বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৭

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৭
লেখিকা: তানজিল মীম

‘ কি হলো আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’
হুট করেই আহির মুখে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল আদ্রিয়ান। সে একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল সে যে আহির দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে বলে উঠল,
‘ না তেমন কিছু নয় তা এত লেট করলে যে,
‘ সরি আসলে ওই তৈরি হতে হতে একটু লেট হয়ে গেছে।’
‘ ওহ তাহলে এখন যাওয়া যাক?’
‘ হুম চলুন।’

এই বলে আহি গিয়ে বসলো গাড়িতে আর আদ্রিয়ান আহি যেতেই জোরে জোরে কয়েক নিশ্বাস ফেললো। কিছুক্ষনের জন্য হলেও আহিতে হারিয়ে গিয়েছিল সে। আদ্রিয়ান আর বেশি কিছু না ভেবে গিয়ে বসলো গাড়িতে। তাঁরপর সিটবেল্ট লাগিয়ে চললো সে আহিকে নিয়ে।’
বেশ কিছুক্ষন পর,
আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে থামলো এক বিশাল কবর স্থানের সামনে। আদ্রিয়ান গাড়ি থামিয়ে বলে উঠল আহিকে,
‘ আমরা এসে পড়েছি বের হও?’
এতটুকু বলে আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে গেল। আদ্রিয়ানকে নামতে দেখে আহিও নেমে পড়লো। প্রথমে জায়গাটা খেয়াল না করলেও পড়ে সাইনবোর্ডে কবরস্থান লেখা দেখে হাল্কা থমকে গেল আহি। এমন একটা জায়গায় তাঁকে নিয়ে এসেছে আদ্রিয়ান ভেবে একটু অদ্ভুত লাগলো আহির। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল আদ্রিয়ান,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ চলো যাই।’
‘ হুম।’
এতটুকু বলে মাথায় ওড়না দিলো আহি। তারপর চললো সে আদ্রিয়ানের পিছন পিছন। চারপাশে ছোট বড় অসংখ্য গাছ রয়েছে৷ আর পুরো জায়গা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই গাছের শুকনো পাতারা। আদ্রিয়ান আহি তাদের পাঁয়ের জুতো খুলে রেখে এসেছে গাড়ির কাছেই। আদ্রিয়ান আশেপাশে বেশি না তাকিয়ে চললো তাঁর গন্তব্যের দিকে। হঠাৎই কিছুদূর এগোতেই বলে উঠল আদ্রিয়ান,
‘ তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও দাঁড়িয়ে পড়লো ওখানে। উওরে বেশি না ভেবে বললো সে,
‘ ঠিক আছে।’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ানও আর কিছু না বলে চলে গেল তার গন্তব্যের দিকে।’
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আহি। আহি কল্পনাও করতে পারে নি আদ্রিয়ান তাঁকে এই সময় এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসবে। আর তাঁকে রেখে আদ্রিয়ান গেলই বা কোথায়? নানা রকম কথা এসে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আহির। নীরবভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই কেটে গেল কিছুকক্ষন। কিন্তু আদ্রিয়ানের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। আহির ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে দেখতে আদ্রিয়ান গেল কোথায় আর এখনো আসছে না কেন?’ সেটা দেখতে। আহি বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সামনে। কিছুদূর এগোতেই চোখ পড়লো তাঁর আদ্রিয়ানের দিকে। কয়েক কদম দূরেই উল্টো দিক ফিরে দুটো কবরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। ঠোঁট নড়ছে তাঁর হয়তো কিছু বলছে। আহি কৌতুহলী এগিয়ে গেল সামনে,কিছুদূর এগোতেই কানে আসলো আদ্রিয়ানের বলা কথা,

‘ আমি জানি বাবা মা তোমরা হয়তো এখনও আমার ওপর অভিমান করে আছো। তোমরা বিশ্বাস করো আমি যদি আগে জানতাম সেদিন বাড়ি থেকে বের হলে আমার পুরো জীবনটা উলোট পালোট হয়ে যাবে তাহলে কখনোই বের হতাম না। জানো তো মা ভাইটা অনেক বড় ডাক্তার হয়ে গেছে। হয়তো এখানে এসে ছিল, আমার নামে অনেক অভিযোগ দিয়ে গেছে তাই না। জানো তো আজ বহুবছর হয়ে গেছে আমি ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা বলি না। মাঝে মাঝে আমারও ইচ্ছে করে ওর সাথে কথা বলতে, ওর সাথে সময় কাটাতে।

কিন্তু ওঁকে দেখলেই আমার ভিতর একটা অপরাধী কাজ করে। যার কারনে কিছুই হয়ে ওঠে না। তোমরা জানো সেদিন ও আমার অফিসে এসে আমার ভেঙে ফেলা সেই শোপিচটা গিফট করেছে একদম হুবহু সেইটার মতোই দেখতে। আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি আমার বেডের পাশে। তোমরা চিন্তা করো না আমি ভেবে রেখেছি আর ওর সাথে বাজে ব্যবহার করবো না।’
এইরকম আরো অনেককিছু বলতে লাগলো আদ্রিয়ান তাঁর হারিয়ে যাওয়া বাবা মাকে।’
আদ্রিয়ানের কথা আর কাজ দেখে চোখ ভেসে আসলো আহির। সে ভাবে নি আদ্রিয়ান এই কারনে এখানে এসেছে। আহি আরো কিছুক্ষন আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে আসলো ওখান থেকে। সে বেশ বুঝতে পেরেছে আদ্রিয়ানের মনেও ভীষণ কষ্ট আছে।’

নিরালায় দাঁড়িয়ে আছে আহি আদ্রিয়ানের কাজ দেখে ভীষণই কষ্ট লেগেছে তাঁর। তবে আহি জানতো না আদ্রিয়ানের ভাইও আছে। এরই মাঝে আহির ভাবনার মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিয়ান। আহিকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো সে,
‘ সরি একটু লেট হয়ে গেছে?’
‘ ইট’স ওকে।’
বলেই হাঁটা শুরু করলো আহি। আদ্রিয়ানও চললো ওর পিছন পিছন। আজকে আদ্রিয়ানের বাবা মার বিবাহ বার্ষিকী। আদ্রিয়ানের মনে আছে সে যখন ছোট ছিল তখন প্রতিবছরই এই দিনে তাঁরা এখানে আসতো তার দাদা দাদির কবর জিয়ারত করতে। তারপর অসহায় গরিবদের খাবার খাওয়াতো তাঁরা। আদ্রিয়ানও প্রতি বছর একই কাজ করে। প্রতিবার নিলয়কে নিয়ে আসে সে কিন্তু আজ কেন যেন আহিকে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করলো তাঁর।’
চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে আহি আদ্রিয়ান। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। এই কিছুক্ষনের নীরবতার দড়ি ছিন্ন করে বলে উঠল আহি,

‘ আপনার বাবা মা কি করে মারা গেল?’
আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান তাকালো আহির দিকে আদ্রিয়ানকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বলে উঠল আহি,
‘ সরি আসলে তখন আমি একটু একটু শুনেছিলাম আপনার মুখের কথা।”
উওরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠল আদ্রিয়ান,
‘ ইট’স ওকে আসলে আমি যখন ছোট ছিলাম তখন তাদের একটা এক্সিডেন্টে হয়। আর সেই এক্সিডেন্টেই,,
আর বলতে পারলো না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে চুপ হতে দেখে আহিও বুঝতে পেরে বলে উঠল,
‘ ওহ, আর একটা প্রশ্ন করি?’
‘ হুম বলো,
‘ আপনার ছোট ভাই আছে কই কখনো দেখলাম না তো?’
‘ হুম আছে অনেক বড় ডাক্তার ও কয়েক মাস আগেই ডাক্তার হয়ে হয়েছে।’
‘ ওহ।’
‘ হুম

তাঁরপর নেমে আসলো দুজনের মাঝে নীরবতা। আহির অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল ওনার ভাইয়ের সাথে বাজে ব্যবহার করেন উনি। কিন্তু কিছুই যেন বলতে পারলো না সে। তাঁকেও ঘিরে ধরলো নীরবতা। আর এই নীরবতায় মধ্যদিয়েই আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে নামলো একটা সুন্দর আলিশান জায়গার সামনে।’
গাড়ি থেকে নামতেই ওদের সামনে চলে আসলো নিলয়। কয়েক মুহূর্ত আগেই অফিস ছেড়ে এসেছে সে। নিলয় তো প্রথমে অবাকই হয়েছে আজ আদ্রিয়ান একা গেল কবরস্থানে। আদ্রিয়ান নিলয়কে দেখেই বলে উঠল,
‘ সব তৈরি তো নিলয়?’
‘ হুম এখন তুই গিয়ে পরিবেশন করলেই হবে।’
‘ ওকে চল।’
এরই মধ্যে ওদের সামনে আসলো আহি। নিলয়কে বললো সে,
‘ কেমন আছেন ভাইয়া?’
হুট করে কোনো মেয়েলি কন্ঠ কানে আসতেই নিলয় চরম প্রকার অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের গাড়ি থেকে আহিকে নামতে দেখে বললো সে,
‘ তুমি এখানে?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান বলে উঠল,
‘ ওকে আমি নিয়ে আসছি চলো আহি, তুইও আয়?’
বলেই আহিকে নিয়ে চললো আদ্রিয়ান। আর নিলয় জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ওদের যাওয়ার পানে যেন তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না আহি আদ্রিয়ান একসাথে। তাও কি না আজকের এমন একটা মুহূর্তে। তাঁর মানে কি আদ্রিয়ান আহিকে নিয়ে ওখানে গিয়েছিল। ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাঁর।’
অবাক হয়েই এগিয়ে গেল নিলয় আদ্রিয়ান আর আহির দিকে।’
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সবাইকে খাবার সার্ভ করছে আদ্রিয়ান আর আহি। যদিও আদ্রিয়ান আহিকে বলে নি আহি নিজেই আদ্রিয়ানকে হেল্প করছে। সে কল্পনাও করতে পারে নি আদ্রিয়ান তাঁকে নিয়ে এমনটা মুহূর্ত কাটাবে। বেশ লাগছে তাঁর। একটা সুন্দর আলিশান জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তাঁরা। আশেপাশে অল্প স্বল্প ঘর আছে। চারপাশ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে। বেশ লাগছে আহির।’

হঠাৎই কি হলো নড়তে গেলেই টার্চ লাগলো আহি আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান তো আহির স্পর্শ পেতেই পুরোই চমকে উঠলো। কিছু একটা অনুভব হলো তাঁর।’
অতঃপর সবাইকে খাইয়ে দাইয়ে এবং নিজেরা খেয়ে অনেকটা সময় পাড় করলো সবাই। আজকে লান্স করার বিষয়টা একদমই অন্যরকম ছিল। খোলা আকাশের নিচে টেবিল পেতে লান্স করা বিষয়টা বেশ লেগেছে আহির।’
গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলছে আদ্রিয়ান আর আহি। নিলয় এখনো ওখানেই আছে। কারন এখনও অনেক কাজ বাকি। এমনি সময় থাকে আদ্রিয়ান নিলয়ের সাথে কিন্তু আজ সে চলে এসেছে আহিকে নিয়ে।
আপাতত এই মুহূর্তে তাঁর ফিরে আসার মূূল উদ্দেশ্য হলো আহিকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। সময়টা তখন প্রায় বিকেল গড়িয়ে গেছে। অল্প স্বল্প রোদ্দুরের আনাগোনা আছে তখন। একটা সুন্দর ব্রিজ ক্রস করে যাচ্ছে ওঁরা। হঠাৎই ব্রিজের ওপর কিছু একটার নজর পড়তেই আহি বলে উঠল,

‘ থামান থামান।’
আহির কথা শুনে আদ্রিয়ানও গাড়ি থামিয়ে বলে উঠল,
‘ এখানে?’
‘ হুম।’
উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই আহি গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। তাঁরপর দৌড়ে চলে যায় সে এক ঝালমুড়ি ফুচকার দোকানে। ঝালমুড়ি ফুচকা এগুলো আহির মোস্ট ফেবারিট। আহি কয়েক-কদম এগিয়েও আবার পিছনে ফিরে এসে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ আপনি খাবেন ঝালমুড়ি ফুচকা?’
এতক্ষণ পর আহির গাড়ি থেকে নামার আসল কারন বুঝতে পেরে বললো আদ্রিয়ান,
‘ তুমি এই কারনে গাড়ি থেকে নামলে?’
‘ হুম আপনি খাবেন কি না বলুন?’
‘ আমি ওগুলো খাই না।’
‘ আরে খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।’
‘ তোমার খেতে ইচ্ছে করছে তুমি খাও আমি ওসব খাই না।’
উওরে আহি বেশ কয়েকবার জোর করলো আদ্রিয়ানকে। কিন্তু আদ্রিয়ান শোনে নি, শেষমেশ বাধ্য হয়ে আহি একাই চলে গেল।

আহি দাঁড়িয়ে আছে ফুচকার দোকানের সামনে। আর গাড়ি ভিতর বসে আহিকে দেখছে আদ্রিয়ান। সে বুঝতে পেরেছে নিজের অজান্তেই আহিকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু এটা আহিকে জানাবে কি করে আর তাঁর থেকেও বড় কথা আহির রিয়েকশন কেমন হতে পারে যদিও আহি নীরবকে ভালোবাসে। হঠাৎই আকাশ পথে সাদা বর্ন ত্যাগ করে কালো মেঘে ডুবে গেল। হুট করেই আবহাওয়ার এই পরিবর্তন যেন চমকে দিলো আহি আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান আর বেশি না ভেবে চটজলদি গাড়ি থেকে নেমে চলে যায় আহির কাছে। আহি তখনও খাচ্ছিল। আদ্রিয়ান আহির সামনে গিয়ে বললো,
‘ এখান থেকে চলো আহি বৃষ্টি নামবে?’
‘ বৃষ্টি নামলে কিছু হবে না এমনিতেও বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে।’
‘ পাগল হলে নাকি এই বিকেল বেলা তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে।’
‘ কিছু হবে না।’
এরই মধ্যে বলতে না বলতেই মেঘ চিঁড়ে এক ফোটা দুটো করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগতেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ এখান থেকে চলো আহি?’
‘ এখনো একটা ফুচকা আছে তো এটা খেয়ে নি তারপর যাবো।’
‘ ততক্ষণে পুরোপুরি বৃষ্টি নেমে যাবে আহি।
বলেই ফুচকার প্লেটটা আহির হাত থেকে নিয়ে আদ্রিয়ান দিল ফুচকাওয়ালার কাছে। তারপর বললো
‘ কত হয়েছে?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে ফুচকাওয়ালাও বলে উঠল,
‘ ৪০ টাকা।’
আদ্রিয়ান টাকা দিতে যাবে সেই মুহূর্তে আহি বলে উঠল,
‘ কি করছেন কি আপনি এটার টাকা আপনাকে দিতে হবে না আমি দিচ্ছি।’
বলেই নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করলো আহি।’

‘ তোমাকে টাকা দিতে হবে না আমি দিচ্ছি?’
‘ প্রত্যেক বার আপনি দিবেন কেন?’
‘ প্রত্যেক বার কোথায় একবারই তো।’
বলেই ফুচকাওয়ালাকে টাকা দিয়ে দিলো আদ্রিয়ান। টাকা দেওয়া শেষ হতেই বললো আদ্রিয়ান,
‘ এখন চলো।’
উওরে আহিও কিছু বলতে না পেরে চললো আদ্রিয়ানের পিছন পিছন।’
ওঁরা মাঝপথে যেতেই তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আদ্রিয়ান তো চমকে উঠে বললো,
‘ বলেছিলাম বৃষ্টি নামবে।’
‘ একটু নামলে কি হয়েছে চলুন বৃষ্টিতে ভিঁজি।’
আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,
‘ হোয়াট?’
‘ আপনি এতো হোয়াট হোয়াট করেন কেন বলুন তো চলুন ওখানে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি ভালো লাগবে।’
‘ না না বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে।’
‘ কিছু হবে না চলুন তো।’
বলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল আহি। মুক্ত আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টিতে পুরো রাস্তা জুড়ে লাফিয়ে ভিজতে লাগলো আহি আর আদ্রিয়ান।’ এই প্রথম হয়তো এভাবে মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে আদ্রিয়ান। এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর ভিতর।’

সেদিনের পর মাঝখানে কেটে তিনদিন। এই তিনদিনে কোনো দেখা হয় নি আহির সাথে আদ্রিয়ানের। আর এই দেখা না হওয়াতে আদ্রিয়ানের যেন আরো বেশি বুঝতে সুবিধা হলো সে ভালোবাসে আহিকে। এই কয়েক দিনে পাল্টে গেছে আরো কিছু, যেমন সোহানকে নিয়ে গতকালই বাড়ি চলে এসেছে রিনিরা। আর নীরব অথৈর দিকে, লিলির বিয়ে হয়ে শশুর বাড়ি চলে গিয়েছিল দু’দিন আগেই। মাঝখানে বউভাতও হয়ে গেছে। নীরব আজ চলে আসবে ঢাকাতে। আর যাওয়ার আগে হয়তো শেষ বারের মতো কথা বলবে অথৈর সাথে। আর অথৈ এই কয়েক দিন নিজেকে যতটা পেরেছে দূরে দূরে রেখেছে নীরবের কাছ থেকে। কষ্ট তাঁরও হচ্ছিল ভীষণ। যতই হোক ভালোবাসা তো।’

অফিসে বসে আছে আদ্রিয়ান। তাঁর পাশেই বড় বড় চোখ নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে নিলয়। আজ দু’দিন যাবৎ আদ্রিয়ানের কান্ডকারখানা দেখছে কিছু বলবে বলবে তাও সুযোগ করে বলতে পারছে না। কিন্তু আজ সে জিজ্ঞেস করেই ছাড়বে। নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তোর হয়েছে কি বলতো?’
‘ আমার আবার কি হবে?’ (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
‘ আমাকে কি ফিটার খাওয়া শিশু পেয়েছিস নাকি?’
উওরে শুকনো হাঁসলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের হাসি দেখে বলে উঠল নিলয়,
‘ একদম হাসবি না সেদিন যখন আমি আহিকে অফিসে নিয়ে আসলাম তখন কি রাগ করলি আর তুই কি না নিজেই সেদিন আহিকে নিয়ে আসলি ব্যাপারটা কি বলতো।’
‘ একটা কথা বলবো তোকে?’
‘ তোর কথা শোনার জন্যই তো দাঁড়িয়ে আছি।’
‘ কথাটা শোনার পর তোর মাথা ঘুরালে আমার দোষ নেই কিন্তু?’
‘ মানে?’
‘ মানে এটাই আই এম ইন লাভ নিলয়?’ আই এম ইন লাভ?’
এবার যেন সত্যি সত্যি নিলয়ের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখ বড় বড় করে বললো সে,

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৬

‘ কি?’
‘ হুম আর আজই আহিকে প্রপোজ করবো বুঝলি?’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে নিলয় যেন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ধপাস করে নিচে পড়ে গেল সে। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না নিলয়। এই মুহূর্তে একটা বাংলার ছবির ডায়লগ খুব করে মাথা আসছে নিলয়ের,
‘ আমি বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি না।’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৮