প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৬

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৬
তানজিলা খাতুন তানু

– কে জানে। আর যে মানুষটা বেঁ /চেই নেয় সে কিভাবে কারোর‌ সামনে গিয়ে দাঁড়াবে!
কথাটা বলেই তাচ্ছিল্যের হাসল অতসী। রুদ্র কথাটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল,
– মানে?
– দিদিভাই আর এই পৃথিবীতে নেয়।
রুদ্র কথার বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেল। অতসী নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।

– বোন তুই এইসব কি বলছিস? রুহি নেয় মানে কি?
– বেবি হবার সময় দিদিভাই মা/রা যায়।
কথাটা বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল অতসী। রুদ্রের চোখেও পানি চিকচিক করছে,
– দাদাভাই আমার ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
অতসী রুদ্রকে এড়িয়ে যেতে চাইল। অতসী ভালো করেই জানে এখন রুদ্রের সামলে থাকলে কিছুতেই নিজেকে সামলে রাখতে পারবে না। তাই চলে যাওয়াটাই শ্রেয়।
অতসী উঠে চলে যেতে যাবে তখনি রুদ্র ওকে ডেকে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– বোন।
অতসী পেছন ঘুরে তাকাতেই রুদ্র অতসী কে জড়িয়ে ধরল। কাঁধে পানির উপস্থিতি দেখে অতসীর বুঝতে অসুবিধা হলো না রুদ্র কাঁদছে। অতসীর চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ল।
– বোন কেন আমাদের সাথে এইরকম হলো। রুহিকে শেষ দেখাও দেখতে পারলাম না। আর না মেয়েটার জন্য কোনোদিন কিছু করতে পারলাম।
অতসী কিছু বলল না, চুপচাপ কথাটা শুনে গেল। শান্ত হয়ে যে যার মতো রাস্তাতে চলে গেল। রুদ্রর ভালো করেই জানে অতসী কে জোর করে কিছু করানো যাবে না, যা করতে হবে সবকিছুই ওর ইচ্ছাতে করতে হবে।
সন্ধ্যায় আরুকে পড়াতে গিয়েই আদৃতের মুখোমুখি হয়। দুজন দুজনের সাথে কোনো কথা না বলেই যে যার মতো চলে যায়।

এইভাবেই কেটে যায় কয়েকটা দিন। রুদ্র এখনো‌ বাড়ির কাউকে রুহির বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি।প্রতিবার বলতে গিয়েও আটকে গেছে।
রুদ্রকে কয়েকদিন অন্যমনস্ক থাকতে দেখে ওর স্ত্রী বলল,
– কি হয়েছে তোমার। এতটা অন্যমনস্ক লাগছে কেন তোমাকে।
– অনেককিছু সত্যি জানতে পেরেছি।
– কি?
– রুহি আর বেঁ/চে নেই।
– কি!
রুদ্রের স্ত্রী সামিয়া চমকে উঠল। রুদ্রের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে শান্তনা দিলো।
– মন খারাপ করো না। মানুষের আ’য়ু চিরকালের নয়। রুহির আ’য়ু অতটাই ছিল তাই তাকে যেতে হয়েছে। মন খারাপ করো না।

– রুহি আর আমি ছোট থেকেই বন্ধুর মতো বড়ো হয়েছি, যখন বাড়ি থেকে চলে গেল তখনি বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি রুহির খোঁজ করেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। আমি জানতাম না ও কার সাথে বিয়ে করেছে, কোথায় বাড়ি তার, কোনো কিছুই জানতাম না। হ্যাঁ এটা ঠিক যখন বোন আর মাকে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেয় তখন রুহির উপরে আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। তবে কখনোই ভাবতে পারিনি ওহ আমাদের এইভাবে ছেড়ে চলে যাবে।

– কি করবে বলো।
– আমি কিভাবে কথাগুলো মা বাবাকে বলব বুঝতে পারছি না।
– সত্যিটা তো তাদেরকে বলতেই হবে।
– হুমম। আজকে রাতেই বলবো।
– আচ্ছা।
রাতে খাবার পর রুদ্র সবাইকে কিছু বলবে বলে বসিয়ে রেখেছে। ওহ আগেই বলতে পারত, কিন্তু কথাটা শোনার পর আর কেউই কিছু মুখে তুলবে না।
তাই খাবার পরেই কথাটা বলবে ঠিক করল।

– কি বলবি বলে এইভাবে বসিয়ে রেখেছিস আমাদের। বল এইবার অনেকক্ষণ তো হলো।
– আসলে বাবা,
– কি বল।
– রুহি..
– আমি তোকে বারন করেছি ওই মেয়ের নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবি না। ওই মেয়ের মুখও তো‌ দূর, নামও শুনতে চাই না।
– আর কখনো ওর মুখ তোমাকে দেখতেও হবে না।
– মানে, কি বলছিস তুই? (অতসীর মা।)
– মা রুহি আর বেঁ/চে নেই।
কথাটা শুনে সকলে থমকে গেল। আকরাম খাঁনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না, অতসীর মা কাঁদতে কাঁদতেই বললেন,

– এইসব তুই কি বলছিস?
– হ্যাঁ মা। রুহির ডেলিভারির সময়ে কন্ডিশন খারাপ থাকাতে ওকে বাঁ/চানো যায়নি।
অতসীর মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
– মেয়েটাকে শে/ষ দেখা দেখতেও পারলাম না।
অতসীর মা কান্নাকাটি করলেও আকরাম খাঁন পুরোই স্ট্যাচুর মতো বসে আছে। কোনো কথা বলছে না। সামিয়া শাশুড়িকে শান্ত করতে লাগল।
– সামিয়া তুমি তোমার মাকে নিয়ে ঘরে যাও।
– হুম।

সামিয়া শশুরের আদেশ শুনে শাশুড়িকে নিয়ে চলে গেল। ওনারা চলে যেতেই আকরাম খাঁন রুদ্রের উদ্দেশ্য বললেন,
– তুমি এই কথাটা কোথায় জানলে? আর কবে হয়েছে এইসব?
– বোন বলল। আর ঘটনাটা অনেক দিন আগের প্রায় ৫বছর আগে।
– এতদিনের কথা অতসী কিভাবে জানল? তাহলে অতসী কি রুহির শশুর বাড়ির সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে!
উত্তরটা রুদ্রের জানা নেয় তাই চুপ করে থাকল। আকরাম খাঁন নিজের ঘরে চলে গেলেন। রুদ্র খানিকটা অবাক হলো, ওহ ভেবেছিল রুহির কথাটা শুনে ওর বাবা আহত হবে কিন্তু তার কোনো কিছুই না হওয়াতে কিছু একটা খটকা লাগছে।‌ তাহলে কি আকরাম খাঁন আগেই এই সত্যিটা জানতেন?

আকরাম খাঁন নিজের রুমে না গিয়ে স্টাডি রুমে গিয়ে সিগারেট ধরালেন। এই বদ অভ্যাসটা আগে ওনার ছিল না, কিন্তু একাকিত্ব কাটিয়ে উঠতে উঠতে ওটাই সঙ্গী হয়ে উঠেছে। স্ত্রী ২ বছর আগে ফিরে আসলেও আগের মতো সম্পর্কটা নেই, মেয়েদের হারিয়ে উনি সবসময়েই স্বামীকেই দায়ী মনে করেন। আকরাম খাঁন সেটা চাইলেও আটকাতে পারেন না। আরামকেদারায় বসে বসে আকরাম খাঁন নিজের ভাবনাতে ব্যস্ত ছিলেন। তখনি কি মনে করে অতসীর নম্বরে ফোন করলেন,
দ্বিতীয়বারের মাথাতে কলটা রিসিভ হলো। অতসী কলটা রিসিভ করেই বলে উঠল,

– হ্যালো‌ কে বলছেন।
– আমি বাবা বলছি।
চেনা কন্ঠস্বর শুনে অতসী ফোনটা কেটে দিতে যাবে তার আগেই ওর বাবা বলল
– কলটা কাটবে না একদম। তোমার সাথে আমার কথা আছে।
– কি কথা, সেই তো‌ বলবেন ফিরে যাবার জন্য। কিন্তু সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
– কেন সম্ভব নয়। এই সবকিছুই তো তোমার, তুমি আমার রাজকন্যা হয়ে কেন ভিখারীর মতো বাস করছ।
– ভিখারীর মতো বাস করলেও শান্তিতে আছি। যেটা আপনার কাছে থাকলে হয়তো পেতাম না। আমি কখনোই আপনার মিথ্যা জেদের কাছে মাথা নোয়াতে আমি পারব না।

– ঠিকাছে তুমি যা বলবে তাই মেনে নেব আমি। কোনো কিছু নিয়ে জেদ করব না ফিরে এসো।
কথাটা শুনে অতসীর মাথাতে কিছু একটা খেলে যায়।‌ ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
– ঠিক বলছেন? যা বলব তাই মেনে নেবেন।
– হ্যাঁ। (শান্ত কন্ঠে)
অতসীর মুখের হাসিটা আরো চওড়া হয়ে গেল। একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

– তাহলে কালকে ঠিক সন্ধ্যা ৬টাই … রেস্টুরেন্টে দেখা করবেন।
আকরাম খাঁন একটু না অনেকটাই অবাক হলো। অতসী তার সাথে নিজে থেকে দেখা করতে চাইছে, এর পেছনে কি কারন থাকতে পারে সেটাই বুঝতে পারলেন না।
– ঠিকাছে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে। রাখছি।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৫

অতসী কলটা কেটে দিয়ে মুচকি হাসল। আকরাম খাঁন চিন্তিত হয়ে গেলেন, মেয়ের মাথাতে আসলে কি ঘুরছে সেটা আন্দাজ করে উঠতে পারলেন না। অপেক্ষা করতে লাগলেন আগামীকাল সন্ধ্যার।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৭