প্রেম নেশা পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯

প্রেম নেশা পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯
শান্তনা আক্তার

ড্রইংরুমে বসে রথি খবরের কাগজ পড়ছে।শুধু পাতা উল্টে যাচ্ছে পড়ার কোনো মুডই নেই তার।
ধুর গতকালকের পর থেকে শান্তনা বা মেঘ কাউকেই দেখিনি।বুঝতেই পারছি না ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছি কি হয়নি।এনিওয়ে,,আজ শান্তনার উঠতে দেড়ি হলো কেন?অন্যদিন তো সবার আগে উঠে ফুলির সাথে ব্রেকফাস্ট বানাতে লেগে পড়ে।আজ কি এমন হলো?হয়তো মন খারাপ তাই নিচে আসেনি।যাই হোক আরেকটু ওয়েট করি,যদি ওদের কাউকে দেখতে পাই।এদিকে এই টিনা মেসেজের পর মেসেজ,ফোনের ফোন করে যাচ্ছে শান্তনা মেঘের হালচাল জানার জন্য।আরে বাবা আমি নিজেই তো জানি না।ওকে কি কচু বলবো।উফ মাথাটা ফ্রেশ করতে হবে।
এই ফুলি এক গ্লাস লেবুর শরবত দিয়ে যাতো।

জ্বি নিয়া আইতাছি বড় ভাবি(রান্নাঘর থেকে বলল)
এই নেন আপনের লেবুর শরবত(গ্লাসটা রথির দিকে এগিয়ে দিয়ে)।আমি তাইলে যাই।

আচ্ছা,শোন।(শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে)

জ্বি ভাবি।

তুইকি শান্তনার রুমে গিয়েছিলি সকালে?

ছুডো ভাবির রুমে?

হুম,,গিয়েছিলি কি?

মেঘ ভায়ের কফি দিতে যাইছিলাম তো।

ওহ গ্রেট,,তো কি দেখলি?

কেমনে যে কই আমি,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কেন কি এমন দেখেছো তুমি যে বলতে পারছো না?
(নিশ্চিয়ই তুমুল ঝগড়া হয়েছে হি হি হি) মনে মনে।

আমি দেখলাম মেঘ ভায়ে ছুডো ভাবির চুল আচড়ায় দিতা ছিল অনেক ভালবাইসা।
কথাটা শুনে নিমিষেই রথির মুখ চুপসে গেল।

মানে ওরা ঝামেলা করছিল না?

না ক্যান করবো?

ঝগড়া,,রাগারাগি কিছুই না?

না হেইগুলা ক্যা করবো?তারা তো কতো সুন্দার রুমেটিক মডে ছিল।

ইউ মিন রোমান্টিক মুড?

ওই একটা হইলেই হইলো।কিন্তু আপনে কন তারা ঝগড়া ক্যান করবো?

আমি তো ফান করছিলাম তোর সাথে।ওরা ঝগড়া কেনই বা করবে বল?

একদমেই করবো না।তারা তো কতো ভালা কপাল।

কপাল নয় ফুলি ওটা কাপল।

হেইডাই।যাই হোউক না ক্যান তাগো যেন কারো কুনজর না লাগে সেই দুয়াই করি আমি।আর যদি লাগে তাগো ঝাঁড়ু দিয়া পিডাইয়া দেশ ছাড়া করমু এই কইয়া দিলাম।

আচ্ছা ঠিক আছে তাই করো।এখন তোমার কাজ নেই কি?

কাজ নাই মানে?মেলা কাজ পইড়া আছে।বলে দোঁড় লাগায় ফুলি।

ফুলি কি বলে গেল?মেঘ শান্তনার চুল আচড়ে দিচ্ছিল!!কিন্তু কিভাবে কি বুঝলাম না আমি।

তুমি বুঝতেও পারবে না কখনো।কারণ আমার আর শান্তনার ভালবাসা ঠুনকো নয় যে কারো বানানো ফাদে পা রেখে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।
মেঘের কথা শুনে রথি ভয় ভয় চোখে পিছনে ফেরে।মেঘকে দেখে রথির চোখ কপাল ছুই ছুই অবস্থা।

ম ম ম মেঘ তু তুমি?

আমি সব বুঝে গেছি তোমার চাল।তুমি যত যাই করোনা কেন শান্তনাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।

কি বলছো কি মেঘ?আমি কেন তোমাকে আর শান্তনাকে আলাদা করতে যাব?

সেটা তুমিই ভালো জানো।এখন আমার কথা হচ্ছে ভালোই ভালোই আমার আর শান্তনার মাঝে ফাটল ধরানোর যেই নোংরা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেগুলো ত্যাগ করো।নইলে আমি ভুলে যাব তুমি সামির ভাইয়ার ওয়াইফ।এসব কথার মাঝে শান্তনা চলে আসে।মেঘ শান্তনাকে রথির সামনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,,,,
মৃত্যু ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।কথাটা মাথায় রেখো।

আপু তুই এমনটা করবি ভাবতে পারিনি আমি।কি ক্ষতি করেছি তোর,যার জন্য আমার সংসার ভাঙতে চাস তুই?
রথি কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না।ওর মুখে তালা লেগে গেছে।
কিছু বলছিস না কেন আপু?অবশ্য কি বা বলবি,,তোর তো বলার কিছুই নেই।রথি মাথা নিচু করে আছে লজ্জায়।পারছে না দৌঁড়ে পালাতে।

কি তোমরা এতো সকাল সকাল রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?(আজমল চৌধুরী)

এইতো ড্যাড শান্তনার সিট দেখতে যাচ্ছিলাম কাল থেকে তো ওর ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শুরু হবে তাই।

সেকি না খেয়েই যাবে নাকি?(সাহেরা)

আমরা বাইরে থেকে খেয়ে নেব চিন্তা করোনা।

তাহলে ঠিক আছে।
ওদের কথার মাঝে রথি পালানোর সুযোগ পায়।গুটিগুটি পায় সেখান থেকে রাফুচক্কর হয়ে পড়ে।নিজের রুমে এসে মস্ত এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রথি।
যাক বাবা বাঁচা গেল।আমি তো ভেবেছিলাম আজ শান্তনা আর মেঘ মিলে আমার চাষনি বের করেই ছাড়বে।কিভাবে দুজন মিলে ধরেছিল আমাকে ভাবা যায়!!তবে একটা জিনিস আমার একদম পছন্দ হয়নি আর সেটা হলো আমাকে অপমান করা।মেঘ আমাকে বারবার অপমান করেছে আমি কিছুই বলিনি শান্তনার কথা ভেবে।কিন্তু আজ সেই বোনও তার হাসবেন্ডের সাথে মিলে আমাকে অপমান করল?নাহ এখন আর ছাড় দেওয়া যাবেনা কাউকে।আমি ওই মেঘকে চরম শাস্তি দিয়েই ছাড়বো তার জন্য যদি নিজের বোনকে রাস্তা থেকে সরাতে হয় তাই করবো তাও মেঘকে দেখে নেব।এর মাঝে টিনার ফোন আসে।ফোন রিসিভ করে কানে ধরে রথি।
হ্যাঁ বলো?

ফোনের ওপাশ থেকে,,,,
ওখানকার খবর কি(টিনা)

ভালো না।আমি ধরা পড়ে গিয়েছি।

তার মানে প্লান ফ্লপ?

তুমি যেই ফালতু প্লান বানিয়েছো ফ্লপ তো হওয়ারই ছিল।

কি বলছো হুম?টিনার প্লান কখনো ফালতু হয়না ওকে?তুমি ঠিক ভাবে কাজ করতে পারোনি তাই বলো।

আমি ঠিক ভাবেই করেছিলাম কিন্তু মেঘ খুব চালাক তাই প্লানটা কাজে দিলনা।

তাহলে এবার প্লান বি ফলো করতে হবে।

রাখো তোমার প্লান।

কি বললে তুমি?

ঠিকই বলেছি তুমি যেই প্লান বানাও ওসবে কিছুই হবে না উল্টো আমাকে বাড়ি ছাড়া হতে হবে।এর থেকে বরং আমার প্লান শোনো।

কি প্লান?
তারপর রথি তার প্লান টিনাকে বলে।
প্লান শুনে টিনা বলে ওঠে,,,

বাহ রথি তোমার তো দেখছি মাস্টারমাইন্ড।এবার মনে হচ্ছে কাজটা হয়েই যাবে।

হুম কাজটাও হবে আর আমাকে কেউ সন্দেহও করবে না।একেই বলে সাপও মরবে,,লাঠিও ভাঙবে না।বলা মাত্র দুজনে অট্ট হাসিতে মেতে ওঠে।

খুব দেড়ি হয়ে গেল বাসায় আসতে।(মেঘ)

হুম,,,দেড়ি তো হওয়ারই ছিল।তুমি তোমার ফ্রেন্ডের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছিলে যে।(মুখ বাকিয়ে বলল শান্তনা)

অনেক দিন পর দেখা হলো,একটু তো কথা বলতেই হতো তাইনা?তাছাড়া তুমি যখন তোমার ফ্রেন্ডদের পেয়ে আমায় ভুলে যাও তখন?

হয়েছে, হয়েছে এখন আমাকেই দোষারোপ করবে জানি আমি।

দোষারোপ করবো কেন,আমি তো কথার কথা বললাম।

এখন এসব কথা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হতে যাও। কথা পেচানো ছাড়া আর কিছুই পারেনা দেখি বলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় শান্তনা।

যাহ বাবা আমি আবার কখন কথা পেচালাম?
মেয়েরা যে কি পরিমাণে স্বামীর ধুলাই করতে পারে তা শান্তনাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।মেঘের কথার মাঝে দরজায় নক পড়ে।মেঘ দরজা খুলতেই রথিকে দেখতে পায়।রথিকে দেখেই মেঘ তার কপাল ঘুচিয়ে নেয়।আর বলে,,

কি চাই এখানে?

এভাবে বলছো কেন মেঘ?শত হলেও আমি তোমার ভাবি হই।যদিও একসময় লাভার ছিলাম।কথাটা শোনা মাত্র মেঘ তার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।

সেটা আমার ভুল ছিল।এখন কি বলতে এসেছেন ভাবি?

ভুল বলো আর যাই বলো ভালো তো একদিন বেসেছিলে আমায়।

এতো গুলো বছর পর এসব ফালতু কথা না তুললেই খুশি হবো।এখন কি করতে এসেছেন তাই বলেন আর চলে যান।

বলছি আগে ভেতরে যেতে দাও।

এখান থেকেই বলেন।

আসলে শান্তনার সাথে আমার কথা ছিল।ও কোথায়?

ওয়াশরুমে গিয়েছে মাত্র তাই পরে আসবেন এখন যান।

এমন করছো কেন মেঘ?একটু বসি আমি তোতোক্ষনে তো শান্তনার হয়ে যাবে।
মেঘ আর কথা না বাড়িয়ে সরে আসে সেখান থেকে।আর রথি রুমের ভেতর প্রবেশ করে।
মেঘ গিয়ে ফোন টিপা শুরু করে।রথি গিয়ে খাটির উপর বসে পড়ে।মেঘের শরীর জ্বলে যাচ্ছে রথিকে তার রুমে দেখে।কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না।

আচ্ছা মেঘ,,তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

না,,, কারণ আমি আপনার কথার উত্তর দিতে প্রস্তুত নই।(বিরক্তি নিয়ে বলল মেঘ)
রথি তার রাগটাকে কনট্রোল করে বলে,,,

তুমি উত্তর না দিলেও আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে।প্লিজ মেঘ না করোনা।তুমি কি চাও কথাটা না জেনে আমি মরে যাই,,আর আমার আত্মা ঘুরে বেড়াক।

কি বলবে বলো তাড়াতাড়ি।

তুমি আমাকে মিথ্যা কেন বলেছিলে যে তুমি গরিব ঘরের ছেলে সামান্য একজন কর্মচারী।

আমি খুব অবাক হলাম আপনার প্রশ্নে।

অবাক হওয়ার কি আছে এতে?

অবাক হবো না তো কি হাসবো? এতো গুলো বছর হয়ে গেল।আর আপনি আজ এই প্রশ্ন টা করলেন?

আগে এই প্রশ্ন টা করিনি কারণ তুমি আমাকে দেখলে সহ্যই করতে পারতে না।রেগে যেতে।তাই ভয়ে আর প্রশ্নটা করা হয়নি।আজ একা পেয়েছি তোমায় তাই প্রশ্নটা মাথায় চলে আসে এজন্য করে ফেলি।

আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব?

প্লিজ মেঘ বলো আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।না জেনে মারা গেলে আমি শান্তি পাবোনা যে।হ্যাঁ আমি ভুল করেছি কিন্তু তাই বলে আমি এটা জানতে পারবো না।এটা তো ঠিক নয়।তাইনা?

আমার এই বিষয় নিয়ে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।আমি সব কিছু একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে গিয়েছি।

কিন্তু আমি যে তোমার প্রথম প্রেম মেঘ।আর কেউ চাইলেও তার প্রথম প্রেমকে ভুলতে পারেনা।

তুমি হয়তো ঠিক বলেছো।কিন্তু তোমার প্রতি আমার কোনো প্রেম, ভালবাসা, টান ছিল না।তাইতো তোমাকে ভুলতে পেরেছি।সে সুত্রে আমি বলতে পারি,তুমি আমার প্রথম প্রেম নও।প্রথম প্রেম আমার তখন হয়েছিল যখন আমি শান্তনাকে বিয়ে করে আমার জীবনের সাথে জড়িয়েছিলাম।ওর মাধ্যমেই আমার প্রথম প্রেমের যাত্রা শুরু হয়।আর ওকে দিয়েই সমাপ্তি হবে।ওই আমার প্রথম আর শেষ প্রেম।এরপর না কেউ আসবে আর না আমি আসতে দেব।

কিন্তু আমার জন্য তোমার যে ফিলিংস ছিল সেটা?আমার সাথে রাত জেগে চ্যাট করা,আমার সাথে কথা না বললে তোমার সেই অস্থিরতা,আমাকে না দেখলে তোমার সেই হাহাকার সেগুলো তাহলে কি ছিল?

আবেগ।জাস্ট আবেগ ছিল।আমি ভাবতাম তোমাকে আমি ভালবাসি কিন্তু তোমার কাজে কর্মে আমার মনোভাব বদলে যায়।তখন আমি বুঝতে পারি আমি তো তোমাকে কখনো ভালোই বাসিনি।তাইতো তুমি যখন আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে তখন আমি একটুও কষ্ট পাইনি।জাস্ট ঘৃনা হয়েছিল তোমার প্রতি।তবে তোমাকে বিয়ে করার আগেই তোমার আসল রুপ বেরিয়ে আসে বলে খুব খুশিও হয়েছিলাম।আমি তো জাস্ট ফান করে বলেছিলাম যে আমি গরিব।তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে সত্যিটা বলিনি ঠিকই তবে পরে আমি বুঝতে পারি ফান করে হোক আর যাই করেই হোকনা কেন।আমি যা করেছি বেস্ট করেছি।নাহলে আজ এতটা হ্যাপি হতে পারতাম না আমি।

মেঘ আমি ভুল করেছিলাম যা করেছিলাম।আমি তো তোমাকেই ভালবাসতাম।কিন্তু কখন যে সামির আমাকে প্রপোজ করে আর আমি রাজি হয়ে যাই বুঝতেই পারিনি।আসলে সামির খুব রিকুয়েষ্ট করে বলে ওর সাথে রিলেশন করতে।তাইতো বাধ্য হয়ে যাই।নাহলে আমি তোমাকে কতটা ভালবাসতাম তুমি তো তা জানোই।

ভাইয়া রিকুয়েষ্ট করেছিল বলে, নাকি ভাইয়াকে বড় লোকের ছেলে ভেবে রিলেশন করতে রাজি হয়েছিলে।কোনটা?আর ভালবাসা? সেটা তোমার মতো মেয়ের মুখে মানায় না।ওকে?তবে আমার আফসোস হয় ভাইয়ার জন্য।ও যদি জানতে পারে এইসব কিছু তাহলে ওর মনটা ভেঙে গুড়িয়ে যাবে।কিন্তু আমি সেটা চাইনা।তুমি আর যাই করো না কেন ভাইয়াকে কষ্ট দিবে না বলে।নইলে তোমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো বলে দিলাম।

আমি কি করবো বলো মেঘ?তোমার ভাইয়ার সাথে যদি আমার সেদিন সিটি রেস্টুরেন্টে দেখা না হতো তাহলে এতো কিছু হতোই না।না ও আমাকে প্রপোজ করতো আর না আমি রাজি হতাম। না তোমার বাবা আমার বাবাকে সামির আর আমার বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতেন,আর না আমি সামিরের বউ হতাম।জানো তো আমি সামিরকে বিয়ে করতে চাইনি তবে বাবার জন্য বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম।জানোই তো আমার বাবা তোমার বাবাকে কতটা শ্রদ্ধা করে।

ছিহ,,এখন নিজের বাবাকে কালপিঠ বানাচ্ছো?আর কতো নিচে নামবে হ্যাঁ? আর কতো?কালকের কান্ডটা ঘটিয়ে এখন কোন মুখে কথা বলতে এসেছো?তাও আবার,,,

আপু তুই এখানে?
শান্তনাকে দেখে চুপ করে যায় মেঘ।

এসেছিলাম তোর সিট খুঁজে পেয়েছিস কিনা সেটা জানতে।তুইতো ওয়াশরুমে ছিলি তাই আমার দেবরটার সাথে একটু গল্প করছিলাম।
রথির কথায় শান্তনা মেঘের দিকে এক ঝলক চেয়ে বলে,,,

খুব ভালো কথা।আর আমরা যাওয়া মাত্রই সিট বের করে ফেলি তবে মেঘের একটা ফ্রেন্ডের সাথে ওর দেখা হয়ে যায়।ওনার সাথে গল্প করতে গিয়েই আমাদের ফিরতে লেট হয়ে যায়।

মেঘ তো এমনই।ফ্রেন্ড পেলে বউ গিএফ সব ভুলে যায়।তাইনা মেঘ?রথি দেখল মেঘ খুব রেগে গেছে তার কথায়।মেঘ কিছু বলবে তার আগে শান্তনা বলে ওঠে,,

এটা ভুল বললে আপু।মেঘ আর যাই করুক না কেন তার স্ত্রীকে মানে আমাকে কখনো ভুলবে না।শান্তনার কথায় মেঘের রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে যায় এবং মুখে হালকা করে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
আর তুমি কি এভাভে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ফ্রেশ হতে যাবে?(মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলল)

এইতো যাচ্ছি সোনা বউ আমার।বলে মেঘ ওয়াশরুম চলে যায়।
রথি তো এদিকে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে।

আচ্ছা শান্তনা আমি গেলাম।পরে কথা হবে বলে রথি বেরিয়ে আসে।
এতো বিশ্বাস তোর মেঘের প্রতি!কিন্তু বেশিদিন সেটা আর টিকবে না।দুদিন পর ঠিকই ভুল বুঝবি তুই মেঘকে।তার জন্য যা যা করতে হয় তাই করবো।ল
‌‌‌‌~~~~~~~~~~~~~~~১ মাস পর,,,,,,,
দেখতে দেখতে শান্তনার এক্সাম শেষ হয়ে যায়।মেঘ শান্তনাকে খুব সাপোর্ট করেছে এক্সামের কটা দিন।অবশ্য বরাবরই মেঘ শান্তনাকে সব বিষয়ে সাপোর্ট করে এসেছে।তবে ইদানিং একটু বেশিই কেয়ার করে কারণ শান্তনা আর একা নয় ওর মধ্যে নতুন প্রাণ বেড়ে উঠছে।রথি টিনা খবরটা শুনে খুবই নারাজ।ওদের প্রতিটা প্লান মেঘ শান্তনা ভেস্তে দিয়েছে।একে প্লানের পর প্লান ফ্লপ তার উপর শান্তনার কনসিভ করা।সব মিলিয়ে টিনা আর রথি খুব ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে।রথির ভয় সব কিছুর মালিক এখন মেঘের সন্তান হবে।আর টিনা মেঘেকে পাওয়া থেকে আরও দশ কদম পিছিয়ে গিয়েছে।দুজনই যার যার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত।এবার তারা শেষ খেলা খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে বাড়িতে উৎসব চলছে সামিরা আর সাহিলের বিয়ে নিয়ে।
খুব ধুমধাম করে বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে।এখন সামিরার বিদায়ের সময়,,,প্রথমে সামিরা সাহেরা খাতুনের কাছে যায়।
মাম্মি ছোট বেলা থেকে তুমি আমার সব ইচ্ছা পূরণ করেছো।কখনো একটা চড় অব্দি মারোনি আমাকে।তোমার মতো মা আর কয়জনের ভাগ্যে বলো।তুমি জন্মধারিনী মা না হয়েও তার থেকে বেশি আদর দিয়েছো আমায়।

নারে মা আমিই তোমার আসল মা বলে সামিরাকে জড়িয়ে ধরে।
তারপর আজমল চৌধুরীর কাছে যায়,,,

পাপা তুমি কাঁদবে না একটুও।আমি যখন কাঁদতাম তুমি বলতে,,কেঁদো না মামনি।তুমি কাঁদলে যে আমার কলিজা ছিড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।আমার চোখের পানি দেখলে তুমি বিচলিত হয়ে যেতে।ঠিক নিজের বাবার মতোই আগলে রেখেছো আমাকে।আজ তোমাদের ছেড়ে আমি চলে যাচ্ছি।বলে আজমল চৌধুরীর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে সামিরা।
এবার মেঘ আর সামিরের কাছে যায় সামিরা,

কিরে ভাইয়ারা,,তোরা কেন কাঁদছিস?আমাকে খুব তো বলতিস বিদায় করে দিবি পরের ঘরে এখন তো তোদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।এবার হাসিমুখে বিদায় দে আমায়।তারপর ভাই বোন একে অপরকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদে।
মেঘ সামিরের থেকে বিদায় নিয়ে শান্তনা আর রথির কাছে যায়।প্রথমেই শান্তনাকে জাপটে ধরে সামিরা।
tnx tnx tnx a lot ছোট ভাবি।তুমি না থাকলে আজ আমি সাহিলকে পেতামই না।

আর কতো বলবে tnx?অনেক বলেছো আর একবার ও যদি বলোনা তাহলে তোমার সাথে আর কথাই বলবো না দেখো।

সরি, কানে ধরছি আর বলবো না tnx..তুমি চাইলে কানে ধরে ওঠবস ও করতে পারবো।

থাক ননদিনী সাহেবা।তোমাকে আর ওঠবস করতে হবে না।
এবার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে স্বামীকে ওঠবস করিয়ো। কেমন? সামিরার কানে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল শান্তনা।

ভাবি তুমিও না।

কি গো সামিরা তুমি এমন কেন বলোতো?আমি তোমার আপন ভাইয়ার স্ত্রী আর তুমি আমাকে রেখে মেঘের বউয়ের সাথেই কথা বলে যাচ্ছো।সেখানে উপস্থিত সবাই রথির কথায় ক্ষেপে ওঠে।সবচেয়ে বেশি সামিরা রেগে যায়।

আমি সবসময় মেঘ ভাইয়াকে আমার আপন ভাইয়াই ভেবে এসেছি।মেঘ ভাইয়া সামির ভাইয়ার থেকেও আমাকে বেশি আদর দিয়েছে।তোমার সাহস কি করে হয় এমন বাজে কথা উচ্চারণ করার?নেক্সট টাইম যেন এই ভুল না করো বলে দিলাম।সামির ও রথিকে আচ্ছা মতো বকে দেয়।রথি ওদের দুজনের কথায় রাগ করে বাড়ির ভেতর চলে যায়।

তোমরা কি করলে সামির আর সামিরা? দেখেছো বড় বউমা রাগ হয়ে গেছে।(আজমল)

করুক রাগ।ওর রাগে আমাদের কিছু আসে যায়না।ওর ভেবে কথাটা বলা উচিত ছিল(সামির)

থাক থামো তোমরা। আমার মেয়েটাকে একটু হাসি মুখে বিদায় দাও এবার সবাই(সাহেরা)
সবাই না চাইতেও হাসিমুখে সামিরাকে গাড়িতে তুলে দেয়।চলে যায় সামিরা নতুন এক পরিবারে।কিছুক্ষণ পর সামিরাদের গাড়িটা হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যায়।তারপর সবাই যার যার রুমে চলে যায়।
আজ থেকে আমার বান্ধবী উর্ফ ননদিনী টা পরের ঘরে চলে গেল।এখন আমি একা।

তুমি একা কি করে হলে?আমি তো আছি তাইনা পিচ্চি?

তুমি তো অফিসেই থাকো বেশিরভাগ সময়।

তো কি হয়েছে এখন থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসবো বাসায়।এবার তো একা থাকবে না আমার পিচ্চি বউটা।

ও হ্যালো,আমি কদিন পর পিচ্চির মা হবো এখন আমাকে পিচ্চি বলা ছেড়ে দাও ওকে।

তুমি বুড়ি হয়ে গেলেও আমার সেই পিচ্চিটাই রয়ে যাবে।বুঝেছো?

তোমাকে এতো দিন যেহেতু বোঝাতে পারিনি আজও পারলাম না।তবে একটা জিনিস খুব খারাপ হয়েছে জানো?

কি খারাপ হয়েছে শুনি?

এইযে আমার সব ফ্রেন্ডদের আমার পরে বিয়ে হয়েও আমার আগে বেবি হয়েছে।কোহিনুরের একটা মেয়ে,পিউয়ের একটা ছেলে,সুমাইয়ার একটা ছেলে একটা মেয়ে,নুশরাতেরও একটা ছেলে। একমনকি মিশমির ও দু দুটো মেয়ে।সবার ছেলে মেয়ে আরও দু তিন বছর আগে হয়েছে।আর আমার বেবি হতে এখনো কতো দেড়ি আছে।মন খারাপ করে বলল শান্তনা।

আমার কি দোষ বলো?তুমি যদি আগেই আমার কাছে ধরা দিতে তাহলে এতোদিনে আমরা 2 হালি বাচ্চার অভিভাবক হয়ে যেতাম অলরেডি।
শেষে আমাকেই হার মানতে হয়েছে।এখনতো তাও বাবা হওয়ার সুযোগ পেলাম, নাহলে তোমার আশায় বসে থাকলে বুড়ো হয়ে যেতাম তাও বাবা ডাক শুনতে পেতাম না।

কথাটা ঠিকই বলেছো।কিন্তু 2 হালি অভিভাবক হতাম মানে ৮টা বাচ্চার বাবা মা হতাম আমরা!অবাক হয়ে বলল শান্তনা।

ঠিক তাইতো কম বলে ফেলেছি।দুই হালি নয় চার হালি বাচ্চার মুখ দেখে ফেলতাম আমরা।

হায় আল্লাহ,,,আমি লাফ দিচ্চি আমাকে তুলে নেও।কি বলে এই লোক।ওই তোমার মাথা গোল্লায় গেছে নাকি?

না আমার সাথেই আছে।দেখতে পারছো না বুঝি?

ধ্যাত বলে চলেই যাচ্ছিল মেঘ শান্তনাকে ধরে কোলে নিয়ে নেয়।শান্তনাকে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়।তারপর শাড়ির আঁচল তুলে পেটে অজস্র চুমু দিতে থাকে মেঘ।মেঘের প্রতিটি ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে শান্তনা।আরও একবার তলিয়ে যায় তারা প্রেম নেশার সাগরে।

বিশাল এক গোডাউনের মধ্যে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছে শান্তনাকে।সাথে মুখে চোখে কালো পট্টি দেওয়া।ফলে শান্তনা না দেখতে পারছে আর না কিছু বলতে পারছে।জাস্ট ছটফট করছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য।কেউ একজন এসে শান্তনার চোখের পট্টিটা খুলে দেয়।শান্তনার সামনে দুজন দাঁড়িয়ে ছিল।টিনা আর রথি। টিনাকে না চিনতে পারলেও রথিকে দেখে শান্তনার রুহু কেঁপে ওঠে।তবে সেটা ভয়ে নয়,আশ্চর্যে।আপন বোন হয়ে এরকম কাজ কেনো করলো এটা ভেবে তার মাথা কাজ করছে না।শান্তনা কিছু বলতেও পারছে না মুখ বাঁধা বলে।তবে মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ আসছে।সেটা দেখে টিনা বলে,,
এই তোরা ওর মুখের পট্টিটা খুলে দে।বেচারি কি যেন বলতে চাচ্ছে।
তারপর সেখান থেকে একটা লোক এসে শান্তনার মুখের বাঁধন খুলে দেয়।পট্টিটা খোলা মাত্র শান্তনা প্রথমেই রথির দিকে তার প্রশ্নটা ছুড়ে দেয়।

আপু তুই আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছিস?আর আমাকে ওরা বেঁধে কেন রেখেছে?আমার এভাবে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।ওদের বল না আমার হাত পায়ের রশি খুলে দিতে।
শান্তনার কথায় রথি উচ্চস্বরে হেসে দেয় সাথে টিনাও।শান্তনা ওদের হাসার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।রথি হাসা থামিয়ে শান্তনার কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়।

কষ্ট হচ্ছে খুব?

হুম,,খুলে দাওনা আপু।

খুলে দেওয়ার জন্য তোকে এখানে নিয়ে এসেছি বুঝি?তাই যদি ভেবে থাকিস,তাহলে ভুল ভাবছিস।তোকে তো কঠিন শাস্তি দেওয়ার জন্য এখানে আনা।

কঠিন শাস্তি?কিন্তু কেন আপু?আমি কি করেছি?

কেন টা আমি বলি নাহয়।(টিনা বলল)

তুমি কে?

আমি টিনা।মেঘের হবু বউ বলে ভয়ংকর হাসি দেয়।

দেখো ঠিক ভাবে কথা বলবে।মেঘের হবু বউ মানে কি?(খুব রেগে বলল শান্তনা)

মানে টা হলো,তুমি মরে গেলে আমি ইতো মেঘের বউ হবো তাই বললাম মেঘের হবু বউ।

কি বলছো এসব তুমি?আমি মেঘের বউ আর আমিই থাকবো যতোদিন বেঁচে থাকবো। আর মেঘ কখনোই তোমাকে বিয়ে করবে না।

তার জন্যই তো তোমাকে মেরে ফেলবো।তারপর মেঘ আমার হবে।

তোমার ভুল ধরনা তোমার কাছেই রাখো কারণ মেঘ শুধু আমাকে ভালবাসে।শুধুই আমাকে।

আর আমি যে মেঘকে ভালবাসি সেটা?মেঘকে পাওয়ার জন্য কতো কি করলাম তোমার বোনের সাথে মিলে সেটা?এসবের কি কোনো দাম নেই।

মানে তোমার কথায় আপু,,,,কথাটা শেষ করতে না দিয়ে রথি বলে ওঠে,,,

হ্যাঁ আমি এতোদিন যা করেছি টিনার কথাতেই করেছি। তোকে আর মেঘকে আলাদা করতে করেছি।কিন্তু,,,

কিন্তু পারলে না তাইতো আপু?তুমি পারলে না কারণটা তুমি খুব ভালো করেই জানো।তুমি জানো মেঘ আর আমার ভালবাসা খুব মজবুত।যা তোমাদের মতো মানুষ ভাঙতে পারবে না।তোমদের কাছে সেই শক্তি নেই যে আমাকে আর মেঘকে আলাদা করতে পারবে।

তাইতো তোকে মেরে ফেলবো আমরা।

কিন্তু আমাকে মেরে তোমার কি লাভ?উনি নাহয়(টিনাকে দেখিয়ে) মেঘকে পেতে আমাকে মারতে চায়।কিন্তু তুমি আমাকে কেন মারতে চাও?

মেঘের সব কিছু পেতে।তুই মরে গেলে টিনা পাবে মেঘকে আর আমি মেঘের সম্পত্তিকে।

কিহ! তুমি সম্পত্তির জন্য নিজের বোনকে মেরে ফেলতে চাও?

হ্যাঁ চাই।কারণ তুই থাকলে দুদিন পর তোর সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে আর সে হবে সব কিছুর উত্তরাধিকারী।তারপর আমার সন্তান কি পাবে?কাঁচকলা..?কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তা কখনোই হতে দেব না।

সম্পত্তির জন্য মায়ের পেটের বোনকে মেরে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করছো না।এতোটা নিচে কিভাবে নামলে তুমি?তুমি যদি মুখ ফুটে বলতে তাহলে আমি মেঘকে বলে তোমার নামে সব লিখিয়ে দিতাম।

থাক লাগবে না তোর দয়া।আমি আমার অধিকার নিজেই আদায় করতে জানি।আর সেটা তখনই সম্ভব হবে,যখন তুই মরবি।

ঠিক আছে আমাকে মেরে ফেলো কিন্তু তার আগে আমার বাবা মা আর মেঘের সাথে একটাবার কথা বলতে দাও।আব্বু আম্মুর কাছ থেকে শেষ বিদায় নেব আর মেঘের কাছে ক্ষমা চাইবো।প্লিজ না করোনা আপু।মনে করো এটা আমার শেষ ইচ্ছা।

মেঘের কাছে কেন ক্ষমা চাইবি?

ওর বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারবো না বলে।

ঠিক আছে কথা বলিস কিন্তু ফোনটা আমার হাতে থাকবে।স্পিকারে দিয়ে দেব তুই কথা বলবি।

তাই হবে আপু।এতেই আমার হয়ে যাবে।

কিন্তু আমার যে হবে না।তোমার চালাকির জ্বালে রথি ফাসতে পারলেও আমি না।এই টিনা তোমার ফাদে ভুল করেই পা রাখবে না।

জাস্ট কথাই তো বলবে এতে ফাদের কি আছে টিনা?

তুমি পাগল হলেও আমি না।বুঝেছো রথি?শান্তনা আমাদের নাম বলে দেবে বলে ফোনে কথা বলতে চাইছে।এতটা বোকা কেন তুমি।

রথি কিছুক্ষণ ভেবে বলল,তাইতো।এটাতো ভেবে দেখিনি আমি।

তুমি দেখবেও না।কারণ তোমার মতো বোকা আমি না।

প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো আমি সত্যি বলছি তোমাদের নামে কিছুই বলবো না।

থাক তোকে বিশ্বাস করার কোনোই দরকার নেই আমাদের।আর কাউকে ফোন করারও দরকার নেই। তুই মরবি এটাই শেষ কথা।

আপু তুই আমার বাচ্চাটার কথা ভাব একবার।ও কি দোষ করেছে যার শাস্তি তুই ওকে দিচ্ছিস।

তোর বাচ্চার কথা ভাবলে আমার অনাগত বাচ্চার ফিউচার নষ্ট হয়ে যাবে যে।তাই তোরটার কথা ভেবে আমারটাকে মা হয়ে আমি কষ্ট দিতে পারবো না।

আহ রথি ওর সাথে এতো কথা বলার কি আছে বলোতো?এখন কথা না বাড়িয়ে সোজা গুলি করে দেই ওর বুক বরাবর।

না টিনা আজ নয়।

আজ নয় মানে?

মানেটা হলো কাল মারবো ওকে।আজ আমাকে বাসায় যেতে হবে।নইলে সবাই আমাকে সন্দেহ করবে।

কথাটা তো ঠিক বলেছো।তাহলে আজ শান্তনাকে কোথায় রাখবো?

এখানেই থাকুক।নিজের শেষ সময়টা এখানে বসেই গুনুক নাহয়।

ঠিক আছে।তাই হোক।ওই শোন তোরা।
টিনার ডাকে সেখানে থাকা কজন গুন্ডা সামনে এগিয়ে আসে।

জ্বি টিনা ম্যাম,,

শান্তনাকে দেখে রাখবি পালাতে যেন না পারে।

ওকে ম্যাম(একসাথে বলে ওঠে সবাই)

আর একটা কথা,ওকে যেন একটা দানাও খেতে না দেওয়া হয়।এমনকি এক ফোটা পানিও না।কথাটা যেন মাথায় থাকে।

ওকে ম্যাম।
টিনা আর রথি চলে যাওয়ার পর গুন্ডা গুলো শান্তনার মুখে পট্টি বেঁধে দেয়।
চোখ দিয়ে পানি ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই শান্তনার।আজ খুব অসহায় লাগছে নিজেকে তার।বারবার বাবা মা আর মেঘের মুখটা ভেসে উঠছে ওর চোখের সামনে।পারছে না ছুটে গিয়ে মেঘের গলা জড়িয়ে ধরতে।না পারছে চিৎকার দিয়ে মেঘকে ডাকতে।কারণ ওর চাপা আর্তনাত যে মেঘ অব্দি পৌঁছাবে না।
এদিকে মেঘ পুরো পাগল হয়ে গেছে শান্তনাকে বাসায় না পেয়ে।মেঘ কেন, বাড়ির সবাই আতংকে পরে গেছে।শান্তনাকে পাওয়া যাচ্ছে না খবরটা শুনে জিল্লুর রহমান আর মিলি বেগম ও ছোট ভাই তামিমও চলে এসেছেন মেঘদের বাড়িতে।শান্তনার মা আর বাবা খুব কান্না করছেন মেয়ের জন্য।আজমল আর সাহেরা তাদের বুঝাতে গিয়ে নিজেরাই কেঁদে দিচ্ছেন।এক কথায় কারো মনেই শান্তি নেই।এক পর্যায়ে মেঘ বলে ওঠে,,,

নাহ এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।আমাদের পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে।

তুই ঠিক বলেছিস মেঘ চল আমিও যাব তোর সাথে।
মেঘ আর সামির বেরোতে নিচ্ছিল তখন রথি বাসায় প্রবেশ করে।খুব স্বাভাবিক ফেস করে বলে,,

তোমরা সবাই একসাথে জড়ো হয়ে কি করছো?আব্বু আম্মু হঠাৎ এখানে আর তোমরা কাঁদছোই বা কেন?কি হয়েছে সবার?সব কিছু ঠিক আছে তো?

কিছু ঠিক নেই রথি।তোমার বোনকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

পাওয়া যাচ্ছে না মানে?

মানে আজ সকাল থেকে শান্তনা উধাও।কেউ ওকে দেখেনি আজ।মেঘ অফিস চলে যাওয়ার পর শান্তনাকে কেউ দেখেনি।

কি বলো কি তুমি?মেঘতো 9 টার সময় অফিসে চলে যায়।আর শান্তনা,,,রথিকে বলতে না দিয়ে মেঘ বলে ওঠে,,,

আমি আজ খুব ভোরেই অফিসে চলে গিয়েছিলাম।তারপর ড্যাড আমাকে ফোন করে বলে শান্তনাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।প্রায় 5 ঘন্টা হয়ে গেছে শান্তনা নিখোঁজ।কথাগুলো খুব দ্রুত বলে মেঘ।
ভাইয়া আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে প্লিজ চল।যত লেট করবো শান্তনার কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।জানি না কিভাবে কোথায় আছে আমার শান্তনা।

কিছু হবে না তোর শান্তনার।বিশ্বাস রাখ আল্লাহর প্রতি।
তারপর মেঘ সামির থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
এদিকে রথি মিথ্যে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

আমি যদি আজ ইন্টারভিউ দিতে না যেতাম তাহলে আমার বোনটাকে দেখে রাখতে পারতাম।কেন যে গেলাম আমি।

না বড় বউমা এতে তোমার কোনো দোষ নেই।আমাদের উচিত ছিল মেয়েটার দিকে খেয়াল রাখার।(সাহেরা)

প্রেম নেশা পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

কিন্তু আমার প্রেগন্যান্ট বোনটা কোথায় কি হালে আছে কে জানে।যদি কোনো বিপদ হয়ে থাকে ওর!আর ওকে যদি কেউ ওকে মেরে ফেলে তখন! কথাটা বলতে দেড়ি তবে মিলি বেগম রথির গালে চড় মারতে দেড়ি করলেন না।

মুখপুড়ি কোথাকার।কি বললি এটা তুই।আমার মেয়েটা মরলে কি তুই খুশি হবি বলে আরও কয়েকটি চড় মারে রথির গালে।জিল্লুর রহমান মিলি বেগমকে আটকাননি ঠিকই কিন্তু সাহেরা খাতুন গিয়ে মিলি বেগমকে রথির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসলেন।

কি করছেন কি বেয়ান?রথিকে মারছেন কেন?

ও কেন বললো আমার শান্তনাকে কেউ,,,,, কথাটা বলতে গিয়েও বললেন না মিলি বেগম।

না মা আম্মুকে ছেড়ে দিন।আমার ভুল হয়েছে আমাকে মারা উচিত।

কিন্তু রথি,তুমি তো ইচ্ছে করে কিছুই বলোনি।মুখ ফোসকে বেরিয়ে গেছে।
রথি অভিমান করে তার রুমে চলে যায় কেঁদে কেঁদে।রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা সব প্রসাধনী এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দেয়।রক্ত চক্ষু নিয়ে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়।

আর কতো শান্তনা।আর কতো তোর জন্য বাবা মার কাছে মার খেতে হবে?আর কতো অপমানিত হতে হবে?ব্যাস আজকের রাতটাই আছে তোর হাতে।তারপর দেখবো তোর জন্য কে আমাকে অপমান করে।কাল আমি হাসবো তোর রক্তে স্নান করবো।আমার এতো দিনের প্রতিশোধ তোর রক্ত দেখে হাফ মিটবে।বাকিটা মেঘের কান্না দেখে কথাটা বলে এক ভয়ংকর হাসিতে ফেটে পড়ে রথি।

প্রেম নেশা শেষ পর্ব