খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৬

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৬
Jhorna Islam

একবার দেখা পাবো শুধু এই আ’শ্বা’স পেলে
এক পৃথিবীর এটুকু দূ’র’ত্ব
আমি অবলীলা’ক্র’মে পাড়ি দেবো।
তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার
আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।
___ মহাদেব সাহা

যুথির এখন সময় যেন কাটতেই চায় না। শুধু এই আশায় দিন পাড়ি দেয় কখন সময় হবে তার বোকা পুরুষ তাকে কল দিবে আর সে ঐ মুখ খানা দেখে তৃ’ষ্ণা’র্থ হৃদয়ের তৃ’ষ্ণা মিটাবে।
প্রতিদিন নিয়ম করে কথা হয়। দূরত্ব বাড়লে নাকি ভালোবাসা কমে যায় ইরহান যুথির ভালোবাসা এক ফোটা ও কমেনি।দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সত্যিকারের পবিত্র ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয়।
আজ শুক্রবার কাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কথা বলেছে যুথি ইরহানের সাথে। ইরহান কতো বলেছে ঘুমাও এখন তোমার প্রচুর ঘুমের দরকার নয়তো শরীর খারাপ করবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

যুথির সেই এক কথা এসবে শরীর খারাপ করবে না আমার।আপনার সাথে কথা না বলতে পারলে আর মন ভরে আপনাকে দেখতে না পারলেই শরীর মন দুটোই খারাপ হবে আমার।
যুথি একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। তারপর আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে হাত মুখ ধুয়ে আসে।হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখে যুথির দাদি খাবার নিয়ে বসে আছে।
যুথির খাবার দেখেই খুদা লেগে গেছে। তাই দেরি না করে তারাতাড়ি খেতে বসে পরে। খেতে খেতে দাদি কে জিজ্ঞেস করে,, দাদি তুমি খাইছো?

না খাবো তুই আগে খাওয়া শেষ কর।
কি বলো কতো বেলা হয়ে গেছে এখনো না খেয়ে বসে আছো কেন? আমার সাথেই খেতে বসতে পারতে।
আমি খেয়ে নিবো বু তুই টেনশন নিস না তুই ভালো করে খা।
খেয়ে নিও কিন্তু তুমি।
হুমম খেয়ে নিবো।

যুথি খাবার শেষ করে পুকুর পাড়ের দিক থেকে একটু ঘুরে আসে।নয়তো বসে থাকতে থাকতে হাঁটু আর কোমড় ধরে যায়।
হাটাহাটি করে এসে ফোন হাতে নিয়ে বসে।তার মানুষটার কল দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
ঠিক টাইমে ইরহান কল দেয়।যুথি কল রিসিভ করে সালাম জানায়।
ইরহান সালামের জবাব দিয়ে জানতে চায়,,, আমার বাচ্চার আম্মুর শরীর ঠিক আছে?
একদম ঠিক আছি।
সকালের খাবার খেয়েছো?
হ্যা আপনি খেয়েছেন?

এইতো মাত্র খেয়ে তারপর তোমায় কল দিলাম।
ফোন টা একটু পেটের কাছে নাও তো দেখি সে কতটুকু বড় হয়েছে কেমন আছে।
যুথি পেটে হাত দিয়ে দেখায় এখনই কি বড় হবে?আমাকে দেখে বুঝাই যায় না। আর চিন্তা করবেন না সে ভালো আছে।
কিন্তু একটা কথা বলুনতো!
কি কথা?

আপনি এরকম শুকাইতেছেন কেন?
যুথির কথায় ইরহান মুচকি হেসে বলে,, তাই নাকি আমি শুকিয়ে গেছি? কি করবো বলো এখানে তো আর বউয়ের ভালোবাসা আদর কিছুই পাচ্ছি না। আর না বউয়ের হাতের রান্না খেতে পারছি তাই মনে হয় শুকিয়ে যাচ্ছি। ব্যাপার না সব জমিয়ে রাখো দেশে গেলে বেশি বেশি আদর ভালোবাসা দিয়ে মোটা বানায় দিও।
যাহ্ আমি মজা করছি না।

শুকাইনি বাচ্চার আম্মু। আমি আগের মতোই আছি।ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছে এমনই মনে হয়। আমার কথা ছাড়ো তুমি ঠিক সময় খাবার খাবে।
আর কতো খাবো? খেতে খেতে দেখেন না মোটা হয়ে যাচ্ছি!
এসব বলে না। আমি কাজ করি কার জন্য? যখন যেইটা খেতে মন চায় খাইবা।যেইটা পরতে বা কিনতে মন চায় কিনে ফেলবা। যতো মোটা হওয়ার হও আমার কোনো সমস্যা নেই। মোটা হওয়ার ভয়ে খাওয়ায় কোনো অনিয়ম করবা না। টাকার কোনো চিন্তা করবানা।

শুনো আজ বিকেলের দিকে গিয়ে তোমার নামে ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে এসোতো।আমার দেশে থাকতেই খোলা দরকার ছিলো। কিন্তু মনে ছিলো না। তারপর ঐ দিক দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে একটু চে’ক আপ করিয়ে আসবা।
বাজার সদাই নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। রাস্তার ঐ পাশের লিয়াকত আছে না? ওরে আমি বলে আসছি।প্রতি সপ্তাহে বাজার সে করে দিবে।কি কি লাগবে লিস্ট করে দিবা ও এনে দিবে। আমি এখান থেকে ওকে টাকা পাঠিয়ে দিবো।যা যা লাগবে বলে দিবা এনে দিবে বুঝছো?

ইরহানের কথা মতো যুথি দাদি কে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে আসে।চে’ক আপ ও করিয়ে আসে।
রাতে ইরহান কল দিয়ে যখন বলে,, মতো কি লাগবে বলতে কখনো লজ্জা বা সংকোচ পাবে না বাচ্চার আম্মু।
যুথি তখন হুট করে বলে উঠে,, “আমার আপনাকে লাগবে বোকা পুরুষ। ”

ইমনের অপারেশন হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আ’ঘাত আর পায়ের জন্য সব মিলিয়ে এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে বলেছে।
এই দিকে তাছলিমা বানু সব জায়গা সম্পত্তি দুই ছেলের নামে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। ইশান তাছলিমা বানুর সাথে ভাব জমিয়ে একটু বেশি চেয়েছিল।
ইশান ছোট। ছোটদের নাকি বেশি দিতে হয়।আরো নানান কতো যুক্তি দিয়েছে। তাছলিমা বানু শুনেও কানে তুলেনি।দুই জন কে সমান ভাগ দিয়েছে।
সব কিছু নিজের নামে পেয়ে ইশানের এখন পাত্তাই পাওয়া যায় না। ইমনের অপারেশনের সময় ও ছিলো না। একবার দেখতেও যায় নি।

তাছলিমা বানু এই বয়সে কি করে একা একা শহরে যাবে? শেষে দিনা কে নিয়ে যায় ইমনের কাছে।
ইমনের আর দুইদিন পর রিলিজ দিবে। লিমা বলে দিয়েছে ইমনকে নিয়ে সে তার বাপের বাড়িতে উঠবে।এই খানে ইমনকে দেখাশোনা করার অনেক লোক আছে।
মোট কথা লিমা আর ঐ বাড়িতে যেতে চাইছে না। যার জন্য এতোদিন ঐ বাড়িতে পরেছিলো সেই কাজ হয়ে গেছে। জায়গা জমি ইমনের নামে পেয়ে গেছে। এখন ঐ বাড়িতে গিয়ে এই বুড়ির মুখ ঝা’মটা শোনার ইচ্ছে নেই। অনেক সহ্য করেছে আর করবে না।

এখন ইমনের পা ঠিক না হলে নাই।লাঠি দিয়ে হাটলেও লিমার সমস্যা নেই। সে এখন বাপের বাড়ি থাকবে।
তাছলিমা বানু আর কি বলবে লিমার কথা তে রাজি হয়ে যায়। এই বয়সে আসলেই সে ইমনের ভালো করে দেখাশোনা করতে পারবে না। এর থেকে ইমন সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত না হয় থাকুক।লিমার মা জো’য়ান আছে ভালো মতো সেবা যত্ন করতে পারবে মেয়ের জামাইর।
তাছলিমা বানু তো আর জানে না তার ছেলের বউ তার মতোই পেয়েছে।

ইশান এখন হাসপাতালের ঐ নার্সের পিছনে পরেছে। কাজ নেই সারাদিন মেয়েদের পিছনে ঘুরাই তার স্বভাব। নার্স টা প্রথম কয়েকদিন পাত্তা না দিলেও এখন ইশানের সাথে নানান জায়গায় ঘুরতে যায়।
ইশান কে এখন হাসপাতালের সামনে প্রায় ই দেখা যায়। দুইজন যেমন নতুন প্রেমে পরেছে।
ইশানের অন্য দিকে এখন মন নেই।যে করেই হোক এখন তাকে এই সূচনা নামক সুন্দরী রমনীকে নিজের করে একদিনের জন্য হলেও পেতে হবে।
অনেক ঘুরিয়েছে এই মেয়েটা।তারপর এই মেয়েই ইশানের পিছন পিছন ঘুরবে।

বিকাল বেলা যুথি ইরহানের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে গেছে। এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাস।ইরহান কে কলে রেখে ঘুমানো। মাঝে মাঝে বলে এটা আপনার শাস্তি। আমায় ঘুমের মাঝে রেখে আপনি চলে গিয়েছিলেন না? এখন প্রতিদিন আপনাকে আমি কলে রেখে ঘুমাবো।
ইরহান যুথির আবদার হাসি মুখে মেনে নিয়েছে। বউকে শান্তি তে ঘুমাতে দেখলে ইরহানের ও মনে প্রশান্তির হাওয়া লাগে।
যুথি ঘুমের মাঝে মাথায় কারো আদুরে স্পর্শ টে’র পায়। কেউ সযত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে করে তাকে ডাকছে।
কয়েকবার ডাকার পর বুঝতে পারে দাদি তাকে ডাকছে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৫

চোখ পিটপিট করে তাকায় যুথি।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে কি হয়েছে দাদি? ডাকছো কেনো?
উঠ উঠে বস।দেখ কে এসেছে। তোর সাথে দেখা করতে।
কে এসেছে প্রশ্ন করে উঠে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় যুথি।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৭