প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৪

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৪
তানজিলা খাতুন তানু

অতসী তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠল,
– টাকার গরম আমাকে দেখাবেন না ম্যাডাম। অতসী খাঁন টাকার ধার ধারে না। আর আপনার ছেলে ঠিক কার ফাঁদে পা দিয়েছে আর ফাঁদে পা দেয়নি সেটা জানতেও না আমার বেশি সময় লাগবে না।
মিহানের মা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

– তুমি কি আমাকে থ্রেট দিচ্ছ!
– আরে আমি কেন আপনাকে থ্রেট দিতে যাবো কেন, আমি তো শুধু কথার কথা বলেছি। আপনার এত গায়ে লাগছে কেন! তাহলে কি আপনি কোনো অন্যায় করেছেন?
অতসীর কথা শুনে মিহানের মা ঘামতে শুরু করল, তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে যেতে চাইল, এতে অতসীর সন্দেহ আরো গভীর হয়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আরে কোথায় যাচ্ছেন।
– আমার কাজ আছে।
– পালিয়ে যাচ্ছেন!
– আরে পালাতে যাবো কেন?
– না এমনি বললাম। আর একটা কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি।
– কি?
– অতসী কখনোই কোনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি, আর করবেও না। তাই একটু সাবধানে থাকবেন কেমন।
অতসী ভাব নিয়ে চলে যায়। মিহানের মা অতসীর যাবার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল…
– এই মেয়েকে যতটা নরম ভেবেছিলাম তার থেকে কয়েকগুন বেশিই শক্ত। একে মোটেও সুবিধার লাগছে না,সাবধানে থাকতে হবে।
অতসী সোজা জিনিয়ার কাছে গিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করল। তবে মনের মাঝে একটা খুঁতখুঁতে ভাব রয়েই গেল।
পরেরদিন..

বিয়ের আমেজ সকলেই খুব খুশি। জিনিয়াকে পার্লারের মেয়েরা এসে সাজিয়ে দিয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে। অতসী জিনিয়ার কাছে গিয়ে রুমের সকলের দিকে তাকিয়ে বলল,
– জিনিয়ার সাথে আমার একটু কথা আছে। আপনারা যদি একটু বাইরে যেতেন।
জিনিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করতেই সকলে বেড়িয়ে গেল। জিনিয়া অতসীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– কি বলবি আমাকে।
অতসী জিনিয়ার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল,

– আমার তরফ থেকে তোর জন্য একটা ছোট্ট গিফট।
– এইসবের কোনো দরকার ছিল না।
– না দরকার ছিল।
জিনিয়া মুচকি হেসে প্যাকেটটা খুলতে লাগল। প্যাকেটের ভেতরে একটা বক্স ছিল, জিনিয়া বক্সটা খুলে দেখল একটা কানের ঝুমকো। জিনিয়া কানের ঝুমকোটা দেখে অবাক হয়ে বলল..
– এটা তো সুন্দর। আর দেখে তো‌ সোনার মনে হচ্ছে, এটা তুই কোথায় পেলি।
অতসী মুচকি হেসে বলল…

– তোর পছন্দ হয়েছে এটাই অনেক। আর বেশি কিছু জানতে নেয় তোকে।
অতসী জিনিয়াকে নিয়ে বিয়ের এইখানে যায়। মিহান বিয়ের সাজে কাঠের পুতুলের মতো বসে আছে। জিনিয়াকে নিয়ে যেতেই সকলে চেঁচিয়ে উঠল, মিহান মাথা তুলে তাকিয়ে অতসীর দিকে তাকালো। হাসি মুখে অতসীকে খুব সুন্দর লাগছে, মিহান একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। ওর দিকে তাকানোর অধিকার যে ওর নেয়।
জিনিয়াকে বসানো হয়েছে। কলেজের অনেকেই এসেছে। শাহানা, মিতু সকলেই এসেছ। অতসীর পরনের শাড়িটা দেখে শাহানার বান্ধবী বলল…

– অতসীর গায়ের শাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে অনেক দামী। কি ব্যাপার বল তো।
শাহানা ভাবুক হয়ে বলে উঠলো…
– আমিও তো কিছুই বুঝতে পারছি না। অতসীর বিষয়টা কিরকম একটা গন্ডগোল লাগছে আমার।
– শাহানা তোর প্ল্যান তো কিছুই সাকসেসফুল হলো‌না।
– হুম। আমি তো চেয়েছিলাম আমার কেনা শাড়ি, লেহেঙ্গা পড়িয়ে অতসী কে অপমান করবো সবার সামনে। আমার দানের জিনিস পড়ে বিয়ে বাড়িতে এসেছে। কিন্তু কিছুই হলো‌ না, অতসী সব প্ল্যানে পানি ঢেলে দিলো।
– হুম।

শাহানা ভেবেছিল অতসীর কাছে টাকা নেয়, ভালো কাপড় নেয়, ভালো কাপড় পড়ে আসতে পারবে না। শাহানা ওকে কাপড় দিয়ে সকলের কাছে নানান ভাবে অপমান করার উদ্দেশ্যে ছিল ওর। তবে তার কিছুই হয়ে উঠল না।
মিতু ফোনে কথা বলতে বলতে যাবার সময়ে কারোর সাথে ধাক্কা লেগে যায়। মিতু পড়ে যেতে গেলে নিলয় ওকে ধরে নেয়। মিতু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিলয়ের উদ্দেশ্য বলল..

– থ্যাঙ্ক ইউ।
– মোস্ট ওয়েলকাম ম্যাম।
মিতু মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে যায়। নিলয় ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল…
– হাসিটা একদম বুকে গিয়ে লাগল, ইশ্।
তখনি নিলয়ের কাঁধে কেউ হাত দিলো। নিলয় পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল, অতসী কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিলয় ওর দিকে তাকাতেই অতসী ভ্রু নাচিয়ে বলল…

– খবরটা কি। প্রেমে পড়লে নাকি!
নিলয় মাথা চুলকে হেসে উঠলো। অতসী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। নিলয় সেইদিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেল। অতসী নিলয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল….
– হয়ে গেলো। আবার একজন প্রেমে পড়ে গেল,শুধু আমিই সিঙ্গেল হয়ে রইলাম।
অতসী আর শাহানা আবারো মুখোমুখি হলো। শাহানা ইচ্ছাকৃত ভাবেই অতসী কে খোঁচা মারতে শুরু করল।
– অতসী এত দামী শাড়ি পেলি কোথায়?

অতসী শাহানার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যাবে তখনি শাহানা আবারো বলে উঠল…
– কোনো বড়োলোক বাবার ছেলের গলাতে ঝুলে পড়লি নাকি। তার কাছ থেকেই বুঝি এত টাকা আসছে তোর কাছে।
– অতসী খাঁনের এতটাও খারাপ দিন আসেনি যে, টাকার জন্য কাউকে ব্যবহার করবে।
– তাহলে এত টাকা পাচ্ছিস তুই কোথায়?
– আমি সেই কৈফিয়ত তোকে দেব না আমি। আর আমার কথা তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই তোর চিন্তা কর, আমারটা আমিই ভেব না।
অতসী চলে যায়।‌শাহানা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল

– এর এতো তেজ কোথা থেকে আসছে!
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিহান আর জিনিয়ার বিয়ের সময় শুরু হয়। তিনবার কবুল বলে মিহান আর জিনিয়ার গাঁটছড়া একসাথে বেঁধে যায়। জিনিয়ার চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
– তুই শেষমেশ ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েই গেলি জিনি। যত্ন করে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখিস কেমন।
জিনিয়া অতসী কে জড়িয়ে ধরল। অতসীর চোখ দিয়েও এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
রাতে…
সকলে চলে গেলেও অতসী বিয়ের জায়গাতেই বসে ছিল। ভালো লাগছে না কিছু। অতসীর কাঁধে কেউ একজন হাত রাখল, অতসী পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল নিলয় দাঁড়িয়ে আছে।

– অতু কি হয়েছে আমাকে বলবি না তো।
– কি বলবো নিলয়’দা।
– এতগুলো বছর আমি দেশে ছিলাম না। তোর সাথে কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। আমাকে না বললে আমি জানব কি করে।
– বাদ দাও না এইসব কথা। আঙ্কেল আজকে আসলো না কেন?

– কালকে আসবে, তোর সাথে দেখাও হয়ে যাবে। তখন কি পারবি বাপির কাছ থেকে সবটা লুকিয়ে রাখতে।
অতসী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সত্যি জানা নেয়, কতদিন আর নিজের অতীত সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে। নিলয় ভালো করেই বুঝল, এই চাপা স্বভাবের মেয়ের কাছ থেকে কিছুই জানতে পারবে না। এই মেয়ে কিছুই বলবে না নিজে থেকে।
ওইদিকে…
ফুলে সাজানো ঘরে জিনিয়া হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে। ভালোবাসার মানুষটির জন্য অপেক্ষা করে চলেছে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মিহান ঘরে প্রবেশ করলো। জিনিয়া এগিয়ে মিহানকে সালাম করতে গেল, মিহান ওকে বাঁধা দিয়ে বলল…

– এইসবের কোনো দরকার নেয়। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
– আচ্ছা।
জিনিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল, মিহান সোফাতে বসে মাথায় হাত দিয়ে আছে।
– কি হয়েছে মিহান!
মিহান মাথা তুলে তাকিয়ে বলে উঠল…

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৩

– তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো, আমি সোফাতেই আছি।
– মানে? এইসব কি বলছো তুমি!
মিহান যে কথাগুলো বলল, তাতে জিনিয়ার পায়ের তলার মাটি সরে গেল।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ২৫