প্রেম নেশা পর্ব ২৮+২৯+৩০

প্রেম নেশা পর্ব ২৮+২৯+৩০
শান্তনা আক্তার

বাসায় আসা অব্দি মেঘের মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে দুপুরের ব্যাপারটা নিয়ে।শান্তনা বেশ বুঝতে পেরেছে যে,মেঘের মুড ভালো নেই।
কিছু জিজ্ঞেস করলেও বকা শুনতে হচ্ছে তাই দু একবার জিজ্ঞেস করার পর আর সাহস হয়নি পুনরায় প্রশ্ন করার।মেঘকে খেতে ডাকবে তাও বলতে পারছে না।আর তাই নিজেও খেতে যেতে পারছে না।চুপচাপ পড়ার টেবিলে বসে বসে মেঘেকে বকে যাচ্ছে মনে মনে।বেশ কিছুক্ষণ কথা না বলে মেঘের রাগ কিছুটা কমেছে।নীরবতা ভেঙে মেঘ বলে ওঠে,,

খেয়েছো?

আসছে এখন বজ্জাতটা জিজ্ঞেস করতে,,খেয়েছি কি না খেয়েছি(মনে মনে)।
দেখতে পারছেন না খেয়েছি,, কি না খেয়েছি।

হুম সরি চলো খেতে।
শান্তনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
রাতে ঘুমানোর সময় শান্তনা মেঘকে অনেকবার তার মুড অফের কারণটা জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কিন্তু ভয়ের জন্য পারেনি।মেঘ সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।
কিছু বলবে কি পিচ্চি।
মেঘের শান্ত গলা শুনে শান্তনার ভয় নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

না মানে,,আপনি অফিস থেকে এসে চুপচাপ ছিলেন।কিছু বলছিলেন না।আমি কিছু বললেও রেগে উঠেছিলেন।কিন্তু কেন?কি এমন হয়েছে আজ?

কিছু না।একটা বড় ডিল cancel হয়ে যায়।তাই মন মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

ওহ,,এই ব্যাপার।আপনি টেনশন নিয়েন না।ধৈর্যধারণ করুন।দেখবেন এর থেকেও বড় সুযোগ আসবে।আর আপনি এর থেকেও অনেক তরক্কি করতে পারবেন।

আমিন।ভরসা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

এতে ধন্যবাদ বাদ দেওয়ার কিছুই নেই।আপনার মুড ভালো হয়েছে এটাই অনেক।

তোমাকে কে বলেছে যে আমার মুড ভালো হয়েছে?

কেন ভালো হয়নি কি?

না হয়নি।

তো কি করলে আপনার মুড ঠিক হবে?

একটা গান শোনাও তাহলে ঠিক হতেও পারে।

এখন গান গাইবো!

তাহলে আমার মুডও ভালো হবে না।

আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি বসুন আমি গিটারটা নিয়ে আসি।তারপর শান্তনা গিয়ে ওর গিটার নিয়ে আসে।আপনি কি গান শুনবেন?

রোমান্টিক গান।

শান্তনা ভ্রু ঘুচিয়ে বলল,,রোমান্টিক!!

হুম,,কেন কোনো প্রবলেম আছে নাকি।

না,,মানে আমি রোমান্টিক গান তেমন গাইনা।

গাওনা তো কি হয়েছে?এখন গাইবে আমার জন্য।গাইবে না পিচ্চি?

ওকে চেষ্টা করছি।

তো গাও।
শান্তনা গিটারের তার নেড়ে গান ধরল।
– Yeh larka hay Allah,,,kesa hai diwana..
-Kitna mushkil hai toba,,isko samjhana..
-Ke dheere dheere dil,,,beqarar hota hai..
-Hote hote hote,, pyar hota hai..
♪♪ Ho oo ooo♪♪
-Yeh larka hay Allah kesa hai diwana…
-Hamne to itna dekha,,hamne to itna sikha,,,dilka soda hota hai..soda jindegi ka..(2)
-Miltehi kese koi,,hota hai diwana..
-Yeh larka hay Allah kesa hai diwana..
Ke dheere dheere dil,,,beqarar hota hai..
Hote hote hote,,pyar hota hai…

সামির তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।

কি কথা রথি পাখি?

তোমার কি কোনো বুদ্ধি আক্কেল বলতে কিছুই নেই?

এটা বলার ছিল নাকি?

আরে নাহ।আমাদের বিয়ের প্রায় 3 মাস শেষ হতে চললো,,কিন্তু আমরা এখনো হানিমুনে কোথাও বেড়াতে যাইনি।তোমার কি সে খায়াল আছে?

আছে,,,তবে এখন খুব কাজের চাপ।তো আমারা অন্য সময় যাব।আমার বিজনেসটা একটু ভালো করে settle করে নেই তারপর।

ধ্যাত,,তোমার সাথে কথা বলাই বেকার বলে রথি অন্য দিক ফিরে শুয়ে পড়ে।

বাড়িটা কমপ্লিট না হওয়া অব্দি আমি এখন কোথাও যেতে বা টাকা খরচ করতে পারবো না রথি পাখি।আর কতদিন অন্যের ঘাড়ে বসে থাকা যায়।কথা গুলো মনে মনে বলে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে সামির।

গান শেষে মেঘ ক্লাপ করে আর বলে,,,
This Amazing song is just for dedicated for me…am i right picchi..?
শান্তনা কি বলবে বুঝতে পারছে না।
কি হলো answer দাও পিচ্চি।তুমি এটা আমাকে indicate করে গেয়েছো তাইনা?

একদমি না।আপনিই তো রোমান্টিক গান গাইতে বললেন।তাই এটা মাথায় আসলো আর গেয়ে দিলাম।

ওহ রিয়ালি?

তা নয়তো কি হুম।এবার ঘুমোন তো।আমার ঘুম পাচ্ছে বলে গিটারটা আগের জায়গায় রাখতে চলে যায়।

হি হি হি,,,তুমি আমার প্রেমে পড়েছো পিচ্চি।তবে বলতে পারছো না।তবে আমিও দেখবো তুমি কতদিন পালিয়ে বেড়াও।আমার প্রেম জ্বলে তোমাকে সাঁতার কাটতে হবেই আজ নয়তো কাল।আমি সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি অধির আগ্রহে।হ্যাঁ পিচ্চি আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।তবে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবনা।তুমি যেদিন আমার কাছে এসে ধরা দেবে ওইদিনই তোমাকে আমি আমার প্রেম নেশার সাগরে ভাসাবো।তার আগে নয়।

সময়ের সাথে ছয়টি বছর অতিবাহিত হয়ে যায়।
এই ছয় বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।শান্তনা অনার্স শেষ বর্ষে পা রেখেছে।মেঘ আর শান্তনার সম্পর্ক আগের থেকে ঘনিষ্ঠ হয়েছে।দুজন দুজনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তবে কেউ কাউকে নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারছে না।তবে ইশারা ইঙিতে দুজনই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করে,,তবে সেটা তারা বুজলেও না বোঝার অভিনয় করে।মেঘ চায় শান্তনা তাকে আগে প্রেম নিবেদন করুক। শান্তনাও চায় মেঘ তাকে আগে প্রেম নিবেদন করুক।কিন্তু কেউ কারো লক্ষ্যে সফল হয়নি। এর জন্য এখনো কেউ কাউকে তাদের ভালবাসার কথা মুখ ফুটে বলতে পারছে না।মেঘ এখন নামকরা বিজনেসম্যান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।সামিরা এখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।সামির তার ছোট খাটো কাপড়ের ব্যবসা নিয়েই আনন্দে আছে।সবাই ভালো আছে তবে রথি আর টিনা ব্যতিত।তারা কেন ভালো নেই তা জানতে হলে গল্পে যেতে হবে,,,
শান্তনা,,,,শান্তনা,,,,শান্তনা?

আরে বাবা চেচাচ্ছো কেন?

তোমাকে ডাকচি সেটা কানে যাচ্ছে না?

আমি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিলাম,,হুট করে কিভাবে আসি বলোতো?
(এতো দিনে শান্তনা আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছে।অবশ্য মেঘের জোড়াজুড়িতে তুমিতে নামতে বাধ্য হয়েছে বেচারি)

আমার থেকে ব্রেকফাস্ট টাই বড় হলো তোমার কাছে?

কোন কোথায় কি টেনে আনছো বলোতো?উফ বাদ দাও।আর বলো কি জন্যে ডেকেছো আমাকে।

তোমার কি মনে আছে আজকের দিনের কথা?

কি মনে থাকবে?

সত্যি ভুলে গেছো?

আরে কি ভুলবো?

আজকে যে আমাদের 5th anniversary সেটা ভুলে গেছো।

ইশশ,(এক হাত মাথায় দিয়ে)।আমি না সত্যি ভুলে গিয়েছিলাম।

ভুলবেই তো।এই দিনটা তো তোমার কাছে স্পেশাল নয়,,,তাই মনে রেখে কি হবে।(মন খারাপ করে বলল মেঘ)।এই নাও তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি।(গিফটের প্যাকেটটা শান্তনার হাতে দিয়ে বারান্দায় চলে যায় মেঘ)

আচ্ছা,,,আচ্ছা। জনাব আজ রাগ করেছে।বলি প্রতি বছর যে আমি মনে করিয়ে দেই আজকের দিনটা সেই বেলায়?বলতে বলতে শান্তনাও বারান্দায় যায়।এই নাও তোমার গিফট।(মেঘের সামনে ধরে)

মানে তুমি!!

জ্বি জনাব।আমি ভুলিনি আজকের দিনটা।আমি দেখছিলাম তোমার মনে আছে নাকি প্রতিবারের মতো ভুলে গেছো।দেখেছো তো কতটা খারাপ লাগে।আমারও লাগতো যখন তুমি আমাদের বিবাহবার্ষিকীর কথা ভুলে যেতে।

সরি পিচ্চি(কান ধরে বলল মেঘ)

ঠিক আছে মাফ করলাম just because আজকের দিনটা এই প্রথম মনে রাখার জন্য। যাই হোক,,,এখন পাঞ্জাবিটা পড়ে দেখোতো কেমন হয়েছে।নিজের হাতে বানিয়েছি তোমার জন্য।

তুমি বানিয়েছো আর আমার লাইক হবে না,,তা কিভাবে হয় হুম?ওয়াও! কালারটাও আমার পছন্দের। yellow কালার।

হুম,, এখন পড়ে দেখো ভাল ভাবে ফিট হয় কিনা।তোমার অন্য একটা পাঞ্জাবির মাপে বানিয়েছিতো তাই।

ঠিকই আছে।তুমি দেখো আমার দেওয়া গিফট তোমার লাইক হয়েছে কিনা?

ওকে,,
তারপর শান্তনা মেঘের গিফটটা বের করে দেখল।
বাহ! খুব সুন্দর শাড়িটা।তোমার পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচ হয়েছে। তোমার পছন্দের কালারের শাড়ি কিনেছো দেখছি।তবে তোমার পছন্দ কিন্তু খুব সুন্দর।তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমারও হলুদ কালারটা ফ্যাভারিট হয়ে গেছে।আমার খুব খুব ভালো লেগেছে শাড়িটা।অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে।

আমি জানি তো যে,,আমার পছন্দ খুব সুন্দর।নেশাক্ত গলায় বলল মেঘ।

শান্তনা মেঘের ওমন চাহনি দেখে ভয় পেয়ে যায়।তাই কথাটা ঘোরানোর চেষ্টা করে।
তুমি নিচে এসো আমি আজকে তোমার পছন্দের আলু পরোটা বানিয়েছি।সাথে হাক্কা নুডুলস ও।

অন্য কিছু খেতে চাই যে,,(দুষ্টুমির সুর বলল মেঘ।)

কি খেতে চাও?

তোমার মিষ্টি ঠোঁট,,,(মনে মনে)।
না কিছু না।আজ আমি আর তুমি একটু বেড়াতে যাব।যাবে তো?

হুম যাব,,,তবে তোমাকে আমার দেওয়া পাঞ্জাবিটা পড়তে হবে।

ঠিক আছে।আর তোমাকে আমার দেওয়া শাড়িটা পড়তে হবে।

যদি পড়িয়ে দাও তবেই পড়বো।(আহ্লাদী সুরে বলল শান্তনা)

তোমার আবদার আমি পূরণ না করলে কে করবে বলো? একটা মাত্র বউ তুমি আমার।
কথাটা শোনা মাত্র শান্তনা লজ্জা পেয়ে যায় সাথে সাথে একটা দৌড় দিয়ে নিচে চলে যায়।
আর মেঘ বাকা হেসে মাথা চুলকায়।
রথি পাখি তোমার জন্য কি এনেছি দেখো।

কি এনেছো?(খুশি হয়ে)

পায়েল এনেছি।

হিরার নাকি স্বর্ণের?

হিরার ও না স্বর্ণের ও না।তবে আমার ভালবাসার পায়েল এটা।

মানে?আজ আমাদের 5th anniversary আর তুমি আমাকে সস্তার পায়েল গিফট দিচ্ছো? Strange!!

সস্তা বলছো কেন? আমি কতো ভালবেসে এনেছি তোমার জন্য।

তাই বলে ইমিটেশনের পায়েল?আগে তো খুব দামি দামি গিফট দিতে আমাকে। ধিরে ধিরে আমার প্রতি ভালবাসা কমে যায় তাই এখন সস্তা গিফট দাও তাইনা?

তোমাকে কত বার বলবো বলো,,আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি সেখানে আমার সব টাকা ব্যয় হয়ে যায়।তবে সেটা হয়ে যাক তারপর আমি তোমাকে নিয়ে ভালো কোনো জায়গায় বেড়াতে যাব।তোমার সব শখ একটু একটু করে পূরণ করবো।আর রইলো ভালবাসার কথা,,,সেটা কখনো কমেনি আর কমবেও না রথি পাখি।

কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছো শুনি? কয়েকটা বছর ধরে তো শুনে আসছি তবে এখনো অব্দি জানতে পারলাম না তোমার সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা।

আর কটা দিন ওয়েট করো জানতে পারবে সব কিছু।

উফফ বিরক্তিকর।

আমারতো ভয় করছে রথি পাখি! তুমি সত্যিটা জেনে আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো? না না।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না রথি পাখি।আমার বিশ্বাস তুমি আমাকে বুঝবে।বুঝবে তো রথি পাখি?
রথির দিকে চেয়ে মনে মনে বলল সামির।

দুপুরের খাবারের পর মেঘ একটা মস্ত ঘুম দেয়।এদিকে শান্তনা বিছানার এক কণে বসে রাগে ফুঁসছে।
বিকাল হয়ে আসলো আর মেঘ এখনো ঘুমাচ্ছে।
যদি ঘুমানোর ছিল তাহলে বলল কেন ঘুরতে নিয়ে যাবে।এখন কি ডাকবো?নাহ ডাকবো না।আমি গিয়ে সামিরার সাথে গল্প করি গিয়ে।যেই বলা সেই কাজ। চলে গেল সামিরার রুমে।গিয়ে দেখে সামিরাও নাক টেনে ঘুমাচ্ছে।তাই পুনরায় নিজের রুমে ফেরত যায়।তবে বিছানায় মেঘকে না দেখে ভাবনায় পড়ে যায়।তবে শান্তনার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে মেঘকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে।

কোথায় ভাবলাম তুমি আর আমি ঘুরতে যাব আর তুমি কিনা এখানে সেখানে হেটে বেড়াচ্ছো।

আমি!এটা তো উল্টা চোর কোটওয়াল কো ডাটে হয়ে গেল।

কিভাবে শুনি?

তুমি এতোক্ষন ঘুমাচ্ছিলে সেটা না বলে আমি একটু রুম থেকে বাইরে কি গেলাম ওমনি নিজের দোষটা আমার উপর দিয়ে দিলে।

প্রমাণ কি যে আমি ঘুমিয়েছিলাম।

প্রমাণ তো নেই,,কিভাবে দেখাবো?

তাহলে আমার কোনোই দোষ নেই।

তোমার দোষ কখনোই থাকবে না।সব দোষ আমার।হয়েছে এবার?বলেই ধপাস করে টেবিলের উপর বসে পড়ে শান্তনা।

হা হা হা,,,
মেঘকে হাসতে দেখে শান্তনা বেকুব ফেস করে বলে,,

হাসছো কেন?

তুমি আর বড় হলে না।পিচ্চি,,পিচ্চিই রয়ে গেলে।

আমি আবার কি করলাম?

কিছু না ম্যাম।আমি রেডি হয়ে আসছি তুমিও প্রস্তুতি নাও।

কিসের?

মনে নেই তোমার আবদারের কথা?

ওহ,,মনে পড়েছে। তুমি যাও।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শান্তনাকে ব্লাউজ আর পেটিকোটে দেখে মেঘ প্রথমে তাকালেও পরক্ষণেই তার চোখ নামিয়ে নিয়ে বলে,,,

are you ready for wearing shari?

শান্তনা এক দিকে মাথা কাত করল।অর্থাৎ সে রেডি।
তারপর মেঘ ধিরে ধিরে শান্তনাকে শাড়ি পড়ানো শুরু করল।

তুমি কি এখনো শাড়ি পড়তে পারোনা পিচ্চি?

না,,,শিখার চেষ্টা করিনি।

কেন?

আমি তো সালোয়ার কামিজই পড়ি।তোমার বাবা মাও আমাকে এ নিয়ে কিছু বলেনা।তাহলে কি দরকার শেখার।তাছাড়া বাড়ির যেকোনো ফাংকশনে তুমি পার্লারের লোকদের ফোন করে নিয়ে আসো আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ার জন্য।তাহলে আমি শাড়ি পড়া কেন শিখবো?আর যদি সেরকম দরকার পড়ে তাহলে তুমি তো আছোই।

আমি তো আর সবসময় থাকবো না।

কেন থাকবে না?

মানে আমি যদি জরুরি কাজ করতে বাহিরে থাকি,,তখন তো আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে পারবো না।আর যদি পার্লারের লোকেরা না আসে তাহলেই বা কি করবে?

জানি না,,যা হবে দেখা যাবে।এখন নিজের কাজে মন দাও।

ওকে ম্যাম।বলে শান্তনাকে শাড়ি পড়ানো শুরু করল। মেঘ খুব যত্নে শান্তনাকে শাড়ি পড়িয়ে দিল।
নাও হয়ে গেছে।দেখি তো কেমন লাগছে পিচ্চিকে।
মেঘ শান্তনাকে পা থেকে মাথা অব্দি পর্যবেক্ষণ করে দেখে বলল,,
সবই ঠিক আছে বাট চুলটা ছেড়ে রাখলে আর হালকা লিপ্সটিক সাথে কাজল পড়লে আরও বেশি ভালো লাগতো।

তাই?

হুম।

ওকে,, শান্তনা মেঘের কথা মতো কাজ করল।
তারপর মেঘের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
এইবার কেমন লাগছে?
মেঘতো শান্তনাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না।
কি হলো,, বলো কেমন লাগছে?

চাহনিতে হরিণী ধার,,,
মেঘলায় দিন বন্যা।
সুবাস তাহার মন মাতানো
তুমি সেই রুপকন্যা।

কবিতাও জানো দেখি!

একটু আধটু।তবে খুব খুব খুবই মায়াবতী লাগছে তোমাকে।

সত্যি?

মিথ্যা বলে আমার লাভটা কি শুনি?

তাও ঠিক।তোমাকেও ভালো লাগছে হলুদ পাঞ্জাবিতে।

দেখতে হবে তো কে বানিয়েছে।

একদম তাই।আমাকে না তুমি নানা রকমের ডিজাইন বলবে আমি সেই অনুযায়ী পাঞ্জাবি বানিয়ে দেব।ওকে?

ওকে ম্যাম,,,এখন কি এইসব নিয়েই কথা বলবে নাকি বেরোবেও।

ওহ,,সরি চলুন।
ড্রইংরুমে রথি আর সামিরা নুডুলস খাচ্ছে। সাহেরা খাতুন আর ফুলি বসে সুপারি পিস পিস করে কাটছে।
মেঘ আর শান্তনাকে দেখতে পেয়ে সামিরা বলে ওঠে,,,
কিরে ভাইয়া,,,ভাবিকে নিয়ে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস?
সামিরার কথায় রথি শান্তনা আর মেঘের দিকে তাকায়।

এইতো শান্তনাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাচ্ছি।

ওয়াও!আমিও যাব রে ভাইয়া।

একটা থাপ্পড় খেলে বুদ্ধি আসবে তোমার।

কেন মাম্মি?কি করেছি আমি?

তোমার ভাইয়া ভাবির আজ বিবাহবার্ষিকী।তাই তারা নিজেদের মতো একটু বেড়াতে যাবে।আর তুমি কিনা ওদের সাথে যেতে চাচ্ছো।

থাকনা মা।গেলে কি হয়।বেচারি কি করবে এখন বাসায় বসে।ঘুরে আসলে মনটাও ফ্রেশ হবে।(রথি)

তুই ঠিক বলেছিস আপু।তাইনা মেঘ?শান্তনার কথায় মেঘ রক্তচক্ষু নিয়ে শান্তনার দিকে তাকায়।শান্তনা মেঘের ওমন চাহনি দেখে ভয়ে চুপ করে যায় এবং নিজের চোখ নামিয়ে নেয়।

না থাক ভাবি।আমি জাস্ট ফান করলাম।নইলে আমার কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।

ওহহ তাই বলো।আচ্ছা তোমরা বেরিয়ে পড়ো তাহলে।এখন না বেরোলে বাসায় আসতে রাত হয়ে যাবে পরে।

ওকে মম,,,বায়।
এরপর শান্তনা আর মেঘ বেড়িয়ে পড়ে।
তুমি আর সামিরও কোথাও থেকে ঘুরে আসলে ভালো হতো বড় বৌমা।(সাহেরা)

আসলে মা,,সামিরের কিছু জরুরি কাজ আছে তাই যেতে পারবে না বলেছে।

ওহ কোনো সমস্যা নেই মা।অন্য কোনো দিন যেও।মন খারাপ করোনা মা।

(আপনার ছেলেকে বিয়ে করে জীবনটাই আমার রসাতলে চলে গেছে।আগে যদি জানতাম মেঘের গলাতেই ঝুলে থাকতাম।আজ নিজেই নিজের কপাল খেলাম।)মনের কথা মনে রেখে বলল,,
ওকে মা।

অনেকদিন পর তোমার বাইকে চড়লাম।অনেকদিন পর বললে ভুল হবে কারণ বিয়ের পরে তো আর চড়াই হয়নি।

ঠিক বলেছো।

বাই দ্যা ওয়ে,,আমরা যাচ্ছি কোথায়?

যাচ্ছি নয় চলে এসেছি বলে মেঘ বাইকের ব্রেক কষে।

এই জায়গাটা তো চেনা চেনা লাগছে।আরে এইখানে তো আমি এসএসসি এক্সাম দিয়েছিলাম।

কারেক্ট।

এখানে কেন আসলাম আমরা?

এখানে তোমার সাথে প্রথম পরিচয় হয়।তাই এখানেই আসলাম।আর এটা তো আমাদের প্রথম একা ঘুরতে আসা।

ঠিক তবে এখানে এমন কি আছে?তাছাড়া তুমি তো আমাকে প্রথম তোমাদের অফিসে দেখেছিলে।ওইযে তোমাদের অফিস ফাংশনে আব্বুর সাথে গিয়েছিলাম।তবে তুমি তো শুধু আপুর সাথে কথা বলেছিলে।আমার দিকে তো তাকাওনি। একনাগাড়ে বলে ওঠে শান্তনা।

ওসব কথা বাদ দাও প্লিজ।আমি তোমাকে এখানেই প্রথমে ভালো করে চিনেছিলাম তাই এটাই আমাদের প্রথম পরিচয়ের স্মৃতি।

আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।এখন কি করবো এখানে দাঁড়িয়ে?

হাঁটবো,,,গল্প করবো,,আর,,,

আর কি?

তুমি দাঁড়াও আমি আসছি।বলে চলে গেলো মেঘ।

কোথায় যাচ্ছো?যাহ চলে গেল।কি যে করেনা মেঘ।
কিছুক্ষণ পর মেঘ আসলো হাতে হরেক রকমের ফুল নিয়ে।

এই নাও পিচ্চি এই সব ফ্লাওয়ারস তোমার জন্য (শান্তনার হাতে ধরিয়ে)

এতো গুলো ফুল! তুমি ফুল আনতে গিয়েছিলে বুঝি?

হুম।

ওয়াও গোলাপ,,রজনী,আরও কতো রকমের ফুল এখানে।সবই কি আমার?

হুম ম্যাম ,,,তুমি ছাড়া আর কেই বা আছে এখানে?

হুম তাইতো।

দাঁড়াও একটা ফুল নেই,,, মেঘ সেই ফুলগুলো থেকে একটা সুন্দর বড় গোলাপ তার হাতে নিল।
শান্তনা তোমার চুল গুলো খোপা করোতো।

কেন?

প্রেম নেশা পর্ব ২৫+২৬+২৭

এই গোলাপটা তোমার চুলের খোপায় গুজবো তাই।
শান্তনা বাধ্য মেয়ের মতো খোপা করে নিল আর মেঘ খুব ভালবেসে শান্তনার খোপায় গোলাপটা গেঁথে দিল।
বাহ!খুব ভালো লাগছে তো তোমাকে।

ধন্যবাদ ফুলটার জন্য। চলো এবার কোথাও গিয়ে বসি।দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।
তারপর মেঘ শান্তনাকে নিয়ে একটা ঝিলের পাশে গিয়ে বসে।বাদাম,,,ঝাল মুড়ি খেতে খেতে দুজনে খুব গল্প গুজব করে প্রাণ খুলে।

ম্যাম ওনারা ঝিলের কাছে বসে গল্প করছে এখন।(ফোনের এপাশ থেকে বলল একজন)

নাহহহহ,,, মস্ত এক হুংকার দিয়ে নিজের হাতে থাকা ফোনটা আছার মেরে ফেলে দেয় টিনা।অনেক হয়েছে মেঘ।তোমাকে অনেক বোঝাতে চেয়েছি আমার ভালবাসা।আর না।এবার আমাকে বিকল্প পথ খুজতে হবে তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য ।এবার আমার টার্গেট তোমাকে আমার প্রেমে ফালানোর নয়। কি করে তোমাকে আর শান্তনাকে আলাদা করবো সেটাই হবে আমার মুল লক্ষ্য।কারণ শান্তনাই যদি তোমার লাইফে না থাকে তাহলে তুমি তো এমনিতে আমার হবে।শুধুই আমার।
বলে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে টিনা।

প্রেম নেশা পর্ব ৩১+৩২+৩৩