বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২০

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২০
লেখিকা: তানজিল মীম

আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে আছে আহি। কি করবে না করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে? আহি বুঝতে পারছে না হুট করে কি হলো আদ্রিয়ানের যে এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেল। হঠাৎই আহির মাথায় বুদ্ধি আসলো সাথে সাথে সে খুঁজতে লাগলো আদ্রিয়ানের ফোন। তারপর অনেক খুঁজে আহি আদ্রিয়ানের পকেট থেকে তাঁর ফোনটা বের করলো কিন্তু আদ্রিয়ানের ফোনের পাসওয়ার্ড তো জানে না ভেবেই নিরাশ হয়ে পড়লো সে। পরক্ষণেই ফিংগার পিনের কথা মনে পরতেই আহি আদ্রিয়ানের আঙুল ছোঁয়ালো মোবাইলের পিছনে সাথে সাথে মোবাইল খুলে গেল। মোবাইল খুলতেই যেন সস্থির নিশ্বাস ফেললো আহি। তারপর খুজতে লাগলো সে নিলয়ের নাম্বার। কিছুক্ষনের মধ্যে পেয়ে গেল প্রথম কল না ধরলেও দ্বিতীয় কল ধরলো নিলয়। নিলয় ফোন তুলতেই বললো আহি,

‘ হ্যালো…
‘ হুম বল আদ্রিয়ান?’
‘ আমি আদ্রিয়ান নই ভাইয়া।
এতটুকু বলে সবকিছু খুলে বললো সে নিলয়কে।
আহির কথা শুনে অপরপাশে নিলয় চিন্তিত মাখা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,
‘ টেনশন নিও না আমি এক্ষুনি আসছি।’
‘ ঠিক আছে ভাইয়া।’
বলেই ফোন কেটে দেয় আহি। তারপর অপেক্ষা করে সে নিলয়ের জন্য। সময়টা প্রায় তখন ৫ টা ছাড়িয়ে গেছে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। জায়গাটা ভীষনই নিরিবিলি, এতটাই নিরিবিলি যে এখানে মেরে রেখে গেলেও কেউ খুঁজতে পাবে না বা খুজতে আসবে না। সাধারণত আহির এখানে আসার একমাত্র কারন হলো আহির খরগোশ যেটা বর্তমানে তাঁর থেকে কিছুটা দূরে চুপচাপ বসে আছে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কতক্ষণ আগেই খরগোশ ছানাকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়ে ছিল আহি। হঠাৎই খরগোশ ছানা আহির কোল থেকে লাফ মেরে নেমে চলে আসে এখানে। ভিতরে ঢুকতেই সামনে আদ্রিয়ানকে মাথা চেপে ধরে দাঁড়াতে দেখে সে দৌড়ে আসে এখানে। সে বুঝে উঠতে পারে না এই খরগোশ ছানার সাথে কি আদ্রিয়ানের কোনো কানেকশন আছে যখনই দৌড়ায় তখনই আদ্রিয়ান সামনে আসে। আহি এইবার পুরো জায়গাটার দিকে ঘুরে তাকালো। পুরো জায়গাটা দেখতেই তাঁর মনে পড়লো তার প্রিয় কুকুর ছানাটা এখানে মারা গিয়েছিল। তবে কুকুর ছানাটার জন্য যতটা না খারাপ লাগছিল তাঁর থেকেও বেশি ভালো লেগেছিল সে একটা বাচ্চা ছেলেকে একটা বাজে লোকের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিল। পুরোপুরি মনে নেই আহির তখন খুব ছোট ছিল কি না।

এই রকমই এক দুপুর বেলা সে তাঁর কুকুর ছানাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল হঠাৎই কুকুর ছানাটা দৌড়ে চলে আসে এই বাড়িটার ভিতর। আহিও ছুটতে ছুটতে চলে আসে এখানে হঠাৎই ভিতরে কারো কন্ঠ কানে আসতেই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে সে একটা বাচ্চা ছেলের মুখে একটা লোক পিস্তল ঢুকিয়ে কিছু বলছে। সাথে সাথে আহি দৌড়ে গিয়ে রাস্তার একটা লোককে টেনে দেখায়। লোকটি বিষয়টা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে পুলিশকে। কিছুক্ষনের মধ্যে পুুলিশও চলে কিন্তু আহি তাঁর কুকুর ছানাকে বাঁচাতে পারে নি কারণ ওটা হুট করেই দৌড়ে ভিতরে গিয়ে ঘেউঘেউ করা শুরু করে দেয়। ব্যস এরপর আর মনে নেই আহির। এগুলোও মনে থাকতো না যদি না সেদিন মায়ের মুখে শুনতো। কুকুর ছানাকে খুব ভালো বাসতো আহি।’– কথাগুলো ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসলো আহির আজও সেই কুকুরটার জন্য কষ্ট হয় তাঁর। এমন সময় আহির ভাবনার মাঝখানে সেখানে উপস্থিত হলো নিলয়। এক প্রকার দৌড়ে ভিতরে ঢুকলো সে। তারপর আহির সামনে বসে বললো সে,

‘ এসব কি করে হলো?’
‘ আমি জানি না উনি হুট করেই এখানে অজ্ঞান হয়ে গেছেন।’
আহির কথা শুনে আর কিছু না বলে নিলয় তাঁর হাতে করে আনা বোতলটা খুঁলে আদ্রিয়ানের মুখে পানির ছিঁটে দিতে লাগলো। পর পর দু’বার পানির ছিঁটে দিতেও আদ্রিয়ানের হুস না আসলেও তিনবারের বার পানির ছিঁটে দিতেই চোখ খুলে তাকালো সে।’
মিট মিট চোখে তাকালো আদ্রিয়ান আশেপাশে। পরক্ষণেই সামনে নিলয় আর আহিকে দেখে চটজলদি উঠে বসলো সে। এখানে ঠিক কি হয়েছিল সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিল সে। নিলয় আদ্রিয়ানকে উঠতে দেখে বলে উঠল,
‘ কি হয়েছিল তোর আর এখানে কি করছিস তুই? তুই তো বলেছিলি বাড়ি যাবি তবে এখানে কেন আসলি?’
নিলয়ের কথা শুনে পর পর সবকিছু মনে করতে লাগলো আদ্রিয়ান। সব মনে পড়তেই আদ্রিয়ান এক পলক আহির দিকে তেমন কিছু না বলে শুধু বলে উঠল নিলয়কে,
‘ I want to go home, Nilay?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয়ও একবার আহির দিকে তাকিয়ে বেশি জোরাজোরি না করে বললো,
‘ okk’

গাড়ির পিছন সিটে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আদ্রিয়ান। মাথা ভন ভন করছে তার,সাথে কয়েক মুহূর্ত আগে কি কি ঘটলো সেগুলোও ঘুরপাক খাচ্ছে চারপাশে। আদ্রিয়ানের মনে পড়েছে তাঁর অতীতের সাথে একটা মেয়েও ছিল যে তাকে সেদিন বাঁচিয়ে ছিল সাথে তাঁর ভয় কমানোর জন্য তাকে জড়িয়ে ধরতে বলছিল। হুট করেই আদ্রিয়ানের মাথায় একটা কথা এসে মাথা বারি মারলো খুব,
‘ তবে কি সেই বাচ্চা মেয়েটা আহি ছিল?’
কথাটা মাথায় আসতেই চোখ খুলে ফেললো আদ্রিয়ান। কেমন যেন এলেমেলো লাগছে সব কিছু।’
অন্যদিকে,
ভাঙা চোড়া বাড়িটার দরজার সামনের চার সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে আছে আহি আর তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে নিলয়। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,

‘ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তুমি না থাকলে হয়তো…
নিলয়ের পুরো কথা শেষ করার আগেই বলে উঠল আহি,
‘ ইট’স ওকে ভাইয়া আর ধন্যবাদ আমায় নয়,
এতটুকু বলে নিচ থেকে তাঁর খরগোশ ছানাকে কোলে তুলে নিয়ে নিলয়কে দেখিয়ে বললো,
‘ ওকে দিন ওর জন্যই আমি এখানে এসেছিলাম ও যদি দৌড়ে এখানে না আসতো তাহলে হয়তো আমিও এখানে আসতাম না। আসলে এইখানে তেমন কেউ আসে না, কে জানে উনি কেন আসছিলেন। যাগ গে বাদ দিন, আমায় যেতে হবে ভাইয়া সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এরপর বেশি দেরি করলে মা বকবে।’
বলেই খরগোশ ছানাকে কোলে নিয়েই দৌড়ে চলে যেতে নিল আহি। আহিকে যেতে দেখে বলে উঠল নিলয়,
‘ আমি তোমায় গাড়ি করে পৌঁছে দেই?’

‘ ইট’স ওকে আমি যেতে পারবো আর এখান থেকে আমাদের বাসা খুব বেশি দূরে নয় তাই টেনশন নিবেন না আমি যেতে পারবো।’
বলেই চলে যায় আহি। অবশ্য যাওয়ার আগে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। আদ্রিয়ান তখন অন্যদিক তাকিয়ে ছিল। অতঃপর আদ্রিয়ানের গাড়ি টপকে সামনের দিক দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল আহি। আর অন্যদিকে নিলয় একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে যায় আদ্রিয়ানের কাছে। তারপর বলে,
‘ তাহলে যাওয়া যাক?’
বলেই গাড়ি স্ট্যার্ট দেয় নিলয়। নিলয় গাড়ি স্ট্যার্ট দিতেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,
‘ আমার গাড়িটা যে ওখানে আছে?’
‘ চিন্তা করিস না ওটা তোকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিবো।’
উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু বললো না। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে নিলয়ও আর কিছু না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল নিজেদের গন্তব্যের দিকে।’

খরগোশ ছানাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল আহি তার বাড়ির সামনে। আহি এগোচ্ছে আর বলছে,
‘ আচ্ছা তোর কি ওই রাগী মানুষটাকে খুব ভালো লেগেছে যাঁর কারনে ছুটে ছুটে চলে যাস ওনার কাছে। তবে যাই বল আজকে ওনার সামনে গিয়ে ভালোই হলো।’
বলেই মুচকি হেঁসে চুমু কাটলো আহি তার খরগোশ ছানাকে। এমন সময় বাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে আসছিল নীরব। চোখে কালো চশমা, কালো জিন্স সাথে নেভি ব্লু কালারের টিশার্ট। হুট করে নীরবকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলো আহি পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো সে। আর এদিকে নীরবও আহিকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ তুই এই সন্ধ্যা বেলা কোথা থেকে ফিরছিস আর সারাদিন থাকিস কই তোকে তো দেখাই যায় না?’
নীরবের কথা শুনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আহি তারপর বললো,

‘ আসলে হয়েছে কি ভাইয়া একটা হসপিটালে বাচ্চাদের দেখা শোনা করার পার্ট টাইম জব নিয়েছি তাই আর কি?’
‘ ওহ।’
‘ হুম তা তুমি কোথায় যাচ্ছো?’
‘ একটু সামনে কিছু কাজ আছে।’
‘ ওহ যাও তবে পড়ে কথা হবে।’
‘ হুম তুইও যা?’
‘ জ্বী ভাইয়া।’
উওরে নীরবও আর কিছু না বলে এগিয়ে গেল সামনে। আর আহি কিছুক্ষন নীরবের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে খুশি মনে নাচতে নাচতে চলে গেল ভিতরে।’

সোফার উপর বসে আছে আদ্রিয়ান। কিছুক্ষন আগেই ঢুকেছে তাঁরা বাড়িতে। নিলয় একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে সামনের টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ এটা খা?’
উওরে আদ্রিয়ানও আর কিছু না বলে চটজলদি পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে নিলো সবটা। আদ্রিয়ানের পানি খাওয়া শেষ হতেই নিলয় পানির গ্লাসটা আদ্রিয়ানের হাত থেকে নিয়ে রাখলো টেবিলের উপর তারপর আদ্রিয়ানের পাশে বসে বললো,
‘ এখন বল তো কি হয়েছিল তোর?’
নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান তাকালো নিলয়ের দিকে তবে কিছু বললো না। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে কিছুটা নিরাশ হয়ে বলে উঠল নিলয়,

‘ কি হলো চুপ করে আছিস কেন এমনিতেও ইদানীং দেখছি তোকে তুই ঠিক নেই। ঠিক মতো কাজে মন দিচ্ছিস না,শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে আসার পর থেকেই কেমন একটা হয়ে গেছিস তুই, বল আমায় কি হয়েছে তোর?’
নিলয়ের এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান আর চুপ থাকতে পারলো না পর পর সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলো সে নিলয়কে। শ্রীমঙ্গলের সেই বৃষ্টি ভেজা রাতে আহির তার কাছে আসা, সাথে মাঝরাতে তাকে জড়িয়ে ধরতেই চেনা চেনা স্পর্শের অনুভূতি পাওয়া, তারপর মিসেস লিনাকে সব খুলে বলা আর লাস্ট কিছুক্ষন আগে হয়ে যাওয়া সব ঘটনাই খুলে বললো সে নিলয়কে। নিলয় তো সব শুনে চরম অবাক। নিলয় অবাক হয়েই বললো আদ্রিয়ানকে,

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ১৯

‘ তাঁর মানে তোর অতীতের সাথে আহির কানেকশন আছে ও মাই গট এটা তো একদমই আনএক্সপেকটেড বিষয়।’
‘ তোর মতো আমিও খুব অবাক তবে এখনও পুরোপুরি শিওর নই আমি। মেয়ে তো একটা ছিল কিন্তু সেটা যে ওই মেয়েটাই এটা বুঝবো কি করে?’
উওরে নিলয় আর কিছু বললো না। কিছুক্ষনের নীরবতা নেমে আসলো তাদের দুজনের মাঝে। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,
‘ এখন কি করবি তবে, নিবি কি আহির হেল্প?’
নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে উঠল,
‘ i don’t know…
____
পরের দিন ভার্সিটিতে…

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২১