প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৭

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৭
তানজিলা খাতুন তানু

-কিসের দায়িত্বের কথা বলছ তুমি?
মিতু মুচকি হেসে বলল…
– এতটা সিরিয়াস হবার কিছু নেয়। আমি চাই,তুমি আরুকে টিউশনি পড়াও।
– কেন?
– আরু তোমাকে এই কয়েকদিনে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে, আর তুমি তো এমনিতেই টিউশনি পড়াও আরুকে টিউশনি পড়াবে?

– ভেবে জানবো। এখন আমাকে ফিরতে হবে,অনেক রাত হয়েছে।
– আমি গাড়ি বলে দিচ্ছি, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
– প্রয়োজন নেয়,আমার একা যাতায়াতের অভ্যাস আছে।
– কিন্তু।
– কোনো কিন্তু নয়। আমি আসলাম।
অতসী মিতুকে বলে সোজা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। মিতু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অতসীর মাথাতে একটা কথাই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে, সবকিছুর পেছনে কি মিতুর কোনো স্বার্থ লুকিয়ে আছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরেরদিন স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু চলতে থাকল। অতসীর কলেজ যেতে ভালো লাগছে না,তাই বাড়িতেই থাকল। আজকে নিজেকে একটু সময় দেওয়া দরকার। নিজের পছন্দমতো রান্না করবে, নিজের সাথে সময় কাটাবে। রান্না তো করবে, কিন্তু তার আগে তো বাজার করতে হবে। অতসী বরাবরই বাজার করার‌ বিষয়টা একটু এড়িয়ে চলে, এই বাড়ির‌ পাশে একটা ছোট বাড়িতে একটা ছেলে থাকে,তাকে দিয়েই বাজার করাই।

– বিট্টু .. বিট্টু একবার এইখানে আসো না।
অতসীর ডাক শুনে বিট্টু চলে আসে।
– বলো‌ দিদি।
– আমার জন্য একটু বাজার করে আনবে।
– আচ্ছা দাও। কি কি আনব বলো।

অতসী বিট্টুকে বাজারের লিস্টটা দিয়ে দিলো। বিট্টু পাশের বাড়িতেই একটা ছোট ঘরে ফ্যামিলির সাথে থাকে, বাবা একজন শ্রমিক, বিট্টুর মা অতসীদের বিল্ডিং এর অন্যান্য বাড়িতে কাজ করেন। বিট্টু ক্লাস ১০ এ পড়ে। পড়াশোনাতেও খুব ভালো। অতসীর খুব ভালো‌ লাগে ছেলেটাকে, তাই তো ছোটোখাটো কাজ করিয়ে নিয়ে কিছু টাকা দেয়। সরাসরি টাকা দিলে নিতে চাই না, বড্ড আত্মসম্মান বোধ বিট্টুর।
বিট্টু বাজার করে এনে দেবার পর, অতসী নিজের মতো করে রান্না করলো। রান্না শেষ করে, গোসল করে করে রেডি হয়ে বিট্টুকে ডেকে‌ পাঠাল।

-দিদি ডেকেছিলে।
-হুম ভেতরে আয়।
বিট্টু ভেতরে গিয়ে দেখল, নানা ধরনের খাবার দাবার সাজানো আছে।
– আজকে কি কোনো স্পেশাল দিন দিদি।
– কেন রে।
– না এত রান্না করেছ তাই।
– খুব ইচ্ছা করছিল তাই, তুই বস আমরা একসাথে খাবো আজকে।
– কিন্তু।
– কোন কিন্তু নয়। তুই বস।

অতসী জোর করে বিট্টুকে মেঝেতে বসিয়ে দিলো। বিট্টু না না করছে।
– আমি জানি তুই কেন না বলছিস, আমি খাবার থেকে কিছুটা সরিয়ে রেখেছি কাকু-কাকীমার জন্য। তুই এখন চুপচাপ আমার সাথে খেতে বস।
বিট্টুকে যত্ন করে খাওয়াতে লাগল অতসী।
– দিদি তুমিও খেতে বসো।
– হুমম।

দুজনে মিলে একসাথে খেতে লাগল। আশেপাশের কেউ দেখলে বিশ্বাস করবে না, ওদের দুজনের‌ মাঝে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেয়। কিছু কিছু সম্পর্ক হয়, যেখানে রক্তের সম্পর্কেও হার মানায়।
বিট্টু খাওয়া শেষ করে,নিজের বাবা-মায়ের জন্য খাবার নিয়ে চলে গেল। বিট্টু ওর মায়ের হাতে খাবার গুলো দিতেই উনি বললেন…

– তুই এইগুলো কোথা থেকে আনলি।
– অতসী দিদি দিয়েছে।
– কিন্তু কেন?
– জানো মা, অতসী দিদি খুব খুব ভালো। আমাকে কাছে বসিয়ে কি সুন্দর খাওয়ালো, পুরো দিদির মতো । আমার অতসী দিদিকে না পুরো নিজের দিদিই লাগে। আমাকে খুব আদর করে জানো।
– মেয়েটা সত্যি খুব ভালো। ওর ব্যবহারও খুব সুন্দর আমি দেখেছি।
– হুমম।‌ এখন তুমি খেয়ে নাও,ঠান্ডা হয়ে যাবে।
– হুম।

অতসী থালা বাসন গুলো গুছিয়ে দিয়ে বই নিয়ে বসলো। সামনেই সেমিস্টার। অথচ এখনো অনেক পড়া বাকি আছে। রেজাল্ট ভালো করতেই হবে,নাহলে যে নিজের কাছে নিজেই হেরে যাবে।
বিকালে…
বিট্টু বক্সগুলো ফেরত দিতে আসে।
– দিদি বক্সগুলো।
– আচ্ছা দে।
অতসী বক্সগুলো নিয়ে বলল…
– তোর পড়াশোনা কেমন চলছে।
– চলছে ওইরকম।
– টিউশনি যাচ্ছিস তো।
– না।
– কিন্তু কেন?

– মাইনে দিতে পারিনি,তাই লজ্জায় আর যায়নি।
– কিন্তু তোর তো সামনে এক্সাম। টিউশনি না গেলে‌ এক্সাম দিবি কিভাবে?
– জানি না।
– আচ্ছা, তুই রাতে আমার কাছে আসবি,আমি যতটা পারব তোকে দেখিয়ে দেব।
– সত্যি বলছো।
– হুমম সত্যি।
বিট্টু খুশিতে লাফিয়ে মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
– কি হলো এখন আবার এত খুশি কেন?
– মা দিদি বলেছে,আমাকে টিউশনি পড়াবে।
– সত্যি।
-হুম।

বিট্টু ও ওর মা দুজনেই খুব খুশি হয়ে যায়। বিট্টুর মা খুশিতে কেঁদে দেয়, ছেলে পড়াশোনা করতে পারবে এর থেকে আর খুশির খবর আর কি হতে পারে।
আদৃত অফিস থেকে ফিরে,আরুর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখে,আরু মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
– কি হয়েছে আমার মিষ্টিবুড়ির।
– মিষ্টিবুড়ি খুব রাগ করেছে।
– কিন্তু কেন?
– বাপি জানো আন্টি না কালকে আমাকে না বলেই চলে গিয়েছিল। তারপর আর কল করেনি আমাকে একবারো।
– তাই।

– হুমম আমার বড্ড মনে পড়ছে আন্টিকে।তুমি একবার কল করো না।
– কিন্তু আমার কাছে তো নম্বর নেয়।
– আমার কাছে আছে,আমি দিচ্ছি ওয়েট।
আরুর জেদের কাছে হার মেনে আদৃত শেষমেশ অতসীর নম্বরে কল লাগল। কলটা রিং হবার সাথে সাথেই রিসিভ হলো, ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে অতসী বলে উঠল..
– কে?

ঘুম ঘুম কন্ঠ শুনে, আদৃতের কিরকম একটা লাগল, গলাটা একটু পরিস্কার করে বলল…
– আমি আরুর বাবা বলছি।
অতসীর ঘুম উড়ে যাচ্ছে। সোজা হয়ে বসে বলল..
– হ্যাঁ বলুন। মিষ্টিবুড়ি ঠিক আছে তো।
– মিষ্টিবুড়ি? (ভ্রু কুঁচকে)
– আরু ঠিক আছে তো।

– হুম। ও বায়না করছিল, তাই আপনাকে বাধ্য হয়েই কল করলাম। কথা বলুন আপনি ওর‌সাথে।
অতসী আরুর সাথে কলে কথা বলতে থাকে। আদৃত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আরুর দিকে, মেয়েটাকে অতসীর সাথে থাকলে যতটা খুশি দেখা যায়,অন্য কোনো সময়ে সেটা দেখা যায় না। অতসীর মাঝে কি আছে, যেটা আরুকে এতটা খুশি করে দেয়?
আরু কথা বলা শেষ করে আদৃতের কানে ফোনটা ধরিয়ে দেয়। অতসী নিজের মতো বকবক করে যাচ্ছে, আদৃতের কলটা কাটতে ইচ্ছা করল না, চুপচাপ শুনতে থাকল। ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে অতসী আরু আরু বলে ডেকে উঠল…

– হ্যালো আরু আছো!
– হ্যাঁ বলুন।
– আপনি,আরু কোথায়?
– আরু ঘুমিয়ে পড়েছে।
– ওহ। তাহলে গুড নাইট।
– গুড নাইট।

অতসী কলটা কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আদৃত একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় গিয়ে বসল।
– কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে, কেন একা করে দিলে। কথা ছিল তো, দুজন দুজনের সাথে সারাজীবন থাকবে, আমাদের রাজকুমারীকে নিয়ে সুখে থাকব। কিন্তু তার কোনো কিছুই তো হলো না,মাঝপথে হাতটা ছেড়ে দিলে তুমি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল আদৃত। পূর্নিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে অতীতের পাতাতে চোখ বোলালো…
অতীত….

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৬

বিঃ দ্রঃ… আদৃতের অতীতের সাথে অতসীর জীবনের কিছু অধ্যায় অতপ্রতভাবে জড়িত, তাই কেউ অতীতের অধ্যায়টা মিস করবেন না। অতসীর ফ্যামিলি নিয়ে যা যা কনফিউশন আছে, সবগুলো আসতে আসতে ক্লিয়ার করব। সবাই একটু অপেক্ষা করুন🥰
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।‌সকলে বলবেন কেমন হয়েছে। গঠনমূলক মন্তব্য করুন সবাই।

প্রয়োজনে প্রিয়জন পর্ব ৮