প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩৮

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩৮
আরোহী নুর

আঁখি আসলো বাড়িতে,সারা রাস্তায় কান্না করেছে,চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে অল্প সময়ে,আজ নিজেকে নিঃস্ব লাগছে বড্ড,পৃথিবী অন্ধকার লাগছে,তাও নিজেকে সামলে নেওয়ার ব্যর্থ এক চেষ্টা করে বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলো,চিৎ হয়ে পরে আছে উভয় চোখের কোণ হয়ে বেয়ে পরছে জল।

আদৃত সার্জারি করে এসেই জানতে পারল আঁখি হাসপাতাল ছেড়েছে।মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল তার, এবার নিশ্চিত হলো আঁখির সাথে কিছু একটা তো হয়েছে যার ফলস্বরূপ ও এমনটা করছে,না আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না আদৃত,আঁখিকে হারিয়ে যাবার ভয় এবার বেড়ে গেল তার,আঁখি ব্যতীত এখন যেন এক মুহুর্তও নিশ্বাস নেওয়া মুশকিশ আদৃতের,আর দাঁড়াল না,সোজা আঁখির বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।কিন্তু গাড়িতে উঠার আগ মুহুর্তে হঠাৎ ফোন আসল তার।আরিয়ান মির্জা সাহেব কল করেছেন।ফন উঠাল সে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

″হ্যাঁ বাবা বলো?″
″কোথায় তুই আদৃত?কাজ শেষ?বাড়ি কবে ফিরছিস?জরুরি কথা ছিল।″
″হ্যাঁ বাবা কাজ শেষ, তবে এখন বাড়ি ফিরব না অন্য কোথাও যেতে হবে। এসে কথা বলছি।″
″তা কোথায় যাচ্ছিস?″
″আঁখির বাড়িতে,ও হঠাৎ করে কেমন জানি বিহেভ করছে,এমনকি হাসপাতালও ছেড়ে দিয়েছে,আমি ওর বাড়িতে যাচ্ছি। ″
″আদৃত তোর সাথে আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা তুই আগে বাড়ি আয়।″

″পরে আসলেও তো হবে বাবা।″
″বাবা থেকে এখন অন্য মেয়ে বড়?″
″এ কেমন কথা বলছ বাবা,আমার জন্য আল্লাহ তায়ালা পরেই তোমাদের অবস্থান, এ কথা তুমি কি করে ভাবতে পারো!″
″তবে জলদি চলে আয়।″
″কিন্তু বাবা…″
″আমি কোনো কিন্তু শুনতে চাই না আদৃত,তুই আসছিছ কি না বল?″
″ওকে আসছি।″
″হুম।″

আদৃত বাবার কথায় বাধ্য হয়ে আগে উনার কাছে গেল।
বর্তমানে নিজ কক্ষের বিছানায় বসে আছেন আরিয়ান মির্জা, পাশে বসিয়েছেন আদৃতকে,এবার নরম স্বরে বললেন তাকে।
″আদৃত,তোর বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, আমার মতে তোর বিয়ে করে নেওয়া উচিত।″
″আমি বিয়ে করব বাবা,এ বিষয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলব ভাবছি,দেখো বাবা আমি তোমার আর মায়ের সাথে বরাবরই ফ্রি হয়ে কথা বলি,আজকেও বলতে চাই।আমি আঁখিকে পছন্দ করি কথাটা তোমরা ছয় বছর আগ থেকেই জানো,আর আমি বিয়ে করলে ওকেই করব।″

″আদৃত,তুই প্রাপ্তবয়স্ক,তাছাড়া প্রতিষ্ঠিত,তোর উপর বিয়ে নিয়ে নিজের জোর আমি খাটাতে চাই না।কিন্তু আমিও কাউকে পছন্দ করেছি তোর জন্য,রিংকি মেয়েটা মন্দ না,তোকে পছন্দও করে,একসাথে কাজও করেছিস এতো বছর,দেখ আঁখি তোর অতীত ছিল আর এমনটা তো জরুরি নয় যে তাকেই আবার জীবনে জড়াতে হবে।″
″কী বলছ বাবা!আর রিংকিকে তো আমি আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছি,ও কোথা থেকে আসলো আবার?″

″ও আমেরিকা যায় নি,ও সেদিন ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেড়িয়েছিল কিন্তু আমি ওকে আটকাই,ও সবকিছু বলেছিল আমাকে তুই আঁখির জন্য ওর সাথে বা*জে ব্যবহার করেছিস,আর তোর মাও ওকে পছন্দ করেন না,তাই ওকে আমি আলাদা একটা ঘর ভাড়া রেখেছি,সঠিক সময় দেখে তোর সাথে কথা বলব বলে।″
″এখানে কথা বলার কী আছে বাবা,আমি ওকে পছন্দ করি না,তাছাড়া আমি এতবছর বিয়ে করি নি শুধু আঁখির পথ চেয়ে,বিয়ে করলে আমি আঁখিকেই করব নয়ত না।″

″দেখ আদৃত,তুই টিনএইজার না,ম্যাচিওর একজন ডাক্তার,তোর কাছ থেকে এমন কিছু কীভাবে আশা করা যায়?তুই তো জানিস সমাজে আমি আমার সম্মান কি করে গড়ে তুলেছি আর তুই কি চাস তা মুহুর্তেই নষ্ট হয়ে যাক।
অবিবাহিত হয়ে একজন ডিভোর্সিকে বিয়ে করা কতটা অসম্মানের হবে ভাবতে পারছিস?তাও মেনে নেওয়া যেত,কিন্তু আঁখি মাও হতে পারবে না,এতকিছু কোনো ছেলের বাবা কেমনে মেনে নেয়।?″

″বাবা,এসব কথা তুমি বলছ!সর্বকালের আদর্শ শিক্ষকের মুখে এমন কথা শুনব কখনও ভাবি নি।তুমি কখন থেকে নারী পুরুষ ভেদাভেদ করতে শুরু করলে বাবা?সমাজের আট দশটা লোকের মতো নারীদের দেখতে লাগলে!কেন বাবা এমন অনেক পুরুষই তো আছে যারা ডিভোর্সি হয়েও কুমারী মেয়েকে বিয়ে করছে,তাছাড়া বাবা হতে অক্ষম হলেও টাকার জোরে বিয়ে করে নিচ্ছে, কই তাদের নিয়ে তো সমাজ কিছু বলে না,তবে এমন কিছু নারীদের ক্ষেত্রে হলে সবাই আঙুল উঠায়,তুমি কবে থেকে এমন লোকদের সমর্থন করতে শুরু করলে!আঁখি তো তোমার কাছে মেয়ের সমতুল্য ছিল আর এখন ও মুহুর্তেই পর হয়ে গেল।এটাই হয়ত নিজ আর পরদের মধ্যে তফাত থাকে।

আঁখির কোনো দিক নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই বাবা,আর যেখানে কথা বাচ্চা নিয়ে তাহলে আমরা দু’জনই ডাক্তার ওসব দিক আমরা দেখে নিব।আর আমার শেষ কথা আমি যদি বিয়ে করি তবে আঁখিকেই করব।″
″আদৃত তুই কিন্তু অনুভুতির নিচে দমে গিয়ে এসব বলছিস,মা বাবা সন্তানের খারাপ কখনও চায় না,অবাধ্য সন্তানের পরিণতি কি হয় আঁখিকে দেখে বুঝতেই পারছিস।তাছাড়া তুই আঁখিকে বিয়ে করতে চাইলেও আঁখি কি তাই চায়।আমার মনে হয় না আঁখি কারো জীবনের সাথে নিজেকে জড়াতে চাইবে আর।″

″এতো শিওর কীভাবে বাবা তুমি?এর মানে তুমিই আঁখিকে কিছু বলেছ,তাই ও এমন করছে।″
″হ্যাঁ বলেছি,বলেছি আমার ছেলের জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছি।ভুল কি বলেছি?″
″এটা তুমি কী করলে বাবা।অবশেষে তুমিও আঁখিকে কষ্ট দিলে,না জানি কতো ব্যথা নিয়ে ঘুরছে মনে।″
″কথাটা বলতে বলতেই আদৃত ছোটে বাইরের দিকে চলে গেল।″
″আদৃত কোথায় যাচ্ছিস?কথা শুন আমার।″

শায়েলা মির্জা কক্ষে আসতে নিলে আদৃত আর আরিয়ান মির্জাকে কথা বলতে দেখে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে যান,এতসময় উনি সবকিছু শুনছিলেন,এবার বেশ রেগে গিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠলেন।
″খুশি হয়ে গেছো তুমি আমার ছেলে আর মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে?কি পেলে তুমি এসব করে?তুমি কি মনে করো তুমি বলবে আর আদৃত বিয়ে করে নিবে,তাও তোমার ওই শাঁ*ক*চু*ন্নি রিংকিকে?আমার ছেলে ছয় বছর দেশে আসে নি আঁখির শোকে,এবার যখন অবশেষে সুখের কিছু ক্ষণ জীবনে আসছিল তখন তুমি তা কারতে পারলে!আজ তোমার সম্মান আমার ছেলের থেকে বড় হলো!″

″শায়েলা তুমি একটু বেশিই ভাবছ,প্রেম ভালোবাসা এসব শুধু আবেগ,আর আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।″
″খুব সহজে বলে দিলে না আরিয়ান,একদিন আমার প্রেমে পাগল হয়ে বিষ অব্দি পান করেছিলে মনে আছে?তোমার বাবাও আমাদের বিয়ের কথায় এভাবে মানছিলেন না কারণ আমার পরিবার গরীব ছিল,কিন্তু তোমার জেদের কাছে হার মেনে গেলেন উনি, আর আজ তুমি বলছ এসব শুধু আবেগ।এর মানে কি আমাকে বিয়ে করে এখন তুমি পস্তাচ্ছো?″

″তুমি ভুল ভাবছ, আমি শুধু আমার ছেলের জীবন শুধরাতে চাইছি।″
″হ্যাঁ নিজের বেলা সব ঠিক,আর পরের বেলাই ভুল।তবে তুমি যাই করো আরিয়ান আমার ঘরের বউ তো শুধু আঁখিই হবে,আর যদি তুমি এখানে বাঁধা দাও আর এতে আমার ছেলের কিছু হয় তবে আমি তোমাকে ছাড়ব না,গলায় দড়ি দিয়ে ম*র*ব এই বলে দিলাম।″

আঁখির বাড়িতে ঢুকতে পারল না আদৃত,আঁখি গার্ডদের বলে দিয়েছে আদৃত আসলে যাতে ভেতরে আসতে না দেয়।
″সরি স্যার,ম্যাম আমাদের বলে দিয়েছেন আপনাকে যাতে উনার পাশে কোনোভাবেই যেতে না দেই।″
″তোমাদের ম্যামকে বলে দাও আমি কথা না বলে যাব না।″
″স্যার এই মাত্র কল করলাম,ম্যাম উনার কথায় অটল।″
″আমিও দেখব কিভাবে অটল থাকে।″

এবার আদৃত রাস্তা থেকে জোরে জোরে আঁখিকে ডাকতে শুরু করল।
″ওই মন চোর বাইরে বেরোয়,আজ দেখব কিভাবে কথা না বলো,তোমাকে কথা বলতেই হবে,এই পাগল প্রেমিক তোমার সাথে কথা না বলে কোথায় যাবে না,ওই আঁখি শুনতে পাচ্ছো তুমি?আমার বাবার কথায় আমাকে পর করে দিতে পারবে তুমি?তুমি কি ভেবেছ আমি তোমার পিছু ছেড়ে দিব?″

আদৃত এসেছে আঁখি বারান্দা দিয়ে দেখেছে,আদৃতের চেঁচানো বাণী স্পষ্ট আঁখির কানে আসছে,আঁখি শুভ্রতার কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে চলেছে,পাশে জাহানারা রাহমান বসে আছেন,আঁখি উনাকেও সবকিছু জানিয়েছে।এবার উনি আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

″মা রে,যা হয়েছে ভুলে গিয়ে নতুন জীবন শুরু কর,তোর সাথে তো ওই প্রেমিক হৃদয়ও ছলনার স্বীকার হয়েছে,তোর জন্য জীবনে এগুতে পারে নি,যখন এতবছর এগুয় নি তবে আগামীতে এগুবে তার কি নিশ্চয়তা আছে?ওর কি অধিকার নেই জীবনে সুখী হওয়ার,কিছু মানুষের জন্য নিজের সাথে ওর জীবনটাও নষ্ট করবি?এতে তো তোর বা আদৃতের কোনো দোষ নেই।″

″আমি পারব না মা,আমি পারব না,আমি পারব না আমার আত্মসম্মান হারাতে।তুমি প্লিজ দোয়া করো আল্লাহ যাতে আমি আর উনাকে সঠিক পথ দেখান।″
বেশ খানিক্ষন হয়ে গেছে,আঁখি কান্না করে এখন বেশ শান্ত হয়েই মায়ের কোলে শুয়ে আছে, বাহির থেকে কম হচ্ছে না আদৃতের চেঁচামেচি, ডেকেই যাচ্ছে আঁখিকে।এদিকে ঝড় আসছে প্রবল বেগে।
″আঁখি আসবে না তো বাইরে?ঠিক আছে,আমিও এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব যতক্ষণ না তুমি নেমে আসছ।এখন যাই হয়ে যাক।″

আদৃত এবার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল সেখানে আঁখির কক্ষের পানে তাকিয়ে, মুহুর্তেই নামল ঝড়,যাকে বলে প্রবল প্রলয়ঙ্কারী,গতকাল বৃষ্টিতে ভিজায় আদৃতের হালকা জ্বর এসেছিল তা জানে আঁখি,এখন আবারও একটা ঝড় উপর দিয়ে গেলে কি হতে পারে আন্দাজ করে নিতে পারছে,আদৃতকে নিয়ে মনে শুরু হয়েছে আশঙ্কা,আদৃতের কষ্ট কখনও মেনে নিতে পারে না আঁখি, ঝড় বেড়েই চলেছে,আঁখি এবার ছোটে গেল বারান্দায়।গিয়ে দেখল আদৃত রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার কক্ষের পানেই তাকিয়ে আছে,আঁখিকে দেখতে পেয়ে মুখে প্রাপ্তির এক হাসি ফুটিয়ে নিল মুহুর্তেই,আঁখি বুঝতে পারল অতিরিক্ত ঝড়ের বেগ তার শরীরকে দূর্বল করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।কক্ষ থেকে এবার শুভ্রতা বলল।

″আঁখি আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিত, উনি সারারাত এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে উনার শরীর খারাপ করবে অনেক,বিপদজনক কিছুও হতে পারে।″
আঁখি আর কিছু না ভেবে ছোটে বেড়িয়ে গেল।
একদম আদৃতের সামনে গিয়ে থামল।
″আমি জানতাম তুমি আসবে আঁখি।″
″কী শুরু করেছেন আপনি এসব?আপনি ছোটো বাচ্চা না যে এমন জেদ ধরে বসে থাকবেন,বৃষ্টিতে এভাবে ভিজলে কি হবে জানেন না!″

″তোমাকে না পেলে বাঁচা যে এমনিতেই দূরুহ হবে আঁখি।তোমার প্রেমে তো আমার এ মন বাচ্চা থেকেও অবুঝ ।তুমি যে আমার নিশ্বাসে মিশে গেছ আঁখি,একবার হাতটা ধরো দিশা পাব।″
″আমি আপনাকে ভালোবাসি না,কতবার বলব।″
″তোমাকে বাসতে হবে না,আমার একার ভালোবাসা আমাদের দু’জনের জন্যই যথেষ্ট,তুমি প্লিজ একবার হ্যাঁ বলো বাবাকে আমি মানিয়ে নিব।″

″আংকেল মেনে গেলেও আমি বিয়ে করব না আপনাকে।আপনি চলে যান প্লিজ, আমি আপনাকে ভালোবাসি না।″
এবার আদৃত টান দিয়ে আঁখিকে আবার নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে চেপে ধরল তাকে।আঁখির বাম হাত নিতের হাতে তুলে বিশ্বাস ও অধিকার সহিত বলল।
″যদি ভালোই বাসো না তবে এখনও আংটিটা খুলো নি কেন?আমার ভালোবাসার প্রতিক এখনও কেন তোমার শরীরে বিদ্যমান?বলতে পারবে?
কারণ তুমি আমার ভালোবাসো আঁখি,আমার দেওয়া ভালোবাসার অংশগুলো তুমি কখনই নিজে থেকে আলাদা করতে চাও না।″

″সব ভুল, সব মিথ্যে,আমি আপনাকে ভালোবাসি না,এই আংটি না খোলা নিয়েই যদি এতো কিছু হয় তবে এই নিন আপনার আংটি আর চলে যান প্লিজ।″
আদৃতকে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজ থেকে ছাড়িয়ে হাতের আংটিটা খুলে আদৃতের হাতে দিয়ে কথাগুলো চেঁচিয়ে বলল আঁখি।
″তুমি আংটিটা খুলে দিলে আঁখি,একটুও হাত কাপল না তোমার?″

″আপনাকে ভালোবাসি না,তাই হাত মোটেও কাঁপে নি।″
″এমনটা বলো না আঁখি,তুমি বিহনে পাগল হয়ে যাব আমি,আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় এখন তুমি ছাড়া,দয়া করে পর করে দিও না,ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় বড্ড,অন্যের সাজা তুমি আমাকে দিয় না।″
″প্লিজ ডা.আদৃত আমার আর এসব ভালো লাগছে না,চলে যান প্লিজ,আমি আপনার যথেষ্ট সম্মান করি আমি চাই না আমার কোনো কথায় বা আচরণে আপনি কষ্ট পান।প্লিজ চলে যান।″

″চলে গেলে খুশি হবে!″
″হবো।″
″কখনও সামনে না আসলে ভালো থাকবে!″
″হ্যাঁ থাকব,থাকব থাকব,চলে যান প্লিজ,বিরক্ত করে তুলেছেন আপনি বড্ড।″
বুকে পাথর রেখে মিছে কথাগুলো বলে আবারও বাড়ির ভিতর ছোটে চলে আসল আঁখি,আদৃতের পৃথিবীতে যেন মুহুর্তেই অন্ধকার নামল,বুকে বিরাজমান হলো শুন্যতা,মস্তিষ্ক যেন কাজ করা বন্ধ করে দিল।

রিদিকা আজ মেকআপ এর মাধ্যমে নিজের কুৎসিত দিক ঢাকার চেষ্টা করল,আদ্রিশের দেওয়া একটা শাড়ী পরে বেশ সাজগোছ করে নিয়েছে,আদ্রিশকে আজ কাছে টানবে সে,তার ডাকে দিতে হবেই আজ আদ্রিশকে সাড়া,অবশ্য এতো মেক আপ করেছে যাতে তার আসল চেহারা ঢেকে গেছে অনেকাংশেই, বেশ খারাপ দেখাচ্ছে না তাকে,এবার আদ্রিশ এলো কক্ষে,আসতেই রিদিকা তাকে জড়িয়ে ধরল ছুটে এসে।

″তুমি এসেছ?দেখ না তোমার জন্য সেজেছি আমি আজ,বলো না কেমন লাগছে,কতো দিন হয় পাশে আসো না, ছুঁয়েও দেখো না আমায়।″
আদ্রিশ প্রবল এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল রিদিকাকে ফ্লোরে।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩৭

″বললাম না আমার সামনে না আসতে,চুপচাপ আমার কক্ষের বাইরে চলে যা তোর ওই অলুক্ষুণে চেহারা নিয়ে।তোর জন্যই আজ সব হারিয়েছি,আর কথা রইল তোর রুপের,মেকআপ দিয়ে যেভাবেই ঢাক নিজেকে কুৎসিত রূপ ঢাকতে পারবি না।তোর দিকে তাকাতেও কেমন জানি ভয় হয় এখন।নিজেই হয়ত নিজেকে দেখার ক্ষমতা কুলিয়ে উঠতে পারিস না এখন আর আসিস আমার কাছে আসার বাহানা খোঁজতে,তোর মতো মেয়ের পাশ ঘেঁষতেও রুচিতে বাধবে আমার।″

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩৯