পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩৭

পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩৭
মম সাহা

রহস্যের বেড়াজালঃ সাঁইত্রিশ
দীর্ঘ ব্যাথাতুর এক নিকষ কালো রাত্রি যাপনের পর মায়া এখন ফুরফুরে সুস্থ। সকাল হতেই বাড়ি চলে এসেছে তারা। এখন হসপিটালে থেকেও তো কোনো লাভ নেই, ডোনার না পাওয়া অব্দি আর কিছুই করার নেই চিকিৎসকদের। আর বাড়ি ফেরার জন্য মোহনা-ই চাপটা বেশি প্রয়োগ করেছে। যেহেতু হসপিটালে থেকে কাজ নেই তাই মোহনার সিদ্ধান্তকেই সবাই গ্রহনযোগ্য মনে করেছে।

এখন সময়টা ঠিক উষ্ণ মধ্যাহ্ন। মায়া আবার চিলেকোঠার ঘরে হানা দিয়েছে। অসুস্থতার কথা জানার পর মায়া হঠাৎ করেই কেমন যেন মৃত্যুভয় জয় করে ফেলেছে। ভয়-ভীতি কিছুই আর তার ভেতর কাজ করছে না। এ বাড়ির বিভীষিকাময় আঁধারের নিচে থাকা রহস্যকে সে টেনে হিঁচড়ে বের করবে।
চিলেকোঠার ঘরে ঢুকেই প্রথমে ডায়েরিটা খোঁজা শুরু করলো মায়া। মোহনার পাপের একমাত্র সাক্ষী এই ডায়েরি, এটা হাতে না রাখলে মোহনার পাপের বিনাশ করা সম্ভব না। আগে যা করেছে মোহনা সেটা আটকানোর সাধ্যি মায়ার ছিলো না, কিন্তু এবার মোহনা যেটা করতে চাচ্ছে সেটা আটকানোর সাধ্য,সামর্থ্য, ক্ষমতা মায়ার আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বুকসেল্ফটাকে তন্নতন্ন করে খোঁজার পর মায়া হতবাক, ডায়েরিটা নেই? মায়া আবার খুঁজলো, বার-বার খুঁজলো কিন্তু ফলাফল শূণ্য। মায়া দিগ ভ্রষ্ট হলো না, উৎকণ্ঠিত হলো না বরং এমন কিছু না হলেই যেন সে বেশি অবাক হতো। মায়া ধীর পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে বাহির থেকে চিলেকোঠার ঘরখানা আটকিয়ে দিলো। ছাঁদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়ালো। হাতের ফোন থেকে হৈমন্তের নাম্বারে ক্ষুদ্র একটা বার্তা পাঠিয়ে দিলো।

মিনিট দুই পেরুতেই হৈমন্ত তাদের ছাঁদে হাজির হলো। বেশ দুশ্চিন্তার ছাপ তার মুখ চোখে। ছাঁদে এসেই বেশ উৎকণ্ঠিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হয়েছে তোর? ঠিক আছিস তো? এই ভরদুপুরে ছাঁদে কী করছিস? শরীরটা যে অসুস্থ সে খেয়াল আছে তোর?”
মায়া হাসলো। হৈমন্তের এত উদ্বিগ্নতা তাকে প্রশান্তি দিচ্ছে। এই পৃথিবীতে এ মানুষটা ছাড়া অত উৎকণ্ঠা দেখানোর মানুষ মায়ার নেই। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে হারিয়েছে সে সবাইকে। তাই তো প্রতিহিংসার আগুনটা তাকে দিবানিশি পুড়িয়ে যাচ্ছে।

মায়াকে চুপ থাকতে দেখে হৈমন্তের কপালে চিন্তার গাড়ো ভাজ পড়েছে। কণ্ঠ কোমল হয়েছে, চিন্তা গুলো নিবিড় অথচ ধারালো হলো। সে মোলায়েম কণ্ঠে বললো,
“কিছু হয়েছে, মায়া? এত কাঠফাটা রোদের মাঝে তুই ছাঁদে কী করছিস? আমাকেও জরুরী তলব করলি। শরীর কী বেশি খারাপ লাগছে? চল না মায়া, আমরা আগের জায়গায় ফিরে যাই। এই প্রতিহিংসা প্রতিহিংসা খেলাটা বন্ধ করে দে না রে। তোর সাথে আমার যে অনেক গুলো বছর বাঁচার শখ। বৃদ্ধ কালেও তোর হাতটা ধরে আমি বসন্ত কাটাতে চাই। পূরণ করবি না আমার ইচ্ছে?”
মায়ার হাসি মিলিয়ে গেলো। কেমন যেন কঠিন হলো তার গলার স্বর। সে কাঠিন্যতা বজায় রেখেই বললো,

“তুমি যেটাকে কেবল প্রতিহিংসা বলছো আমি সেটার মাঝে আমার বোনের মৃত্যুর সঠিক বিচার দেখতে পাচ্ছি। এখনো অব্দি আমি এর জন্যই বেঁচে আছি হৈমন্ত ভাই। নাহয় দিন দুনিয়ায় একা বাঁচার আমার তো কোনো কারণ ছিলো না।”
মায়ার কথা গুলো অজান্তেই গভীর আঁচড় কাটলো হৈমন্তের কোমল প্রেম মন্দিরে। হাসলো হৈমন্ত। এত গুলো বছর মেয়েটাকে দু হাতে আঁকড়ে রেখেছে সে অথচ মেয়েটার তার প্রতি কোনো টানই জন্ম নিলো না। একেই বোধহয় বলে ভালোবাসা!
ছোট্ট শ্বাস ফেলে চোখের কোণে জমতে থাকা জল গুলো বার কয়েক ডানা ঝাপটিয়ে মিলিয়ে ফেললো চোখের পাপড়িতে। ছেলেদের যে কাঁদতে নেই। ছেলেদের কান্না করা লাগবে এমন কোনো কষ্ট থাকতে নেই। ছেলেরা পাথর, তাদের এসব তুচ্ছ বিষয়ে কান্না করা যে বড্ড বেমানান।
হৈমন্তকে হাসতে দেখে মায়া ভ্রু কুঁচকালো। অবাক কণ্ঠে বললো,

“হাসলে যে হৈমন্ত ভাই?”
“আমি যদি এখন বলি, মায়া তুই বড্ড স্বার্থপর, তুই কী রাগ করবি? রাগ করলেও বলছি, তুই সত্যিই স্বার্থপর। বিপ্রতীপের মতন তুচ্ছ,নোংরা,বিদঘুটে মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষের উপরও তোর কিঞ্চিৎ হলেও মায়া জন্মে ছিলো। অথচ দেখ আমি কতটা অভাগা, সেই ছোট থেকে তোর বটগাছ হয়েও তা পেলাম না। আসলে আমিই বোকা। বটগাছদের যে কেবল কাজ ছায়া দেয়া, অনুভূতি মায়া কিংবা মানুষ মায়াকে পাওয়ার অধিকার কিংবা ভাগ্য যে তাদের নেই। যাই হোক, বল কী বলবি? আমি জানি তুই এ বাড়ির সম্পর্কেই কিছু একটা বলতে এসেছিস। বলে ফেল।”

হৈমন্তের কথার ধরণে মায়া চুপ করে গেলো। আজ কত গুলো বছরের অভিযোগ ছেলেটা ঢেলে দিলো? একদম চুপ করে থাকা মানুষটারও কী ভীষণ না পাওয়ার কষ্ট, তা কী মায়া জানে না? জানে। কিছু কষ্ট দেখতেও ভালো লাগে, কিছু মানুষকে কষ্ট দিতেও ভালো লাগে কারণ আমরা জানি, হাজার কষ্টের পরও সে মানুষ গুলো আমাদের ছেড়ে যাবে না। বরাবরের মতনই আগলে রাখবে। তাতে আরেকবার আমরা এটা ভেবে তৃপ্তি পাবো যে, আমারও একটা মানুষ আছে, নিজের মানুষ, যে কেবল আমার।

“কিরে, বললি না? কোনো সমস্যা হলো?”
মায়া ধীর কণ্ঠে বললো,
“আসলে হৈমন্ত ভাই তোমারে একটা কথা বলা হয় নি।”
হৈমন্ত ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কী কথা?”
“শাশুড়ি জেনে গেছে আমরা যে সব জানতে পেরেছি।”
মায়ার কথায় চমকে উঠলো হৈমন্ত। অতঃপর মায়া গতকালকের সব কথা খুলে বললো। হৈমন্ত অবাকের উপর অবাক হলো। এই মহিলা কতটা ভয়ঙ্কর হলে একটু ঘাবড়ে যায় নি তার অতীত জেনে ফেলেছে কেউ সেটা জেনেও। এই মহিলার সাথে পেরে ওঠাটা সম্ভব হবে না আদৌও।
কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো বাম হাতের তালু দিয়ে মুছে ফেলে হৈমন্ত। হুশিয়ারি কণ্ঠে বলে,

“তোর আরও সাবধানে থাকতে হবে। তুই সবটা সত্যি জেনে ফেলেছিস, মহিলা তোকে সরাতেও দু’বার ভাববে না। তার শেষ টার্গেট তুই না হলেও সত্যি জানার জন্য তোর ক্ষতি করবে সে।”
মায়া ডানে বামে মাথা নাড়ালো। খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“না, উনার শেষ নিশানা আমি না হৈমন্ত ভাই।”
মায়ার এমন সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে অবাক হলো হৈমন্ত। অবাক কণ্ঠে বললো,
“তুই কীভাবে জানিস যে তুই না?”

“মারার হলে সে বোঝার সাথে সাথে আমাকে মেরে ফেলতো কিন্তু সে সেটা করে নি। বরং খুব শীতল ভাবে আমাকে ভয় দেখানোর একটা প্রয়াস করেছে। মাঝখানে আমার অসুস্থতা টা উঁকি না দিলে হয়তো আরও কিছু বলতো। সে এটাও সিউর যে আমি তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করবো তাই সে ডায়েরিটা সরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আমাকে কিছু বলে নি। তার টার্গেট অন্য কেউ। আমাদের ভাবনা ঘুরাতে হবে। তাকে তার মতন করে বুঝতে হবে।”
“তুই কী করতে চাচ্ছিস?”
“তার সাথে আপাতত ভালো আচরণ করতে চাচ্ছি। তার মতন ভাবতে চাচ্ছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তার শেষ খু*নটা সে শীগ্রই করবে। কিন্তু কাকে? এটাই বের করতে হবে।”

“যা-ই করিস সাবধানে। তোর জন্য ভয় হয়।”
“আমাকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার যতটুকু মনে হয় তার কাছে আমাকে খু*ন করার শক্তপোক্ত কারণ এতদিন ছিলো না। অথচ খু*নের কথাটা সে একমাস আগে লিখেছে। যদি ডায়েরিটা পড়ে সব জেনে যাওয়ার জন্য মারতে চায় তাহলে সেটা দু একদিনের ঘটনা। দর্শিনী দিদিকে সে অত্যাচার করতো মানসিক ভাবে কিন্তু কখনো তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা পয়সা আনার কথা বলে নি, লোভ জিনিসটা তাহলে তার নেই। তারপর গায়ে হাত তুলে নি। কথার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করতো।

আমার মনে হয় দর্শিনী দিদিকে তাড়ানো ছিলো তার উদ্দেশ্য তাই সে এমনটা করেছে। বিপ্রতীপের সাথে আমার বিয়ের কথাও কিন্তু সে বলে নি। আর না আমার পরিবার নিয়ে কোনো খোঁজখবর নিয়েছে, আর না কোনো যৌতুক চেয়েছে,এতদিনও আমার বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে নি। তার মানে ছেলের বউ নিয়ে তার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। কিন্তু ছেলের বৌদের তাড়ানো নিয়ে তার মাথা ব্যাথা। আমাকে যেই দেখলো কথার আঘাতে নুয়ানো যাচ্ছে না তাই শরীরে টুকটাক আঘাত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সবটাই আমাকে তাড়ানোর জন্য এছাড়া মনে হয়না আরও কোনো উদ্দেশ্য আছে। এমনটাও না যে তার পছন্দ করা কোনো মেয়ে আছে যার সাথে সে তার ছেলের বিয়ে দিবে। তাহলে সে এমনটা করছে কেনো? আসল রহস্য টা এখানেই। আগে এটা বের করতে হবে। আমার মনেহয় এটা বের হলেই সবটা হুড়মুড় করে বের হয়ে যাবে।”

মায়ার কথা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত মনে হলো হৈমন্তের কাছে। হঠাৎ করেই হৈমন্তের ফোন বেজে উঠলো। সে মায়াকে ছাঁদ থেকে নেমে যেতে বলে ফোন রিসিভ করে নিজেও নেমে গেলো। মায়ার জন্য সে ডোনার খুঁজছে। মায়াকে যে বাঁচাতেই হবে।
মায়া হৈমন্তের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এ মানুষটার প্রতি মায়ার একটা ভীষণ গভীর নাম না জানা অনুভূতি আছে কিন্তু সেটা কখনো সে প্রকাশ করবে না। থাক না, কিছু অজানা। প্রতিহিংসার অনলে জ্বলে গিয়ে একটা সন্তানকে বাবা ছাড়া আর একটা স্ত্রীকে স্বামী ছাড়া করেছে। অথচ ওদের কোনো দোষ ছিলো না। আর সেই পাপের শাস্তি স্বরূপ সে বেঁচে থাকতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয়। অভিশাপ কখনো পিছু ছাড়ে? নিজের এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে হৈমন্তকে জড়িয়ে কী লাভ। সে তো জানে, এত দ্রুত ডোনার খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। মায়া হাসে, উত্তপ্ত রোদের দিকে তাকিয়ে গলা ছেড়ে গান তুলে,

“একবারই হয় জন্ম ভবে,
একবারই হয় মরণ,
বাঁচে শুধু বেঁচে থাকার
মিছে আয়োজন।”

বড় বৌদির হাতের পায়েসটাকে অগ্রাহ্য করে দর্শিনী বেরিয়ে এসেছিল বাড়ি থেকে। আজকে বড়বৌদির হাতের পায়েসটা খাওয়া মানেই এতদিনের বড়বৌদির করা সকল অপমানকে গিলে ফেলা। অথচ দর্শিনী তো সেটা করবে। আর কত গিলবে অপমান? এবার যে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা সবটা।
গ্রামের সরু পথ ধরে হাজার খানেক চিন্তা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দর্শিনী। তৃণার বিয়ের আরও নয়দিন আছে। এর মাঝে শহরে গিয়ে ফিরে আসা যাবে খুব ভালো ভাবে। বাবার জমির ঝামেলাটাও তো মিটাতে হবে। স্কুলে জয়েনিং দিতে হবে। কত কাজ অথচ সময় সীমিত।

“প্রিয়দর্শিনী, দাঁড়ান।”
ভরাট গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠে দর্শিনী থামলো। সে জানে কণ্ঠের মালিক কে। তাই নিজেকে যথেষ্ট তৈরী করলো উত্তর দেওয়ার জন্য।
মৃত্যুঞ্জয় এগিয়ে এলো। জলপাই রাঙা শাড়িতে আবৃত হওয়া মানবীর মুখ পানে চাইলো। কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য ভুলে গেলো নিজের অস্তিত্ব। কি সুন্দর লাগছে এই নারীটিকে! পৃথিবীর সবটা সৌন্দর্য যেন উজাড় করে দিয়েছে আজ এই মানবী।
মৃত্যুঞ্জয়কে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে দর্শিনী অস্বস্তিতে পড়লো। চোখটা এদিক ওদিক ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

“কিছু বলবেন?”
মৃত্যুঞ্জয়ের ধ্যান ভাঙলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“ফোন ধরছেন না, দেখাও দিচ্ছেন না, ব্যাপার কী?”
দর্শিনী হাসলো। মোলায়েম কণ্ঠে বললো,
“আপনার জন্য সারপ্রাইজ তৈরী করছি।”
মৃত্যুঞ্জয় অবাক হলো। অবাক কণ্ঠে বললো,
“তার জন্য আমার ফোন ধরবেন না? তা কী এমন সারপ্রাইজ শুনি?”
“সারপ্রাইজ যদি বলেই দেই, তাহলে কী সারপ্রাইজ থাকবে?”
দর্শিনীর কথার প্যাঁচে পড়ে খানিক হাসলো সে। মেয়েটা বেশ চালাক। হাসি মুখেই বললো,

“আজ আপনাকে বিশেষ লাগছে। কেনো?”
“প্রতিদিন বুঝি সাধারণ লাগে?”
দর্শিনীর কণ্ঠে মশকরার আভাস। মৃত্যুঞ্জয় অবাক হলো। মেয়েটা তো এত সাবলীল ভাবে কথা বলে না। তবে আজ এত পরিবর্তন! অবশ্য খারাপ লাগছে না তার।
“কোথায়ও যাচ্ছিলেন?”
“হ্যাঁ একটু কাজ আছে।”
“আমি কী আপনার সঙ্গী হতে পারি?”
সুঠাম দেহী পুরুষের আমতা-আমতা করা আবদারে হাসলো প্রিয়দর্শিনী। ঘাড় কাত করে বললো,
“আপনার গাড়িটাও যদি আমাদের সঙ্গী হতো তাহলে আরও বেশি উপকার হতো।”
মৃত্যুঞ্জয় হা হয়ে দর্শিনীর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা এত সহজে রাজি হয়ে গেলো? অথচ কত ঘুরিয়ে উত্তর জানালো। এই দর্শিনীকে মেলানো যাচ্ছে না আগের দর্শিনীর সাথে। আগের দর্শিনী ছিলো বিষণ্ণতায় ভরপুর তেঁতো। এই দর্শিনী টক ঝাল।

মৃত্যুঞ্জয় শার্টের হাটা গুটিয়ে বা’হাত পিছনের চুলে চালান করে ধীর কণ্ঠে বললো,
“যো হুকুম রাণী সাহেবা।”
আর এক মিনিটও দেরি না করে মৃত্যুঞ্জয় ছুটলো গাড়ি আনতে। দর্শিনী ফিচলে হেসে বললো,
“দেখবেন হোঁচট যেন না খান, এখনো তো মুখ থুবড়ে পড়া বাকি।”
মৃত্যুঞ্জয়ের কান অব্দি হয়তো কথা খানা পৌঁছালো না। তার মুখে সেই আনন্দের ঝিলিক এখনো দেখা যাচ্ছে।

মায়া শ্বশুর বাড়ির বাগানে এসেছে। এ দিকটাতে তেমন আসা হয় না তার। ধরতে গেলে এত মাসের মাঝে একবারও এখানে আসে নি সে। বাগানের কিনারের দিকে আসতেই তার পা আপনা-আপনি থেমে গেলো। গাছের আড়ালে মোহনাকে দেখা যাচ্ছে। সে একটা ছুড়ি ধার করছে। পাশেই মোটা একটা দঁড়ি দেখা যাচ্ছে। মায়া কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো। মোহনা এসব কেনো করছে? নিশ্চিত পরবর্তী শিকার করার জন্য। কি ভয়ানক!
মোহনা দেখার আগেই মায়া চলে যেতে নিলেই মোহনা হেসে উঠে। নিজের কাজ করতে করতে বলে,
“প্রতিহিংসায় অন্ধ হয়েছো আসল দোষী চিনলে না,
সম্পর্ক গুলো খুলে দেখো, কত চেনা মানুষ আসলে অচেনা।”
মায়া থমকালো। মোহনা কি তবে তাকে হিন্টস দিলো? কার কথা বুঝালো সে?

পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩৬

বিকেলের শেষ দিকে দর্শিনীদের গাড়ি এসে থামলো কাঙ্খিত জায়গায়। মৃত্যুঞ্জয় গাড়ি থামিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে অবাক কণ্ঠে বললো,
“পাগলা গারদ!”

পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩৮