প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২০

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২০
তানজিলা খাতুন তানু

– আমি আর এই বাড়িতে থাকতে পারব না।
আদৃত চমকে উঠল অতসীর কথা শুনে। আদৃত কিছু বলতে যাবে তার আগেই অতসী বলল…
– আরুর প্রতি আমি একটু দূর্বল, সেই কারনেই এই বাড়িতে থাকা নিয়ে আমি বেশি জোর করিনি। নিজের ইচ্ছাতেই এই বাড়িতে থাকতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে।

– ভুল মানে?
– দেখুন, আমি একজন অবিবাহিত মেয়ে। আর আপনাদের বাড়িতে আমার থাকাটা সকলে ভালো চোখে দেখছে না। আমি আর থাকতে পারব না, প্লিজ জোড় করবেন না।
আদৃত কিছু বলল না। প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব কিছু মতমত থাকে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়।
– কি হলো চুপ করে গেলেন কেন?
– না কিছু না। ঠিক আছে তোমার সমস্যা হলে তুমি চলে যেতে পারো। আমি জোর করবো না।
অতসী আর কিছু বলল না। আরো কিছুক্ষণ কেটে যায়, আদৃত নিজে থেকেই বলল…
– রাত তো অনেক হলো, চলো নীচে চলো।
– হুম, আপনি যান আমি আসছি।
– ওকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদৃত নিচে চলে যেতে, অতসী আরো কিছুক্ষণ থেকে তারপরে নিজের ঘরে কান্নায় ভেংগে পড়ল। কষ্টগুলো পুনরায় নাড়া দিয়ে উঠছে, পুরানো ক্ষতগুলো তাজা হয়ে উঠছে অতসী কি পারবে সবকিছু সহ্য করে টিকে থাকতে।
আদৃত নিজের ঘরে গিয়ে আরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল…
– মারে আমাকে মাফ করে দিস। তোর আন্টিকে তোর কাছে রাখতে পারলাম না আমি।
পরেরদিন…

অতসী নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে যায়। আরু তো কিছুতেই ওকে বাড়ি থেকে যেতে দিতে রাজি নয়, কান্না করে চলেছে।
– মিষ্টিবুড়ি কান্না করো না সোনা। আমি তো প্রতিদিন তোমাকে পড়াতে আসব, আর তুমি যদি কান্না করো তাহলে কিন্তু আর আসবো না।
– সত্যি আসবে তো।
– হুম।
মিতু আরুকে সামলে নিয়ে বলল…

– অতসী বাড়ি থেকে না গেলেই পারতে।
অতসী কিছু বলল না, শুধু হাসলো। অতসীর বাড়ি ছাড়ার সময়ে আদৃত বাড়িতে ছিল না। অতসী নিজের ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। যাবার আগে বাড়ির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল…
– যদি আমার সামর্থ্য থাকত তাহলে এই মানুষগুলোর জীবনে আর ফিরে আসতাম না। কিন্তু কিছু একটা বড্ড টানে আমাকে, এই বাড়িটা আমাকে বড্ড বেশি টানে। একটা আবেগ কাজ করে, সবটাই কি আরুর জন্য নাকি অন্য কোনো কারন?

অতসী আগের বাড়িতে ফিরে গেছে। অনেকেই অনেককিছু বলছে সেগুলোকে অতসী পাত্তা দেয়নি। বিট্টু আর বাড়িওয়ালা প্রচন্ড রকমের খুশি হয়েছে অতসী ফিরে আসাতে। অতসী সকলের খুশি দেখে মৃদু হাসলো।
দুইদিন পর…
অতসী কলেজে যাবার পরেই শাহানার মুখোমুখি হলো। শাহানা বাঁকা হেসে বলল…
– কিরে খবর শুনেছিস।
– কি খবর।
– মিহান আর জিনিয়ার তো বিয়ে।
অতসীর মাঝে কোনো চঞ্চলতা ফুটে উঠলো না। বরং ওর মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠল..

– এটা তো খুব ভালো খবর।
– মানে?
– মানে আবার কি?
– মিহানের বিয়ে তোর মাঝে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেল না কেন?
– আমি চাই জিনিয়া আর মিহান ভালো থাকুক। আর একটা কথা বলি, কূটনীতি না করে মানুষের ভালো চাও দেখবে সবাই ভালো বাসবে তোমাকে।
অতসী আর কিছু না বলে চলে গেল। শাহানার মাথাতে কথাগুলো ঘুরতে লাগল…

– মিহান আর জিনিয়া অতসী কে ঠকানোর পরেও অতসী ওদের ভালো চাইছে। অথচ আমি বিনা কারনে মানুষের সাথে ঝামেলা করছি। সত্যি অনেকটা নীচে নেমে গেছি আমি!
শাহানার মধ্যে এই প্রথম অনুশোচনা বোধ হচ্ছে। অতসীর কথাগুলো শুনে নিজের মাঝে অনেক গুলো অনুভূতি হচ্ছে। তাহলে কি শাহানাও বদলে যাবে?
অতসীর সাথে সেইদিন জিনিয়ার আর দেখা হয়নি। পরেরদিন কলেজে গিয়ে অতসী নিজে থেকেই জিনিয়ার মুখোমুখি হলো।

– অভিনন্দন।
– কিসের জন্য?
– তোর আর মিহানের নতুন জীবনের জন্য।
– ধন্যবাদ।
অতসী মিষ্টি একটা হাসি দিলো। জিনিয়া ওর হাসির দিকে তাকিয়ে বলল…
– অতসী তুই কি সত্যি আমার ভালো চাস।
– কোনো সন্দেহ‌! আমি মন থেকে চাই তুই আর মিহান সত্যি ভালো থাক।
জিনিয়া কোনো কথা না বলে অতসী কে জড়িয়ে ধরলো।

– আরে কি করছিস?
– আমাকে মাফ করে দিস অতসী। আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি।
অতসী নিজের থেকে জিনিয়াকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল..
– আমি কিছু মনে করিনি। তুই মিহান কে নিয়ে ভালো থাকিস তাতেই আমি খুশি।
– হুম। আমার বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠানে তোকে কিন্তু আসতেই হবে।
– অবশ্যই যাবো।
– ধন্যবাদ।

অতসী জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে বলল…
– তোর‌ বিয়েতে তো আমাকে যে যেতেই হবে। মিহানের এলোমেলো জীবনটার সবকিছু আমাকে জানতে হবে, আর তার জন্য তোদের বিয়েতে আমার উপস্থিত থাকাটা খুব জরুরী।
দিন নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে। জিনিয়ার সাথে অতসীর সম্পর্কটা আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক। সেইদিনের পর মিহান আর কলেজে আসেনি। শাহানাও কিছুটা বদলে গেছে, অতসী সহ বাকিদের সাথেও আর ঝামেলা করেনা, নিজের মতো কলেজে আসে আবার চলে যায়। শাহানার পরির্বতন ওর বন্ধুদের ভাবিয়ে তুললেও অতসী স্বাভাবিক ছিল। ওহ বুঝেছিল, সেইদিনের কথাগুলো শাহানার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে। তাই তো বদলে যেতে শুরু করেছে।

– অতসী।
নিজের নাম শুনে অতসী পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল শাহানা দাঁড়িয়ে আছে।
– হ্যাঁ বলো।
– সরি।
অতসী মৃদু হাসলো, তারপর শাহানার কাঁধে হাত দিয়ে বলল…
– তুমি নিজেকে শুধরে নিতে শুরু করেছো এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে। এইরকমই থেকো।
শাহানা অতসীর দিকে তাকাল, সত্যি মেয়েটা অন্য সবার থেকে আলাদা।

– আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি।
অতসী কিছু বললো না, বন্ধুত্ব নামক বস্তুটার প্রতি ওর আর একটুও বিশ্বাস নেই। অতসীর মনোভাব কিছুটা আন্দাজ করে শাহানা বলল…
– আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না তাই তো?
– আরে না। আচ্ছা ঠিক আছে,আজ থেকে আমরা বন্ধু।
শাহানার মুখে হাসি ফুটে উঠল। অতসীও হাসলো।
অন্যদিকে…

আরুকে নিয়মিত পড়াতে গেলেও আদৃতের মুখোমুখি হয়নি। আদৃত ইচ্ছা করেই অতসীর সামনে আসেনি সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে অতসী। অতসী নিজে থেকে আর কিছুই বলেনি।
অতসী ক্যান্টিনে গিয়ে বসার কিছুক্ষণের মধ্যে জিনিয়া ওর‌ সামনে এসে বসল।
– ওই তোর সাথে আমার একটা কথা আছে।
– কি কথা।

– আমার বিয়ে সামনের রবিবার। তোকে কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে আসতে হবে।
– বৃহস্পতিবার এতদিন আগে থেকে গিয়ে আমি কি করব।
– প্লিজ, প্লিজ।
– আচ্ছা ভেবে দেখছি।
জিনিয়ার সাথে অতসী কিছুক্ষণ কথা বলে , তারপর আদৃতের বাড়িতে যায় আরুকে টিউশনি পড়াতে।
আরুকে পড়ানোর মাঝে অতসী বারবার আনমনা হয়ে যাচ্ছে, মিতু আরুর ঘরে উঁকি নিয়ে দেখল অতসী আনমনা হয়ে বসে আছে। অতসীর কাঁধে হাত দিয়ে মিতু বলল…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ১৯

– কোনো সমস্যা অতসী।
– না কিছু না।
– আমাকে বলতে পারো।
অতসী চোখের ইশারায় বোঝাল, আরুকে পড়ানোর পর বলছে। মিতু মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। আরুকে পড়ানো শেষ করার পর অতসী মিতুকে বলল…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২১