সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৮

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৮
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ধরনীর বুকে আধার নেমেছে অনেকক্ষণ। ব্যস্ত পায়ে ফায়জাদের ফ্ল্যাটের দিকে যাচ্ছে আদিব।বিয়ে না হলেও বাড়িতে মেহমানের কমতি নেই।বিয়ে টা আজকে সেরে ফেলতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু মহারানী রাজি হলে তো! কোন শয়তানের বুদ্ধিতে সিনিয়র মেয়ের প্রেমে পরেছিলো কে জানে।নাহলে আজকে আর এইদিন দেখতে হতো না।মনে মনে সে শয়তান কে ভয়ংকর কিছু অশ্লীল গালি দিলো আদিব।লজ্জা থাকলে তাকে আর কোন কুবুদ্ধি দিতে না বলে তিরস্কার করতে ও ভুললো না।শয়তানের ই বা কি দোষ?নিজের মন ই তো মীরজাফরি করে বসে আছে।তার মন তার কথা না ভেবে এক পাষন্ড নারীর জন্য আনচান করে!এদিকে সে ভালোবাসা নামক পুষ্টির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে তাতে তার মনের কিছু যায় আসে না।কি বেঈমান! একবার বিয়ে টা হয়ে গেলে এই মন নামক মাংসপিন্ড কেও সে এক হাত দেখে নিবে।

কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো সুমি।আদিব কে দেখে লাজুক হেসে দরজা থেকে সরে দাড়ালো।
সুমি কে লজ্জায় পানি পানি হতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদিব।এই মেয়েটাও তাকে দেখলে লজ্জা লজ্জা ভাব করে, অথচ যার জন্য সে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে স্বপ্নে চার বাচ্চার বাবা হয়ে বসে আছে তার কোন হেলদোল নেই!কলেজের কতো সুন্দরী রমনীকে সে পাত্তা না দিতে পেরে হাপিত্তেস করে মরেছে তার একটা লিস্ট করতে পারলে ভালো হতো। অন্তত পক্ষে চিৎকার করে বলা তো যেতো, দেখো হে নিষ্ঠুর মহিলা,তোমার জন্য এই অবুঝ রমনীগণকে তুচ্ছ করেছি আমি।আর আজ তুমি কিনা আমাকে এভাবে অবহেলা করছো!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তোর আপা কোথায় সুমি?
সুমি মলিন মুখে বললো,
— আপায় তো রুমে।হেইযে দরজা লাগাইছে!আর তো খুলে নাই ভাইজান।
— অহ আচ্ছা। বাকি সবাই কোথায়?
— আম্মা আর খালুজান তো রুমে গেছে গা।হেগোর শরীল নাকি ভালা না।আর বড় ভাইজান আপার রুমের সামনে বইসা রইছে।আপা দরজা খোলার আগ পর্যন্ত নড়বো না।ছুডো ভাইজান সবাই রে ঘুমানের ব্যবস্থা কইরা দিতাছে।ভাবি ও হের লগেই আছে।
সুমি এক নিশ্বাসে সব বলে থামলো।
— মেহমানদের খাওয়া হয়ে গেছে সবার?
— হ ভাইজান।খালি বড় ভাইজান,ছুডো ভাইজান,ভাবি আর হের বান্দুবি রা বাকি আছে।আফনে ও তো খান নাই।
— তুই খেয়েছিস?
— আফনেগো খাওয়া হইলে খামু।
— তুই খেয়ে শুয়ে পর।আমাদের টা আমরা নিয়ে খেয়ে নিবো।
— আইচ্ছা। দরকার হইলে ডাইকেন।
— হুম।
ফায়জার রুমের দিকে পা বাড়ালো আদিব।এই মেয়েটা তার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছে বারবার। সে তো ভালো হয়ে থাকতে চায়।কিন্তু এই ভয়ংকর নারী তাকে ভালো হয়ে থাকতে দিলে তো!

সবাইকে রুমে পৌছে দিয়ে মাত্রই নিজের রুমে এসেছে সায়েবা।পড়নের আবায়া টা খুলে নিজেকে একবার দেখে নিলো আয়নায়। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে বার বার। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বাসার এই পরিস্থিতি তে কোন ভাবেই রেষ্ট করা যাবে না। মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে শান্তির ঘুম ধরা দিবে কি করে! ফায়জা আপু কে একবার দেখে আসলে মন টা শান্ত হতো।
— তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো ।তুমি আজ সারাদিন কিছু খাওনি।এখন খেতে হবে।
ফারহানের কথায় ধ্যান ভাংলো সায়েবার।
— আপনি কখন আসলেন?
— এইমাত্র ই আসলাম।কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।
সায়েবা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। যে এই মুহুর্তে পাঞ্জাবীর বোতাম খুলতে ব্যস্ত।সায়েবা ফারহানের কাছে গিয়ে তার হাতটা সরিয়ে দিয়ে নিজেই বোতাম খুলতে লাগলো। সবগুলো বোতাম খুলে ফারহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

— সুন্দর লাগছে আপনাকে।মাশআল্লাহ।
সায়েবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো ফারহান।ঘটনা সুবিধার নয়। তার বউয়ের এতো ভালোবাসা কবে হলো তার প্রতি?
সায়েবার কোমড় আকরে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ফারহান। কপালের কাছের অগোছালো চুল গুলো কানের পিছনে গুছিয়ে দিতে দিতে বললো,
— আজ এতো ভালবাসার কারণ কি রানী সাহেবা?
— বারে!আমি কি আমার বর কে ভালোবাসতে পারি না?
— অবশ্যই পারো।একমাত্র তাকেই ভালোবাসার অনুমতি আছে তোমার।তাহলে তাকে ছেড়ে আর কাকে ভালোবাসবে!এবার বলো কি চাই?
— আপু,,,
সায়েবা কে থামিয়ে দিলো ফারহান।
— সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমি আছি তো।টেনশন কেন করো?আমরা সবাই আছি আপুর সাথে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহ আছেন তো।তিনি নিশ্চয়ই উত্তম কিছু ভেবে রেখেছেন।তিনিই সর্ব উত্তম পরিকল্পনাকারি।
— হুম।

সায়েবা আদুরে বিড়াল ছানার মতো মাথা এলিয়ে দিলো ফারহানের লোমশ বুকে।নিচু হয়ে সায়েবার মাথায় চুমু খেয়ে আগলে নিলো তাকে ফারহান।শক্ত করে জরিয়ে ধরে বুকের মাঝেই পিষে ফেললো তাকে।
— আরে কি করছেন?ব্যথা পাচ্ছি তো।(আর্তনাদ করে)
— নড়াচড়া করলে আরো বেশি ব্যাথা পাবে।
— আহ্। আস্তো পাথর একটা। এই ছাড়ুন তো,হাড়গোড় সব ভেঙে দিলো একেবারে।
— ভাঙতে আর পারলাম কই।ধরার আগেই তো মিয়িয়ে যাও!আচ্ছা ছাড়লাম, এবার পাচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে এসো। আপুর কাছে যাবো।
— হুম।
কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো সায়েবা। সায়েবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো ফারহান।সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলেও ভিতর টা পুড়ছে বোনের জন্য। ফায়জা খুব ভেঙে পরেছে। ফায়জা কে সাপোর্ট করতে হলে সবার আগে তাদের সবাই কে স্বাভাবিক হতে হবে। নিজেদের বিদ্ধস্ত মুখ নিয়ে ফায়জার কাছে গেলে সে আরো ভেঙে পরবে।
কবার্ড থেকে টাওজার আর টিশার্ট বের ফ্রেশ হতে করে স্টাডি রুমে চলে গেলো ফারহান।

আর কতক্ষন এভাবে বসে থাকবো ভাই?এভাবে বোয়াল মাছের মতো মুখ করে বসে না থেকে কিছু একটা করলে সময় টা ভালো ভাবে কেটে যেতো।
আদিবের দিকে কটমট করে তাকালো ফরহাদ। নিজের রাগ কনট্রোল করতে না পেরে নিজের পায়ের সেন্ডেল ছুড়ে মারলো তার দিকে।
— আরেকটা কথা বললে সত্যি সত্যিই মার খাবি তুই।বসে থাকতে ইচ্ছে না করলে চলে যা।তোকে কেউ বেধে রেখেছে নাকি?
— ছোট বোনের হবু জামাই কে জুতো ছুড়ে মারছো!আল্লাহ! এই তোমার লজ্জা করলো না এভাবে আমাকে অপমান করতে?
— না। প্রয়োজন হলে জুতোর ফ্যাক্টরি এনে ছুড়ে মারবো।
— তাহলে ঠিক আছে। জুতার ফ্যাক্টরি বেচে পঞ্চাশ লাখ উসুল করবো।
আদিবের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো ফরহাদ। আদিব ও যোগ দিলো সাথে।তাদের হাসির মাঝেই সেখানে উপস্থিত হলো নীতি আর সাবা। দরজার পাশে টুলের উপর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা দুইজন যুবকের দিকে তাকিয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেললো তারা।
— আপু এখনো দরজা খুলে নি ভাইয়া?

নীতির কথা শুনে ফরহাদের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। এই মেয়ে তাকে মিনিটে মিনিটে ভাইয়া কেন ডাকে তা আজ পর্যন্ত বুঝে উঠে পারলো না সে।দিনে একবার ডাকলে ই তো হয়।
— আরে তোমারা এখনো ঘুমাও নি কেন?
আদিবের কথায় লাজুক হাসলো সাবা।মিনমিনে গলায় বললো,
— আপুর জন্য টেনশন হচ্ছে ভাইয়া।আমরা কি আপনাদের সাথে বসতে পারি?
আদিব বিগলিত গলায় বললো,

— হুম অবশ্যই। তোমাদের কোম্পানি খারাপ লাগবে না।চল একটা গান ধরা যাক।শুধু শুধু বসে থাকতে খারাপ লাগছে।বিরহ বিরহ টাইপের গান হলে ভালো হয়।পরিবেশের সাথে মানানসই হতে হবে। আজকাল ট্রেন্ড ছ্যাকা খাওয়া গানের লিস্ট টা বলো তো।ওখান থেকেই একটা গান ধরবো, বুঝলে? নিষ্ঠুর প্রিয়তমা গাইতে পারলে ভালো হতো। তবে এটা ছেলেদের জন্য।মেয়েদের জন্য একটা ভালো ছ্যাকা খাওয়া গান খুজে বের করো।কুইক।
আদিবের উল্টো পালটা কথা শুনে বিরক্তি তে ‘চ’ শব্দ করলো ফরহাদ।গমগমে গলায় বললো,
— তুই এখান থেকে যা ভাই।অযথা বিরক্ত করিস না।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৭

ফরহাদের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসলো আদিব।দরজায় হালকা টোকা দিয়ে ফায়জা কে ডাকলো,
— এভাবে আর কতক্ষন দরজা বন্ধ করে রাখবে?আমি এখান থেকে নড়ছি না।যখনই দরজা খুলবে আমাকে এখানেই পাবে। আর যদি ধৈর্য ভেঙে যায় তাহলে দরজা ভাঙতে ও সময় লাগবে না। তাই নিজ থেকেই দরজা খুলে দাও সোনা থুক্কু আপুউউউউউ।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ২৯