প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৯

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৯
তানজিলা খাতুন তানু

খোলা আকাশের নীচে দুজন দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা শীতল বাতাস দুজনকেই বারবার স্পর্শ করে চলেছে,অতসী নিজের গায়ের ওড়নাটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল…
– আপনাকে এখন ছাদে আসতে বললাম বলে,রাগ করলেন?
– না। কি বলবে বলো।
অতসী চুপ করে গেল, আদৃত অতসীর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে চলেছে ওর মনের খবর। কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর, অতসী নিজে থেকেই মুখ খুলল…

– জীবন আমাকে যখন যে পাড়ে নিয়ে এসেছে, আমি সেই পাড়েই এসেছি। কখনো কোন অভিযোগ করিনি তবে আজকে করতে মন চাইছে, শুনবেন?
আদৃত নিজের দৃষ্টি অন্যদিকে করে নিয়েছিল। অতসীর শেষ কথাটা শুনে চট করে ওর চোখের দিকে তাকাল, অতসীর চোখে স্পস্ট কোনো কিছু না পাওয়ার যন্ত্রনা ফুটে উঠেছে। আচ্ছা তাহলে কি অতসীর জীবনেও অনেক কষ্ট, দুঃখ আছে! আদৃত নিজের মনে নিজেকেই প্রশ্ন করল। তারপর অতসীর দিকে তাকিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে বোঝালো হ্যাঁ।অতসী একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করল…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– অভিযোগ তো অনেককিছুই করতে মন চাই, তবে সবকিছু বলা হয়ে উঠে ন। আজকে কিছু মানুষকে নিয়ে অভিযোগ করব, যারা না থাকলে হয়তো কঠিন হৃদয়ের অতসী নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতো না।
– মানে?
অতসী মৃদু হাসল। নিজের জীবনটা কেন এতটা অগোছালো, এলোমেলো সেটা বুঝে উঠতে পারে না।

– সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছি। বন্ধু-বান্ধব কেউই হয়ে উঠেনি কারনটা আমার সাধারন সাজপোশাক, আর শান্ত স্বভাব। নিত্যদিনের মতো ক্লাসে বসেছিলাম, ক্লাস শুরু হলো বলে তখনি একটা মেয়ে চট করে আমার পাশে বসে পড়ল.. আমি অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকালাম, মেয়েটি সুন্দরী, পোশাক দেখে মনে হচ্ছে বড়োলোক বাড়ির মেয়ে। ক্লাসে স্যার চলে আসাতে তার সাথে আর কথা বলা হয়ে উঠল না। ক্লাস শেষে নিজে থেকেই বলে উঠল…

– তোমার নাম কি?
– আমি অতসী। তুমি।
– আমি জিনিয়া। আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।
অতসী খুব অবাক হলো, বড়োলোকের মেয়ে হয়ে ওর মতো একটা সাধারণ মেয়েকে ফ্রেন্ড করতে চাইছে বিষয়টি ওকে একটু অবাক করল। তবুও না করল না। শুরু হয়ে যায় একটা মিষ্টি সম্পর্ক। আসতে আসতে দুজনে আরো ক্লোজ হয়ে পড়ে। একদিন…

– আজকে আমি আমার কাজিনের সাথে তোর আলাপ করিয়ে দেব চল।
অতসী প্রথমে একটু নাকোচ করলেও জিনিয়া নাছোড়বান্দা তাই ওকে যেতেই হলো। ক্যান্টিনে বসিয়ে জিনিয়া ওর কাজিনকে ডেকে পাঠাল..
-হাই জিনি।
-হ্যালো। ওটা আমার ফ্রেন্ড অতসী।

মিহান অতসীর দিকে তাকালো। প্রথম দেখাতেই অতসী কে ওর বড্ড ভালো লেগে যায়, তাই ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে। তিনজনের বন্ধুত্ব ভালোই চলছিল, মিহান সবসময়েই অতসী কে খুব কেয়ার করত, অতসীর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে থাকে তাই মিহান কে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল।
অতসীর ইগনোর করাতে, মিহানের মনের সুপ্ত কথাটা ওর নিজের কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়। পরেরদিন কলেজে গিয়ে অতসীর সাথে আগে দেখা করে, অতসী এড়িয়ে যেতে চাই কিন্তু কোনো লাভ হয় না।

– অতসী এইরকম কেন করছ।
– আমি কিছু করিনি পথ ছাড়ো মিহান।
মিহান পথ ছেড়ে দিতেই, অতসী দুইপা ফেলে দিতে গিয়ে যেতেই মিহান করুন কন্ঠে বলে উঠল..
– ভালোবাসি অতসী।
অতসীর পা দুটো থমকে যায়। তবুও মিহানের দিকে ঘুরে তাকায় না, মিহান আগিয়ে এসে অতসীর সামনে দাঁড়িয়ে রিকুয়েস্ট করে…

– ভালোবাসতে হবে না তবে আমার সাথে বন্ধুত্বটা নষ্ট করো না প্লিজ।
মিহানের রিকুয়েস্টে অতসী পুনরায় ওর সাথে কথা বলতে শুরু করে। মিহানের কেয়ার,ভালোবাসা দেখে অতসী কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়ে ওর প্রতি আর রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে। রিলেশনের তিনমাস ভালোই কাটে, মিহান অতসী কে জানায় ..
– অতু আমি বাড়িতে তোমার কথা বলতে চাই।
– কিন্তু।
– কোনো কিন্তু নয়। আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলতে চাই না।

অতসী আর কিছু বলে না। মিহানের সিদ্ধান্ততে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই মিহান বদলে যেতে শুরু করে। অতসীর বিষয়টা চোখে লাগে, বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে।
– মিহান তুমি ঠিক আছো?
– হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন!
– না আগের মিহান টা হঠাৎ করেই যেন বদলে গেছে, পুরানো মিহানকে খুঁজে পাচ্ছি না আমি।
– তোমার মনের ভুল, আমি ঠিক আছি। চিন্তা করো না।
– হুম।

অতসী নিজের মনকে বুঝ দিয়ে থাকতে শুরু করে।
একদিন হঠাৎ জানতে পারে, জিনিয়ার সাথে মিহান রিলেশন জড়িয়ে গেছে। বড্ড আঘাত পায় অতসী, মিহানের সাথে কথা বলতে চাই কিন্তু মিহান বিষয়টি এড়িয়ে চলে তাই বাধ্য হয়েই জিনিয়ার মুখোমুখি হয়, আর বাকিটা তো সকলেরই জানা। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই জিনিয়া আর অতসীর বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায় আর অতসী প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
সমস্তটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অতসী। আদৃত ওর দিকে তাকিয়ে বলল…

– মিহান কে এখনো ভালোবাসো?
অতসী চট করে আদৃতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল..
– ভালোবাসি কিনা জানি না, তবে আমি চাই মিহান আর জিনিয়া ভালো থাকুক।
– যারা তোমার সাথে প্রতারনা করল, তাদের তুমি ভালো চাইছ?
অতসী আদৃতের চোখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল..

– প্রতিশোধ নামক জিনিসটাকে আমি বড্ড ঘৃনা করি। প্রতিশোধ শুধু কেড়ে নিতেই পারে, কিছু দিতে নয়। জিনিয়া আমার প্রিয়জন ছিল আর মিহান ওহ। আমি জানি ওদের দুজনের কেউই আমাকে ঠকায়নি। জিনিয়া নিজের ভালোবাসা বাঁচাতে চেয়েছে আর মিহান পরিস্থিতির শিকার।
– পরিস্থিতির শিকার মানে কি?
– সে অনেক কথা। মিহানের জীবনটা অনেক অনেক জটিলতা দিয়ে ঘেরা। আর সেইসব জটিলতা গুলোই মিহান কে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। মিহান নিজেও ভালো নেয়।

– তাহলে এখন তুমি করতে চাইছ।
– কিছুই না। মিহানের জীবনের সমস্যাগুলো জিনিয়া ঠিক মিটিয়ে নেবে।
– আর তোমার জীবনটা।
– কারোর প্রয়োজনের সঙ্গী হয়েই না হয় জীবনটাকে কাটিয়ে দেব।
– কাউকে ভালোবাসতে মন চাই না?
– না, বিশ্বাস নামক বস্তুটাই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। আর বিশ্বাস শব্দটা না থাকলে কখনোই কাউকে ভালোবাসা সম্ভব হয়ে উঠে না।
আদৃত ওর দিকে তাকিয়ে বলল…

– সমস্যা থাকতেই পারে, কিন্তু তার সমাধান ওহ আছে।
– আমার জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান নেয়, হয়তো আমি নিজেই এর কোনো সমাধান চাই না, তাই।
অতসী আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপরে বলল…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৮

– বাদ দিন এইসব। সবকিছুর মাঝে আসল কথাটা বলতেই ভুলতে গেছি।
– কি কথা।
– আমি চাইছিলাম….
– কি?
অতসীর কথা শুনে আদৃত চমকে উঠল…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২০