বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২১

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২১
লেখিকা: তানজিল মীম

পা টিপে টিপে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে এগোচ্ছে আহি। কাল হসপিটালে তার প্রথমদিন থাকায় ভার্সিটি আসতে পারে নি সে। কিন্তু এরপর আর প্রবলেম হবে না ভার্সিটি শেষে হসপিটাল যাবে আহি। এই জবটা পাওয়ার একমাত্র কারন হলো রিনি, তাঁর পরিচিত একজন কলিগের সাহায্যে এই জব পাইয়ে দিয়েছে আহিকে। এসব ভাবতে ভাবতেই এগোচ্ছিল আহি। এমন সময় তার দিকে এগিয়ে আসছিল রিনি আর অথৈ। তাঁরা আহির কাছে এগিয়ে এসে বললো,

‘ কি রে কেমন আছিস কাল থেকে তো, তোর কোনো খোঁজই নেই।’
ওদের কথা আহি একটু হেঁসে বললো,
‘ ওই একটু।’
‘ তা কালকের জবের ফাস্ট ডে কেমন কাটলো তোর?’ (রিনি)
‘ হুম খুব ভালো তোরা তো জানিসই বাচ্চাদের আমার কতো ভালো লাগে সেই হিসেবে জবটা পেয়ে আমি খুব খুশি।’
‘ হুম তা তো তোর চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি (অথৈ)
উওরে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বললো আহি,
‘ ওই আর কি চল ক্লাসে যাওয়ার যাক।’
‘ হুম।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই তিনজন একসাথে চললো কিছুদূর যেতেই আহি রিনি একদিকে আর অথৈ একা অন্যদিকে চলে গেল।’
অতঃপর আজকের মতো ভার্সিটি শেষ করে যে যার বাড়ি যাবে এখন। অথৈ বাস ধরার জন্য চলে গেল, আর রিনি গাড়ি করে চলে গেল। আর আহি আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছে। এখান থেকে সে সোজা হসপিটাল যাবে তারপর ওখান থেকে সোজা বাড়ি। আজ একবারও নীরবের সাথে দেখা হয় নি আহির এর জন্য মনটা হাল্কা খারাপ তাঁর। আনমনেই নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলতে লাগলো আহি। এমন সময় হুট করেই তাঁর সামনে একটা ইয়া বড় কালো গাড়ি এসে থামলো। হুট করে এমন ভাবে গাড়িটা সামনে চলে আসাতে পুরোই চমকে উঠলো আহি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে গাড়িটার দিকে তাকালো সে। এরই মধ্যে গাড়ি ভিতর থেকে কালো কোট পরিধিত দুটো লোক বেরিয়ে এসে বলে উঠল আহিকে,

‘ ম্যাম আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে?’
হুট করে অচেনা দুটো লোকের মুখে এমন কথা শুনে আহি আশেপাশে তাকালো আসলে সে বুঝে উঠতে পারলো না কথাটা আসলে কাকে বললো লোকগুলো। আহিকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে আবারো বলে উঠল লোকগুলো,
‘ আমরা আপনাকেই বলছি ম্যাম?’
এবার যেন সত্যি সত্যি আহির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। আহি নিজের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,
‘ আপনারা আমায় ম্যাম বলছেন কেন, আমার মনে হয় আপনাদের কোথায়ও একটা ভুল হচ্ছে, আমি আপনাদের ম্যাম নই।’
আহির কথা শুনে লোকদুটো আবারো একসাথে বলে উঠল,

‘ আমাদের কোনো ভুল হচ্ছে না ম্যাম এই দেখুন আপনার ছবি।’
বলেই আহির সোজাসুজি থাকা লোকটি তার মোবাইলটা দেখালো আহিকে। সত্যি সত্যি এদের হাতে নিজের ছবি দেখে পুরোই চমকে উঠলো আহি। চোখ বড় বড় করে বললো সে,
‘ এটা তো আমারই ছবি।’
‘ জ্বী ম্যাম আপনারি ছবি আপনাকে আমাদের বস আমাদের সাথে যেতে বলেছে।’
লোকটির কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বললো আহি,
‘ যেতে বলেছে মানে এইভাবে হুট করে যেতে বলতেই আমি যাবো না কেন আর আপনাদের বস কে?’
‘ দেখুন ম্যানন নাম বলা যাবে না আপনাকে যেতে বলেছে আর আপনাকেই যেতে হবে।’
‘ আমি যাবো না আপনারা আপনাদের বসকে গিয়ে বলুন আমি যাবো না বলা নেই কওয়া নেই হুট করে যেতে বললেই যাবো নাকি আমি।’

বলেই চলে যেতে নিলো আহি। আহিকে যেতে দেখে লোকদুটো আহির পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ আপনাকে তো এভাবে যেতে দেওয়া যাবে না।’
‘ দেখুন আমি আপনাদের কোনো বসকে চিনি না তাই আমায় যেতে দিন।’
‘ এটা বললে তো হবে না আমাদের বসের অর্ডার ম্যাম পালন তো করতেই হবে।’
‘ দূর এ কোন মুসিবতে পরলাম আমি।’
‘ আপনাকে যেতে হবে ম্যাম বসের অর্ডার।’
লোকগুলোর কথা শুনে বেশ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
‘ আপনাদের বস কে বলুন তো?’
‘ নাম বলা যাবে না ম্যাম।’
আহি কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে বলে উঠল,

‘ আচ্ছা আপনারা আমায় ধরে নিয়ে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটছেন না তো?’
আহির কথা শুনে লোকগুলোর চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম। কিছুটা নিরাশ হয়ে বললো তাঁরা,
‘ না ম্যাম এটা একদমই আপনার ভুল ধারণা।’
‘ তাহলে আপনারা আমায় কেন নিতে চাইছেন বলুন তো?’
এবার যেন আহির কথা শুনে বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেছেন তাঁরা। চরম মার্কার বিরক্ত থাকা সত্বেও ঠান্ডা গলায় আবারো বলে উঠল লোকগুলো,
‘ আপনাকে বস আমাদের সাথে যেতে বলেছে ম্যাম প্লিজ চলুন আপনি গেলেই সবটা বুঝতে পারবেন।’
‘ কিন্তু আমার যে এখন কাজ আছে?’

‘ সেটা নিয়ে ভাববেন না বস দেখে নিবেন আপনি শুধু চলুন আমাদের সাথে।’
লোকগুলোর এবারের কথা শুনে গভীর ভাবনায় মগ্ন হলো আহি। মনে মনে ভাবছে সে__
‘ এখন আমি কি করবো এদের সাথে যাবো নাকি মনে তো হয় না এঁরা আমাকে এমনি এমনি যেতে দিবে। এদের দেখেও তো মনে হচ্ছে না এঁরা খারাপ মানুষ কানে ব্লুটুথ, চোখে কালো চশমা পোশাক আসাক দেখে বোঝাই যাচ্ছে এঁরা কারো গার্ড কিন্তু এঁরা আমায় কেন নিতে আসছে আর বসটাই বা কে? আমার ছবিও বা পেলো কোথায়?
— এরকম নানা প্রশ্ন মাথা ঘুরপাক ঘুরপাক খাচ্ছে আহির। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহির ভাবনার মাঝে আবারো বলে উঠল লোকগুলো,
‘ কি হলো ম্যাম চলুন?’

লোকগুলোর কথা শুনে হাল্কা চমকে উঠলো আহি পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে শেষমেশ বাধ্য হয়ে বললো সে,
‘ ঠিক আছে চলুন গিয়ে দেখা যাক আপনাদের বসটা কে?’
আহি গাড়ি দরজা পর্যন্ত আসতেই একজন লোক গাড়ির দরজাটা খুলে দিলো। এদের কাজ কর্মে বেশ অবাক আহি তবে আপাতত সেসব কিছু না ভেবে আস্তে গিয়ে বসে পড়লো সে গাড়িতে। আহি ভিতরে বসতেই আবারো একজন গার্ড গাড়ির দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়লো সামনের ড্রাইভিং সিটে।’
অতঃপর আহিকে নিয়ে চললো তাঁরা তাদের বসের কাছে। গাড়ি চলতেই এক অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো তাকে সাথে কিছুটা অস্থিরতাও ফিল হচ্ছে। তারপরও যথারীতি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে চুপচাপ বসে রইলো আহি গাড়িতে।’

একটা বড় বুক শপের দোকানের ভিতর ঘুরে ঘুরে এটা ওটা দেখছে রিনি। একটা সুন্দর গল্পের বই সাথে কিছু রং তুলি আর পেন্সিল কিনবে সে। আঁকা আঁকি করতে ভিষন পছন্দ করে রিনি। ভার্সিটি শেষ করেই আজ বাড়ি না গিয়ে সোজা এখানে এসেছে সে। এমনি সময় আহিকে নিয়ে আসতো কিন্তু আজ কেন যেন একাই চলে আসলো রিনি। অনেক খুঁজে একটা সুন্দর গল্পের বই খুঁজে বের করলো সে। হঠাৎই বইটা নিয়ে ঘুরতে গিয়ে আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেলো সে। ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে দুজনেই চমকে উঠলো বেশ সাথে দু’জনের হাতে থাকা ফোনদুটো ছিঁটকে পড়লো এদিক ওদিক। রিনির হাতে থাকা বইটাও পড়েছে নিচে। রিনি আস্তে আস্তে সামনের ব্যক্তির দিকে তাকাতেই ভার্সিটির সেই ছেলেটি মানে শুভকে দেখে আরো চমকে উঠলো। কিছুটা বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো সে,

‘ আপনি?’
ততক্ষণে শুভও খেয়াল করলো মেয়েটা সেই ভার্সিটির আহির বন্ধু। মেয়েটিকে দেখেই দু’কদম পিছনে চলে গেল শুভ, কারনটা আর যাই হোক কোনোভাবেই আবারো এই মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতে চায় না সে। শুভকে পিছনে যেতে দেখে রিনি অবাক হয়ে বললো,
‘ আপনি পিছিয়ে যাচ্ছেন কেন?’
সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো শুভ। তারপর আমতা আমতা করে বললো সে,
‘ না আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি..
শুভর পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই রিনি চেঁচিয়ে বলে উঠল,
‘ কি ভাবছিলেন আপনি?’
রিনির কথা শুনে যেন হার্ট অ্যাটাক করবে শুভ তৎক্ষনাৎ বুকে হাত দিয়ে বললো সে,
‘ আপনি এমন কেনো বলুন তো সবসময় ঝাঁঝালো কন্ঠ নিয়ে কথা বলুন মিষ্টি করেও তো কথা বলা যায় নাকি।’
‘ দেখুন আপনার থোবড়া দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায় সরুন তো..
বলেই নিচ থেকে বই আর বাম দিকের কালো কভারের মোবাইলটা হাতে নিয়ে উঠতে নিলো সে এরই মধ্যে শুভও নিচে বসে পড়লো তাঁর মোবাইলটাও উঠাতে হবে কি না। সাথে সাথে উপর নিচ করতে গিয়ে দুজনের মাথায় বারি খেলো দুজন। রিনির তো মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো,

‘ আউচ।’
সাথে সাথে শুভ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠল,
‘ সরি সরি সরি আপু…
ব্যস হয়ে গেল যাও এতক্ষণ রিনি তার রাগকে কন্ট্রোল করতে পেরেছিল সেটাও শুভর ‘আপু’ ডাক শুনে হয়ে গেল। রিনি রাগী লুক নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠের সাথে বলে উঠল,
‘ কি বললেন আপনি? আপনাকে তো আমি?’
সাথে সাথে শুভ তাঁর মোবাইলটা নিয়ে এক দৌড়। সে বলতে চায় নি মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল। শুভর এমন কাজ দেখে রিনির রাগ যেন সপ্তম আকাশে উঠে গেছে। নেক্সট টাইম পেলে একে যে খুন করবে এটা কর্নফাম। ভেবেই রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো রিনি তাঁর সুন্দর মুড টাকে একদম নষ্ট করে দিলো__

‘ বদমাশ ছেলে কোথাকার?’
বলেই হন হন করে উল্টো দিকে হাঁটা দিলো রিনি।’
অন্যদিকে একটা বুক সেলফের পিছনে লুকিয়ে আছে শুভ। ভয়ে যেন শরীর কাঁপছে তাঁর। এই মেয়েটা আসলেই খুব ডেঞ্জারাস দুু’বার দেখা হলো আর দু’বারই তাঁর দিকে মারার জন্য তেঁড়ে আসলো।’ উফ বাবা গো বাবা মেয়ে না যেন ‘ধানি লঙ্কা’…
ভেবেই জোরে নিশ্বাস ফেললো সে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে গায়ের শার্টটা সাথে পিছনে থাকা ব্যাগটা ঠিক করে রিনির একদম উল্টো দিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলো সে।’

নিজের রুমে বসে আছে আদ্রিয়ান। মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা ভাবনায় মগ্ন সে। এমন সময় তার রুমে ঢুকলো নিলয়। আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে বললো সে,
‘ তাহলে মিটিং রুমে যাওয়া যাক?’
‘ হুম।’
বলেই আদ্রিয়ান তাঁর চেয়ার থেকে উঠে চললো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান যেতেই নিলয় একটা ফোন একটা ফোন করে বললো,
‘ তোমরা কোথায়?’
নিলয়ের কথা শুনে শুনে অপর পাশের লোকটাও বলে উঠল,
‘ এইতো স্যার আর আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছাচ্ছি।’
‘ ঠিক আছে।’
বলেই ফোনটা কেটে জোরে শ্বাস ফেলে চলে যায় সে মিটিং রুমে।’

বেশ কিছুক্ষন পর আহিদের গাড়ি এসে থামলো একটা বড় কোম্পানির সামনে। গাড়ি থামতেই সামনের দুজন লোক নেমে আহির সামনের দরজাটা খুলে দিয়ে বললো,
‘ আমরা এসে পড়েছি ম্যাম?’
উওরে আহিও আর বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে বের হলো সে গাড়ি থেকে। তারপর সামনের দিকে তাকাতেই চোখ যেন তাঁর আরই চড়ুই গাছ। কারন কোম্পানিটা আর কারো নয় আদ্রিয়ানের। যেটাতে এর আগেও একবার এসেছিল আহি। সেইদিনের কথা ভাবতেই শুঁকনো ঢোক গিললো আহি তারপর আমতা আমতা করে বললো,
‘ এখানে?’
আহির কথা শুনে লোকদুটোও বলে উঠল,
‘ জ্বী ম্যাম।’
‘ এটা তো আদ্রিয়ান মাহামুদের কোম্পানি।’
‘ এই তো আপনি বুঝতে পেরেছেন তাহলে চলুন ভিতরে আপনার জন্য বস অপেক্ষা করছে।’
সাথে সাথে আহি ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বললো,

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২০

‘ মাথা খারাপ হয়েছে আপনাদের এখানে আমি যাবো, এইবার সত্যি সত্যি শিওর আপনাদের কোথাও একটা ভুল হচ্ছে?’
বলেই উল্টোদিক ফিরে চলে যেতে নিলো আহি। আহিকে যেতে দেখে আবারো সামনের লোকটি মুখোমুখি দাঁড়ালোর আহির। তারপর বললো,
‘ আপনি এইভাবে যেতে পারবেন না ম্যাম?’
এবার বিরক্তির একদম শেষ পর্যায়ে চলে গেছে আহি। এখন তাঁর নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তাঁর কেন যে সে এখানে আসতে গেল। শেষমেশ আর কোনো উপায় না পেয়ে আহি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আদ্রিয়ানের কোম্পানির ভিতরে।’….

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২২