ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ৪

ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ৪
লেখকঃ আবীর হোসেন।

চোখের জল মুছে মারিয়া নামটা বলবে ঠিক এমন সময় একটা গু*লি এসে মারিয়ার বুকের ডানপাশে লাগে। মারিয়া লুটিয়ে পড়লো রাস্তায়।
দ্বিতীয় গুলিটা এসে লাগার আগেই আয়ান হ্যাঁচকা টানে মারিয়াকে সরিয়ে এনে পাজাকোলা করে তুলে গাড়িতে বসিয়ে ফুল স্পিডে গাড়ি নিয়ে চললো। একটা কালো মাইক্রোবাস দীর্ঘসময় আয়ানকে ধাওয়া করতে থাকে, আয়ানের গাড়ি নির্জন পথ পাড়ি দিয়ে শহরে ঢোকা মাত্রই গাড়িটা কেটে পরে।

একটা হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি পার্কিং করে দ্রুত মারিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার জানায় জরুরী অপারেশন করতে হবে।
মারিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে চেয়ারে বসে টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে আয়ানের। অবনী কোথায় আছে কেমন আছে! তবে আয়ান একটু জানে অবনী ভীষণ বুদ্ধিমতী এবং আত্মরক্ষার কৌশল অবনীর জানা আছে। আত্মরক্ষার তিন মাসের একটা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল অবনী। আল্লাহ সহায় থাকলে অবনীর কিছু হবেনা। কিন্তু ফাঁদের অন্তরালে কে রয়েছে সেটা আর জানা হলোনা, মারিয়ার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত আর সেটা জানাও সম্ভব নয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এদিকে মজনুও বসে নেই। পার্টি টাইম নাইটক্লাবে এসে কর্ণারে একটা টেবিলে বসে বিয়ারের অর্ডার করে। একটা ছেলে এসে টেবিলের ওপর বিয়ারের বোতল ও একটা গ্লাস রেখে বললো– নিন স্যার সময়কে উপভোগ করুন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মজনু বললো– আর উপভোগ, পায়ে পায়ে শুধু দুর্ভোগ।
ছেলেটা অবাক হয়ে বললো– কেন স্যার।
মজনু আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো– প্রেম পিরিতের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করলে কতজন প্রেমিকের কথা মাথায় আসে তোমার?

ছেলেটা বললোঃ রোমিও, দেবদাস, মজনু, আপাতত এই তিনজনের কথা মাথায় আসে স্যার।
: আমিও ঐ তিনজনেরই একজন বুঝলি?
: ঠিক বুঝলাম না স্যার।
: আমি মজনু, এবার বুঝছো?
: তো আপনি একা কেন লায়লা ম্যাডাম কোথায়?
: মজনুদের কপালে লায়লা ম্যাডামরা দীর্ঘস্থায়ী হয়না রে, সে থাকলে কি আর এখানে বিয়ার খেতে আসতাম! তাকে নিয়ে ফুচকা বাদাম খেতাম।

: স্যার মনে হয় সদ্য ছ্যাঁকা খেয়েছেন।
: হুম গুড, এইবার বুঝছো। ছ্যাঁকার পরে এখন বিয়ার খেয়ে ঘুমাতে চাই লম্বা ঘুম, একেবারে মরার মতো ঘুম। তোদের বিয়ার খেলে ওরকম ঘুম হবে তো?
: স্যরি স্যার, তাহলে বিয়ার নয়, আপনার পাওয়ারফুল ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিৎ।
এবার মজনু উঠে দাড়িয়ে ঠাস করে ছেলেটার গালে একটা থাপ্পড় মেরে আয়ান ও মারিয়া যেদিন এখানে এসে বিয়ার খেয়েছিল সেদিনের কথা বলে বললো– তাহলে আমার বন্ধু তোদের এখানের বিয়ার খেতে মরার মতো ঘুমিয়ে ছিল কেন? কি ছিল সেই বিয়ারে সত্যি করে বল।

ছেলেটা ভীষণ ভড়কে গিয়ে বললো– স্যার আমি কী করে বলবো, ঐদিন তো আমি ডিউটিতে ছিলাম না।
ইতিমধ্যে ক্লাবের ম্যানেজার এসে উপস্থিত হয়ে মজনুর কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলো।
মজনু নিজেকে গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে বললো– আপনাদের গাফেলতির কারণে আজ চারটি জীবন মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গেছে ইতিমধ্যে। তাদের যদি কিছু হয় ক্লাব সহ আপনি চিরদিনের জন্য চান্দে চলে যাবেন বলে দিলাম। এই মুহূর্তে আমি সেই দিনের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাই।

মজনুকে নিয়ে ম্যানেজার কন্ট্রোল রুমে এসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে শুরু করে। ক্লাবের সামনের দিকের ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় ঐদিন দুপুরের পরে তিনটার দিকে একটা কালো প্রাইভেটকার এসে থামে, যে ছেলেটা সেই রাতে আয়ানের টেবিলে বিয়ার দিয়েছিল সেই ছেলেটাই গাড়ির কাছে গিয়ে দাড়ায়। গাড়ির ফ্রন্টের দরজার উইন্ডো গ্লাস ডাউন হয় এবং মারিয়াকে দেখা যাচ্ছে।

দীর্ঘসময় ছেলেটা এবং মারিয়া কথাবার্তা বলে এবং কথাবার্তা শেষে মারিয়া একটা শপিং ব্যাগ দেয় ছেলেটার হাতে। ছেলেটা ব্যাগটা নিয়ে ভেতরে চলে আসে এবং মারিয়াকে বহনকারী কালো প্রাইভেটকারটা চলে যায়।
ঠিক ঐ কালো গাড়িটা আবার সন্ধ্যার পরে ফিরে এসে মারিয়াকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। সেই ছেলেটা আবার ক্লাব থেকে বেরিয়ে এসে মারিয়াকে নিয়ে ক্লাবের ভেতরে চলে আসে।
মজনু বললো– ঐ ছেলেটা এখন কোথায়?

ম্যানেজার বললো– ওর নাম রাহাত, ঐদিনের পরদিন হঠাৎ বললো ওর ইমার্জেন্সি ছুটি লাগবে ওর মা ভীষণ অসুস্থ তাই, মাকে নিয়ে গিয়ে শহরে ডাক্তার দেখাবে।
– আচ্ছা রাহাতের এড্রেসটা একটা কাগজে লিখে দিন জলদি করে– মজনু বললো।
ম্যানেজার জলদি করে লিখে মজনুর হাতে কাগজটা দিলো।

মজনু পকেট থেকে মোবাইল বের করে আয়ানকে কল দিয়ে বললো– আচ্ছা মারিয়া মেয়েটা কোথায় আছে এখন আয়ান।
আয়ান বললো– মজনু, মারিয়া আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে এমন সময় দূর থেকে কেউ গুলি করে এবং গুলিটা মারিয়ার বুকের ডানপাশে লাগে। এখন ও হাসপাতালে আছে অপারেশন থিয়েটারে। আমিও এখানে আছি।
কল কেটে ফোন পকেটে রেখে ম্যানেজারকে মজনু বললো– রাহাতের ফোন নাম্বারটি দিন তো।
পাশে দাড়ানো ছেলেটা বললো– স্যার ওর ফোনের সুইচ অফ, অনেকবার কল করে বন্ধ পেয়েছি।

– তাহলে ওর সাথে যোগাযোগ করার উপায়? যোগাযোগ করতে না পারলে ও হয়তো আরও বড়ো ঝামেলায় ফেঁসে যেতে পারে– মজনু বললো।
ছেলেটা বললো– স্যার ওর গার্লফ্রেন্ড এর ফেসবুক আইডি আমি জানি, ওর গার্লফ্রেন্ডকে নক করলে হয়তো কিছু একটা হতে পারে।

– আইডি নাম বলো– মজনু বললো।
ছেলেটা বললো– ওনার আইডি নাম অরণী মেঘ।
অরণী মেঘ লিখে সার্চ করতেই অনেকগুলো আইডি আসলো। ছেলেটা একটা আইডি দেখিয়ে বললো– স্যার ঐ যে যেটার প্রফাইল পিকচারে একটা জ্বলন্ত মোমবাতির ছবি দেয়া ওটা।
মজনু আইডিতে ক্লিক করে ছেলেটিকে বললো– অরণীর প্রোফাইল পিকচার জ্বলন্ত মোমবাতি দেবার কারণ কি জানিস?
ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো– না স্যার।

মজনু বললো– কারণ হলো অতিরিক্ত লোডশেডিং। অরণীর মতে কারেন্টের যে অবস্থা তাতে একমাত্র মোমবাতির ওপরই ভরসা রাখা যায়।
মজনুর কথা শুনে ছেলেটা এবং ম্যানেজার হেসে ফেললো।
ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাবের বাইরে বেরিয়ে এসে অরণীর ইনবক্সে নক করলো মজনু– হাই, আপনি কি অরণী?
প্রায় বিশ মিনিট পরে রিপ্লাই এলো– না আমি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রিপ্লাই দেখে মজনু টাশকি খেয়ে গেল। মজনু লিখলো– মানে?
অরণী লিখলো– মানে আবার কী! অরণীর আইডিতে নক করে আবার জিজ্ঞেস করছেন অরণী কিনা!
মজনু মনে মনে ভাবছে– এমন ঠোঁটকাটা স্বভাবের মেয়ে রাহাত সামলায় কীভাবে।
আবার মেসেজ এলো– তো আপনি কে মশাই?

: আমি মজনু।
: মজনুদের স্বভাব তো এমন হয়না, তারা একজনে আসক্ত হয়, আপনি মিঞা রাতবিরেতে মেয়েদের ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে মজনু নামের বারোটা বাজাচ্ছেন।
: হা হা হা, আপনি অনেক মজার মানুষ। আচ্ছা এবার আসল কথায় আসি, রাহাতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আপনার সাথে। যদি কিছু মনে না করেন কলে বলতে চাই।

রাহাতের কথা শুনে একটু থমকে গেল অরণী। তারপর লিখলো– ওকে কল দিতে পারেন সমস্যা নেই।
কলে বিস্তারিত সবকিছু অরণীকে বলার পরে অরণী বললো– রাহাত বললো কি একটা ঝামেলার কারণে ওর আগের নাম্বার চেঞ্জ করেছে। দাড়ান ওর নতুন নাম্বারটা আমি আপনার ইনবক্সে দিয়ে দিচ্ছি।
অরণী নাম্বার পাঠালো–……. 263340

ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ৩

রাত গভীর, মজনু একটা টেক্সি ডেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলো।
রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে দুপুর, জঙ্গলে অবনীকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান গুন্ডাগুলো।
হঠাৎ গুন্ডাগুলো দেখলো একটা ঝোপের ভেতর অবনী গুটিশুটি মেরে বসে আছে লতাপাতা দিয়ে নিজেকে ঢেকে।
গুন্ডারা সবাই ধীর পায়ে এসে ঝোপের চারপাশে ঘেরাও করলো, অবনীর আর পালানোর রাস্তা নেই।
একজন গার্ড পিস্তল বের করে অবনীর দিকে তাক করে…

ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ৫