পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২০

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২০
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

শুনো এই মেয়ে যাতে নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় না ঢুকতে পারে। এখন ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দাও আর দাঁড়য়ানকে বলে এসো ওকে যেনো নেক্সট টাইম আমাদের বাসায় ঢুকতে না দেয়। এই মেয়ে আমাদের কেউ না।

সন্নিতা দি প্রীলিয়ার আপুর হাত ধরে টানছে। কিন্তু প্রীলিয়া আপুর জায়গা থেকে এক চুলও নাড়াতে পারেনি। পারারো কথা না। প্রীলিয়া আপুর শরীরের অর্ধেক শক্তিও হয়তো সন্নিতা দির শরীরে নেই। এটা দেখে রুদ্র ভীষণ বিরক্তিবোধ করলো। জিন্সের পকেটে হাত দিয়ে উনি কিছু একটা খুঁজছেন। কাঙ্ক্ষিত জিনিস খুঁজে না পেয়ে উনি বিরক্তিতে মুখে ‘চ’ এর মতো শব্দ উচ্চারণ করলেন। উনি এই পকেট ঐ পকেট করে খুঁজছেন। কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উনার হাতে একটা রুমাল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। উনি রুমাল কেনো বের করলেন? উনি রুমাল দিয়ে প্রীলিয়া আপুর হাতটা ধরলেন। তারপর এক টানে প্রীলিয়া আপুকে ছুঁড়ে মারলেন দরজার বাইরে। প্রীলিয়া আপু পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। সবকিছু দেখে আমার মুখটা হা হয়ে গেলো। উনি মেইন ডোর লাগাতে লাগাতে দাঁড়য়ানকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

এই মেয়েকে গেইটের বাইরে বের করে দিয়ে আসো। নেক্সট টাইম যেনো ও আমাদের বাসায় প্রবেশ না করতে পারে।
উনি মেইন ডোর লাগাতে গেলে প্রীলিয়া আপু হাত দিয়ে আটকে দেই। রুদ্রের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,
এই অপমানের শোধ তো আমি নিবোই। তোমার প্রাণ ভোমরাকে আমি কেড়ে নিবো।
এটা করার চেষ্টাও করো না। তুমি যার কথা বলছো তার গায়ে যদি একটু আঁচড়ও লাগে। তাহলে আমি তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।

আমি তো এসব কিছু করতে চাইছিলাম না। কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করলে। আমি তো সবকিছু ঠিক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি সব এলোমেলো করে দিলে। আমাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিলো তো আমি তোমার……
প্রীলিয়া আপুর কথার মাঝেই রুদ্র প্রীলিয়া আপুর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়। রুদ্র কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলেন।

কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে অন্য প্রশ্ন। প্রীলিয়া আপু রুদ্রর প্রাণ ভোমরার কথা বললেন। উনার প্রাণ ভোমরা কে? আর উনার তো উনার প্রাণ ভোমরার জন্য ভালোবাসা উতলায়া পড়তাছে আমাকে তো জানতেই হবে কে উনার প্রাণ ভোমরা। আমি দৌড় দিলাম রুমের দিকে। এতোটা দৌড়ে আসার জন্য হাফিয়ে গেছি। কোমড়ে হাত রেখে জুড়ে জুড়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম।

ওয়াশরুম থেকে আসা পানি পড়ার শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম উনি ওয়াশরুমে আছেন। আমি বিছানার ওপর পা ঝুলিয়ে বসে পড়লাম। উনি ওয়াশরুম থেকে বের হলেই উনাকে চেপে ধরবো। আজকে কিছুতেই উনাকে আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে দিব না। আজকে আমাকে জানতেই হবে কে উনার প্রাণ ভোমরা।

এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ নজর পড়লো একটা ডায়েরীর ওপর। এই ডায়েরীর ওপর নজরটা যে আজকে পড়ছে তা কিন্তু নয়। যেদিন থেকে উনার বউ হয়ে এই রুমে এসেছি। সেদিন থেকে এই ডায়েরীটা আমার নজর কাড়ছে। কিন্তু কোনোদিন সাহস হয়নি এই ডায়েরীটা ধরার। আর ইচ্ছেও হয়নি ডায়েরীটা ধরার।

কিন্তু আজকে হঠাৎই ডায়েরীটা দেখে অদ্ভুত ইচ্ছে জাগছে। ইচ্ছে করছে ডায়েরীটা একটু ছুঁয়ে দিতে। ডায়েরীটা একটু পড়তে। মনে হচ্ছে এই ডায়েরীটা পড়লেই আমি উনার প্রাণ ভোমরা সম্পর্কে জানতে পারব। আজকে আর নিজের মনকে সামলাতে পারলাম না।

বিছানা থেকে নেমে পা বাড়ালাম বুক সেলফের দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালাম। উনি হয়তো শাওয়ার নিচ্ছেন। উনার আরো অনেকটা সময় লাগবে ওয়াশরুম থেকে বের হতে। বুক সেলফের সামনে দাঁড়িয়ে পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে ডায়েরীটা হাতে নিলাম। ডায়েরীটার প্রথম পেইজ খুললাম। প্রথম পেইজে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা।

তুমি নামক অনুভূতি এতো ভয়ঙ্কর কেনো? না দেয় দূরে সরে থাকতে আর না দেয় কাছে আসতে।
হঠাৎই আমার হাত থেকে কেউ ডায়েরীটা কেড়ে নিলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,

নেক্সট টাইম যেনো তোমাকে আমি এই ডায়েরী ধরতে না দেখি। আই হোপ তুমি আমার কথাটা বুঝতে পেরেছো। বুঝতে না পারলে কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও।
উনি কথাগুলো বলে ডায়েরীটা নিয়ে চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলাম। সব সময় একস্ট্রা ভাব না নিলে চলে না।

পিছন ঘুরে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই হাত লেগে বুক সেলফ থেকে একটা বই পড়ে যায়। নিচে ঝুকে বইটা তুলতে গেলেই বইয়ের নিচ থেকে একটা ছবি বেরিয়ে আসে। আমি ছবিটা হাতে নেই। ছবিটার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। ছবিটা উনার। কিন্তু এখানে ছবিটার অর্ধেকাংশ। বাকি অংশ কেউ পুড়িয়ে ফেলছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনার পাশে আরো কেউ ছিল। ছবিটা দেখেই আন্দাজ করতে পারছি উনি ক্রোধের বশে ছবিটা পুড়িয়ে ফেলছে। উনার একটা হাত ধরে রেখেছে আরেক জন মানুষের দুইটা হাত।

হাত দুটো যে কোনো মেয়ের তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। এবার আমার কাছে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে গেলো। উনার পাশের মেয়েটা অরি আপু।
বাহবা অরি আপুর সাথে কাপল পিকও তুলেছে। তাও আবার হাসিমুখে। দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে হাঁসছে, আর আমার সাথে কথা বলতে আসলে যেনো মুখে নিমপাতা পড়ে যায়। আজকে তো আমি উনাকে হাসিয়েই ছাড়ব।

আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
হেসে আলতো চোখে চোখে
আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
হেসে আলতো চোখে চোখে
তোর জন্যই এসেছি আমি

কাকের মতো কা কা কেনো করছো? আমি একটা জরুরি কাজ করছি। তোমার এই ফাটা
বাঁশ মার্কা কন্ঠের জন্য আমার ডিস্টার্ভ হচ্ছে।
গুণগুণিয়ে গান গাইতে রুমে ঢুকছিলাম। উনার কর্কশ গলা শুনে আমি থেমে গেলাম। পরমুহূর্তেই উনার বলা কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠলো। উনি আমাকে অপমান করছেন। আমার কন্ঠকে অপমান করছে। আমি উনার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম,

আপনি কী বললেন? আরেকবার বলুন তো।
কেনো শুনতে পাওনি? কানে কম শুনো?
আমি কাকের মতো কা কা করি? আমার কন্ঠ ফাটা বাঁশ? আপনি আমাকে এতো বড় অপমান করলেন?
অপমান কোথায় করলাম? যাহা সত্য তাহাই বললাম।
আপনি দিন দিন ঝগড়াটে হয়ে যাচ্ছেন।

তোমার মতো একটা মেয়ের সাথে থাকলে যে কেউ ঝগড়াটে হয়ে যাবে।
আমি উনার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম। মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই আমি উনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলাম। আমি উনার শরীরে শুড় শুড়ি দিতে শুরু করলাম। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো আমি উনাকে শুড়শুড়ি দিলাম। কিন্তু উনার কিছুই হলো না। একটু হাসলেনও না। যেভাবে বসে ছিলেন সেভাবেই বসে আছেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলেন,

এবার আমার ট্রান।
মানে?
আমি কারো কাছে ঋণী হয়ে থাকতে চাই না। আমি বাকিতে বিশ্বাসই নই নগদে বিশ্বাসই। আমি কারো কাছে ধার রাখি না।
কথাগুলো বলেই উনি আমাকে শুড়শুড়ি দিতে শুরু করলেন। উনার কিছু না হলেও আমার অবস্থা বেগতিক। হাসতে হাসতে আমি বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। উনাকে থামতে বলছি। কিন্তু উনি থামছেনই না।
ইউ নো তোমার হাসির মতো তোমার কন্ঠও অনেক ভয়ঙ্কর।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১৯

আপনি আবারও আমার কন্ঠকে অপমান করছেন আপনি জানেন কত ছেলে আমার এই কন্ঠের প্রশংসা করছে? কত ছেলে আমার এই কন্ঠ শুনেই প্রেমে পড়ে গেছে।
হঠাৎই উনি রেগে গিয়ে আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরেন। হঠাৎ উনার রেগে যাওয়ার কারণটা আমি বুঝতে পারছি না। উনার এমন হুট হাট আক্রমনে কোনদিন না জানি আমি হার্ট এ্যাটাক করে ফেলি।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২১