নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫
লেখিকাঃ Tamanna Islam

— আজ দিন টা অন্যরকম। আকাশ টা আজ গাঢ় নীল আর সাদা রঙে বেশ রঙিন। পরিবেশে কেমন এক মুখরিত ভাব। সূর্যের রোদ আজ নেই বললেই চলে। পরিবেশ টা কেমন জানি স্নিগ্ধ-শীতলময়। আশে পাশে গাছ-গাছালি গুলো তীব্র বাতাসে খেলা করছে। গাছের পাতাতে বাতাস লেগে একটা যেনো আরেকটার সাথে খেলা করছে। আর সেগুলোর বাতাস এসে কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে। হুট করেই আকাশ টা কেমন আবছা আবছা কালো মেঘে ঢেকে গেলো। বাতাস টা আরো জোরে বইতে লাগলো। আকাশে মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ হলো। অর্থাৎ বৃষ্টি আসবে। এটা বৃষ্টি আসার আগ মূহুর্ত। বৃষ্টি আসার আগ মূহুর্তে যেই মন ভোলানো বাতাস বয় তার ভালো লাগাটা মুখে ব্যাক্ত করা যাবে না, যায় না আসলে।

আইরাত জানালার কাছে বসে ছিলো। আব্রাহামের একটা অনলাইনে মিটিং ছিলো তাই সে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে গিয়েছে। আব্রাহামের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে আইরাত তার মুখ টা লটকিয়ে জানালার কাছে বসে ছিলো। তখনই মেঘ ডেকে উঠে। আইরাত জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। দেখে চারিদিকে কেমন এক সাজ সাজ ভাব করেছে। এটা দেখেই আইরাতের মন বাক-বাকুম হয়ে গেলো। আইরাত আবার দরজার দিকে তাকায় দেখে যে এখনো আব্রাহাম আসছে না। আর ঠিক তখনই আকাশে আরেকবার বেশ জোরে সোরে মেঘ গর্জন দিয়ে ওঠে। এবার আর আইরাতকে পায় কে? আইরাত দ্রুত পায়ে বিছানা থেকে নেমে পরে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তবে আজ আইরাতের মাঝে ফুটে ওঠেছে এক অন্যরকম আলাদা ধাচের সৌন্দর্য। আইরাত এখন সাদা ধবধবে একটা শাড়ি আর লাল টকটকে একটা ব্লাউজ পরে আছে। হাতে চিকন কিছু চুড়ি। তার হাতে গোল গোল করে মেহেদী লাগানো। ঠিক যেমনটা আগের মানুষরা লাগাতো তেমন। কিন্তু এতেও যেনো আইরাতের হাত গুলোকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাদা হাতে লাল মেহেদি কেমন জ্বলজ্বল করছে। আব্রাহামের মতে আইরাত কে নাকি শাড়িতে অপূর্ব সুন্দর লাগে। আর তার এই অপূর্বতা থেকে চোখ সরানো বারণ। আইরাত কে এই শাড়ি টা পরিয়ে দিয়েছে আব্রাহাম তার নিজ হাতেই। আইরাতের পায়ে এক জোড়া নূপুর রয়েছে। সেটাও আব্রাহাম তার নিজ হাতেই পরিয়ে দিয়েছে। আইরাত প্রথমে ছুটে করিডরে চলে যায়। কিন্তু করিডরের ওপরে অনেক বড়ো ছাউনি আছে যার ফলে আকাশ দেখা যায় না। আইরাত একটা ভেংচি কেটে আবার ছুটে ছাদে চলে যায়।

আইরাত যেইদিক দিয়ে ছুটে যাচ্ছে সেখানেই যেনো আইরাতের পায়ে থাকা নূপুর গুলোর আওয়াজ সব ছনছন করে বেজে চলেছে। বাজছে তার হাতে থাকা সেই চুড়ি গুলোর রিমিঝিমি আওয়াজ। আইরাত গিয়ে সোজা ছাদের একদম মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়। এবার যেনো আইরাত আনন্দের একটা নতুন ধারা খুঁজে পেলো। পরিবেশ টা কেমন একটু মেঘাচ্ছন্ন হয়ে এসেছে। বাতাসের বেগ টা আরো একটু ভারি হয়ে গেলো। নাকে ভেসে আসতে লাগলো এক সুমধুর মিষ্টি গন্ধ। প্রকৃতি যেনো আজ তার আপন লীলা-লাস্যে মেতে ওঠেছে। দূর আকাশে সেই পাখি গুলো তাদের ডানা ঝাপটে তাদের নীড়ে পৌছাচ্ছে। পরিবেশ টা কেমন ভারি ভারি। আগে থেকে আরো মেঘলা একটা ভাব হয়ে এলো। বেশ বুঝা যাচ্ছে যে গগন কাপিয়ে বৃষ্টি নামবে।

আইরাত হাটতে হাটতে ছাদের আরো মাঝখানে এসে দাঁড়ায়। আসলে ছাদ টা আকারে বিশাল বড়ো। কেউ এটাকে দেখে বলবে না যে এটা ছাদ। ছাদের এক পাশে অনেক গুলো ফুল রয়েছে। এমন কোন ফুল নেই যে সেখানেই নেই। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে গোলাপ ফুলের গাছ। আইরাতের গাঢ় লাল গোলাপ পছন্দ দেখে আব্রাহাম নিজ হাতে গোলাপ গাছ গুলো লাগিয়েছে। বলা যায় ছাদের ওপরেই একটা ছোট খাটো বাগান রয়েছে। এবার হঠাৎ একটা দমকা বাতাস এসে আইরাতের গায়ে লাগলো। বাতাসে চুল গুলো উড়ে চলেছে। শাড়ির আচল টাও ছন্নছাড়ার মতো করে ঢেউ খেলিয়ে উড়ছে।

মুখ টা আকাশ পানে তুলে আপন মনে সেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশে তাকিয়ে ছিলো আইরাত। তখনই টুপ করে এক বিন্দু বৃষ্টি ফোটা তার মুখের ওপর পরে। সাই করে আরেক দফা বাতাস বয়ে যায়। আইরাত যেনো এখন নিজেকে এই প্রকৃতির মাঝে অনুভব করতে পারছে। সে তার দুই আখি বন্ধ করে দুই হাত দুইপাশে মেলে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক তার কয়েক মূহুর্তের পর হুড়মুড় করে ঝিরিঝিরি শব্দ তুলে বৃষ্টি নেমে এলো। আইরাত চোখ দুটো মেলে তাকায়। মুখের কোণে ফুটে ওঠেছে দীর্ঘ হাসির রেখা। আইরাত সেই এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগলো।

ছাদে থাকা ফুলের গাছ গুলোতে বৃষ্টির শীতল পানি পরে সেগুলোর সুগন্ধি যেনো আরো দ্বীগুণ করে তুলেছে। বৃষ্টির পানি গুলো বেশ ঠান্ডা। আইরাত ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে গেলো। গায়ে থাকা শাড়িটা ভিজে একদম আষ্ঠেপৃষ্ঠে লেগে ধরেছে তার সাথে। খোলা কোমড় টাতে পানির বিন্দু লেগে আছে। ঘাড়ে-গলাতেও পানির বেশ ছিটেফোঁটা লেগে আছে। চুল গুলো ভিজে একদম টপ টপ করে পানি পরছে।

গলা গালের সাথে চুল গুলো কিছু লেগে ধরেছে। আকাশে এবার বিদ্যুৎ চমক দিয়ে উঠে। আইরাত পায়ে থাকা নূপুর গুলো ভিজে ওঠেছে। সে খালি পায়ে ছাদের এদিকে ওদিকে ছুটে বেড়াতে লাগলো। ছাদের এদিকে ওদিকে পানি জমে রয়েছে কিছু। আইরাত সেগুলো তার পা দিয়ে হাল্কা ভাবে ছিটিয়ে দিচ্ছে। নিজের মন প্রাণ খুলে বৃষ্টির পানিতে ভিজে চলেছে। আইরাতের যেনো আর কোন দিকে খেয়াল নেই সে নিজের আপন মন মতো। শাড়ি টা একটু উঁচু করে ছাদের একদিক থেকে আরেকদিকে দৌড়ে চলেছে।

তবে এভাবে থাকতে থাকতেই কেনো যানি আইরাতের মনে হলো যে কেউ তাকে খুব বেশি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। আইরাত ঘুড়ে তার পেছনের দিকে তাকায়। দেখে ছাদের দরজাতে আব্রাহাম তার দুই হাত ভাজ করে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত তো নিজের মতো করে বৃষ্টি কে উপভোগ করে চলেছিলো কিন্তু আব্রাহাম কে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আইরাতের বুকের ভেতর টা কেমন ধক করে ওঠে। শ্বাস ঘন হয়ে আসে। আইরাত বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির পানি গুলো আইরাতের সারা গায়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। আব্রাহাম একদম সাদা প্যান্ট আর শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ গুলো আইরাতে স্থীর। বৃষ্টির বেগ আরো বেড়ে গেলে আব্রাহাম কে কেমন ঝাপসা ঝাপসা লাগছে দেখতে। তখন আরো একবার বিদুৎ চমক দিয়ে উঠে। আইরাত এবার চমকে গিয়ে চোখ-মুখ কিছুটা কুচকে ফেলে।

আব্রাহাম এবার আর দাঁড়িয়ে না থেকে সোজা নিজের সামনে হাটা দেয়। বৃষ্টির পানিতে আব্রাহামও নেমে পরে। মূহুর্তেই আব্রাহামও ভিজে যায়। বৃষ্টি ভেজা পানিতে আব্রাহামের শার্ট টা ভিজে একদম তার গায়ে সাথে লেগে ধরে। ভেতর থেকে তার বডি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আব্রাহাম এসে আইরাতের সামনে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহামের সামনের চুল গুলো ভিজে তা থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। আব্রাহাম একবার আপাদমস্তক আইরাতকে দেখে নিলো। আব্রাহাম তার হাত টা আইরাতের গালে রাখে। আব্রাহামের শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে আইরাত কেমন যেনো কিছুটা কেপে ওঠে। আব্রাহাম এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আইরাত তার একটা হাত আব্রাহামের বুকের ওপরে রেখে দেয়। আব্রাহাম তার মাথা আইরাতের মাথার সাথে ঠেকিয়ে রাখে। তার একটা হাত আইরাতের গালে স্লাইভ করতে করতে বলে ওঠে…..

আব্রাহাম;; তোমার ধারনাও নেই জানপাখি তোমাকে এই বৃষ্টিভেজা শাড়িতে কি পরিমাণ আবেদনময়ী লাগছে।
আইরাত;; ________________
আব্রাহাম;; এমন করে আমার সামনে প্লিজ এসো না । ঠিক থাকতে পারি না আমি। নিজের ওপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি আমি। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসে আমার। তোমাকে কাছে পাবার প্রবল ইচ্ছে জাগে।
আইরাত;; ________________

আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের গোলাপি ঠোঁট গুলো ছুইয়ে দেয়। আইরাত মাথা টা কিছুটা ঝুকিয়ে রেখেছে। আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে স্লাইভ করতে লাগে। আইরাত তার হাত দিয়ে আব্রাহামের শার্ট টা খামছে ধরে। আব্রাহাম দেখে আইরাতের গলায় ঘাড়ে পানি গুলো শিশির বিন্দুর ন্যায় চিকচিক করছে। আব্রাহাম এগুলো দেখে যেনো নিজের ওপর একদম লাগামহীন হয়ে গেলো। আর এক মূহুর্ত দেরি না করে আব্রাহাম আইরাতের গলায় মুখ ডুবায়। আইরাত আবেশে চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলে।

আব্রাহাম চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো আইরাতের ঘাড়ে। আইরাতের ভেতরে এক আলাদা অনুভূতি হচ্ছে। এক অজানা অনুভূতি যার নাম সে জানে না। আইরাত বেশ লজ্জা পায়। সে আব্রাহাম কে ছাড়িয়ে সেখান থেকে এসে পরতে চাইলে আব্রাহাম তার হাত ধরে ফেলে। তারপর আবার তাকে নিজের কাছে আনে। এক হেচকা টান দিতেই আইরাত আবার আব্রাহামের কাছে এসে পরে। আইরাতের পিঠ টা আব্রাহামের বুকের কাছে। আব্রাহাম পেছন থেকেই আবার আইরাতকে জরিয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ ডুবায়। আব্রাহামের হাত গুলো আইরাতের পেটে-কোমড়ে বিচরণ করে চলেছে।

আব্রাহাম;; নিজের করতে চাই আমি তোমায়। তোমার ইচ্ছাতে, তোমার মতে। কাছে পেতে চাই আমি তোমায়। এতো টাই কাছে যেখানে তুমি আমি নামক কোন দুই উক্তি থকবে না। তুমি & আমি মিলে এক হয়ে যাবো। এতো টা কাছে পেতে চাই আমি তোমায় যেখানে কোন দূরত্বই থাকবে না। একদম না। জানপাখি হবে কি আমার…….!?

তখনই আকাশ কাপিয়ে বিদ্যুৎ গর্জন করে ওঠে আর আইরাত সাথে সাথে ঘুড়ে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামও আইরাতকে জড়িয়ে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে। আব্রাহাম তার দুই হাত দিয়ে আইরাতের গালে ধরে তারপর ফট করেই আইরাতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট গুলো মিশিয়ে ফেলে। তবে আইরাত এবার না করেনি, না ই আব্রাহাম কে কোন বাধা দিয়েছে। আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাতের সম্মতি আছে। আব্রাহাম যেনো আইরাতকে আরো নিজের সাথে চেপে ধরে তার ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরে।

দুইজন ভালোবাসার মানুষ এই বৃষ্টিতে এক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনেই ভিজে একাকার হয়ে গেছে। তবে বাইরে যেনো বৃষ্টি আরো ভয়ানক রুপ ধারণ করলো। আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দাঁড়ায়। হাত
দিয়ে তার সামনে আসা চুল গুলো পেছনের দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু এবার আব্রাহাম আইরাতকে সোজা তার কোলে তুলে নেয়। আইরাত তার দুই হাত আব্রাহামের গলাতে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম আইরাতকে কোলে নিয়ে সোজা ঘরের ভেতরে দিকে হাটা দেয়। রুমের ভেতরে গিয়ে আইরাতকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তখনই ধপ করে সারাঘরে অন্ধকার ছেয়ে আসে। রুমটাতে আবছা আলো এসে পরেছে। বাইরে যে বিদুৎ চমক দিচ্ছে মাঝে মাঝে তার আলো এসে সারাঘর কে ক্ষনিকের জন্য আলোকিত করে তুলছে। এ যেনো আলো-আধাঁরের এক অসম্ভব সুন্দর মিশ্রণ।

আব্রাহাম আইরাতকে বিছানাতে শুইয়ে দিয়ে ক্রমশ আইরাতের দিকে এগোতে থাকে। এখন আইরাতের সাথে তার মাথা একদম ঠেকে আছে। আইরাতের মাথা বালিশে ঠেকে গেলে আব্রাহাম আইরাতের দুই পাশে হাত দিয়ে আইরাতের ওপর ঝুকে পরে। আইরাতের কপালে আব্রাহাম উষ্ণ চুমুর উত্তাপ দিয়ে দিয়ে। তারপরেই আবার আইরাতের ঠোঁট গুলো আকড়ে ধরে। আজ যেনো দুজনের মাঝে কোন বাধাই নেই।

আব্রাহাম আইরাতের ওপর থেকে ভেজা শাড়ির আচল টা ফেলে দেয়। নিজের গা থেকে সাদা শার্ট টা ফেলে দিয়ে আবার আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের দেহের সাথে আইরাতের দেহ টা লাগিয়ে নেয়। তারপর ডুব দেয় আইরাতের মাঝে। আজ আব্রাহাম তার আইরাতে মগ্ন। সে আজ তার আইরাতকে নিজের করে পেয়েছে। আইরাতের চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। আব্রাহামের শূন্য পিঠ টা আইরাত খামছে ধরে।

আব্রাহাম আজ তার প্রিয়তমা কে নিজের ভালোবাসার উষ্ণাতার চাদরর মুড়িয়ে নিয়েছে। আজকের এই বৃষ্টিভেজা দিনটা যেনো তাদের ভালোবাসাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এভাবেই একে-অপরের মাঝে পরিপূর্ণতা পেলো দুই ভালোবাসার মানুষ। আজ আইরাত সম্পূর্ণ রুপেই তার আব্রাহামের আর আব্রাহাম তার আইরাতের। আব্রাহাম-আইরাত মিলে এক, তাদের ভালোবাসার আজ এক নতুন অধ্যায় শুরু ❤️?।

বিকেলের সাজ এখন ?। বাইরে বৃষ্টি নেই। তবে বৃষ্টিভেজা যেই স্নিগ্ধতা থাকে সেটা এখনো বজায় রয়েছে। চারিদিকে মৃদু ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আকাশ টা এখন আর কালো মেঘে ঢাকা নেই। পরিষ্কার হয়ে সতেজতা ছড়িয়ে দিয়েছি সবখানে। ঠিক বৃষ্টির পর পরই আকাশে যে রঙ ফুটে ওঠে সেটার আভা সব জায়গায় মিলে-মিশে একদম একাকার হয়ে গেছে। কিছুটা লাল-কমলার সংমিশ্রণ।
রুমের ভেতরের সাদা বড়ো বড়ো পর্দা গুলো বাতাসে ঢেউ খেলাচ্ছে। ভেতরের নীরবতা ভেঙে পর্দা গুলোর উড়ে যাওয়ার শব্দ কানে আসছে।

বুক পর্যন্ত কোমল সাদা চাদর টা টেনে দিয়ে, চুল গুলো এলোমেলো করে আইরাত ঘুমাচ্ছে। কিছুটা উপুড় ভাবেই বালিশে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে আছে আইরাত। যার ফলে গালে মাংসের ভাজ পরে ঠোঁট গুলো খুবই ছোট আর বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। আর এই সবকিছুই খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে চলে আব্রাহাম। একটা হাত মাথার পাশে ঠেকিয়ে শুয়ে আছে সে আর তার আইরাত কে দেখে চলেছে। ঠোঁটে ঝুলছে মুচকি হাসি।

আব্রাহাম আইরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার হাত দিয়ে আইরাতের মুখের ওপর এসে পরা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। এতে আইরাত কিছুটা নড়েচড়ে ওঠে। আব্রাহাম এগিয়ে এসে আইরাতের কপালে চুমু দিয়ে দেয়। চুমুরত অবস্থায় আব্রাহাম তার চোখ গুলো বন্ধ করে দেয়। আইরাত ঘুমের মাঝেই টের পায় যে এটা আব্রাহাম। সেও খানিক হেসে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামের শূন্য বুকে মুখ লুকায়।

আইরাতের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে যে আইরাত আবার ঘুমিয়ে পরেছে। তাই আব্রাহাম এবার নিজে উঠে পরে। আইরাতকে কিছু ডাক দিলে সে অন্যপাশে ঘুড়ে আবার ঘুমিয়ে পরে। আব্রাহাম এবার আর না পেরে আইরাতকে সোজা কোলে তুলে নেয়। এমন আচমকা কান্ডে আইরাত চমকে যায়। আর নিজের সাথে থাকা চাদর টা খামছে ধরে।

আইরাত;; এই কি করছেন কি আপনি?
আব্রাহাম;; তোমার ঘুম ছুটাচ্ছি দাড়াও।
আইরাত;; না আমাকে নিচে নামান। আমি আরো একটু ঘুমাবো। আমার ঘুম পাচ্ছে। ওই আমাকে নিচে নামান।
আব্রাহাম;; চুপ।

আইরাত বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু এদিকে আব্রাহাম আইরাতের একটা কথাও শুনছে না। সে আইরাতকে কোলে নিয়ে তার মতো করে যেতে লাগলো। সোজা ওয়াসরুমে নিয়ে গিয়ে আইরাত কে ঠিক শাওয়ারের নিচে নামিয়ে দেয়। আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে আব্রাহাম তার কোমড়ে ধরে নিজের দিকে টান দেয়। আর এরপরেই শাওয়ার টা অন করে দেয়। নিজের ওপর এই ঠান্ডা পানির ছোয়া পেতেই আইরাত সামান্য চিল্লিয়ে ওঠে আব্রাহাম কে দুই হাতে খামছে ধরে একদম।

আব্রাহাম এতে কিছুটা শব্দ করেই হেসে ওঠে। একে তো প্রচুর শীতল দিন,, আবহাওয়া প্রচুর ঠান্ডা। তার ওপর আরো এই ঠান্ডা ঠান্ডা পানি। গায়ে যেনো কাপন ধরিয়ে দিচ্ছে। আইরাত শীতে কাপতে লাগে। আব্রাহাম আইরাতের মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে রাখে। নিজের দুই হাতে আইরাতের কোমড় শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে। আইরাতও নিজের দুই হাত আব্রাহামের বুকের ওপর রেখে দেয়।

ওপর থেকে সব পানি তাদের দুজনের ওপর পরছে। আর আবেশে দুইজনেই চোখ বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। পানি গুলো আইরাতের ঠোঁট বেয়ে বেয়ে বুকের দিকে গড়িয়ে পরছে। আব্রাহাম আইরাতের সেই ঠোঁট গুলো কে নিজের করে নেয়। আইরাত তো আব্রাহামের থোতার সমান হয়। তাই এবার আইরাত তার পা গুলো ফ্লোর থেকে কিছুটা উঁচু করে নেয়। আব্রাহামের আরো কাছে যায়। আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটে ঠিক কতোক্ষন ডুবে ছিলো খেয়াল নেই। কিন্তু যখন আব্রাহাম খেয়াল করলো যে আইরাত ঠান্ডায় কিছুটা কাপছে তখন আব্রাহাম আইরাত কে একদম নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরে তাকে। এতে আইরাত ঠান্ডার মাঝেও যেনো কিছুটা আব্রাহামের বুকের উত্তাপ পায়।

আইরাত;; আপনি বাইরে যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
আব্রাহাম;; যদি আমার বাইরেই যাওয়ার হতো তাহলে আর নিজে তোমাকে এখানে কোলে করে নিয়ে আসতাম না।
আইরাত;; আরে কিন্তু………..
আব্রাহাম;; Save water, shower together ?❤️~
আইরাত;; এইটা আবার কোন লজিক!?
আব্রাহাম;; আমার লজিক।

আব্রাহামের সাথে তো আর কেউ পারবে না। অবশেষে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে এসে পরে। আব্রাহাম সোফাতে বসে ফোন ঘাটছে। আর তখনই আইরাত টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে আসে। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত একমনে নিজের চুল মুছছে। আব্রাহাম একটান দিয়ে আইরাত কে নিজের সামনে বসিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; এদিকে এসো।
আইরাত বসে পরে। আব্রাহাম খুব যত্নের সাথে আইরাতের চুল গুলো মুছে দেয়।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন আমি নিচে যাই, আপনি এসে পড়ুন।
আব্রাহাম;; কেনো?

আইরাত;; কেনো মানে? আরে ক্ষুদা লাগে নি আপনার। সেই সকালে ব্রেকফাস্ট করেছিলেন শুধু। আর দাদি আছে দাদিকে ঔষধ দিতে হবে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা যাও, কিন্তু রান্নাঘরে ঢুকবে না কিন্তু।
আইরাত;; আব্রাহাম বেশি বেশি হয় কিন্তু আরে একটা দিন রান্না করলে কি এমন হবে?
আব্রাহাম;; আরে কি দরকার এই গরমে কিচেনে গিয়ে ঘেমে একাকার হওয়ার।
আইরাত;; আরে আমি এতো টাও বাজে রান্না করি না খাওয়া চলে।

আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা,, তোমার হাতের সেই বিরিয়ানি যদি আমি খেতে পারি তাহলে সব খাবারই খেতে পারবো।
আব্রাহামের মুখে আইরাতের সেইদিনের সেই বিরিয়ানির কথা শুনে আইরাত তার দাত দিয়ে জিভ কাটে। আল্লাহ জানেন যে আব্রাহাম সেই বিরিয়ানি টা খেয়েছে কীভাবে। আইরাত আব্রাহামের একটা কথাও না শুনে নিচে চলে যায়। তবে সে রান্নাঘরে যায় না। আব্রাহাম প্রচুর বকবে তাই। সে সেফ দের যা যা খাবে তাই রান্না করতে বলে ইলার ঘরের দিকে চলে যায়।
আইরাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে….

আইরাত;; দাদি আসবো?
ইলা;; আরে আয় আয়, বলার কি আছে সোজা এসে পরবি।
আইরাত;; কি করো?
ইলা;; পান খাই।
আইরাত;; হায়রে, আব্রাহাম দেখলে কিন্তু বকা-ঝকা করবে অনেক।
ইলা;; আরে এখন তো দেখছে না।

আইরাত;; পান খেতে খেতে দাত গুলোর কি হাল করেছো দেখেছো একবার?
ইলা;; আরে আমি বুড়ি মানুষ। এই বয়সে পান খাবো না তো কি খাবো।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ পান খাওয়া বের করছি তোমার দাড়াও।
আইরাত পেছনে দরজার দিকে তাকায়।
আইরাত;; ওইতো নাও বলতে বলতেই এসে গেছে।
আব্রাহাম;; কবে কথা শুনবে দাদি!

ইলা;; আরে ধুর বিয়ে করেছিস এখন বউয়ের দিকে নজর দে। আমার পানের দিকে না।
কে শুনে কার কথা, ইলা তার পানের বাটা টা নিয়ে লুকিয়ে ফেলে। এটা দেখে আইরাত & আব্রাহাম দুজনেই হেসে দেয়। তখনই একজন স্টাফ এসে তাদের সবাইকে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলে। খাবার রেডি।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই উঠে পরে। আইরাত ইলা কে মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিয়ে রুমে শুইয়ে দিয়ে আসে। তারপর নিজের রুমে চলে যায়।

আব্রাহাম আইরাতকে ওপরে রুমে যেতে বলে সে একটু বাইরে যায়। এখন সময়টা সন্ধ্যেরাত। বাইরে থেকে খোলা বাতাস রুমের ভেতরে আসছে। বাইরে থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলোও আবছা ভাবে ঘরে এসে পরেছে। আইরাত গিয়ে বড়ো থাই গ্লাস টা সরিয়ে দুইহাত ভাজ করে কিছুটা হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। চাঁদ টা আজ অনেক বড়ো। একদম নিজের সম্পূর্ণ রুপে সেই আকাশে ফুটে উঠেছে। তার আলো যেনো আইরাতের মুখের ওপর এসে পরেছে। খোলা বাতাসে চুল গুলো উড়ে যাচ্ছে। তখনই আব্রাহাম আসে। আইরাত পেছনে তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের হাতে দুই কাপ গরম ধোঁয়া ওঠানো কফি। আব্রাহাম এসে আইরাতের পাশে দাঁড়িয়ে পরে। একটা কফির মগ আইরাতের দিকে এগিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; এই নাও।
আইরাত;; তো আমাকে বললেই হতো আমি বানিয়ে আনতাম।
আব্রাহাম;; তুমি বানাও আমি বানাই একই কথা। এখন খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।
আইরাত;; হুমমম, অনেক ভালো।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; থাংকু জামাইজান।
আব্রাহাম;; কি কি?
আইরাত;; জামাইজান।
আব্রাহাম;; এটা আবার কেমন নাম?

আইরাত;; কেনো আপনি যখন আমাকে বেবিগার্ল & জানপাখি বলে ডাকেন তখন? তখন কি আমি আপনাকে কিছু বলি? বলুন বলি আপনাকে কিছু? বলি না তাই তো। তো এখন থেকে আমি আপনাকে “জামাইজান” বলে ডাকবো। কেমন নামটা?
আব্রাহাম;; খারাপ বললে তো তুমি আমায় আর আস্তো রাখবেই না তাই অসাধারণ-আনকোমন একটা নাম।
আইরাত;; ??।
দুজনেই বসে বসে কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে। কফি খেতে খেতেই হঠাৎ আইরাত বলে ওঠে…

আইরাত;; আচ্ছা আপনার কাছে আম্মুর ছবি নেই?
আব্রাহাম;; আছে তো মাত্র একটা।
আইরাত;; আমি দেখবো, আমি দেখবো।
আব্রাহাম উঠে গিয়ে তার কাবার্ড থেকে একটা বক্স বের করে। সেটা নিয়ে আইরাতের সামনে বসে।
আইরাত;; ওয়াও বক্স টা অনেক সুন্দর।
আব্রাহাম;; এটা আম্মুরই বক্স ছিলো একসময়।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।

আব্রাহাম একটা ছবি বের করে। এটা অনেক পুরনো একটা ছবি। তখন আব্রাহামও অনেক ছোট। আব্রাহাম ছবিটা আইরাতের দিকে এগিয়ে দেয়।
আইরাত;; এটা আম্মু?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; আর এটা আপনি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; আম্মু দেখতে অনেক সুন্দর ছিলো।
আব্রাহাম;; অনেক বেশি।
আইরাত;; এটা আপনি। হাহাহাহা,, হাহাহাহা। আপনি ছোট বেলা মোটু ছিলেন?
আব্রাহাম;; আর শুধু মোটা না, এতোই টাই মোটা ছিলাম যে কেউ কোলেই নিতে পারতো না। আর আমিও আম্মুর ছাড়া আর কোলে যেতাম না।

আইরাত;; আয় হায় কি কিউট। আপনি এত্তো গোলুমোলু ছিলেন। গাল গুলো কি মোটা মোটা ছিলো। আর আপনি এমন মুখ গোমড়া করে দিয়ে রেখেছেন কেনো ছবিতে। ছোট থেকেই রাগি ছিলেন নাকি?
আব্রাহাম;; আমার চেহারাই ওমন ছিলো। চুপ করে থাকলেও ভাবতো সবাই রেগে আছি।
আইরাত;; সিরিয়াসলি আপিনি এতো বেশি গোলুমোলু ছিলেন। ইশশশশ রোসগোল্লা পুরা।
আব্রাহাম;; নজর কেনো লাগাচ্ছো।

আইরাত;; আহা আমি ভাবতেও পারি না যে এই ছোট মোটু বাচ্চা টা এখন আমার জামাই। কিন্তু ছোট বেলা যে মোটু সোটু ছিলেন এখন তার থেকে বেশি বডি আপনার।
আব্রাহাম;; হুমমম। আম্মুর আর আমার এই একটাই ছবি আছে আমার কাছে।
আইরাত;; ওও।

আইরাত নিজেই উঠে আব্রাহামের হাত থেকে বক্স টা নিয়ে তাতে ছবি টা রেখে কাবার্ডে তুলে রাখে। এসে আবার আব্রাহামের সামনে বসে। আব্রাহামের মুখ টা কেমন মলিন। আইরাত বুঝলো আব্রাহামের তার মায়ের কথা মনে পরছে। আইরাত হেসে দিয়ে আব্রাহামের গাল গুলো হালকা ভাবে টেনে দেয়। আব্রাহাম হেসে দেয়।
আইরাত;; এই শুনুন না আপনি আবার আগের মতো গোলুমোলু হয়ে যান না। আমি শুধু আপনাকে গুতাবো।
আব্রাহাম;; আমি যেই কাজ গুলো করি বা যেই প্রফেশনের সাথে আছি তার সাথে এমন গোলুমোলু বডি যায় না বেবি। ( আইরাতকে নিজের কোলে বসিয়ে)

আইরাত;; হুমম।
আইরাত আব্রাহামের গালে চুমু খায়।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন না!
আব্রাহাম;; বলো।
আইরাত;; আপনি গান গাইতে পারেন?
আব্রাহাম;; আমার লাইফের ফার্স্ট চয়েজ ছিলো রকস্টার হওয়া।
আইরাত;; কিইইইইইই সত্যি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; তাহলে হলেন না কেনো?
আব্রাহাম;; সিচুয়েশন কিছুটা আমার ইচ্ছের বিপরীতে ছিলো তাই হই নি।
আইরাত;; আর এছাড়াও আপনি এখন কম কিসে।
আব্রাহাম;; আরে তেমন কিছুই না।
আইরাত;; আচ্ছা আমি গান শুনবো।
আব্রাহাম;; এখন?
আইরাত;; হ্যাঁ এখনোই মানে এখনইইইইইই।

আইরাত আব্রাহামের সাথে জেদ ধরে বসলো। আব্রাহামের আর কি করার সে উঠে গিয়ে একটা গিটার বের করে আনে। আইরাত জানতো না যে আব্রাহাম গিটার বাজাতেও জানে। গিটার টা ব্লেক & ব্রাউন কালারের। অনেক সুন্দর। আব্রাহাম গিটার টা এনে জানালার পাশে বসে পরে আর তার সামনে আইরাত।
আইরাত;; আপনি গিটার বাজাতে পারেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; আমি জানতাম না।
আব্রাহাম;; এখন তো জানো।
আইরাত;; আর কি কি হিডেন ট্যালেন্ট আছে আপনার মাঝে ??

আব্রাহাম;; আর কিছুই নেই। জানো এই গিটার টাও আম্মুর দেওয়া। আমার ছোট থেকেই এই সব রকস্টার, তারপর সিংগিং এগুলোর প্রতি ঝোক ছিলো। এখন বর্তমানে আমার লাইফ টা সবার থেকে আলাদা হলেও আমার ছোটবেলে টা কেটেছে আর বাকি ৮-১০ টা নরমাল বাচ্চার মতোই। একদিন আম্মুকে অনেক জোর করি একটা গিটার কিনে দেওয়ার জন্য। অনেক কান্নাও করেছি। হাহাহাহাহাহা,, কিন্তু আম্মু দিতে রাজি ছিলো না এই ভেবে যে এই গিটার পেয়ে যদি আমার পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে। কিন্তু একদিন আমি বেশ রাগ করলাম। তার একদিন পরেই আমার বার্থডে ছিলো তখনও মুখ গোমড়া করে দিয়ে বসে ছিলাম। কিন্তু রাত বারো টায় আমার মা আমাকে এই গিটার টা দিয়ে প্রথম উইস করে। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।

আইরাত;; ?❤️।
আব্রাহাম;; আমার মায়ের দেওয়া এটাই শেষ স্মৃতি আমার কাছে। আমি এটাকে খুব যত্নের সাথে রেখেছি। আগে বাজানো হলেও এখন তেমন বাজানো হয় না। বলতে পারো এটা আমার জন্য লাকি।
আইরাত;; আব্রাহাম এখন তো গাইতেই হবে।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন গাচ্ছি।

আইরাত গিয়ে রুমের লাইট টা অফ করে দিলো। আর একদম হালকা আলোর একটা লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আসলো। জানালার থাই গ্লাস আরেক টা খুলে দিলো। এবার যেনো বাইরের ল্যাম্পপোস্টের সব আলোই রুমে এসে উঁকি দিয়েছে। গ্লাস মেলে দাড়াতেই এক দমকা বাতাস আইরাতের মুখে আছড়ে পরে। মূহুর্তেই ঘরটার পুরো পরিবেশ পালটে গেলো। আব্রাহাম আর আইরাত নিচে ফ্লোরেই বসে পরে। আব্রাহাম গিটার টা হাতে নিয়ে বসে। আর তার সামনে আইরাত দুই গালে হাত দিয়ে অধীর আগ্রহে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। কখন আব্রাহাম গান গাবে আর কখন সে শুনবে। আব্রাহাম প্রথমে গিটারে টুং টাং আওয়াজ তুলে তারপর বাজাতে শুরু করে।

আব্রাহাম;;
Hmmm… Hmmm… Hmmm… Hmmm……
“Tujhse hi to mile hain rahat
Tu hi to meri hain cahat
Tujhse hi to judi zindegi ?
~~Teri yadein hain kuch adhoori
Saans adhi hain, kuch hain poori
~Ankhoon main hain kaise ye nami ?
“~Mera maan, kehne laga
Paas aake na tu door jaa ?
~Chhoone dee, honth tere
Zara saanson main apni basa aaa ??…..
Hmmm…Hmmm…Hmmm…Hmmm…
“Tujhe aapna bana loon
Tujhe tujhse chura loon
~Tujhe khud main chhupa loon Sahiba! ??
“Ek mujhpe karam ho
Tuhi mera sanam ho ~
~Teri mujhpe nazar ho Sahiba! ??
Hmmm…Hmmm…Hmmm…Hmmm…
Aaaaa…Aaaaa…Aaaaa…Aaaaa…
~~Maar main jaunga, rehna paaun
Gham judai ka sehna paaun
Aye tujhe peyaar ka vaasta“ ❤️✨
~~Teri yadein hain kuch adhoori
Saans adhi hain, kych hain poori
Ankhoon main hain kaise ye nami“ ?
“Raat ke chaand tale ?✨
❣️Aagosh main meri tu aa ~
Bahoon main le lo mujhe
Zara shapno main apni basa ~~
~~Mera maan, kehna laga
Paas aake na tu door jaa“ ?
~`Chhoone de, honth tere
Zara saansoon main apni basa aaa ??✨..
~Hmmm…Hmmm…Hmmm…Hmmm…
Aaaaa…Aaaaa…Aaaaa…Aaaaa……

আব্রাহাম তার যতক্ষণ গান টা গাচ্ছিলো তার সম্পূর্ণ সময় ধরেই আইরাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো। প্রতিটা লাইনে, গানের প্রতিটা শব্দে তার আইরাত মিশে ছিলো। তাকে ভেবেই ভেবেই গান টা গাওয়া। শেষ হলে আব্রাহাম গিটার টা রেখে দিয়ে আইরাতের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; কি এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
আইরাত;; I still can’t believe this… আপনি এত্তো সুন্দর গান কীভাবে মানে কীভাবে?
আব্রাহাম;; আরে এমনি মাঝে মাঝে শুধু মন চাইলে গাইতাম আর কিছুই না। আর যখন ফ্রেন্ডরা একসাথে হতাম তখনই। মাঝে মাঝে ভার্সিটিতে।

আইরাত;; ইইইইইইইইইইইইই ?। এত্তো কিউট ছিলো। সিরিয়াসলি আপনার গানের গলা অনেক বেশি সুন্দর। আর এখন বুঝতে পারছি যে কেনো কলেজের মেয়েরা আপনার ওপর মরতো।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; আপনি তো এবোর্ডে পড়াশোনা করেছেন তাই না। সেখানে হয়তো কখনো গেয়েছেন। আর কেউ তখন আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে না তা তো হয় না তাই না। সো সেখানের মেয়েরা অবশ্যই তাকিয়ে থাকতো।
আব্রাহাম;; জানপাখি তুমি কার সাথে কি বলছো?
আইরাত;; এটাই বলছি যে আপনি শুধু আমার। আর আপনি শুধু আমার জন্যই গান গাবেন বুঝলেন। এত্তো সুন্দর গান গান আপনি ?।
আব্রাহাম;; হয়েছে এবার চলো।

আব্রাহাম আইরাতের সেইদিন এভাবেই চলে যায়। পরেরদিন হয়। আর আজ থেকেই আব্রাহাম কে অফিসে যেতে হবে। বিয়ের এই সব দৌড় ঝাপের জন্য পুরো এক সপ্তাহ অফিসে যাওয়া হয় নি। তবে আজ কোন উপায় নেই আজ যেতেই হবে। আর এর জন্য আইরাতের মন খারাপ কেননা আব্রাহাম চলে গেলে আইরাত পুরো একা। দাদি আছে তবে উনার তো রেস্ট নিতে হয়। আইরাত প্রথমে মানা করেছিলো আব্রাহাম কে অফিসে না যেতে। কিন্তু আব্রাহাম আইরাতকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে অফিসে চলে যায়। যাওয়ার সময় আইরাত মুখ টা লটকিয়ে দিয়ে আব্রাহাম কে বায় বায় বলে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে আবার নেমে এসে আইরাতের কপালে গালে ইচ্ছে মতো চুমু দিয়ে আবার গাড়িতে এসে বসে। আইরাত হেসে দিয়ে আব্রাহামকে বিদায় জানায়।

আব্রাহামের যাওয়ার পর আইরাতের সারাটা দিন যে কীভাবে কেটেছে তা একমাত্র সেই জানে। ইলার সাথে আইরাতের বেশ গল্প হয়। কিন্তু ইলা মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। আইরাত আবার একা। আইরাত করিডরে চলে যায়। করিডর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছু ছোট ছেলেমেলেরা খেলছে। তাদের দেখেই আইরাতের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। আইরাত দ্রুত নিচে চলে যায়।

আর ওদিকে আব্রাহাম অফিসের সব কাজ শেষ করে দ্রুত বাড়ি যাওয়ার জন্য বাইরে বের হয়ে পরে। এখন বিকেলের শেষ বেলা। একসময় আব্রাহাম এসে তার বাসায় সামনে থামে। বাড়ির ভেতরে বাগানের সাইড থেকে বেশ চিল্লা-পাল্লার আওয়াজ আসে। আব্রাহাম কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়। চোখের সানগ্লাস টা খুলে ভেতরে চলে যায়। বাগানের ভেতরে যেতেই আব্রাহাম যা দেখে তাতে সে কি করবে বা কি বলবে খুঁজে পায় না। কারণ আইরাত তার চোখে একটা কাপড় বেধে ছোট ছোট বেশ কিছু বাচ্চার সাথে কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলছে।

আর আইরাতের চারিদিকেই বাচ্চাকাচ্চা গুলো ছুটো ছুটি করছে। আইরাত তাদের ধরার ব্যার্থ চেষ্টা করছে। আশে পাশে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর বাচ্চা গুলো খুশিতে লাফাচ্ছে। আইরাতও চিল্লাচ্ছে আর খেলছে বাচ্চাদের সাথে। আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা গুলো ফোল্ড করতে করতে আইরাতের সামনে এগিয়ে গেলো। বাচ্চা গুলো আইরাতকে বলে দিতে ধরলে আব্রাহাম সব বাচ্চাদের হাতের ইশারাতে চুপ করে থাকতে বলে। বাচ্চাগুলো মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে যায়। আব্রাহাম যেই না আইরাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তখনই আইরাত আব্রাহামকে ধরে ফেলে।
আইরাত;; এইইইই ধরেছি ধরেছি ধরেছি ধরেছি।

আইরাত আব্রাহামের হাত-বুক ছুইয়ে দেখে বেশ হাট্টা-কাট্টা একজন আইরাত তার চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে ফেলে। দেখে আব্রাহাম। আইরাত তাকে দেখে হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
আইরাত;; জামাইজান।
প্রায় সন্ধ্যা নেমে এলে বাচ্চাগুলো আইরাতকে বিদায় জানিয়ে এসে পরে।
আইরাত;; এই এই তোরা সবাই শোন কাল আবার এখানে আসবি কিন্তু ঠিকআছে। সবাই আসবি আবার খেলবো ওকে। আর শোন কাল আসলে সবাইকে এত্তো গুলা চকোলেট দেওয়া হবে বুঝলি। এখন সবাই জলদি বাড়ি যা।
বাচ্চাগুলো সবাই দৌড়ে চলে যায়। আইরাতের এমন কান্ড দেখে আব্রাহাম বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; এক বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছি আমি।
আইরাত;; হ্যাঁ ভালো হয়েছে।
আব্রাহাম;; এই সন্ধ্যা হয়ে গেছে ভেতরে চলো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে আসে। আইরাত বাইরে আরো থাকতে চাইলে আব্রাহাম তাকে এক রকম ঠেলে জোর করেই ভেতরে নিয়ে যায়।

এভাবেই মাঝখানে আরো ৩-৪ দিন কেটে গেলো। সব কিছু ভালোই ভালোই চলছে। আব্রাহাম অফিসে যায় আবার আসে। আইরাত কে টাইম দেয় অনেক। মাঝে মাঝে তো আইরাত থাকতে না পেরে কাউকে কিছু না বলেই সোজা আব্রাহামের অফিসে টপকে পরে। এভাবেই হাসি-খুশিতেই সবার জীবন চলছে। তবে আজ আব্রাহামের অফিসের অফ ডে তাই সে বাড়িতে। আইরাত বসে বসে চিপস খাচ্ছে তখনই হঠাৎ আব্রাহাম বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; আচ্ছা, আমাদের বিয়ের কদিন হলো?
আইরাত;; কিসের কদিন? ১ মাসই তো হয়নি।
আব্রাহাম;; হুমম। আচ্ছা তো হানিমুনে কবে যাচ্ছি আমরা?
আইরাত;; হানিমুন?
আব্রাহাম;; হুমম
আইরাত;; যাচ্ছি না।
আব্রাহাম;; হেই মানে কি?
আইরাত আব্রাহামের দিকে ঘুড়ে বসে।

আইরাত;; বাসায় দাদি একা। কীভাবে থাকবেন? আর আপনার অফিস আছে, সেখানে সেগুলো কে সামলাবে। কত্তো কাজ এইদিকে এগুলো ফেলে দূরে যাবো কীভাবে?
আব্রাহাম;; আমরা কি ওখানে আজীবন থাকতে যাচ্ছি নাকি?
আইরাত;; ওকে ফাইন আপনি কোথায় যেতে চাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; সুইজারল্যান্ড।
আইরাত;; মালদ্বীপ”স বা বালি তে গেলে কি সমস্যা?
আব্রাহাম;; আমার ড্রীম সিটি সুইজারল্যান্ড আর হ্যাঁ আইসলেন্ডও।
আইরাত;; প্যারিস?
আব্রাহাম;; সুইজারল্যান্ড।
আইরাত;; আমরা বাংলাদেশেই থাকবো। আর হানিমুনও এখানেই হবে। আর আজই হানিমুনে যাবো।

আব্রাহাম;; মানে কি?
আইরাত;; আসুন।
আব্রাহাম;; কিন্তু!
আইরাত;; আরে আসুন তো।
আইরাত আব্রাহাম কে নিয়ে কাবার্ডের সামনে দাড় করিয়ে দেয়। তারপর আইরাত আব্রাহামের দিকে একটা ডার্ক ব্লেক কালারের পাঞ্জাবি এগিয়ে দেয়।
আইরাত;; এই নিন।
আব্রাহাম;; ???

আইরাত;; একদিনে তো আর ৬৪ জেলা পাড়ি দেওয়া সম্ভব না তাইনা। তাই আজ আমরা আমাদের শহর টা ঘুড়বো।
আব্রাহাম;; এই শহর লাইক সিরিয়াসলি?
আইরাত;; আব্রাহাম, নাক কুচকানো বন্ধ করুন তো। আর আমাদের হানিমুন টা সবার থেকে বেশি সুন্দর আর আলাদা রকমের হবে বুঝলেন।
আব্রাহাম;; আব..আচ্ছা।
আইরাত;; আপনি এই কালো পাঞ্জাবি টা পরবেন আর আমি পরবো এই যে এই কালো শাড়ি টা।
আব্রাহাম;; আচ্ছা ঠিকআছে।

যেই ভাবা সেই কাজ আব্রাহাম রেডি হয়ে গেলো। কালো পাঞ্জাবি, হাতে কালো ঘড়ি, চুল গুলো যেনো আপনা আপনিই বাতাসে ডুলছে। আর মুখে থাকা সেই ঘন চাপদাড়ি। আহা, লুক লাইক ব্লেক চার্মিং প্রিন্স। আব্রাহাম তার পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে রুমে আসে। তবে সে সামনে তাকাতেই থমকে দাঁড়ায়। আইরাতকে দেখে। আইরাত একদম কালো কালারের একটা শাড়ি পরেছে তাতে ছোট ছোট বেশকিছু সাদা স্টোন। হাতে এত্তো গুলো কালো চুড়ি। মাথার চুল গুলো পেছনে খোপার মতো করে বেধে নিয়ে কপালের সাইড দিয়ে কিছু চুল বের করা। আইরাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো কারো রুমে আসার শব্দ পেয়ে পেছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত তাকে দেখে হেসে দেয়। আব্রাহামের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়…

আইরাত;; কেমন লাগছে?
আব্রাহাম;; তোমার কাজল টা দাও।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ কাজলটা আমাকে দাও।
আইরাত;; কিন্তু আমি চোখে কাজল পরেছি তো।
আব্রাহাম;; আহা দাও না।
আইরাত কাজল টা এনে আব্রাহামের হাতে দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম তার কানি আঙুলে সামান্য কিছু কাজল নিয়ে আইরাতের কানের পেছনে লাগিয়ে দেয়।

আইরাত;; এটা কি ছিলো?
আব্রাহাম;; যে পরিমাণ কিউট লাগছে কেউ নজর দিলে পরে আমার সমস্যা হবে।
আইরাত;; আয় হায়, ফ্লার্টিং লেভেল হাই।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, বলতে পারো।
আইরাত;; এখন আমি কি করবো আপনাকে বোরকা পরাবো?
আব্রাহাম;; এটা কোন কথা?
আইরাত;; হ্যাঁ এটাই কথা,, আপনি এত্তো পরিমাণে সুদর্শন হবেন পরে সব মাইয়া মানুষ আপনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে তখন আমি, আমার কি হবে?

আব্রাহাম;; আরে ধুর রাখো তো। চলো।
আব্রাহাম-আইরাত ইলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম যেই না গাড়ির চাবি দিয়ে লক খুলতে যাবে তখনই আইরাত তার হাত ধরে টান দেয়।
আইরাত;; আজ আমরা গাড়িতে যাবো না।
আব্রাহাম;; তাহলে?
আইরাত;; আজ আমরা রিকশা তে করে ঘুড়বো।
আব্রাহাম;; তাহলে গার্ড দের সাথে নিয়ে যেতে হবে।
আইরাত;; কিন্তু কেনো?
আব্রাহাম;; তো কি আমি এভাবে একা বের হবো নাকি?

আইরাত;; আচ্ছা নিয়ে নিন।
আব্রাহাম;; আরে আমরা আমাদের মতো করেই থাকবো ওরা জাস্ট আমাদের আশে পাশে থাকবে আর কিছুই না।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহামের গার্ড রাই একটা রিকশা ডেকে আনে তারপর আব্রাহাম আর আইরাত রিকশা তে উঠে পরে। আইরাতের এক হাত আব্রাহামের এক হাতের ভাজে।
আব্রাহাম;; তো কোথায় যাবো আমরা?
আইরাত;; আগে কিছুক্ষন রিকশা তে করে ঘুড়ি তারপর।
আইরাত আর আব্রাহাম কমপক্ষে ৩০ মিনিট রিকশা করে ঘুড়েছে। তবে ঘুড়তে ঘুড়তেই হঠাৎ আব্রাহাম রিকশা থামিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; এইযে চাচা রিকশা থামান।
আইরাত;; কোথায় যাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; আসছি দাড়াও।
আব্রাহাম নেমে সোজা চলে যায়। কিছুক্ষন পর হাতে একটা বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আইরাত;; কোথায় গিয়েছিলেন?
আব্রাহাম;; এটা আনতে।
আইরাত;; বেলী ফুল।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এবার এদিকে এসো।
আব্রাহাম রিকশা তে উঠে পরে তারপর নিজ হাতে আইরাতের খোপায় বেলী ফুলের মালা টা পরিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; এবার পারফেক্ট লাগছে দেখতে।
আইরাত;; থাংকু জামাইজান।

রিকশা আবার চলতে লাগলো। সোজা রাস্তা, তার আশে পাশে প্রচুর গাছ-গাছালি তার ওপর খোলা হাওয়া। আর নিজের প্রিয়জনের হাতটি ধরে রিকশা করে ঘুড়ে বেড়ানো। আর কি লাগে। এবার আইরাত-আব্রাহাম রিকশা থেকে নেমেই পরলো। তারা গিয়ে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে পরে। গাছে কিছু সবুজ পাতা আর সম্পূর্ণই ফুলে ফুলে ভরা। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেও প্রায় অনেক ফুল পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। জায়গা টা ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে। আইরাতের এতোসব কিছু দেখে এখন যেনো লাফাতে মন চাইছে। আইরাত গিয়ে ঠিক গাছের নিচটায় বসে পরে। আর আব্রাহাম তখনই এসে ফট করে আইরাতের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে। আইরাত তার আলতো হাতে আব্রাহামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

আইরাত;; জায়গা টা অনেক সুন্দর না??
আব্রাহাম;; তোমার থেকে বেশি না।
আইরাত;; হয়েছে থাক।
আব্রাহাম;; এই মাথা থেকে হাত সরালে কেনো।

আব্রাহাম আইরাতের হাত টা টেনে আবার তার মাথায় রেখে দেয়। জায়গা টা খোলা মেলা। তেমন কোন মানুষ জন নেই। পাখিদের কিচিরমিচির গুলো কানে এসে বাজছে। একটা ছোট্ট মেয়েকে দেখে আইরাত। সে ফুল ব্রিক্রি করে। তার কাছ থেকে আইরাত অনেক গুলো গোলাপফুল আর কদমফুল নেয়। বাদাম বিক্রেতা আসলে তারা ৫-১০ টাকার বাদাম পর্যন্ত কিনে খেয়েছে। এভাবেই তারা সেখানে কিছুক্ষন বসে থেকে তারপর চলে যায়। কিছুটা বাইরে আসতেই আইরাত খুশিতে গদগদ করে বলে ওঠে….

আইরাত;; ইইইইইই, আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; কি হলো জানপাখি?
আইরাত;; ওইযে দেখুন।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; ফুচকা ফুচকা।
আব্রাহাম;; না না এটা খাওয়া যাবে না। এগুলো প্রচুর শরীরের জন্য খারাপ৷ খাওয়া যাবে না।
আইরাত;; কি খেতে দিবেন না? খেতে দিবেন না আপনি আমাকে? আচ্ছা ঠিকআছে আমিও বাড়ি যাবো না। এখানেই রাস্তায় বসে থাকবো।

আব্রাহাম;; কি এক মুশকিল রে বাবা। আরে…
আইরাত;; ফুচকা খেতে না দিলে আমি বাড়ি যাবোই না।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন চলো।
আইরাত;; ??
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে ফুচকার দোকানে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর ফুচকা এসে হাজির হলো।
আইরাত যেনো নিজের জীবন তার হাতে পেয়েছে। গপাগপ খেতে লাগলো। আব্রাহাম শুধু কোমড়ে দুই হাত দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আব্রাহাম কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আইরাত বলে ওঠে….
আইরাত;; আমার যদি পেটে সমস্যা হয়েছে তারপর আপনার একদিন কি আর আমার যতদিন লাগে বুইঝেন। এভাবে নজর দিচ্ছেন কেনো?

আব্রাহাম;; কীভাবে খাও এগুলো?
আইরাত;; আরে হুম হুম ধরুন আপনিও খান একটা।
আব্রাহাম;; এই না না না না।
আইরাত;; খাবেন মানে খাবেন। ধরুন।
আব্রাহাম;; আরে কিন্তু।
আইরাত;; হা করুন।
আইরাত জোর করেই আব্রাহামের মুখে একটা ফুচকা পুড়ে দেয়। আব্রাহাম কোন রকমে সামলায়।
আইরাত;; কেমন লাগলো?
আব্রাহাম;; হুমম হুমম টেস্ট গুড কিন্তু…

আইরাত;; কিন্তু ভালো। নিন আরেকটা খান আর আমার মতো হয়ে যান।
আব্রাহাম;; জ্বি না ম্যাডাম আমার দরকার নেই আপনিই খান।
আইরাত একটা ভেংচি কেটে আবার নিজের খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেয়। তখনই আকাশ টা কেমন মেঘলা মেঘলা হয়ে আসে। হয়তো বৃষ্টি নামবে। আইরাত গুনে গুনে চার প্লেট ফুচকা খেয়েছে।
আব্রাহাম;; খাওয়া হয়েছে নাকি আরো আছে?
আইরাত;; আমি তো চাইছিলাম আরো খাবো কিন্তু কে জানে আপনি কখন আমার ওপর ঠাডা ফেলে দেন তাই আর না।
আব্রাহাম;; হুম বুঝলাম।

আইরাত;; এই ফুচকাওয়ালা মামা শুনুন আপনি তো আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর বাড়ির চিনেন তাই না। উনার বাড়ি কেই না চিনে। শুনুন প্রতিদিন বিকেল বেলা আপনি সেখানে চলে যাবেন কেমন। গার্ড দের আমি বলে রাখবো। আপনার এক মাসে যত টাকা লাভ না হয় তা একদিনে লাভ হয়ে যাবে। মানে আমি খেয়ে ফেলবো আর কি। আপনি রোজ আমার জন্য বিকেলবেলা ফুচকা নিয়ে যাবেন কেমন?

ফুচকাওয়ালা;; জ্বে আইচ্ছা মা।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম কিছু বলে না শুধু আইরাতের কান্ড দেখে যাচ্ছে। তখনই আকাশে বিদ্যুৎ চমক দেয়। আইরাত আর আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসে।
আব্রাহাম;; এখন কোথায় যাবে?
আইরাত;; হুম এখন আমরা যাবো টং এর দোকানে চা খেতে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এটা খাওয়াই যায়।
আব্রাহাম-আইরাত সোজা টং এর দোকানে চলে যায়।

তখনই ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমে এলো। পরিবেশ টাকে আরো শীতল বানিয়ে দিলো। আব্রাহাম আর আইরাত একটা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরম চা খাচ্ছে। পাশেই বিভিন্ন ভাজাপোড়া জাতীয় জিনিস ভাজা হচ্ছে। শূন্য রাস্তায় বৃষ্টির পানির গুলোর শব্দ কানে আসছে। আবহাওয়া টা কেমন বৃষ্টি ভেজা হয়ে গেলো।
আব্রাহাম;; কেমন লাগছে?
আইরাত;; অনুভূতি টা ভাষ্যহীন। প্রকাশ করা যায় না। বৃষ্টি ভেজা দিনে এমন টং দোকানের চা তাও আবার জামাইয়ের সাথে আহা ?।

আব্রাহাম আইরাতের কথায় হেসে দেয়। এভাবেই সারাটাদিন চলে যায় তাদের। পাঁচ টা হাওয়াই মিঠাই কিনেছে আইরাত। পাঁচ টা হাওয়াই মিঠাই পাঁচ আলাদা আলাদা রঙের। সন্ধ্যা নেমে এলে আব্রাহাম-আইরাত বাড়ি ফিরে আসে।
আইরাত;; তো দিন টা কেমন লাগলো?
আব্রাহাম;; অনেক বেশি ভালো ছিলো।
আইরাত;; আপনার সুইজারল্যান্ডের শখ মিটিছে?
আব্রাহাম;; না তা তো মিটে নি। বাট এটা আমার লাইফের বেস্ট দিন ছিলো। কারণ আমার কাছে তুমি ছিলে।
আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম আইরাতের কপালে চুমু একে দেয়।
আইরাত রুমের ভেতরে চলে যায়। ভেতরে যেতেই আইরাতের মাথা টা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। ঝিমঝিম করছে। আইরাত টাল সামলাতে না পেরে কিছুটা পরে যেতে নিলেই আব্রাহাম এসে ধরে ফেলে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ঠিক আছো? কি হলো?
আইরাত;; জানি না কেনো জানি মাথা কিছুটা চক্কর দিয়ে উঠলো।
আব্রাহাম;; আচ্ছা তুমি বসো এখানে।
আব্রাহাম আইরাতের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিলে আইরাত ঢকঢক করে পানি টা খেয়ে নেয়।
আব্রাহাম;; এখন ঠিক আছো?

আইরাত;; হ্যাঁ ঠিক আছি।
আব্রাহাম;; হঠাৎ মাথা ঘুড়ালো কেনো?
আইরাত;; জানি না।
আব্রাহাম;; আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।
তখনই আব্রাহামের ফোনে কারো ফোন আসে। আব্রাহাম দ্রুত তা রিসিভ করে। হঠাৎ কথা বলতে বলতেই আব্রাহামের চোখ মুখ কেমন শক্ত হয়ে আসে। যেনো প্রচন্ড রাগ পেয়েছে। আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। দ্রুত চেঞ্জ করে নিজের জেকেট টা পরতে পরতে বাইরে বের হয়ে আসে।
আইরাত;; আব্রাহাম কোথাও যাচ্ছেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ এসেছে তো যেতে হচ্ছে। তুমি নিজের খেয়াল রাখো দরকার পরলে দাদির কাছে যাও।

আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাতকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আব্রাহাম দ্রুত পায়ে হেটে বাইরে চলে যায়।
এদিকে আইরাত এই ভাবছে যে ভালোই তো ছিলো হুট করেই আবার এতো রেগে গেলো কেনো। যাই হোক আইরাত চেঞ্জ করে ইলার কাছে চলে গেলো। আইরাতের প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিলো তাই ইলা তার মাথায় তেল মালিশ করে দিতে লাগলো। ইলা তো বেশি রাত জাগতে পারে না তাই আইরাত তাকে রাতের খাবার সহ মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে আসে। তিনি এখন ঘুম। তবে ঘড়ির কাটা ঘুড়িয়ে দেখতে দেখতেই রাত ১১ টা বেজে গেলো।

তবুও আব্রাহামের আসার কোন নাম-গন্ধ নেই। এই যে সন্ধ্যারাতের দিকে বের হয়েছিলো। গেলো কোথায়?। আইরাত আব্রাহামের জন্য খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে অনেকক্ষণ বসে ছিলো। আব্রাহাম আসছে না দেখে আইরাত মন টা কালো করে ওপরে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তারপর চলে গেলো আরো এক ঘন্টা। এখন বাজছে ১২ঃ০৭ মিনিট। আইরাত করিডরে দোলনাতে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়েই পরেছিলো কিন্তু তখনই বাইরে গাড়ির হর্ণের শব্দ হয়।

আইরাতের ঘুম ভেঙে যায়। ফট করে চোখ মেলে নিচের দিকে উঁকি দিয়ে দেখে বাড়ির গেট দিয়ে আব্রাহামের গাড়ি ভেতরে আসছে। তারমানে আব্রাহাম এসে পরেছে। আইরাত খুশি হয়ে যায় কিন্তু তারপরেই মনে জায়গা নেয় একরাশ অভিমানের। আইরাত রুমে এসে পরে। আইরাত ভাবে যে নিচে যাবে কি যাবে না। রাগের ফলে সে ভেবেই নেয় যে যাবে না। কিন্তু আর থাকতে না পেরে আইরাত বাইরে যেতে ধরলেই আব্রাহাম সামনে এসে পরে। আইরাত আব্রাহামকে দেখে কিছুটা ভয়ই পায়। কেননা আব্রাহামের চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।

আইরাতের এবার চোখ যায় আব্রাহামের হাতের দিকে। আর আব্রাহামের হাত গুলো দেখতেই আইরাতের বুক টা ভয়ে ছাত করে উঠে। কারণ আব্রাহামের দুইহাতেই রক্ত। আইরাত একবার আব্রাহামের হাতের দিকে আরেকবার তার দিকে তাকায়। আব্রাহামের হাত এমন রক্তেভেজা কেনো। কাকে মেরে এসেছে আব্রাহাম? আব্রাহাম আইরাতকে দেখে বুঝলো যে সে কিছুটা ভয় পেয়েছে। আব্রাহাম গিয়ে নিজের হাত গুলো পরিষ্কার করে নেয়। আব্রাহাম যেই না আইরাতকে কিছু বলতে যাবে তখনই আইরাত মাথা ঘুড়িয়ে নিচে পরে যায়। আব্রাহাম আইরাতের নাম ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। দ্রুত গিয়ে আইরাতের মাথা টা নিজের কোলে তুলে নেয়।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪০+৪১+৪২

আব্রাহাম;; আইরাত, আইরাত বেবিগার্ল। আইরাত চোখ খুলো আইরাত। কি হলো হুট করেই। আইরাত, আইরাত।
আব্রাহাম এক নাগারে আইরাতকে ডেকেই চলেছে কিন্তু আইরাতের কোন খেয়াল নেই। তখনই রুমে ইলা আসে।
ইলা;; আইরাত? আব্রাহাম কি হয়েছে আইরাতের?
আব্রাহাম;; জানি না দাদি। অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো হুট করেই। আইরাত চোখ খুলো জানপাখি আমার প্লিজ চোখ খুলো।

ইলা;; আমি তো ঘুমিয়েই পরেছিলাম কিন্তু ঘুম ভেঙে যায় আমার। আর তুই তো রাতে দেরি করে আসিস তাই ভাবলাম যে আইরাতকে এক নজর দেখে আসি।
আব্রাহাম;; যখন আমরা বাইরে থেকে আসি তখনও আইরাতের মাথা হাল্কা ঘুড়াচ্ছিলো।
ইলা;; আর তুই বাসা থেকে চলে যাবার পর আইরাত দুই বার বমি করেছে।
আব্রাহাম;; কি?
ইলা;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম আইরাতকে কোলে করে বিছানাতে শুইয়ে দেয়। দ্রুত ডক্টর কে ফোন দেয়। আব্রাহামের চিন্তায় মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। এখনো আইরাতের কোন হুস খেয়াল নেই। অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে। আর আব্রাহামেরই ভুল হয়েছে তার একটু কেয়ারফুল হওয়া উচিত ছিলো। আইরাত যে এগুলো খুন-খারাবা দেখে ভয় পায় রাগে তা মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো আব্রাহামের। আব্রাহাম আইরাতের হাত টা নিজের দুহাতে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮