প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৬

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৬
তানজিলা খাতুন তানু

অতসী কলেজ যাবার পরেই শাহানার মুখোমুখি হলো।
– কি ম্যাডাম,এতদিন পর কলেজে আসলেন কেন?
– সেটা কি আপনাকে বলতে হবে? শাহানা পথ ছাড়ো,আমার ক্লাস আছে।
– এত পড়াশোনা করে কি হবে? সেই তো খুন্তিই নাড়বি, তোর মতো ছোটলোক আর কি করবে ওটা ছাড়া। (শাহানা হেসে বলল)

– ছোটলোক কাকে বলে জানো! মানুষের ক্লাসে তার ছোটলোক,বড়োলোক প্রমান হয় না। হয় মানুষের ব্যবহারে, আর তুমি নিজের ব্যবহারে নিজেকে বারবার ছোটলোক বলে প্রমান করছ।
– অতসী!
– চেঁচিয়ে লাভ নেয়। চেঁচিয়ে বললেই সত্যিটা মিথ্যা হয়ে যায় না।
– অতসী তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস।
– বাড়াবাড়ি এখনো করিনি,তবে করতে আমার একটুও সময় লাগবে না। তাই আগে থেকে সাবধানে থাকো।
অতসী শাহানাকে রাগ দেখিয়ে চলে যায়। শাহানা তেজ দেখিয়ে নিজের মনে‌ বিরবির করে‌ বলল…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– ওর এত সাহস কোথা থেকে আসছে,সেটাই বুঝতে পারছি না। এত তেজ, এত এ্যাটিটিউট কোথা থেকে আসছে এটাই আমি বুঝতে পারছি না।
অতসী ক্লাসে যাবার সময়ে চির শ*ত্রুর সাথে মুখোমুখি হলো। অতসী নিজে বিরবির করে বলল…
– শয়তানের মুখ দেখলাম। দিনটাই খারাপ যাবে।
– কি গো সুন্দরী। এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছো।
– কাউকে উত্তর দিতে বাধ্য নয় আমি।
– আমাকেও উত্তর দেবে না। আমি না তোমার জান(শয়তানি হেসে)
– পথ ছাড়ুন।

– তুমি না আমাকে ভালোবাসো? এইভাবে আমাকে ইগনোর করতে পারছ।(করুন কন্ঠে বলল)
– আপনার মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না মিষ্টার মিহান। (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
– আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি অতসী। জিনিয়ার সাথে আমার কোনো কিছুই নেয়, আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি…
কথাটা শেষ করার আগেই অতসী মিহানের গালে একটা থা*প্পর দিল।
– তুমি আমাকে থাপ্প*র মারলে?

– ল*জ্জা করে না, এতকিছুর পর আমার সামনে এসে দাঁড়াতে। তোর কি মনে হয় তোর মতো একটা কা”পুরুষকে এই অতসী ভালোবেসেছে। কখনো না, তোর মতো ছেলের দিকে অতসী ঘুরেও তাকায় না।
অতসীর বলা কথাগুলো‌ শুনে মিহানের মেজাজ গরম হয়ে গেল। অতসীর হাত ধরে,পেছন দিকে মোচড় দিয়ে বলল…
– তোর বড্ড তে’জ বেড়েছে। আমাকে কা*পুরুষ বলছিস, এই কা*পুরুষ তোর কি অবস্থা করবে সেটা কল্পনাও করতে পারবি না। তোর সমস্ত অ*হংকার আমি ধুয়োই মিশিয়ে দেব। আমাকে তে*জ দেখাবি না, ফলাফল ভালো‌ হবে না কিন্তু।

– হাতটা ছাড় মিহান। খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
– কি করবি তুই?
মিহানের কয়েকজন বন্ধু এসে মিহানকে ছাড়িয়ে নিলো। বন্ধুদের মধ্যে একজন অতসীর উদ্দেশ্য বলে উঠল…
– অতসী তুমি ঠিক আছিস।
– হুম।।
অতসী আর একমুহুর্ত দাঁড়াল না। দৌড়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেল।
– এই মিহান পাগল হয়ে গেছিস তুই। পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে কি করছিস,প্রিন্সিপাল স্যার জানলে কি হবে ভাবতে পারছিস।
বন্ধুরা মিহান কে বকাবকি করতে লাগল।

– ওই দুই টাকার মেয়েটার তে*জ দেখেছিস,আমাকে কা*পুরুষ বলছে। ওকে আমি ছাড়ব না।(রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল)
সকলে মিহানকে ঠান্ডা করতে লাগলেও,একজন একটু বেশিই অন্যমনস্ক হয়ে অতসীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল…
– নিজে থেকে কেন নিজের বি*পদ ডেকে আনছ অতসী। মিহানের কালো ছায়া থেকে কি তুমি আদোও র*ক্ষা পাবে কি?
অতসী কোনোরকমে বাড়ি ফিরে এসেই ওয়াশরুমে ঢুকল। মিহানের প্রতিটা স্পর্শই ওর গা ঘিনঘিন করছে, নিজেকে শে*ষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।

– হ*ত্যা করা যদি জায়েজ থাকত,তাহলে আমি নিজের হাতে মিহান কে খু*ন করতাম। মিহান তোকে আমি প্রা*নে মা*রব না,ভাতে মা*রব। তোর মুখোশধারী রূপটা সকলের কাছে আমি আনবোই।
সমাজের আনাচে কানাচে মিহানের মতো হাজারো মুখোশধারী মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা ভালোবাসার নামে নিজের স্বার্থ*সিদ্ধি করে বেড়ায়, মানুষের আবেগ, ভালোবাসা, অনুভূতি নিয়ে খেলা করে। একটার পর একটা মানুষকে ঠকিয়ে যায়। প্রতি*বাদ করতে গেলেই জীবনটাকে ছাড়’খা*ড় করে দেয়।

অতসী ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসল। মাথাটা বড্ড যন্ত্রনা করছ, এত এত প্রেশার এই ছোট মাথাটা নিতে পারছে না। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে প্রানভরে শ্বাস দিতে পারছে না।
কিছুটা সময় চলে যাবার পর, অতসী নিজের টিউশনির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। টিউশনি না করালে যে পেটের ভাতটাও জুটবে না, পড়াশোনাও করা হবে না।
রাস্তায় যাবার সময়ে, একটা আননোন নম্বরে ফোন আসলো।

– হ্যালো কে?
– আন্টি আমি আরু।
– হ্যাঁ বলো।
– আন্টি তুমি একবার আমার কাছে আসো না। আমার তোমাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছা করছে।
– আচ্ছা মামনি, আমি যাবো তবে অনেকটা দেরি হবে, ঠিকাছে।
– থ্যাঙ্কু আন্টি।

অতসী টিউশনি পড়ানো শেষ করে ,আরোহীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। এতদিনে একটা মনের মতো মানুষ পেয়েছে, আরোহীকে দেখলেই অতসীর কিরকম একটা আপন আপন মনে হয়, আদর করতে ইচ্ছা করে।
কলিং বেল বাজানোর পর একজন আদৃতের মা দরজা খুলে দিলো।
– আরে অতসী তুমি এখন।

– আসলে আন্টি আরু আমাকে কল‌ করেছিল। আমার টিউশনি ছিল তাই আমার আসতে দেরি হলো।
– আচ্ছা ভেতরে আসো।
– আরু কোথায়?
– আরু নিজের ঘরে পড়াশোনা করছে,ওর মামনির কাছে।
– আচ্ছা। ওকে কি একবার ডেকে দেবেন।
– তুমি ওর ঘরে যাও,ওহ খুশি হবে।
– আচ্ছা।
আদৃতের মা আরোহীর ঘর দেখিয়ে দিলেন। অতসী ধীর পায়ে আরোহীর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। ঘরের সামনে এসে দরজায় টোকা দেয়।

-আসবো।
আরোহী অতসী কে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল।
– আন্টি তুমি এসেছ সত্যি।
– হুম মামনি এসেছি।
আরোহী প্রচন্ড পরিমানে খুশি হয়।
– আন্টি চলো আমার মামনির সাথে তোমাকে আলাপ করিয়ে দিই।
– আচ্ছা।
আরোহী অতসীকে টেনে নিয়ে এসে, মামনির সামনে দাঁড় করালো। আরোহীর মামনিকে দেখে অতসী চমকে উঠল।

– তুমি?
– আরে অতসী তুমি এইখানে?
মিতুকে সামনে দেখে অতসী অবাক না হয়ে পারল না। এইভাবে এখন ওকে দেখবে সেটা আশাই করেনি।
– আন্টি তুমি মামনিকে চেন নাকি?
– হুমম।
– তাহলে তো খুব ভালো,আমরা তিনজনে ভালো বন্ধু হবো।
– তাই। (অতসী)
– আরু মামনি তুমি যাও তো,গিয়ে দিদুনকে বলো তোমার আন্টির জন্য কিছু খাবার আনতে।
– আরে এইসবের দরকার নেয় কোনো।
– আরু যাও।

মিতুর কথা শুনে আরু ওখান থেকে চলে যায়।
– অতসী, আমার সাথে এখনো কি বন্ধুত্ব করবে না।
– বন্ধুত্বের প্রতি আমার বিশ্বাসটাই চলে গেছে।
– পুরানো কথাগুলো বাদ দাও না। নতুন করে সবকিছু শুরু করো।
– সবকিছু নতুন করে শুরু করতে বললেই, শুরু করা যায় না। আর আমি মানুষটা বড্ড বেশি অগোছালো, তাই নিজের জীবনটা গুছিয়ে নেবার চেষ্টাও করিনি আমি। যেমন চলছে, সেইরকমই না হয় চলুক। নতুন করে আর কিছু শুরু করার নেয়।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৫

– আর আরুর প্রতি?
– আরু একটা নিস্পাপ শিশু,ওকে আমি কখনোই স্বার্থ দিয়ে কিছু করব না।
– যদি আরুর দায়িত্ব দিতে বলি?
– এসব কি বলছ তুমি?
মিতুর কথা শুনে অতসী কিছুই বুঝতে পারল না। মিতু কিসের দায়িত্বের কথা বলছে।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৭