প্রণয় পর্ব ৪০

প্রণয় পর্ব ৪০
তানিশা সুলতানা

“শাশুড়ি মা আমি আটা মেখে দেই?
পেছন থেকে বলে ইমন। চমকে ওঠে সাদিয়া বেগম। আসলে উনি ইমনের কথা ভাবছিলো আর আটা ঢালছিলো
” একি ভয় পেলেন কেনো? এখুনি ছুঁয়ে দিন আমায়। নাহলে পি*ত্তি গ*লে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে।
চোখ বড়বড় করে হাত এগিয়ে দিয়ে বলে ইমন। সাদিয়া বেগম কাচুমাচু হয়ে হাত ছুঁয়ে দেয়। এক গাল হাসে ইমন।

“তাহলে আমি আটা মাখি আর আপনি আলু কেটে ফেলেন।
সাদিয়া বেগমের হাত থেকে আটার প্যাকেট নিয়ে বলে ইমন।
” ততোমাকে কিছুই করতে হবে না। তুমি যাও দাঁত ব্রাশ করে বসে থাকো।
আবার ইমনের হাত থেকে ময়দার প্যাকেট সাদিয়া বেগম নিয়ে বলে।
ইমন মুখ গোমড়া করে ফেলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি ইমপ্রেস হতে চাইছেন না। তাই না? তার জন্যই আমাকে করতে দিচ্ছেন না।
মোড়া টেনে বসে দুই গালে হাত দিয়ে মুখ গোমড়া করে বলে ইমন। সাদিয়া বেগম পড়ে যায় বেজায় বিপদে। এখন এই পাগলকে বলবে কি?

” আরে সেরকমটা না। বাড়ির জামাই দিয়ে কেউ কাজ করায় না কি? তাই তো করতে দিচ্ছি না।
ইমনের মাথায় হাত বুলিয়ে এক গাল হেসে বলে সাদিয়া বেগম। ইমনের খুশি আর দেখে কে? এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। সাদিয়া বেগমের দুই হাত ধরে দুই চারবার ঘুরে। সাদিয়া বেগমের মাথা ঘুরছে। ইমন হাত ছাড়তেই মাথা ধরে ইমনের মোড়ায় বসে পড়ে।

“আমি আপনার মেয়েকে পাঠাচ্ছি।
বলেই ইমন এক দৌড়ে চলে যায়। তোহা উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছিলো ইমন কি করছে?
ইমন আচমকা বের হতেই তোহা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এদিক ওদিকে তাকিয়ে হাতের ঝাঁড়ু একপাশে রাখে তারাহুরো করে।

” জলদি যাও
শাশুড়ীর সাথে রান্না করো গিয়ে।
ইমন চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলে।
“আপনার কথায়?
চোখ বড়বড় করে বলে তোহা।
” ইয়েস মেরি জান
আমার কথায়।
“জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তোহা।

” তুমি এখন না গেলে আমি তোমাকে কিস করবো। ভালো লাগবে সেটা তোমার?
ইমন বাঁকা হেসে বলে। তোহা দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চোখে তাকায় তোহা।
‘এভাবে রাগতে নেই জান। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
তোহার নাক টেনে দিয়ে বলে ইমন।
তোহা এক লাফে খানিকটা দুরে সরে যায়। ইমন মুচকি হাসে।

“ইডিয়েট
তোহা কিচেনে যেতে নেয়।
” দাঁত ব্রাশ করে তারপর যাও।
ইমন পেছন থেকে বলে। তোহা ইমনের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে রুমে চলে যায়।

তানহা নানুর সাথে বসে গল্প করছে। বিয়েটা কিভাবে করে এই গল্প। সৈকত নানুর কোলে মাথা রেখে শুনছে। তমা বেগম আর সৈকতের মা রান্না করছে। আজকেই সবাই চলে যাবে।
তুহিন স্কুলে গেছে সাথে করে তাজকে নিয়ে গেছে। তাজ স্কুল শেষ করে বাসায় যাবে।
“তানহা রুমে আয়।

সূচক রুম থেকে গলা ছেড়ে ডাকে তানহাকে। তানহা আমকে ওঠে। লজ্জাও পায়। এভাবে কেউ ডাকে?
‘যাহহহ তোর বর তোকে ডাকছে।
সৈকত তাচ্ছিল্য হেসে বলে। সাথে সাথে আবারও সূচকের ডাক।
” তানহা ছেলেটা ডাকছে যাচ্ছিস না কেনো?
রান্না ঘরে থেকে তমা বেগম চেঁচিয়ে বলে। নানু মিটমিট করে হাসছে।
আবারও সূচকের ডাক ভেসে আসে। মানে এক মিনিটে কেউ তিনবার ডাকে? তানহা ফোঁস করে শ্বাস টেনে উঠে দাঁড়ায়।

“এই লোকটা আমাকে পাগল করে দেবে।
বিরবির করতে করতে রুমে চলে যায় তানহা।
সূচক ফ্রেশ হয়ে একদম তৈরি হয়ে গেছে যাওয়ার জন্য। এখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।
” ডাকছেন কেনো?
বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বলে তানহা।
“রেডি হয়ে নে। আমার সাথেই বাসায় যাবি তুই।
আয়নার মধ্য দিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে সূচক।

” মায়ের সাথে যেতাম।
মুখ কালো করে বলে তানহা।
“আমার সাথেই যাবি। জলদি
কড়া গলায় বলে সূচক। তানহা জামাকাপড় নিয়ে রুম থেকে বের হতে নেয়।
” কোথায় যাচ্ছিস?
সূচক জুতোর ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলে।
“চেঞ্জ করতে।
” এখানেই কর।

তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। ফিতা বাঁধা শেষ করে সূচক পূর্ন দৃষ্টিতে তাকায় তানহার দিকে।
“এভাবে তাকানোর কি হলো? এখানেই চেঞ্জ করতে হবে।
তানহা এবার রেগে যাচ্ছে। এই লোকটার বুদ্ধি একটুও নেই। সারাক্ষণ শুধু অর্ডার আর অর্ডার। ইহহহ যেনো বিয়ে করে মাথা কিনে নিয়েছে।

” কি হলো?
সূচক ধমক দিয়ে বলে। তানহা গাল ফুলায়।
“এই যে জামাই। ধমক দিলে গোপনে ডিভোর্স দিয়ে দেবো বলে দিলাম।
নাক ফুলিয়ে বলে তানহা। সূচক মুচকি হাসে।
“আর?

তানহার দিকে এক পা এক পা এগিয়ে আসতে আসতে বলে।
” আআআর কি? ডিভোর্স দিবো। তারপর অন্য কাউকে বিয়ে করবো। যে ধমক দিবো না।
আমতা আমতা করে বলতে বলতে পিছিয়ে যেতে থাকে তানহা। সূচক সরু চোখে তাকিয়ে আছে তানহার দিকে।
“এএএগোচ্ছেন কেনো?

দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে তানহার। আর পিয়ানোর জায়গা নেই। এবার?
সূচক এগিয়ে এসে তানহার মুখোমুখি দাঁড়ায়। এক হাত তানহার মাথার ওপর দিয়ে দেয়ালে রাখে।
” রাতের কথা ভুলে গেছিস?
নরম গলায় বলে সূচক। তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। দুই হাতে জামা মুঠো করে ধরে।
“কি রে বল?

তানহার মুখের একদম কাছাকাছি নিজের মুখটা এনে ফিসফিস করে বলে সূচক। নাকের সাথে ঠোঁট ছুঁয়ে যাচ্ছে। তানহার হাত পা কাঁপতে শুরু করে। দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে।
” আমি যা বলবো তাই করতে হবে।
নাকে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে সূচক। তানহা উপর নিচ মাথা নারায়। সূচক মুচকি হেসে দুই হাত তানহার দুই গালে দিয়ে মুখটা উঁচু করে ধরে।

“আআমি অসুস্থ।
তানহা তারাহুরো করে বলে।
” তো?
তানহা পিটপিট করে এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। এই মুহুর্তে এই লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস নেই তানহার।

সূচক তানহার উওরের অপেক্ষায় কয়েক সেকেন্ড থেকে চট করে তানহার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা আকড়ে ধরে।
একটু পরে ছেড়ে দেয়। তানহা যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সূচক তানহার গলায় মুখ ডুবিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টানে। গলা থেকে মুখ উঠিয়ে তানহার মুখের দিকে তাকাতেই তানহা দুই হাতে মুখ ছাপিয়ে ধরে নিজের আর অনবরত চোখ বড়বড় করে মাথা নারাতে থাকে।
সূচক বিরক্ত হয়।

“ইডিয়েট
কিসটাও করতে জানে না।
ছেড়ে দেয় তানহাকে। তানহা এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। লোকটা দিন দিন মারাক্তক লেভেলের অসব্ভ হয়ে যাচ্ছে।

বসার ঘরে টান টান উত্তেজনা। মুখোমুখি বসে আছে তমাল আর আনোয়ার। আনোয়ারের পাশে তার স্ত্রী আর মেয়ে বসে আছে। ইমন দাঁড়িয়ে আছে বাবুকে কোলে নিয়ে
আরেক পাশে বসে আছে তমাল আর তাহের। সাদিয়া বেগম ওনাদের সামনে চা রেখে নিজেও স্বামীর পাশে বসে।
“ও বাবা শুরু করো না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
তোহা আর ইভা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনছে। ইরা থ মেরে বসে আছে।

” তা বলছিলাম
আনোয়ার কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলতে যায়।
“আমি খুব ভালো ছেলে। বাবার একদম বাধ্য। বাবা যা বলে তাই করি। পড়ালেখায়ও ভালো। খালি একবার ফেল করছিলাম। দেখতেও একদম হিরোদের মতো আমি। আমার সাথে আপনার মেয়েকে দারুণ মানাবে। একদম লাইলি মজনু।

এবার আপনারা বলুন কবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে। আমার কিন্তু খুব তাড়া। কোলবালিশ ছিঁড়ে গেছে। বাবা বলে দিয়েছে নতুন কোলবালিশ বানিয়ে দেবে না।
ইমন এক নাগারে কথাগুলো বলে। তোহার ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে পড়তে। উপস্থিত সবাই থমথমে খেয়ে যায়।
কারো মুখে কোনো কথা নেই।

” ওহহহ হো বাবা তো আমার কোলবালিশ থুক্কু বউকেই দেখলো না।
তোহা তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছো কেনো? জলদি যাও শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে এসো। বাবা দেখবে তোমায়।
তোহা চমকে ওঠে। সবাই তাকায় দরজার দিকে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তোহার। এভাবে বলতে হয়? চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। ইরিন এক গাল হেসে উঠে দাঁড়ায়।
“আমি সাহায্য করে আসছি তোহাকে।
ইরিন যেতে নেয়।

” আপু সুন্দর করে সাজাবি।
ইমন মুচকি হেসে বলে।
ইরিন ও একটু হেসে চলে যায়।
ইরিন সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় তোমাকে। নীল রংয়ের শাড়ি পড়িয়েছে। একদম অন্য রকম লাগছে তোহাকে। লজ্জায় ইরিনের সাথে কথাও বলতে পারছে না তোহা। ইরা বসেই আসে। ইভা সাহায্য করছে ইরিনকে।

প্রণয় পর্ব ৩৯

ওদিকে ওনাদের খাওয়া দাওয়া শেষ। ইমন কাউকে কথা বলতে দিচ্ছে না। নিজেই বলে যাচ্ছে। আনোয়ার সাহেবের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। ওনার ছেলে যে এতোটা বিয়ে পাগল হয়ে গেছে ভাবতেই পারছে না।
অবশেষে ঠিক হয় সূচক আসলে আজকেই আংটি পড়ানো হবে। আর খুব দ্রুত এদের চার হাত এক কেরে দেওয়া হবে।

প্রণয় পর্ব ৪১