খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৩

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৩
Jhorna Islam

দাদি ও দাদি দাদি গো আমার বোকা পুরুষ কই? কই গেলো দাদি উনি?
দাদি কোথায় উনি? বোকা পুরুষ আপনি কই? এখনই আমার সামনে আসুন।আপনি আমার সাথে লুকোচুরি খেলছেন তাই না?
এইই বোকা পুরুষ ডাক দিয়েই চিললিয়ে উঠে যুথি।
যুথির দাদির ঘুম ভেঙে যায় যুথির চিল্লানিতে।পাশের রুমেই ঘুমিয়ে ছিলো । এর মধ্যে যুথির চিল্লানিতে ঘাবড়ে যায়।শোয়া থেকে উঠে তারাতাড়ি যুথির কাছে আসে।

কি হইছে বু? শরীর খারাপ লাগতেছে? তুই ঠিক আছিস?
আ-আমার বোকা পুরুষ কই দাদি? কই গেছে দেখতে পাইতেছি না কেন তাকে আমি?
যুথির দাদি যুথির পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,, নাত জামাই তো মেলা আগে বের হয়ে গেছেরে।এখন মনে হয় বিমান উড়াল ও দিয়া ফেলছে।
আহ্ দাদি একদম মজা করবানা আমার সাথে। আমি মোটেও মজা করার পরিস্থিতিতে নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— মজা করছি না বু।সত্যি নাত জামাই সেই কখন চলে গেছে।
এইটা কিভাবে সম্ভব কিছু সময় আগেও উনি এইখানে ছিলেন আমার পাশে। বলেই কিছু একটা মনে পরায় ধ’র’ফ’রিয়ে বালিশ সরিয়ে নিজের মোবাইল বের করে। মোবাইলে সময় দেখে মাথায় বা’জ পরে যুথির। এতো সময় কোথা দিয়ে চলে গেলো?

এখন সময় ভোর ৪ঃ৩৫। আর ইরহানের ফ্লাইট ৪ টায়।এতো সময় সে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো।তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার বোকা পুরুষ তাকে না বলেই চলে গেছে। বিছানা থেকে তারাতাড়ি নেমে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
এই দিকে যুথির দাদি চিল্লাচ্ছে যুথি এই সময় এই অবস্থায় বাইরে যাস নে। আর তুই দৌড়াচ্ছিস কেন? ভুলে গেলি এখন কিন্তু তুই একা না। যুথি যুথিরে।কে শুনে কার কথা যুথি ততক্ষণে গেইটের কাছে এসে উঁ’কি ঝুঁ’কি দিচ্ছে। সব আবছা এখনো দিনের আলো ফোটেনি।

যুথি এক মনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে না বলে এভাবে চলে যেতে পারলো? সে কি এতোটাই পর যে চলে যাওয়ার আগে বলে যাওয়ার ও প্রয়োজন মনে করলো না। তারে ঘুমে রাইখা তার বোকা পুরুষ চলে গেলো?
নানান ভাবনা চিন্তা করতে থাকে যুথি।হুট করে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে যুথি।

পিছনে ঘুরে ছলছল নয়নে দাদির দিকে তাকায়।
যুথির দাদি যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। মাথায় স্নেহময় স্পর্শ পেয়ে কান্নারা যেনো বাইরে বেরিয়ে আসার পা’য়’তা’রা করছে।ঠোঁট কামড়ে ধরে ও নিজের কান্না দমাতে পারে না যুথি। ডুকরে কেঁদে উঠে।
দা-দাদি উউনি চলে গেছে আমারে রাইখা।
ও দাদি!

এমন করে কেউ? সে তো আর চিরদিনের জন্য যায়নি।কয়েক বছর পরই ফিরে আসবে। তুই কাঁদলে নাত জামাইর ঐখানে মন টিকবো? তোর চোখের পানি তে তো আরো কষ্ট বাড়বো।এতো দূরের পথ যাচ্ছে তুই না কেঁদে দোয়া কর যেন সঠিক ভাবে পৌঁছাতে পারে।

আর কাদিস না বু।এই সময় এইখানে থাকা তোর ঠিক না ঘরে চল। তোকে সে ইচ্ছে করেই ঘুম পারিয়ে গেছে। নয়তো এই যে এখন কেমন করছিস এর থেকে ও বেশি করতি।আমাকে রাতে আস্তে করে ডেকে আমার দুই হাত ধরে অনুরোধ করে বলে গেছে তোরে যেন দেখে রাখি।আগলে রাখি। তার সন্তানের যেনো কিছু না হয়। নাত জামাই তোরে অনেক ভালোবাসেরে যুথি।তুই সজাগ থাকলে অনেক কাঁদতি তাই না ডেকেই চলে গেছে। বলেই যুথিকে ঘরে নিয়ে যেতে থাকে।
যুথি ও মূর্তির মতো ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
ঘরে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় যুথিকে যুথির দাদি। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে নানান গল্প শোনাতে থাকে যেন মেয়েটা একটু ঘুমায়।
যুথির চোখে তো আর ঘুম আসবে না। সে সকাল থেকে সব গুলো ঘটনা এক এক করে স্মৃতিচারণ করতে ব্যস্ত।

সকালে ইরহান ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখে তাছলিমা বানু আর সকলে কোথায় যেনো যাচ্ছে। তাছলিমা বানু আর লিমা কান্না করছে।
ইরহান এগিয়ে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়। তারপর সকলের উপর দৃষ্টি দিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে। কোনো ঝামেলা বা কারো কিছু হয়েছে কি না।
ইশান রা’গী চোখে তাকায়। এর জন্যই তো এমন হলো।আবার দেখো এসে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে।
ইরহান উত্তরের আশায় সকলের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কেউ তাকে কোনো উত্তর দেয়নি।

চুপচাপ চলে যায়। ইরহান এদের ব্যবহারে বেশ অবাক হয় আশ্চর্য এখন এদের রা’গের কারণ টা মাথায় ঢুকলো না।এদের তো সব দিয়ে এসে পরেছে।নিজে কষ্টে থেকে এদের সুখী করেছে।তাও এদের এতো কিসের রা’গ বুঝলনা।
এদের কান্না দেখে এগিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে। কিছু মানুষ দয়া দেখানোর ও যোগ্য না।
ইরহান গেইটের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। তারপর নিজেও ঘরে চলে যায়।

সারাদিন দুইজন এক সাথে ছিলো।ইরহান আর যুথি কেউ কাউকে চোখের আড়াল করেনি। সারাক্ষণ ইরহান যুথির পাশে বসে যুথির হাতটা আঁকড়ে ধরে বসে ছিলো।আর কিছু সময় পর পর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো যুথির দিকে। যুথিকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে।কতো শতো গল্প করেছে। বাচ্চা কে নিয়ে কতো কথা বলেছে।

দুপুরের দিকে ইরহানের ফোনে একটা ফোন আসে।জানতে পারে ইমনের এ’ক্সি’ডে’ন্টে’র কথা।আর এও জানে ইমনের অবস্থা শুরুতে খারাপ ছিলো এখন মোটামুটি ভালোই আছে। এতটুকুই জানতে পারে। ইরহান ইশান কে ফোন করতে নিয়ে ও করেনি।যখন ওরা বলেনি এসবের কথা ইরহান তাই আর যাবেও না দেখতে খোঁজ ও নিবে না হয়তো ভালোই আছে।
যাবে না বলেও যাওয়ার জন্য মন আনচান করছিলো ইরহানের যতোই মা আলাদা হোক।বাবা তো একই।একই বাবার র’ক্ত বইছে তিনজনের শরীরে।যুথিকে ইরহান ব্যাপারটা বললে যুথি বলে যাওয়ার দরকার নেই। বলেছে যখন ভালো আছে নিশ্চয়ই ভালো আছে। যুথি ইরহান কে আর যেতে দেয় নি।

এমনিতেই রাতে চলে যাবে।এগুলোর সামনে গিয়ে এখন লাভ নেই। এক শ;য়তান অসুস্থ হয়েছে।বাকি গুলো না যদি আবার এমন কিছু করে বা বলে যেটাতে ইরহান কষ্ট পায় তাই যুথি আর ইরহান কে যেতে দেয়নি।
বিকেলে যুথির দাদি ও নিজের সব জিনিস পত্র নিয়ে এসে পরে।রাতে যেহেতু ইরহান চলে যাবে তাই বিকেলেই এসে পরে।প্রথমে আসতে চান নি উনি।নাত জামাইয়ের বাড়িতে কিভাবে থাকবে? মানুষ কি বলবে? ইরহানের অনেক অনুরোধের পর রাজি না হয়ে পারেনি।

রাতের খাবার সকলে এক সাথে খায়।যুথির দাদি গিয়ে শুয়ে পরে খাবার খেয়েই।ইরহান ও যুথিকে নিয়ে শোয়। যুথি ইরহানের বুকে মাথা রেখে প্রচুর কাঁদে। একটাই কথা বলে আপনার যেতে হবে না বোকা পুরুষ কোথাও যেতে হবে না। আপনি চলে গেলে আমি থাকবো কি করে? আমার টাকা পয়সা কিছু লাগবে না। আপনি যাইয়েন না।
ইরহান প্রতি উত্তরে কিছু বলেনি বুকের মাঝে আগলে ধরে ছিলো।তারপর বলে আর কাঁদে না এবার একটু ঘুমাও।
না আমি ঘুমাবো না।আমি আপনাকে দেখবো একটুও ঘুমাবো না। আবার কবে এই বুকে মাথা রাখতে পারবো জানি না একটুও ঘুমাবো না।

বলে ইরহানের দিকে তাকিয়ে থাকে ইরহানের বুকে মাথা রেখে। ইরহান যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে যুথির চোখ লেগে যায় আর ঘুমিয়ে পরে বুঝতেই পারেনি।এই সুযোগে ইরহান যুথিকে না বলেই চলে গেলো।
যুথির দাদি ঘুমের মাঝে নড়ে উঠায় যুথির ভাবনায় ছে’দ ঘটে।এতো সময় আগের কথা গুলো ভাবতেছিলো।ভোরের আলো ফোটে উঠেছে চারদিকে।

যুথি শোয়া থেকে উঠে কি মনে করে আলমারি টা খোলে।ইরহানের যতগুলো জামা কাপড় ছিল সবই যুথি দিয়ে দিয়েছিল।কিন্তু এই খানে একটা টি-শার্ট দেখতে পায়। এটাও তো যুথি দিয়ে দিয়েছিল। টি-শার্ট এর উপরে ইরহানের মোবাইল রাখা।যুথির কলিজা মো’চড় দিয়ে উঠে। লোকটা কি ভুলে ফোন টা রেখেই চলে গেছে? এখন যোগাযোগ করবে কিভাবে? লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম।
ফোনটা হাতে নিতে গিয়ে দেখে ফোনের নিচে একটা কাগজ ভা’জ করে রাখা।
যুথি কাগজ টা হাতে নিয়ে মেলে দেখে একটা চিঠি। যুথি পড়া শুরু করে,,,,,,,,
এইযে আমার বাচ্চার আম্মু ❤️

খুব রে’গে আছো আমার উপর তাই না? অনেক কান্না ও করেছো ঘুম থেকে উঠে আমাকে না দেখতে পেয়ে। আমি কি করবো যুথি রানী? আমার যে আর কোনো উপায় ছিলো না। তোমাকে কান্নারত অবস্থাতে দেখে আমি কখনো আসতে পারতাম না। আমার যে আসাটা খুব জরুরি এখন তুমি আর আমিতো একা নেই। আমাদের মাঝে আরেকজন আসতে চলেছে তার কথাটা ও তো ভাবতে হবে তাই না? তুমি একদম মন খারাপ করবে না।নিজের খেয়াল রাখবে আর আমার বাবুরও। আমি তোমার থেকে বিদায় নিতে পারতাম না কখনোই।

আর না এই কথাগুলো তোমাকে আমি সামনা সামনি বলে যেতে পারতাম তাই চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে গেলাম। অনেক কিছু লিখার ছিল কিন্তু কিছুই আমি লিখতে পারতেছি না যুথি রানী। মোবাইল টা কিন্তু আমি ভুলে ফেলে আসিনি।ঐটা এখন তোমার আমি ইচ্ছে করেই রেখে এসেছি।আমি ঐ দেশে গিয়ে ফোন নিয়ে নিবো।এটা ছাড়া আমার যুথি রানী কে দেখবো কি করে? আর টি-শার্ট টা তোমার জন্যই রেখে এসেছি।আর আমি তোমার একটা ওড়না নিয়ে এসেছি। ওড়নার মাঝে তো আমার যুথির ছোয়া আছে তাই।

আর কেঁদো না।নিজের খেয়াল রেখো।আমি জানি আমার যুথি রানী ঠিক পারবে সে এতোটাও দূর্বল নয়।আমি পৌঁছে তোমায় ফোন দিবো ঠিক আছে? ফোনটা নিজের হাতের কাছে রাখবে সব সময়।
ভালো থেকো বউ।তোমার বর তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসে।
ইতি তোমার এ’কা’ন্ত বোকা পুরুষ।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২২

যুথি চিঠি টা পরে ইরহানের টি-শার্ট টা বুকের মাঝে আগলে ধরে নিচে বসে।চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরছে।মনে মনে একটা কথাই বলে,,,,
“আপনার যুথী রানী দূ’র্ব’ল খুব দূ’র্ব’ল আপনার ব্যাপারে আমি সবসময়ই দূ’র্ব’ল।”

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৪

1 COMMENT

Comments are closed.