প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৮

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৮
তানজিলা খাতুন তানু

– কিরে শেষমেশ একজন এক বাচ্চার বাবার গলাতে ঝুলে পড়লি।
শাহানার কথার মানেটা সঠিক ভাবে অতসীর কাছে পরিস্কার হলো না। তাই দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
– কি বলতে চাইছিস তুই।
– বুঝতে চাইছিস না, না বোঝার ভান করছিস বল তো।
– যা বলার ক্লিয়ার করে বলবি, এত ঘো’র প্যা*চ আমার ভালো লাগছে না।
শাহানা কতকগুলো ছবি দেখিয়ে বলল ..

– এইগুলো কি!
ছবি গুলো পড়ে অতসীর আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। সেইদিন অতসী কে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর সময়ে আদৃত যখন ওকে আগলে নিয়েছিল, সেই পিকটাই কেউ তুলেছে। আর কাজটা কার সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না অতসীর।
– এই ছবিটা না এখন সবার কাছে। গোটা কলেজ ক্যাম্পাসের সবাই তোকে ছিঃ ছিঃ করছে। তোর মানসম্মান আমি মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি অতসী।
অতসী নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না, শাহানার গালে একটা থাপ্পর দিলো। শাহানার রাগ আকাশ ছোঁয়া তখনি প্রিন্সিপাল স্যার ওইখানে উপস্থিত হলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– কি হচ্ছে এইখানে।
অতসী কিছু বলতে যাবে তখনি স্যার বললেন…
– অতসী আমি তোমার থেকে এইটা আশা করিনি।
অতসীর স্যারের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাল। শাহানার চোখে মুখে শয়তানী হাসি ফুটে উঠেছে। প্রিন্সিপাল স্যার একবার অতসীর দিকে আর একবার শাহানার দিকে তাকিয়ে বলল…
– তা নেমন্তন্নটা কবে পাচ্ছি।
অতসী, শাহানা দুজনেই তব্দা খেয়ে স্যারের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকাল।স্যারের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, অতসী কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না, তবূও আমতা আমতা করে বলল…

– কিসের নেমন্তন্ন স্যার।
– বিয়ের।
অতসী শক খেয়ে চুপ করে গেছে। কথা বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেল না লজ্জায়, অস্বস্তিতে জড়োসড়ো হয়ে গেল। শাহানা নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল…
– স্যার আপনি কি বলছেন এইসব।
শাহানার কথাতে পাত্তা না দিয়ে স্যার রাগী কন্ঠে বলল…

– শাহানা অতসীর সাথে তোমার ঝামেলা আমি মানলাম,তবে কারোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এইভাবে অপমান করার অধিকার কিন্তু তোমার নেয়। অতসী কাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে সেটা সম্পূর্ণ ওর বিষয়। ভালোবাসা কখনো বলে আসে না,মন থেকে উপলব্ধি করতে হয় বুঝেছ। অতসী তুমি চিন্তা করো না, তোমাকে এইবিষয়ে আর কেউ কিছু বলবে না। তুমি তোমার মতো জীবনটাকে উপভোগ করো।

স্যার কথাগুলো বলে চলে গেলেন। শাহানা এইবারেও ফেল‌ হয়ে রেগে আগুন হয়ে আছে। অতসী শাহানাকে আর কিছু বলেই ক্লাসের দিকে রওনা দিল,তখনি একটা হাত ওকে টেনে নিয়ে বন্ধ ঘরের মাঝে নিয়ে গেল।
অতসী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু পুরুষ শক্তির কাছে পেড়ে উঠছিল না। অতসীর‌ মনের মাঝে একটা খারাপ চিন্তা জমা হতে থাকে। অতসী চেঁচিয়ে উঠতে যাবে তখনি চেনা কারোর কন্ঠস্বর শুনতে পাই।

– অতসী আমি,আমি মিহান।
অতসী কিছুটা শান্ত হলো, নিজের রাগ জেদ সবটাকে উজার করে দিয়ে গর্জে উঠে মিহান কে সরিয়ে দিল।
– অতসী তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। প্লিজ একটু শোনো।
– আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেয়।
– একটাবার প্লিজ।
মিহান অতসী কে বারবার আকুতি মিনতি করতে থাকে। শেষে উপায় না পেয়ে অতসী বলল…

– তাড়াতাড়ি বলুন।
– ভালোবাসি অতসী।
অতসী তাচ্ছিল্যের হাসল।
– ভালোবাসার কথা আপনার মুখে মানায় না মিষ্টার মিহান। জিনিয়া আপনাকে বড্ড ভালোবাসে, ওকে মন দিয়ে ভালোবাসুন সুখে থাকবেন।
– কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসি।
– কিসের ভালোবাসা! যদি সত্যি ভালোবাসতেন না, তাহলে আমার সাথে কখনোই প্রতারনা করতেন না। আমাকে সকলের সামনে অপমানিত হতে দিতে পারতেন না।

– বিশ্বাস করো অতসী। আমি পরিস্থিতির শিকার, আমার যে আর কিছুই করার ছিল না। আমি নিরুপায়। আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ বোঝেনি, তুমি একটু বোঝো আমাকে।
– মাফ করুন। আপনাকে বোঝার মতো আমার কোনো ইচ্ছা নেয়। আর কি জানেন, আপনার সাথে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ জড়িয়ে গেছে তাকে আমি ঠকাতে পারব না।

– কার কথা বলছো‌ তুমি।
– জিনিয়া। মেয়েটা আপনাকে বড্ড ভালোবাসে, ওকে আগলে রাখুন।
– আমি জিনিয়াকে ভালোবাসি না আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– তাহলে কেন ওর সাথে প্রেমের নাটক করছেন।
– পরিস্থিতি।
– কি এমন পরিস্থিতি যাতে একটা মেয়ের সাথে আপনাকে প্রেমের নাটক করতে হচ্ছে।
– আমার জীবনটা অনেক জটিল, জীবনে যেটা চেয়েছি সেটা কখনোই পাইনি। লোকের প্রয়োজনে প্রিয়জন হয়েছি। স্বার্থ ছাড়া কারোর কখনোই প্রিয়জন হয়নি।

অতসী কিছুই বললো না, চুপ করে থাকল। মিহান অতসীর হাত দুটোকে শক্ত করে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বারবার রিকুয়েস্ট করতে থাকল, অতসী নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল..
– অতসী কাউকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না, আপনিও পাবেন না।
– আমার ভালোবাসার কি কোনো দাম নেয় তোমার কাছে!
– আমার আত্মসম্মান বোধটা অনেকটা বেশি। আমি কোনো খেলনা নয়, যে যখন ইচ্ছা ব্যবহার করবেন। আমি অতসী, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত আমাকে দিয়ে কেউ কিছু করাতে পারেনি আজকেও পারবেন না আপনি।
অতসী কথাগুলো বলে চলে গেল। মিহান অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল…

– যে নিজেই একটা কাঠের পুতুল,সে কিভাবে তোমার জীবনকে নিয়ে খেলবে। হেরে গেলাম আমি, আপন মানুষদের প্রিয়জন- প্রয়োজন খেলায় আমি হেরে গেলাম। ভালো থেকো অতসী।
অতসী বাড়ি না ফিরে আদৃতের নিয়ে যাওয়া জায়গাটাই গেল। নিজের সাথে নাটক করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে, প্রতিনিয়ত নিজের সাথে লড়াই করতে করতে আর পারছে না দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে অতসীর।
অতসীর খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে, ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করতে করতে মিহানের কথাগুলো ভাবতে লাগল। মিহানের হঠাৎ করেই পরির্বতনগুলো‌ বড্ড ভাবাচ্ছে অতসী কে।

– মিহান হঠাৎ করে এতটা বদলে গেল কেন? কি চলছে ওর মনের মাঝে, আর কিসব বলল। মিহানের‌ বিষয়ে আরো গভীরভাবে কিছু জানতে হবে।
অতসী কিছু একটা ভেবে কাউকে একজনকে ফোন করে কিছু বলল। তারপর আরো কিছুক্ষণ নদীর ধারে সময় কাটিয়ে আদৃতের বাড়িতে ফিরে গেল। অতসী কে অনেকটা গম্ভীর লাগছে, বাড়ি ফেরার পর থেকে কারোর সাথেই ঠিকমতো কথা বলছে না।
রাতে খাবার খাওয়ার সময়েও আসলো না। রুম বন্ধ করে চুপ করে বসে আছে। আদৃত আরুকে ঘুম পাড়িয়ে অফিসের কাজ গুলো নিয়ে বসেছিল। তখনি দরজায় টোকা পড়ল, আদৃত ভ্রু কুঁচকে দরজা খুলে দেখল অতসী গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।

– আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
– কি কথা?
অতসী একটু ইতস্তত করে বলল…
– ছাদে যাবেন একটু।
– আচ্ছা চলো।

সেইদিনে কলেজে আকরাম খাঁন’কে দেখে আদৃত কিছুটা অতীতে ফিরে গিয়েছিল। পুরানো আঘাত গুলো পুনরায় তাজা হয়ে উঠছে, আবারো নিজের মনে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আদৃতের মনে হচ্ছে অতসীর‌ সাথে অন্যায় করছে। নিজের জীবন, আরুর জীবনটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য অতসীকে ব্যবহার করছে। নিজেদের জীবনের সাথে অতসী কে জড়িয়ে নিচ্ছে, অতসী কে নিজেদের প্রয়োজনে প্রিয়জন করতে চাইছে এটা তো অন্যায়।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৭

আদৃত কি করব, নিজের অনুভূতিগুলোকে শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দেবে। নাকি নিজের অনুভুতিগুলো প্রায়োরিটি দিয়ে অতসীর মনের নিজের জন্য অনুভূতির সৃষ্টি করবে!

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৯