প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৬

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৬
তানজিলা খাতুন তানু

অতসী চিরকুটটা খুলে দেখ,দেখা আছে..
“এই যে মিস, কালকে তো আপনার জীবনে একটা বিশেষ দিন আপনাকে আপনার সফলতার জন্য পুরস্কৃত করা হবে। আর আপনি কি বলছিলেন যাবেন না! কালকে চুপচাপ শাড়িটা পড়ে সুন্দর করে সেজে চলে যাবেন। আমি আপনার মুখে কালকে বিজয়ীর হাসি দেখতে চাই,বুঝেছেন!”
অতসীর বুঝতে অসুবিধা হলো না শাড়ি আর চিরকুট কে পাঠিয়েছে। অতসী চিঠিটা পড়ে নিজের মনেই প্রশ্ন করল…

– উনি কি আমাকে আদেশ করছেন নাকি অধিকার দেখাচ্ছেন!
অতসীর আর পড়াশোনা করা হলো না। চিরকুট আর শাড়িটা আলমারীতে রেখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরেরদিন…
কলেজে আবারো উৎসবের আমেজ। আজকে বাৎসরিক অনুষ্ঠান, অনেক অতিথী আসবেন। মিহানের কলেজ শেষ হয়ে গেছে তবুও আজকে কলেজে এসেছে।‌ অন্য কিছু বাহানা হলেও আসল কারন তো অতসী কে দেখা। জিনিয়া ডিপার্মেন্টে থার্ড হয়েছে আর একটা ছেলে সেকেন্ড হয়েছে।যেহেতু তিনজনকে পুরস্কৃত করা হবে তাই জিনিয়াও পাবে।
কলেজে মিহান কে দেখে জিনিয়া একটু অবাক হলো। ওহ জানত না আজকে মিহান ও আসবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আরে মিহান তুমি।
– হুম। দেখতে আসলাম, তুমি প্রাইজ পাবে আর আমি আসবো না হতে পারে।
মিহানের কথা শুনে জিনিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ছেলেটা এতটা ভালোবাসে ওকে, নিমিষেই একটা প্রশান্তি খেলা করে গেল মনের মাঝে। মিহান জিনিয়ার সাথে কথা বলছে ঠিকই, কিন্তু বারবার চোখটা এদিক ওদিক করেই চলেছে। দুটো চোখ অতসী কে একপলক দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে। আগে প্রতিদিন কলেজ আসলে অতসীর সাথে দেখা হয়ে যেত, কিন্তু এখন কলেজ শেষ প্রতিদিন আসতেও পারে না আর দেখাও হয় না।
ওইদিকে…

অতসী আদৃতের দেওয়া শাড়িটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলোকে বাঁধতে থাকল। তখনি অতসীর মনে পড়ল, আদৃতের বলা সেইদিনের কথা গুলো। কি মনে করে অতসী চুলগুলোকে আর বাঁধলো না, ছেড়েই রাখল। চোখে হালকা করে কাজল, গোলাপি রঙের লিপস্টক পড়ে বেড়িয়ে পড়ল।
শাড়িটা ঠিক করতে করতে বসার ঘরে এসে বলল…
– মিতু তোমার হলো। আমি রেডি কিন্তু।
সামনে তাকিয়ে দেখল ২ জোড়া চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আদৃতের মা অতসী কে দেখে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন…

– একটু দাঁড়াও আমি আসছি।
উনি ভেতরে চলে্ গেলেন। গোটা ড্রইং রুমে আদৃত আর অতসী দুজনেই। আদৃত দূর থেকে দাঁড়িয়ে অতসী কে দেখতে ব্যস্ত আর অতসী একরাশ লজ্জা, অস্বস্তি নিয়ে নিজের নখ খুঁটতে ব্যস্ত। এর মাঝেই আদৃতের মা ফিরে আসলেন, হাতে একটা বাক্স। অতসী কে সোফাতে বসিয়ে, বাক্স থেকে একটা হার আর বালা জোড়া পড়িয়ে দিলেন। অতসী হা করে তাকিয়ে রইলেন ওনার দিকে…

– মামনি কি করছ এইসব।
– খালি খালি লাগছিল তাই পড়িয়ে দিলাম।
– কিন্তু।
– পড়তেই দিয়েছি, পুরো দিয়ে দিইনি। এসে না হয় ফেরত দিয়ে দিস।
আদৃত দাঁড়িয়ে সবটাই দেখল, ওহ মনে মনে বলল…
– সবকিছুই ঠিক আছে, একটা নাকফুল হলে পুরোই বউ বউ লাগবে।
আদৃত নিজের‌ ভাবনা দেখে নিজেই আনমনে হেসে উঠল। এই মেয়েটা ওকে পাগল করেই ছাড়বে উঁহু।
মিতু রেডি হয়ে আসতেই অতসী বলল..

– চলো এইবার।
– দাদাভাই আর আরু যাবে তো আমাদের সাথে।
অতসী আদৃতের দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। অতসী চট করেই চোখটা নামিয়ে নিল। আদৃত গাড়ি বের করতে চলে গেল। অতসী লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেল, কিন্তু আবারো বিপত্তি বাঁধল। মিতু আর আরু পেছনে বসবে বলল, অতসী পেছনে বসতে গেলেই আদৃত ক্ষেপে গিয়ে বলল…

– আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয় আপনাদের।
মিতু করুন চোখে অতসীর দিকে তাকাল, মিতুর রিকুয়েস্টে শেষে অতসীই সামনে বসল। গাড়ি চলতে শুরু করল, নিজের গতিতে। অতসী নিজের মনে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত, আদৃত গাড়ি চালানোর মাঝে মাঝে আড়চোখে অতসী কে দেখে চলেছে। মিতু পেছনে বসে সবটাই খেয়লা করছে আর মুচকি হাসছে।
জিনিয়ার সাথে কথা বলার মাঝে মিহানের চোখ পড়ল অতসী একটা বড়ো গাড়ি করে পাকিং সাইটে যাচ্ছে। মিহানের জানার আগ্রহ সৃষ্টি হলো, জিনিয়াকে কিছুই না বলে পাকিং সাইটের দিকে দৌড়ে চলে গেল। পেছন পেছন জিনিয়াও গেল,তবে ধীরে ধীরে শাড়ি পড়ার কারনে জোরে যেতে পারল না।
ওইদিকে…

মিতু আর আরু আগেই নেমে গিয়েছে কিন্তু অতসী নামার আগেই আদৃত গাড়ি নিয়ে সোজা পাকিং সাইটে চলে যায়।
– এইটা কি করলেন আপনি।
– কি করলাম।
– নামতে দিলেন না,কেন।
আদৃত কোনো উত্তর দিলো না। গাড়িটা সাইট করে, অতসীর দিকে না তাকিয়েই বলল…
– বড্ড মায়াবী লাগছে, দেখবেন আবার কেউ না মায়াতে পড়ে যায়।
– কেন পড়লে কি হবে!
চট করেই উত্তর দিলো অতসী। আদৃত রক্তচক্ষু করে ওর দিকে তাকিয়ে, ওর হাতটা ধরে নিজের দিকে একটু টেনে নিয়ে এসে বলল…

– আমি নিজের জিনিসে কারোর নজর স*হ্য করি না, যেটা আমার সেটা আমারই। বুঝেছেন!
হাতটা ছেড়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেল আদৃত। তবে অতসী ঠাঁই বসে রইল। আদৃত কি বলে গেল তার উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত অতসী।
– এই যে ম্যাডাম আপনি কি বসে থাকবেন। নামুন একবার।

অতসী আদৃতের কথা শুনে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে আনমনা হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগল, তখনি শাড়ির সাথে পা পেঁচিয়ে পড়ে যেতে গেলেই আদৃত ধরে নিল। দৃশ্যটা মিহান দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল, নিমিষেই ওর মুখ লাল হয়ে উঠল, অতসী কে হারানোর ভয় মনের মাঝে জমা শুরু করল। জিনিয়া মিহানের পেছনে পেছন এসে ওই একই দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। আদৃতের বুকের খুব কাছে অতসী, আদৃত দুই হাত দিয়ে ওকে আগলে রেখেছে, দুজন দুজনের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দুজনের ধ্যান ফিরতেই দুজন দুজনের থেকে সরে দাঁড়াল। আদৃত একটু মজা করেই বলল…

– দেখে হাঁটবেন না, আর একটু হলেই তো পড়তেন। নাকি মনটা আমার কাছে রেখে এসেছেন।
– আপনাকে তো‌ আমি…
– আদর করবে।
কথাটা বলে আদৃত হাসতে হাসতে চলে যায়। অতসী আদৃতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে‌ বলল…
– এই লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে, নাকি আমাকে পাগল বানানোর প্ল্যানে আছেন!

মিহান অতসীর সাথে মুখোমুখি হবার সুযোগ পায়নি, তাই ওর সাথে কথা বলতেও‌ পারেনি। মিহান ছটফট করে চলেছে অতসীর‌ সাথে একদন্ড কথা বলার জন্য, কিন্তু পারছে না। জিনিয়া মিহানের ছটফট করাটা দূর থেকে লক্ষ্য করে চলছে, আর মনের মাঝে একটা প্রশ্নের উদয় হচ্ছে…
– মিহান কি তাহলে অতসীকে ভালোবাসে!
অতসী হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লেগে যায়। মাথা না তুলেই অতসী বলে উঠল..

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৫

– সরি।
ওপর মানুষটি অতসীর কন্ঠস্বর শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল…
– বোন!

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৭