পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৭

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৭
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

জীবনের এতগুলো বসন্ত কেটে গেলো কিন্তু কেউ বসন্ত বিলাস করতে নিয়ে গেলো না। এতো দুঃখ আমি কোথায় রাখব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।
একটা বালতি এনে দেই সেটাই ভরে রাখ। যদি বালতিতে না হয় তাহলে একটা ড্রাম এনে দেই সেটাই তোমার দুঃখগুলো ভরে রাখ।

মজা নিচ্ছেন? একদম ফাজলামো করবেন নাহ। আজকে একটা জামাই নেই বলে এমন একটা ভালোবাসাময় দিনেও বই নিয়ে বসে আছি। আহা কি দুঃখ।
উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন, তোমার জামাই নেই? তাহলে আমি কে?
আপনি তো আমার খালাতো ভাই।
উনি এক ভ্রু উঁচু করে বলেন, আমি তোমার খালাতো ভাই?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হ্যাঁ। খালাতো ভাই নন তো কী? খালাতো ভাই বলেই তো এমন একটা দিনেও বই দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন। জামাই হলে তো আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। নিজের হাতে ফুচকা খাইয়ে দিতেন। বসন্তের এই দিনে পড়ন্ত বিকালে হাতে হাত রেখে হাঁটতে। একটু আধটু রো…….
আমার কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আমাকে ধমক দিয়ে বলে ওঠেন,
চুপচাপ পড়তে বসো। এই সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। মেডিক্যালে চান্স না পেলে তোমার খবর আছে।

আমি চেয়ার ছেড়ে বিছানায় বসতে বসতে উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আজকে এসব থ্রেট ট্রেট দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আজকে আমি কিছুতেই পড়তে বসবো না। আজকে আমার মনে বসন্তের হাওয়া বইছে। প্রেম প্রেম ফিলিংস আসছে। আজকে বসন্তে হাওয়ায় হাওয়ায় প্রেম বইছে। এমন একটা দিনে আমি কিছুতেই বই নিয়ে বসে থাকবো না।
কী করবে তুমি?

এই তো এখন শাড়ি পড়ে সেজে গুঁজে রেডি হবো। ত্রয়ীকে একটা ফোন দিয়ে বলবো শাড়ি পড়ে পার্কে চলে আসতে। সেই লেবেলের একটা হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে পটিয়ে নিবো। ছেলেটাকে নিয়ে……
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উনি আমার মুখে চেপে ধরেন। আমার চোখে চোখ রেখে বলেন,
হুসসসস কোনো কথা নয়। আমাকে ছাড়া অন্য ছেলেকে নিয়ে ঘুরা তো অনেক দূর , অন্য ছেলের সাথে ঘুরার কথা কল্পনাতেও আনবা না। তোমার জীবন রুদ্রময় তাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবনাতে আনারও দুঃসাহস দেখিয়ো না।
এভাবে মুখ চেপে ধরায় ধম বন্ধ হয়ে আসছে। মুখের ওপর থেকে উনার হাতটা সরিয়ে দিলাম। বুকে হাত দিয়ে বার কয়েক বার নিশ্বাস নিয়ে উনাকে বললাম,

এভাবে কেউ মুখ চেপে ধরে? এখনি তো দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। আমি অন্য ছেলেদের সাথে ঘুরলে আপনার সমস্যা কী? এক মিনিট মিনিট আপনি কী কোনা ভাবে আমাকে নিয়ে জেলাস?
কোনো জেলাস টেলাস। তোমার মতো একটা পুঁচকি মেয়েকে নিয়ে জেলাস হবো আমি? এটা তোমার কল্পনাতেই সম্ভব বাস্তবে না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও তোমাকে বসন্ত বিলাস করিয়ে নিয়ে আসি। দেরি করলে কিন্তু তোমাকে রেখেই চলে যাব।
কথাগুলো বলেই উনি ধুপ ধাপ পা ফেলে চলে গেলেন। উনি যেতেই আমি খুশিতে লাফিয়ে ওঠলাম। খুশি মনে রেডি হতে শুরু করলাম।

নিরামিষ মানুষ সাথে থাকলে আনন্দ করা সম্ভব নাকি। উনি আমাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ঠিকই। কিন্তু উনার সম্পূর্ণ নজর ফোনের দিকে। আমার বিরক্ত লাগছে। বর্তমানে আমরা পার্কে অবস্থান করছি। উনি আমার হাত ধরে ফোন স্ক্রল করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছেন। মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। আমাদের থেকে বেশ কয়েক হাত দূরে একটা ছেলে গাছের সাথে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে। ছেলেটাকে দেখেই আমি চট করে চিনে ফেললাম। কারণ ছেলেটা আমাদের কলেজেই পড়ে। আমার এক বছরের জুনিয়র। আমি রুদ্রকে বললাম,
ইশ দেখুন ছেলেটা কত্তো কিউট। কী হ্যান্ডসাম।

রুদ্র আমার কথা শুনে আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। তারপর আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে ছেলেটার দিকে তাকাতেই উনার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। আমি উনার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আবার ছেলেটার দিকে তাকালাম।
ছেলেটাকে দেখেই আমি ক্রাশ খেয়ে ফেলছি। দেখুন কী সুন্দর করে সিগারেট টানছে। আহ এই দিলে লাগছে।
উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে শুরু করলেন।
আরে কী হলো এভাবে আমাকে নিয়ে টানাটানি করছেন কেনো?
বাসায় যাব এখনি।

এখনি বাসায় যাব কেনো? আমরা তো মাত্রই আসলাম। কিছুই তো ঘুরা হলো না।
অনেক ঘুরাঘুরি করছো। আর ঘুরতে হবে না।
আর ঘুরতে না দেন এট লিস্ট ছেলেটার সাথে পরিচিত হতে দিন। আচ্ছা পরিচিত হতে না দিন ফোন নাম্বারটা তো নিতে দিবেন নাকি?
আমার কথা শুনেই উনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। উনার দৃষ্টি দেখে আমি চুপ করে গেলাম। কিন্তু মনে মনে ভীষণ মজা পাচ্ছি। উনাকে জ্বালাতে ভীষণ ভালো লাগে।

তিন ঘন্টা হয়েছে বাসায় এসেছি। বাসায় এসে উনি আমার সাথে একটা কথাও বলেননি। যা কাজ করছিলেন সব শব্দ করে করছিলেন। উনার রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছিলেন জিনিসপত্র ছুঁড়ে ছুঁড়ে রেখে। মুখে কিছু না বললেও উনার কর্মকাণ্ডে মনে মনে হাসছিলাম।

আমি বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বই পড়ছি আর উনি টেবিলে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কীসব ফাইল পত্র দেখছেন। সামনে বই থাকলে কি হবে আমার মনোযোগ তো বইয়ের থেকে বেশি উনার দিকে। উনাকে ভীষণ খোঁচাতে ইচ্ছে করছে। উনাকে আবার না রাগিয়ে দিলে আমার শান্তি লাগে না। আমি গুণগুণিয়ে গান গাইতে শুরু করলাম। উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,

সমস্যা কী তোমার? পড়া রেখে গান কেনো গাইছো? আর আজকে এমন বাদরামো কেনো করছো?
কী করবো বলুন? মনে প্রেমের হাওয়া লেগেছে। চোখ বন্ধ করলে ঐ ছেলেটার মুখ ভেসে ওঠছে। বইয়ের দিকে তাকালেও ঐ ছেলেটার মুখ দেখতে পাচ্ছি। বার বার মনে পড়ছে ছেলেটার সিগারেট টানার দৃশ্যটা। কী সফটলি সিগারেট টানছিল। ঠোঁট দুটো কি…..

উনার হাতের ফাইলটা উনি ঠাস করে রাখলেন। আমি চমকে ওঠলাম। বেশ বুঝতে পারছি উনি ভীষণ রেগে গেছেন
এ+ পেয়েছো বলো মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলোনি। গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা এখনো বাকি। লাফালাফি ছেড়ে দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। মেডিক্যালে চান্স না পেলে আমি তোমার ছেলেদের ওপর ক্রাশ খাওয়ার শখ আমি মিটিয়ে দিব।
উনি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলাম। এই লোকটাও আমার জন্যও জেলাস হচ্ছে। আমার মুখে অন্য কারো কথা শুনে রেগে যাচ্ছেন।

রিদি আপুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। রিদি আপু মমতার সহিত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রিদি আপু আর নিধি একটু আগেই এসেছে। রিদি আপু আমাকে জিঙ্গেস করে, মন খারাপ?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাই। সত্যিই ভীষণ মন খারাপ।
কেনো?

জানি না। আমার মন খারাপের কোনো কারণ লাগে না। আমার যখন তখন মন খারাপ হয়।
রুদ্রকে এতোটা স্বাভাবিক দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। রুদ্র যখন তোকে বিয়ে করবে না বলে দেয়। তখন আম্মু রুদ্রকে জোড় করলেও আমি রুদ্রকে জোড় করিনি। আমি জানি রুদ্রের মতের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করলে এর ফল কতোটা ভয়ানক হতে পারে। হঠাৎ রুদ্র রাজি হয়ে যায়। রুদ্র তোকে বিয়ে করবে যেটা আমাকে ভীষণ অবাক করে দেয়। রুদ্রর না কে হ্যা করা যার তার কাজ নয়।

এখানে আম্মুর কারসাজি আছে সেটা আমি আম্মুর মুখ দেখে বুঝতে পেরছিলাম। কিন্তু তোকে নিয়ে আমার ভীষণ ভয় হচ্ছিল। রুদ্র বিয়ের পর তোর সাথে কী করবে এটা ভেবেই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। রুদ্র যদি তোর ওপর সবটা রাগ উগড়ে দেয় সেটা নিয়ে ভীষণ ভয় হচ্ছিল। কিন্তু রুদ্র তোর সাথে তেমন কোনো খারাপ আচারণ করেনি। আস্তে আস্তে তোর সাথে মানিয়ে নিয়েছে। আমি ভীষণ খুশি এটা নিয়ে।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৬

আপু আমার মাথার চুলগুলো নাড়িয়ে দেয়। হুট করে আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হেসে বলে,
আমার ভাইয়ের সাথে তো ভালোই রোমান্স করছিস। তার দেওয়া চিহ্ন সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছিস।
আমার ঘাড়ের দিকে ইশারা করে বলে। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলি,
এতো ফাস্ট না দৌড়ে একটু স্লো যাও। এটা তোমার ভাইয়ের দেওয়া না তোমার মেয়ের দেওয়া চিহ্ন। তোমার ভাই করবে রোমান্স? তোমার ভাই রোমান্সের ‘র’ ও বুঝে না।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৮