পারলে ঠেকাও পর্ব ২১+২২

পারলে ঠেকাও পর্ব ২১+২২
লেখিকাঃ দিশা মনি

মধুজার বিপদের মুখে আর নিজের কথা ভাবে না অক্ষর। তাই মধুজাকে বাচানোর জন্য নিজের কথা না ভেবে পুলিশের সামনে স্বীকার করে নেয়,
‘আমি অর্গান ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত। আমি গরীব অসহায় রোগীদের টার্গেট করে তাদের অর্গান বের করে পাচার করা দেই৷ নিজের কাজের জন্য এখন আমি ভীষণভাবে অনুতপ্ত। তাই আপনাদের কাছে আমি আজ সব স্বীকার করে নিলাম।’
ডাক্তার কেয়ার মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। এমনটাই চেয়েছিল সে। এখন অক্ষর সব দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় তার পথ সুগম হবে।

পুলিশ অক্ষরকে গ্রেফতার করে নিয়ে চলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর কেয়া সিরাজ হাসানের হাতে একটা চেক তুলে দিয়ে বলে,
‘এই নিন। আমাদের কথা শোনার জন্য এটা আপনার পুরস্কার।’
সিরাজ শয়তানী হাসি দিয়ে সেই চেক নিয়ে চলে যায়। সিনিয়র নার্স শামিমা খাতুন ডাক্তার কেয়াকে জিজ্ঞেস করে,
‘ম্যাডাম আপনি কি করে সবকিছু হ্যান্ডেল করলেন?’
কেয়া তখন ক্রুর হেসে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আমি কিছুই করিনি। যা করার সব করেছে সেই ব্যক্তি যিনি এই পুরো অর্গান ট্রাফিকিং এর মূলে রয়েছেন। তার চোখকে কেউ এত সহজে ফাকি দিতে পারে না। তিনিই তো একজন নার্সকে দিয়ে আমায় খবর পাঠিয়েছিলেন যে এখানে যেই মেয়েটি আছে সে একজন সাংবাদিক। এছাড়া তিনি সিরাজ হাসানকেও টাকার লোভ দেখিয়েছিলেন। আর এখন পরিকল্পনা করে মধুজাকে ব্যবহার করে ডাক্তার অক্ষরকেও ফাসিয়ে দিলেন। এখন আমাদের রাস্তা একেবারে ক্লিয়ার।’
কথাগুলো বলে অট্টহাসিতে মেতে ওঠে কেয়া।

মধুজা জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটি অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করে। আশেপাশে কেউ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। মধুজা উপলব্ধি করতে পারছে তাকে একটি চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং তার হাত পা বাধা। মধুজা মৃদুভাবে চিৎকার করল। তার চিৎকারের আওয়াজ কারো কাছে পৌছালো কিনা সন্দেহ। তবে মধুজা প্রাণপণে চেষ্টা করল নিজেকে বাধনমুক্ত করার জন্য। অবশেষে সফল হলো।

তাকে খুব জোরালোভাবে বেধে রাখা হয়নি। দেহের সর্বশক্তি দিয়ে হাতের মধ্যে জোরে চাপপ্রয়োগ করার করেছিল মধুজা। তাতেই হাতের বাধন আলগা হয়ে যায়। মধুজা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। খুশি হওয়ার আগেই সেই খুশি মিলিয়ে যায়। মধুজা অনুভব করে কেউ ঘরে প্রবেশ করছে। এক নারী অববয় চোখে পড়ে মধুজার। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই অববয় পরিস্কার হয়ে ওঠে মধুজার চোখে। সে অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,

‘ডাক্তার কেয়া,,,’
কেয়া এসে মধুজার সামনে দাড়ায়। খানিকটা মাথা হেলিয়ে মধুজাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুমি কি ভাবছ এত সহজে মুক্তি পাবে আমার হাত থেকে? না সেটা হবে না। আমার পেছনে গোয়েন্দাগিরি সরি সাংবাদিকগিরি করার খুব শখ হয়েছিল তাইনা? কি ভেবেছিলে এত সহজে ধরতে পারবে আমায়।’
মধুজা তাৎক্ষনিতভাবে কিছু বলে না। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। খানিক পরেই সুযোগ পেয়েও যায়। কেয়া আত্মতৃপ্তিতে মগ্ন হয়ে একটু অন্য ভাবনায় ডুব দিতেই মধুজা আলগা হয়ে যাওয়া রশি থেকে নিজের হাত দুটো মুক্ত করে নিয়ে নিজের পা দুটো খুলে নেয়। তারপর সুযোগ বুঝে কেয়াকে লা’থি মে’রে পালিয়ে আসে। কেয়া রুমের দরজা খুলেই রেখেছিল। তাই পালানোর জন্য খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয়না মধুজাকে।

প্রাণপণে ছুটছে মধুজা। ছুটতে ছুটতে চলে আসে একটি চায়ের দোকানের সামনে। সেখানে একটি টিভি চলছে। টিভির দিকে চোখ যেতেই ব্রেকিং নিউজে চোখ আটকে যায় মধুজার। কারণ সেখানে লেখা,
‘অবশেষে সামনে এলো অর্গান ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত ডক্টর অক্ষর চৌধুরী। নিজের মুখেই নিজের এই কুকর্মের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।’

নিউজটা দেখেই থমকে যায় মধুজা। সবকিছু তার কাছে কেমন যেন অসহ্যকর লাগছিল। অক্ষর নিজের মুখে স্বীকার করেছে এই ব্যাপারটা যেন আরো অবিশ্বাস্য ঠেকছিল মধুজার কাছে।
চায়ের দোকানে আড্ডারত কিছু মানুষ বলছিল,
‘দেখছেন দেশের কি অবস্থা। যাদের কাজ মানুষের প্রাণ বাচানো সেই ডাক্তারেরাই মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে।’
‘যা বলেছ। দেশটা পুরো উচ্ছনে গেছে। এখন আমরা কার কাছে যাব বলো?’
অক্ষরের নামে এমন কথা সহ্য হলোনা মধুজার। সে আচমকা লোকগুলোর সামনে গিয়ে বলে ফেলল,

‘এসব কি বলছেন আপনারা? কারো সম্পর্কে কোন কিছু না জেনে এরকম কথা কিভাবে বলছেন? আমি পাগ,, মানে ডক্টর অক্ষর চৌধুরীকে চিনি। উনি এমন নয়।’
একটা লোক তামাশা করে বলল,
‘আপনি তো এমনভাবে কথা বলছেন যেন উনি আপনার আপন কেউ।’
‘হ্যা উনি আমার অনেক আপন একজন। আমার স্বামী।’

কথাটা বলে নিজেই চমকায় মধুজা। শেষপর্যন্ত তাহলে সে অক্ষরকে মন থেকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারল। কিন্তু এমন একটা সময় যখন সবটাই অগোছালো। এদিকে মধুজার কথা শুনে সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল। যেন ভিনগ্রহের কোন প্রাণী দেখছে। এরমধ্যে টিভির দিকে আবার নজর যায় মধুজার। খবরে বলছে অক্ষরকে বনানী থানায় নেওয়া হয়েছে। নিউজটা দেখে আর একমুহুর্ত দাড়ায় না মধুজা। এক ছুট লাগায় বনানীর দিকে। চলন্ত একটি সিএনজিকে থামিয়ে সেখানে উঠে পড়ে।

মধুজার কাছে কোন টাকা ছিল না। অক্ষরের খবর শুনে এই কথাটা তো তার মাথাতেই আসে নি। তাই কোন ভাবনা চিন্তা না করে সিএনজিতে উঠে পড়ে। এখন কাঙখিত গন্তব্যে পৌছানোর পর ভাড়া মিটানোর সময় বেশ বিপদে পড়ে গেছে মধুজা। সিএনজি চালক তাকে যেতে দিচ্ছে না। টাকার জন্য একপ্রকার বাকবিতন্ডা হয়ে যাচ্ছে। কিছু মানুষ থেমে ঝগড়া দেখছিল। তারপর আবার কর্মব্যস্ত শহরে নিজের মতো চলে যাচ্ছিল। এরইমাঝে আচমকা কেউ একজন এসে সিএনজি চালকের হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলে,

‘এই নিন। এখানে রাস্তায় ঝামেলা করে এখন আসতে পারেন। মেয়েটির হয়ে আমিই ভাড়া মিটিয়ে দিলাম।’
মধুজা তাকালো হাতের অধিকারী নারীটির দিকে। মধ্যবয়সী এক নারী। তবে চেহারায় লাবণ্য এখনো রয়ে গেছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যৌবনকালে অনেক সুন্দরী ছিলেন তিনি। মহিলার গায়ে সাদা এপ্রোন দেখে মধুজা বুঝল তিনি একজন ডাক্তার।

সিএনজি চালক ভাড়া নিয়ে চলে যেতেই মধুজা কৃতজ্ঞ চিত্তে বলল,
‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম। আজ আপনি না থাকলে এই সিএনজি চালক আমায় ছাড়ত না।’
‘নাম কি তোমার? আর এভাবে টাকা ছাড়া সিএনজিতে উঠেছ কেন?’
‘আমার নাম মধুজা। একচুয়ালি আমি অনেক বড় বিপদে পড়ে ছিলাম। সেই কারণে,,,যাইহোক আমার কাছে বেশি সময় নেই। আমাকে এখনই যেতে হবে। আমার কাছে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই। তবে যদি এরপর কখনো আমাদের দেখা হয় তাহলে আমি আপনার ঋণ মিটিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।’

মধুজা দাড়ালো না। দৌড় লাগালো থানার দিকে।
মধুজা থানায় এসে একজন পুলিশের কাছে গিয়ে জানতে চাইল,
‘আচ্ছা ডক্টর অক্ষর চৌধুরী কোথায়? আমি ওনার স্ত্রী। তার সাথে দেখা করতে চাই।’
পুলিশ বলে,
‘এখন ওনার সাথে কোনভাবেই দেখা করা যাবে না। আপনি পরে আসতে পারেন।’
মধুজা নাছোড়বান্দা। সে এত সহজে হাল ছাড়ে না। পুলিশের সাথে একপ্রকার তর্কে লেগে পড়ে। দৌড়ে চলে যায় জেলের ভিতরে। একটু দূরে যেতেই অক্ষরকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে মধুজা। মৃদুকণ্ঠে ডাক দেয়,
‘পাগলা ডাক্তার,,’

অক্ষর মধুজার দিকে তাকায়। মধুজাকে অক্ষত দেখে খুশি হয়ে যায়।
‘তুমি ঠিক আছো হানি?’
এরমাঝে পুলিশ দৌড়ে আসে। মধুজা অক্ষরের উদ্দ্যেশ্যে চিৎকার করে বলে,
‘আপনি কোন চিন্তা করবেন না পাগলা ডাক্তার। আপনার হানি আপনাকে প্রমিস করছে আপনাকে এখান থেকে বের করা আনব। আমি জানি আপনি নির্দোষ।’
মধুজার কথায় ভরসা পায় অক্ষর। কিছু মহিলা পুলিশ মধুজাকে টেনে বাইরে বের করে আনে।

মধুজা অক্ষরের বাড়িতে আসে। অনীল চৌধুরী, মমতা চৌধুরী, বর্ণ সবাই থম মে’রে আছে। অনীল চৌধুরী এরমধ্যে নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ছেলের চিন্তায়। অক্ষর যে এমন একটা ঘৃণ্য কাজের সাথে যুক্ত সেটা তিনি মানতে পারছেন না৷ সর্বদা শান্ত থাকা মমতা চৌধুরীকেও আজ উত্তেজিত লাগছে। বর্ণও নিজের ভাইয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। এসবের মাঝে মধুজা বর্ণকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,

‘এভাবে বসে থাকলে কিছু ঠিক হবে না বর্ণ। আমাদেরই কিছু করতে হবে।’
‘আমরা কি করতে পারি ভাবি? ভাইয়া যে নিজের মুখে সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছে।’
‘আমার মনে হয় ওনাকে কোনভাবে বাধ্য করা হয়েছে। কারণ ডাক্তার কেয়া আমাকে বন্দি করে রেখেছিল। হয়তো উনি ব্ল্যাকমেইল করেছেন এই নিয়ে।’

‘তুমি এটা পুলিশকে বলো নি কেন?’
‘পুলিশকে জানালে তারা ভাববে আমি নিজের স্বামীকে বাচানোর জন্য মিথ্যা বলছি। তাই আমাদের যথেষ্ট প্রমাণ লাগবে।’
মমতা চৌধুরী এতক্ষণ চুপ করে সব শুনলেও এবার বলে ওঠেন,
‘কিভাবে আমার ছেলেটাকে নিরপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব?’
মধুজা কিছুক্ষণ ভেবে বর্ণকে বলে,
‘আচ্ছা তোমার ভাইয়ার একজন বন্ধু আছে না যিনি উকিল। যার সাহায্যে এর আগে উনি তোমাকে জেল থেকে বের করে এনেছিলেন।’
‘ মাহিম ভাইয়ার কথা বলছ?’

‘হ্যা ওনার কথাই বলছি। ওনার সাথে যোগাযোগ করতে হবে আমাদের। উনি এখন আমাদের সাহায্য করতে পারেন।’
বর্ণর কাছে মাহিমের ফোন নম্বর ছিল। সে আর দেরি না করে মাহিমকে ফোন করে। মাহিম ফোনটা রিসিভ করলে মধুজা তার সাথে কথা বলবে বলে জানায়। বর্ণ মধুজার হাতে ফোন তুলে দেয়। মধুজা অনেকক্ষণ যাবৎ কথা বলে তার সাথে।
বিকেলে বর্ণকে সাথে নিয়ে আবার থানার উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ে মধুজা। থানায় পৌছে মাহিমেরও দেখা পেয়ে যায়। মাহিম কোর্ট থেকে স্পেশাল অর্ডার নিয়ে মধুজার সাথে অক্ষরের কথা বলার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। তাই এবার আর পুলিশ কোনরকম বাধা দিতে পারে না। শুধু বলে,

‘আপনাকে ১০ মিনিট সময় দেওয়া হলো। এরমধ্যে যা বলার বলবেন।’
মধুজা চলে যায় অক্ষরের সাথে কথা বলতে। অক্ষর মাথা নিচু করে বসে ছিল জেলের ভেতরে। একদিনেই ভীষণ ভেঙে পড়েছে সে। মধুজা অক্ষরকে ডাক দেয়। অক্ষর আবার মধুজাকে দেখে খুশি হয়ে তার কাছে আসে। মধুজা বলে,
‘আমার কাছে বেশি সময় নেই পাগলা ডাক্তার। আপনি তাড়াতাড়ি আমাকে সব ঘটনা খুলে বলুন। কিভাবে ওরা আপনাকে ফাসিয়েছে।’

অক্ষর আর দেরি না করে মধুজাকে সব ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। সব শুনে মধুজা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। সিরাজ হাসান যে তাকে এভাবে ধোকা দেবে সেটা বুঝতে পারে নি মধুজা। রাগে ঘৃণায় মধুজা শপথ করে,
‘যারা আপনার সাথে এতবড় অন্যায় করল তাদের প্রত্যেককে আমি শাস্তি দিবো। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আপনাকে আর বেশিদিন এখানে থাকতে হবে না। আমি আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে মুক্ত করব। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন।’

মধুজা বর্ণকে সাথে নিয়ে রাতের আধারে বেরিয়ে পড়েছে। তাদের গন্তব্যস্থল সিরাজ হাসানের ফ্ল্যাট। সিরাজের ফ্ল্যাটের সামনে এসে মধুজা বারকয়েক কলিং বেল বাজায়। যতদূর
শুনেছে সিরাজ হাসান এখানে একাই থাকে। তার পরিবার গ্রামে রয়েছে। সিরাজ হাসান দরজা খোলামাত্রই বর্ণ তার হাত চেপে ধরে। মধুজা ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। বর্ণ সিরাজ হাসানকে থা’প্পর ও ঘু’ষি দিয়ে কাবু করে নেয়। মধুজা তার মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করে,

‘কেন ধোকা দিলে আমাদের? আমরা তো সবাই মিলে প্ল্যান করেছিলাম অর্গান ট্রাফিকিংকারী সবাইকে সামনে আনব। আর আপনি কিনা আমার স্বামীকেই ফাসিয়ে দিলেন।’
সিরাজ হাসান শুকনো ঢোক গিলে বলে,

‘আমি এমনটা করতে চাইনি। আমাকে এমনটা করতে বাধ্য করা হয়েছে। আসলে আমার টাকার খুব বেশি দরকার ছিল। এই সাংবাদিকতা করে আর কত টাকা পাই। আমাদের গ্রামে একটি বড় বিল্ডিং করার জন্য জমি কিনেছি। এখন সেই বিল্ডিং তৈরির জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই যখন অজ্ঞাত কেউ আমাকে ফোন করে বলে তাদের কথামতো ডক্টর অক্ষরকে ফাসালে আমার হাতে টাকা দেবে তখন আমি আর না করতে পারিনি।’
কথাটা শুনে বর্ণর খুব রাগ হয়। সে আরো কয়েকটা ঘু’ষি দেয় সিরাজের মুখে। মধুজা বর্ণকে থামতে বলে এবং সিরাজকে বলে,

‘আপনি যা ভুল করেছেন এবার সেটা আপনাকেই শোধরাতে হবে। আপনার ফোন কোথায়?’
‘আমার পকেটে আছে।’
‘আপনার কাছে কি ডক্টর কেয়ার নাম্বার আছে?’
‘হ্যা আছে।’
‘ওনাকে ফোন করে বলুন এখানে আসতে। নাহলে ওনার সব কথা ফাস করে দেবেন। আপাতত এটুকু কাজ করুন সেটাই আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।’
সিরাজ হাসান ভয়ে ভয়ে ডাক্তার কেয়াকে ফোন করে। তিনি ফোনটা রিসিভ করামাত্র মধুজার শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বলে,

‘আমি সাংবাদিক সিরাজ হাসান। আপনার সাথে জরুরি কথা আছে। ম্যাসেজ করে একটি ঠিকানা দিচ্ছি ভালো চাইলে জলদি সেখানে চলে আসুন। নাহলে আপনার সব অপরাধের কথা আমি ফাস করে দিবো।’
কথাটা বলে কল কে’টে দেয় সিরাজ হাসান। বর্ণ ও মধুজা অপেক্ষা করতে থাকে ডাক্তার কেয়ার জন্য।
ডাক্তার কেয়া সিরাজ হাসানের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়। একটু পরেই মধুজা সিরাজ হাসানের হাত থেকে ফোন নিয়ে তার ফ্ল্যাটের ঠিকানা ম্যাসেজ করে ডাক্তার কেয়াকে পাঠায়। কেয়া সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়ে।

কেয়া সিরাজ হাসানের বাড়ির সামনে এসে কলিং বেল বাজায়। বর্ণ ও মধুজা সজাগ হয়ে যায়। সিরাজ হাসানের বাধন খুলে দেয় বর্ণ। মধুজা তাকে বলে,
‘যান দরজা খুলে ডাক্তার কেয়াকে ভেতরে নিয়ে আসুন। কোন ভুল যেন না হয় নাহলে কিন্তু আপনাকে আমরা ছাড়ব না।’
সিরাজ হাসান মেনে নেয় সেই কথা। দরজা খুলে দেয়। ডাক্তার কেয়া সিরাজ হাসানকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,
‘কিসের জন্য আমাকে এখানে ডেকেছেন জলদি খুলে বলুন। আমার হাতে বেশি সময় নেই।’
‘ভেতরে আসুন।’

সিরাজ হাসানের কথায় ডাক্তার কেয়া ভেতরে আসে। সিরাজ হাসান দরজা লাগিয়ে দেন। সাথে সাথে বর্ণ ও মধুজা চলে আসে তার সামনে। ঘিরে ধরে ডাক্তার কেয়াকে। যার ফলে সে পালানোর পথ পায়না। দুজনে মিলে চেয়ারের সাথে বেধে দেয় কেয়াকে।
মধুজা বলে,

‘অনেক অন্যায় করেছ তুমি। এবার তোমার শাস্তির পালা। ভালো চাইলে বলো কার কথায় তুমি এমন নিকৃষ্ট কাজের সাথে জড়িত হয়েছ। কারণ আমরা জানি তুমি একা এই অর্গান ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত নও।’
বর্ণ ইতিমধ্যেই ফোন বের মনে ভিডিও করতে শুরু করেছে। ইতিপূর্বে সিরাজ হাসানের কথাও সে ভিডিও করেছে। এসব কিছুই প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

কেয়া কিছু না বলে চুপ করে থাকে। মধুজার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়। ফল কা’টার ছু’রি এনে কেয়ার গলায় ধরে বলে,
‘ভালোয় ভালোয় আসল অপরাধীর নাম বল নাহলে তোকে শে’ষ করে দেবো।’
ডাক্তার কেয়া আর চুপ থাকতে পারে না। বলে,
‘বলছি আমি এই অর্গান ট্রাফিকিং চক্রের মূল হোতার নাম। তিনি হচ্ছেন,,,’

পারলে ঠেকাও পর্ব ২০

আসসালামু আলাইকুম। গতকাল গল্প দিতে পারি নি তাই আজ দুটো পর্ব একসাথে দিয়ে পুষিয়ে দিলাম। আজকে সবাই একটু সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করবেন। আর বুঝতেই পারছেন আগামী পর্ব কতোটা ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে। তাই বেশি বেশি করে রেসপন্স করুন আর আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন

পারলে ঠেকাও পর্ব ২৩