বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২৪

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২৪
লেখিকা: তানজিল মীম

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহি রিনির মুখের দিকে যেন রিনি কি বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেছে। রিনি আহির অবস্থা বুঝতে পেরে ফিক করে হেঁসে দিল তারপর বললো,
‘ কি মাথার গিলু উল্টে গেলো তো?’
উওরে আহিও তাঁর মাথা চুলকাতে চুলকাতে ‘হ্যা’ বোধক মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘ হুম।’
‘ জানতাম এমনই হবে এই দেখেন,
বলেই নিজের পিছনে থাকা হাতটা বের করে বললো রিনি,

‘ আপনার লেখা প্রেমপত্র যেটা আজ আর এক্ষুনি নীরব ভাইয়ার কাছে যাবে।’
রিনির কথা শুনে আহি অবাক হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে রিনি দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠল,
‘ প্লিজ এমন করিস না ওটা আমায় দিয়ে দে?’
আহিকে নিজের দিকে আসতে দেখে রিনিও অন্যদিকে যেতে যেতে বলে উঠল,
‘ তা তো আর হচ্ছে না বাবু আজকে তো তোমায় প্রপোজ করতেই হবে আর তুমি না পারলে আমি আজ করেই ছাড়বো তাও আবার তোমার নাম নিয়ে?’
‘ এমন করো কেন আমি কি বলেছি প্রপোজ করবো না ভাইয়ার সামনে গেলেই তো হার্ট বিট কয়েকশত বেড়ে যায় আর এতটাই বেড়ে যায় যে আমি কিছু বলতেই পারি না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ ওতো শতো জানি না আজ তোমাকে প্রপোজ করতেই হবে?’
‘ একটু বোঝ বোইন, যদি নীরব ভাইয়া রাগ করে?’
‘ কঁচু করবে কিচ্ছু করবে না বি পজিটিভ।’
‘ তারপরও আমার ভয় লাগে।’
‘ তোর ভয়ের গুষ্টি কিলাই, একটু বোঝ এখন যদি তোর জায়গায় অন্যকেউ নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করে তখন কি হবে? জানিস একটু আগেই দেখলাম আমাদের ক্লাসের ঊষা মেয়েটা আছে না রাস্তায় দাঁড়িয়ে গোলাপ কিনেছে নিশ্চয়ই আজ নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবে আমি প্রায় দেখেছি ও নীরব ভাইয়াকে দেখলেই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে তাই বলছি আজ আর এক্ষুনি গিয়ে নীরব ভাইয়াকে তোর ভালোবাসার কথা বলে দে।’
‘ তুই সত্যি বলছিস ওই ঊষা আজ নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবে?’
‘ হুম তাই তো এই সকাল বেলা তোকে নিয়ে ভার্সিটি যাবো বলে এসেছি?’
‘ সত্যি?’

‘ তা নয় কি এমনি এমনি আসছি নাকি তোদের বাসায় এই জন্যই তো এসেছি?’
রিনির কথা শুনে এবার বেশ ভাবনাশীলের মুখের পড়ে গেল আহি, তাহলে কি সত্যি সত্যি আজ ঊষা নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবে না না এমনটা হতে পারে না। আহি রিনির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ তুই সত্যি এই জন্যই এসেছিস?’
‘ আরে বাবা হুম, এখন চল তাড়াতাড়ি না হলে দেরি হয়ে যাবে?’
এমন সময় ওদের রুমে ঢুকলো আহির মা ওদের কথা শুনে তেমন কিছু না ভেবেই বলে উঠলেন উনি,
‘ কিসের দেরি হয়ে যাবে?’
আহির মায়ের কথা শুনে আহি রিনি হকচকিয়ে উঠলো রিনি একবার আহির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল আহির মাকে,
‘ আসলে আন্টি ওই ভার্সিটি যেতে দেরি হয়ে যাবে সেটাই বলছিলাম দেখো না তোমার মেয়েকে সেই কখন থেকে বলছি তৈরি হতে কিন্তু আমার কথা শুনছেই না।’

রিনির কথা শুনে আহির মা মুচকি হেঁসে আহির বিছানা ঠিক করতে করতে বললেন,
‘ ও তো এমন নি ওর থেকে নীরব বেশ ভালো প্রতিদিন টাইম টু টাইম সব কাজ করে কতক্ষণ আগেই দেখলাম রেডি হয়ে চলে গেল হয়তো ভার্সিটি যাচ্ছে?’
আহির মায়ের কথা শুনে আহি রিনি একে অপরের দিকে তাকালো রিনি তো বলেই উঠলো,
‘ নীরব ভাইয়া চলে গেছে আন্টি?’
‘ হুম কিছুক্ষন আগেই বের হতে দেখলাম তো।’
‘ ওহ।’
এতটুকু বলে রিনি আহির কাছে গিয়ে বললো,
‘ তাড়াতাড়ি গিয়ে তৈরি হ তা না হলে…
উওরে আহিও আর বেশি কিছু ভেবে দৌড়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।’
আর রিনি একটা শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলে উঠল,
‘ আজ তো তোমায় প্রপোজ করতেই হবে চান্দু।’
বলেই হেঁসে ফেললো রিনি।’

কিছুক্ষনের মধ্যেই আহি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো তারপর জিন্স আর টপস পড়ে না খেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সে। যদিও আহির মা বলেছিল খেয়ে যেতে কিন্তু আহি শুনতে নারাজ অনেক তাড়ায় আছে সে। তবে রিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে আহির ঠিটিটা হাতে নিয়ে আরামসে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। সকালেই আহির টেবিলের নিচের ড্রয়ার থেকে এটাকে পেয়েছে যদিও সে পড়ে দেখে নি। এক রহস্যময়ী হাসি দিয়ে চললো সে আহির পিছন পিছন।’
তাঁরপর রিনির আনা গাড়ি করেই চললো আহি আর রিনি ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।’

অফিসে নিজের রুমের চেয়ারে বসে আছে আদ্রিয়ান। তাঁর সামনেই টেবিলের উপর তার মোবাইলে কালকের তোলা শুভ আর রিনির ছবিটা। আদ্রিয়ানের দৃষ্টি সেদিকেই, এমন সময় তাঁর রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো নিলয়। হেঁটে আদ্রিয়ানের সামনে এসে বললো সে,
‘ ডেকে ছিলি?’
হুট করেই নিলয়ের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠে আদ্রিয়ান তারপর বললো,
‘ হুম দেখতো শুভর সাথে এই মেয়েটাকে চিনিস কি না?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ কি শুভর সাথে মেয়ে? ও তো মেয়ে দেখলেই আপু বলে ডাকে আমি আজও বুঝলাম ও এখনও মেয়েদের দেখলেই আপু বলে কেন ডাকে?’
বলেই মোবাইলের ছবির মেয়েটার মুখ দেখেই বলে উঠল নিলয়,
‘ আরে ও তো রিনি?’

নিলয়ের কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো আদ্রিয়ান,
‘ রিনি কে?’
‘ আমাদের বিজনেস পার্টনার আফজাল সাহেবের ছোট মেয়ে আরে যার বড় মেয়ের বিয়েতে আমরা গিয়েছিলাম তখনই তো দেখেছিলাম আইথিংক আহির ফ্রেন্ড হবে। এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি যে বিয়েতে তুই প্রেমপত্র পেয়েছিলি যদিও ওটা ভুল করে তোর কাছে চলে এসেছিল?’
নিলয়ের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বললো আদ্রিয়ান,
‘ হয়েছে আর বলতে হবে না আমার মনে পড়েছে এই জন্যই মেয়েটাকে চেনা চেনা লেগেছিল।’
উওরে হাল্কা হেঁসে বললো নিলয়,
‘ হুম কিন্তু এই মেয়েটার সাথে শুভ কি করছে?’
‘ সেটাই তো প্রশ্ন খোঁজ লাগা মেয়েটার সাথে শুভর কি সম্পর্ক?’
‘ ঠিক আছে।’
বলেই চলে যায় নিলয়। এমন সময় আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠল উপরে পিন্সিপালের নাম দেখে ধরেই বলে উঠল আদ্রিয়ান,
‘ হ্যালো।’
আদ্রিয়ানের হ্যালো শুনে অপরপাশে পিন্সিপাল বলে উঠল,
‘ তুমি কি একবার ভার্সিটি আসতে পারবে আদ্রিয়ান?’
‘ কেন কিছু কি হয়েছে স্যার?’

‘ না মানে একটু দরকার ছিল তুমি বিজি না হলে আসতে পারবে একবার?’
উওরে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল,
‘ ঠিক আছে স্যার আমি আসছি।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে পিন্সিপালও খুশি হয়ে বললেন,
‘ থ্যাংক ইউ।’
‘ ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই স্যার।’
উওরে মুচকি হাসলেন পিন্সিপাল যদিও আদ্রিয়ান হাসিটা দেখতে পায় নি। পিন্সিপাল আবারো বলে উঠল,
‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসো আদ্রিয়ান।’
‘ হুম।’
বলেই ফোনটা কেটে দেয় আদ্রিয়ান। তারপর বেশি কিছু না ভেবে সেও বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।’

কিছুদূর এগোতেই একটা ফুলের দোকানের সামনে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললো রিনি। রিনির কাজে আহি বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ এখানে গাড়ি থামাতে বললি কেন?’
‘ আরে বুদ্ধু প্রপোজ করতে যাচ্ছিস ফুল নিবি না।’
‘ প্রপোজ কি করতেই হবে আজ?’
‘ হুম।’
বলেই গাড়ি থেকে বের হলো রিনি। রিনিকে বের হতে দেখে আহিও বের হলো গাড়ি থেকে। তারপর দুজন মিলে একসাথে চললো ফুলের দোকানের ভিতরে। তারপর একটা সুন্দর লাল গোলাপ ফুল কিনে দোকানদারের বিল মিটিয়ে আবারো গিয়ে বসলো দুজন গাড়িতে। ওঁরা বসতেই আবারো ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলো।’
বেশ কিছুক্ষনের মধ্যেই আহি রিনি পৌঁছে গেল ভার্সিটিতে। আহি তো ভয়ের চোটে গাড়ি থেকেই বের হতে চাইছিল না কিন্তু শেষমেশ রিনির জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে বের হতেই হলো তাকে। সে বেশ বুঝতে পেরেছে আজ রিনি তাকে নীরবকে প্রপোজ করিয়েই ছাড়বে।’

লাইব্রেরিতে চুপচাপ বইয়ের দিকে মুখ লুকিয়ে বসে আছে অথৈ। এমন সময় হঠাৎই টুং করে মেসেজ বেজে উঠল অথৈ। ফোনে উপরে রিনির মেসেজ দেখে সেও হাল্কা হেঁসে টাইপিং করলো,
‘ আমি লাইব্রেরিতে আছি তোরাও চলে আয়।’
উওরে রিনিও ‘ওকে’ মেসেজ দিলো। রিনির পরবর্তী মেসেজ সিন করে আবারো চোখ রাখলো বইয়ের পাতায় অথৈ।’
অন্যদিকে,
অথৈর সোজাসুজিই বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে নীরব। পরনে তাঁর এস কালার ফুল হাতার টিশার্ট, সাথে ওয়াইট পান্ট, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। সাধারণত নীরবের এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মূল উদ্দেশ্য হলো অথৈকে প্রপোজ করা। বেশ কিছুদিন যাবৎই নীরব ভাবছে অথৈকে সে প্রপোজ করবে। কবে যে নিজের অজান্তে অথৈকে ভালোবেসে ফেললো নীরব নিজেই বুঝতে পারে নি। প্রথম যেদিন বাসে বসে অথৈর সাথে দেখা হয়েছিল নীরবের সেদিনই এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিল নীরবের ভিতর যেটা এর আগে অন্য কোনো মেয়েকে দেখে লাগে নি নীরবের। তারপর শ্রীমঙ্গলের সেদিনে রাতে কিছুক্ষন মুহূর্ত কাটানো, সাথে সেদিন আহিকে খুঁজতে গিয়ে হুট করেই তাঁর হাত ধরা, সাথে রোজ লাইব্রেরিতে সময় কাটানো সবকিছুই বেশ ভালো লাগে নীরবের।’

একরাশ অস্থিরতা, একরাশ অনুভূতিশীল হৃদয় সাথে হাতে একটা গোলাপ নিয়ে জোরে শ্বাস ফেলে এগিয়ে চললো নীরব অথৈর দিকে।’
অন্যদিকে লাইব্রেরির কাছ পর্যন্ত আসতেই রিনির চোখ যায় নীরবের দিকে এদিকেই এগিয়ে আসছে। তাদের মাঝ বরাবরই বসে আছে অথৈ। রিনির আহির হাত ধরে বললো,
‘ এই সুযোগ আহি দেখ লাইব্রেরিতে এখন কেউ নেই তেমন, চটজলদি গিয়ে নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করবি আয়?’
বলেই আহির হাত ধরে এগিয়ে গেল অথৈ আর নীরবদের দিকে।’

চুপচাপ ফুলহাতে অথৈ এর ভাবনায় মগ্ন হয়েই এগিয়ে আসছিল নীরব। এতটাই অথৈ তে মগ্ন ছিল যে সে আহি আর রিনিকে খেয়াল করে নি। নীরব অথৈর দিকে এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
‘ অথৈ..
হুট করেই নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠে, উঠে দাঁড়ালো অথৈ তারপর বললো,
‘ জ্বী বলুন?’
‘ তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল, অথৈ?’
‘ জ্বী বলুন কি বলবেন আমায়?’
‘ আমায় খারাপ ভাব্বে না তো?’
‘ আরে কিসব বলছেন আপনি খারাপ কেন ভাববো কিছু ভাববো না বলে ফেলুন।’
উওরে জোরে শ্বাস ফেলে বলে উঠল নীরব,
‘ আমি তোমায় আইমিন আই লাভ ইউ..
হুট করে নীরবের মুখে এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় অথৈর। ভয়ংকরভাবে অবাক হয়ে বললো সে,
‘ কি?’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২৩

‘ জানি না কখন কোথায় কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়, কিন্তু তোমার খুব ভালোবাসি আমি, আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ।’
‘ এসব আপনি কি বলছেন এগুলো সম্ভব নয় কারন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, আর তাছাড়া আপনাকে আ…
আর কিছু বলার আগেই পিছন থেকে রিনি বলে উঠল,
‘ নীরব ভাইয়া?’
সাথে সাথে অথৈ নীরব দুজনেই বেশ অবাক হলো অথৈ তো প্রচন্ড ঘাবড়ে গেল না জানি আহি সবটা শুনে ফেলেছে কি না?’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ২৫