খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৪

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৪
Jhorna Islam

হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সকলে।ইমন কে কারো ভালো করে দেখার সৌ’ভাগ্য হয়নি।এক ন’জরের জন্য একটু দেখতে পেয়েছিল। মাথায়, হাতে পায়ে ব্যা’ন’ডে’জ করা। জ্ঞা’ন নেই।এখনো ফিরে নি।তবে ডাক্তার বলেছে যখন নিয়ে এসেছিলো তখন অবস্থা খুবই গু’রু’ত’র ছিলো।তখনকার অবস্থা থেকে এখন একটু ভালো হলেও খুব বেশি ভালো না।
ভালো করে ইমন কে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। নার্স ঢুকতে দিচ্ছে না। ডাক্তারের খবর নেই।এসব হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া খুবই দু’স্ক’র। চিকিৎসা ব্যবস্থা ও তেমন ভালো না। অথচ হাসপাতাল জুড়ে রোগী আর রোগী।

ডাক্তারের থেকে কয়েকজন নার্সের ভাব বেশি। এমন ভাব করে যেনো ওরাই ডাক্তার।সবাই তো আর সমান হয় না।সব দিক দিয়েই খারাপ ভালো থাকে।এদের বেলাও তেমন ঘটেছে। তেমনই এক নার্স এসে পরেছে। ইশান এসেই এক নার্সের সাথে ঝা’মে’লা পাকিয়ে বসে আছে। প্রচুর কথা কাটাকাটি করে এমনকি নার্সের গায়ে হাত ও তুলতে যায়।
তাছলিমা বানু আর দিনা অনেক কষ্টে ধরে রেখেছে নয়তো আজ কি যে হতো।ঐ নার্স রা’গ দেখিয়ে আর এইদিকে আসেনি। অন্য নার্স পাঠিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই নার্সটা আবার বেশ সুন্দরী। এসেই ইশানের সাথে স’খ্য’তা গড়ে তুলেছে। কি হেসে হেসে কথা বলছে।ইশান তো চোখ ই সরাচ্ছে না।চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে নার্সের শরীরটা কে ছুঁয়ে দিচ্ছে ।।
দিনা সবই দেখছে।কিছু বলতে পারছে না। যদি আবার এখানেই মারা শুরু করে।
দিনা তাছলিমা বানুর দিকে তাকায় এই আশায় এই মহিলা নিজের ছেলেকে হয়তো কিছু বলবে।কিন্তু না সব দেখেও না দেখার ভা’ন করে আছে।অথচ তাছলিমা বানুর চোখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তিনি ঠিকই নিজের ছেলের ন’জর বুঝতে পেরেছেন।

দিনার আর এসব স’হ্য হলো না।ইমন ও নার্সের লু’তু’পু’তু।তাই সে বলে একা একাই বাড়ি চলে আসে।
নার্সের মাধ্যমে বিকেল বেলা ডাক্তারের দেখা পায়। ডাক্তার এসে ইমন কে ভালো করে চে’ক করে।তারপর তাছলিমা বানু আর ইশান কে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যায়। লিমা কে দাঁড় করিয়ে রেখে দুই মা ছেলে ডাক্তারের সামনে গিয়ে বসে।
ডাক্তার জানায়,,,

দেখুন এখানে রাখতে পারবেন ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। উনার আ’ঘাত খুবই গু’রু’ত’র। বড় বড় পরীক্ষা করা লাগবে। আমাদের এইখানে ভালো যন্ত্রপাতি নেই।উনি মাথায় আর পায়ে গু’রু’তর আ’ঘাত পেয়েছে । মাথার থেকে বেশি পায়ের টা। অপারেশন করা লাগবে।
শহরে নিয়ে যান। বেশি দেরি করবেন না। নয়তো যা অবস্থা পা কেটে ফেলে দেওয়া লাগবে।যা করার দ্রুত করুন।।
ইশান জিজ্ঞেস করে কি পরিমাণ টাকা লাগতে পারে?

ডাক্তার জানায় টাকা লাগবে প্রচুর। লাখের উপরে কিন্তু পরিমাণ কতো জানা নেই।
তাছলিমা বানুর ক’লিজা মো’চড় দিয়ে উঠে। এসব শুনে হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে। তার ভালো ছেলেটা কিভাবে পরে আছে। এখনও কতো কতো টাকা লাগবে।টাকার ব্যাপার না এখন যে তার ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে। তাদের যে এতো হ’য়’রা’নি করতে হচ্ছে।

এসব কিছু ঐ ইরহানের জন্য হয়েছে। তার ছেলেটা অসুস্থ হয়ে মৃ’ত্যু’র সাথে ল’ড়াই করছে। সব ইরহানের জন্য।
মনে মনে বলে,, তোর কোনোদিন ভালো হবে না ইরহান।কোনোদিন ভালো হবে না তোর।তোর জন্য আমার কোল খালি হয়ে যেতো।

তুই সুখের সন্ধানে ছুটিস না কেন তুই সুখ পাবি না। আমার সুস্থ সবল ছেলেটা বাড়ি থেকে বের হয়ে এখন হাসপাতালে পরে আছে। তুই যদি আমার কথা মেনে নিতি।আমার কথা মতো চলতি তাহলে কিছু হতো না।সবাই সুখে থাকতাম।
তাছলিমা বানু ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইমনকে এক পলক দেখে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে শহরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। আর দেরি করা যাবে না। আরো আগেই নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। কেন যে এসব ডাক্তার আর হাসপাতাল কে ভরসা করতে গেলো।

ইশান সম্মতি জানিয়ে সব ব্যবস্থা করতে গেলো।
ঐদিন ও ইশান যেতে চেয়েছিলো ইরহানের ক্ষ”তি করতে। কিন্তু ইমন বলেছে নিজে যাবে।ইশানের দ্বারা নাকি কিছু হবে না। এতো এতো সুযোগ পেয়েও সে কাজে লাগাতে পারেনি।এইবার ইমন ই করবে।
ইমনের কথা শুনে প্রথমে প্রচুর রা’গ উঠে গিয়েছিল। বলেছিলো আমিই যাবো এবার দেখিয়ে দিবো।কিন্তু ইমন দেয়নি।ভাগ্যিস দেয়নি নয়তো ইমনের জায়গায় ইশান থাকতো। কথাটা ভেবেই স্ব’স্তি’র নিশ্বাস ছাড়ে ইশান।

ইরহান চলে গেছে আজ দুইদিন হলো।গিয়েই ফোন করেছিলো যুথির কাছে কিন্তু সে ফোন ধরেনি।ইরহান ভেবেছে যুথি হয়তো ঘুমায় নয়তো ফোনের কাছে নেই এজন্য ধরতে পারে নি।
তাই দাদির কাছে ফোন দিয়ে জানায় সে ঠিক ঠাক ভাবে পৌঁছাতে পেরেছে। কোনো অসুবিধা হয়নি।
ঐ দেশে যাওয়ার একদিন পরই নতুন ফোন কিনে ইরহান। তার যুথি রানীর সাথে যে কথা বলতে হবে। এক ন’জর দেখতে হবে।নয়তো বুকের তো’লপা’ড় কোনো ভাবেই শান্ত হবে না। ঐ মেয়েটার মুখে তাকালে মন আপনা আপনি শান্ত হয়ে যাবে।
কল দেয় যুথি কে ইরহান কিন্তু বেজে বেজে কেটে যায়। যুথি রিসিভ করে না। অগনিত বার কল দিয়ে ও যুথিকে পায় না। কয়েকবার কল রিসিভ হয় ইরহান উৎসাহের সাথে কথা বলতে যায়। অপর পাশের ব্যক্তির গলা শুনে ইরহানের সব উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।

যুথি কল রিসিভ করে দাদিকে ধরিয়ে দিয়ে নিজে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যুথির দাদি বলেও ইরহানের সাথে একটু কথা বলাতে পারে না।
যুথির ব্যবহারে ইরহান খুব কষ্ট পায়।মেয়েটা কি বুঝতে পারে না তার কন্ঠ স্বর শোনার জন্য আর তাকে এক ন’জর দেখার জন্য একটা মানুষ কতোটা তৃ’ষ্ণা’র্থ হয়ে আছে।
ইরহান কল করা থামায় না।দেখবে কতো সময় তার যুথি রানী কথা না বলে অভিমান করে থাকতে পারে।
ইরহান কল দিলে যুথি এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছে করে লাফিয়ে পরতে। কল রিসিভ করে তার বোকা পুরুষ কে দেখতে কিন্তু এখন দেখলে যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।

যতোই নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুক।যুথিতো ভালো নেই একদম ভালো নেই।
ইরহান যেদিন চলে গেছে ঐদিন থেকেই স্কুলে যায় যুথি।বাড়িতে থাকলে একদম ঠিক থাকতে পারবে না।
ইরহান চলে যাওয়ার আগে বলে গেছে যেন স্কুলে পড়ানো ছেড়ে দেয়। এই শরীরে আর কোন কিছু করতে হবে না। যুথি বলছে আরো কয়েক মাস পর ছাড়বে।
বাড়ির সব কাজ যুথিই করে।দাদি বকেও যুথিকে আটকাতে পারে না। তার সেই এক কথা তুমি কয়দিন বিশ্রাম নাও।আমি এখন করি।পরে তুমি সব করো।
আজ ও যুথি রান্না করে ঘরের সকল কাজ করে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ফোন নিতে মনে থাকে না।বাড়িতেই পরে থাকে।

স্কুল ছুটির পর যুথি আর সীমা একসাথে গল্প করতে করতে হেঁটে আসছে। দুইজন বান্ধবী হয়ে গেছে। সব কিছু একজন আরেকজন কে শেয়ার করে।
নানান কথার মাঝে সীমা বলে উঠে,, এই যুথি জানিস আমার উনি আমাকে আজ সকাল সকাল ই ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আজ বিকেলে বলেছে দেখা করার জন্য।
শাড়ি পরে যাবো ভাবতেছি কেমন হবেরে?
যুথি হাটতে হাটতে সীমার দিকে তাকিয়ে বলে,,ভালোই হবে শাড়ি পরেই যা।
সীমার মুখে কি উৎফুল্লতা।তার প্রিয় মানুষটার সাথে দেখা করা নিয়ে। সীমার আ’কদ করে রাখা। কয়দিন পরেই উঠিয়ে নিবে তাকে।

অনেক দিন পর দেখা হবে বুঝলি যুথি। এই ভালোবাসা দিবস নিয়ে কতো কিছু ভেবে রেখেছি।
যুথি চুপচাপ সীমার কথা শুনে।
এইই যুথি ভাইয়া তোকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানায় নি? দেশে থাকলে আজ মনে হয় তোর দিন টা খুব স্পেশাল করে দিতো।

উনি দেশে থাকতে আমার প্রতিদিন ই স্পেশাল ছিলো।আর এসব আমি পালন করি না।
প্রবাসীর বৌদের আবার ভালোবাসা দিবস?
এ’কা’কি’ত্ব’ই তাদের স’ঙ্গী।
দিনে সংসারের কাজ, রাতে অপূর্ণ কিছু স্বপ্ন ও চাওয়া নিয়ে ঘুম,
এটাই জীবন।
কথাটা বলেই যুথি জোরে জোরে হেটে গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়।
সীমা ঐখানে ই দাড়িয়ে যুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। মেয়েটা কে কি সে কষ্ট দিয়ে ফেলল?
কাল দেখা হলে আগে স’রি বলে নিবে ঠিক করে নেয় সীমা। তারপর নিজেও নিজের বাড়ি চলে যায়।

ঘরের কাছে আসতেই যুথির দাদি যুথিকে বকাবকি শুরু করে দেয়।
কি তা’মা’সা শুরু করছস তুই ছে’রি? পোলাডারে কষ্ট দিয়া তুই ঢেং’ঢেং কইরা ঘুইরা বেড়াস?
বলি কার লাইগা গেছে সে দূর দেশে? নিজের পেটের দায়ে তো আর অন্য দেশে পাড়ি জমায় নাই।নিজের এক পেট ছিল চাইলে দেশেই পইরা থাকতে পারতো। “যেইখানে রা’ই’ত ঐখানেই কা’ই’ত।”

তোর আর নিজের পোলাপাইনের কথা চিন্তা কইরা সব মায়া ত্যা’গ কইরা গেছে।তুই কি শুরু করলি কই তুই ছেলেটার পাশে থাকবি যেনো মন খারাপ না করে সেইদিকে খেয়াল রাখবি।আর তুই কথাই বলস না।
সেই যে একের পর এক কল দিতাছে এইটা তোর শরীরে লাগে না। থাকতে মূল্য দিতে শিখ।এতো অবহেলা করিস না। পরে নয়তো আফসোস করবি।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৩

দাদির মুখে এই কথা শুনে যুথির বুকটা ধ’ক করে উঠে। তারাতাড়ি বড় বড় পায়ে ঘরে ঢুকে।
যুথির দাদি যুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। এবার ঠিক কল ও ধরবে আর কথা ও বলবে।এই কথা গুলো না বললে আরো কয়েকদিন মনে অভিমান পো’ষে রাখতো।এতে করে দুইজন ই ক’ষ্ট পেতো।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৫