প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৩

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৩
তানজিলা খাতুন তানু

মানুষটিকে দেখে অতসী চমকে উঠল। মানুষটি আরো কিছু বলার আগেই অতসী ওনার হাত ধরে রির্সোটের পেছন দিকে নিয়ে চলে আসলো।
– আরে কি করছিস তুই এইসব।
– আসতে নিলয়’দা, কেউ শুনে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– কি বলছিস এসব তুই। আর তুই এইখানে কেন?
– আমার কথা বাদ দাও। তোমার কথা বলো, তুমি কবে দেশে ফিরলে?
– দুইমাস মতো হবে।
নিলয় আরো কিছু প্রশ্ন করত যাবে,তার আগে অতসী বলে উঠল..

– রির্সোটে কি করছ তুমি?
– আসলে মিষ্টার শেখ বাপির খুব ভালো বন্ধু তার মেয়ের বিয়েতেই এসেছি।
– জিনিয়া!
– হুমম, কিন্তু তুই এইখানে কেন?
– সে অনেক কথা, পড়ে সময় করে সবটা বলবো। তবে আমাকে একটা কথা দিতে হবে তোমাকে।
– কি কথা।
– তুমি আমাকে চেনো, এই কথাটা কাউকে বলা যাবে না।
– কিন্তু কেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– সব কেন ওর উত্তর হয় না নিলয়’দা। প্লিজ, যদি সত্যি আমাকে বোন বলে মনে করে থাকো তাহলে আমাকে চেনো বা আমার বিষয়কে কাউকে কিছু বলবে না। কাউকে মানে কাউকেই না।
নিলয় প্রচন্ড রকমের অবাক হলো অতসীর কথা শুনে। কিন্তু ভালো করেই বুঝল, নিদিষ্ট কিছু কারনেই অতসী ওকে বারন করছে। তাই অতসী কে আশ্বাস দিয়ে বলল…
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কাউকেই কিছু বলব না।
– থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
– ওয়েলকাম বোনু।

অতসীর মুখে হাসি ফুটে উঠল, সেটা দেখে আমান ওহ হাসল। মেয়েটাকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে, নিজের বোন না থাকার অভাবটা ওকে দিয়েই পূরন করতে চাই।
– আমি তাহলে আসছি।
– কোথায় যাবি।
– এইখানেই থাকব, এই বিয়ে বাড়িতেই। জিনিয়া আমার বান্ধবী হয়।
– ওহ্।
অতসী রির্সোট পেছন থেকে সামনের দিকে এসে, একজনকে বলল…
– জিনিয়াকে একবার ডেকে দেবে একটু।
– আচ্ছা।

অতসী জিনিয়ার অপেক্ষা করতে লাগল। জিনিয়া যখন শুনলে একজন মেয়ে ওর খোঁজ করছে, ওর বুঝতে অসুবিধা হলো না অতসী এসেছে। তাড়াতাড়ি অতসীর‌ কাছে আসলো।
– ফাইনালি তুই আসলি। আমি খুব খুশি হয়েছি।
– হুমম।
জিনিয়া প্রচন্ড খুশি হয়ে অতসীর সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দেয়।
– অতসী উনি হলেন মিহানের মা। আর আন্টি ওহ আমার বন্ধু অতসী।
– অতসী!
– হুম।

অতসী নামটা শুনে উনি অদ্ভুত দৃষ্টিতে অতসীর দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন । আর নিজের মনে মনেই বলে উঠলেন…
– এই কি সেই অতসী। যাকে মিহান ভালোবাসত।
সকলের সাথে আলাপ করার সময়ে, অতসী আর মিহান দুজন দুজনের মুখোমুখি হয়। মিহান একপলক অতসী কে দেখেই চোখ নামিয়ে নেয়। তবে যেটুকু সময় তাকিয়ে ছিল, সেইটুকু সময়েই ওর চোখ অতসী কে অনেক কিছুই জানান দিচ্ছিল।
বিয়ে বাড়িতে অনেক ভীড়, অতসী মিহানের সাথে মুখোমুখি হবার সুযোগ পাচ্ছে না। একটু পরেই মেহেন্দির অনুষ্ঠান শুরু হবে। জিনিয়াকে রেডি করিয়ে দেবার ভার পড়েছে অতসীর কাঁধে। অতসী মেহেন্দি রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়িয়ে জিনিয়াকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল।

– কি সুন্দর লাগছে তোকে।
– তুই রেডি হবি না?
– হুমম হবো। তোর হাতে মেহেন্দি করিয়ে দেবে কে?
– কেন তুই।
– আমি!
– হুমম।
– কিন্তু আমি তো পারি না।
– যা পারিস সেটাই করবো। চল এইবার।

জিনিয়া জোড় করেই অতসী কে মেহেন্দি করতে বসায়। অতসী নিজের মনের মতো করে মেহেন্দি করিয়ে দেয়, এবং মেহেন্দির মাঝে ছোট করে মিহান নামটা লিখে দেয়। জিনিয়ার কাজিন, মিহানের কাজিনরা সকলে মিলে নাচ-গান আনন্দ করছে। সকলেই খুব খুশি। অতসী দূরে দাঁড়িয়ে জিনিয়ার হাসি মুখের দিকে তাকাল, তারপর রির্সোটের ছাদে চলে যায়। ওহ ভালো করেই জানে, মিহান এইখানেই থাকবে।

– মিহান।
অতসীর মুখে নিজের নাম শুনে মিহান পেছনে ফিরে তাকাল।
– তুমি এইখানে।
– তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– আমার সাথে তোমার কি কথা।
– আমাকে সবটা বলো মিহান।
– কি বলবো।
– তোমার এই পরির্বতনের কারন কি? হঠাৎ করে বদলে গেলে কেন?

– বাদ দাও না এইসব। তুমি তো আমার কখনোই হবে না,তাহলে এইসব কথা জেনেও কোনো লাভ নেয়।
– লাভ-লোকসান আমি কিছু জানি না মিহান। তবে আমি সবটা জানতে চাই। আর একটা কি জানো, তুমি না বললেও তোমার বিষয়ে জানতে আমার বেশি সময় লাগবে না। তবুও আমি চাইছি সবকিছু তোমার মুখ থেকে শুনতে।
– আমি তোমাকে কোনো কিছু বলবো না অতসী। তোমার কোনো অধিকার নেয়, আমার বিষয়ে কিছু জানতে চাওয়ার।
– মিহান প্লিজ। আমি রিকুয়েস্ট করছি, কি হয়েছে সবটা বলো আমাকে।

– বললে কি তুমি আমার জীবনে ফিরবে!
অতসী আর কিছুই বলতে পারল না। মিহান আহত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলল…
– কোনো করুনা আমার চাই না অতসী। তুমি যদি আমাকে চাইতে, আমার হাতটা ধরে রাখতে পারতেন তাহলে আমি তোমাকে সবটা বলতাম। কিন্তু সেটা কখনোই হবে না,তাই আমার জীবন নিয়ে তোমাকে কিছুই জানতে হবে না। নিজের লাইফটাকে গুছিয়ে নাও অতসী। আমার কথা চিন্তা করো না।

মিহান চোখের কোনে পানি নিয়ে চলে যায়। অতসীর বারবার মনে হচ্ছে, একটা অনেক বড়ো ভুল হয়ে যাচ্ছে, মিহান আর জিনিয়ার সাথে অন্যায় হচ্ছে। কিন্তু কি সেটা সেটাই বুঝতে পারছে না। অতসী সিঁড়ি দিয়ে নামছিল, তখনি মিহানের মা পেছন থেকে বলে উঠলেন…
– সবকিছু জানার আগ্রহ কখনো কখনো মানুষের বিপদ ডেকে আনে সেটা কি জানো।
– মানে?

– সবকিছু জানতে নেয়। আর সবকিছু জানার চেষ্টাও করতে নেয়।
– আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। যা বলার ক্লিয়ার করে বলুন।
– তুমি সেই মেয়ে না, যার সাথে মিহানের রিলেশন ছিল।
– হুম।
-প্রাক্তনের বিয়েতে আসতে একটুও লজ্জা লাগলো না তোমার। আর তোমার আবার লজ্জা, লো ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে হলে আর যা হয়। (কথাটা বলেই তাচ্ছিল্যের হাসলেন উনি। )
কথাগুলো শুনে অতসীর রাগ আকাশ ছোঁয়া। তবে তার শিক্ষা নেয়, গুরুজনদের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলার। তাই শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,

– ক্লাস দিয়ে কোনো কিছুই যায় আসে না ম্যাডাম। আর তার সবথেকে বড়ো উদাহরণ হলেন মেয়ের আপনি।
– মানে কি বলতে চাইছ তুমি।
– ওই যে, আপনি হাই ক্লাসের হাই মানুষ তবুও আপনার মানসিকতাটা না একদম লো ক্লাস।
অতসীর কথা শুনে মিহানের মা একদম তেঁতে উঠল, উচ্চস্বরে বলে উঠল,
– হাউ ডেয়ার ইউ।
অতসী বাঁকা হেসে বলল,

– ডেয়ারটা আমার একটু বেশিই ম্যাডাম।আমাকে অপমান করতে আসবেন না। মানুষকে তার ক্লাস দেখে নয় তার মানসিকতা দেখে বিচার করবেন, তাহলে দেখবেন সম্মান পাচ্ছেন।
কথাটা বলে অতসী স্থান ত্যাগ করতে যাবে, তার আগে উনি বলে উঠলেন..
– তোমার মানসিকতা কতটা ভালো, সেটা ভালো করেই জানা আছে আমার। যেই দেখেছ মিহান বড়োলোকের ছেলে এমনি ওর গলাতে ঝুলে পড়তে চাইছিলে। ভাগ্য ভালো আমার ছেলেটা তোমার ফাঁদে পা দেয়নি।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২২

অতসী এতক্ষন সবটা সহ্য করে শান্ত থাকলেও আর পারল না। ওহ ভালো করেই বুঝে গেছে, মিহানের মা মোটেও ভালো কথা শোনার মানুষ না। উনি যেরকম ওনার সাথে ঠিক সেইভাবেই কথা বলতে হবে। তাই অতসী আর একটু আগিয়ে গিয়ে মিহানের মায়ের মুখোমুখি দাঁড়াল। তারপর ওনার চোখে চোখ রেখে বলল…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৪