প্রেম নেশা পর্ব ৩১+৩২+৩৩
শান্তনা আক্তার
মেঘ শান্তনা একেবারে রাতের খাবার খেয়ে রাত 11 টায় বাসায় ফেরে।খুব টায়ার্ড থাকায় ফ্রেশ হয়ে এসে এশার নামাজ আদায় করার পরপরই ঘুমিয়ে যায় তারা।
দূর থেকে ভেসে আসা আজানের প্রতিধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙে যায় শান্তনার।চোখ কোচলাতে কোচলাতে বিছানা ত্যাগ করে শান্তনা। সাথে মেঘকেও ডেকে তোলে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য।মেঘ বাধ্য ছেলের মতো উঠে পড়ে।নইলে মেঘ জানে ওর খবর বেখবর করে ফেলবে শান্তনা।মেঘ এখন পুরো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে।পুরোটাই শান্তনার ক্রেডিট।যাই হোক,,,তারা ফজরের নামাজ পড়ে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।শান্তনা পড়তে বসে সামনেই ওর ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা।আর মেঘ অফিসের কাজ করছে অনলাইনে।খুব মনোযোগসহিত শান্তনা আর মেঘ নিজেদের কাজ করছিল।কিন্তু তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটে কারো চিৎকার চেচামেচির শব্দে।
দেখো বউমা আমরা তোমাকে ঠোকাইনি।বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করো।(আজমল চৌধুরী)
।
চুপ করুন আপনি।যত্তসব মিথ্যাবাদীর দল আপনারা।রথি এই কথাটা বলা মাত্র সামির সাথে সাথে রথির গালে সজোড়ে একটা চড় বসিয়ে দেয়।রথির ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে চড় খেয়ে।তারপর তীব্র রাগ নিয়ে সামিরের দিকে তাকায় আর বলে,,,,
তুমি আমাকে মারলে?আমাকে?একে আমাকে মিথ্যা বলা তার উপর আমাকে মারা!তোমার এতো সাহস কি করে হলো সামির?
।
তুমি বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার কেন করেছো?আমার সামনে তুমি বাবা মাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলবে তা আমি মুখ বুজে সহ্য করবো ভেবেছো।নাহ কখনোই না।
।
হা হা হা হা।সামিরের কথা শুনে রথি পাগলের মতো হাসতে শুরু করল যেন সে মজার কিছু শুনেছে।
বাবা,,মা?ওনারা তো তোমার বাবা মাই নয়।তাহলে বাবা মা ডেকে মিথ্যা ঢংং করার কি আছে বুঝতে পারছি না সেটা।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
চুপ করো রথি।
।
কেন চুপ করবো আমি?তোমার বাবা মা মারা গেছে।ওনারা তোমার আসল বাবা মা নয় এটা তুমি কেন লুকিয়েছিলে আমার থেকে?কেন?
।
দেখো বউমা,,সামির আমার নিজের ছেলের মতোই।হয়তো ওকে আর সামিরাকে আমি নিজের পেটে ধরিনি কিন্তু আমার মেঘকে আমি যেভাবে আদর যত্নে বড় করেছি,,ঠিক সেভাবে সামির আর সামিরা কেউ।আর মেঘের বউকে আমি যে চোখে দেখি তোমাকেও তো একই চোখে দেখি তাইনা?(সাহেরা)
।
থাক আপনার নাটক আপনি আপনার কাছেই রাখুন।সব কিছু তো মেঘের নামেই দিয়েছেন।এতোই যখন সামিরকে নিজের ছেলে বলছেন,,ওর নামে তো একটা ছিটেফুটোও লিখে দেননি।আপনাদের সাথে কোনো কথাই বলতে চাইনা আমি ওকে? যত্তসব শয়তান জালিয়াতদের পাল্লায় পড়েছি আমি।
এবার সামিরের রাগ চরম পর্যায়ে চলে আসে।
ও নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলে সামিরাকে মারতে শুরু করে।
আজমল আর সাহেরা ঠেকাতে গিয়েও পারেনি সামিরের শক্তির কাছে।
এই সকাল বেলা এতো চিৎকার চেচামেচি করছে কে পিচ্চি?
।
জানি না। চলো গিয়ে দেখি।
।
হুম,,,,মেঘ শান্তনা ওদের রুম থেকে বের হয়ে বুঝতে পারলো সামির আর রথির রুম থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে।মেঘ শান্তনা তরিঘরি করে ওদের রুমের দিকে গেল।
।
আজ তোকে মেরেই ফেলবো।তুই আমার বাবা মাকে এতো বড় বড় কথা বলেছিস।জানিস ওনারা আমার জন্য কিনা করেছে?আমার মতো একটা এতিম ছেলেকে বাবা মায়ের ভালবাসা দিয়েছে।শুধু আমাকে নয় আমার বোন সামিরাকেউ।পড়াশোনা করিয়েছে।নিজেদের সাথে থাকতে দিয়েছে খেতে দিয়েছে।এর থেকে বড় স্নেহ মায়া মমতা দিয়েছে।এমনকি মেঘের সমপরিমাণ সসম্পত্তির ভাগ অব্দি দিতে চেয়েছিল।কিন্তু আমি নিজেই মানা করে দিয়েছিলাম।কারণ আমার কাছে সম্পত্তির থেকে বড় হচ্ছে সম্পর্ক।আমাকে ওনারা অনেক কিছু দিয়েছেন।বদলে আমি তাদের কিছুই দিতে পারিনি।কিন্তু তুই যেই ব্যবহারটা করলি তার জন্য তুই ক্ষমারও অযোগ্য।একেকটা কথা বলছে আর বেল্ট দিয়ে আঘাত করছে রথির গায়ে।এতো মার খাওয়ার পরও রথির মুখ বন্ধ হচ্ছে না।ও ওর জেদ নিয়েই বসে আছে জায়গা থেকে নড়ছেও না।
সামির বউমাকে ছেড়ে দাও।মরে যাবে তো এভাবে মারলে।(আজমল)
।
না বাবা তুমি সরে যাও নইলে তোমার গায়ে লেগে যাবে। ও তোমাকে আর মাকে অপমান করেছে,, আজ ওকে আমি মেরেই দম নেব। বলে আবার মারতে যাবে কিন্তু তার আগে মেঘ এসে আটকে নেয়।মেঘ সামিরের হাত থেকে বেল্ট কেরে নিয়ে ওকে রথির থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে আসে।
।
মেঘ ছাড় আমাকে।
।
তুমি কি পাগল হয়ে গেছো ভাইয়া?
ও আমার বাবা মাকে আমার সামনে অপমান কিভাবে করল?তুই ছাড় ওকে আমি খুন করে জেলে যাব দরকার পড়লে।
শান্তনা গিয়ে রথিকে ধরবে তার আগে,,,
।
খবরদার আমাকে কেউ ধরতে আসবি না।আমাকে মেরে ফেলুক তোরা যা এখান থেকে।
।
আপু তুমি একটু চুপ করো প্লিজ।
।
কেন চুও থাকবো আমি?তোরতো কোনো ক্ষতি হয়নি তাই তুই বুঝতে পারছিস না।তুইতো সব পাবি। বাড়ি গাড়ি সব।আর আমি কি পাবো হুম?
।
মেঘ তুই আমাকে ছাড় বলছি।ওর মতো লোভী মেয়ের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।সামির আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু পারছে না।মেঘ ওকে গায়ের সবটুকু শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে।
।
প্লিজ তোমরা সবাই চুপ করো।সামিরা জেগে যাবে ঘুম থেকে।ও যেন কিছু জানতে না পারে এই নিয়ে।আমি হাত জোড় করছি।সাহেরা খাতুন কথাটা বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে।তারপর কান্না থামিয়ে আবার বলে ওঠে,,,, ও যদি জানতে পারে আমি ওর গর্ভধারিণী মা নই তাহলে ও খুব কষ্ট পাবে।
তার মানে তুমি আর পাপা আমার আসল মাম্মি পাপা নও।
সামিরার আওয়াজ শুনে সবাই ওর দিকে তাকায়।চোখের পানিতে টলটল করছে সামিরার দুচোখ।
।
না মা আমি তোমার মাম্মি,,,
।
থাক আর বলতে হবে না।আমি সব কিছুই শুনে নিয়েছি বলে দৌঁড়ে ওর রুমে চলে যায়।
সাহেরা আর আজমল ওর পিছু পিছু যেতে চেয়েছিল কিন্তু শান্তনা আটকে নেয়।
।
আপনারা এখন ওর কাছে যেয়েন না।এখন সামিরা অভিমান করে আছে।
।
অভিমান নয়রে মা।এটা অনেক বড় ধাক্কা।ওর যখন 2 বছর বয়স তখন থেকে ওকে বাবা মার আদর দিয়ে বড় করেছি আমি আর তোমার শ্বাশুড়ি মা।ওতো আমাদেরই নিজের বাবা মা জেনে এসেছে ছোট থেকে।এখন সত্যিটা জেনে কষ্ট পাওয়ারই কথা।তুমি যাও মা।সামিরাকে গিয়ে বোঝাও।
জ্বি বাবা,,, বলে শান্তনা সামিরার রুমের উদ্দেশ্যে যায়।
।
কোনো লাভ নেই সামিরাকে বুঝিয়ে।কারণ আপনারা যেই ধোকাটা দিলেন ওকে এর ফলস্বরূপ সামিরা আপনাদের শুধু ঘৃণা করবে এখন থেকে।
।
তুই এখনো চুপ করলি না।তোকে আমি,,,বলে মেঘকে ধাক্কা দিয়ে রথির কাছে তেড়ে যাচ্ছিল কিন্ত তার আগে আজমল গিয়ে সামিরের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
।
ব্যাস অনেক হয়েছে।তোমার সাহস কি করে হয় আমার বউমার গায়ে হাত তোলার?আর একটা টোকাও যেন ওর গায়ে না পড়ে বলে দিলাম।
।
ঢংং আর কতো করবেন?আমাকে তো মেরে আধমরা বানিয়েই ফেলেছে।এখন আসছেন বিচার করতে।আপনার বিচার করার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি চলে যাচ্ছি এই বাড়ি ছেড়ে।আর আসবো না এখানে।বলে পাশে থাকা চেয়ার ধরে আস্তে আস্তে দাঁড়ায়,,, তারপর সোজা হাটা দেয়।
শোনো বড় বউমা,, যেওনা এভাবে রাগ করে।
আজমল আর সাহেরার কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে শেষমেষ চলেই যায় রথি।
সামির তুমি ওকে আটকাও।
।
না মা।ওকে চলে যেতে দাও।
।
তুমি যে কি করোনা। বউমাকে কেন বলতে গিয়েছিলে সব কিছু?(আজমল)
।
আজ নয়তো কাল বলতেই হতো।তাছাড়া রথি আমাকে ওর দিব্বি দিয়েছিল যে,,,আমি ওর থেকে যা লুকাচ্ছি তা যেন বলে দেই। তাই আমি সত্যিটা বলতে বাধ্য হই।রথির কসম দেওয়ায় আর না বলে থাকতে পারিনি বাবা।
।
যা হয়েছে,, হয়েছে।এখন যা ভাইয়া।ভাবিকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।
।
মেঘ ঠিক বলেছে সামির।তুমি যাও বউমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।(সাহেরা)
না মা।আমি পারবো না।রথি ভুল করেছে।আমাকে এখন তোমরা একটু একা থাকতে দাও প্লিজ।আমার ভালো লাগছে না।
কেউ আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে আসে সামিরের রুম থেকে।
ওদিকে সামিরাও শান্তনাকে ওর রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে।শান্তনা সামিরার জায়গাটা বুঝতে পারে এবং আর কোনো কথা বা বাড়িয়ে ওকে একা ছেড়ে দেয়।
শান্তনাকে দেখে সাহেরা বলে ওঠে,,
সামিরা কি বলেছে?
।
কিছু না।জাস্ট বলেছে ওকে যেন একটু একা থাকতে দেই।খুব কান্না করছিল সামিরা।
।
সব দোষ আমাদের।আমরা যদি আগেই সব কিছু বলে দিতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না।
।
না মা।এতে আপনার আর বাবার কোনো দোষ নেই।আপনারা তো ওকে নিজের মেয়ের মতোই ভালবেসে আগলে রাখতে চেয়েছিলেন।এখানে দোষ কপালের।যা হওয়ার তাই হয়েছে।এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না প্লিজ।সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।ভরসা রাখুন।
।
তাই যেন হয় মা,,,তাই যেন হয়।
বড় মেয়ের এমব অবস্থা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় জিল্লুর রহমান ও মিলি বেগম।দুজনে দৌঁড়ে মেয়ের কাছে যায়।
।
কিরে তোর এই অবস্থা কেন?(মিলি বেগম)
।
তোকে কে মেরেছে আপু(তামিম)
।
কিরে মা কিছু বলছিস না কেন?জামাই বাবা কোথায়?তোর কি হয়েছে?(জিল্লুর রহমান)
সবাই একের পর প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।কিন্তু রথি কোনো কিছুর জবাব দিচ্ছে না।হঠাৎ উচ্চস্বরে কেঁদে দেয় রথি।রথির কান্না দেখে সবাই যেন আরও ভয় পেয়ে যায়।
কিরে মা কাঁদছিস কেন?কিছু তো বল?
মিলি তুমি মেয়েকে বসাও তো।আর তামিম তুমি তোমার আপুর জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো।মিলি রথিকে একটা চেয়ারে নিয়ে বসালো।
তামিমও পানি আনতে গেল।
।
আব্বু পানি নাও(জিল্লুর রহমানের হাতে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে)
।
এইনে মা কান্না থামিয়ে পানিটা খেয়ে বলতো কি হয়েছে তোর?
রথি কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেতে শুরু করল।তারপর খালি গ্লাসটা মিলি বেগম তার হাতে নিয়ে নেন।তারপর বলেন,,,
।
এবার বল মা কি হয়েছে?
।
আব্বু,,,আম্মু আমি আর শ্বশুর বাড়ি যাব না।আর সামিরের সাথে সংসার ও করবোা না। বলে আবার কেঁদে ওঠে।
।
কি বলছো কি এসব?আর কি হয়েছে?(জিল্লুর)
।
ওই আজমল চৌধুরী আর সাহেরা খাতুন যাদের তোমরা আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি ভাবো,,,আসলে ওরা আমার আসল শ্বশুর শ্বাশুড়ি নয়।ওরা সামিরের পালক বাবা মা।
।
কি বলছিস কি মা!অবাক হয়ে বললেন মিলি বেগম।
হ্যাঁ আম্মু।শুধু সামির নয় সামিরাও আজমল আর সাহেরার মেয়ে নয়।সামিরের বাবা আজমল চৌধুরীর খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।সামিরের বাবা কি যেন নাম?সামির আমাকে বলেছিল।রথির নামটা মনে পড়ছে না।ও মনে করার চেষ্টা করছে।
।
সজীব হাওলাদার আর তার স্ত্রী কোমল।
।
হ্যাঁ এটাই বলেছিল।কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে আব্বু?
।
আমি জানি মা।আমি তো সেই শুরু থেকে আজমল চৌধুরীর কোম্পানিতে কাজ করি।তাই তাদের সম্পর্কে সবই জানি।আর তুমি তো জানোই আমি আজমল চৌধুরীর পিএ ছিলাম।এখনতো অবসর নিয়েছি।তবে এখনো আমার সাথে সব শেয়ার করে আজমল স্যার।
।
তার মানে তুমি জেনে শুনে আমাকে নরকের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছো?
।
নারে মা।আমি তোর ভালোর জন্য করেছি,, যা করেছি। সামির খুব ভালো ছেলে।ওর বাবা মা হয়তো নেই কিন্ত তাই বলে ওকে ছেড়ে চলে আসবে তা কিন্তু কোনো ন্যায়ের মধ্যে পড়ে না।
তাছাড়া তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমার পায়ে অব্দি পড়েছিল মনে নেই তোমার?
।
পুরোটাই নাটক ছিল ওর।এতোই যখন আমার জন্য ভালবাসা ওর,,,তাহলে আমাকে এভাবে কেন মেরেছে আজ?দেখো আব্বু আমার শরিরের দাগ বানিয়ে ফেলেছে বেল্ট দিয়ে মেরে।
মারা দাগ গুলো দেখিয়ে।
কিহ!আমার মেয়েটাকে ওভাবে মেরেছে?এই ওকে তুমি ভালো ছেলে বলো রথির বাবা?এ কেমন ছেলে যে নিজের স্ত্রীকে এরকম বেধরম মার মারে।বলতে বলতে কেঁদেই দেন মিলি বেগম।
।
নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।নইলে সামির এরকম কাজ করার ছেলেই নয়।
।
হ্যাঁ ওরতো দোষ নেই।দোষ সব আমার।তাইতো আমাকে সবাই ঠোকালো।নিজের বাবা পর্যন্ত ঠকালো আমাকে।
।
নারে মা তুই ভুল বুঝছিস আমাকে।
।
ঠিকই বুঝেছি আমি।সবাই ঠক সবাই।থাকবো না কারো কাছে।চলে যাব দূরে। রথির মাথা এখন খুব গরম।সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরবছেন জিল্লুর রহমান।তাই রথির সাথে আর কোনো তর্ক করলেন না জিল্লুর রহনান।
।
মিলি ওকে ওর রুমে নিয়ে যাও বলে চলে গেলেন জিল্লুর রহমান।
এদিকে প্রায় 15 দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তবে সামির রথিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে যায়না এমনকি একটা ফোন করেনা।কিন্তু মনে মনে রথির জন্য খুব কষ্ট হয় ওর।সামিরাও কারো সাথে তেমন কথা বলেনি সেদিনের পর থেকে।শুধু শান্তনা আর ফুলির সাথে কথা বলে মাঝে মাঝে।আজমল আর সাহেরা অনেক ফন্দি আটে সামিরার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু কোনোই লাভ হয়না।বাড়িটা পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে।এসব দেখে শান্তনা আর মেঘেরও খারাপ লাগছে।
আমার না আর ভালো লাগছে না বাসার সবাই কেমন যেন চুপ হয়ে গেছে।
ঠিক বলেছো পিচ্চি।আমারও আর ভালো লাগছে না।
।
হুম,,,আর এসব মেনে নেওয়া যায়না।কিছু একটা উপায় বের করতে হবেই যাতে সবাই আবার আগের মতো হয়ে যায়।
।
কতো কিছুই তো করলাম কোনো লাভ হয়েছে কি?না পারছি সামিরাকে মানাতে আর না পারছি ভাইয়াকে আর বা মম ড্যাডকে।
।
ভাইয়া আর সামিরাকে মানাতে পারলেই বাবা মা আগের মতো হয়ে যাবে।
।
তাদের ইতো মানাতে পারছি না।
।
আমার কাছে ভাইয়াকে মানানোর একটা উপায় আছে।
।
কি সেটা?
।
তুমি তোমার সম্পত্তির হাফ ভাগ ভাইয়ার নামে করে দেও তাহলেই ভাইয়া রাজি হবে আপুকে বাসায় ফিরিয়ে আনতে।
তুমি কি পাগল হয়েছো পিচ্চি?
।
কেন?
।
এটা করলে ভাইয়া আরও রেগে যাবে।
।
রাগবে না।
।
কিভাবে?
।
তুমি এটা ভাইয়ার জন্য করবে নাতো।
।
তো কার জন্য?
।
আপুর জন্য।মানে তুমি যদি সম্পত্তির অর্ধেক অংশ ভাইয়ার নামে দাও তাহলে আপু এই বাড়িতে ফেরত আসবে আর ভাইয়াও খুশি হবে আপুকে পেয়ে।
কথাটা তো একদম ঠিক বলেছো পিচ্চি।
।
হুম,,,তো এখনি যাও,,ভাইয়ার সাথে কথা বলে আসো।
।
ওকে,,,
রথি পাখি আমি যে তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই তুমি কি জানো?সেদিন রাগের বসে তোমাকে মেরেছিলাম,,তার সাজা স্বরুপ এতো বড় শাস্তি দিলে আমায়? রথির ছবিটা হাতে নিয়ে একা একা কথা বলছে সামির।
।
ভাইয়া আসবো?
।
কে মেঘ?
।
হুম ভাইয়া।
রথির ছবিটি টেবিলের উপর রেখে দরজা খুলে দেয় সামির।
তুই এখন এখানে?কিছু হয়েছে কি?
।
না তবে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল।
।
ও,,আয় ভেতরে আয় বলে পাশ কেটে জায়গা দিল মেঘকে।তারপর চেয়ারটা এগিয়ে দিল বসতে।মেঘ চেয়ারটায় বসতেই সামির বলে ওঠে,,,,
বল কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা?
।
আসলে ভাইয়া আমি তোমাকে প্রপার্টির সমান ভাগ দিতে চাই।
।
মানে?তুই কি বলছিস এটা?
।
যা বলেছি তাই।
।
তোর মাথা ঠিক আছে কি?এই বাড়ি গাড়ি কোম্পানি সব তোর।বাবার কষ্টের ফসল এসব।আমার এতে কোনো অধিকার নেই।আর আমার যদি ভাগ নেওয়ারই থাকতো তাহলে আমি আগেই নিয়ে নিতাম যখন বাবা আমাদের দুজনের নামে দলিল করতে চেয়েছিলেন।
ভাইয়া এটা আমি তোমার জন্য নয় ভাবির জন্য বলেছিলাম।
।
বুঝলাম না আমি।
।
মানেটা হলো,,ভাবি সম্পত্তি জন্যই বাড়ি ছেড়েছে।তাই ভাবি যাতে বাড়ি ফিরে আসে তাই আমি এটা করতে চেয়েছিলাম।
।
কোনো দরকার নেই।তুই যদি ভেবে থাকিস আমি তোর কথায় রাজি হয়ে যাব তাহলে তুই ভুল ভাবছিস।রথি ভুল করেছে।ও যদি ওর ভুল বুঝতে পেরে বাড়ি ফিরে আসে তাহলে আমি ওকে গ্রহণ করবো।এভাবে লোভ দিয়ে নয়।তুই ভাবছিস আমি রথিকে ছাড়া ভালো নেই।তাই তুই এটা করতে বাধ্য হয়েছিস তাইনা?তবে তোর ধারণা একদম ভুল।আমি কোনো লোভী অভদ্র মেয়ের জন্য কষ্ট পাইনা।তুই আর কিছু বলবি আমায়?
।
মেঘ কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবুও বলে,,,,
আরেকটিবার ভেবে দেখো ভাইয়া।আর আমি এতো টাকা পয়সা দিয়ে কি করবো বলো?তাছাড়া তোমাকে তো আমি আমার নিজের ভাই মনে করি তাইনা?
না আমার আর কিছু ভাবার নেই।তুই আমাকে এসব নিয়ে আর কিছু বলতে আসবি না বলে দিলাম।
।
কিন্তু ভাইয়া,,,
।
কোনো কিন্তু নয়। তোর কথা শেষ হলে তুই যেতে পারিস,, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
।
ঠিক আছে তাহলে আমি গেলাম।মেঘ চলে যাওয়ার পর সামির আবার কাঁদতে লাগে রথির ছবিটি নিয়ে।
ওদিকে শান্তনা মেঘের আসার অপেক্ষা করছে।মেঘকে রুমে প্রবেশ করতে দেখেই বলে ওঠে,,,
।
কি বলেছে ভাইয়া?মেনে নিয়েছে কি?
।
না,,,তোমার আইডিয়াটা কাজে দেয়নি।(উদাস হয়ে বলল)
।
তো এখন?
জানি না।ভাইয়া সাফ সাফ বলে দিয়েছে তোমার বোন নিজের ভুল না বোঝা অব্দি তাকে গ্রহণ করবে না স্বইচ্ছায়।
।
আপু যেই রাগি মানুষ, মনে হয়না নিজের ভুল স্বীকার করবে বলে।
।
তাও তুমি একবার চেষ্টা করে দেখো পারো কিনা মানাতে।
।
তুমি জানোই তো আমি কতো চেষ্টা করলাম।এমনকি আমাদের বাড়িও গিয়েছিলাম।আমার একটা কথাও শুনেছে কি? না শোনেনি।যেই কয়বার গিয়েছি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে আমায় দেখা মাত্র।
।
কিহ তোমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল?তুমি তো বলেছিলে তোমার কথা শোনেনি।কিন্তু এটা তো বলোনি তোমায় তাড়িয়ে দিয়েছে।
।
আসলে,,,
।
সেধে অপমানিত হতে খুব ভালো লাগে তোমার তাইনা?আগে জানলে যেতেই দিতাম না তোমাকে।
।
বাদ দাও না।আপুর মেজাজ ঠিক ছিলনা তাই ওমন করেছিল।
।
তার জন্য আমার পিচ্চি কে তাড়িয়ে দেবে? এতো বড় সাহস কিভাবে হয় তোমার বোনের?
আমাকে অপমান করলে তোমার কি হুম?
।
অনেক কিছু।আমার ভালো লাগে না তোমার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে।এক কথায় তোমাকে কেউ কিছু বললে সেটা আমার গায়ে এসে লাগে।
।
তাই?কিন্ত কেন?
।
বুঝলে বুঝ পাতা আর না বুঝলে তেজপাতা।
।
মানে?
।
মানেটা তোমার এই পিচ্চি মাথায় ঢুকবে না ওকে।
।
পিচ্চি কাকে বলো হুম?ভুলে গেছো আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছি।22 বছর হয়ে গেছে আমার।
।
তুমি যতই বড় হওনা কেন আমার কাছে পিচ্চিই থাকবে।
আমি তো তাই চাই।বিরবির করে বলল শান্তনা।তবে মেঘ বুঝতে পারেনি।
।
কিছু বললে কি?
।
নাহ কিছু না।আমি পড়তে বসবো বলে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসে শান্তনা।
।
তুমি খুব শীঘ্রই আমাকে তোমার মনে কথা বলতে বাধ্য হবে পিচ্চি।জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।(মনে মনে বলল মেঘ)
কোথায় যাচ্ছিস?আজকেও কি যাবি চাকরির খোঁজে?
মিলি বেগমের কোথায় থেমে যায় রথি।
।
দিলে তো পিছু ডেকে!একটা ভালো কাজে যাচ্চি পিছু ডাকার কি দরকার ছিল আম্মু?তুমি তো জানোই আমি চাকরি পরীক্ষা দিতে যাই রোজ।তাহলে জিজ্ঞেস করার কি দরকার ছিল?
।
জেদ টা ছেড়ে দে মা।এখন চাকরি মেলা ঢের মুশকিলের কাজ।এতোদিন ধরে তো এপ্লাই করেই গেলি পেয়েছিস কি?না পাসনি।তাই বলছিলাম এসব চাকরি টাকরির চিন্তা ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যা।মান অভিমান তো সব দম্পতির একটু আধটু লেগেই থাকে।তাই বলে স্বামী সংসার ত্যাগ করতে হবে তার তো কোনো মানে নেই।তাই নারে মা?
।
তোমার হয়েছে জ্ঞান দেওয়া?
।
তোকে কিভাবে যে বোঝাই?
তোমাকে কিছুই বোঝাতে হবে না আম্মু।কারণ আমি বুঝবোই না।গেলাম আল্লাহ হাফেজ দোয়া করো।বলে বেড়িয়ে পড়ে রথি।
৫-৬ জায়গায় ইন্টারভিউ দিল কিন্তু একটাতেও চাকরি হলো না রথির।তাই হতাশ হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
।
উফ একে চাকরি পাওয়া যায়না, দুই সময় মতো রিকশাও পাওয়া যায়না।রথি তোর কপাল টাই খারাপ রে।দেখি কিছুটা সামনে গিয়ে রিকশার দেখা পাই কিনা বলে হাঁটা ধরল রথি।কিছুদূর যেতেই একাটা গাড়ি এসে রথির সামনে দাঁড়ালো।তারপর গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নেমে আসলো।মেয়েটি গিয়ে রথির সামনে দাঁড়ায়।
।
তুমি রথি।অ্যাম আই রাইট?
।
হ্যাঁ,তবে আপনি কে?
।
আমি টিনা,,আমাকে চিনবে না।
আপনি যেই হন না কেন,,আমার কাছে কি চাই?আমি এখানকার কিছু তেমন চিনি না তাই সরি কোনো অ্যাড্রেস জানতে চাইলে বলতে পারবো না।
।
আমি তোমার কাছে কোনো অ্যাড্রেস জানতে আসিনি।আমি অন্য কোনো কারণে তোমার কাছে এসেছি।
।
অন্য কারণে বলতে?
।
অনেক লম্বা কথা গাড়িতে চড়ো কোনো এক কফি শপে কফি খেতে খেতে বলি।
।
আমি তো আপনাকে চিনি না তাহলে,,,
।
ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।
রথির টিনাকে বিশ্বাস যোগ্য মনে হলো তাই আর কোনো কথা না বাড়িয়ে টিনার গাড়িতে গিয়ে ওঠে।
তো তুমি মেঘকে ভালবাসো।আর ওকে পেতে চাও(রথি)
।
হুম,,পাগলের মতো চাই আমি মেঘকে।কিন্তু তোমার বোনের জন্য পারছি না।
।
তো এখানে আমি তোমার কি হেল্প করতে পারি?
ওইযে তোমার বোনকে রাস্তা থেকে সরাতে হবে।
।
পাগল হয়েছো নাকি?আমি তোমার কোথায় নিজের বোনকে মেরে ফেলবো!!?
।
আরে না।মেরে ফেলতে কে বলেছে?
তুমি শুধু শান্তনাকে মেঘের জীবন থেকে সরাবে।দুনিয়া থেকে নয়।
।
কিন্তু আমি এটা কেন করবো?
।
সম্পত্তির জন্য।
।
মানে?
।
মানেটা হলো,,,তুমি যদি শান্তনাকে মেঘের জীবন থেকে সরাতে পারো তাহলে মেঘের সব সম্পত্তি তোমার আর তোমার হাসবেন্ডের হবে।
।
কিভাবে?মানে শান্তনা চলে গেলে মেঘ কেন তার সব কিছু আমাদের নামে করে দেবে?
কারণ মেঘ তখন হতাশ হয়ে পড়বে।টাকা পয়সার প্রতি কোনোই ইন্টারেস্টই থাকবে না।
।
যদি উল্টো কিছু হয় তখন?
।
কিছু হবেনা আমি সব কিছুর রেসপন্সিবিলি নিলাম।আমি প্রমিজ করলাম মেঘের সব প্রপার্টিজ তোমার নামে করিয়ে দেব নিজে দাঁড়িয়ে থেকে।
।
আচ্ছা সবই ঠিক আছে তবে শান্তনার কি হবে পড়ে?ওর জীবন টাতো শেষ হয়ে যাবে।
।
কিছুই শেষ হবে না বিশ্বাস রাখো আমার উপর।
।
কিন্তু,,,,রথিকে বলতে না দিয়ে,,
।
প্লিজ রথি মানা করো না।তুমি ভেবে দেখো তোমার হাসবেন্ড কি বা রোজগার করে।তা দিয়ে তুমি সুখে থাকবে না।তাছাড়া ফিউচারে তোমার ছেলে মেয়ে হবে তাদের ওতো একটা ব্রাইট ফিউচার লাগবে।তবে তার জন্য চাই টাকা।তুমি শিক্ষিত মেয়ে,,আশা করি বুঝতে পেরেছো।
টিনা তো একদম ঠিক বলেছে।আমার ভবিষ্যৎ ছেলে মেয়েদের জন্য হলেও আমাকে টিনার ডিলটা এক্সেপ্ট করতে হবে(মনে মনে বলল রথি)
।
কি ভাবছো রথি?
।
তুমি ঠিক বলেছো।আমি তোমার কথায় রাজি।তবে আমি কি করতে হবে?
।
তোমার শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।ওইখানে থেকেই কাজ করতে হবে প্লান মাফিক।আমি তোমাকে সময় মতো বলে দেব তোমাকে ঠিক কি কি করতে হবে।
।
ওকে,,,
প্রেম নেশা পর্ব ২৮+২৯+৩০
দেয়ালে ঝুলন্ত শান্তনা আর মেঘের বিয়ের ফোটোফ্রেম টা মেঝেতে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়।শান্তনা গিয়ে ফোটোফ্রাম টার ভাংগা কাঁচ গুলো সরিয়ে ফোটোফ্রেমটা বুকের সাথে চেপে ধরে।মনে মনে শান্তনা খুব ভয় পেয়ে যায় ফোটোফ্রেম টা ভাঙায়।
এভাবে ফোটোফ্রেম টা ভেঙে গেল কেন?না জানালা খোলা আর না ফ্যান চলছে,,তাহলে কিভাবে পড়ে গেল?আমার খুব ভয় করছে এটা কোনো বিপদের সংকেত নয়তো?না,,,আমার আপন কারো কিছু যেন নাহয় আল্লাহ।তুমি তাদের দেখে রেখো।
এরই মাঝে ফুলি চলে আসে,,,
।
ভাবি গো,,,,ভাবি।ও ছুডো ভাবি।
।
আরে এভাবে চেচাচ্ছো কেন ফুলি?
চেচানোরি তো কতা,,নিচে আহেন বড় ভাবি বাসায় ফিরা আইছে।
।
কিহ! আপু ফিরে এসেছে!(খুশি হয়ে)
।
হ,,,জলদি আহেন আমার লগে।
শান্তনা একটা দৌড় লাগায় ফুলির পাশ কেটে।
।
ও মা গো।ছুডো ভাবি খুশির ঠেলায় কি দোরটাই না দিল।আমিও দেই একখান দৌড়।বলে ফুলি ও শান্তনার পিছু ছুটে।