খড়কুটোর বাসা পর্ব ২২

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২২
Jhorna Islam

“যা হচ্ছে হতে দিন, আল্লাহ আপনার ভাবনার চেয়ে অনেক বেশিকিছু ভেবে রেখেছে!”
গ্রামের দিকে এখনও সাধারণত রাত আট টা বা নয়টা মানেই অনেক রাত।সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তখন ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
রাস্তা ঘাট সব কিছুই শুনশান থাকে।যাদের খুব বেশি প্রয়োজন বা কাজ থাকে তাদের ছাড়া অন্য কাউকে বেশি দেখা যায় না।

রাতের অন্ধকারে তখন রাস্তা দিয়ে সি.এন.জি এর আলো দিয়েই যতোটুকু দেখা যায়। অন্য কোনোর আলো নেই।
ইরহান যে সি.এন.জি তে সেটা অনেকটাই দূরে এগিয়ে গেছে। ইমন ও সি.এন.জি করেই ফলো করছিলো ইরহান কে। সামনের সি.এন.জি আগে চলে যাওয়ায় ইমন তার ড্রাইভার কে তাড়া দেয়। সামনের টার কাছাকাছি যেনো যায়।আর সুযোগ বুঝে ঐ সি.এন.জি কে ধা’ক্কা যেনো দেয়। নয়তো কিছু একটা করতে মোটা অংকের টাকা দিবে সে ড্রাইভার কে। শুধু যেনো এ’ক্সি’ডে’ন্ট টা করায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ড্রাইভার টাকার লোভে রাজি হয়ে যায়। জোরে গাড়ি চালাতে থাকে। কিন্তু নি’য়তি মনে হয় অন্য কিছুই লিখে রেখেছিলো।
কথায় আছে না “পরের জন্য গ’র্ত খুঁ’ড়’লে সেই গ’র্তে নিজেকেই পরতে হয়।”
ইমনের সাথে ও তেমন কিছুই হয়েছে। হুট করেই এই ফাঁকা রাস্তায় কোথা থেকে একটা ট্রা’ক আসলো কেউ বুঝতেই পারলো না।

ট্রা’ক টা হয়তো ভাবছে গ্রামের রাস্তা এখন পুরোই ফাঁকা তাই অনেক স্পি’ডে চালিয়ে যেতে ছিলো।ট্রা’ক ভর্তি ইট হয়তো কেউ ঘর তুলবে তার জন্য। ট্রা’ক ড্রাইভার ফুরফুরে মনে স্পি’ড বাড়িয়ে চালাতে থাকে। হুট করে সামনে সি.এন.জি দেখে গাড়ির স্পি’ড তারাতাড়ি কমাতে যাওয়ার আগেই যা ঘটার ঘটে যায়। ইমনদের সি.এন.জি ততক্ষণে ট্রা’কের ধা’ক্কা খেয়ে খা’দে পরে যায়। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই।
সি.এন.জি ড্রাইভার আর ইমন দুইজন ছিটকে গিয়ে দুইজন দুই দিকে পরে।ইমন শুধু পরেনি মাথা গিয়ে গাছের সাথে বাড়ি খায়।

সি.এন.জি ড্রাইভার তেমন মা’রা’ত্ম’ক ব্যাথা না পেলেও কম ব্যাথা পায়নি। কিন্তু ইমন গুরুতর ভাবে আ’ঘাত পেয়েছে। ইমন শুধু একটা চিৎকার দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারিয়েছে। ড্রাইভারের এখনো জ্ঞান রয়েছে। সে ব্যাথায় চিল্লাতে থাকে।
ট্রা’ক ড্রাইভার ততক্ষণে তার ট্রা’ক নিয়ে উধাও। গ্রামের লোক যদি একবার টে’র পায় তাহলে তার গাড়ির দফারফা তো করবেই।সাথে তাকে ও মেরে আধামরা করবে।
ইরহানদের গাড়ি অনেক টাই আগে ছিলো।চলেও গেছে ইরহান জানতেও পারলো না তার জন্য ফাঁ’দ পেতে সেই ফাঁ’দে ইমনই পরেছে।

ইমন যাকে মারতে চেয়েছিল সে সুস্থ ভাবে বাড়িতে যাচ্ছে। আর সে এখানে খা’দে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে।কেউ তুলে হাসপাতালে নেওয়ার ও মানুষ নাই।
“একেই হয়তো বলে,,, উপরের দিকে থু থু ছুড়ে মারলে সেই থু থু এসে নিজের মুখেই পরে।”
ড্রাইভারের জ্ঞান থাকলেও নিজে থেকে উঠার তার সামর্থ নেই।ব্যাথায় জোরে জোরে কান্না করছে আর ওমা ওমা বলে যাচ্ছে। এতক্ষনে বুঝতে পারছে কি করতে যাচ্ছিলো সে। টাকার লোভে অন্ধ হয়ে সে কিনা অন্য একটা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার চিন্তা করছিলো? এই লোভের শা’স্তি ই এখন সে পাচ্ছে।

প্রায় অনেক সময় যাওয়ার পর কিছু মানুষের আর রিক্সার আওয়াজ শুনতে পায় ড্রাইভার টা।চিললিয়ে ডাকতে থাকে কেউ আছেন বাঁচান। দয়া করে বাঁচান। রিক্সা চালক আর তার পিছনে দুইজন লোক বসেছিলো।কারো কান্না আর চিল্লানোর আওয়াজ শুনে রিক্সা থামিয়ে দেয়। হাতে ট’র্চ ছিলো ট’র্চ এদিক ওদিক মারতে থাকে। তারপর নিচের দিকে টর্চ মারতেই র/ক্তা’ক্ত অবস্থায় ড্রাইভার কে দেখতে পায়।তিনজন ই এগিয়ে যায়। বুঝতে বাকি নেই এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে। ধরাধরি করে ড্রাইভার কে নিয়ে উঠার সময় ইমনের দিকে চোখ যায়।

একজন ড্রাইভার কে ধরে নিয়ে যায়। আর দুইজন ইমনের কাছে এগিয়ে গিয়ে ইমনের নাকের কাছে হাত নেয় দেখার জন্য বেঁচে আছে কি না। শ্বাস চলছে কিনা বুঝতে পারে না। তারপর হাত টেনে নিয়ে না’ড়ি পরীক্ষা করে। তারপর বুঝতে পারে এখনো বেঁচে আছে। দুইজন মিলে পাঁজাকোলে করে ইমন কে উপরে নিয়ে আসে। এখন দুইজন কে কিভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাবে ভাবতে থাকে। এর মধ্যে একটা সি.এন.জি দেখতে পায়। লোকটা হয়তো রাত হওয়ায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
এই সি.এন.জি করেই ইরহান গিয়েছে।ইরহান কে পৌঁছে দিয়েই লোকটা মাত্র এসেছে। এই সি.এন.জি করেই দুইজন কে হাসপাতালে নিয়ে যায় লোকগুলো।

ইরহান বাজার নিয়ে দরজা একটু ধা’ক্কা দিতেই খুলে যায়। এই মেয়ে টা কে বলেও ঠিক করতে পারলো না ইরহান।কতো বলেছে এভাবে দরজা খুলে রাখবে না।। ভিতর থেকে দিয়ে রাখবে আমি এসে ডাক দিলে তারপর দরজা খুলবে।কতো বিপদ আপদ আছে।কিন্তু এই মেয়ে শুনলেতো দেখো ঠিকই দরজা খুলে বসে আছে।
ঘরে ঢুকে দেখে চারদিকে অন্ধকার।আশ্চর্য যুথি এই সময় বাতি বন্ধ করে রেখেছে কেনো?
ইরহান যুথিকে ডাকতে ডাকতে অন্ধকারে বাতির সুইচের দিকে এগিয়ে যায়। সুইচে টিপ দেওয়ার আগেই হুট করে পিছন থেকে কেউ ঝাপটে ধরে ইরহান কে।

ইরহান ঘাবড়ে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়। এটা তার যুথি রানী স্পর্শতেই বুঝে গেছে। বুকের কাছে রাখা নরম তুলতুলে হাত দুটো আঁকড়ে ধরে মুখের কাছে এনে চুমু বসায়।হাতের রেশমি চুরি গুলো তখন মন মাতানো রিনিকঝিনিক শব্দে বেজে উঠে।
কি ব্যাপার ম্যাডাম আজ মনে হয় শাড়ি পরেছে!
হুম।

আমিতো আমার যুথি রানী কে এখনো শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতেই পারলাম না।তারপর যুথির হাত ছেড়ে ইরহান বাতি জ্বালিয়ে বলে দেখিতো সামনে এসো কেমন লাগছে দেখি।
যুথি নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করে ধরে।
কি হলো ম্যাডাম সামনে আসুন না।এই অ’ধ’ম কে একটু চোখ ভরে দেখার সুযোগ করে দিন।
পরে দেইখেন আগে আপনাকে একটা কথা বলার আছে।
হুম বলো শুনি কি কথা। তোমার কন্ঠের ঐ মিষ্টি সুর শুনে আমার কানটা ধ’ন্য করি।
আপনি আগে চোখ বন্ধ করুন।

কেনো?
আহা করুন না।এতো প্রশ্ন কেন করেন।
আচ্ছা বাবা করলাম বন্ধ।বলেই ইরহান তার দুই চোখ বন্ধ করে।
একদম চি’টিং করবেন না কিন্তু।
ওকে।
যুথি তারপর ইরহান কে ছেড়ে ইরহানের সামনে এসে দাঁড়ায়। তার বোকা পুরুষ কি সুন্দর করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইরহান খবর টা পেয়ে কি করবে ভাবতে পারলো না যুথি। ইরহানের গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,,,

আমার বোকা পুরুষ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।সে দূর দেশে যাওয়ার আগে আমাকে একটা উপহার দিয়ে যাচ্ছে। তারপর ইরহানের একটা হাত নিজের পেটের উপর রেখে বলে,, আমার বোকা পুরুষের অ’স্তিত্ব এখানে। আপনি বাবা হতে চলেছেন।কথাটা বলেই ইরহানের গালে একটা চুমু খেয়ে ইরহান কে ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে যুথি।
কিছু সময় পরও ইরহানের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খুলে।ইরহান একই ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু এখন ইরহানের চোখ দুটো খোলা। ইরহানের হাত এখনও যুথির পেটেই আর দৃষ্টি ও সেখানেই।
কি হলো আপনি খুশি হননি?

যুথির কথায় ইরহানের ধ্যা’ন ভাঙে। যু-যুথি তুমি কি বলেছো আবার বলোতো।আমি মনে হয় ভুল শুনেছি।
কিছু ভুল শুনেননি।সত্যি শুনেছেন।
ইরহান যুথির চোখের দিকে তাকালে যুথি চোখের ইশারায় বলে হুম।
ইরহান আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না।হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পরে। তারপর শাড়িটা একটু সরিয়ে পেটে অজস্র চুমু আঁকতে থাকে। আর অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে যুথি তুমি এটা আমায় কি বললে? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এতো কষ্টের মাঝে ও আমার মন খুশি হয়ে গেলো যুথি।

তারপর দাড়িয়ে যুথিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। কাঁধে চোখের পানির অ’স্তি’ত্ব টে’র পায় যুথি।
ইরহান কিছু টা স্বাভাবিক হয়ে আসলে যুথি বলে উঠে,,, এটা কোনো কথা হলো বলেন তো? আমি কতো কষ্ট করে সাজলাম আর আপনি আমাকে ভালো করে দেখলেনই না হুহ্।
যুথির কথায় ইরহান যুথিকে ছেড়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।তারপর পা থেকে মাথা পর্যন্ত মোহনীয় দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

আমার খড়কুটোর বাসায় মনে হচ্ছে আজ চাঁদের আলো নেমে এসেছে!
যুথি ইরহানের কথায় আর দৃষ্টিতে ল’জ্জা পেয়ে যায়। কথা ঘুরাতে বলে খাবেন না? অনেক রাত হয়ে গেছেতো।
খাবো তো তবে অন্য কিছু। ভাত খাওয়ার খিদে নেই আজ।মন যে অন্য কিছু চাইছে।বলেই যুথিকে কোলে তুলে নেয়। যুথি লজ্জায় ইরহানের বুকে মুখ গুঁজে।

ছোট্ট ঘরটায় চাঁদের আলো উঁকি দিচ্ছে জানালার ফাঁক দিয়ে। ঘরের ভিতর দুইজন মানুষ একে অপরের ভালোবাসায় সি’ক্ত।
ইরহানের ভালোবাসায় যখন যুথি অন্য দুনিয়ায় বি’চরণ করছে তখন ইরহান যুথির কপালে নিজের অধর ছুইয়ে গেয়ে উঠে,,,,,
“তুই হবি রাত আর আমি হবো চাঁদ!
জোসনায় ঘর আমাদের। ”

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২১

ভোর রাত্রে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ইরহানের। যুথি তার বুকেই মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।
কান্নার আওয়াজ শুনে ইরহানের কপাল কুঁচকে যায়।এতো সকালে কে কান্না করছে? কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে তাছলিমা বানু।
ইরহান যুথিকে বালিশের উপর আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে নিজেকে ঠিক ঠাক করে বেরিয়ে যায় দেখার জন্য কি হয়েছে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৩