খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৭

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৭
Jhorna Islam

কাজটা তুমি একদম ঠিক করোনি তাছলিমা একদম না। এর ফল তোমাকে ভোগতে হবে।চরম ভাবে ভোগবে তুমি। পা’প বাপকেও ছাড়ে না। তুমি আমার সহজ সরল ছেলেটা কে ঠ’কিয়েছো।এর জন্য তুমি কি শাস্তি পাবে তুমি ভাবতেও পারছো না। যাদের জন্য তুমি আমার বড় ছেলের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করা রোজগার নিজের করেছো একদিন তারাই তোমাকে পথে বসাবে।দূর দূর করে তাড়াবে।তোমাকে পথে বসতে হবে তাছলিমা। তুমি শান্তি পাবে না কোনোদিন শান্তি পাবে না। বলেই উচ্চ স্বরে হাসতে থাকে।

তাছলিমা বানু ভীত স্বরে বলে নাহ্ কখনো না এমন কোনোদিন হবে না। আমার সোনার টুকরো ছেলেরা কখনো এমন করবে না।
করবে করবে।স’বুর করো।সবার ক্ষেত্রে সবুরের ফল মিষ্টি হলেও তোমার ক্ষেত্রে তার উল্টো হবে। মাত্র তো একছেলে শাস্তি পেলো আরেকটা ও ঠিক শাস্তি পাবে দেখে নিও বলে আবার হাসতে থাকে।
লজ্জা করছে না এমন কথা বলতে? ভুলে যেওনা ইরহান যেমন তোমার সন্তান ইমন আর ইশান ও তোমার সন্তান। বাপ হয়ে নিজের ছেলেদের শাস্তি, কষ্ট পাবার কথা তুমি বলছো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হতে পারে ওরা আমার ছেলে আমার র/ক্ত কিন্তু ওরা আমার মতো হয়নি।হয়েছে তোমার মতো।আর অপরাধী রা শাস্তি পাবার যোগ্য। নিজের ছেলে বলে যে সাত খু/ন মাফ তা তো নয়। সবাই তোমরা পা’পের শাস্তি পাবে।
তাছলিমা বানু নাআআআ বলেই লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে পরে। এই দিক ঐদিক তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেতে থাকে। হাত কাঁপতে থাকায় কিছুটা পানি নিজের শরীরেও পরে।পানি খেয়ে কিছু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।
এতোসময় স্বপ্ন দেখেছে।আর কথা গুলো ইরহানের বাবা ই বলেছে তাছলিমা বানুকে।

বুড়োটা মরেও শান্তি দিচ্ছে না আমাকে। ঘুমের মধ্যে এসেও জ্বা’লাচ্ছে। বেঁচে থাকতে কি জ্বালানো কম পরে গিয়েছিল নাকি? জীবন টা শেষ করে দিচ্ছে। বেঁচে থাকতে আ’ল্লা’দী করে কতো কিছু করে সম্পত্তি গুলো নিজের নামে করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি।ঠিক নিজের আগের বউয়ের ছেলেকে অর্ধেক সম্পত্তি দিয়ে গেছে। এজন্য বুড়ো টা দুই চোখের বি/ষ ছিল তাছলিমা বানুর।
স্বপ্ন কে বেশি পাত্তা না দিয়ে আবার শুয়ে পরে বিছানায়।মাত্র মনে হয় ভোর চারটা কি পাঁচটা বাজে।আরো অনেক সময় ঘুমাতে পারবে।

ঐদিন যুথি ঘুম থেকে উঠে সীমা কে দেখতে পায়। সীমা কে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় যুথি।
না বলে হুট করে চলে আসায় কিছু টা চিন্তিত ও হয় কিছু হয়েছে কি না।
সীমাকে বসতে বলে,,বিস্কুট, চানাচুর দিতে বলে দাদিকে।দাদি সব আনতে গেলে সীমা বলে,,আরে কি বলো কিছু লাগবে না।

— যুথি বলে তা হয় নাকি বান্ধবীর বাড়িতে এসেছো খালি মুখে যেতে দিব না।
— সে যাই হোক এটা বলো যুথি তোমার শরীর ঠিক আছে?
— হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কিছু কি হয়েছে সীমা? না মানে হুট করে এলে যে সব ঠিক আছে তো?
— সব ঠিক আছে। তারপর লাজুক হেসে বলল আমিতো একটা বিশেষ কারণে এসেছি।
— কি কারণ?

— সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ের অনুষ্ঠান করবে।তার দাওয়াত দিতে এসেছি। তোমার শ্বাশুড়িদের বাবা ই দিয়েছে। তোমাকে ও তিনি দিতে চেয়েছিলেন আমি না করেছি।বলেছি আমার বান্ধবী কে আমিই দিবো।
না করতে পারবে না কিন্তু যুথি তোমাকে যেতেই হবে। এটা আমার অনুরোধ। আশা করছি রাখবে।দাদি কে নিয়ে যাবে সাথে।
যুথি হাসি মুখে সীমার দাওয়াত গ্রহন করে। বলেছে ইরহান যেতে বললে অবশ্যই যাবে।
তারপর দুইজন আরো নানান কথা বলে। বেশ কিছু সময় সীমা যুথির কাছে থেকে বাড়ি চলে যায়।

দেখতে দেখতে সীমার বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন এসে পরে।যুথি ইরহান কে বলেছিল তার যেতে কেমন যেনো লাগছে।যাবে কি না।
ইরহান বলেছে দাদিকে নিয়ে যাও।একটু ভালো লাগবে ঘুরে এসো। সব সময় এক জায়গায় থাকতে থাকতে মানুষের মাঝে একঘে’য়ে’মি চলে আসে। একটু ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।

যুথি কি পরে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। দাদির কাছে জানতে চাইলে দাদি বলে তুই বউ মানুষ শাড়ি পরে যা।
যুথি ভেবে চিন্তে ঠিক করে নেয় শাড়িই পরবে।তারপর সুন্দর করে শাড়ি পরে নেয়। নরমালি একটু সাজুগুজু করে।বিয়ে বাড়িতে তো আর এতো সাধারণ ভাবে যাওয়া যায় না। নয়তো মানুষ কি বলবে।শাড়ির সাথে হিজাব বেধে নেয় সুন্দর করে।
তারপর দাদি নাতনি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে সীমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে তাছলিমা বানু, লিমা,আর দিনা ও তৈরি হয়ে যায়। লিমা এখানে এসেছিলো তার আর ইমনের জিনিস পত্র নিতে। ইমনের পায়ের কোনো উন্নতি নেই। এখানে আসার পর জানতে পারে বিয়ের দাওয়াতের কথা।লিমা আবার এসব অনুষ্ঠান খুব পছন্দ করে। তাই শুনেই রাজি হয়ে গেছে যাওয়ার জন্য। লিমা আর দিনা উড়াধুরা সাজ দিয়েছে। তাছলিমা বানু ও বেশ দামী পোশাক পরে গয়না পরেছে।তিনজনই প্রচুর গয়না পরেছে। ইশানের কোনো খবর নেই। তাই তিন বউ শ্বাশুড়ি মিলে বেরিয়ে গেছে দাওয়াত খেতে।

বিয়ে বাড়িতে গিয়ে যুথির সাথে দেখা হয় ওদের। তিনজনই কেমন করে তাকিয়ে আছে।
দিনা যুথির পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,,বাহ্ কি কমদামী একটা শাড়ি।কয় টাকা দিয়ে কিনেছো?
নাকি কেউ কয়েকদিন পরে দা’ন করে দিয়েছে তোমায়?
দিনার কথা শুনে তাছলিমা বানু আর লিমা হেসে উঠে।

আহ্ ছোটো ঠিক বলেছিস।আমিও তাই ভেবেছিলাম। কেউ হয়তো দিয়েছে নয়তো ধার এনেছে। এমন ও হতে পারে রাস্তার পাশে ফুটপাতে পুরোনো জামা কাপড় নিয়ে বসে থাকেনা? ঐখান থেকে কিনেছে।কথাটা লিমা বলে তাচ্ছিল্যের সাথে।
হ্যা গো তাই হবে হয়তো।আর দেখোনা মাথায় হিজাব লাগিয়েছে।আহারে কি আর করবে বেচারি আমার খুব মায়া হয়। কি দেখে বিয়ে করেছিলো আর কোথায় থাকতে হচ্ছে আর কি পড়তে হচ্ছে। আহারে বেচারি। তবে বুদ্ধি টা কিন্তু দারুণ গয়না নেই বলে হিজাব পরে এসেছে। আহারে একটা বিশ ত্রিশ টাকা দামের চেইন ই কিনে নিতা।নয়তো আমাদের কাছে বলতা টাকা না থাকলে দিতাম।

এদের দুই জা এর কথা শুনে রা’গে ফুসতে থাকে যুথি।এতোসময় তার দাদি হাত ধরে আঁটকে ছিলো। চোখের ইশারায় না করেছিলো কিছু বলার জন্য। কিন্তু এইবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।
কি যেন বলছিলেন আমার শাড়িটা কমদামি? হ্যা কমদামি তো? আমার স্বামীর নিজের হালাল পরিশ্রমের টাকায় কিনা। দাম টা আসল না কে কিনে দিয়েছে কিভাবে কিনে দিয়েছে সেটাই আসল।তাও তো আমি আমার স্বামীর নিজের রোজগার করা টাকায় পরতে পারছি।কারো কারো তো সেই ভাগ্য ও নেই।অন্যের করুণায় চলে।

নিজের স্বামীর রোজগার করা টাকায় একটা সুতো কিনার যাদের সামর্থ্য নেই তাদের আবার বড় বড় কথা।
আমি গয়না পরিনি তো কি হয়েছে? ” আমার স্বামীর ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় গয়না।” আমার আলাদা করে আর গয়নার প্রয়োজন নেই।
আর হ্যা মানুষের দান করা জিনিস আমি পরে আসিনি আমার স্বামীর দান করা ধুর দান বলছি কেনো? আমার স্বামীর ভি’ক্ষা দেওয়া জিনিস ই মানুষ পরে এসেছে। কথা গুলো বলেই যুথি দাদিকে নিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।

খাবার টেবিলে আবার সবাই মুখোমুখি হয়। যুথি আর তার দাদি যেই টেবিলে বসতে যাবে।গিয়ে দেখে উল্টো পাশে তারাতাড়ি গিয়ে লিমা আর দিনা বসে পরেছে।তারপর যুথির দিকে তাকিয়ে লিমা বলে একদম আমাদের সাথে বসার চেষ্টা করবে না। তোমার সাথে কে বসবে নোংরা!
আমি আপনাদের সাথে বসবো ও না।আমার রুচিতে বাঁধে। আপনাদের তো আবার দান নেওয়ার স্বভাব আছে। আমার আবার বড় মন দান করতে ভালোই লাগে। এই টেবিল টা তো সামান্য ব্যাপার ছেড়ে দিলাম না হয়।
আসলে আপনাদের লজ্জা বলতে কিছু নেই।যাকে নোংরা বলছেন সাথে বসতে সমস্যা তার স্বামীর টাকায় কিনে আনা গয়নাই পরে আছেন।নি’র্ল’জ্জ মহিলা। ঐ গয়নায় ও নোংরা লেগে আছে ফেলে দেন।

দাদি চলো এখান থেকে এদের দিকে আমার তাকাতে ও রুচিতে বাঁধে।
তারপর যুথি আর তার দাদি অন্য টেবিলে গিয়ে খেয়ে নেয়। খাবার ফাঁকে যুথি তার দাদি কে বারণ করে এসব কথা ইরহানকে জানাতে নয়তো কষ্ট পাবে বেচারা।
দাদি ও বলে তুই চিন্তা করিস না আমি নাত জামাই কে কিছুই বলবো না।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সীমার পাশে গিয়ে বসে যুথি।একটু আকটু কথা বলে। এর মধ্যে ইরহানের ভিডিও কল আসে।সীমাকে বলে যুথি সো’র’গো’ল থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর কল রিসিভ করে। ইরহান জিজ্ঞেস করে খেয়েছে কিনা।
যুথি জানায় খেয়েছে।
শাড়ি পরেছো?
হুম।

আমায় ছবি তুলে দিও কয়েকটা।আর ভালো করে ক্যামেরার সামনে আসোতো দেখি আমার যুথি রানী কে।
যুথি একটা চেয়ার টেনে এনে আরাম করে বসে ইরহানের সাথে নানান ধরনের কথা বলতে থাকে।
এরমধ্যে ভিতর থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনতে পায়। কি হয়েছে দেখবে বলে,, ইরহানকে বলে পরে কল দেওয়ার জন্য। তারপর কল কেটে ভিতরের দিকে যেতে থাকে দেখার জন্য।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৬

এর মধ্যে সামনে আরেকজন কে পেয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে ভিতরে এতো চিৎকার চেচামেচি কেনো?
মহিলা টা জানায় কার নাকি গয়না চুরি হয়ে গেছে।
যুথি কৌতূহল বসতো ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় তাছলিমা বানু চি’ল্লা’চি’ল্লি করছে। লিমা কাঁদছে। আর দিনা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
বুঝতে আর বাকি নেই লিমার গয়না চু’রি হয়ে গেছে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২৮