খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৫

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৫
Jhorna Islam

ইমনকে ডাক্তার বলার কয়েক ঘন্টা পর ই শহরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। সব ব্যবস্থা খুব দ্রুত করা হয়েছে। আরো আগে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। এইখানে ফেলে রাখা একদম ঠিক হয়নি।শুধু শুধু কষ্ট করেছে।
শহরে ভালো একটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ইমন কে। ডাক্তার ইমনের সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভালো করে। এখানে ও উনি জানায় মাথারটা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো পা নিয়ে। পায়ে অপারেশন করা লাগবে।খুবই বা;জে ভাবে আ’ঘাত পেয়েছে ডান পায়ে।

দুইদিনের ভিতরে অপারেশন করানো লাগবে।নয়তো পা কেটে ফেলে দিতে হবে। আর এই অপারেশন করেও পা ঠিক হবে কি না সেটা ডাক্তার রা সিউরিটি দিতে পারতেছে না।
অপারেশনের কয়েকমাস পর পা ঠিক হলেও হতে পারে না ও হতে পারে।ঠিক না হলে ডান পায়ে কখনো হাটতে পারবে না।
সব শুনে তাছলিমা বানু বলে,, অপারেশন করার জন্য। এতো শতো ভেবে এখন কাজ নেই আগে অপারেশন করাক পরের টা পরে দেখা যাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ডাক্তার জানায় অপারেশনে অনেক টাকা লাগবে।সাথে সকল খরচ মিলিয়ে তিন লাখের মতো পরবে।এতো টাকা শুনেও তাছলিমা বানু চুপ।যতো টাকাই লাগুক এখন তো আর টাকার মায়া করলে চলবে না। আগে নিজের ছেলে পরে সব কিছু।
ডাক্তার কে বলে দেয় অপারেশনের সব ব্যবস্থা করার জন্য। ঠিক সময়ে এনে টাকা জমা দিয়ে দিবে।
এতোকিছুর মাঝে ইশান ছিলো নি’র্বা’ক।তার মাথায় ছোট খাটো একটা বা’জ পরেছে।এতো টাকা লাগার কথা শুনে। তাও যদি ডাক্তার নিশ্চয়তা দিতো যে ইমন ঠিক হবে। নিশ্চয়তা ছাড়া এতোগুলা টাকা খরচ করার কোনো মানেই খুঁজে পাচ্ছে না ইশান।

দিনা ওদের সাথে আসেনি বাড়িতেই রয়ে গেছে। লিমা কে তাছলিমা বানু ইমনের কাছে রেখে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। লিমার পরিবার ও খবর পেয়ে নাকি আসতেছে এইখানে। এতোকিছুর মাঝে লিমা তার পরিবার কে খবর টা বলতে একদম ভুলে গেছে। শহরে আসার পথে তাদের জানিয়েছে।
তাছলিমা বানু লিমার পরিবার থেকেই এসব টাকা শো’ধ তুলবে ভেবে নেয়। আপাতত নিজের থেকেই নিতে হবে। এসব নিয়ে ঝামেলা করলে এখনও চলবে না। তাই পরে এসব নিয়ে আলোচনা তে বসবে।
বাড়ি থেকে টাকা আনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তাছলিমা বানু আর ইশান।বাসে বসে ইশান বলে উঠে,, এসবের কি দরকার মা।ডাক্তার তো কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না পা ঠিক হবে কি না। তাহলে এতো টাকা খরচ করার কি দরকার? শুধু শুধু টাকা গুলো জলে ফেলবে।

তাছলিমা বানু ইশানের কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে, এসব তুই কি বলছিস ইশান? ভাই হয় ও তোর।
আমি জানি ও আমার ভাই। তোমার তো আর এক ছেলের কথা ভাবলে চলবে না । আমার কথা ও ভাবতে হবে। আমার ও ভবিষ্যৎ আছে।
এখন তো সব টাকা দুইজনের ভাগ থেকে যাবে। অপারেশন হবে ভাইয়ের টাকার ভাগ তো আমার থেকে ও যাবে।

— তুই কি বলতে চাইছিস সোজা সোজি বল ইশান।
— এই যে অপারেশন দুই দিনের ভিতর করতে হবে এর মধ্যে তুমি সব ভাগাভাগি করে দাও।ভাইয়ের অপারেশন এর টাকা তার ভা’গ থেকে যাক।আমার ভা’গ থেকে কেন যাবে?
— বাহ্ এই না হলে ভাই।বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পরে আছে। আর তার চিকিৎসার জন্য টাকা নিতে হবে তার ভা’গ থেকে।
— টাকার কাছে সবাই পর মা।তাছাড়া আমার কথাটাও তো ভাববে একবার। আমার ও ভবিষ্যৎ আছে।
— তাছলিমা বানু ইশানের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবে। তারপর ইশানকে বলে,,,,

ঠিক আছে তুই কাগজ পত্রের ব্যবস্থা কর আমি তোদের দুইজনের নামে সমান করে লিখে দিচ্ছি। আর অপারেশনের টাকা না হয় ইমনের ভাগ থেকেই যাবে।
কথাটা শোনা মাত্র ইশানের মুখে হাসি ফোটে উঠে। টাকার টেনশনে এতোসময় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিল।এখন স্ব’স্তি! এখন আর নিজের ভা’গ থেকে একটা টাকা ও যাবে না।

ঘরে ঢুকে যুথি তার বোরখা না খুলেই ফোন নিয়ে বসে। কিন্তু একি লাস্ট কল এসেছে আরো আধা ঘণ্টা আগে। প্রায় অনেক সময় ফোনের দিকে তাকিয়ে রয়। কল না আসায় ফোন টা বিছানায় রেখে উঠে দাঁড়ায় তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই বোরখা খুলে।
এখনো ফোনে কল না আসায় তারাতাড়ি করে যায় হাত মুখ ধোঁয়ার জন্য। হাত মুখ ধোঁয়ার পর এসে আবার ফোন হাতে নেয়। কিন্তু ইরহান ফোন দেয় না। নিজেও দিতে পারছে না হাত পা কেমন কাঁপছে। যুথি বুঝে গেছে নিজে থেকে দিতেও পারবে না।

ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ইরহান কল দিতে দিতে একটু সাজুগুজু করে নেক।উঠে গিয়ে মাথাটা ভালো করে আছড়িয়ে নেয়।
চোখে কাজল দেয়। ঠোঁটে হালকা একটু লিপস্টিক দেয়। তারপর আবার মোবাইল হাতে নিয়ে বসে।কিন্তু কিসের কি ইরহানের কল তো আসছে না।
দুই ঘন্টা ধরে বসে ভিতরে অ’স্থি’র’তা কাজ করতে থাকে যুথির ভিতর।তার বোকা পুরুষ এখন আর কল কেন করছে না।তার উপর কি রা’গ করেছে?

এরই মধ্যে যুথির দাদি ঘরে ঢুকে দেখে যুথি ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিরে যুথি কথা হয়েছে নাত জামাইর সাথে?
যুথি ছলছল নয়নে তাকায় তার দাদির দিকে। ধরা গলায় বলে, দাদি উনি আর কল দিচ্ছে না কেন?
কথা হয় নাই?
না।
মনে হয় কাজে আছে। চিন্তা করিস না ঠিক হাতে সময় হলেই কল দিবে।এসে খেয়ে নে।
তুমি খেয়ে উঠো আমি উনার সাথে কথা বলে পরে খাবো।
এখন বুঝতে পারছিস অপেক্ষা করেও না পেলে কেমন লাগে?
এরমধ্যেই যুথির ফোন টা বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করছে বোকা পুরুষ লিখা নামটা। যেটা যুথি নিজেই দিয়েছে ইরহানের নতুন নাম্বারে।

যুথির দাদি বুঝতে পেরেছে ইরহান কল দিয়েছে। তাই যুথি কে চোখের ইশারায় কথা বলতে বলে বেরিয়ে যায়।
যুথি কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করে গলা শুকিয়ে গেছে। কল টা রিসিভ করতেই ইরহানের হাস্যজ্জল মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
যুথি ফোনটা হাতে নিয়ে ইরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বালিশে মাথা রেখে শোয়।
প্রথম কয়েক মিনিট নীরবতার সাথে দুইজন দুইজনের দিকে অপলকে তাকিয়ে রয়।
কিছু সময় পর ইরহান নীরবতা ভেঙে বলে উঠে,,, “বাচ্চার আম্মু! ”

এই বাচ্চার আম্মু!
ও আমার যুথি রানী!
ইরহানের আদুরে ডাক শুনে যুথির চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে নীরবে।
কিছু বলবা না?
“আমার সোনার ময়না পাখি চোখে কাজল ধোঁয়া পানি।
সে আমার জন্য কাঁদে জানিরে আমি জানি।
দূর প্রবাসে পইরা থাকি একলা লাগে খুব
চোখের সামনে ভাইসা উঠে সোনাপাখির মুখ।
তার লাইগা ছটফট করে আমার পোড়া বুক!”

যুথি আর চুপ করে থাকে না। তার বোকা পুরুষ কে আর সে কষ্ট দিবে না।
কেমন আছেন আপনি বোকা পুরুষ?
— আহ্ এতো সময় কেমন ছিলাম নিজেও জানিনা। কিন্তু এখন আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি। আমার বাচ্চার আম্মু কেমন আছে?
— দেখে কি মনে হচ্ছে? ভালো করে দেখে বলুন কেমন আছি।
— রাতে ঘুমাও না চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

কেউ একজন আমাকে ঘুমের মধ্যে রেখে চলে গেছে। তাই ঘুমের সাথে আ’ড়ি করেছি।
ঘুমের মধ্যে না রেখে আসলে আমি আর এই জনমে এই দেশে আসতে পারতামনা। সে যাই হোক এখন থেকে ঠিক সময় ঘুমাবা আর খাবার খাইবা।বেলা তো অনেক হয়েছে দুপুরের খাবার খেয়েছো?
উহু পরে খাবো।

পরে না এখন খাবার নিয়ে আসো যাও।আমি লাইনে আছি। মোবাইলের টা বালিশের মাঝে সুন্দর করে রাখো। আর গিয়ে খাবার নিয়ে আসো খেতে খেতেই কথা বলতে পারবা।
যুথি আর অমত করেনি আসলেই প্রচুর খিদে লেগেছে তার।গিয়ে খাবার নিয়ে এসে বসে।খেতে খেতে ইরহান কে জিজ্ঞেস করে আপনি সকালে খেয়েছিলেন?
হ্যা।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৪

যুথি খাওয়া শেষ করে এসে আরেকটা বালিশ এনে শোয়।মোবাইলের বরাবর হয়ে।
এবার চোখ বন্ধ করে ঘুমাওতো।এই কয়দিন ঘুমাওনি ঠিকমতো।
না আমি ঘুমালে আবার আপনার দেখা কখন পাবো জানিনা।
আমি কল কাটবো না তুমি ঘুমাও।তুমি ঘুমাইলে পরেই কল কাটবো।
তারপর যুথি ইরহানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় ঠিকই ঘুমিয়ে পরে।ইরহান স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। তারপর কল কেটে কাজে লেগে পরে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৬