পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৯

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৯
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

জীবনের এতোগুলো বছর পার করার পর মনে হলো তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখার চেয়ে সহানুভূতি দেখাও শান্তি। জীবনের ২৭ টা বছর কাটানোর পর এক বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম। তার চোখের গভীরে হারিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটার মুখ আমি দেখিনি। আমি মেয়েটার চোখের প্রেমে পড়েছিলাম।

মেয়েটার চোখ দুটো দেখার পর মনে হয়েছিল এই মেয়েটাকে ছাড়া আমার চলবে না। সারাজীবনের জন্য এই মেয়েকে আমার পাশে চাই। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎই মেয়েটার আইডির ওপর আমার দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল। মেয়েটার আইডির নামটা ছিল অদ্ভুত। আমার এক ফ্রেন্ডকে বলি তার সমস্ত ইনফরমেশন আমাকে এনে দিতে। মেয়েটার সাথে আমার বিয়েও ঠিক হয়ছিল। কিন্তু আমার ……….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি হাত দিয়ে উনাকে থানিয়ে দিলাম। তারপর গম্ভীর গলায় বললাম,দেখুন এগুলো
আমি জানি। আপনার অন্য কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।
তুমি কীভাবে জানো?

ছবিটা আমার হলেও আইডিটা প্রীলিয়া আপুর ছিল। আমাকে যেদিন আপনারা দেখতে আসেন সেদিন প্রীলিয়া আপু আপনাকে দেখে ভালোবেসে ফেলে। যাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইড। কিন্তু প্রীলিয়া আপু সেই কথা কাউকে বলে নাই। প্রীলিয়া আপুর চোখ আর আমার চোখ প্রায় এক রকম। আর সেটারই সুযোগ প্রীলিয়া আপু নেয়। প্রীলিয়া আপুর এক বন্ধু নিয়ে আপনার কাছে যায় আর প্রমাণ করে আসে ঐ আইডির মেয়েটাই সে।

আইডিটা প্রীলিয়া আপুর হওয়ায় তার প্রমাণ করতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। আপনারা দুজনেই অপরাধী। প্রীলিয়া আপু আপনার সাথে প্রতারণা করেছে। আর আপনি আমার সাথে অন্যায় করেছেন। এতো অতো মানুষের সামনে আমাকে অপমান করেছেন।

এ্যাংগেইজমেন্টের দিন একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে বা তাকে রেখে তার মামাতো বোনকে রিং পড়িয়ে দিলে এটা সেই মেয়েটার জন্য কতোটা অপমানজনক সেটা আপনি বুঝেন? সমাজের মানুষ সেই মেয়েটার সাথে কেমন আচরণ করে আপনি জানেন? আপনি তো পারতেন আগেই বিয়েটা ভেঙে দিতে। কিন্তু আপনি কী করলেন এ্যাংগেইজমেন্টের দিন সবার সামনে আমাকে অপমান করে বিয়েটা ভেঙে দিলেন। আপনার উদ্দেশ্যই হয়তো ছিল আমাকে অপমান করা।

হয়তো আমি ক্ষমার অযোগ্য। তোমার সাথে যে অন্যায়টা করেছি তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার মুখ আমার নেই। প্রীলিয়া আমাকে এমন ভাবে সবটা বলেছিল যে আমি সবটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। প্রীলিয়ার কথায় আমার মনে তোমার জন্য ঘৃণার সৃষ্টি হয়। তোমার কর্মকান্ড ভীষণ রাগ হয়। তুমি সত্যিটা বলে দিলে। এসব হতো না। প্রতি…

প্লিজ এসব কথা বন্ধ করুন। এগুলো আপনিও জানেন আমিও জানি। এসব কথা শুনতে আর ভালো লাগে না। আমি অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না। বর্তমানে যা আছে তা নিয়েই থাকতে চাই। আপনার আর কিছু বলা থাকলে বলুন নাহলে আমি চলে যাচ্ছি।

জোর করে কিছু হয় না জানি। এখন তুমি বিবাহিত। তোমার ওপর অন্য কারো অধিকার। ড. রুদ্র তোমার হাজবেন্ড। ড. রুদ্র তোমার ভীষণ খেয়াল রাখে আমি জানি। তোমার প্রতি কোনো দায়িত্বই সে অবহেলা করে না। তার দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখে না। কিন্তু ড. রুদ্র কী তোমাকে ভালোবাসে? নাকি শুধু তোমাকে নিজের দায়িত্বই মনে করে। আমার জানা মতে উনার একজন প্রাক্তন ছিল।

আমি নির্বিঘ্নে সেই স্থান ত্যাগ করলাম। বিহান আরো কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি শোনার প্রয়োজন মনে করলাম না। বিহান পিছন থেকে অনেক বার ডেকেছিল। আমি নিশব্দে চলে এলাম। সবার মুখে দায়িত্ব, দায়িত্ব, দায়িত্ব শব্দটা শুনতে শুনতে আমার কান ব্যথা হয়ে গেছে।
ক্যাফে থেকে বেরিয়ে একটা চড়ে বসলাম। নিজের বাসায় যাব না। রুদ্রের কাছে যাব। আজকে আমার উত্তর চাই। আমি কী শুধুই উনার কাছে দায়িত্ব?

বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই মামুনি দরজা খুলে দিল। মামুনিকে দেখেই জড়িয়ে ধরলাম। মামুনির সাথে কৌশল বিনিময় করলাম। মামুনির কাছ থেকে জানতে পারলাম রুদ্র আজকে হসপিটালে যাননি। পা বাড়ালাম রুমের উদ্দেশ্যে। রুমে যাওয়ার আগে স্টাডি রুমের সামনে যেতেই আমার পা দুটো থেমে যায়। স্টাডি রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে স্টাডি রুমের দিকে তাকালাম। স্টাডি রুমের দরজা খোলা থাকায় আমার দেখতে অসুবিধা হলো না স্টাডি রুমে কারা আছে। স্টাডি রুমে রুদ্র আর ইলান ভাইয়া বসে আছে। দুজনের মাঝে হাসি প্রতিযোগিতা চলছে। স্টাডি রুমে যেতে গিয়েও আমি থেমে গেলাম। ইলান ভাইয়া হাসি থামিয়ে বলে,

রিয়া পারেও বটে। এসব দুষ্টুমি বুদ্ধি শুধু ওর মাথায়ই আসে। এই মেয়েটা সবাইকে হাসি খুশি রাখতে চায়। দেখ তোকেও কেমন চেইন্জ করে দিল। আচ্ছা তুই কী রিয়াকে ভালোবাসিস?
ইলান ভাইয়ার কথা শুনে বুঝতে পারলাম তাদের হাসাহাসি বা আলোচনার মূল বিষয়বস্তু আমাকেই ঘিরে। আমি অপেক্ষা করছি রুদ্রর উত্তর শোনার জন্য। উনি আমাকে ভালোবাসেন নাকি না?

রিয়া নিতান্তই ছোট। এই বয়সটা ছেলে মেয়েদের আবেগের বয়স। এই বয়সী ছেলে মেয়েদের আজকে একজনকে ভালো লাগে তো কালকে আরেকজনকে। রিয়া যখন আবেগের বয়সটা পার করে যাবে। ওর মাঝে ম্যাচিরিউটি আসবে। তখন তার আর আমাকে ভালো লাগবে না। রিয়া ফিল করবে সে আমার থেকেও বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে। আমি রিয়াকে বিয়ে করে ওর লাইফের অনেকটাই ক্ষতি করে দিয়েছি। এখন আমার দায়িত্ব ওর লাইফটা গুছিয়ে দেওয়া। আমি রিয়াকে ভালোবাসি না ও শুধুই আমার দায়িত্ব।

আর কিছু শোনার মতো শক্তি বা ধৈর্য আমার নেই। চোখ থেকে টুপ টাপ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত পা ফেলে রুমে চলে এলাম। আমি শুধুই উনার লাইফের বুঝা এছাড়া আর কিছুই না। নিজের জীবনের ওপর বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে অনেক দূরে চলে যাই। উনাকে সারাজীবনের জন্য আমি নামক বোঝা থেকে মুক্ত করে দেই। দেয়াল ঘেষে মেঝেতে বসে পড়লাম। সবকিছু অসহ্য লাগছে।

আমি কী বলেছিলাম তোমাকে?
এবারও আমার কাছ থেকে কোনো রূপ সারা শব্দ না পেয়ে উনি রেগে গেলেন। উনি বেশ কিছুক্ষণ যাবত কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু আমি উনার কথার প্রতিত্তরে কিছু বলি নাই। উনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। উনি নামক ব্যক্তিটাকেই অসহ্য লাগছে। উনি আমাকে মেঝে থেকে টেনে তুললেন। আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলেন,
কী হলো? তুমি আমার কথা শুনতে পারছো না? আমি যা বলছি তা কি তোমার কর্ণগোচর হচ্ছে না? তুমি একা এই বাসায় আসছো কেনো? তোমাকে একা একা এতোটা পথ আসার অনুমতি কে দিয়েছে? তোমাকে বলেছিলাম না বাসা থেকে একা না বের হতে? বলেছিলাম না।

আমি এবারও নিশ্চুপ।
আমাকে বললে আমি তোমাকে নিয়ে আসতাম না? বলো আসতাম না তোমাকে নিয়ে?
আমি শুধু চোখ তুলে উনার দিকে তাকালাম। উনি আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমার অশ্রু সিক্ত চোখ দুটো দেখে উনি থেমে গেলে। আমার সিক্ত চোখ দেখে উনি অস্থির হয়ে পড়লেন। আমার হাত ছেড়ে উনি আমার দুই গালে হাত রাখেন।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৮

হোয়াট হ্যাপেন রিয়া? তুমি কাঁদছো কেনো? আমি তোমাকে কী বকা দিয়েছি? বলো দিয়েছি বকা? তাহলে কাঁদছো কেনো?
আমি মলিন কন্ঠে বললাম, আমি কী শুধুই আপনার দায়িত্ব?
উনি হয়তো আমার প্রশ্নটা শুনে থমকে গেছেন। কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর থেমে থেমে বললেন,
হঠাৎ এই প্রশ্ন? কিছু কী হয়েছে?

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৩০