প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২১

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২১
তানজিলা খাতুন তানু

-মিতু তোমার দাদা কোথায়!
অতসীর মুখে আদৃতের খোঁজ শুনে মিতু একটু চমকে উঠল। তবে সেটা প্রকাশ না করেই অতসীকে বলল…
– নিজের ঘরেই আছে। কোনো দরকার!
– হুম একটা দরকার ছিল আমার।
– আচ্ছা তুমি যাও।
– হুম।

অতসী ধীর পায়ে আদৃতের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা মারল। আদৃত অফিস থেকে ফিরে ফোন নিয়ে বিছানাতে শুয়ে ছিল, দরজায় টোকা মারার শব্দ পেয়ে বসে দেখল অতসী দাঁড়িয়ে আছে।
– ভেতরে আসব।
– হুম।
অতসী ঘরে ঢুকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। কি বলতে এসেছিল, আর কি করছে। অতসী ভালো করেই বুঝতে পারছে, আদৃত ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেটা ওর জড়তাকে আরো গভীর করে তুলেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– কিছু কি বলবে।
– হুম।
– কি বলো।
– আপনি আমার সাথে কথা বলেন না কেন?
কথাটা অতসী চট করে বলে উঠল, আদৃত অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অতসী নিজেই কথাটা বলে জিভ কাটল, উত্তেজিত হয়ে কি না কি বলে দিয়েছে।

– মানে টা কি?
অতসী কিছু বলল না। আদৃত আবারো বলল..
– তুমি কি চাও আমি তোমার সাথে কথা বলি?
অতসী চুপ করে থাকল। কথাটা বলে নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে, এখন কি উত্তর দেবে?
– কি হলো চুপ করে গেলে কেন? বলো।
অতসীর নিরবতা দেখে, আদৃত বলল…
– বাদ দাও এইসব কথা। কি বলতে এসেছে বলে ফেলো।
– কিছু না। আমি গেলাম।
অতসী একপ্রকার দৌড়ে পালিয়ে যায়। আদৃত অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল..

– পাগলী একটা।
অতসী কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে। আদৃত কে কি বলতে গিয়ে কি বলে দিয়েছে, নিজেই জানে না। হঠাৎ করেই, মানুষটির‌ কাছে এতটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কেন?
পরেরদিন কলেজে এসে অতসী জিনিয়াকে বলল..
– আমি বৃহস্পতিবার যেতে পারব না। শনিবার ঠিক যাবো।
– সত্যি তো।
– হুম।

কলেজে আর কারোর‌ সাথেই শাহানার ঝামেলা হয়নি। শাহানা অতসীর সাথে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছে। ক্যান্টিনে বসে দুইজনে আড্ডা দিচ্ছিল, তখনি শাহানা‌ বলে উঠল..
– এই অতু, জিনিয়ার বিয়েতে কি উপহার দিবি কিছু ভাবলি।
কথাটা বলতেই অতসীর মুখটা ছোট্ট হয়ে গেল। সত্যি এই কথাটা সবকিছুর মাঝে বেআলুম ভুলে গিয়েছিল। অতসীর মুখের দিকে তাকিয়ে জিভ কাটল শাহানা, তারপর মেকী হাসি ফুটিয়ে বলল…

– সরি মাফ করে দিস। আমি উত্তেজিত হয়ে বলে ফেলেছি। আচ্ছা বাদ দে এইসব, আমার সাথে কেনাকাটা করতে যাবি?
– না তুই যা।
– আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম।‌
শাহানা কেনাকাটা করতে চলে যায়। অতসী ভাবনাই পড়ে গেল জিনিয়াকে দেওয়া উপহার নিয়ে। অতসী টিউশনি পড়িয়ে বাড়ি ফিরতেই বিট্টু বলল..
– দিদি তোমার জন্য কিছু জিনিস এসেছে।
– আমার জন্য।
– হুম।
– কে দিয়ে গেল।
– একটা মেয়ে, বললো তোমাকে দিয়ে দিতে।
– আচ্ছা তুই ঘরে রেখে যা। আমি দেখে নেব।
– আচ্ছা।

বিট্টু প্যাকেটগুলো বিছানাতে রেখে চলে গেল। অতসী ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় রাখা প্যাকেটগুলো খুলে দেখতে লাগল। একটা শাড়ি, একটা লেহেঙ্গা, দুটো গাউন আর তার সাথে মানানসই কসমেটিক ও জুয়েলারি। অতসীর কপাল কুঁচকে গেল, কে পাঠিয়েছে সেটা বুঝতে পারল না। প্রথমেই মিতুর মুখটা ভেসে উঠল, পরক্ষনেই মনে হলো …
মিতু তো কয়েকদিন কলেজে যায়নি ওর জানার কথা নয় যে, জিনিয়ার সাথে ওর সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। তাহলে কে!
রাতে বিট্টু অতসীর কাছে পড়তে আসলে, ওহ বিট্টুকে জিজ্ঞেস করল…

– হ্যাঁ রে, যে মেয়েটা তোকে প্যাকেটগুলো দিয়ে গেছে তাকে দেখলে তুই চিনতে পারবি।
– হুম।
অতসী কলেজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গিয়ে মিতুর ছবিটা দেখিয়ে বলল…
– এই মেয়েটা?
– না।
অতসী তারপর জিনিয়ার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল…
– এই মেয়েটা?
– না।
– এটাও না। তাহলে কে? আচ্ছা তুই পড়।
অতসী ভাবনায় ডুবে গেল, কে দিয়েছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে উঠে একটা ছবি দেখিয়ে বলল…

– এটা কি?
– হুম, এই মেয়েটাই আমাকে প্যাকেটগুলো‌ দিয়েছিল।
বিট্রুর কথা শুনে অতসীর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল।
– দিদি কিছু কি হয়েছে?
– না তুই পড়।
পরেরদিন কলেজে,
শাহানা একা ক্লাসে বসে ছিল, এই ক্লাসটা হবে না তাই সকলেই বেড়িয়ে গেছে। ওহ কিছু কাজ করছিল ক্লাসে বসেই। হুট করেই ওর সামনে অনেকগুলো প্যাকেট পড়াতে চমকে উঠল। সামনে তাকিয়ে দেখল, অতসী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। শাহানা কিছু বলতে যাবে তখনি অতসী গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল…

– এইসব কি শাহানা?
অতসীর রাগ দেখে শাহানা একটা ঢোক গিলে বলল…
– আসলে,
– কি আসলে নকলে করছিস, বল।
– আমি ভাবলাম তোর ভালো ড্রেস নেয় তাই।
– বাহ্। আমাকে না জানিয়েই পাঠিয়ে দিল, কেন তোর কি আমাকে এতটাই অসহায় মনে হয় যে অন্যের দেওয়া ড্রেস দিয়ে আমাকে একটা অনুষ্ঠানে যেতে হবে।
– রাগ করছিস কেন? আমি এইভাবে
– তুই কিভাবে পাঠিয়েছিস আমি জানি না। আমি এই জিনিসগুলো নিতে পারব না, আমাকে মাফ কর।
– কিন্তু অতসী।

– কোনো কিন্তু নয় আমি নেব না মানে নেব না।
– কিন্তু আমি এতগুলো টাকা দিয়ে জিনিসগুলো নিলাম, তুই না দিলে টাকাগুলো তো‌ পানিতে পড়বে।
– ফেরত দিয়ে দিবি।
– ওই শপিং মলে ড্রেস রির্টান হয়না।
– যদি ড্রেসগুলো ফেরত দিতে না পারিস তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে দিস। আর বিলটা আমিই দিয়ে দেব।
– তুই বিল দিবি! (বিদ্রুপ করে বলল শাহানা)
অতসী কিছু বলল না। শাহানা আবার বলল…

– একেকটা ড্রেসের দাম জানিস। তোর কি মনে হয় এইগুলোর একটা ড্রেসের ওহ দাম দিতে পারবি তুই? পড়িস তো ওই সস্তা দামের কয়েকটা সালোয়ার কামিজ। পারবি এতগুলো টাকা দিতে।
শাহানা সরাসরি অতসী কে অপমান করল, সেটা বুঝেও অতসী চুপ করে ফোনে কিছু একটা করতে থাকে।
– কিরে এখন চুপ করে গেলি কেন? উত্তর দে!
তখনি শাহানার ফোনে একটা মেসেজ আসলো। অতসী ওর দিকে তাকিয়ে বলল…
– ফোনটা একবার চেক কর।

শাহানা কিছু না বুঝে, মেসেজটা সিন করে চমকে উঠল। ওর ব্যাংকে ৩০হাজার টাকা ঢুকেছে ‘অতসী খাঁন’ নামক একাউন্ট থেকে। অতসীর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি। শাহানা অবাক হয়ে একবার ফোনের দিকে আর একবার অতসীর দিকে তাকাচ্ছে। অতসী মুখের হাসিটা আর একটু চওড়া করে বলল..
– কি হলো, চমকে গেলি যে!
– তুই এতগুলো টাকা….
শাহানাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে অতসী বলল..

– তোর দেওয়া ড্রেসগুলোর দাম আমি আগেই দেখেছি। আর যে টাকাটা দিয়েছি তাতে ওইরকম আরো চারটে ড্রেস হয়ে যাবে তাই না। বাকি টাকাটা দিয়ে, নিজের জন্য কিছু কিনে নিস কেমন।
অতসী কথাগুলো বলে চলে যায়। শাহানা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল, অতসীর কাছে এতগুলো টাকা কিভাবে আসলো সেটা বুঝে উঠতে পারল না। অতসী বেড়িয়ে যেতেই শাহানার বন্ধু ওর‌ সামনে এসে দাঁড়াল…

– কি হলো‌ শাহানা।
– সব ড্রেস ফেরত দিয়ে গেছে।
– তাহলে তো তোর সব প্ল্যান পানিতে পড়ল,সাথে টাকাগুলো ও।
– টাকাগুলো দিয়ে গেছে।
– মানে?
– ৩০ হাজার টাকা আমার ব্যাংকে পাঠিয়েছে।
– ওহ এতগুলো টাকা পেল কোথায়?

– সেটা তো আমার ওহ প্রশ্ন। আর আমার ব্যাংক একাউন্ট কিভাবে পেল সেটাই বুঝতে পারছি না।
মেয়েটি শাহানার কাঁধে হাত রেখে বলল…
– তাহলে এখন কি করবি।
শাহানা ভাবুক হয়ে উত্তর দিলো…
– জানি না। তবে অতসীর মাঝে অনেক অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেইগুলো কি?

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২০

[আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ থাকে, যারা কখনোই শুধরে যাবার নয়। আর শুধরে গেলেও সেটা সাময়িক, কয়েকদিন পরেই আবারো নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দেয়😅]
অতসীর‌ অতীত কয়েক পর্বের মধ্যেই সামনে আসবে। আপনারা অপেক্ষা করুন আর নিয়মিত রেসপন্স করুন। তাহলে আমিও গল্প লিখতে আগ্রহী হয়ে উঠব।🥰🥰

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২২