প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৫

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৫
তানজিলা খাতুন তানু

অতসী আগের বাড়িতে গেছে জিনিসপত্র গুছিয়ে আনতে। অতসী কে জিনিসপত্র গোছাতে দেখে বিট্টু বলল…
– দিদি তুমি কোথায় যাচ্ছো।
– আমি আর এই বাড়িতে থাকব না।
– কেন দিদি?
অতসী কি উত্তর দেবে খুঁজে পেল না। এই বাড়িতে না থাকার তো সঠিক কোনো কারন নেই।

– তুমি যদি চলে যাও তাহলে আমাকে পড়াবে কে?
অতসীর বড্ড কষ্ট হলো। কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না, ছেলেটাকে তো কথা দিয়েছিল। এখন কি কথা রাখতে পারবে না। বিট্টু মন খারাপ করে চলে গেল। অতসী বসে রইল।
অতসী অনেক ভেবে আদৃতের নম্বরে কল‌ লাগাল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– হ্যালো কে?
– আমি অতসী বলছি।
– হ্যাঁ বলো।
– বলছিলাম যে, আমি ওই বাড়িতে থাকতে পারব না।
– কিন্তু কেন? আমি তো আপনার সব কথাই মেনে নিয়েছি, তাহলে অসুবিধা কোথায়?
– আসলে…
অতসী আদৃতকে সবটা বলল। আদৃত সবটা শুনে বলল…

– এটার জন্য এত চিন্তার কি আছে। আচ্ছা বলুন আপনি কটা টিউশনি করান।
– আরুকে নিয়ে তিনটে।
– কখন কখন পড়ান।
– সকালে একটা আর বিকালে দুটো।
– তাহলে সমস্যা কোথায়।
– মানে!
– আপনি বিকালে আরুর পরির্বতে ওই ছেলেটিকে পড়িয়ে আসবেন। আর রাতে একটু আরুকে দেখিয়ে দেবেন।
– কিন্তু।

– আরুকে দেখার জন্য আমি আছি,মিতু আছে। ওকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা করতে হবে না, আর যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আর একটা টিউটর রেখে দেব।
– মানে কি, আপনি আমাকে ওই বাড়িতে রাখার জন্য এতটা জোড়াজুড়ি করছেন কেন?
আদৃত অতসীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল…
– বাড়ির ঠিকানাটা দিন, আমি আপনাকে গিয়ে নিয়ে আসছি।
– আমি যেতে পারব।
– দরকার নেয়।‌ আমি এইটুকু করতে‌ পারব, আপনি ঠিকানা দিন।

আদৃতের কন্ঠে অতসী স্পষ্ট অধিকারবোধ শুনতে পেল। আদৃতের কথা ফেলতে পারল না,ঠিকানা দিয়ে দিল।
– আপনি গুছিয়ে রাখুন।‌ আমি গিয়েই নিয়ে আসব।
– আচ্ছা।
অতসী সবকিছু গুছিয়ে নিল। গত ৩ বছর ধরে এই বাড়িতে আছে, মায়ায় জড়িয়ে গেছে এই বাড়িটার। নিজের মতো করে সাজিয়েছিল, আজকে সবটা ছেড়ে চলে যেতে হবে। অতসী বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে শুনে সকলেরই মন খারাপ, বিট্টু তো কেঁদেই দিয়েছে।

– আরে‌ পাগলা কাঁদছিস কেন? আমি আমার দেওয়া কথা রাখব, আমি তোকে প্রতিদিন পড়াতে আসব চিন্তা করিস না।
– তোমাকে খুব মিস করব।
– আমিও।
অতসী বাড়ি ওয়ালার হাতে ভাড়াটা দিয়ে দিয়ে বলল…
– কাকু এই মাসের ভাড়াটা।
– মা তুই এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছিস কেনো? তোকে ছাড়া যে আমার বাড়িটা পুরো ফাঁকা হয়ে যাবে। তোর কি কোনো অসুবিধা হচ্ছে।

– না কাকু, এমনিতেই চলে যাচ্ছি। আর আমি তোমার কাছে চির ঋণী থাকব, সেইদিন তুমি আমাকে আশ্রয় না দিলে কি হতো কে জানে।
– মারে তুই তো আমার মেয়ের মতোই। আমার আরেকটা মেয়ে। যেখানেই থাকিস,ভালো থাকিস, আর এই বুড়ো বাপটার কাছে আসিস একবার।
অতসী কেঁদেই দিল। এই মানুষগুলো ওকে এতটা ভালোবাসত, সেটা আগে বুঝতে পারেনি। সেইদিন এই বাড়ির মালিক ওকে ঘরভাড়া না দিলে হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, আর ন*রপ*শুদের শি*কার হতো। মানুষটির কাছে চিরকৃতজ্ঞ অতসী।
আদৃত দেখল, অতসীকে সকলে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের চোখেই পানি, আদৃত বড্ড অবাক হলো।

– অতসী।
আদৃতের কন্ঠস্বর শুনে অতসী সামনে তাকিয়ে দেখল, আদৃত দাঁড়িয়ে আছে।
– দেরি হয়ে যাচ্ছে চলুন।
– হুমম।
– আসছি, ভালো থেকো সবাই।
অতসী সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। সকলে স্বাভাবিক থাকলেও, আদৃত কে দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল। ছেলেটা কে, অতসীর সাথে কি সম্পর্ক, অতসী কোথায় গিয়ে থাকবে ব্লা ব্লা।
অতসী এগিয়ে গিয়েছিল, তখনি বাড়ি ওয়ালা কাকু ডাকল।

– অতসী।
ডাক শুনে অতসী দাঁড়িয়ে পড়ল,সাথে আদৃত ও। কাকু এগিয়ে এসে, বাড়ি ভাড়ার টাকাটা ভেতর দিয়ে বললেন…
– মারে তোকে কোনদিন কিছু দিতে পারিনি, আজকে এই টাকাটা নিয়ে যা।
– কিন্তু কাকু ওটা তো‌ ভাড়া।
– আমি জানি। আমার উপহার হিসাবে নিয়ে যা।
অতসী বাধ্য হয়েই নিলো। এই কথাটার উপরে না বলার সাধ্য ওর নেয়।

– তুই কি ওনাদের বাড়িতেই থাকবি!
– হুম।
– অতসী, তুই যা আমার ওনার সাথে কিছু কথা আছে।
– আচ্ছা।
অতসী চলে গেল। আদৃত বুঝতে পারছে না,উনি আবার ওকে কি বলবে।
– বাবা তুমি আমার ছেলের বয়সী, আমার ছেলের মতোই। আর অতসী কে আমি নিজের মেয়েই মানি, ওহ তো তোমাদের বাড়িতে থাকবে দেখে রেখো মেয়েটাকে। মেয়েটাকে তিনবছর ধরে দেখছি ওর মতো ভালো মেয়ে আর হয় না,ভালো রেখো মেয়েটাকে।

– অবশ্যই আঙ্কেল। অতসী কে আমার পরিবারের সবাই খুব ভালোবাসে, আশা করি ওর কোনো অসুবিধা হবে না।
– হুম ধন্যবাদ।
– আসছি।
আদৃত অতসীকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। আদৃত গাড়ি ড্রাইভ করছে, আর অতসী পাশে বসে আছে।
– কাকু আপনাকে কি বলল।
অতসীর প্রশ্ন শুনে আদৃত ভাবল ওর সাথে একটু ফাজলামি করা যাক।

– বলল অতসী কে ভালো রেখো।
– মানে?
– উনি ভেবেছেন, তুমি আমার জি.এফ। হবু বউ তাই বললেন খেয়াল রাখতে।
অতসী চোখ বড়ো‌ বড়ো করে তাকাল। কি রিয়াকশন দেবে ভুলে গেছে। হঠাৎ করেই গোটা মুখে একটা লাল আভা ছড়িয়ে গেল, অতসী লজ্জা পেল ভীষণ রকমের।
জানলার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকল। অতসীর অবস্থা দেখে আদৃত মুচকি হাসল।
অন্যদিকে…

অতসীর কথাগুলো জিনিয়াকে স্থির থাকতে দিল না। বারবার মনের মাঝে প্রশ্ন জাগছে অতসী কিসের ইঙ্গিত দিলো।
– না,এইভাবে বসে থাকলে চলবে না। আমাকে খোঁজ নিতে হবে মিহানের বিষয়ে।
জিনিয়া মিহানের পেছনে একটা লোক লাগিয়ে দিল।
– মিহান কখন কোথায় যায়, কি করে সবটার ইনফরমেশন আমার চাই।
– ওকে ম্যাম।
জিনিয়ার কেন বারবার মনে হচ্ছে অতসীর সাথে ওহ অন্যায় করছে।

আদৃতের কথামতোই অতসী কাজ করতে শুরু করল। নিয়মিত বিট্টুকে টিউশনি পড়াতে যেত,তবে বাড়ি ফিরে শরীর আর চলত না। তাই বেশিরভাগ সময়েই আরুকে পড়াতে পারত না, আরু মিতুর কাছেই পড়ে নেয়।
আগামীকাল কলেজের বাৎসরিক অনুষ্ঠান। অতসী এইসবে রীতিমতো বিরক্ত, রোজ রোজ অনুষ্ঠান ভালো লাগে না।
– ধ্যাত আবার অনুষ্ঠান, আমি যাবো না।
– অতসী এটা তো‌ বললে চলবে না। ডিপার্মেন্টে তুমি ফার্স্ট হয়েছে তার জন্য পুরস্কৃত করা হবে আর তুমি যাবে না। এটা কি রকম কথা, তোমাকে যেতেই হবে।

– কিন্তু।
– কোনো কিন্তু নয়।
রাতের বেলা। খাওয়া দাওয়া হয়ে যাবার পর অতসী বই নিয়ে বসল। কয়েকদিন একদমই পড়াশোনা করতে পারেনি সবকিছুর জন্য। পড়াশোনায় একটু মন লেগেছে তখনি দরজায় টোকা পড়ল, অতসী একটু বিরক্ত হয়েই দরজা খুলতে এগিয়ে আসলো। দরজা খুলে দেখল কেউ নেয়।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৪

অতসীর মেজাজ এইবার আকাশ ছোঁয়া, পড়াশোনায় বাঁধা পড়লেন ভীষন রকমের রাগ ওঠে ওর। বিরক্ত হয়ে দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনি চোখ পড়ল, দরজার সামনে রাখা একটা শপিং ব্যাগের দিকে। অতসী কৌতুহলী হলো, কি মনে করে ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
অতসী ব্যাগটা খুলে দেখল ভেতরে একটা সুন্দর শাড়ি। আর তার সাথে একটা চিরকুট…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৬