প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২২

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২২
তানজিলা খাতুন তানু

অতসী ভালো করেই বুঝে গেছে, শাহানার আসল রূপ। মন খারাপ করে ক্যান্টিনে গিয়ে বসল, এখন করে ছোট্টুও ক্যান্টিনে থাকে না নিয়মিত স্কুলে যায় তাতে অবশ্য অতসী খুব খুশি।
অতসী কে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে মিতু ওর পাশে বসে বলল…

– কি হয়েছে। এইভাবে বসে আছো কেন?
– না একটা কথা ভাবছি।
– কি কথা।
– কিছু মানুষ থাকে যারা কখনোই বদলে যাবার নয়।
– হঠাৎ এই কথা
– না এমনিতেই।
মিতু আর কথা বাড়ালো না। ক্লাস থাকাতে ওহ বেড়িয়ে যেতেই অতসী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেয় ওর।
সন্ধ্যাবেলা,
অতসীর মনটা ভীষন রকমের খারাপ, আজকে পড়াতে ভালো লাগছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– মিষ্টি বুড়ি চলো আজকে দুইজনে আড্ডা দেব।
– সত্যি।
– হুম। আচ্ছা বইগুলো আগূ গুছিয়ে নাও তারপরে গল্প করব ওকে।
– ওকে।
আরু তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বলল…
– আন্টি এইবার বলো।
– তোমার পছন্দের রং কি!
– আমার তো সবকিছু রং-ই ভালো লাগে। তোমার কোন রংটা ভালো লাগে?
– আমার নীল।

– আমার বাপির ওহ নীল রঙ খুব পছন্দ।
– তাই
– হুমম। আচ্ছা আন্টি তোমার সবথেকে প্রিয় মানুষ কে?
– আমার প্রিয় মানুষ!
– হুম বলো।
অতসী ভাবনায় পড়ে গেল, চোখের সামনে পুরানো কিছু স্মৃতি ভেসে উঠতে লাগল। চোখের কোনে পানি চিকচিক করতে শুরু করেছে,

– আন্টি কি হলো? তোমার চোখে পানি কেন?
– না সোনা কিছু না। তা তোমার প্রিয় মানুষ কে?
– বাপি, দিদুন, মনি আর তুমি।
– আমি!
– হুমম, তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি 😘
– তাই।

অতসী আরুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল। নিজের রুমের দিকে যাবার সময়ে, আদৃত খেয়াল করল অতসী আর আরু একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। কি অপরূপ দৃশ্য, আদৃত নিজের লোভ সামলাতে পারল না পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্ধী করে নিলো।
অতসী আরো কিছুক্ষণ আরুর সাথে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরতে যাবে বলে বের হবে তখনি আদৃত পেছন থেকে বলে উঠল…

– শুধুমাত্র মেয়েকে আদর করলে হবে? মেয়ের বাবাকেও তো করতে হবে!
অতসী চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল আদৃতের দিকে।
– আপনি কি সব বলছেন?
– না কিছু না। তবে একটা জিনিস দেখবে!
– কি?
আদৃত অতসীকে নিজের ফোনে তোলা ছবিটা দেখাল, অতসী আরুকে জড়িয়ে ধরে আছে। অতসী দৃশ্যটা দেখে মুগ্ধ হলো।
– কি সুন্দর।
– ভালো লাগছে!
– হুম।
– আমি যে এত সুন্দর ছবি তুললাম তার জন্য কোনো ট্রিট দেবে না।
– কি চান আপনি?
– আমার মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারবে!

অতসী চমকে উঠল আদৃতের কথা শুনে। কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।
– এত টেনশান নেবার কোনো কারন নেয়, আমি এমনি কথাগুলো বললাম। তুমি ভালো করে বাড়ি ফিরবে কেমন।
– হুমম।
অতসী বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল। আদৃত অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল…
– সত্যি কি কখনো তুমি আমার মেয়ের দায়িত্ব নেবে না অতসী! আমার মেয়েটাকে যে তুমি ছাড়া আর কেউ ভালো রাখতে পারবে না।
অতসী বাড়ি ফিরে রান্না বসালো, পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে। রান্না বসিয়ে নোটস গুলো একটু খুলে‌ দেখছিল তখনি ফোন বেজে উঠল।‌ অতসী ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল, জিনিয়া কল করছে।

– হ্যালো বল।
– তুই কবে আসছিস?
– শনিবার যাবো।
– সত্যি আসবি তো।
– হুম।
– আচ্ছা শোননা আমাদের রির্সোটে বিয়ে হচ্ছে।
– ওহ।
– আমি তোকে ঠিকানাটা পাঠিয়ে দেব। তুই তাড়াতাড়ি চলে আসবি কিন্তু।
– হ্যাঁ রে।
– হুম।আচ্ছা তাহলে রাখছি।
– ওকে।

অতসী ফোনটা কেটে দিয়ে রান্নায় মনোযোগ দিলো। তবুও মন সেইদিকেই পড়ে আছে, অনেককিছু প্রশ্নই মনে কড়া নাড়ছে,তার উত্তর কি আদৌও পাবে!
অন্যদিকে…
রাতে খাবার টেবিলে আদৃতের মা আদৃত কে বললেন…
– আদৃত খাওয়া শেষ করে একবার আমার ঘরে আসবে।
– আচ্ছা।
খাওয়া শেষ করে আদৃত নিজের মায়ের ঘরে গিয়ে বসল।
– মা কিছু বলবে।
– হুম। তোমার সাথে আমার একটা কথা আছে।
– কি কথা।

– আমি আবারো বলছি, নিজের ভবিষ্যতের কথা একবার চিন্তা করো। তোমার একজন সঙ্গীর‌ প্রয়োজন, আরু দিদিভাইয়ের একজন মা দরকার। আমি আজ আছি কাল নেয়,মিতুর ওহ বিয়ে হয়ে যাবে। একজনের দরকার খুব।
– হুমম।
– আমি চাই তুমি বিয়ে করো।
– আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। আমি বিয়ে করব, তবে একটা শর্তে আমার মেয়ের দায়িত্ব নিতে‌ হবে তাকে।
-আচ্ছা। তোমার কি কাউকে পছন্দ আছে?
আদৃত একবার ভাবল, নিজের চোখের সামনে আরু আর অতসীর জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটা ভেসে উঠল। তবুও বলে উঠল..
– না। তুমি মেয়ে দেখো।

– আচ্ছা।
আদৃত চলে যায়। আদৃত বেড়িয়ে যাবার পরেই মিতু ঘরে ঢুকল,
– মা দাদাভাই কি বলল।
– রাজি।
– সত্যি।
– হুম।
মিতুর মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল কিন্তু আদৃতের মায়ের মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে। বড্ড চিন্তিত হয়ে আছেন উনি।
২দিন পর…
অতসী হলুদ রঙের একটা গাউন পরে রেডি হয়ে দরজায় তালা দিতে লাগল, তখনি বিট্টু বলল…

– দিদিভাই তোমাকে কি সুন্দর লাগছে। তুমি কি কোথাও যাচ্ছে।
– হুম একটা বিয়ে বাড়ি আছে।
– ওহ।
– কয়েকদিন পর চলেই আসব।‌তুই নিজের‌ খেয়াল রাখিস কেমন!
– হুমম।
বিট্টুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অতসী বেড়িয়ে পড়ল। জিনিয়ার বিয়ে রির্সোটে হচ্ছে, সেইখানে মিহানও থাকবে। অতসী ভালো করেই জানে, ওকে মিহানের মুখোমুখি হতেই হবে।
জিনিয়ার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী অতসী পৌঁছে গেল। বিরাট বড়ো রির্সোটটা ওর যে বড্ড চেনা, নিমিষেই চোখের কোনে পানি জমা হতে লাগল। নিজের মন অতসী কে একটা কথাই বলে চলেছে,

– অতসী ফিরে যা। এইখানে থাকলেই তোর অতীত আবারো তোর চোখের সামনে চলে আসবে!
পরক্ষনেই আবার অতসীর মস্তিষ্ক বলছে,
– অতসী ফিরে যাওয়া মানেই হেরে যাওয়া। ফিরে গেলে মিহানের জীবন সম্পর্কে আর কিছুই জানতে পারবি না। যাই হয়ে যাক তুই পিছিয়ে পড়িস না।
মন-মস্তিষ্কের লড়াইয়ে অতসী কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। নিজের মনকে গুরুত্ব দেবে না মস্তিষ্ককে। ভয়কে জয় করবে না ভয়ে পিছিয়ে যাবে?

শেষে অতসী সিদ্ধান্ত নিলো, না পিছিয়ে যাবে না। ওকে সবটা জানতেই হবে। অতসী ধীর পায়ে রির্সোটের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। এইখানে কাউকেই চেনে না, কাকে কি বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারল না। অতসী এদিক ওদিক জিনিয়া বা মিহান কে খুঁজে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কাউকেই পাচ্ছে না। অতসী কে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল..

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২১

– কাউকে খুঁজছেন আপনি?
কারোর কন্ঠস্বর শুনে অতসী পেছনে ফিরে তাকাতেই সামনের মানুষটি চমকে উঠল…
– অতসী!

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৩