত বলে ওঠে…

আইরাত;; আচ্ছা দাদি!
ইলা;; হ্যাঁ বল
আইরাত;; আচ্ছা আব্রাহাম এতো রাগি কেন বলো তো। মানে এত্তো রাগ ওর।
ইলা;; ও সবার সাথেই রাগ দেখা পারে, রাগ করে থাকতেও পারে একমাত্র তুই আর আমি ছাড়া।
আইরাত;; ও কি আগে থেকেই এমন?
ইলা;; ছিলো না হয়ে গেছে। আসলে ওর বাবা ওকে আর ওর মা কে রেখে আরেকটা বিয়ে করে। নানা সমস্যা হয়। এটা ওর জীবনকে যেন এলোমেলোই করে দিয়েছিলো। ওর সৎ মায়ের একটা ছেলে হয় রায়হান। তখন থেকে যেন আরো বেশি এলোমেলো হয়ে গেছে।

আইরাত;; দাড়াও দাড়াও কি রায়হান??
ইলা;; হ্যাঁ আব্রাহামের সৎ ভাই ও।
আইরাত;; রায়হান আহমেদ,, রায়হান গ্রুপের ওনার তাই না?
ইলা;; হ্যাঁ
আইরাত;; কি বলো এইসব? রায়হান আব্রাহামের সৎ ভাই হয়?? (বেশ অবাক হয়ে)
ইলা;; হ্যাঁ। কেন?
আইরাত;; না না এমনি। মানে আব্রাহাম কখনো আমায় বলি নি তো তাই আর কি।
ইলা;; আরে না ও তো……

আব্রাহাম;; হে গার্লস কি করছো?
ইলা;; কিছু না এইতো বসে আছি। এই তোরা বস আমি আসছি।
আব্রাহাম;; আচ্ছা।
আব্রাহাম বসে ছিলো। কিন্তু সামনে তাকিয়ে দেখে আইরাত আবার রাগে নাক মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আব্রাহাম কিছু বুঝতে না পেরে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; এখন আবার কি করলাম?
আইরাত;; আর কি কি আছে যা আমি জানি না?

আব্রাহাম;; মানে?
আইরাত;; রায়হান?
আব্রাহাম;; ওর নাম কেন নিচ্ছো?
আইরাত;; ও আপনার ভাই লাগে?
আব্রাহাম;; সৎ।
আইরাত;; যাই হোক ভাই তো।
আব্রাহাম;; না।
আইরাত;; আপনি আমায় বলেন নি কেন?
আব্রাহাম;; বলার প্রয়োজনবোধ করি নি তাই বলিনি।

আইরাত;; একটা বার বলা উচিত ছিলো। তাই তো বলি যে এতো টা এতো টা ঘৃণা কেন করেন আপনি ওকে।
আব্রাহাম;; হুম এখন বুঝতে পেরেছো তো তাই চুপ করো এখন।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহামের দাদি আসে হাতে ক্ষীর নিয়ে। আইরাত আর আব্রাহামের সামনে রাখে। খেতে খেতে ইলা বলে ওঠে…
ইলা;; সব ঠিকই আছে এখন শুধু জলদি তোরা বিয়ে করে এখানে এসে পর।
আইরাত ক্ষীর মুখে দিয়ে একবার ইলার দিকে আরেকবার আব্রাহামের দিকে তাকায়। তখন আব্রাহাম ফাজলামি করে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; হ্যাঁ সেই কবে থেকেই তো বলছি দাদি কে যে আমি রেডি আছি চলো বিয়ে করে ফেলি। দাদি বিয়ে করবে?
ইলা;; চুপ কর শয়তান ছেলে। নির্লজ্জ কোথাকার।
আইরাত;; ????।
আইরাত & আব্রাহাম আর তার দাদি সেইদিন অনেক আড্ডা দেয়। সন্ধ্যার দিকে আব্রাহাম আর আইরাত বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আইরাতকে তার বাড়ির সামনে ড্রপ করে দিয়ে এসে পরে। আইরাত তো ‘তাই রে নাই রে নাই’ করে বাড়িতে ঢুকছিলো এসেই দেখে আইরাতের চাচি চা বানাচ্ছে। চা বানাতে বানাতে কলি বলে ওঠে…

কলি;; এসেছিস?
আইরাত;; হ্যাঁ।
কলি;; এই চা টা তোর চাচ্চু কে দে ধর।
আইরাত;; দাও।
আইরাত গিয়ে তার চাচ্চু কে চা দিয়ে আসে। তার চাচ্চু এক গাল হেসে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতও হেসে সেখান থেকে এসে পরে। কলির সাথে সাথে ইকবালও আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইকবাল কলির দিকে তাকালে কলি তাকে চুপ করে থাকতে বলে।

পরেরদিন সকালে~~
আইরাতের ঘুম ভাংগে আব্রাহমের ফোনের শব্দে।
আব্রাহাম;; গুড মর্নিং মাই লাভ।
আইরাত;; গুড মর্নিং (ঘুম ঘুম ভাব)
আব্রাহাম;; ঘুম ভাংলো তবে?
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; নাও লিসেন, গাড়ি তোমার বাড়ির নিচেই দাঁড়িয়ে আছে জলদি নিচে নেমে এসে পর। আমার ড্রাইভার সে।
আইরাত এবার উঠে বসে।

আইরাত;; কোথায় যাবো? আপনার বাসা থেকে না কালই আসলাম আবার আজ কেন?
আব্রাহাম;; আসতে বলছি আসবা। নয়তো সেইদিন রাতের মতো করে তোমাকে তুলে আনলে অবশ্যই তা ভালো হবে না।
আইরাত;; এই না না আমি আসছি। আর আজ আপনি অফিসে যান নি?
আব্রাহাম;; না, নিজেও যাই নি আর তোমাকেও যেতে দিবো না। এখন মিস বকবক জলদি রেডি হয়ে আসো।
আইরাত;; হায়রে আচ্ছা রাখুন আসছি।

আইরাত উঠে রেডি হয়ে চলে গেলো। কিন্তু বাড়ির কাউকে বলে নি যে আব্রাহামের বাড়ি যাচ্ছে। সবাই জানে আইরাত অন্যান্য দিনের মতো অফিস যাচ্ছে।
আইরাত আব্রাহামের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। আব্রাহাম তখন একটা টি-শার্ট পরে ওপরে করিডরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো। নিচে তাকিয়ে দেখে আইরাত আসছে। আব্রাহাম শয়তানি করে সেই ওপর থেকেই ডাক দেয়….
আব্রাহাম;; ওই যে বউ আসছেএএএএএএএ!
আইরাত;; এই পাগল।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩০

আব্রাহাম দ্রুত নিচে যায় তারপর আইরাত কে আনে।
আব্রাহাম;; আসেন ম্যাডাম, আপনারই ফিউচার বাড়ি এটা।
আইরাত;; দাদিশাশুড়ীর বাড়ি।
আইরাত নিজে বলে নিজেই বোকা বনে গেলো। এই মাত্রই সে কি বলে দিলো নিজের অজান্তেই।
আব্রাহাম এক ভ্রু উঁচু করে তাকায় তার দিকে।
আব্রাহাম;; ওরে বাবা তাই নাকি। রায়হান কে বিয়ে করার এতো শখ??
আইরাত;; ??
আব্রাহাম;; হুমম??

আইরাত;; ভাগ্যিস আপনি ওর দিকে গিয়েছেন।
আব্রাহাম;; জাস্ট কিডিং। খুন করে ফেলবো তোমাকেও আর ওকেও। তুমি আমার। আমি তো ভেবছি যে তোমার হাতে আমার নামের একটা ট্যাটু করে দিবো।
আইরাত বুঝলো যে আব্রাহাম রাগ পাচ্ছে খুব তাই কথা ঘুড়িয়ে ফেলে।
আইরাত;; আরো কিছু।

আব্রাহাম;; না আপাতত আর কিছুই না। এবার ভেতরে চলো।
আইরাত ভেতরে চলে যায়। সেদিন কার মতো কেউই অফিসে যায় না। আব্রাহামের বাসায়ই থাকে। কিন্তু ওইদিকে আইরাতের বাসায় তো অন্যকিছুর প্ল্যানিং চলছে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬