প্রেম নেশা সিজন ২ গল্পের লিংক || Shantona Akter

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১+২
শান্তনা আক্তার

কলেজ ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র/ছাত্রী এবং শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সামনে জোড় করে শান্তনাকে কোলে তুলে নেয় তাহির।শান্তনা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য কিন্তু তাহিরের শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারছে না।কিভাবেই বা পারবে?ও যে একটা মেয়ে।অতিরিক্ত ভয়ে বেচারি সেন্সলেস হয়ে তাহিরের বাহুতে ঠলে পড়ে।সকলে হা হয়ে তাকিয়ে দেখছে তাহিরের কার্যকালাপ।কাউকে পরোয়া না করে তাহির শান্তনাকে গাড়িতে শুইয়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।গাড়ি গিয়ে থামে ডিরেক্ট কাজী অফিসের সামনে।তাহির গাড়ি থেকে নেমে শান্তনাকে পাজকোলে নিয়ে কাজী অফিসের ভেতর প্রবেশ করে।কাজী তাহিরকে দেখে বলে ওঠে,,,

আপনি কে?কি চাই?(আতংকিত হয়ে)

কথা কম তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেন বলে শান্তনাকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

কিন্তু স্যার উনি তো সেন্সলেস(কাজী বলল)

সেটা আপনাকে দেখতে হবে না বলে তাহির পাশে থাকা পানির বোতল টা হাতে নিল।তারপর সমস্ত পানিটা শান্তনার মুখে ঢেলে দিল।আচমকা এরকমটা হওয়ায় লাফ দিয়ে উঠে পড়ে শান্তনা।উঠেই কাশতে থাকে।তাহিরের এরুপ আচরণে কাজী ও ভয় পেয়ে যায়।

স্যার এটা কি করলেন? ওনি তো ভিজে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেটা আপনাকে দেখতে হবে না।আপনি আপনার কাজ করুন কুইক(বিশাল এক ঝারি দিয়ে)
এদিকে শান্তনা চারপাশে তাকিয়ে খুব বড় সড় একটা শক খেল।

একি আপনি আমাকে কাজী অফিসে কেন নিয়ে এসেছেন?

কাজী অফিসে মানুষ কেন আসে?অবভিয়াসলি বিয়ে করতে।

ব ব বিয়ে মা মানে?কার বিয়ে?

তোমার আর আমার।(বাকা হেসে বলল)

আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।আমাকে যেতে দিন এখান থেকে।আমি কুশালকে ভালবাসি আপনাকে না।শুনেছেন?

কুশালের হাত পা ভেঙে অলরেডি হাসপাতালে পাঠিয় দিয়েছে আমার লোকেরা।এখন থেকে আমার নাম থাকবে তোমার মুখে, ঠোঁটে,আনাচে কানাচে।কুশালের নাম নয়।কথাটা জেনো মাথায় থাকে।

কুশাল কোথায়?কি করেছেন ওর সাথে?কি করেছেন আমার কুশালের সাথে বলে তাহিরের কলার চেপে ধরল শান্তনা।তাহির শান্তনার হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে বলল,,,

এখনো তো কিছুই করিনি কুশালকে তবে তুমি যদি আমার কথা মতো না চলো তাহলে করতেও পারি।

আমি কুশালের কাছে যাব বলে উঠতে নিচ্ছিল কিন্তু,,,

তুমি যদি ভুলেও এই কাজ করো তাহলে তোমার ছোট ভাইয়ের মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দেব।ওইযে পিছনে দেখো।
তাহিরের কথা মতো শান্তনা পিছনে তাকায়।পিছনে যা দেখে সেটা দেখার জন্য শান্তনা মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।ওর চোখ যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম।

(নায়কের নাম চেঞ্জ করা হয়েছে)
শান্তনা দেখল ওর ছোট ভাই সাফিনের দু পাশ দিয়ে দুটো লোক দাঁড়িয়ে আছে।তারা সাফিনের মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে রেখেছে।
একি!সাফিন এখানে কেন?

আমি নিয়ে আসছি আমার কিউট শালাবাবুকে(পাশ থেকে মেঘ বলে উঠল)

ওর মাথায় পিস্তল ধরেছে কেন?ছেড়ে দিন ওকে।(কান্নাজড়িত কন্ঠে)
সাফিন ও শান্তনাকে দেখে কান্না শুরু করে দেয় আর বলে,,,,

আপু তুই আমাকে বাসায় নিয়ে চল।আম্মুর কাছে যাব আমি।এখানে ভালো লাগছে না আমার।

শান্তনা ওর ভাইয়ের কাছে যাবে কি মেঘ শান্তনার হাত ধরে নেয়,,
কোথায় যাচ্ছো সোনা?আগে বিয়ে তারপর ভাই।??

প্লিজ আমাকে আর সাফিনকে ছেড়ে দিন।আমরা তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি।প্লিজ আমি আপনার পায়ে পড়ি বলে মেঘের পায়ে পড়তে গেল কিন্তু মেঘ শান্তনাকে তুলে বলে,,

তুমি আমার পায়ে নয়,আমার বুকে থাকবে জাস্ট বিয়েটা করো।

আমি পারবো না আপনাকে বিয়ে করতে।আমি কুশালকে কথা দিয়েছি বিয়ে করলে ওকেই করবো তাই আমাকে মাফ করে দেন।আমি বিয়ে করতে পারবো ন ??

ওই তোরা শুট করে আমার শালাবাবুর মাথার খুলি উড়িয়ে দে(বেশ রেগে বলল মেঘ)

জ্বি বস(দুজন একসাথে বলে ওঠে)

নাহ!এরকম করবেন না প্লিজ।

ঠিক আছে করবো না যদি বিয়েতে রাজি হও তাহলে।নইলে আমার পেয়ারি শালাবাবুকে??

নাহ!আমি রাজি আপনাকে বিয়ে করতে(চোখ অফ করে বলে দিল)

এইতো আমার শোনা বউ।কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেন।

কিন্তু স্যার আপনি তো জোড় জবরদস্তি করছেন ওনার সাথে(শান্তনাকে দেখিয়ে)

it’s none of your business…got it?বেশি কথা বললে আপনাকে উপরে পাঠাতে আমার 1 সেকেন্ড ও লাগবে না।তাই নিজের ভাল চানতো বিয়েটা পড়ান তাড়াতাড়ি।আর আমাদের বিয়ের কাবিন ১ কোটি টাকা করবেন।

জ্ব জ্ব জ্বি স্যার।এরপর কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়।একটা রেজিষ্ট্রের কাগজ এগিয়ে দেয় মেঘের সামনে।মেঘ কাগজ হাতে নিতে দেড়ি নাম লিখা শেষ।তারপর শান্তনার কাছে কাগজটা এগিয়ে দিল আর পেনটা মেঘ নিজ হাতে শান্তনার আঙুলের ভাজে ঢুকিয়ে দিল।কাগজটার দিকে তাকাতেই শান্তনার চোখের পানি টলটল করে পড়তে শুরু করে।মেঘ শান্তনার চোখের পানিগুলো নিজের হাতে বন্দি করে নেয়।ওরযে ভালো লাগছে বা শান্তনার চোখের পানি দেখতে।ওতো চায়নি এভাবে জোড় করে বিয়ে করতে।কিন্তু কেন করলো সেটা জানতে হলে ওয়েট করতে হবে।এখন বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে যাক।
মেঘ দেখলে শান্তনা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে সাইন করার নাম গন্ধই নেই।

সাইন করছো না কেন?(রক্তচক্ষু নিয়ে বলল মেঘ)

,,,,,,,,,,,,নো রেসপন্স।

ওই তোরা শালাবাবুকে,,, কথাটা বলা মাত্র তড়িঘড়ি করে শান্তনাকে ম্যারেজ সার্টিফিকেটে সাইন করে দেয়।

এই না হলো মেঘ অবরয়ের বউ।??
সাথে সাথে কাজী সাহেব বলে ওঠে,,,

আজ থেকে আপনারা স্বামী-স্ত্রী।
মেঘ খুশি হয়ে কাজীকে ৫লাখ টাকার চেক দিলেন।
কাজী এতো গুলো টাকা এক সাথে পেয়ে বেশ খুশি হয়ে যায়।
শান্তনা যেন পাথর হয়ে গেছে।কি করলো ও সেটা ভেবে পাচ্ছেনা।ওর সামনে এখন শুধু কুশালের ফেসটাই ভেসে উঠছে বারবার।এদিকে মেঘ অনেকবার ডাকার পরও যখন শান্তনা সাড়া শব্দ করলো না তখন আলতো করে সেখানে উপস্থিত সকলের সামনে শান্তনার গালে চুমু খেল।সাথে সাথে শান্তনা নড়েচড়ে ওঠে।আর রাগে ওর গা ঘিনঘিন করতে থাকে।
এটা কোন ধরনের বেহায়াপনা???

কেন কেন?তুমি তো আজ থেকে আমার বউই।এখানে বেহায়াপনা কথাটা কেন আসছে? তোমাকে চুমু খাওয়াটা আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য।তাইনা বউ?

শান্তনা ওর গাল মুছতে মুছতে বলে,,এখন আমাকে আর আমার ভাইকে যেতে দিন এখান থেকে।

আমার শালাবাবু নাহয় যাবে আমার শ্বশুরবাড়ি কিন্তু আমার বউ কেন যাবে?মানে সেতো তার শ্বশুরবাড়ি যাবে তার স্বামীর সাথে।

মানে?

মানেটা হলো আইন অনুযায়ী তুমি আমার বউ তাই তোমাকে আমার সাথেই তো যেতে হবে।তাই নয়কি?

আমি আপনার সাথে থাকতে পারবো না।

আলবাদ পারবে নইলে তোমার ভাই মানে আমার কিউট শালাবাবুর মুখ পুনরায় আর দেখতে পারবে না।এখন তুমি কি চাও তাই বলো?ভাইয়ের জীবন?নাকি নিজের জীবন?
মেঘ দেখল শান্তনা কোনো উত্তর দিলনা।তারমানে ও বুঝে গেছে শান্তনা ওর সাথেই যাবে।

আপু আমি আম্মুর কাছে যাব।এখানে আর ভালো লাগছে না।ওই আংকেল গুলোকে বল আমাকে ছেড়ে দিতে।(সাফিন কান্না করছে আর বলছে।)

যাবে তো শালাবাবু।কিন্তু তুমি একা।মানে তোমার আপু যাবেনা তোমার সাথে।

আপু কেন যাবেনা?আপুও যাবে আমার সাথে।

তোমার আপুর সাথে যে আমার মাত্র বিয়ে হলো তুমি দেখলে না?তোমার আপু তো আমার বউ এখন থেকে।

কিন্তু আপুকে তো বউ লাগছে না।বউ তো লাল শাড়ি পড়ে।খুব সুন্দর হয়।আপু তো কলেজের জামা পড়ে আছে।

সেটাও হবে শালাবাবু কিন্তু পরে তোমার বাবা মা আসবে তখন।

কোথায় আব্বু আম্মু?আমি যাব তাদের কাছে।

যাবে তো এখন।এই তোরা আমার শালাবাবুকে আমার শ্বশুরবাড়ি তে দিয়ায়।

ওকে বস।

কিন্তু আমার আপু যাবেনা?

একটু পরে আসবে তুমি যাওয়ার পর।

আচ্ছা তাহলে।বায় আপু(বড় এক হাসি দিয়ে)কিন্তু ওতো বুঝলো না ওর আপু আর কোনোদিন ও যেতে পারবে না ওদের কাছে।
যতক্ষণ সাফিনকে দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ শান্তনা সাফিনের দিকে তাকিয়ে থাকল নিজের ভেজা চোখ দিয়ে।

এবার চলো আমরাও যাই আমাদের বাড়ি।বলে মেঘ শান্তনার হাত ধরে টেনে গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে বসিয়ে দিল।
ওরা বাড়ি যেতে যেতে ওদের পরিচয় টা ক্লেয়ার করে দেই।

মেঘ হচ্ছে গল্পের নায়ক।বাবা রুহুল অবরয়ের একমাত্র সন্তান।মা নেই।কয়েকবছর আগে মারা গেছে।তবে দাদি আছে।ঢাকাতে প্রায় সবাই রুহুল অবরয়কে এক নামেই চেনে সাথে মেঘকেও।অন্যদিকে শান্তনা হচ্ছে সাধারণ পরিবারের মেয়ে।মেঘের বাবার প্রাইভেট কার ড্রাইভার।শান্তনা জিল্লুর রহমান আর মিলি বেগমের একমাত্র মেয়ে।ওরা দুইভাই বোন।ভাই সাফিন এবার প্লে গ্রুপে এডমিশিন নিয়েছে।আর শান্তনা এসএসসি দিয়ে সদ্য কলেজে উঠেছে।৩-৪মাস আগে ও কুশালের সাথে রিলেশনশিপে যায়।আর এই কয় মাসেই ও কুশালকে খুব বেশি ভালবেসে ফেলে কুশালও সেম।কুশাল এবার অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।খুব মেধাবী ও।ওদের ভার্সিটির পাশের কলেজটাতেই শান্তনা এডমিশন নিয়েছে ঠিক সেখান থেকে ওদের পরিচয়।তারপর থেকে দেখা সাক্ষাৎ হয় ধিরে ধিরে ওরা একে অপরকে ভালবেসে ফেলে।কিছুদিন আগে ওরা ঠিক করেছিল বিয়ে করবে কুশাল ভালো একটা জব পেলেই।কিন্তু তা আর হলো না।ওদের সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে মাটিতে লুটিয়ে গেছে।মেঘ এসে সব তছনছ করে দিয়েছে।এখন দেখা যাবে কোন দিকে মোড় নেয় মেঘ, শান্তনা,কুশাল এই ৩ জনের জীবন।

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৩+৪