প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৮

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৮
তানজিলা খাতুন তানু

– আমার ছেলে মেয়ে দুটোকে দেখে রাখবি প্লিজ।
আকরাম খাঁন কিছু বলতে যাবে তার আগেই টুসির শ্বাস কষ্ট শুরু হয়, আকরাম খাঁন তাড়াতাড়ি করে ডক্টরকে ডাকতে যায় কিন্তু তার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়।
আকরাম খাঁন এসে দেখেন টুসি শে/ষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। আকরাম খাঁনের মনটা ভীষন খারাপ হয়ে যায়। বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,

– জন্মানোর সাথে সাথেই তোরা যে অনাথ হয়ে গেলি।
তখনি আকরাম খাঁনের কাঁধে একজন হাত দিলো, পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল ওনার শশুর মশাই।
– বাবা আপনি।
– আকরাম বাবা একটা খারাপ খবর আছে।
– কি।
– বেবিটাকে বাঁ/চানো যায়নি।
আকরাম খাঁন মাথাতে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। একদিকে বান্ধবী আর অন্যদিকে সন্তান হারিয়ে প্রচন্ড রকমের ভেঙে পড়লেন উনি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আকরাম বাবা একটা কথা বলব।
– কি বাবা বলুন।
– ওই দুটো সন্তানকে নিজের সন্তানের পরিচয় দাও।
– আপনি এইসব কি বলছেন?

– দ্যাখো তোমার বান্ধবীর তো দুই সন্তান হয়েছে আর তোমাদের সন্তান তো নেই। ছেলে মেয়ে দুটোর প্রয়োজন বাবা মা, আর তোমাদের প্রয়োজন সন্তান। এইরকম অবস্থাতে তোমার কি মনে হয় আকরাম। যেটা তোমার মনে হয় সেটাই করো।
আকরাম খাঁনের শশুর মশাই চলে গেলেন। আকরাম খান কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। সর্বশেষে অনেক চিন্তা ভাবনা না করে সকলের থেকে সত্যিটা লুকিয়ে রেখে রুহি আর রুদ্রকে নিজের সন্তান বলে পরিচয় দেই।

ছোট থেকে নিজের পরিচয়ে বড়ো করে তুলতে থাকে, কখনোই বুঝতে দেয়নি ওরা ওনার নিজের সন্তান নয়।
সবটা শুনে অতসীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আকরাম খাঁন নিজের চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বলল,
– কখনোই ওদেরকে বুঝতে দিইনি, নিজের সন্তানের মতো বড়ো করে তুলেছি কিন্তু রুহি কি করল আমার মানসম্মান সবটা মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে একজনের সাথে পালিয়ে গেল। এইবার তুমি বলো, আমার রাগ করাটা কি স্বাভাবিক নয়।
অতসী কিছু বলল না। চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ছে‌। আকরাম খান অতসী কে জড়িয়ে ধরলেন, অতসীর কান্নার পরিমান বেড়ে গেল।

– কাঁদিস না মা। রুহি আর রুদ্র আমার নিজের সন্তান না হলেও আমি কখনোই তোর সাথে ওদের পার্থক্য করিনি। রুহির প্রতি আমার রাগ থাকলেও আমি কখনোই আমার কোনো কিছু থেকে ওকে বঞ্ছিত করিনি। আমার প্রতিটি জিনিসই তোদের তিন ভাইবোনের নামে। তোর বাবা এতটাও খারাপ মানুষ নয় রে মা।
অতসী বাবাকে আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

– বাবা।
এতদিন পর অতসীর মুখে বাবা ডাকটা শুনে আকরাম খাঁন ইমোশনাল হয়ে গেলেন। খুশিতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।
– মারে আমার মা।
অতসীকে শান্ত করে আকরাম খাঁন বলল,
– এতদিন পর তোকে কাছে পেয়েছি আমি আর তোকে হারাতে চাই না। তুই যা বলবি তাই মেনে নেব,তবুও ফিরে চল।
অতসী কিছু একটা ভেবে বলল,

– আমি ফিরতে পারি তবে দুটো শর্তে।
– বল।
– প্রথমত, এই চরম সত্যিটা দাদাভাই বা অন্য কেউ না কোনোদিন জানতে পারে। আমি দাদাভাইকে হারাতে পারব না বাবা।
– তুই না বললেও আমি কখনোই কাউকে বলতাম না। আর রুদ্রকে তো কখনোই না। দ্বিতীয় শর্তটা বল।
– আমি বিয়ে করতে চাই।
– এটা তো খুব ভালো খবর। ছেলেটা কে?
– শর্তটা তো‌‌ এইখানেই।
– মানে?

– আমি যাকে বিয়ে করতে চাই আমার‌ বিয়ে তার‌ সাথেই দিতে হবে।‌ কোনোভাবেই না বলা যাবে না।
– ভালো খারাপ কিছু বলতে পারব না
– এতগুলো বছর তো নিজেই নিজের ভালো খারাপ দেখেছি আর একটা দেখি না।
আকরাম খাঁন কিছু বলতে পারলেন না।
– বাবা আমি কিন্তু আমার সাথে হওয়া ঘটনাগুলো কিছুই ভুলিনি। আপনি যদি আমার শর্তে রাজি না নন, তাহলে আমি কিন্তু আবারো হারিয়ে যাবো আর কখনোই আমাকে খুঁজে পাবেন না।

– না।‌ আমি রাজি তোর কথাতে।
অতসী বাঁকা হাসল। খেলা তো এই শুরু হলো, এখনো অনেককিছুই বাকি আছে।
২দিন পর,
বাড়িতে হঠাৎ করেই গেষ্ট আসাতে আদৃতের মা একটু অবাক হয়েছে।‌ আর তার থেকেও অবাক হয়েছে অচেনা মানুষগুলোকে দেখে।
– আপনারা কারা আমি তো‌ ঠিক চিনলাম না।
– দিদি আমি অতসীর বাবা, একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
আদৃতের মা অতসীর বাবা কথাটা শুনে চমকে গেলেন। অতসীর বাবা মানে তো রুহির ওহ বাবা।

– আপনি ভেতরে আসুন।
– বাড়ির বাকিদের ডাকলে একটু সুবিধা হতো।
– আমার ছেলে অফিসে আছে আমি ওকে আসতে বলছি
আদৃত দের মা আদৃতকে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলে আকরাম খাঁনকে বসতে বলে নাস্তার ব্যবস্থা করতে লাগল।
আকরাম খাঁন গোটা বাড়িটা দেখছিলেন, বেশ‌ সাজানো গোছানো ঘরবাড়ি। ওনার বাড়ির মতো অনেক বড়ো না‌ হলেও খুব সুন্দর।

আরু বসার‌ ঘরে এসে দেখে একজন লোক বসে আছে। আরুর ভ্রু কুঁচকে যায়, এগিয়ে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আপনি কে?
আচমকা আক্রমনে আকরাম খাঁন চমকে উঠল। কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরু বলল,
– তুমি কি ভিলেন?
– কি!
আরুর কথা শুনে আকরাম খাঁনের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। বাচ্চা একটা মেয়ে ওকে ভিলেন বলছে, ওকে কি দেখতে ভিলেনের মতো।

– হ্যাঁ আমি দেখেছি দুষ্টু লোকগুলো এইভাবে হিরোদের বাড়িতে এসে ঝামেলা করে।
– আমাকে কি তোমার দুষ্টু লোক মনে হয়।
– অচেনা মানুষদের সবাইকেই আমার দুষ্টু লোক লাগে।
আকরাম খাঁন কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদৃতের মা ওইখানে এসে বলল,
– আরু দিদিভাই কি করছ।
– দিদুন ওই লোকটা কি ভিলেন।
আদৃতের মা চমকে উঠল। সত্যি তো আকরাম খাঁন তো ভিলেনই। তবূও নিজেকে সামলে নিয়েবলল,

– দিদিভাই উনি তোমার দাদু হয়। এইভাবে বড়োদের সাথে কথা বলতে হয়? সরি বলো দাদুকে।
– সরি দাদু।
– আরে না বাচ্চা মানুষ।
আকরাম খাঁন আরুকে কোলে বসিয়ে একটা চুমু দিলেন।
– মিষ্টি একটা মেয়ে।
তখনি কলিংবেলের শব্দ হলো। আদৃতের মা এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলেন আদৃত এসেছে।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৭

– মা এইভাবে আসতে বললে আমাকে, সবকিছু ঠিক আছে তো।
– হুম।‌ ভেতরে আয়।
আদৃত আকরাম খাঁনকে দেখে চমকে উঠল। কিছু বলতে যাবে তার আগে আরু দৌড়ে বাবা বলে জড়িয়ে ধরল আদৃতকে। আদৃতও আগলে নিলো আরুকে। আকরাম খাঁন আদৃতের মাকে জিজ্ঞেস করল,
– উনি কে?
– আমার ছেলে আদৃত।
– আর বাচ্চাটা?
– আমার মেয়ে। (আদৃত)
আকরাম খাঁন চমকে উঠলেন। অতসীর‌ কাছে যেটা শুনেছে ছেলেটারা এক ভাই আর এক বোন। আরু আদৃতের মেয়ে মানে ওহ কি বিবাহিত, সেই কারনেই কি অতসী শর্ত দিয়েছে।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৩৯