প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩৩

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩৩
আরোহী নুর

বাড়ির পিছন থেকে হুডিওয়ালা সে জন বাড়ির ভিতরে কিছু একটা ছুড়ে মারল,যা মাটিতে পতিত হওয়ার সাথে সাথেই সারা বাড়ি ধোঁয়ায় ভরে গেল।হঠাৎ ধোঁয়ার উৎপত্তি চক্ষু সীমানার ভিতর এলে বাড়ির দু’জন দারোয়ান সেদিকটায় ছুটে যায়,কিন্তু ধোঁয়ার সংস্পর্শে যেতেই দু’জন জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পরে।

হুডিওয়ালা সে জন নির্ধিদায় আজ গেট দিয়েই বাড়িতে প্রবেশ করে,বাড়ির চারিদিকেই বিচক্ষণতা নিয়ে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারে ভিতরে প্রবেশের সব রাস্তাই আজ বন্ধ, অজ্ঞাত সে জন এবার বাড়ির বাগানের দিকে যায়,সেখানে বেশ বড় একটা পেয়ারা গাছ যেটা দিয়ে চড়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করা যাবে,সেদিনকটায় বারান্দা দেওয়া বেশ বড় করে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যেখানে বসে বাগানের দিকটা অনায়াসে চোখ ভরে দেখা যায়,তবে সেখানে প্রবেশ করা গেলেও ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে যাওয়া সহজ ছিল না,সেখান থেকে ঘরে যাওয়ার রাস্তায় বড় একটা দরজা দেওয়া,যাতে পার্সওয়ার্ড দিতে হবে।অজ্ঞাত জন কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মনে মনে কি যেন ভেবে নিল,অতঃপর এগুলো সেদিকে,কয়েক মুহুর্তেই সে অনায়াসে সঠিক পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজা খুলতে সক্ষম হলো,ঢুকে গেল ভিতরে।

রিদিকা শুয়ে ছিল কিন্তু হঠাৎ ঘরে কারো উপস্থিতি অনুভবে নাড়া দিলে তার ঘুম ভেঙে গেল।বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো রিদিকা।হুডিওয়ালা ব্যক্তি রিদিকার কক্ষের পানে এগুচ্ছে হঠাৎ পিছন থেকে রিদিকা তার উপর ভারী লাঠি দিয়ে প্র*হা*র করতে নিলে অজ্ঞাত জন সাথে সাথে জায়গা থেকে সরে যায়,যাতে মা*র টা ফ্লোরে পরে,অজ্ঞাত ব্যক্তি একটা লাথি দিয়ে রিদিকাকে ফেলে দেয়,রিদিকা এবার হাতে থাকা ছু*রি নিয়ে অজ্ঞাত জনের উপর হামলা করতে নিলে সে এবার রিদিকার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসায়,রিদিকা ছিটকে পরে ফ্লোরে।অজ্ঞাত জন ভারী স্বরে বলে উঠে।

″যতই যা করে নে নকল নকলই থাকে,আসলের জায়গা নিতে পারে না।শে*য়া*ল যতই চালাকি করুক বা*ঘ হয়ে উঠতে পারে না।তাই শে*য়া*ল হয়ে বা*ঘি*নী*র সাথে টক্কর নিতে আসিস না।″
″এখনই দেখিয়ে দিব কে কী।″

অতঃপর রিদিকা ছুরি নিয়ে আবারও অজ্ঞাত সে জনের উপর ঝাপিয়ে পরবে তার আগেই সে বিনা বাক্যে রিদিকার উপর কিছু স্প্রে করল,যার ফলস্বরূপ তার উপর প্রহার করে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে পরে যায় রিদিকা।অজ্ঞাত জন বেশ বড় করে হাসে এতে,রিদিকার হাত ধরে হেঁচড়িয়ে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে,

বিছানার পাশে এসে রিদিকাকে অনেকটা কোলে করেই বিছানাতে তুলে শুইয়ে দেয়।আস্তে আস্তে তার শরীরের সকল কাপড় খুলে ফেলে শুধু একটা চাদর দিয়ে তার শরীর ঢেকে দেয়,বিছানাটা হাত দিয়ে বেশ খানিক অগোছালো করে দেয়।রিদিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
″রিদিকা,সুইটহার্ট তোকে আমি প্রাণে মা*র*ব না,তোর জীবন ইন্টারেস্টিং করব শুধু,বড্ড ভালোবাসি যে তোকে সুইটহার্ট।

কথাটা বলে পকেট থেকে পুরুষদের পরিধানের একটা ঘড়ি রিদিকার বালিশের পাশে রেখে দেয়,অতঃপর পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে রিদিকার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়।
″কংগ্রাচুলেশন বেবি,থার্ড ডোজ কমপ্লিট। শান্তিতে ঘুমো সকাল ১০ টার আগ অব্দি তোর উঠার কোনো সম্ভাবনা নেই যদি কেউ না উঠায়।এর আগে তোর প্রাণের সোয়ামী এসে পরবেন,আই হোপ।নাও বাই।″

মুখ দিয়ে রহস্যময়ী একটা সুরে শিশ দিতে দিতে বেড়িয়ে গেল সে জন।
ঘন্টাখানিক পর দারোয়ানদের জ্ঞান ফিরে,উঠে নিজেদের এমন অবস্থা সম্পর্কে কিছুই বুজে উঠতে সক্ষম হয় না,আদ্রিশকে ফোন করলে ফোন উঠায় না।দু’জন আবারও নিজেদের জায়গায় চলে যায়,অনেকবার ফোন করলে আদ্রিশ তাদের ফোন উঠায় অবশেষে,তারা রাতের ঘটনা সম্পর্কে বললে আদ্রিশ অনেকটা ঘাবড়ে বাড়ি চলে আসল, সকাল ১০ টার বেশ আগেই বাড়ি পৌঁছাল।

″তোমরা দু’জন এখানে!ঘরে ম্যাডাম ঠিক আছে কি না সেটা জানার প্রয়োজন মনে করো নি?″
″স্যার ম্যাডাম তো ভিতর থেকে সব দরজা জানালা বন্ধ করে নিয়েছেন,আমরা বাহির থেকে ম্যাডামকে ডাকলেও উনার কোনো জবাব পাই নি তাই আপনাকে ফোন করি।″
″হ্যাঁ স্যার, অনেক ডেকেছি।″
″আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি।″

দাঁড়োয়ানদের কথা শুনে আদ্রিশ বেগতিক পায়ে ঘরের দিকে গেল,রিদিকাকে ডাকলেও সাড়া পেল না,পাসওয়ার্ড টাইপ করলে দরজা খুলে গেল,আদ্রিশ ঢুকে গেল ভিতরে।
অতঃপর সোজা তার কক্ষের দিকে যায়,কক্ষের দরজা আজানো দেখে থাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে,রিদিকাকে উক্ত অবস্থায় দেখে ঠিক থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠে তার নাম নিয়ে। চেঁচানোর শব্দেও রিদিকার জ্ঞান ফিরে না,আদ্রিশ রেগেমেখে তেড়ে যায় তার দিকে অতঃপর তাকে তার নাম ধরে ডেকে ঝাঁকাতে শুরু করলে রিদিকা জেগে উঠে।

″কি হয়েছে আদ্রিশ,সাত সকালে চেঁচাচ্ছো কেন?″
″তোমার অবস্থা দেখো আগে।″
″ও মা আমার এ অবস্থা কে করল!″
নিজের বিবস্ত্র অবস্থা দেখে আশ্চর্যের সহিত চাদড় দিয়ে ঘা ঢেকে উঠে বসে রিদিকা।
″কোন নাগর এসেছিল তোমার?″
″কি বলছ আদ্রিশ এসব!কোন নাগর মানে!″

″মানে বুঝো না!ন্যাকা সাজো আমার কাছে,বিবস্ত্র অবস্থায় বিছানায় আয়েশে শুয়ে আছো,বালিশের পাশে পুরুষের হাতের ঘড়ি রাখা,বিছানা এলোমেলো,রাতে হঠাৎ আমার দারোয়ানরা অজ্ঞান হয়ে যায় এর মানে কি হতে পারে বলো?″
″কি বলতে চাইছ তুমি আদ্রিশ?″
″এটাই বলতে চাইছি আমার দারোয়ানদের কিছু একটা করে অজ্ঞান করেছ যাতে তোমার নাগরকে দেখতে না পায় ওরা,আর তারপর ওকে নিয়ে রাতভর ফুর্তি করেছ।″

″স্টপ ইট আদ্রিশ,তুমি তা ভাবতেও পারো কি করে!কাল রাতে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিটা এসেছিল যে আমার শরীরে ভাইরাস দিয়েছে, সে হঠাৎ আমার মুখে কিছু স্প্রে করলে আমি জ্ঞান হারাই হয়ত,কারণ তারপরের কোনো কথা আমার মনে নেই।″
″সাট আপ রিদিকা,কথা দিয়ে পাপ ঢাকতে এসো না,আমি বোকা নই।তুমি কি মনে করো মনগড়া কিছু গল্প বলবে আর আমি বিশ্বাস করব,এর জন্যই ঘরের সিসিটিভি সরিয়েছ আমাকে দিয়ে যাতে আমি তোমার নোং**রা*মো সম্পর্কে কিছু জানতে না পারি। আমারই ভুল ছিল আঁখির মতো পবিত্র ফুলের উপর তোমার মতো নোং*রা*কে এনে তুলেছি।″

″তুমি বিশ্বাস করো আদ্রিশ,আমি সত্যি বলছি,আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি,আমি শুধু তোমার।তুমি যেমনটা ভাবছ তেমনটা কিছু নয়।আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু বিশ্বাস করো প্লিজ আমার উপর।″
রিদিকা আদ্রিশের পায়ে লেপ্টে পরে কাঁদছে,এদিকে আদ্রিয় ভাবলেশহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মস্তিষ্ক ভাবশূণ্য অবস্থা ধারণ করল তার অল্প ক্ষণেই।কিছু সময় মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে পা রিদিকার কাছ থেকে টান দিয়ে ছাড়িয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়,রিদিকা চাদর জড়ানো অবস্থায় কাঁদতে থাকে সেখানে পরে।

আঁখি পৌঁছায় পুলিশ স্টেশন,রিদিকার স্বামী আজিজের উপর থেকে কেস তুলে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়ে আজিজকে মুক্ত করল আঁখি,অতঃপর তাকে নিজের গাড়িতে এনে বসাল।আজিজ অবাকত্ব নিয়ে বলল।
″কী ডা. আঁখি! আপনিই জেলে দিলেন আর আপনিই বের করলেন,ব্যপার বুঝলাম না।″
″জেল এ আপনি গিয়েছিলেন আপনার কর্মে,কারণ আপনি নিজের হয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন নি,আপনি নির্দোষ তা কাউকে বুঝিয়ে উঠতে পারেন নি,ভিকটিম হয়ে সবকিছু মানিয়ে নিয়েছেন।″

″কি করতাম,রিদিকা এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছিল যে কেউ আমার উপর বিশ্বাস করার কথা ভাবতেও চায় নি।″
″হুম,এখন প্রথম থেকে বলুন আসলে ব্যপারটা কী?″
″আসলে বরিশালে আমি রিদিকাদের বাড়ির পাশে একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস করাতাম তখন, প্রায়ই আসতে যেতে রিদিকার সাথে কথা হতো আমার,আস্তে আস্তে পরিচয়,তারপর ওর সাথে ফোনেও কথা হতে শুরু হয়,এক পর্যায়ে বুঝতে পারি আমি ওকে ভালোবাসি,

ওকে প্রপোজ করলে সাথে সাথে ও একসেপ্ট করে নেয়,তারপর শুরু হয় দু’জনের প্রেম,আমার মা বাবা কেউ নেই,একা থাকতাম একটা ভাড়া ঘরে,চাকরি বলতে একটা বেসরকারি স্কুলের টিচার ছিলাম আর একটা কোচিং সেন্টার চালাতাম।অবস্থা খারাপ ছিল না আমার,ওকেও অনেক ভালোবেসে গিয়েছিলাম,তাই একদিন ওকে বললাম আমাদের বিয়ের জন্য ওর বাবাকে বলব।কিন্তু ও মানা করে দিল।বলল ওর মা বাবা ওকে একদম পছন্দ করেন না,

প্রথম থেকেই কথা হতো সময় প্রায়ই বলত ওর মা বাবা ওকে ভালোবাসেন না,ওকে একদমই পছন্দ করেন না,ওকে বিয়ে দিতে চান না,আমার বিষয়ে শুনলে না কি ওকে প্রানে মেরে ফেলবে।আমি অবাক হয়ে যখন জিজ্ঞেস করতাম এমনটা কেন করবেন উনারা,তখন ও বলত ও না কি জানে না ওর বাবা মা কেন ওকে অবহেলা করেন,কিন্তু কথাটা জোর দিয়েই বলত ওর মা বাবা ওকে ভালোবাসেন না।যাতে আমি ওর কথা বিশ্বাস করে যাই,

তাও অনেক বোঝাই ওর মা বাবাকে কোনোরকম আমাদের কথা বলার জন্য। কিন্তু ও মানত না,তাই আর কোনো পথ না পেয়ে ওকে পালিয়ে আসার জন্য বলি আর ও মেনেও যায়,দু’জন ঢাকা চলে আসি,এখানেও আমি একটা বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হই,বিয়ে করে আমরা দু’জন একসাথে থাকতে শুরু করি।ওর সাথে ভালোই কাটত আমার দিন,কিন্তু আস্তে আস্তে ওর স্বভাবে অস্বাভাবিকতা আন্দাজ করতে পারি আমি,

ও আমাকে আমার কোনো বন্ধু বান্ধবদের সাথে মিশতে দিতো না।আমাকে কেমন জানি বন্ধি করে রাখতে চাইত নিজের কাছে,আমার এক কাছের মেয়ে বন্ধু ছিল,বলতে শুধুই ফ্রেন্ড,ওর বদৌলতেই ঢাকাতে চাকরি পাওয়া আমার,অনেক কথাবার্তা হতো আমার ওর সাথে প্রায়ই কিন্তু এ নিয়ে রিদিকার সাথে সমস্যা হতো,যার কারণে ওর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেই আমি,কিছুদিন পর ওর লাশ পাওয়া যায় একটা ঝোঁপে,

প্রমত্ত অঙ্গনা নামের কেউ ওকে মেরে দেয়,যাতে আমি অনেক শোকাহত হই,যা রিদিকা মেনে নিতে চাইত না,এ নিয়ে শুধু ঝগড়া বাঁধাত আমার সাথে।হঠাৎ একদিন আমি রেগে বলি ওকে ছেড়ে দিব তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যাই,পুরো একদিন আমার এক বন্ধুর বাসায় থাকি তার পরদিন আবারও ফিরে আসি ওর টানে,ওকে বড্ড ভালোবাসতাম চাইলেও দূরে থাকতে পারতাম না,

কিন্তু কে জানে ও আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল,সেদিন আসার পর জানতে পারি ও আমার নামে অনেক দূর্নাম রটিয়ে আমাকে সবার চোখে অপরাধী বানিয়ে রেখেছে অনেক আগ থেকেই,নিজেকে হয়ত নিজেই আঘাত করেছিল তারপর দোষ দিয়েছিল সেদিন আমার ঘাড়ে,যার ফলস্বরূপ কেউ শুনে নি আমার কথা,আপনি আর আদ্রিশ মিলে আমাকে মেরে জেলে দিয়ে দাও।″

″হুম,রিদিকা যা করার করে নিয়েছে,আপনাকে আপনার ন্যায় বিচার আমি পাইয়ে দিব চিন্তা করবেন না।আপনাকে আমি এখন একটা ভাড়া ঘরে নিয়ে যাব,সেখানে আপনি থাকতে পারেন,৬ মাসের ভাড়া আমি ভরে দিয়েছি আপনি সেখানে থেকে নিজের জীবন গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন,তবে হ্যাঁ ভুলেও আদ্রিশ রিদিকার সামনে পরবেন না,আর আমার সাথে যোগাযোগে থাকবেন,প্রয়োজনে যেন আপনাকে পাই।বাকিটা আমিই সামলাব।″

আজ আজিজের কাজে দেরি হয়ে যাওয়ায় আঁখি আর আদৃতের বাড়ি না গিয়ে হাসপাতালে চলে যায়,আজ যে করেই হোক সে আদৃতকে সবকিছু জানিয়ে ছাড়বেই।
নিজের ক্লাস শেষ করে এসে আদৃতের কেবিনে বসে আছে আঁখি,বর্তমানে আদৃতেরও একটা কাজ চলছে এসে পরবে কিছুক্ষণ এর মধ্যে তাই অপেক্ষা করছে সে,কিছুক্ষণের মধ্যেই আদৃত এসে পরল।

″আরে আঁখি তুমি এখানে বসে আছো যে?″
″আপনার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল আমার।বর্তমানে কোনো কাজ না থাকলে বলুন।″
″না না এখন কোনো কাজ নেই বলো কি বলতে চাও?″
নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলল আদৃত,আঁখি আমতা করে বলল।

″ব্যপারটা কি করে জানাব আপনাকে বুঝতে পারছি না,আর আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া করবেন তাও ভেবে পাচ্ছি না,তবে আগে বলুন সত্যতা শুনার পর আপনি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন।″
″কি হয়েছে আঁখি বলবে তো?কি এমন কথা হতে পারে যা শুনে আমি খুব বেশি রিয়াক্ট করব বলে তোমার মনে হয়!″
″আসলে…″
″কি হয়েছে আঁখি বলবে তুমি,তোমাকে এর আগে আমি কখনও এমন দ্বিধাদ্বন্দে দেখি নি,বলো কি হয়েছে?″
″আসলে ছয় বছর আগে আমরা নিজেরা আলাদা হই নি,আমাদের আলাদা করা হয়েছে।″
অপ্রস্তুত মনোভাবের সহিত বলে দিল আঁখি।
″আলাদা করা হয়েছে মানে!″

অতঃপর আঁখি নিজের ফোনে করা সানিয়ার ভয়েস রেকর্ড শুনায় আদৃতকে,সবকিছু শুনে আদৃত যেন পাথর হয়ে যায়,এত কঢ়া সত্য কি করে মেনে নিবে,নিজের কানে আজ বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না,রাগে ক্ষোভে চোখ দিয়ে গড়াতে শুরু করেছে জল,মুহুর্তেই আদৃতের চোখগুলো র*ক্ত*ব*র্ণ ধারণ করে নিয়েছে,উঠেই হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেল এবার।আঁখি তার পিছনে ছোটতে শুরু করল।

″ডা.আদৃত,কোথায় যাচ্ছেন আপনি?″
″ওই আদ্রিশকে খুন করতে,ও আমার কাছ থেকে আমার বেঁচে থাকার আমার খুশি থাকার কারণ আমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নিয়েছে,আমাকে জীবন্ত লা*শ বানিয়ে দিয়েছিল,ওর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।″
″ডা.আদৃত,আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না,ওকে সাজা দেওয়ার অনেক রাস্তা আছে,সোজা ওকে খুন করতে গেলে কেমনে হবে!আপনার পুরো জীবন পরে রয়েছে সামনে,আপনার লাইসেন্স চলে যাবে,মাথায় রাখতে হবে এসব,আপনি তো ওর মতো বা*জে নন,মাথা ঠান্ডা করুন প্লিজ।″

″চলে যাক সব জাহান্নামে, আমার কোনো যায় আসে না,আমার তুমিকে কেঁড়ে নিয়েছে ও,নিজের হাতে ওকে সাজা না দিলে শান্তি পাবো না।″
সজোরে গর্জে উঠে কথাগুলো বলে আদৃত,হাসপাতালের অনেকেই সেখানে জরো হয় মুহুর্তেই। আদৃত আঁখির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায়,আঁখিও পিছু যায় তার,আদৃতকে আঁখি এই দ্বিতীয়বার এতো রাগে দেখতে পেয়েছে যা মোটেও ভালো কিছুর লক্ষণ বলে মনে হলো না তার কাছে।অতঃপর সেও নিজের গাড়িতে পিছু গেল আদৃতের।″
আহিল আর আশরাফ খানের চোখেও উক্ত দৃশ্য গেল।

″কি হয়েছে বাবা?কোনো আন্দাজ করতে পারছ?″
″না,তবে আঁখি আদৃতের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মন হয়।″
″জানো বাবা আমার মনে হয় ওদের মধ্যে কোনো সমস্যা তৈরি করা হয়েছিল ছয় বছর আগে,তোমার মনে আছে আঁখি আদৃতের জন্য কতো পাগল ছিল।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩২

আমরাও রাজি ছিলাম এ ব্যপারে,কিন্তু হঠাৎ একদিন আদৃত আমেরিকা চলে যায়,আঁখিও কেমন মনমরা হয়ে পরে,অসুস্থও হয়,তবে আমাদের কিছু বলে না,আদৃতের সাথে এ নিয়ে কথা বলতেও দেয় না আমাদের,অতঃপর তিনবছর আগে আমরা যখন আঁখির সাথে আদৃতের বিয়ে ঠিক করতে চাই তখন আঁখি সোজা মানা করে আর আদ্রিশের ব্যপারে জানায় আমাদের। আমার তো মনে হয় এ সবকিছুতেই কোনো না কোনোভাবে আদ্রিশ জড়িত।″

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩৪