প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩২

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩২
তানজিলা খাতুন তানু

এতগুলো ধাক্কা একসাথে সহ্য করতে টাল সামলাতে হচ্ছে অতসী কে। সকাল থেকে একটার পর একটা ঘটনা সহ্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর আদৃতের কথা শুনে মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়েছে।রুহি যদি আদৃতের স্ত্রী হয় তারমানে ওর দিদিভাইয়ের আর এই পৃথিবীতে নেই। কথাটা মাথাতে আসতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল অতসী।

– এই অতসী কাঁদছ কেন?
– দিদিভাই..
অতসী আর পুরোটা বলতে পারল না, তার আগেই কান্নায় ভেংগে পড়ল। আদৃত অতসীর কথার মানে বুঝতে পেরে ভাঙা গলাতে বলল,
– আমরা সুখেই ছিলাম। আমাদের সুখটা আরো দ্বিগুন করতে আরু রুহির গর্ভে আসে আর আরুকে জন্ম দিতে গিয়েই রুহি আমাদের ছেড়ে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অতসীর কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেল। আদৃত অতসীকে কিছু বলল না। মেয়েটা না হয় আজ কেঁদেই নিজের কষ্টগুলোকে হালকা করুক।
অনেকক্ষন পর,
অতসী নিজেকে শান্ত করল। আদৃত অতসী কে থামতে দেখে বলল,
– ঠিক আছো তুমি।
– হুমম। আমি বাড়ি ফিরব।
– আচ্ছা চলো আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি।

আদৃত অতসী কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসলো। অতসী নিজের ঘরে ঢুকে কাঁদতে শুরু করল, এতদিন অনেক সহ্য করেছে কিন্তু আজকে সবকিছুর বাঁধ ভেঙে গেছে, রুহিকে হারিয়ে ফেলার আঘাতটা সহ্য করতে পারছে না। অতসী কেঁদে উঠছে বারেবারে, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সেইদিকে ওর খেয়াল নেয়।
পরেরদিন অতসী নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করেও পারছে না। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখটা পুরো ফুলে আছে। বিট্টু অতসী কে দেখে বলল,

– কি হয়েছে দিদিভাই তোমার।
– আরে কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।
– কিন্তু তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমাও নি কিংবা কান্নাকাটি করেছ।
– কিছু না।‌ সর আমাকে কলেজ যেতে হবে।
অতসী ব্যস্ত হয়ে কলেজে যাবার জন্য রেডি হতে লাগল। বিট্টু কিছুক্ষন অতসীর দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেল। বিট্টু বেড়িয়ে যাবার পরেই অতসী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আজকে কতদিন পর নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। চোখগুলো কিরকম একটা অদ্ভুত লাগছে লাল হয়ে আছে, চোখগুলো ঢুকে আছে। সত্যিই কি ওকে অদ্ভুত লাগছে, দেখে মনে হচ্ছে কান্না করেছে? কে জানে।

অতসী নিজেকে সামলে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। মাথাতে অনেককিছুই ঘোরাঘুরি করে চলেছে।
অতসী কলেজে গিয়ে ক্লাস করার পর রুমেই বসে ছিল। শাহানা দূর থেকে লক্ষ্য করছিল অতসীকে, ইচ্ছা করেই অতসীকে তাঁতিয়ে দিতে লাগল।
– ওই দ্যাখ, মনে হয় সত্যি ব্রেকাপ হয়ে গেছে। কেঁদে কাটে চোখ লাল হয়ে আছে।
কথাটা বলেই বন্ধুরা সবাই মিলে হাসতে শুরু করে দিলো। অতসী চুপচাপ নিজের মতো ব্যস্ত ছিল, তারপরেও শাহানারা ক্রমাগত নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও অতসীকে নিয়ে মজা করতে থাকে।

– কি রে অতসী, মুখে কি তালা দিয়ে রাখলি নাকি।
অতসী শাহানার কথাতে পাত্তা না দিয়ে কাউকে একজনকে কল করে বলল,
– হ্যালো‌
– হ্যাঁ, কে বলছেন?
– আঙ্কেল আমি শাহানার ক্লাসমেট।
– ওহ।‌ কিছু কি হয়েছে?
– আঙ্কেল আমি না আপনাকে একটা ছোট্ট ভিডিও পাঠিয়েছি একটু কষ্ট করে ওটা দেখবেন প্লিজ।
– ওকে।

শাহানার বাবা ভিডিওটা দেখে রেগে গেলেন। অতসী ফোনটা লাউডস্পিকারে দিতেই শাহানারা নড়েচড়ে বসলো।
– এই তুমি আমাকে কিসব ভিডিও পাঠিয়েছ।
– কেন আঙ্কেল আপনার মেয়ের কাজকর্মের প্রমান পাঠিয়েছি, ভালো না।
– তুমি কে বলছো, তোমার সাহস কিভাবে হয়।
– আরে আঙ্কেল রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনার মেয়ে কলেজে পড়াশোনার নাম করে কি করে বেড়াচ্ছে সেটা তো আপনার জানা দরকার।

– আমার মেয়ে আমি বুঝে নেব, তুমি বাইরের মেয়ে হয়ে এইসবে মাথা গলাবেন না।
– এই আপনাদের মতো গার্জেনদের জন্যই বর্তমানে স্টুডেন্টদের এই অবস্থা হয়েছে। কলেজটা পড়াশোনা করার জায়গা আড্ডা দেবার কিংবা কারোর পেছনে পড়ে থাকার জায়গা নয়। আর আমি কে?
কথাটা বলেই বাঁকা হাসল অতসী। তারপরে শাহানার দিকে তাকিয়ে বলল,
– আমি কে সেটা নয় একদিন সামনাসামনি দেখা হলেই বলব। আর আঙ্কেল আপনার মেয়েকে সাবধান করে দিন, নাহলে বড্ড পস্তাতে হবে।

কথাটা বলে অতসী ফোনটা কেটে দিলো। ফোনটা কেটে দিতেই শাহানা অতসীর দিকে তেড়ে এসে বলল,
– এই তোর সাহস কিভাবে হলো আমার পাপাকে কল করে এত কথা শোনানোর।
– আমার সাহস নিয়ে কোনো কথা হবে না শাহানা। আর এখনো অনেক ধামাকা বাকি আছে, ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
অতসী শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। শাহানা রাগে ফুঁসতে লাগল।
২দিন পর,
অতসী আর আদৃত আবারো আগের জায়গাতে মুখোমুখি হয়েছে তবে এইখানে আসার কারনটা আদৃতের অজানা। অতসী হুট করেই ওকে ডেকে পাঠিয়েছে।

– কি হলো চুপ করে থাকবে।
– হুমম।
– কি বলবে বলো।
অতসী তবুও চুপ করে থাকল। আদৃত সামনের সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
– আমাকে আর রুহিকে না হয় তোমার বাবা ফিরিয়ে নিতে চাইনি। কিন্তু তুমি কেন ওই বাড়িতে ফিরে যাওনি?
অতসী আদৃতের দিকে একপলক তাকিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,

– ওই মানুষটাকে নিজের বাবা বলতেও আমার বিবেকে বাধে। মানুষটি শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। নিজের রাগের বশে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। আমি জীবনে ৭টা বছরে কম যুদ্ধ করিনি। তবুও যতদিন নানুভাই বেঁ/চে ছিলেন ততদিন আমাদের কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু নানুবাড়ি চলে যাবার পর আমাদের জীবনে অনেককিছুই ঘটে যায়। সবকিছু হারিয়ে আজকে আমি একা।
অতসী ভাঙা গলাতে কথাগুলো বলল।

– অতসী। তবুও তোমার ফিরে যাওয়া উচিত ছিল।
– ফিরে যাবো? কেন ফিরে যাবো। যে মানুষটার জন্য আমার ইচ্ছাগুলো, স্বপ্নগুলো নিমিষে ভেঙ্গে গিয়েছিল সেইগুলো কি আমি কখনোই ফিরে পাবো। আমার জীবন থেকে সুখের ৭টা বছর আমি কি কখনো ফিরে পাবো। বলুন।
আদৃত কিছু বলল না। অতসী আবারো বলতে শুরু করল,

– জানেন আমার খুব ইচ্ছা ছিল, ডাক্তার হবো। নানুভাই বলেছিল তিনি আমাকে পড়াবেন, কিন্তু হঠাৎ করে তিনি চলে যাওয়াতে আমার জীবনটা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গেল। মায়ের দিকে মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরে গেলাম, কিন্তু সেইখানে গিয়ে জানতে পারলাম আমার বাবা আমাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। সেইদিনই কাউকে কিছু না বলে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। শুরু হলো আমার জীবনের নতুন অধ্যায়। সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে শুরু করলাম।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩১

বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হয়তো রাস্তায় নরপশুদের সাথে শে’ষ হয়ে যেতাম তখনি আমার জীবনে একজন মানুষ আসে..

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৩